অবিদ্যা-তত্ত্ব-দীপিকা: তেতাল্লিশ



বৈদিক আচারের ভিত্তি কী? বৈদিক আচারের পুরো কাঠামোটিই এই সুনির্দিষ্ট ভাষাগত ম্যাপিং বা শব্দের প্রতি সতর্ক আনুগত্যের উপর নির্ভরশীল। এই নির্ভরতার ফলেই, প্রতিটি যজ্ঞ তার নির্দিষ্ট, ঐশ্বরিকভাবে নির্ধারিত ফল সঠিকভাবে উৎপন্ন করতে পারে।

'শব্দান্তর' নীতিটি যজ্ঞের বর্ণনাতে ব্যবহৃত ক্রিয়াপদের সামান্য ভিন্নতা ব্যবহার করে প্রতিটি বৈদিক আচারকে স্বতন্ত্র করে তোলে। আপাতদৃষ্টিতে, এটি একই লক্ষ্যযুক্ত যজ্ঞগুলির পবিত্রতা রক্ষা করে এবং তাদের সুনির্দিষ্ট ফলপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য এই ভাষাগত নির্ভুলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

নির্দেশমূলক ধর্মের প্রয়োগ পদ্ধতি: মূল বিষয় হলো, ভাষার মাধ্যমে পার্থক্য করার (শব্দান্তর) নিয়মটি কেন বৈদিক আদেশ বা নির্দেশগুলিকে (বিধি) মেনে চলার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনগত ভিত্তি তৈরি করে। আগে দেখি, ভাষাগত পার্থক্য কেন জরুরি। এর গুরুত্ব কেবল ব্যাকরণের নিয়মের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি বৈদিক নির্দেশগুলিকে বাধ্যতামূলক ও বৈধ করার জন্য একটি কেন্দ্রীয় আইনগত প্রক্রিয়া হিসেবে কাজ করে।

মীমাংসা বেদের সম্পর্কে কী মনে করে? মীমাংসা দর্শন মনে করে, বেদ (শ্রুতি) শাশ্বত (চিরন্তন) এবং নিখুঁত বা নির্ভুল (অভ্রান্ত)। মীমাংসার মূল কাজ কী? এই দর্শনের মূল ভিত্তি হলো বিধির (আদেশ বা নির্দেশ) ব্যাখ্যা করা। 'বিধি' বলতে বোঝায় এমন ধর্মীয় আদেশ, যা মানুষ সাধারণ জ্ঞান বা অনুমান দিয়ে জানতে পারে না। এই বিষয়গুলো শুধু বেদের মাধ্যমেই জানা যায়। এই নির্দেশ বা আদেশের কাজ কী? এই আদেশগুলি ধর্মীয় অনুশীলনকারীকে একটি নির্দিষ্ট কাজ করতে চালিত করে, যার লক্ষ্য হলো একটি নির্দিষ্ট ফল (উদ্দিষ্ট ফল) লাভ করা।

মীমাংসা-মতে, বেদ অভ্রান্ত। তাই, শব্দ বা ভাষার নির্ভুল পার্থক্যকরণ (শব্দান্তর) খুবই জরুরি, কারণ এটি বৈদিক নির্দেশ (বিধি)-কে কার্যকর করে তোলে। এই নির্দেশগুলি মানুষকে এমন ধর্মীয় কাজ করতে প্রেরণা দেয়, যার মাধ্যমে তারা বেদে বলা নির্দিষ্ট ফল লাভ করতে পারে।

আদেশের (বিধি) বৈধতা রক্ষা: 'শব্দান্তর' নীতিটি না থাকলে, বৈদিক নির্দেশগুলির (বিধি) কর্তৃত্ব নষ্ট হয়ে যেত। এটিই নিশ্চিত করে যে, বৈদিক আচারগুলি বাধ্যতামূলক কর্তব্য এবং ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয় নয়। 'শব্দান্তর' না থাকলে কী হতো? যদি যজ্ঞের বর্ণনা করার জন্য ব্যবহৃত দুটি আলাদা ক্রিয়াপদকে একই অর্থযুক্ত বা বিনিময়যোগ্য প্রতিশব্দ হিসেবে ধরে নেওয়া হতো, তবে বিধির (আদেশ) দার্শনিক ক্ষমতা মারাত্মকভাবে দুর্বল বা বাতিল হয়ে যেত; অর্থাৎ, ধর্মীয় কাজ করার প্রাথমিক বাধ্যবাধকতার (প্রবৃত্তি-বচন) কর্তৃত্ব থাকত না।

