এই "আমি অজ্ঞ" অনুভূতিটি একটি আত্মগত (subjective) অভিজ্ঞতা, যা ব্রহ্মের উপর আরোপিত একটি আবরণী শক্তিরূপে অবিদ্যার অস্তিত্বকে সমর্থন করে। এটি এমন একটি অবস্থা, যেখানে আত্মা তার প্রকৃত স্বরূপ (ব্রহ্ম) সম্পর্কে অজ্ঞ থাকে, যার ফলে জগৎকে সত্য বলে ভ্রম হয়।
ন্যায়-বৈশেষিক (তার্কিক) প্রতিযুক্তি ও অদ্বৈতের বিশ্লেষণ:
ন্যায়-বৈশেষিকগণ বা তার্কিকরা এই দাবির তীব্র বিরোধিতা করেন। তাঁদের মতে, "আমি অজ্ঞ", এই অভিজ্ঞতা অবিদ্যার অস্তিত্ব প্রমাণ করে না, বরং কেবল জ্ঞানের অভাব (Jñānābhāva) নির্দেশ করে। এই অনুভূতির অর্থ হলো, ব্যক্তির কাছে হয়তো কোনো নির্দিষ্ট তথ্য বা উপলব্ধির অভাব আছে, কিন্তু এটি কোনো গভীরতর অধিবিদ্যাগত সত্তা (metaphysical entity—সেই অস্তিত্ব, যা কেবল অভিজ্ঞতালব্ধ জগতের অংশ নয়, বরং দার্শনিকভাবে মৌলিক বাস্তবতার প্রতীক আত্মা বা ব্রহ্ম) হিসাবে অবিদ্যা নয়। এই অনুভব কেবলমাত্র কোনো নির্দিষ্ট জ্ঞান না থাকার একটি অবস্থা, যা 'নেই' বা 'অভাব' দ্বারা বোঝা যায়। উদাহরণস্বরূপ, যখন কেউ বলে, "আমি এই বইয়ের লেখককে জানি না," তখন তা কেবল সেই নির্দিষ্ট তথ্যের অভাবকে বোঝায়, কোনো মৌলিক অজ্ঞতাকে নয়।
অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনে, অবিদ্যা বা অজ্ঞান এক গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয়, যা কেবল জ্ঞানের অভাব নয়, বরং এক ইতিবাচক সত্তা হিসেবে বিবেচিত। তার্কিকরা যখন অবিদ্যাকে শুধুমাত্র জ্ঞানের অনুপস্থিতি বা অভাব (abhāva) হিসেবে ব্যাখ্যা করেন, অদ্বৈতবাদীরা তার গভীরে প্রবেশ করে এই মতকে খণ্ডন করেন। তাদের যুক্তি হলো, যদি অবিদ্যা কেবল জ্ঞানের অভাবই হতো, তবে তা অন্যান্য অভাবের মতো অনুপলব্ধি (non-perception) নামক প্রমাণ দ্বারা জানা যেত। অনুপলব্ধি হলো এমন একটি জ্ঞান মাধ্যম, যা বস্তুর অনুপস্থিতি বা অভাবকে প্রমাণ করে। উদাহরণস্বরূপ, যখন আমরা কোনো ঘরে কলস দেখতে পাই না, তখন আমরা অনুপলব্ধির মাধ্যমে কলসের অভাবকে জানি।
কিন্তু অদ্বৈতমতে, অবিদ্যাকে অনুপলব্ধি দ্বারা জানা যায় না। এর প্রধান কারণ হলো, অবিদ্যা নিজেই প্রমাণের আধার এবং প্রমাণের দ্বারা প্রমাণিত হওয়ার ঊর্ধ্বে। অবিদ্যা হলো সেই মৌলিক অজ্ঞান, যা ব্রহ্ম এবং জীবের একত্বকে আবৃত করে রাখে এবং এই জগৎকে সত্য বলে প্রতীয়মান করায়। এটি আমাদের জ্ঞানমূলক প্রক্রিয়ার মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করে, কিন্তু নিজে কোনো প্রমাণের বিষয় নয়। অবিদ্যা কোনো বস্তুর মতো প্রত্যক্ষ বা অনুমানের দ্বারা গ্রাহ্য নয়, কারণ এটি সকল প্রমাণের মূলে অবস্থিত।
