৩.৬. পরিণতি—সংসার এবং মুক্তির আহ্বান: উপনিষদে বলা আছে, “যে এখানে বহুত্ব দেখে, সে মৃত্যু থেকে মৃত্যুতে যায়।” (Mṛtyoḥ sa mṛtyum āpnoti) এর মানে সরাসরি মৃত্যু-হুমকি নয় কিন্তু! এটা হলো একটি দার্শনিক সতর্কবাণী—যে বহুত্বকেই চূড়ান্ত সত্য মনে করে, সে আসলে অজ্ঞানতার বন্ধনে পড়ে বার বার জন্ম-মৃত্যুর চক্রে ঘুরতে থাকে।
বহুত্ব দেখার আসল ভুলটা কোথায়? ব্রহ্ম একটিই এবং অভেদ। কিন্তু যখন কেউ জগতে শুধু পার্থক্য (ভেদ) দেখে, তখন সে আসল ঐক্য (Brahman—oneness) বুঝতে পারে না। এই ভেদ-দৃষ্টিই অবিদ্যা (অজ্ঞান)। উদাহরণস্বরূপ, কোনো দড়িকে অন্ধকারে সাপ মনে করা। আসল সত্য একটাই (দড়ি), কিন্তু ভুল দেখে মনে হলো “ভিন্ন কিছু আছে” (সাপ)।
এতে কীভাবে জড়িয়ে পড়ে মানুষ? অজ্ঞানতার কারণে আত্মাকে ভুল করে মনে করা হয়—“আমি আলাদা ব্যক্তি, কর্তা, ভোগী।” এই ভুল পরিচয় থেকেই আসে—কর্ম (karma), অর্থাৎ কাজকর্ম, ইচ্ছা, ভোগ। কর্ম থেকে আসে—ফল (karmaphala)—সুখ-দুঃখ। এই কর্মফল মানুষকে বেঁধে ফেলে জন্ম-মৃত্যুর চক্রে (saṁsāra)। দৃষ্টান্তস্বরূপ, একজন অভিনেতা মঞ্চে চরিত্রে ঢুকে যায়। সে যদি ভুলে যায় যে, আসলে সে অভিনেতা, তখন নাটকের সুখ-দুঃখই তার জীবনের সত্য হয়ে দাঁড়ায়। তেমনি জগতের বহুত্বে আটকে-থাকা মানুষ ভুলে যায়—আসল পরিচয়, সে ব্রহ্ম।
অভেদ উপলব্ধি কেন জরুরি? এই শ্লোকটি আসলে বলে, যদি ঐক্য না বোঝো—তুমি দুঃখ-জন্ম-মৃত্যুর চক্রে আটকে থাকবে। যদি ঐক্য বোঝো (অভেদ-দর্শন), তখনই মুক্তি (mokṣa)। উদাহরণ দিই। আয়নায় অনেক প্রতিচ্ছবি দেখা গেলেও, আসল মানুষ একজনই। যদি প্রতিচ্ছবিগুলোকে আলাদা মানুষ ভাবো, তুমি ভুলে যাবে আসল সত্য। তেমনি ব্রহ্ম-জ্ঞান ছাড়া বহুত্বকে চূড়ান্ত সত্য ভেবে দুঃখ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না।
শাস্ত্রীয় সতর্কতা: বহুত্বকে সত্য ভাবলে—বার বার জন্ম-মৃত্যুর ফাঁদে পড়তে হবে। এর কারণ, বহুত্ব দেখাই অবিদ্যা—জগতে কর্ম-কর্মফল—সংসার। এর সমাধান: অভেদ উপলব্ধি (ব্রহ্ম একমাত্র সত্য, তা বোঝা); তবেই মুক্তি, দুঃখের শেষ। ভেদ দেখাই হলো বন্ধন, অভেদ উপলব্ধিই হলো মুক্তি।
অদ্বৈত দর্শন নানা ধরনের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করে, যেমন—
রূপক চ্যালেঞ্জ (একাধিক ব্রহ্ম থাকতে পারে?) এর উত্তর: “Ekameva Advitīyam” (একই, দ্বিতীয়বিহীন); মানে, ব্রহ্ম একটিই, আর কিছু নেই।
