ভাবনা: সাতশো সাতান্ন
………………………………………………………
এক। যারা জোরপূর্বক মানুষকে ধরে ধরে, ফোন করে-টরে তাকে গর্তের ভেতর থেকে টেনে এনে হলেও, নিজের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান দেবার জন্য আঁকুপাঁকু করতে থাকে, পারলে দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখে হলেও জ্ঞান দেয়, অন্য কিছুই তার জন্য না করতে পারুক, কেবল তার দেওয়া জ্ঞানকে মহামূল্যবান মনে করে, আমি মনে করি, তাদের নিজেদেরই জ্ঞানগত কিছু সমস্যা আছে। আমি সাধারণত কোনও বিষয়ে কিছু জানার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলে আমার নিজের কাছে যেই মানুষটাকে সেই বিষয়ে যথেষ্ট অভিজ্ঞ মনে হয় কিংবা যার কথার উপরে আমি ভরসা করতে পারি, তার কাছে স্বেচ্ছায় গিয়ে সেই বিষয়টা জিজ্ঞেস করি, জানতে চাই।
কেউ কেউ ধরে ধরে এমনভাবে জ্ঞান দিয়ে দেয়, অমন মানুষের কথা জোর করে গিলে ফেলার পর যখন সে সামনে থেকে সরে যায়, তখন ইচ্ছে হয়, মুখের ভেতর আঙুল ঢুকিয়ে বমি করে নিজেকে পরিষ্কার করি। যখন সেই একই ব্যক্তি পরেরবার জ্ঞান দেওয়ার জন্য খোঁজ করে, তখন আমি সোজা অন্য পথে হাঁটতে শুরু করি, এমনকি কুশলাদি বিনিময়ের ক্ষেত্রেও একইসাথে সমপরিমাণ ভয় এবং বিরক্তি কাজ করে। নির্বোধরা বোঝেই না, কখন তারা মানুষের বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠে। তেষ্টা পেলে তৃষ্ণার্ত নিজেই জলের খোঁজ করবে, এই সামান্য জ্ঞান যার নেই, সে আর যা-ই হোক, জ্ঞানী হতে পারে না।
আমার পরামর্শের দরকার হলেও আমি যার কাছে পরামর্শ চাইতে যেতাম না কখনও, ওরকম কেউ গায়ে পড়ে পরামর্শ দিতে এলে ফালতু লাগে।
দুই। অবশেষে আমি জানলাম, জানো, আমি আসলে তোমার কাছ থেকে সরে থাকতে পারব না, যতই চেষ্টা করি না কেন। উলটো চেষ্টা করে নিজেই সব মনোযোগ এদিকেই দিয়ে দিই, সচেতন অবচেতন সব অবস্থাতেই তোমাকে নিয়েই পড়ে থাকি। তুমি হয়তো ভাবো যে, ‘এই মেয়ে সারাক্ষণ শুধু মেসেজ করতেই থাকে, এত সময় কখন পায়!’ সময় যে কখন পাই, তা আমি নিজেও জানি না। এজন্য আর শুধু শুধু তোমার থেকে দূরে দূরে পালিয়ে, মুখ লুকিয়ে থাকার চেষ্টা বরং আর না করাই আমার জন্য ভালো। যা হয় হোক, সব কিছু নষ্ট হয়ে যাক আমার, যদি মরে যাই, তাহলে তা-ই হোক।
আর ভালো লাগে না এসব। কী যে শুরু করেছি আমি আজকাল এসব! মন এক এক সময় এক এক রকম হয়। এই ভালো, এই খারাপ। যখন খারাপ হয়, তখন ভীষণ বাজে বকতে থাকি তোমাকে, আবার যখন ভালো হয়, তখন অতিরিক্ত পাগলামো করি। কী করি কখন, নিজেই বোধহয় ঠিক জানি না। আর অত কিছু চেষ্টা না করি! তার চেয়ে বরং সব কিছু মাথা পেতে নিই, তা-ই ভালো। না হলে সত্যি সত্যিই একদিন পাগল হয়ে যাব। আসলেই আমি অস্থির খুব। এত অস্থিরমতি মন নিয়ে কোনও ভালো কাজ করা যায় না। এই যে এতসব কথা বলছি এখন, এগুলোও বাজে বকছি। আসি, তুমি থাকো, প্রস্তুতি নাও আমাকে পরের কষ্টটা কীভাবে দেওয়া যায়, সেটার।
সূর্যের কাছে যাবার ক্ষমতা কারও নেই। সূর্যের কাছে যাবার সাহস যে করে, তাকে পুড়ে কয়লা হয়ে যেতে হয়। তুমি সূর্যের সম, প্রখর তোমার তাপ; তোমার অতি কাছে যাবার সাহস আমি যেহেতু করেইছি, সেহেতু পুড়তে যে আমাকে হবেই!