অদ্বৈত দর্শনে জ্ঞানের অভাবকে একটি নেতিবাচক ধারণা (abhāva-rūpa) হিসেবে দেখা হয়, যা কোনো কিছুর অনুপস্থিতি নির্দেশ করে। যেমন, যখন বলা হয় "এখানে কলস নেই", তখন কলসের অভাবকে বোঝানো হয়; কিন্তু অবিদ্যা একটি ইতিবাচক সত্তা (bhāva-rūpa)। এর অর্থ হলো, অবিদ্যা কেবল শূন্যতা বা অনুপস্থিতি নয়, বরং এর নিজস্ব একটি বাস্তব বা সক্রিয় অস্তিত্ব আছে। এটি সত্য এবং মিথ্যার মধ্যবর্তী এক অনির্বচনীয় অবস্থা, যা সৎও নয়, আবার অসৎও নয়। এটি ব্রহ্মের ওপর আরোপিত একটি আবরণী শক্তি।
অদ্বৈতবাদীরা আরও বলেন যে, "আমি জানি না" বলার সময়, আমরা কেবল জ্ঞানের অভাবকে নির্দেশ করি না। বরং এই অভাবের মূলে যে-অবিদ্যা রয়েছে, তাকেই পরোক্ষভাবে নির্দেশ করি। এই "না জানা" কেবল একটি সাময়িক বা ব্যক্তিগত জ্ঞানের অনুপস্থিতি নয়, বরং জগৎ ও আত্মস্বরূপ সম্পর্কে এক গভীরতর ও মৌলিক অজ্ঞানতাকে বোঝায়, যা অবিদ্যা দ্বারা সৃষ্ট। অবিদ্যাই আমাদের মোক্ষপ্রাপ্তির পথে প্রধান অন্তরায়। এর বিনাশ কেবল আত্মজ্ঞানের দ্বারাই সম্ভব, যা ব্রহ্মের সঙ্গে আত্মার একত্ব উপলব্ধি করায়। এই উপলব্ধির মাধ্যমেই অবিদ্যা এবং তার সৃষ্ট সকল বন্ধন থেকে মুক্তি লাভ করা যায়।
সুষুপ্তির পর অবিদ্যার স্মৃতি: "আমি কিছুই জানতাম না" (Na kiñcidavediṣam)—অদ্বৈত মতের মূল দাবি ও ব্যাখ্যা:
গভীর নিদ্রা (Suṣupti) থেকে জেগে-ওঠা মানুষ যখন স্মরণ করে—"আমি কিছুই জানতাম না" (Na kiñcidavediṣam) অথবা "আমি মূঢ় ছিলাম" (Mūḍho’ham āsam), তখন এই স্মৃতিকে অদ্বৈতবাদীরা অবিদ্যা বা অজ্ঞতার একটি শক্তিশালী প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করেন। সুষুপ্তি থেকে জাগরণের পর এই স্মৃতি প্রমাণ করে যে, ঘুমের সময় একটি অজ্ঞতার অবস্থা বিদ্যমান ছিল। এই স্মৃতি কেবল জ্ঞানের অভাবের সাক্ষী নয়, বরং একটি পূর্বতন অজ্ঞতার অবস্থা সম্পর্কে সচেতনতার ইঙ্গিত দেয়, যা নিছক জ্ঞানের অভাবের চেয়েও গভীর কিছু। অদ্বৈত মতে, গভীর নিদ্রার সময় বাহ্যিক জ্ঞান বা জাগতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও, একটি বিশেষ ধরনের অজ্ঞতা বা অবিদ্যা সক্রিয় থাকে, যা জীবকে এই অভিজ্ঞতা থেকে বিচ্ছিন্ন রাখে। এই অবস্থায় সাক্ষীচৈতন্য (Sākṣī-caitanya) সক্রিয় থাকে এবং সেই অজ্ঞতাকে প্রত্যক্ষ করে। "শান্তিতে ঘুমিয়েছিলাম, আমি কিছুই জানতাম না"—এই অনুভবটি কেবল জ্ঞানের অনুপস্থিতি নয়, বরং একটি ইতিবাচক অজ্ঞতার অভিজ্ঞতা, যা সুষুপ্তিকে আবৃত করে রেখেছিল।