শব্দান্তর কী ভূমিকা পালন করে? 'শব্দান্তর' একটি আবশ্যিক ব্যাখ্যামূলক সুরক্ষা (হার্মেনিউটিক সুরক্ষা) হিসেবে কাজ করে। এর কাজ হলো, ক্রিয়াপদগুলির মধ্যে অর্থগত (শব্দার্থিক) এবং আচারগত পৃথকীকরণকে শক্তভাবে প্রতিষ্ঠা করা। এর চূড়ান্ত ফল কী? এটি নিশ্চিত করে যে, ভাষাগত পার্থক্যগুলি কেবল কথার কথা বা ভাষার বিকল্প নয়, বরং অনন্য আধ্যাত্মিক অংশগ্রহণের ইঙ্গিতবাহী সুনির্দিষ্ট নির্দেশাবলী। ফলস্বরূপ, এই নীতি সম্পূর্ণ বৈদিক আদেশের কাঠামোকে বৈধতা দেয়।

আচার-অনুষ্ঠানের প্রকৃতি কী? এই বৈধতার কারণে, বৈদিক আচার-অনুষ্ঠানগুলি সর্বজনীনভাবে বাধ্যতামূলক কর্তব্য (ধর্ম) হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বিষয়ভিত্তিক পছন্দের বিষয় থাকে না। 'শব্দান্তর' না থাকলে, বৈদিক আদেশের (বিধি) কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ত। তাই এটি ক্রিয়াপদগুলির অর্থ এবং আচারগত পার্থক্য রক্ষা করে। এর ফলে, বৈদিক আচারগুলি কেবল পছন্দের কাজ না হয়ে, সকলের জন্য বাধ্যতামূলক ধর্মীয় কর্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। ভাষাগত বিভাজন হলো কর্ম-বহনকারী ক্রিয়াপদগুলির পার্থক্য—'শব্দান্তর' নীতির মূল ভিত্তি কী এবং কেন যজ্ঞের জন্য ব্যবহৃত ক্রিয়াপদগুলি (কর্ম-বহনকারী শব্দ) একে অপরের থেকে আলাদা।

'শব্দান্তর'-এর মূল ভিত্তি: এর মৌলিক ভিত্তি হলো এই ধারণা যে, যজ্ঞ বা কাজ বোঝাতে ব্যবহৃত শব্দগুলি (কর্ম-প্রতিপাদক-শব্দ) একে অপরের বিনিময়যোগ্য প্রতিশব্দ নয়। প্রতিটি ক্রিয়াপদ বা তার রূপের একটি বিশেষ অর্থগত ওজন (শব্দার্থিক ওজন) আছে। এর একটি নির্দিষ্ট আচারিক প্রভাব আছে। এই বিশেষ অর্থ এবং প্রভাবের জন্য, প্রতিটি ক্রিয়াপদ দ্ব্যর্থহীনভাবে একটি আলাদা এবং স্বতন্ত্র যজ্ঞ সম্পাদনের দিকে নির্দেশ করে। 'শব্দান্তর' নীতির মূলে রয়েছে এই বিশ্বাস যে, যজ্ঞের বর্ণনায় ব্যবহৃত প্রতিটি ক্রিয়াপদ একটি আলাদা এবং বিশেষ অর্থ বহন করে, যা নিশ্চিত করে যে, দুটি যজ্ঞ কখনোই এক নয়।

দায়িত্বের অক্ষ: বর্ণনামূলক বনাম নির্দেশমূলক—শব্দান্তর-এর সবচেয়ে শক্তিশালী প্রদর্শন হলো বর্ণনামূলক ক্রিয়াপদ এবং নির্দেশমূলক ক্রিয়াপদগুলির মধ্যে পার্থক্য, যা মূলত ব্যাকরণগত মনোভাবের (mood) দ্বারা পৃথকীকৃত।

