অবিদ্যা-তত্ত্ব-দীপিকা: নয়



এখানে, "বিগীত" (contested বা বিতর্কিত) শব্দটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি দর্শনের একটি মৌলিক বিতর্ককে নির্দেশ করে। এই শব্দটি বোঝায়, যে-জ্ঞানকে আমরা 'সত্য' বলে মনে করি বা যা আমাদের অজ্ঞানতা দূর করার ক্ষমতা রাখে বলে দাবি করা হয়, তার প্রকৃতি, উৎস, এবং চূড়ান্তভাবে কী পরিমাণ তা আমাদের মানসিক বন্ধন বা দুঃখ দূর করতে পারে, এ নিয়ে গভীর দার্শনিক মতানৈক্য রয়েছে। এই বিতর্ক কেবল শব্দের খেলা নয়, বরং এটি ভারতীয় দর্শন, বিশেষত বেদান্ত এবং ন্যায়-বৈশেষিক দর্শনে জ্ঞানের বৈধতা (প্রমাণ), তার কার্যকারিতা, এবং অস্তিত্বের চূড়ান্ত সত্যের স্বরূপ নিয়ে বহু শতাব্দীর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

এই বিতর্কই এই যৌক্তিক প্রমাণের প্রয়োজনীয়তাকে জন্ম দেয়। যখন কোনো ধারণা 'বিগীত' হয়, তখন তাকে কেবল ধারণাগতভাবে গ্রহণ করা যায় না; তাকে কঠোর যৌক্তিক বিশ্লেষণ, প্রত্যক্ষ ও অনুমান নির্ভর প্রমাণ, এবং শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যার মাধ্যমে যাচাই করতে হয়। এটি কেবলমাত্র একটি মতবাদকে অন্ধভাবে গ্রহণ করার পরিবর্তে তার প্রতিটি দিককে সূক্ষ্মভাবে পরীক্ষা করার একটি প্রক্রিয়া। এই প্রমাণগুলি দার্শনিককে কেবল তার নিজস্ব অবস্থানকে সমর্থন করতেই সাহায্য করে না, বরং প্রতিপক্ষের যুক্তিগুলিকে খণ্ডন করতেও সক্ষম করে তোলে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দর্শনে জ্ঞানকে কেবল বিশ্বাস বা ধারণার স্তরে না রেখে তাকে দৃঢ় প্রমাণের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা হয়।

দেবদত্ত এখানে একজন নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক ব্যক্তির প্রতিনিধিত্ব করে না, বরং এটি একটি উপমান বা সাধারণ নাম (generic name), যা কোনো ব্যক্তিকে নির্দেশ করে, যার বৈধ জ্ঞান (প্রমাণ-জ্ঞানম্) যাচাই করা হচ্ছে। ভারতীয় দর্শনে, বিশেষত ন্যায় শাস্ত্রে, দেবদত্ত বা অন্যান্য সাধারণ নাম (যেমন রাম, শ্যাম) প্রায়শই উদাহরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যখন কোনো সাধারণ নিয়ম বা যুক্তির কাঠামো ব্যাখ্যা করা হয়, যেখানে ব্যক্তির পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং তার দ্বারা উপস্থাপিত জ্ঞান বা যুক্তির বৈধতা যাচাই করাই মূল উদ্দেশ্য। এর মাধ্যমে দেখানো হয় যে, দার্শনিক আলোচনা ব্যক্তিভিত্তিক না হয়ে জ্ঞান এবং প্রমাণের সর্বজনীনতার উপর নির্ভরশীল। এই পদ্ধতিটি দর্শনে বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে এবং আবেগ বা ব্যক্তিগত পক্ষপাতিত্বের ঊর্ধ্বে উঠে যুক্তির মাধ্যমে সত্যকে অন্বেষণ করতে সহায়তা করে।