তিন। একজন লেখক পৃথিবীর সবচেয়ে একা মানুষ। লেখক তাঁর একাকিত্বকে ভোলার জন্য, ভালোবাসা নয়, প্রয়োজন খোঁজে। তাঁদের কাছে প্রয়োজনটাই মুখ্য, হৃদয়টা গৌণ। এর ফলে তাঁদের একাকিত্ব কখনওই ঘোচে না।
লেখক কেবলই সুন্দরের খোঁজ করে। একটি থেকে আরেকটি, তারপর আরেকটি…সৌন্দর্য ফুরায় না কখনও, কেবল রূপ পরিবর্তিত হয়।
এ কারণেই বোধহয় ভালোবাসাও আপেক্ষিক। লেখকেরা ভালোবাসার আপেক্ষিকতা বোঝেন, এবং এ কারণেই বারে বারে প্রেমে পড়েন। ওদের কাছে প্রেম ভালোবাসা এমন কিছু, যাকে জোর করে ধরে রাখার কিছু নেই। লেখকদের প্রেম বরাবরই মুক্ত, বয়ে-চলা ঝরনার মতো। অপরদিকে, সাধারণ মানুষ ভালোবাসা বলতে কেবল জোর করে ধরে রাখাকে বোঝে। এ কারণে সাধারণ মানুষের গুনে গুনে প্রেম হয়। আমি সাধারণ, তাই আমার জীবনে ভালোবাসার একটাই নাম, সে হচ্ছে ‘তুমি’।
চার। নতুন করে কোনও কিছু তো আর হারাবার নেই আমার। বিশেষ করে সব কিছু যখন হারিয়েই ফেলেছি, তখন যা-কিছু যেদিকে খুশি, যায় তো যাক। এখন আর কোনও কিছুই আমাকে শাস্তি দেয় না। নিঃস্ব আমি, নিঃস্বের মতোই থাকি, আভিজাত্যের ভাব কোনও কিছু নিয়েই নেই।
অর্ধেক পাগল হওয়া ভালো না, জানো? পাগল হলে পুরোপুরি পাগল হতে হয়। এতে করে পাগল যে হয়ে গেছি, এই বোধটুকুও আর থাকে না। ইচ্ছেখুশি কাজ করা যায়। তোমাকে ভালোবেসে এটা বুঝেছি।
অনেক ভালো একজন মানুষ তুমি। ব্যক্তি হিসেবে তুমি কেমন, সেটি জানি না, জানতেও চাই না। আমাকে তুমি অনেক ভালোবাসা দিয়েছ; হ্যাঁ, অনেকই দিয়েছ, যার বিন্দুমাত্রও যোগ্যতা আমার ছিল না এবং যা আমার প্রাপ্যও নয়। আমি তোমার কাছে অনেক কৃতজ্ঞ। যা-কিছু বাজে ব্যবহার আমি তোমার সঙ্গে করেছি, তার সব কিছুই আমার ভুল ছিল, আমারই দোষ ছিল। এত দোষ, এত ভুল মেনেও তুমি আমাকে ভালোবাসা দিয়েছ, দিয়েই গেছ। আমাকে মাফ করে দিয়ো যদি পারো। আমি সত্যিই সরি।
‘সরি’ খুব সামান্য একটা শব্দ, আমি জানি। আবার কথায় কথায় সরি বলার অভ্যাসও আমার নেই, এটাও ঠিক। কিন্তু আমি তোমার কাছে অপরাধী। অনেক অপরাধ করেছি আমি তোমার সাথে, তোমার জায়গায় আজ অন্য কেউ হলে আমার মুখে থুতু দিয়ে চলে যেত, কেননা আমার ভেতরে এমন কিছুই নেই, যার জন্য আমার সাথে থেকে যাওয়া যায়, আমাকে ভালোবাসা যায়। তোমার মনের খবর তুমিই ভালো জানো। পারলে আমাকে মাফ করে দিয়ো, আর প্রার্থনা কোরো যেন নিজেকে একটু হলেও পরিবর্তন করতে পারি। অন্তত সত্যিকার অর্থেই যেন তোমার ভালোবাসার যোগ্য হয়ে উঠতে পারি। তোমার ভালোবাসা পাবার কোনও যোগ্যতা আমার ছিল না, তুমি নিজগুণেই সবসময় আমাকে ভালোবেসে গেছ। তুমি ভালো থেকো, সুস্থ থেকো, স্রষ্টা তোমাকে আরও সমৃদ্ধি দান করুন। ভালোবাসি গো!
