ভাঙা-স্যুটকেস

   
 কাল থেকে, আমার সমস্ত বিষাদ কিংবা অবসাদের কারণ হয়ে থমথমে ভিড়ের মুখে তুমি আর থাকবে না।
  
 আমি তোমার লক্ষ্মী হয়ে থাকব, এমন কোনও কথা কখনও লেখা ছিল না কোথাও। আজও নেই। কষ্ট শুধু একটাই…তোমাকে বুঝতে বড্ড দেরি করে ফেলেছি আমি!
  
 তোমার মতোই তুমি, তোমার ভালোবাসার সমস্ত ব্যাখ্যাও এক তোমারই। অবশ্য আমার ভালোবাসার ব্যাখ্যাও শুধুই আমার, আমিও আমারই মতো। তবুও তুমি আমার সেই আকাশটি, যেখানে আমার অবাধ বিচরণ। একজীবনে পৃথিবী একটাই থাকে, আর আকাশও থাকে একটাই। যদিও আমি তোমার জন্য একটা ভুল সিদ্ধান্ত মাত্র, তবু তুমিই আমার পুরোটা জীবন হয়ে বসে আছ আজও।
  
 একা একা বেঁচে থাকতে শিখতে চাই, প্রিয়। তোমাকে ছেড়ে বেঁচে-থাকা শিখতে ভীষণভাবেই চাই। এটুকুই আমার স্বস্তি হয়ে থাকবে যে আরও একবার, নিজের প্রিয়জনকে ছেড়ে বেঁচে থাকবার সাহসটা দেখাবার চ্যালেঞ্জটা আমি নিতে পেরেছি।
  
 থেকে যাবার লড়াইটাতে আজ আমি হেরেই গেলাম শেষমেশ।
  
 আমি খুব খেয়াল করে দেখেছি, জানো তো…ঠিক যতক্ষণই তুমি আমার সাথে থাকো, ঠিক ততক্ষণই আমি, সমস্ত কিছু ভুলে ভালোথাকা কাকে বলে, তা অনুভব করতে পারি। তুমি পেরেছ কখনও অমন করে…আমাকে ভেবে এমনটা অনুভব করতে? পারোনি, জানি।
  
 লেখার বিশ্বস্ত কলম আর আমার একান্ত শব্দচয়ন এখন পুরোপুরিই থমকে গেছে, জানিয়ে রাখলাম তোমাকে। তোমার মনে আছে, একসময় প্রতিদিনই আমি তোমাকে লিখতাম? তোমাকে ভেবে লিখতাম, শুধু তোমাকেই লিখতাম…মনে আছে? আমি চাইলেও না-লিখে থাকতে পারতাম না, সে আমি যা-ই লিখি না কেন! এখন আমি আর লিখতে পারি না, জানো? সত্যি বলছি, চাইলেও পারি না। কী অদ্ভুত, তাই না! আচ্ছা, আমাকে দু-লাইন লেখার সময় কিংবা ইচ্ছে, কোনওটাই কখনও মেলেনি তোমার! কত কত লিখো তুমি…কই, কখনও আমাকে কিছু লিখতে ইচ্ছে করলই তো না! আজ অবধি…না! করে না, তাই না? তোমায় আমি কটা চিঠি দিয়েছিলাম…কী যে ব্যস্ত, দেখো, তুমি…সে চিঠিকটার উত্তর পর্যন্ত দেবার সময় হয়নি তোমার। হয়তো খামটা খুলেও দেখোনি আজও! তোমায় বলি, শোনো। একদিন দেখবে, এই যে আজ তোমার এত ব্যস্ততা, যেজন্য তুমি আমায় ভুলে গেলে; দেখবে, একদিন এই ব্যস্ততাই তোমায় আমাকে ঠিক মনে করিয়ে দেবে। সে ব্যবস্থা আমি করে রেখে দিয়েছি। কিন্তু সেদিন আমি আর তোমার কাছে থাকব না…একটুও শুনবার জন্য যে তুমি আমাকে মনে করেছ।
  
 আচ্ছা, জীবনে তো কত ভুল হয়…আর একটি বার তুমি আমার কাছে আসবার লড়াইটা করে আর-একটা ভুল করতে পারলে না?
  
 আমার সাধ্যের বাইরে যা, তা এখন আমি আর চাইছি না। তাই তোমাকেও আমি এখন আর চাইতে পারছি না।
  
 তোমার সাথে ভালোভাবে কথা হয়েছে সেই কোন এক রোববার রাতে। আমাকে তোমার একটি বারও মনে পড়ে না, তাই না? এত ব্যস্ততা তোমার! না কি সবটাই অনীহা শুধু? এতটা ব্যস্তও এই পৃথিবীতে কেউ হতে পারে যে কাছের মানুষটার কথা ভুল করেও মনে করবার সময়টুকু পর্যন্ত পায় না? আমি কেন পারি না এমন ব্যস্ত হতে? আমিও একটু থাকতে চাই তোমাদের মতো ওরকম ব্যস্ত!
  