এই অনুমানের কেন্দ্রবিন্দু হলো "প্রমাণ-জ্ঞানম্", যার অর্থ বৈধ, সত্য এবং সঠিক জ্ঞান। দেবদত্তের জ্ঞানকে এখানে একটি উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, তবে এটি নীতিগতভাবে যে-কোনো ব্যক্তির অর্জিত বৈধ জ্ঞানকে নির্দেশ করতে পারে, যার মধ্যে বৈদিক জ্ঞান, প্রত্যক্ষ জ্ঞান, অনুমানিক জ্ঞান বা অন্য কোনো প্রমাণ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। "বিগীত" শব্দটি এই বিতর্ককে তুলে ধরে যে, এই জ্ঞান কেবল অজ্ঞানতার অনুপস্থিতি দূর করে, না কি একটি সক্রিয়, ইতিবাচক অস্তিত্বকে অপসারণ করে।

২. সাধ্যম্ (যা প্রমাণ করতে হবে): "সাধ্যম্" (Sādhyam) বলতে বোঝায় সেই গুণ বা প্রস্তাব, যা প্রতিষ্ঠিত বা প্রমাণ করতে হবে। এই নির্দিষ্ট প্রসঙ্গে, "সাধ্যম্" কে বর্ণনা করা হয়েছে এভাবে—দেবদত্ত-নিষ্ঠ-প্রমাভাব-অতিরিক্ত-অনাদেঃ নিবর্তকং (দেবদত্তে স্থিত জ্ঞানের অভাব থেকে স্বতন্ত্র একটি অনাদি বাস্তবতার নিবর্তক)

এই জটিল সংস্কৃত বাক্যটিকে ভেঙে এর সম্পূর্ণ অর্থ বোঝা যাক:

দেবদত্ত-নিষ্ঠ-প্রমাভাব (Devadatta-niṣṭha-pramābhāva): এর অর্থ "দেবদত্তের মধ্যে থাকা বৈধ জ্ঞানের অভাব।"
দেবদত্ত (Devadatta): ভারতীয় দার্শনিক গ্রন্থগুলিতে ব্যবহৃত একটি সাধারণ প্রতিস্থাপন নাম, অনেকটা ইংরেজিতে "জন" বা "ডেভিড”-এর মতো। এটি যে-কোনো ব্যক্তিকে বোঝায়। নিষ্ঠ (Niṣṭha): মধ্যে অবস্থিত, অন্তর্নিহিত, বা সম্পর্কযুক্ত। প্রমা (Pramā): বৈধ জ্ঞান, সঠিক উপলব্ধি, বা সত্য জ্ঞান। এটি বাস্তবতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ জ্ঞান। ভাব (Bhāva): অস্তিত্ব, উপস্থিতি, বা অবস্থা। এই প্রসঙ্গে, অভাব (Abhāva) মানে অনুপস্থিতি বা অনস্তিত্ব। সুতরাং, "প্রমাভাব" বলতে বৈধ জ্ঞানের অনুপস্থিতি বোঝায়। অতএব, "দেবদত্ত-নিষ্ঠ-প্রমাভাব" বলতে দেবদত্ত নামক ব্যক্তির মধ্যে সঠিক বা সত্য জ্ঞানের অভাবকে বোঝায়। এটি কেবল জ্ঞানের অভাব নয়, বরং বিশেষভাবে বৈধ জ্ঞানের অভাব।

অতিরিক্ত (Atirikta): থেকে স্বতন্ত্র, থেকে পৃথক, বা থেকে আলাদা। এই শব্দটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি জোর দেয় যে, "নিবর্তকং" (যা বাতিল করে বা দূর করে) জ্ঞানের অভাবের সাথে অভিন্ন বা এর দ্বারা সৃষ্ট নয়।

অনাদেঃ (Anādeḥ): একটি অনাদি বাস্তবতার। অনাদি (Anādi): যার শুরু নেই, শাশ্বত, শুরুহীন। এটি এমন কিছু বোঝায়, যা সর্বদা বিদ্যমান। ষষ্ঠী বিভক্তি (অনাদেঃ) এই অনাদি বাস্তবতার "এর" বা "এর সাথে সম্পর্কিত" বোঝায়। অনেক দার্শনিক ঐতিহ্যে, বিশেষ করে অদ্বৈত বেদান্তে, এই "অনাদি বাস্তবতা" প্রায়শই অবিদ্যা (অজ্ঞান) বা মায়াকে বোঝায়, যা অনাদি বলে বিবেচিত হলেও চূড়ান্তভাবে বাস্তব নয়।