ভাবনা: সাতশো আটান্ন
………………………………………………………
এক। যে মেয়ে ‘দশ হাজার শব্দের রচনা’ টাইপের মেসেজ আশা করে, তারই কপালে জোটে কিনা ছোট্ট ছোট্ট ইমোজি দিয়ে দায়সারা মেসেজ-পাঠানো বয়ফ্রেন্ড!
দুই। তুমি চাইলেই তো তোমার প্রতিটি বিকেল কেবল আমিই হয়ে উঠতাম!
কেন চাওনি?
তিন। একটি হারানো বিজ্ঞপ্তি। আজ সন্ধ্যা ৭:১০টা থেকে আমার জামাই হারানো গিয়েছে। যদি কোনও সহৃদয়বান ব্যক্তি আমার জামাইয়ের খোঁজ পেয়ে থাকেন, তাহলে তাকে গুনে গুনে ১০০০ চুমু উপহার দেওয়া হবে। তার খোঁজ পেয়ে থাকলে অনুগ্রহ করে জলদি যোগাযোগ করুন। ইয়ে মানে, জামাইয়ের খোঁজ পেলে চুমুটা জামাইকেই দেওয়া হবে।
চার। তোমার জন্য ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমি আজ বুঝতে পারি, এই দুই বছরে আমি আমার এই ফোনের স্ক্রিনটাকে যতটা দেখেছি বা তাকিয়ে থেকেছি এটার দিকে, এরকম করে এত বেশি আমি আমার সারাটা জীবনেও কারও দিকে এত মনোযোগ আর অপেক্ষা নিয়ে তাকিয়ে থাকিনি…বিশ্বাস করো।
পাঁচ। তুমি আমাকে আর কখনও ফোন কোরো না। তুমি তোমার জীবন নিয়ে থাকো, আমি আমারটা নিয়ে থাকি। আমি তোমাকে কোনও প্রকার ফোন অথবা মেসেজ না করতে চেষ্টা করব। আমার পক্ষে তোমার জীবনে অন্য কাউকে মেনে নিয়ে সম্পর্কে থাকা সম্ভব না। কখনও পারবও না। এর চেয়ে এখন থেকেই সরে যাওয়া ভালো।
আমি ধৈর্য ধরলেও একই ফল হবে। আমাকে সারাজীবন এই কষ্ট বয়ে বেড়াতে হবে, আর তোমার চোখে আমার কোনও কিছুরই কোনও মূল্য নেই, থাকবেও না। আমি এই জীবনে, মরে গেলেও, কখনও তোমাকে পুরোপুরি পাবো না, আর আমার কাছে কেবল মানসিকভাবে পাওয়া সব কিছু না। আমি তোমাকে যেভাবে চাই, সেভাবে কোনও দিনই পাবো না। তুমি আমার জায়গা থেকে আমাকে কক্ষনো বুঝতে পারবে না, আর প্রতিদিন এসব সহ্য করে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। আমার ভেতরে সেই শক্তি নেই, আমি এখন এসব পারি না। আমি আস্তে আস্তে মানসিক, শারীরিকভাবেও অসুস্থ হয়ে যাব। আমাকে আমার মতো করে একা ছেড়ে দাও, আমাকে আমার মতো গুছিয়ে নিতে দাও। প্লিজ, অন্তত এতটুকু সাহায্য আমাকে করো।