তাত্ত্বিক চ্যালেঞ্জ (ভাগ বা জটিলতা থাকতে পারে?) এর উত্তর: ত্রি-ভেদ-নিরাকরণম্—বিশেষ করে স্বগত ভেদ খণ্ডন; মানে, ব্রহ্মের ভেতরে কোনো অংশ বা আলাদা বৈশিষ্ট্য নেই।
জ্ঞানতাত্ত্বিক চ্যালেঞ্জ (আমাদের অভিজ্ঞতায় তো ভেদ আছে?) এর উত্তর: ব্যাবহারিক সত্য (Vyavahārika Satya); মানে, জগৎ ব্যাবহারিকভাবে সত্য, কিন্তু পরম সত্যে একমাত্র ব্রহ্মই সত্য। যেমন, স্বপ্নে যা দেখা যায়—স্বপ্ন চলা পর্যন্ত সত্য, কিন্তু জাগরণের পর বোঝা যায়—আসল সত্য অন্য।
যুক্তির কাঠামোতে সূক্ষ্ম সংযোজন: ন্যায় দর্শনের যৌক্তিক ধারণা (যেমন অভাব বা ভেদের যুক্তি) অদ্বৈতে আনা হয়েছে—প্রমাণকে আরও শক্তিশালী করতে। মায়ার কার্যকারিতা বুদ্ধি (Buddhi-vṛtti) এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে—দেখানোর জন্য যে, বহুত্ব কেবল বাইরের শক্তি নয়, ভেতরের জ্ঞানপ্রক্রিয়ার ফলও। যেমন, চশমায় লাল কাচ থাকলে সব কিছু লাল দেখায়। বাইরের জগতের রং লাল নয়, কিন্তু আমাদের দেখার প্রক্রিয়া ওতে রং লাগিয়ে দিচ্ছে। মায়া ও বুদ্ধির কাজও ঠিক তেমন। বহুত্ব দেখাই অজ্ঞানতা, আর অজ্ঞানতা থেকেই কর্মফল তথা জন্ম-মৃত্যু। মুক্তি পেতে চাইলে, “সত্যম্ জ্ঞানম্ অনন্তম্” ব্রহ্মের উপলব্ধি জরুরি।
এখন আসি একটি ভিন্ন আলোচনায়। প্রাচীন ভারতীয় ধর্মব্যাখ্যা ও সত্তাতত্ত্বের একটি সমালোচনামূলক অনুসন্ধানের মধ্য দিয়ে মীমাংসা নীতি, অদ্বৈত জ্ঞানতত্ত্ব, এবং ধারণাগত সংঘাতের নিরসন করার চেষ্টা করছি।
এক. মৌলিক ধর্মব্যাখ্যা: পূর্ব-মীমাংসা ও ধর্মের অনুসন্ধান
মীমাংসার সংজ্ঞা: পরিধি ও নামাঙ্কন
১) মীমাংসার মৌলিক পরিচয়: এর অর্থ: “মীমাংসা” মানে হলো সমালোচনামূলক অনুসন্ধান বা বিচার। এর উদ্দেশ্য, বেদের আচার-অনুষ্ঠান ও কর্তব্য (ধর্ম) কীভাবে পালন করতে হবে, তা খুঁজে বের করা। তাই একে বলা হয়—পূর্ব-মীমাংসা (Pūrva-Mīmāṁsā) বা কর্ম-মীমাংসা, কারণ এর লক্ষ্য হলো কর্ম (যজ্ঞ, আচার) ব্যাখ্যা করা। সূত্রের শুরুতেই আছে: “athāto dharma jijñāsā” — “এখন কর্তব্য (ধর্ম)-এর অনুসন্ধান।” দৃষ্টান্তস্বরূপ, আইন-কানুনের একটি বই থাকে, যেখানে বলা হয়—কোনো নাগরিক কী করলে শাস্তি পাবে বা পুরস্কৃত হবে। মীমাংসা বেদের “আইনবিধি” অংশ বিশ্লেষণ করে।
২) মীমাংসার মূল লক্ষ্য: মীমাংসা প্রমাণ করতে চায়, বেদের প্রতিটি আচার-অনুষ্ঠান, যেগুলো কখনোবা তুচ্ছ মনে হয়, আসলে মানুষের আধ্যাত্মিক উন্নতি ও চূড়ান্ত মঙ্গল-এর জন্য অপরিহার্য। তাই এর মূল চিন্তা, “ধর্ম কী? আর কেন সেটা পালন করা উচিত?”