নিবর্তকং (Nivartakaṃ): যা বাতিল করে, দূর করে, বা নির্মূল করে। এটি প্রতিষেধক বা দূরকারী।

সব কিছু একত্রিত করলে, "সাধ্যম্" বলতে বোঝায়, যে-গুণটি প্রমাণ করতে হবে, তা হলো: "যা একটি অনাদি বাস্তবতাকে বাতিল করে যা দেবদত্তের মধ্যে থাকা বৈধ জ্ঞানের অভাব থেকে স্বতন্ত্র।"

বিশদ ব্যাখ্যা এবং প্রেক্ষাপট: এই "সাধ্যম্" একটি দার্শনিক যুক্তির অংশ, অদ্বৈত বেদান্তের কাঠামোর মধ্যে। অদ্বৈত বেদান্তে, চূড়ান্ত বাস্তবতা হল ব্রহ্ম, যা বিশুদ্ধ চেতনা, অস্তিত্ব এবং আনন্দ (সৎ-চিত-আনন্দ)। জাগতিক জগৎ এবং ব্যক্তির অভিজ্ঞতাকে অবিদ্যার (অজ্ঞান) ফল হিসাবে বিবেচনা করা হয়, যা অনাদি (শুরুহীন) কিন্তু চূড়ান্তভাবে বাস্তব নয়। এই বাক্যটি নিম্নলিখিত মূল ধারণাগুলির দিকে ইঙ্গিত করে:

অজ্ঞানের সমস্যা (অবিদ্যা): "অনাদি বাস্তবতা" (অনাদি) যা বাতিল করা হচ্ছে, তা প্রায় নিশ্চিতভাবে অবিদ্যা। অবিদ্যা কেবল তথ্যের অভাব নয়, বরং বাস্তবতার একটি মৌলিক ভুল ধারণা, আত্মের উপর অনাত্মের একটি আরোপ (অধ্যাস)। এটি "অনাদি" হিসাবে বিবেচিত হয় কারণ এর শুরুর কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই, তবে এটি শাশ্বত নয় এই অর্থে যে এটি চূড়ান্তভাবে বাস্তব এবং অপরিবর্তনীয়। এটি দূর করা যেতে পারে।

কেবল জ্ঞানের অভাব থেকে পার্থক্য: গুরুত্বপূর্ণ যোগ্যতা "দেবদত্ত-নিষ্ঠ-প্রমাভাব-অতিরিক্ত" (দেবদত্তের মধ্যে থাকা বৈধ জ্ঞানের অভাব থেকে স্বতন্ত্র) অত্যাবশ্যক। এটি তুলে ধরে যে "নিবর্তকং" (দূরকারী) কেবল তথ্যের শূন্যতা পূরণ করার বিষয় নয়। যদি এটি কেবল জ্ঞানের অভাব হতো, তবে কেবল তথ্য অর্জনই যথেষ্ট হত। তবে, অবিদ্যা একটি গভীর, আরও মৌলিক ত্রুটি। অতএব, দূরকারীকে কেবল জ্ঞানের একটি শূন্যস্থান অপসারণের বাইরেও কিছু হতে হবে। এটি একটি ইতিবাচক এবং রূপান্তরকারী জ্ঞান (যেমন ব্রহ্মজ্ঞান) বোঝায়, যা সক্রিয়ভাবে গভীর-মূল অজ্ঞতাকে দমন করে এবং নির্মূল করে।

