অদ্বৈত বলে—যা পরিবর্তনশীল ও অন্যের ওপর নির্ভরশীল, তা শেষপর্যন্ত মিথ্যা/সবলযোগ্য (mithyā)। তাই জগৎ ব্রহ্মের ওপর নির্ভরশীল ও বদলায়—সুতরাং জগৎ মিথ্যা (ব্যাবহারিক স্তরে চলে, কিন্তু পরম সত্য নয়)। সবলযোগ্য মানে, এমন কোনো জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা, যা অন্য উচ্চতর জ্ঞান দ্বারা ভ্রান্ত প্রমাণিত বা খণ্ডিত হতে পারে। অদ্বৈত বেদান্তে, জগৎকে বলা হয় সবলযোগ্য (bādhyam)—কারণ ব্রহ্ম-জ্ঞান (চূড়ান্ত জ্ঞান) এলে জগতের সমস্ত অভিজ্ঞতাই খণ্ডিত হয়; শুধু ব্রহ্মই অখণ্ডভাবে সত্য থাকে। যা কখনও খণ্ডিত হয় না (যেমন ব্রহ্ম), সেটিই “পরম সত্য” বা “অবাধ্য” (abādhyam); আর যা অন্য জ্ঞান দ্বারা খণ্ডিত হয় (যেমন স্বপ্ন, ভ্রম, জগৎ), সেটিই “সবলযোগ্য”।
প্রতিপক্ষ (বিশিষ্টাদ্বৈত, দ্বৈত, ন্যায়–বৈশেষিক) বলে—নির্ভরশীল হলেই জিনিস মিথ্যা হয় না; জগৎ বাস্তব, যদিও ঈশ্বর/ব্রহ্মের ওপর নির্ভরশীল। সহজ কথা, “নির্ভরশীলতা = মিথ্যা”—এই সমীকরণটা প্রতিপক্ষ মানে না।
“নির্ভরশীলতা = মিথ্যা”—কেন এটা সব সময় ঠিক নয়?
কাপড়-সুতো: কাপড় সুতোর ওপর নির্ভরশীল—তাই বলে কাপড় মিথ্যে নয়; কাপড় আলাদা একটি বাস্তব বস্তু (প্রতিপক্ষের যুক্তি)।
রংধনু: ‘সূর্যালোক + জলকণা + দেখার দৃষ্টিকোণ’ না হলে দেখা যায় না। তবু আমরা বলি—“রংধনু দেখছি।” অর্থাৎ শর্তাধীন বাস্তবতাও বাস্তবতারই এক স্তর।
সফটওয়্যার-অপারেটিং সিস্টেম: অ্যাপ OS ছাড়া চলে না; তবু অ্যাপ আলাদা সত্তা—শুধু নির্ভরশীল।
অদ্বৈতের উত্তর: এসব স্তরভিত্তিক বাস্তবতা—ব্যাবহারিক স্তরে সত্য, কিন্তু পরম সত্য কেবল ব্রহ্ম।
১) অদ্বৈত বলে, জগৎ ব্যাবহারিক স্তরে সত্য, কিন্তু পরম সত্য নয় (mithyā)। কেবল ব্রহ্মই পরম সত্য। জগৎ ব্রহ্মের ওপর নির্ভরশীল ও সাবলনীয় (bādha-যোগ্য)।
২) বিশিষ্টাদ্বৈত/দ্বৈত বলে, জগৎ বাস্তব। জগৎ ঈশ্বরের ওপর নির্ভরশীল। ঈশ্বর ও জগৎ উভয়ই বাস্তব; সম্পর্ক অনেকটা “অঙ্গ-অঙ্গী” (শরীর-আত্মা)-র মতো।
৩) ন্যায়-বৈশেষিক বলে, জগৎ বাস্তব। বাস্তবতা গড়ে ওঠে মৌলিক সত্তা যেমন পরমাণু, দ্রব্য, গুণ, কর্ম ইত্যাদির ওপর। ঈশ্বর আছেন (অনেক আচার্যের মতে), কিন্তু জগৎও স্বাধীনভাবে সত্য ও বাস্তব।
অদ্বৈত: জগৎ = ব্যাবহারিক সত্য, কিন্তু পরম সত্য নয়। বিশিষ্টাদ্বৈত/দ্বৈত: জগৎ = বাস্তব, ঈশ্বরের ওপর নির্ভরশীল। ন্যায়-বৈশেষিক: জগৎ = বাস্তব, মৌলিক সত্তা দিয়ে ব্যাখ্যা হয়।
কাপড়-সুতো: দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