তুমি তো এটাই চাও যে আমি চুপচাপ সব মেনে নিয়ে সহ্য করে থাকি। তুমি থাকো, মজা করো। যা খুশি যা মনে চায় করো। আমাকে শুধু শুধু কষ্ট দিয়ো না। আমাকে আমার উপরে ছেড়ে দাও। আমি খুব ভালো করে বুঝি যে তুমি একটা-না-একটা অজুহাত দিয়ে এখনও তার সাথে কথা বলে যাচ্ছ, আর অবশ্যই তুমি তাকেই আজও ভালোবাসো, কিন্তু তুমি আমার সামনে সেটা কক্ষনো স্বীকার করো না। আমার আবেগ নিয়ে তুমি খেলা শুরু করেছ।
আমি তো একটা বেহায়া, আমি একটা নির্লজ্জ, কুকুরের মতো বার বার লাথি খাই, তারপরও আবার একই জায়গায় আসি। আমাকে আসলে তিনরাস্তার মোড়ে নিয়ে জুতা দিয়ে মুখে চড় লাগানো উচিত। তাহলেও আমার লজ্জা হবে কি না আল্লাহই ভালো জানেন। আমি হচ্ছি একটা শয়তান। এতভাবে লাত্থি খাই, তারপর আর কোনও কিছু মনে থাকে না আমার। আমাকে প্রতিদিন বাজারের সামনে দাঁড় করিয়ে কঞ্চি দিয়ে পেটালেও আমার লজ্জা হবে না। তারপরও আমি এখানেই আসতে থাকব। আমি এমন হয়ে গেলাম কেন! কী এক আজব জিনিস এই ভালোবাসা!
ছয়। আমি তোমার সাথে কথা না বলে থাকতে পারি না, এই সামান্য জিনিসটা তুমি বুঝতে পারো না। তুমি সত্যি করে একটু বলবে, সত্যিই তুমি আমাকে ভালোবাসো কি না? যদি সত্যিই তুমি আমাকে ভালোই বাসতে, তাহলে আজকে আমাকে না বুঝতে পারার কোনও প্রশ্নই আসত না, তুমি নিজেই বুঝতে পারতে, আমি কেন এমন করি।
তুমি আমাকে পরিপূর্ণ সময় দাও না, কেবল এই একটাই আমার অভিযোগ। আমি আর কখনও কোনও কিছুর জন্য তোমাকে কথা শোনাইনি। এই একটা কারণেই আমি এত অভিযোগ, এত ঝামেলা করি, আর কোনও কিছুর জন্যই না।
তুমি চাইলে আমার উপরে অনেক কিছু জোর করে চাপিয়ে দিতেই পারো, আমি মেনে নেব সব কিছুই, কিন্তু নিজে একটা সময় চিন্তা করে দেখো, আমি কী আর কেন এমন করি। তোমার কাছে শান্তি জিনিসটা প্রিয়, শান্তির জন্য তুমি ভালোবাসাও ত্যাগ করতে পারো! ভালো! আমি বলি কী, এখনও সেই সময়টাই আসেনি! আসে যদি কখনও, তখন নিজেকে সেইফ-জোনে না রেখে ঠিকমতো একা হও, তারপর বোলো যে শান্তি বড়ো, না কি ভালোবাসা!
সাত। সবচেয়ে বেশি যাকে ভালোবাসি, সে-ই মানুষটাই যখন কিছু বোঝে না, তখন আর কারও প্রতিই আর কোনও আক্ষেপ থাকে না। জানি না, সত্যিই তুমি ভালোবাসতে পেরেছিলে কি না। আমি আজীবন বোকার রাজ্যেই রয়ে গেলাম!