'জুহোতি' (Juhoti—he/she/one offers oblation—আহুতি দেয়) এক বর্ণনামূলক কাজ—এই' ক্রিয়াপদটির বৈদিক ব্যবহার রয়েছে। 'জুহোতি' কঠোরভাবে বাধ্যতামূলক কোনো আচার নয়, বরং একটি সাধারণ বা অভ্যস্ত দানের কাজ। 'জুহোতি' মানে কী? এর সরল অর্থ হলো 'আহুতি দেয়'। বৈদিক গ্রন্থে এটি সাধারণত একটি বর্ণনামূলক (descriptive) বা অভ্যস্ত (habitual) আহুতি দানের কাজকে বোঝায়। এই ক্রিয়াপদের ব্যবহার বোঝায়, কাজটি ঐচ্ছিক (স্বেচ্ছামূলক) অথবা বাধ্যতামূলক নয়। এর প্রধান কাজ হলো দানের কাজটি বর্ণনা করা, কঠোরভাবে কোনো আচারগত বাধ্যবাধকতা প্রতিষ্ঠা করা নয়।

"জুহোতি" শব্দের অর্থ আহুতি দেওয়া (যেমন আগুনে কিছু নিবেদন করা)। এটি সাধারণত যজ্ঞ বা পূজা-অর্চনার প্রসঙ্গে ব্যবহৃত হয়। এটা সাধারণ দান বা ভক্তির প্রকাশ হতে পারে। এখানে কঠোর নিয়ম বা বাধ্যবাধকতা নেই। মানে, কেউ চাইলে করে, না করলে শাস্তি নেই। তাই এটি হচ্ছে "যে-কাজ ঘটে, কিন্তু ঘটতেই হবে এমন নয়"—এ ধরনের কাজ। সাধারণত উদাহরণ বা পর্যবেক্ষণমূলক প্রেক্ষাপটে এই ক্রিয়াপদ ব্যবহার হয়। যেমন, “লোকেরা আহুতি দেয়”— এভাবে আচরণ বোঝাতে।

এই কাজ থেকে যে আধ্যাত্মিক পুণ্য পাওয়া যায়, তা মূলত ব্যক্তিগত। মীমাংসা দর্শনের মতো নিয়মমাফিক যজ্ঞ করলে যে নির্দিষ্ট ফল (যেমন স্বর্গ, বর্ষণ, বংশবৃদ্ধি) পাওয়া যায়, তার সঙ্গে এটা সরাসরি যুক্ত নয়। এখানে ফল হলো—একধরনের ব্যক্তিগত সন্তুষ্টি, ভক্তির আনন্দ, বা আধ্যাত্মিক উপকার। আনুষ্ঠানিক যজ্ঞের আহুতি (বাধ্যতামূলক)—নির্দিষ্ট বৈদিক ফলের সঙ্গে যুক্ত। “জুহোতি” (ঐচ্ছিক আহুতি)—ব্যক্তিগত স্তরের, ফল নির্দিষ্ট নয়, বরং ভক্তি বা স্বতঃস্ফূর্ত দানের আনন্দ। “জুহোতি” হলো একধরনের ঐচ্ছিক বা অভ্যস্ত আহুতি দেওয়া, যা বাধ্যতামূলক নয়। এর ফল নির্দিষ্ট বৈদিক আচারফল নয়, বরং ব্যক্তিগত আধ্যাত্মিক পুণ্য বা ভক্তির আনন্দ।

অন্যদিকে, জূহুয়াৎ (Juhuyāt—he/she/one should offer oblation / ought to offer) মানে, “আহুতি দেওয়া উচিত”—নির্দেশমূলক/বাধ্যতামূলক রূপ। ব্যাকরণে এটি লিঙ্ প্রত্যয় (optative mood): “করবে/করা উচিত”—এমন বাধ্যতার ভাব প্রকাশ করে। জুহোতি—“আহুতি দেয়”—বর্ণনা/বিবরণ (কী হয়, সেটা বলা)। জূহুয়াৎ—“আহুতি দেওয়া উচিত”—বিধান/আদেশ (কী করা অবশ্যক, সেটা বলা)। ফলে কাজটি ঐচ্ছিক থেকে কর্তব্যে পরিণত হয়।