৩) মীমাংসা বনাম বেদান্ত: মীমাংসা বেদের প্রাথমিক অংশ (ব্রাহ্মণ, সংহিতা) বিশ্লেষণ করে। উত্তর-মীমাংসা (অর্থাৎ বেদান্ত) বেদের শেষ অংশ তথা উপনিষদ বিশ্লেষণ করে। দুই ধারাই মানুষের মুক্তি বা কল্যাণ নিয়ে ভাবে, তবে পথ আলাদা—মীমাংসা = আচার-কর্মের উপর জোর দেয়। বেদান্ত = জ্ঞান ও ব্রহ্মের অভিজ্ঞতার উপর জোর দেয়।
৪) আত্মার ধারণা: মীমাংসা মতে আত্মা শাশ্বত, সর্বব্যাপী, এবং সবসময় সক্রিয়। তাই ধর্মকর্ম করার জন্য আত্মার ভূমিকা অপরিহার্য।
৫) ঈশ্বর সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গি (নিরীশ্বরবাদ): মীমাংসা ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণে বিশেষ আগ্রহ দেখায়নি। এর পেছনে যুক্তি হচ্ছে, ঈশ্বর বা কোনো রচয়িতার অনুমান না করেও, বেদের নির্দেশনা আচার-অনুষ্ঠান পরিচালনায় যথেষ্ট। দেবতাদের আলাদা অস্তিত্বও প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে, বরং বলা হয়েছে, মন্ত্র উচ্চারণই মূল শক্তি। দৃষ্টান্তস্বরূপ, বিজ্ঞানের পরীক্ষায় শিক্ষক বললেন, “ফর্মুলা মেনে চললে ফল আসবেই।” এখানে “কে ফর্মুলা বানাল”, সেটা জরুরি নয়।
৬) জ্ঞানতত্ত্ব (Epistemology): মীমাংসা খুব কড়া নিয়ম করেছে—“কোন তথ্যকে জ্ঞান হিসাবে গ্রহণ করা হবে?” প্রমাণ (Pramāṇa): সত্য প্রমাণের মাধ্যম। সত্য জ্ঞান = বাস্তবতার সঙ্গে মিলতে হবে + কাজে আসতে হবে।
ক) প্রভাকর শাখা (Prābhākara) এক্ষেত্রে ৫টি প্রমাণ মানে: প্রত্যক্ষ (Perception), অনুমান (Inference), উপমান (Comparison), অর্থাপত্তি (Presumption), শব্দ (Verbal testimony, বিশেষ করে বেদ)
খ) ভাট্ট শাখা (Bhāṭṭa—প্রতিষ্ঠাতা কুমারিল ভট্ট) উপরোক্ত ৫টির সঙ্গে যোগ করল অনুপলব্ধি (Non-perception)। অর্থাৎ, কোনো কিছুর অনুপস্থিতিই প্রমাণ হতে পারে। যেমন, কারও হাতে বন্দুকের বারুদ নেই; ফলে প্রমাণিত হলো, সে গুলি চালায়নি।
৭) শব্দ (Śabda) বা বৈদিক কর্তৃত্ব: মীমাংসা সবচেয়ে জোর দিয়েছে বেদের উপর; বলা হয়েছে, শ্রুতি/বৈদিক শব্দ হলো একটি স্বতন্ত্র প্রমাণ। তাই বেদই চূড়ান্ত কর্তৃত্ব। এই ধারা থেকেই পরে অদ্বৈত বেদান্ত শিখল, মুক্তির জ্ঞানও শেষপর্যন্ত শাস্ত্রের বাক্য (যেমন “তত্ত্বমসি”) দিয়েই নির্ভরযোগ্যভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