 তুমি এখন কে হও আমার? প্রাক্তন?
 আর কে ছিলাম আমি তোমার? গতিকের সময়যাপন?
 প্রিয় প্রাক্তন, এই ভাঙামন নিয়ে অপেক্ষার শহর পথ চেয়ে রবে কোনও প্রাক্তন ভালোবাসার ফিরেদেখার আশায়, তবে তাকে আবার গ্রহণ করতে…না, সে আর নয়!
  
 জানি, আবার কখনও হবে বৃষ্টিবিলাস।
 বরষায় ভিজবে ঠিকই তোমার প্রেমিকশরীর।
 সেদিন তুমি ঠিক করে দেবে অন্য কারও ভেজা শাড়ির আঁচল।
 তোমায় টানবে ঠিকই অন্য কোনও চোখের কাজল।
 তুমি হয়ে যাবে ঠিকই আবার অন্য কারও মনের মানুষ।
 তবুও আমার মনটা ঠিকই এ জন্মপরিগ্রহে তোমাকেই চাইবে পেতে বার বারই মনের মানুষরূপে।
  
 সেই চেনা কণ্ঠস্বর, চেনা ফোননম্বর, চেনা হাতের লেখা, চেনা বলার ধরন…সবটাই একদিন অচেনা হয়ে ভিজবে কোনও বিচ্ছেদের নোনতাজলে।
 তবু, ঠিকই তুমি আবার ভেড়াবে নৌকো নতুন কোনও বাঁধানো ঘাটে।
 কোনও একটা নতুন আকাশ হয়ে ধরা দেবে অন্য কারও প্রিয় অধিকারে।
 আর আমি?
 আমিও হয়তো রয়ে যাব ঠায় চোখ রেখে তোমারই চোখে…নতুন কোনও ভুল ঠিকানায়।
 শিখে যাব ঠিকই ভালোবাসার ভান-অভিনয়।
 পুরাতনে আর ঠাঁই না পাওয়ায় কোনও নতুনকে বরণ করবার অভিশাপে…চলবে ঠিকই সব-সবটা কোনও এক ঘরভর্তি শূন্য আবহে।
  
 কে কার কাছে এসেছিলাম আগে বা কে কাকে ছেড়ে চলে গেলাম বা কে কাকে থেকে গিয়েও ‘নেই’টা বুঝিয়ে দিলাম, সে নাহয় অস্পষ্টই হয়ে রইল বহু বহুকাল! তোমাকে হারাই কিংবা নিজেকে, হারিয়েছি ঠিকই কাউকে-না-কাউকে!
 হেরেছে নিশ্চয়ই কেউ-না-কেউ!
 সেই শত বৎসরের পুরনো ইচ্ছেটা আজ আদিম হয়েই তবু রয়ে যাক!
 নিয়তির সাথে ঠিক কতটা বিবাদ করলে পরে তোমায় পাওয়া যেত, সে হিসেবটা এখন শুধু অসম্ভব হয়ে বেঁচে টিকে থাক!
  
 ভালোবাসা যদি আবার নিয়ম করে অনিয়মিত কোনও বর্ণে-ছন্দে প্রকাশিত হয়, তবে কালো রংটা বা নীল রংটা আপন বলে ভেবে ফেলবে, অমনটা নয় কখনও। কোনও মনখারাপের খয়েরি বিকেলে বুকপকেটে নাহয় আগলে রেখো…যা আসে রং,---হোক তা আপন কিংবা পরই!
  
 এই শহরের করুণ নেক্রোপলিসে আমায় কখনও যদি মন ফিরে পেতে চায়, তবে জেনে রেখো, সেদিন বৃষ্টি নামবে যদিও, তবু ওই মেঘের ভেলায় আমি আর থাকবই না কোনও বাকির খাতায়।
  
 দহনের সুর, ভেজা কান্নায় গড়ানো দুপুর,…এমন সময় যদি পথ হারায় এক বুনোশালিক,
 তবে জেনো তুমি, ঠিক তখনই রাঙা দুপায়ে আলতা আরও মাখবে খানিক এই মেয়েটা।
  
 তোমার হারানো সাদাশার্টে পবিত্র হোক তুমিমিশ্রিত আমার প্রতিটি অশ্রুফোঁটা।
 তোমার সেই শার্টের চেনাঘ্রাণে মিশে থেকে যাক আমার হারানো মিষ্টি মিষ্টি সবটুকু সুখ।
 ভালোবাসারই অভিসম্পাতে জর্জরিত হোক সমস্ত শান্তি-স্বস্তি।
  
 এই তো মাত্রই গতকাল থেকে আমার আছে লোকদেখানো মুঠো মুঠো সুখ, মিথ্যে কিছু হাসি-ভালোথাকা, তাসের একটা সুদৃশ্য ঘর, ভালোবাসার রঙিন নাট্যোৎসব, আর বুকভরা কিছু হতাশার অস্থি-রক্তকোষ।
  
 এখন পুরোটাই একলা আমি…আর বিস্রস্ত শূন্যতায় ভরা এক ভাঙা-স্যুটকেস।
  
   
Content Protection by DMCA.com