তোমাকে কষ্ট দিয়ে দিয়ে অভিযোগ করে করে কথা বলাটা আমার উদ্দেশ্য না। কিন্তু যখন তোমাকে আমার সব কিছুর প্রতি উদাসীন দেখি, আর অন্য দিকে সক্রিয় দেখি, অথচ তুমি মুখে ঠিক উলটোটা বলো, তখন আর কিছুই ভালো লাগে না। অনেক সময় অনেক ভালো কিছু বলতে এসে মন নষ্ট হয়ে যায়, বলাই হয় না, বরং অন্য কিছু একটা বলে বসি, যা আদৌ বলার জন্য ঠিক করা দূরে থাক, এমনকি আমি জানতামও না আগে।
আট। আমি শেষমেশ এমন একজনকে কী করে ভালোবেসে ফেললাম, যেখানে আমার নিজের বলে কিছুই নেই। আমি তো জানতামও না যে আমি এমন কিছু করে বসব।
আমার ভেতরে আগের সেই শক্তিটা আর নেই। আগে সব রকমের আঘাত খুব তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে কাটিয়ে গিয়েছি। আঘাত কিংবা অপমান, কোনও কিছুই আমার ভেতরটা দুর্বল করতে পারেনি, কিন্তু এখন কেউ একটু কষ্ট দিয়ে কথা বললেই মনে হয়, সব কিছু ভেঙেচুরে একসাথে মাথার উপরে পড়বে।
এর চেয়ে বরং কেউ না থাকাতেও এত কষ্ট হয়নি কখনও। অন্য কষ্ট ছিল, অন্য অনেক অপ্রাপ্তি ছিল, কিন্তু তা সত্ত্বেও সেগুলো কখনও এভাবে আমার ভেতরটা মুচড়ে দেয়নি কখনও। সব কিছু সহ্য করে যেতে পারতাম অনায়াসে, কিন্তু এখন খুব হালকা কিছুও মেনে নিয়ে থাকতে পারি না। সব কিছু অসহ্য লাগে। এতদিন ভালোবাসার আলাদা কোনও বোধ কাজ করেনি, সেটা নিয়ে এত ভাবতামও না, কেউ ভালোবাসুক, তা চাওয়া অথবা ভালোবাসার অনুভূতি, এসব কখনওই এভাবে বুঝতে পারিনি। কিন্তু মনে হচ্ছে, বাঁচতেই এখন পারব না।
তোমার সাথে দেখা না হলে, কথা না হলে, সম্পর্কে না জড়ালে ভালোবাসা ছাড়াই বাঁচতে তো অন্তত পারতাম। এভাবে প্রতি মুহূর্তে দম আটকে মরতে তো হতো না একটু একটু করে।
ভালো লাগে না কিছুই। কোনও কিছুই ভালো লাগে না এক তোমাকে ছাড়া। হয়তো আমি আমার সারাজীবনভরই কোনও পাপ করে এসেছি কিংবা বড়ো কোনও পাপ করেছি, সেকারণেই আল্লাহ তোমাকে আমার কাছে একঝলক দিয়ে আবার কেড়ে নিয়ে গেছে। যদি এভাবে করে নিয়েই যাবে, তাহলে একঝলকের জন্য কেন দিলেন? না দিলেই তো হতো!
ভাবনা: সাতশো ঊনষাট
………………………………………………………
এক। খাবার চুরির দায়ে যে বেড়ালটিকে হাসতে হাসতেই সানন্দে মেরে ফেলে দিয়েছেন ভাগাড়ে, কখনও খোঁজ নিয়ে দেখেছেন, কোনও এক খুপরি বা ঝোপে ঝাড়ে তার দু-চারটে ছানা, মায়ের ফেরার আশায় ক্ষুধায় চিৎকার করে কাঁদছে কি না?
হেলে দুলে ড্রাইভ করতে গিয়ে যে কুকুরছানাটিকে ছ্যাৎ করে পিষে দিয়ে ঘরে ফিরে নির্বিঘ্নে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন, কখনও কি জানতে চেয়েছেন, সে রাতে নিজের আদরের সন্তানকে হন্যে হয়ে খুঁজতে খুঁজতে সারারাত না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিয়েছে কি না কোনও এক মমতাময়ী মা-কুকুর?
অট্টালিকার মতো দেখতে পিঁপড়ার ঘরগুলো বিনা কারণেই পায়ে মাড়িয়ে ঘরে গিয়ে আরামে বিশ্রাম নিয়েছেন সেবার, কখনও কি ভেবেছেন, কঠোর পরিশ্রমী শত-হাজার সংঘবদ্ধ প্রাণীকে উদ্বাস্তু, আশ্রয়হীন করে রেখে পেছনে ফেলে এসেছেন কি না?