সহজ ভাষায়, মীমাংসা হচ্ছে বেদের আচার-অনুষ্ঠান ব্যাখ্যার দর্শন। এর লক্ষ্য, ধর্মের প্রকৃতি বোঝানো। এখানে ঈশ্বর-ধারণায় আগ্রহ কম, আচার-কর্মেই প্রকৃত মুক্তি। জ্ঞানতত্ত্ব কঠোর নিয়ম, প্রমাণ হিসেবে ইন্দ্রিয়, যুক্তি, তুলনা, অনুমান, শব্দ—এমনকি অনুপস্থিতিকেও ব্যবহার করে। পরবর্তীতে, বেদান্ত (অদ্বৈত) মীমাংসার কাছ থেকে অনেক পদ্ধতি ধার নিয়েছিল, তবে কর্ম থেকে জ্ঞানকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছিল। এককথায়, মীমাংসা হলো “কেন আর কীভাবে ধর্মকর্ম করতে হবে”, তার দার্শনিক বিশ্লেষণ, যা পরে বেদান্তের মতো জ্ঞানকেন্দ্রিক দর্শনের ভিত্তি তৈরি করেছিল।
দুই. বৈদিক ব্যাখ্যার শ্রেণীবিন্যাস: পাঠ্য সংঘাতের নিরসন
বৈদিক উক্তিগুলির শ্রেণিবিন্যাস এবং উদ্দেশ্য নির্ণয়
১) জৈমিনির পূর্ব মীমাংসা সূত্র: প্রবর্তনের সময়—খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ-দ্বিতীয় শতাব্দী। এর উদ্দেশ্য: বেদ কীভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে, তার জন্য একটি পদ্ধতিগত নিয়ম তৈরি করা। এই নিয়মকে বলা হলো—ন্যায় (ব্যাখ্যার নীতি)। এই সূত্র যেখানে কাজে লাগে—অস্পষ্ট শ্লোক বা বাক্য পরিষ্কার করা, আচার-অনুষ্ঠান সঠিকভাবে করা, নৈতিক আচরণের পথ নির্দেশ করা। যেমন আইন ব্যাখ্যা করার সময় বিচারক নানা ধারা দেখে আসল উদ্দেশ্য নির্ধারণ করেন; ঠিক তেমনি মীমাংসা সূত্রও বেদ ব্যাখ্যা করে।
২) বৈদিক বাক্যের বিভাগ: বেদের উক্তিগুলো মীমাংসাকে তিন ভাগে ভাগ করল—
বিধি (আজ্ঞা): যা করতেই হবে—যেমন যজ্ঞ করো।
মন্ত্র: আচার-অনুষ্ঠানের অংশ হিসাবে পাঠ্য বা উচ্চারণ।
অর্থবাদ: সমর্থক অনুচ্ছেদ, যা কোনো বিধি বা নিষেধকে উৎসাহ বা নিরুৎসাহিত করে।
দৃষ্টান্ত দিই:
বিধি: “অগ্নিহোত্র যজ্ঞ করো।”
অর্থবাদ: “যজ্ঞ না করলে স্বর্গ পাওয়া যায় না।”—মূল আদেশকে শক্তিশালী করছে।
৩) অর্থবাদের বিশেষ ভূমিকা: অর্থবাদ হচ্ছে বিধির (আজ্ঞা) সহকারী। এটি সরাসরি নতুন নিয়ম দেয় না, বরং—কোনো কাজ করতে প্রশংসা করে, উৎসাহ দেয়। কোনো নিষেধ ভঙ্গ করলে নিন্দা করে ভয় দেখায়। যেমন, শিক্ষক বললেন: “পরীক্ষার আগে পড়ো।” (বিধি) তারপর বললেন: “ভালোভাবে পড়লে জীবনে সফল হবে।” (অর্থবাদ)
৪) তাৎপর্যনির্ণয় (Tatparya-nirṇaya): বেদের জটিল অংশে নানা গল্প, উক্তি, নির্দেশ থাকে। তখন প্রশ্ন ওঠে—আসলে এখানে মূল বক্তব্য (তাৎপর্য) কী? এই উদ্দেশ্য নির্ধারণের নিয়ম হলো তাৎপর্যনির্ণয়। এটা নির্ধারণ করতে লাগে ষড়-লিঙ্গ (ছয়টি নির্দেশক)।
৫) ষড়-লিঙ্গ (ছয়টি নির্দেশক) কী কী?