দূরকারীর প্রকৃতি (নিবর্তক): "সাধ্যম্" এই অনাদি, স্বাধীন অজ্ঞতাকে বাতিল করে, এমন কিছুর প্রকৃতি প্রতিষ্ঠা করতে চায়। অদ্বৈতে, এই দূরকারীকে সাধারণত ব্রহ্মজ্ঞান বা আত্মজ্ঞান (আত্ম/ব্রহ্মের জ্ঞান) হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। এই জ্ঞান সাধারণ অর্থে ধারণাগত বা বুদ্ধিবৃত্তিক নয়, বরং নিজের প্রকৃত প্রকৃতিকে ব্রহ্ম হিসাবে সরাসরি, স্বজ্ঞাত উপলব্ধি, যা অবিদ্যাকে সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত করে। যেমন আলো অন্ধকার দূর করে, তেমনি জ্ঞান (জ্ঞান) অজ্ঞান (অজ্ঞান/অবিদ্যা) দূর করে।

দার্শনিক যুক্তির জন্য প্রভাব: এই "সাধ্যম্" এমন একটি যুক্তি স্থাপন করে, যেখানে প্রস্তাবক নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ প্রদর্শন করতে চান:
যেখানে প্রকৃতপক্ষে একটি অনাদি, স্বাধীন অজ্ঞান (অবিদ্যা) রয়েছে।
যে এই অবিদ্যা কেবল জ্ঞানের অভাব নয়, বরং একটি ইতিবাচক, যদিও মায়াময় সত্তা।
যেখানে একটি নির্দিষ্ট উপায় বা সত্তা (সেই "নিবর্তকং") বিদ্যমান, যার এই অবিদ্যাকে সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করার ক্ষমতা রয়েছে।
"নিবর্তকং" কেবল "প্রমাভাব"-এর শূন্যতা পূরণের জন্য তথ্য অর্জনের চেয়ে স্বতন্ত্র এবং আরও গভীর হতে হবে। এটি একটি রূপান্তরকারী অন্তর্দৃষ্টি হতে হবে, যা সাধারণ জ্ঞানকে অতিক্রম করে।

এসব হলো অনুমানের মূল দাবি, যা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই যুক্তির মূল প্রতিপাদ্য হলো যে, দেবদত্তের বৈধ জ্ঞান (প্রমাণ-জ্ঞানম্) কেবল জ্ঞানের অভাব (প্রমাভাব) দূর করে না। বরং, এটি সক্রিয়ভাবে একটি ইতিবাচক, অনাদি সত্তাকে নিবর্তিত করে বা বাতিল করে, যা হলো অবিদ্যা। "জ্ঞানের অভাব থেকে স্বতন্ত্র"—এই বাক্যটি অত্যন্ত জোরপূর্বক সেই বিরোধী মতকে খণ্ডন করে যে, অজ্ঞান কেবল একটি শূন্যতা বা তথ্যের অনুপস্থিতি মাত্র। এই যুক্তি জোরালোভাবে দাবি করে, অপসারণ করা হচ্ছে, এমন একটি ইতিবাচক সত্তা রয়েছে—সেই সত্তাটি হলো অবিদ্যা। এটি অদ্বৈত বেদান্তের অবিদ্যার "ভাবরূপত্ব" বা ইতিবাচক অস্তিত্বের ধারণাকে সমর্থন করে, যেখানে অবিদ্যাকে একটি ইতিবাচক কিন্তু মিথ্যা আবরণ হিসেবে দেখা হয়, যা আত্ম-স্বরূপকে ঢেকে রাখে। এই সাধ্য প্রমাণ করতে চায় যে, জ্ঞান কেবল অন্ধকারকে দূর করে না, বরং অন্ধকারের উৎসের মতো একটি ইতিবাচক সত্তাকে বিলীন করে দেয়।

হেতুঃ (The Reason): প্রমাণত্বাৎ (কারণ এটি প্রমাণ—বৈধ জ্ঞান): এই হেতু বা কারণ, এই অনুমানের ভিত্তি স্থাপন করে যে, বৈধ জ্ঞান (প্রমাণ) স্বয়ংক্রিয়ভাবে এবং সক্রিয়ভাবে অজ্ঞানতাকে (অবিদ্যা) দূর করে। এই যুক্তিটি প্রমাণ-এর সংজ্ঞাগত এবং কার্যকরী ক্ষমতার উপর গভীরভাবে প্রোথিত। ভারতীয় জ্ঞানতত্ত্ব অনুসারে, 'প্রমাণ' কেবল তথ্য সংগ্রহ করা নয়, বরং তা সত্যের উন্মোচন এবং ভ্রান্ত ধারণার অবসান ঘটানোর একটি শক্তিশালী মাধ্যম।