বিনা প্রয়োজনে, বনের হিংস্র সিংহও, মুখের সামনে থাকা একটা হরিণও কখনও মেরে ফেলে না, অথচ একমাত্র মানুষই প্রয়োজন ছাড়াই হত্যা করে, নিষ্ঠুরতার স্বাদ গ্রহণ করার জন্য।
পৃথিবীটা শুধু একা মানুষের নয়। এখানে স্বস্তি নিয়ে বাঁচার অধিকার সকল প্রাণীরই সমান।
অকারণে অপ্রয়োজনে একটা জীবেরও প্রাণ নষ্ট করা ‘মানুষহত্যা’র মতোই পাপ।
হোক তারা মানুষ নয়, অবলা জীব। তাদেরও আমার আপনার মতো প্রখর আবেগ অনুভূতি আছে। আছে ঘরসংসার, পরিবার-পরিজন। তাদেরও আছে ভালোবাসতে পারার মতো অপূর্ব ক্ষমতা।
চামড়ায় আঘাত লাগলে তাদের শরীরেও প্রচণ্ড ব্যথা লাগে। তাদেরও কান্না পায়, তারাও কাঁদে।
তাদের মৃত্যুর যন্ত্রণাবোধও হুবহু আমার আপনার মতোই প্রখর। তীব্র যন্ত্রণার, প্রচণ্ড কষ্টের অনুভূতিতে তারাও ছটফট করতে থাকে, ঠিক আপনার আমার মতোই।
দুই। খেতুর মাথা টাকে খায়,
তাকালে মাথায়, বোঝাই যায়।
দুই টাকার বাদাম দেখেও,
খেতু করে হায় হায়!
ছুঁচোর মতো, মনে মনে,
আরও কিছু খেতে চায়!
তিন। মাইরও খাব,
মাইরের দামটাও দিব,
আবার কাঁদবও ফাও!
—এরই নাম নাকি ভালোবাসা!
শোনো, তোমার বকা আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে; সরি, একটু ভুল বলে ফেললাম, ‘অংশ’ নয়, এটি হবে, ‘অঙ্গ’। তোমার কাছ থেকে বকা না খেলে ভাল্লাগে না। আমি ভাবছি, তোমার বকাগুলি আলাদা একটা ফোল্ডারে রেখে দিব। যখন মন ভীষণ তোমার বকার অভাব অনুভব করবে, তখন তোমার সেভিংসের বকাগুলি থেকে ইচ্ছেখুশি খেয়ে নিব।
আমি আসলেই একটা পাজি মেয়ে। তোমার সাথে কথা বলা আর একটা গাছের সাথে কথা বলা, একই কথা। জীবনে কোনও দিনই আমার ঝগড়াঝাঁটি করার অভ্যাস ছিল না, আর এখন কিনা সেইগুলোতেই আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি। তবে কি ভালোবাসা মানুষকে ঝগড়ুটে করে তোলে?
চার। আমি মানুষ, কিন্তু তুমি আমাকে ঐশ্বরিক কল্পনা করো।
তুমি ঐশ্বরিক, কিন্তু আমি তোমাকে প্রেমিক কল্পনা করি।
তুমি ভাবো, আমি অসাধারণ, এজন্য আমার কোনও কিছু, তুমি, আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের যেমন হয়, তেমন চোখে মেনে নিতে পারো না। ওরা যেমন আশা করে, তেমনটা আমার ক্ষেত্রে তুমি ভাবতেও পারো না।
আমি ভাবি, আর পাঁচটা সাধারণ ভালোবাসার মানুষের মতোই বুঝি তুমি, কিন্তু তুমি কখনওই সেটা নও।
এই ভুল বোঝাবুঝিই আমাদের মধ্যকার দূরত্বটা ক্রমশ বাড়ায়।
পাঁচ। জানো, যখন তুমি আমার সঙ্গে অচেনা মানুষের মতো আচরণ করো, দূরের দূরের আচরণ করো, তখন আমার কান্না পায় ভীষণ, মনে হয় যেন এই পৃথিবীতেই আমার কেউ নেই। যখন তুমি আমার পাঠানো গানগুলি আনন্দ নিয়ে শোনো, তখন ইচ্ছে হয়, শুধু তোমার জন্য হলেও ভালো কিছু গান যদি গাইতে পারতাম! যখন বুঝতে পারি, তুমি খেতে ভালোবাসো, তখন ইচ্ছে করে, তোমার পছন্দের সব কিছু একটা একটা করে খুব যত্ন করে রেঁধে তোমাকে খাওয়াতে। আরও মনে হয়, এই যে আমি ছোটোবেলার বড়ো একটি সময় যে রান্নাঘরে কাটিয়ে এসেছিলাম, সেটি হয়তো শুধু তোমার জন্যই।