উপক্রম-উপসংহার (শুরু ও শেষ): পাঠ্যের শুরু আর শেষ কি একই বিষয় বলছে? এতে বোঝা যায়, আসল মূল বিষয় কী। দৃষ্টান্তস্বরূপ, যদি গল্প শুরু হয় “যজ্ঞের মাহাত্ম্য” দিয়ে, আর শেষও হয় “যজ্ঞের মাহাত্ম্য” দিয়ে, তাহলে আসল বিষয় যজ্ঞই।
অভ্যস (পুনরাবৃত্তি): কোনো ধারণা কি বার বার এসেছে? এতে বোঝা যায়, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।
অপূর্বতা (নতুনত্ব): পাঠ্যে কি এমন কোনো নতুন ভাবনা এসেছে, যা অন্য কোথাও নেই? নতুন জিনিসকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
ফল (ফলপ্রাপ্তি): কোনো কাজ করলে স্পষ্ট ফলের উল্লেখ আছে কি? ফল থাকলে বুঝতে হবে কাজটি জরুরি।
অর্থবাদ (প্রশংসা/নিন্দা): ভাষায় কি কোনো প্রশংসা বা সমালোচনা আছে? যেটাকে প্রশংসা করা হয়েছে, সেটার গুরুত্ব বেশি।
উপপত্তি (যুক্তি/দৃষ্টান্ত): পাঠ্যে কি যুক্তি বা উদাহরণ দিয়ে কোনো ধারণা বোঝানো হয়েছে? এতে ধারণাটি আরও শক্তিশালী হয়।
৬) প্রভাব: এই নীতিগুলো শুধু আচার-অনুষ্ঠানের ব্যাখ্যায় নয়, পরবর্তী সময়ে ধর্মশাস্ত্র (Indian law & ethics) রচনায়ও ভিত্তি হয়ে দাঁড়াল। যেমন, কোনো আইন বা ধর্মনীতি ঠিক কী বোঝাচ্ছে, তা নির্ধারণ করতে বিচারকরা বা ব্যাখ্যাকাররা এই একই ধরনের যুক্তি অনুসরণ করেন।
সংক্ষেপে, মীমাংসা সূত্র—বেদ ব্যাখ্যার জন্য নিয়ম তৈরি করল। বৈদিক বাক্য—বিধি, মন্ত্র, অর্থবাদ ভাগ। অর্থবাদ—বিধি-নিষেধকে শক্তিশালী করার সহকারী বক্তব্য। তাৎপর্যনির্ণয়: জটিল পাঠ্যে আসল উদ্দেশ্য নির্ধারণের প্রক্রিয়া। ষড়-লিঙ্গ: শুরু-শেষ, পুনরাবৃত্তি, নতুনত্ব, ফল, অর্থবাদ, যুক্তি—এই ছয় নিয়ম দিয়ে পাঠ্যের আসল অর্থ খুঁজে বের করা। প্রভাব: এগুলো ভারতীয় আইন ও নৈতিক দর্শনের ভিত্তি গড়ে তুলল।
সমস্যা: সাংঘর্ষিক আজ্ঞা কখনো বেদের মধ্যে বা ধর্মশাস্ত্রে দুই বিপরীত আদেশ পাওয়া যায়। যেমন একদিকে বলা হলো: “হিংসা কোরো না” (অহিংসা)। আবার অন্যদিকে, যজ্ঞের সময় বলা হলো: “অগ্নি ও সোমার জন্য পশুবলি দাও”। প্রশ্ন ওঠে, কোনটা মানা হবে?
সাধারণ নিয়ম: উৎসর্গ (Utsarga) বনাম অপবাদ (Apavāda): সাধারণত, সাধারণ নিয়ম (Utsarga) বাদ পড়ে বিশেষ নিয়ম (Apavāda) কার্যকর হয়। দৃষ্টান্তস্বরূপ, “রাস্তায় গাড়ি ঢুকবে না।” (সাধারণ নিয়ম), তবে “অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে পারবে।” (বিশেষ নিয়ম) এখানে অ্যাম্বুলেন্সের নিয়ম সাধারণ নিষেধকে অতিক্রম করছে। তাহলে মীমাংসা বলবে: সাধারণত হিংসা নিষিদ্ধ, কিন্তু যজ্ঞের সময় পশুবলি—বিশেষ নিয়ম। তাই যজ্ঞে ‘হিংসা’ অনুমোদিত।