লিঙ্ রূপ (জূহুয়াৎ) দেখলে মীমাংসা তা বিধি (বিধান/নিয়োগ) হিসেবে পড়ে—এ এক প্রবৃত্তি-বচন: কাজ করাতে উৎসাহ দেয়—“এটা করো।” এটি স্বতন্ত্র যজ্ঞীয় কর্মকে আচারিকভাবে বাধ্যতামূলক করে তোলে। নির্দিষ্ট আধ্যাত্মিক/বস্তুগত ফল পেতে হলে এই কাজ করতেই হবে। না করলে কী হবে? ‘অপালন’ দোষের উদ্‌ভব হবে, যার অর্থ ‘আচারভঙ্গ/আধ্যাত্মিক ত্রুটি (doṣa) + কাঙ্ক্ষিত ফল না-পাওয়া’। তাই এর আবশ্যকতা/বাধ্যতা স্পষ্ট হয়।

জূহুয়াৎ শব্দের অর্থ হলো “আহুতি দেওয়া উচিত।” এখানে বাধ্যবাধকতার ইঙ্গিত আছে। সাধারণ বর্ণনামূলক রূপ (“জুহোতি”—সে আহুতি দেয়) থেকে এই রূপ ভিন্ন, কারণ এটি আর কেবল ঘটনার বিবরণ নয়, বরং একটি নির্দেশ বা বিধান হয়ে দাঁড়ায়। যখন “জূহুয়াৎ” বলা হয়, তখন কাজটি ঐচ্ছিক থাকে না। এটি একটি কর্তব্যে রূপান্তরিত হয়। ব্যাকরণগতভাবে এটি লিঙ্ প্রত্যয়ের (optative mood) সাথে যুক্ত, যা মীমাংসা দর্শনের মতে বাধ্যতামূলক কাজ নির্দেশ করে। এই পরিবর্তনের ফলে আহুতি দেওয়া আর কেবল ভক্তির কাজ নয়, বরং একটি নির্দিষ্ট যজ্ঞীয় আচারে পরিণত হয়, যা সম্পাদন করতেই হবে। কেননা নির্দিষ্ট আধ্যাত্মিক বা বস্তুগত ফল পেতে হলে এই কর্তব্য অবশ্যই পালন করা আবশ্যক।

যদি কেউ “জূহুয়াৎ” দ্বারা নির্দেশিত কাজ না করে, তাহলে তার আধ্যাত্মিক ত্রুটি (doṣa) হবে এবং কাঙ্ক্ষিত ফল লাভ ব্যাহত হবে। তাই এর বাধ্যতামূলক স্বভাব আরও পরিষ্কার হয়ে ওঠে। “জূহুয়াৎ” মানে হলো—আহুতি দেওয়া, যা শুধু বর্ণনামূলক কাজ নয়, বরং একটি নির্ধারিত কর্তব্য, যা না করলে আচারভঙ্গ ও ফলহানি ঘটবে।

উল্লেখ্য, দুটি ক্রিয়াপদই "বলিদান করা" বা "যজ্ঞ করা" বোঝালেও তাদের মধ্যেকার সূক্ষ্ম পার্থক্যগুলি ভিন্ন পদ্ধতি, উদ্দেশ্য এবং সম্ভাব্য ফলাফল-সহ স্বতন্ত্র আচারগুলিকে বোঝার এবং পালনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। Juhoti—descriptive / habitual—“offers oblation”; Juhuyāt—prescriptive / obligatory—“should offer oblation”

"দেবতি" শব্দের অর্থ "বলিদান করে" বা "ঐশ্বরিক সত্তাকে নিবেদন করে"। এখানে শুধু খাবার, ঘি বা দান দেওয়ার কাজ নয়—বরং ঐশ্বরিক সত্তাকে উদ্দেশ্য করে নিবেদন করা বোঝানো হয়। এটি অনেকসময় নির্দিষ্ট দেবতা (devān) বা নির্দিষ্ট নৈবেদ্য (যা অর্পণ করা হচ্ছে)-এর সাথে সম্পর্কিত। শব্দটির ভেতরে একধরনের অতীন্দ্রিয়তা (transcendence) বা পবিত্রতার বিশেষ ছোঁয়া আছে। “দেবতি” মানে হলো—বলিদান বা নিবেদনকে শুধু একটি আচার নয়, বরং এক গভীর আধ্যাত্মিক বিনিময় হিসেবে দেখা। এতে লক্ষ্য থাকে দেবতার সঙ্গে সরাসরি যোগ ও আশীর্বাদ লাভ।