ন্যায়-বৈশেষিক প্রতিযুক্তি ও অদ্বৈতের বিশ্লেষণ:
ন্যায়-বৈশেষিক মতে, এই স্মৃতি অবিদ্যার প্রমাণ নয়। তাঁদের মতে, আসলে ঘুমে জ্ঞানের অভাবকে সাক্ষী (Sākṣī) উপলব্ধি করে। সাক্ষী সর্বদা বর্তমান থাকে—এমনকি নিদ্রার সময়ও—এবং তখন সে জ্ঞানের অনুপস্থিতিকে (Jñānābhāva) আলোকিত করে। অর্থাৎ, সাক্ষী চৈতন্য তখনও ক্রিয়াশীল থাকে এবং জ্ঞানের অভাবকে প্রত্যক্ষ করে, কিন্তু এটি কোনো স্বতন্ত্র, ভাবরূপ অবিদ্যাকে প্রত্যক্ষ করে না। তাই, এটি কেবল জ্ঞানের অভাবের একটি পরোক্ষ অভিজ্ঞতা, অবিদ্যার সরাসরি প্রমাণ নয়।
তার্কিক মত (ন্যায়-বৈশেষিক) ও অদ্বৈতের পার্থক্য:
ন্যায়-বৈশেষিক মতে, "স্মৃতি" (parāmarśaḥ) এক বিশেষ জ্ঞান, যা অনুমানের (Anumāna) দিকে নিয়ে যায়। তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি অদ্বৈতের সাক্ষী-তত্ত্বের সাথে মেলে না। অদ্বৈতবাদীরা বলেন যে, সাক্ষী নিছক জ্ঞানের অভাবকে নয়, বরং সুষুপ্তিকালীন অজ্ঞতার একটি ইতিবাচক অবস্থাকেই প্রত্যক্ষ করে। তাঁদের মতে, যদি শুধু জ্ঞানের অভাবই হতো, তাহলে নিদ্রা থেকে জেগে ওঠার পর "আমি শান্তিতে ঘুমিয়েছিলাম, আমি কিছুই জানতাম না", এমন অনুভব হতো না। এই অনুভবটি একটি বিশেষ ইতিবাচক অভিজ্ঞতা, যা অজ্ঞতার দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল। অদ্বৈতের জন্য, সুষুপ্তির অভিজ্ঞতাটি প্রমাণ করে, একটি শক্তি, অর্থাৎ অবিদ্যা, জাগতিক জ্ঞানের অনুপস্থিতিতেও সক্রিয় থাকে এবং সেই অবস্থাকে আবৃত করে রাখে।
অতীতের জ্ঞানের অভাব অনুমান করা—অদ্বৈত মতের মূল দাবি ও ব্যাখ্যা:
অদ্বৈত বেদান্ত অবিদ্যার প্রমাণ করার জন্য একটি আনুষ্ঠানিক অনুমানের আশ্রয় নেয়: "আমার মধ্যে অতীতে জ্ঞানের অভাব ছিল" (Ahaṁ pūrva-kālīna jñānābhāvavān)। এই অনুমানটি অবিদ্যাকে একটি স্বতন্ত্র সত্তা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার একটি জ্ঞানতাত্ত্বিক প্রচেষ্টা।
অতীত (Pūrva-kālīnaḥ): এই অনুমানের প্রেক্ষাপট হিসেবে গভীর নিদ্রা (deep sleep) বা সুষুপ্তি-র সময়কে ধরা হয়। সুষুপ্তিকালে কোনো বাহ্যিক জ্ঞান বা মানসিক প্রক্রিয়া থাকে না।
সাধ্য (Sādhya): অনুমান দ্বারা প্রতিষ্ঠিত করতে চাওয়া হয় যে, ব্যক্তির মধ্যে জ্ঞানের অভাব বিদ্যমান। এই অভাবটি শুধু জ্ঞানহীনতা নয়, বরং একটি সক্রিয় অজ্ঞতা, যা সুষুপ্তির অভিজ্ঞতাকে সম্ভব করে তোলে।