সম্ভাবনা বনাম বাস্তবতা: সুতো আছে মানেই কাপড় তৈরি হয়নি—তাই “সুতোতে কাপড়ের অপরিমেয় অনস্তিত্ব (atyantābhāva) থাকে”, যতক্ষণ না বোনা হয়। বোনা হলেই আগের “কাপড়-নেই” জ্ঞান সবলিত/খণ্ডিত (bādha) হয়।
নির্ভরশীল মানেই মিথ্যা নয়। প্রতিপক্ষ বলে—কাপড় নতুন একটা বস্তু, সুতো থেকে ভিন্ন; সুতরাং কেবল নির্ভরশীল হলেই মিথ্যা বলা যায় না।
উপমার (analogy) সীমা—এটাকে সাবধানে ব্যবহার করতে হবে। উপমা শেখার জন্য দারুণ, কিন্তু তা সর্বজনীন প্রমাণ নয়। “কাপড়-সুতো”, “সমুদ্র-তরঙ্গ”, “রংধনু”—এসব দিয়ে ধারণা ধরা যায়; তবু দার্শনিক প্রমাণে কেবল উপমা যথেষ্ট নয়। তাই প্রতিপক্ষ বলে—উপমা-নির্ভর প্রমাণ দিয়ে “জগৎ সর্বত্র মিথ্যা”—এভাবে চূড়ান্ত রায় দেওয়া যায় না।
প্রমাণের পথের ভিন্নতা (জ্ঞানতত্ত্ব):
অদ্বৈত: যুক্তি-শাস্ত্র-ধ্যান শেষে অনুভব (anubhava, আত্মদর্শন) দরকার—এটাই চূড়ান্ত নির্ণায়ক।
অন্যান্য: যুক্তি/প্রত্যক্ষ/শব্দপ্রমাণেই বেশি ভরসা—জগৎ বাস্তব ধরা হয়, অনুভব থাকুক বা না থাকুক।
এখানেই বড়ো ফারাক: কে কোন প্রমাণকে শেষকথা হিসেবে মানে।
অদ্বৈতে “অনুভব” জরুরি। অদ্বৈত বলে—বই পড়ে বা তর্কে শেষ কথা ধরা পড়ে না। “আমি-ব্রহ্ম এক”—এটা বৌদ্ধিক বক্তব্য নয়; এটা সরাসরি দেখা (স্ব-অভিজ্ঞতা)। এই দর্শন/অনুভব-ই “জগৎ সবলযোগ্য” বোঝায়—কারণ তখন ব্রহ্ম ছাড়া কিছুই স্বাধীন/চূড়ান্ত থাকে না।
দড়ি-সাপ উদাহরণ: অন্ধকারে দড়িকে সাপ ভেবেছিলে; আলো জ্বলতেই ভুল ভাঙল—আগের জ্ঞান সাবলিত হল। অদ্বৈতের মতে, ব্রহ্ম-জ্ঞান ঠিক এমনই সবলন-কারী জ্ঞান।
“মিথ্যাত্ব হলো—নিজ আশ্রয়ে (locus) থাকা পরম অনস্তিত্বের প্রতিযোগী (pratiyogin) হওয়া।” অনুপস্থিতি (abhāva) সবসময় কীসের অনুপস্থিতি—এটা ধরে; “যার অনুপস্থিতি ধরা হচ্ছে”, তাকে বলে প্রতিযোগী/প্রতিয়োগী (pratiyogin)। “পরম অনস্তিত্ব” (atyantābhāva) মানে সর্বত্র—চিরকাল নেই—এরকম অনুপস্থিতি। “আশ্রয়” মানে যেখানে ওই অনুপস্থিতি স্থিত (যেমন, সুতো হলো “কাপড়-নেই” থাকার আশ্রয়)। তাই সুতো-তে “কাপড়ের পরম অনস্তিত্ব” আছে—এই অনুপস্থিতির প্রতিযোগী হলো “কাপড়”। বোনা হলেই সেই অনুপস্থিতি সবলিত হয়—কাপড় উপস্থিত হয়। অদ্বৈতের দাবি—জগৎ-এর ক্ষেত্রেও শেষ বিচারে এমন সবলন ঘটে ব্রহ্ম-জ্ঞানে; তাই জগৎ ব্যাবহারিক সত্য, কিন্তু পরম নয়।