এটি "জুহোতি"-র মতো শুধু শারীরিক প্রক্রিয়ার দিকে জোর দেয় না, বরং জোর দেয়—ঐশ্বরিক সত্তার সঙ্গে আধ্যাত্মিক বিনিময়ে। তাই এটি একধরনের উচ্চতর, সূক্ষ্মতর আহুতি। দেবতি শুধুই জিনিস দেওয়া নয়, বরং ঐশ্বরিক শক্তিকে আহ্বান করা, আশীর্বাদ প্রার্থনা করা, সরাসরি ঐশ্বরিক সংযোগ ঘটানো। নৈবেদ্যের গুরুত্ব এখানে শুধু দানযোগ্য বস্তুতে নয়, বরং তার পবিত্রতা এবং যাকে নিবেদন করা হচ্ছে সেই ঐশ্বরিক প্রাপকের মধ্যে। Devati—“offers sacrifice / makes an oblation to the deity.”—the spiritual exchange with the divine—a higher, more subtle form of offering.

যাজৎ বা yajati—“performs sacrifice / offers sacrifice.” এটি মূলত যজ্ঞ বা পূর্ণ আচারিক বলিদান বোঝায়। “যাজৎ” শুধু নিবেদন (oblation) বোঝায় না, বরং পুরো প্রক্রিয়া বা পদ্ধতির উপর জোর দেয়। এর মধ্যে থাকে—মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ, নির্দিষ্ট আচারিক ভঙ্গি (gestures), বিশদ আচারপদ্ধতি (ritual steps)। এই ক্রিয়াপদ সাধারণত বড়ো আকারের যজ্ঞ (অগ্নি-ভিত্তিক fire sacrifices)-এর সঙ্গে যুক্ত; যেখানে—মন্ত্রপাঠ, নিবেদন (নৈবেদ্য), যাজক বা পুরোহিতদের নির্দিষ্ট ভূমিকা—সবই কঠোরভাবে সংজ্ঞায়িত।

“যাজৎ”-এ গুরুত্ব দেওয়া হয়—আচার সঠিকভাবে হচ্ছে কি না, সব ধাপ মেনে হচ্ছে কি না। তাই এখানে মূল মনোযোগ যজ্ঞের “কীভাবে” (the how of the ritual)-এর উপর। যখন আচার সঠিকভাবে সম্পাদিত হয়, তখন দেবতারা তুষ্ট হন। এর ফলে নির্দিষ্ট কাঙ্ক্ষিত ফল (আশীর্বাদ, বৃষ্টি, সমৃদ্ধি ইত্যাদি) লাভ হয়। “যাজৎ” মানে হলো পূর্ণ আচারিক বলিদান, যেখানে সূক্ষ্ম আচারপদ্ধতি, মন্ত্র, ভঙ্গি, পুরোহিতের ভূমিকা ইত্যাদি সব কিছুর সঠিক সম্পাদনের উপর জোর দেওয়া হয়। এটি যজ্ঞের পদ্ধতিগত দিককে বোঝায়।

এখন, বোঝার সুবিধার্থে উপরের চারটি বিষয়কে একসাথে অল্পকথায় লিখছি—

১. জুহোতি—বর্ণনামূলক স্তর
অর্থ: “আহুতি দেয়।”
স্বভাব: কেবল একটি সাধারণ বা অভ্যস্ত নিবেদন বোঝায়।
বৈশিষ্ট্য: ঐচ্ছিক, স্বতঃস্ফূর্ত, বাধ্যতামূলক নয়।
ফল: ব্যক্তিগত পুণ্য বা ভক্তির আনন্দ, নির্দিষ্ট বৈদিক ফল নয়।

২. জূহুয়াৎ—বিধানমূলক স্তর
অর্থ: “আহুতি দেওয়া উচিত।”
স্বভাব: এখানে বর্ণনা আর নেই, বরং স্পষ্ট আদেশ আছে।
বৈশিষ্ট্য: এটি কর্তব্যে রূপান্তরিত হয়। না করলে আচারভঙ্গ ও ত্রুটি হয়।
ফল: নির্দিষ্ট আধ্যাত্মিক বা বস্তুগত ফল (যেমন স্বর্গ, বৃষ্টি) লাভ হয়।