যদি জ্ঞানের কাজ কেবল কোনো অনুপস্থিতি পূরণ করা হতো, অর্থাৎ, অজ্ঞানের অভাব দূর করা, তবে এর কার্যকারিতা অনেকটাই সীমিত এবং অগভীর হতো। কিন্তু প্রমাণ একটি সক্রিয়, রূপান্তরমূলক জ্ঞানীয় প্রক্রিয়াকে বোঝায়। এটি সুপ্ত সত্যকে প্রকাশ করে এবং যে-কোনো আবরণ বা ভ্রান্ত ধারণা, যা এতদিন সত্যকে ঢেকে রেখেছিল, তাকে কার্যকরভাবে অপসারিত করে। যখন আমরা কোনো কিছুকে 'বৈধ জ্ঞান' হিসেবে স্বীকৃতি দিই, তখন সেই অর্জনের অভিজ্ঞতাই ইঙ্গিত করে যে, পূর্বে কোনো ইতিবাচক সত্তা—অজ্ঞানতা বা অবিদ্যা—সত্যকে আবৃত করে রেখেছিল।

উদাহরণস্বরূপ, রজ্জু-সর্প ভ্রমের (দড়িকে সাপ বলে ভুল করা) শাস্ত্রীয় দৃষ্টান্তটি এই হেতুর সারমর্ম ব্যাখ্যা করে। যখন একজন ব্যক্তি আবছা আলোতে একটি দড়িকে সাপ বলে ভুল করে এবং পরবর্তীতে "এটি একটি দড়ি", এই বৈধ জ্ঞান (প্রমাণ-জ্ঞানম্) উদিত হয়, তখন এই জ্ঞান কেবল সাপের জ্ঞানের অভাবকে দূর করে না। বরং, এটি সাপের মিথ্যা আরোপণ (অধ্যাস) নামক ইতিবাচক ভ্রান্তিকে সম্পূর্ণরূপে নিবৃত্ত করে। এই অধ্যাস কেবল তথ্যের অভাব ছিল না; এটি ছিল অজ্ঞানতা দ্বারা সৃষ্ট একটি সক্রিয় মানসিক প্রক্ষেপণ। জ্ঞান তার অন্তর্নিহিত "প্রমাণত্ব" গুণেই সেই মায়ার আবরণকে ছিন্ন করে যা এতদিন দড়ির প্রকৃত স্বরূপকে আবৃত করে রেখেছিল। এই প্রক্রিয়াটি প্রমাণ করে যে, অজ্ঞানতা একটি নিছক শূন্যতা নয়, বরং একটি ইতিবাচক শক্তি, যা সক্রিয়ভাবে সত্যকে বিকৃত করে এবং একমাত্র বৈধ জ্ঞানের মাধ্যমেই তাকে দূর করা সম্ভব।

দৃষ্টান্তঃ (The Example): যজ্ঞদত্তাদি-গত-প্রমাণ-জ্ঞানবৎ (যেমন যজ্ঞদত্তাদিতে স্থিত বৈধ জ্ঞান)। এই দৃষ্টান্ত অনুমানটিকে ব্যাখ্যা ও শক্তিশালী করার জন্য একটি সুস্পষ্ট, ব্যাবহারিক এবং পরিচিত উদাহরণ প্রদান করে। 'যজ্ঞদত্ত' ভারতীয় দর্শনে একটি সাধারণ নাম, যা এমন কোনো ব্যক্তিকে প্রতিনিধিত্ব করে, যার বৈধ জ্ঞান স্পষ্টভাবে একটি ইতিবাচক অজ্ঞানকে দূর করার ক্ষমতা রাখে। এটি মূলত একটি আদর্শ উদাহরণ যা অনুমানের বিমূর্ত ধারণাকে মূর্ত করে তোলে।