নির্ভরশীলতা নিজে নিজে মিথ্যার প্রমাণ নয়—এটা প্রতিপক্ষের মূল কথা। অদ্বৈত “স্তরভিত্তিক সত্য” মানে—ব্যাবহারিক স্তরে জগৎ চলে, পরম স্তরে কেবল ব্রহ্ম। উপমা শেখায়, প্রমাণ নয়—তাই চূড়ান্ত রায় দিতে হলে প্রমাণপদ্ধতি (pramāṇa) ও/অথবা অনুভব দরকার। মিথ্যাত্বের কড়া সংজ্ঞা বোঝায়—“যেখানে অনুপস্থিতি টিকে আছে, সেখানে যে বস্তুটাকে ধরা হচ্ছে”—সে হলো ওই অনুপস্থিতির প্রতিযোগী; জ্ঞান এলে অনুপস্থিতি সবলিত হয়। কোনো ঐকমত্যে পৌঁছানো কঠিন—কারণ দর্শনগুলো প্রমাণের শেষ কর্তৃত্ব কাকে মানবে, সেই জায়গাতেই ভিন্ন। আমরা ব্যাবহারিক দৃষ্টিতে জগৎকে বাস্তব ধরলে—বিশিষ্টাদ্বৈত/দ্বৈত/ন্যায়-বৈশেষিক-এর যুক্তি টিকে যায়। আমরা যদি পরম সত্যকে একমাত্র মানতে চাই—অদ্বৈত বলে, ব্রহ্মই সেটি, আর জগৎ সবলনীয়। দুটোই সুসংগঠিত দর্শন—ফারাকটা সত্যের স্তর আর প্রমাণের শেষ কর্তৃত্বে।
এখন, ন্যায়-বৈশেষিক দর্শনে অভাবের বিশ্লেষণাত্মক স্থাপত্য এবং অনুমিতির বৈধতা সম্পর্কে আলোচনা করছি:
প্রথম অংশ: ন্যায়-বৈশেষিক দর্শনের মৌলিক অধিবিদ্যা (Foundational Metaphysics)
১. জ্ঞানতাত্ত্বিক বাস্তববাদে (Epistemic Realism) ন্যায়-বৈশেষিকের অঙ্গীকার: ন্যায় এবং বৈশেষিক দর্শন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত দার্শনিক কাঠামোটি মূলত একটি বলিষ্ঠ জ্ঞানতাত্ত্বিক বাস্তববাদের উপর ভিত্তি করে গঠিত, যা এটিকে ভাববাদী ঐতিহ্য থেকে স্পষ্টভাবে পৃথক করে। ন্যায়, তার যুক্তি ও পদ্ধতির নিয়মতান্ত্রিক বিকাশের জন্য ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ, যা মোক্ষ (Moksha) লাভের পথকে যথার্থ-জ্ঞান (বাস্তব জ্ঞান) অর্জনের উপর নির্ভরশীল বলে মনে করে। এই প্রক্রিয়াটি বিভ্রান্তি এবং ভুল ধারণা দূর করার দিকে নিবদ্ধ, যা মানুষের দুঃখের মূল কারণ।
এই ব্যবস্থা প্রত্যক্ষ বাস্তববাদ (Direct Realism) নামক মৌলিক নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত: বাস্তবে সত্যিকারের বিদ্যমান যে-কোনো সত্তাই নীতিগতভাবে মানুষের পক্ষে জ্ঞেয়। এই ভিত্তিটি বিশ্বকে সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে এবং মিথ্যা জ্ঞানকে অতিক্রম করার জন্য বৈধ জ্ঞান লাভের মাধ্যম (প্রমাণ)-এর একটি কঠোর ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে, যাকে নৈয়ায়িকেরা কেবল অজ্ঞতা হিসেবে নয়, সক্রিয় বিভ্রম হিসাবে স্বীকৃতি দেন। এই দার্শনিক কাঠামোটির জন্য জ্ঞানের বিষয়বস্তুগুলির একটি অন্তর্নিহিত গুণ থাকা আবশ্যক, যা তাদের জ্ঞেয়তা নিশ্চিত করে।