হেতু (Hetu): আত্মার সাথে মনের সংযোগ না থাকা, যে-সংযোগ জাগতিক জ্ঞানের কারণ। অর্থাৎ, গভীর নিদ্রার সময় আত্মা ও মনের সংযোগ থাকে না, এবং যেহেতু এই সংযোগ জাগতিক জ্ঞানের কারণ, তাই এই সময়ে জাগতিক জ্ঞানের অভাব স্বাভাবিক। কিন্তু এই অভাব কি কেবল জ্ঞানের অনুপস্থিতি, না কি একটি ইতিবাচক অজ্ঞতা? অদ্বৈতবাদীরা দ্বিতীয় বিকল্পটিকেই সমর্থন করেন। তাঁরা যুক্তি দেন যে, আত্মা ও মনের সংযোগ না থাকার ফলে যে জ্ঞানের অভাব হয়, তা অবিদ্যারই একটি বহিঃপ্রকাশ, যা সুষুপ্তির অবস্থাকে আবৃত করে রাখে। এই অবিদ্যা একটি নিস্ক্রিয় শক্তি নয়, বরং এক সক্রিয় আবরণী শক্তি।
ন্যায়-বৈশেষিক প্রতিযুক্তি ও অদ্বৈতের বিশ্লেষণ:
ন্যায়-বৈশেষিক মতে, সুষুপ্তিতে আত্মা-মন সংযোগ থাকে, তবে ভিন্নতর রূপে। তারা যুক্তি দেয় যে, যদি আত্মা-মন সংযোগ সম্পূর্ণ অনুপস্থিত থাকত, তাহলে নিদ্রার অভিজ্ঞতা বা সুষুপ্তির স্মৃতি সম্ভব হতো না। তাদের মতে, সুষুপ্তির সময় আত্ম-মন সংযোগ থাকে বলেই "আমি শান্তিতে ঘুমিয়েছিলাম", এই ধরনের স্মৃতি সম্ভব হয়। এই অভিজ্ঞতাই একরকম অবিদ্যা, যা তাদের মতে—জ্ঞানের অভাব। তারা দাবি করে, আত্মা ও মনের একটি বিশেষ সংযোগ সুষুপ্তির সময় থাকে, যা মানসিক শান্তি এবং জাগতিক জ্ঞানহীনতার অভিজ্ঞতা দেয়।
অন্যদিকে, অদ্বৈত মত বরং জোর দেয়—এটি শুধু জ্ঞানের অভাব নয়, বরং একটি ইতিবাচক অজ্ঞতা, যা সুষুপ্তির অভিজ্ঞতাকে সম্ভব করে তোলে। অদ্বৈতবাদীরা ব্যাখ্যা করেন যে, আত্মা ও মনের সংযোগ জাগতিক জ্ঞানের জন্য অপরিহার্য হলেও, সুষুপ্তিতে একটি বিশেষ ধরনের অজ্ঞতা উপস্থিত থাকে, যা নিছক সংযোগের অনুপস্থিতি দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায় না। এই অজ্ঞতা (অবিদ্যা) সুষুপ্তির সময় কার্য করে, যার ফলে জাগতিক জ্ঞান উৎপন্ন হয় না, কিন্তু জীবের আত্মগত শান্তি অনুভব হয়।
অবিদ্যা বনাম জ্ঞানের অভাব: প্রমাণের প্রশ্ন
অদ্বৈত বেদান্তের একটি কেন্দ্রীয় যুক্তি হলো, অবিদ্যা জ্ঞানের অভাব নয়। কারণ, এটি অভাবপ্রমাণ (abhāva-pramāṇa) দ্বারা ধরা যায় না। অদ্বৈত বেদান্তে অবিদ্যা একটি ইতিবাচক সত্তা (ভাবরূপ)। যদি এটি কেবল জ্ঞানের অভাব (Jñānābhāva) হতো, তবে "অভাবপ্রমাণ" (যেমন অনুপলব্ধি / non-perception) দিয়ে ধরা যেত। অভাবপ্রমাণ জ্ঞানলাভের এমন একটি পদ্ধতি, যা কোনো বস্তুর অনুপস্থিতি বা অভাবকে জানতে সাহায্য করে।