২. একটি সত্তাতাত্ত্বিক গুণ হিসেবে দৃশ্যত্বম্ (Dṛśyatvam) (জ্ঞেয়তা/বিষয়তা)-এর ধারণা: বাস্তববাদী প্রকল্পের সাথে নিবিড়ভাবে সংযুক্ত হল দৃশ্যত্বম্ (Dṛśyatvam) (বিষয়তা বা জ্ঞেয়তা)-এর ধারণা। এই গুরুত্বপূর্ণ শব্দটি উপলব্ধিসাপেক্ষ, জ্ঞেয় বা জ্ঞানের বিষয় হওয়ার অন্তর্নিহিত গুণকে বোঝায়। দৃশ্যত্বম্-কে "এই সুতাগুলির মধ্যে" বিদ্যমান হিসেবে বলা হয়, যা ইঙ্গিত করে যে, বাস্তবতার মৌলিক উপাদানগুলির পর্যবেক্ষণযোগ্য এবং জ্ঞেয় সত্তা হওয়ার সহজাত বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
দৃশ্যত্বম্-এর অন্তর্ভুক্তি কেবল সংবেদনশীল উপলব্ধি সম্পর্কে একটি মানসিক দাবি নয়; এটি ন্যায় কাঠামোর মধ্যে একটি প্রয়োজনীয় সত্তাতাত্ত্বিক ম্যান্ডেট হিসেবে কাজ করে। যেহেতু এই ব্যবস্থাটি মনে করে, প্রকৃত অস্তিত্ব অনিবার্যভাবে জ্ঞেয়, তাই সুতাগুলির মতো মৌলিক সত্তাগুলিতে জ্ঞেয়তার এই অন্তর্নিহিত গুণটি সত্য ও নির্ভুল জ্ঞানার্জনের সম্ভাবনাকে বৈধ করে। যদি বাস্তবতার মৌলিক উপাদানগুলিতে এই অন্তর্নিহিত জ্ঞেয়তা না থাকত, তবে কঠোর যৌক্তিক এবং প্রত্যক্ষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যথার্থ-জ্ঞান অর্জনের ন্যায়-এর লক্ষ্যটির অধিবিদ্যক ভিত্তি থাকত না এবং শেষপর্যন্ত তা ভেঙে পড়ত। দৃশ্যত্বম্ অতএব কঠোর জ্ঞানতাত্ত্বিক কাঠামোর জন্য অপরিহার্য ন্যায্যতা প্রদান করে।
৩. অভাব (Abhāva)-এর বিশ্লেষণাত্মক বিভাগ: ন্যায়-বৈশেষিক ঐতিহ্য অনস্তিত্ব বা অভাব (abhava)-এর চারটি বিভাগকে স্বীকার করে। এই ব্যবস্থাটি দাবি করে যে, অভাব একটি সক্রিয় এবং সুনির্দিষ্ট দার্শনিক বিভাগ, যা বাস্তবতাকে বোঝা এবং স্পষ্ট সত্তাতাত্ত্বিক সীমা প্রতিষ্ঠা করার জন্য অপরিহার্য। এই সূক্ষ্ম শ্রেণীবিন্যাস অস্থায়ী, সম্পর্কীয় এবং পরম অনস্তিত্বের মধ্যে পার্থক্য করে।
স্বীকৃত চার প্রকার abhava হলো:
ক. প্রাগভাব (Prāgabhāva) (পূর্ব অনস্তিত্ব): কোনো সত্তা তৈরি হওয়ার আগে তার অনুপস্থিতি। এই রূপটি অনাদি, তবে সসীম হিসাবে চিহ্নিত। উদাহরণস্বরূপ, সুতাগুলি বোনা হওয়ার আগে কাপড়টির অনস্তিত্ব।
খ. প্রধ্বংসাভাব (Pradhvaṁsābhāva) (উত্তর অনস্তিত্ব): কোনো সত্তা ধ্বংস হওয়ার পরে তার অনুপস্থিতি। এই রূপটির সূচনা আছে, কিন্তু তা অনন্ত।
গ. অন্যোন্যাভাব (Anyonyābhāva) (পারস্পরিক অনস্তিত্ব): অভিন্নতার অনুপস্থিতি, যা স্বতন্ত্র সত্তাগুলির মধ্যে মৌলিক বিচ্ছেদকে সংজ্ঞায়িত করে, যেমন: এই জ্ঞান যে, একটি ঘট একটি কাপড় নয়। এই অভাবটি শাশ্বত এবং অবিচ্ছিন্ন।