উদাহরণ: শুক্তি-রুপা (Śukti–rūpya) ভ্রান্তি—শুক্তি দেখে রুপা মনে হওয়া। যখন একজন ব্যক্তি শুক্তিকে (ঝিনুক) রুপা বলে ভ্রম করে এবং পরে বুঝতে পারে যে এটি রুপা নয়, তখন সে রুপার অভাবকে অনুপলব্ধি দ্বারা জানে। অর্থাৎ, "এখানে রুপা নেই", এই জ্ঞানটি প্রত্যক্ষ বা অন্য কোনো প্রমাণ দ্বারা নয়, বরং অনুপলব্ধি দ্বারা নিশ্চিত হয়। কিন্তু অবিদ্যা এভাবে জানা যায় না। অবিদ্যাকে অভাব-প্রমাণ দ্বারা জানা যায় না, কারণ এটি অভাব বা অনুপস্থিতি নয়, বরং একটি ইতিবাচক আবরণী শক্তি।
অবিদ্যার সংজ্ঞা (অদ্বৈত মতে): অবিদ্যা হলো—"অভাবপ্রমাণ দ্বারা জানা যায় না যা" (abhāva-māna-agamyatvam)। অবিদ্যা এমন এক সত্তা, যা অভাব-প্রমাণে ধরা যায় না, আবার অন্য কোনো প্রচলিত প্রমাণেও (যেমন প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান, শব্দ) ধরা যায় না। এটি 'অনির্বচনীয়' (indescribable)। এর অর্থ হলো, অবিদ্যাকে বাস্তবও বলা যায় না, আবার অবাস্তবও বলা যায় না। এটি ব্রহ্মের উপর আরোপিত একটি শক্তি, যা জগৎকে সত্য বলে প্রতীয়মান করে।
তার্কিক বনাম বেদান্তী:
তার্কিক: তার্কিকরা বলেন যে, অভাব প্রত্যক্ষেই ধরা যায়। একটি ঘটের অভাব আমরা সরাসরি দেখতে পাই। তাঁদের মতে, "এখানে ঘট নেই", এই জ্ঞানটি প্রত্যক্ষ প্রমাণ দ্বারা হয়, কারণ খালি জায়গাটি প্রত্যক্ষ করা যায়।
বেদান্তী: বেদান্তীরা বলেন যে, অনুপলব্ধি একটি আলাদা প্রমাণ, কিন্তু অবিদ্যা এমনকি অনুপলব্ধি দিয়েও ধরা যায় না। এর কারণ হলো, অবিদ্যা নিজেই সমস্ত প্রমাণের মূল আধার এবং এটি প্রমাণের দ্বারা প্রমাণিত হওয়ার উর্ধ্বে। এটি জ্ঞানের বিষয় নয়, বরং জ্ঞানের মূল আবরণ।
জ্ঞানের নিবারণ ও প্রতিপক্ষের খণ্ডন:
বেদান্তীর যুক্তি: অবিদ্যা হলো "জ্ঞানে নিবারিত।" অর্থাৎ সত্যজ্ঞান উদিত হলে অবিদ্যা বিলীন হয়। যেমন, অন্ধকার আলো দ্বারা অপসারিত হয়, তেমনই ব্রহ্মজ্ঞান উদিত হলে অবিদ্যা নাশপ্রাপ্ত হয়। এটি অবিদ্যার ইতিবাচক প্রকৃতিকে আরও জোরদার করে। অবিদ্যা নিজে আলো দ্বারা বিলীন হওয়া অন্ধকারের মতো। অন্ধকার যেমন আলোর অভাব নয়, বরং আলোর বিপরীত একটি সত্তা, তেমনি অবিদ্যা জ্ঞানের অভাব নয়, বরং জ্ঞানের বিপরীত একটি সত্তা, যা জ্ঞানের উদয়ের সাথে সাথে দূর হয়। এই ধারণাটি অবিদ্যার একটি অস্থায়ী সত্তা হিসেবে তার ভূমিকা তুলে ধরে, যা চূড়ান্ত সত্য ব্রহ্মের জ্ঞান দ্বারা বিলুপ্ত হয়।