ঘ. অত্যন্তাভাবঃ (Atyantābhāvaḥ) (পরম অনস্তিত্ব): একটি নির্দিষ্ট স্থানে একটি সত্তার অবিচ্ছিন্ন, শাশ্বত অনুপস্থিতি, যা অস্তিত্বের স্বতন্ত্র বিভাগগুলির মিশ্রণ রোধ করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৪. অত্যন্তাভাবঃ—শাশ্বত অনুপস্থিতি এবং প্রতিযোগিত্ব (Pratiyogitva) এর ভূমিকা:
অত্যন্তাভাবঃ (Atyantābhāvaḥ) একটি অনন্য এবং গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান ধারণ করে, কারণ এটি একটি শাশ্বত এবং অবিচ্ছিন্ন অনুপস্থিতি নির্দেশ করে, যা অস্থায়ী পূর্ব এবং উত্তর অনুপস্থিতি থেকে স্বতন্ত্র। এটি এমন সত্তাগুলির মধ্যে একটি স্থায়ী বিচ্ছেদকে বোঝায়, যা কখনোই সত্যই এক হতে পারে না।
এই অনুপস্থিতি সংজ্ঞায়িত করার প্রক্রিয়াটি মূলত প্রতিযোগিত্ব (pratiyogitva) (কাউন্টার-পজিটিভনেস) ধারণার উপর নির্ভর করে। একটি অনুপস্থিতি সর্বদা কিছু-না-কিছু’র অনুপস্থিতি, এবং সেই কিছু হলো তার প্রতিযোগী (pratiyogin)। সম্পর্কীয় সংজ্ঞার উপর এই জোর নিশ্চিত করে যে, সত্তাগুলিকে কেবল তারা কী—তা দিয়েই নয়, বরং তারা স্থায়ীভাবে কী নয়—তা দিয়েই সতর্কতার সাথে সংজ্ঞায়িত করা হয়।
কাপড় এবং সুতাগুলির উদাহরণ দ্বারা এটি প্রযুক্তিগতভাবে চিত্রিত করা হয়েছে। কাপড়কে, তার গঠনের আগে, "সেই সুতাগুলিতে বিদ্যমান পরম অনস্তিত্বের প্রতিযোগী" হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। tantu-nistha-atyantabhavah শব্দগুচ্ছটি অনুপস্থিতির নির্দিষ্ট, অবিচ্ছিন্ন এবং ব্যাপক প্রকারকে বোঝায়, যা সুতাগুলির মৌলিক, অসংযুক্ত অবস্থায় সহজাত। সম্পূর্ণরূপে গঠিত কাপড়ের অনস্তিত্ব পরম এবং অব্যাহত থাকে, যতক্ষণ না সুতাগুলি স্বতন্ত্র উপাদান হিসাবে থাকে এবং একটি একত্রিত পণ্য না হয়, যা তুলে ধরে যে, অস্তিত্ব নির্দিষ্ট বিন্যাসের উপর নির্ভরশীল।
উন্নত ব্যাখ্যাগুলিতে, বিশেষত নব্য ন্যায় দর্শনে, প্রতিযোগী হওয়ার সম্পর্ক (pratiyogita) প্রায়শই এক প্রকার স্বরূপ-সম্বন্ধ (Svarūpa-sambandha) (অন্তর্নিহিত সম্পর্ক) হিসাবে বোঝা যায়। এই ব্যাখ্যাটির অর্থ হলো, অনুপস্থিতির সম্পর্কীয় সংবিধান কেবল একটি ধারণাগত সরঞ্জাম নয় বরং অনুপস্থিতির নিজের জন্য প্রাসঙ্গিক হওয়ার একটি অপরিহার্য পদ্ধতি। পরম অনস্তিত্বটি তার অস্বীকার করা বস্তুর সাথে তার অন্তর্নিহিত সম্পর্ক দ্বারা গঠিত হয়। এই অত্যন্ত কঠোর দার্শনিক সংজ্ঞাটি ন্যায়-এর কঠোর বাস্তববাদকে ভিত্তি দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় স্থির, অ-হ্রাসযোগ্য গুণ ধারণকারী বাস্তবতার একটি সত্তাতাত্ত্বিক বিভাগ হিসেবে Atyantābhāvaḥ-কে উন্নীত করে।