প্রায়ই মনে হয়, স্রষ্টা যদি আমার সামনে কেবল দুটি পথ খোলা রাখেন জীবনের জন্য, যার একটি পথ প্রাচুর্যে ভরপুর, কিন্তু অন্য পথটিতে একইসাথে তুমি এবং মৃত্যু অপেক্ষমাণ, মনে হয়, যদি স্রষ্টা এ-ও বলেন, মৃত্যুর ঠিক পরমুহূর্তেই আমি তোমাকে আমার করে কাছে পাবো, তবে আমি কেবলই তোমাকে বেছে নেব সব কিছুর ঊর্ধ্বে, যে-কোনও মূল্যে চাইব, মৃত্যুটাই আগে আসুক, অধীর আগ্রহে মৃত্যুর দিন গুনে যাব ব্যগ্রচিত্তকে সম্বল করে। স্রষ্টা তোমাকে আমার করে দেখানোর আগে যে শর্তেই রাজি হন না কেন, আমি সেইসব শর্তকে হাসিমুখে পায়ে মাড়িয়ে কেবলই তোমাকে চাইব। আর কিছুই নয়, তোমার হতে চাইব শুধুই।
ছয়। যে মুচি ছেলেটির হাতের উপর অবজ্ঞাভরে জুতাসমেত পা-টা উঠিয়ে দেন, পরিশ্রমের ভারে ময়লাযুক্ত সেই হাত দুটো কারও কারও মুখে রিজিক তুলে দেয়। তার সেই নোংরা হাতেও কেউ একজন রোজ চুমু খায়।
যে টোকাই ছেলেটিকে সামান্য কারণেও কষে চড়থাপ্পড় মেরে দিচ্ছেন, সেই টোকাই ছেলেটি কারও-না-কারও কলিজার টুকরা। তার সামান্য জ্বর হলেও কেউ একজন কপালে জলপট্টি বেঁধে দিয়ে সারারাত তার মাথার পাশে উদ্বিগ্ন হয়ে জেগে থাকে।
রাস্তায় ময়লার কাজ-করা যে মানুষটিকে দেখে নাকসিটকে দূরে সরে যান নাকে রুমাল চেপে, তাঁর ঘরেও এমন কেউ একজন অপেক্ষায় আছে, যে তাঁকে বুকের মধ্যে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে টুক করে ঘুমিয়ে পড়বে রাত নামলে।
পোশাকে অপরিপাটি যে গার্মেন্টসকর্মীকে দেখে কুৎসিত, ক্ষ্যাত, অসুন্দর আখ্যা দিচ্ছেন প্রতিনিয়তই, লিপস্টিক, কাজল আর জামাকাপড়ের টাকা বাঁচিয়ে সে হয়তো সেই টাকায় মা-বাবার ওষুধ কিনে। কারও-না-কারও চোখে সে ক্লিওপেট্রার চেয়েও শতগুণ বেশি সুন্দরী।
এ পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষই অদ্ভুত রকমের সুন্দর। প্রান্তিক মানুষগুলোর সৌন্দর্যের বিচার করার দায়িত্ব আপনাকে আমাকে দেওয়া হয়নি। খেটে-খাওয়া দিনমজুর এইসব মানুষগুলোরও ছালার তৈরি নড়বড়ে একটা ঘর আছে, ঘরে দু-একটা শুকনো প্রিয় মুখ আছে, মুখগুলোতে একটু-আধটু ধূসররঙা দু-চারটা স্বপ্নও আছে। তাদেরও আবেগ অনুভূতি আছে। তাদের কাছেও, প্রিয় মানুষদের মুখের হাসি স্বর্গের চেয়েও দামি লাগে।
ওদের ভালোবাসুন, সম্মান দিয়ে বিনয় মিশিয়ে দু-একটা ভালো কথা বলুন। দেখবেন, ওদের কাছ থেকে পাওয়া ফিরতি যে কৃতজ্ঞতার হাসিটুকু পাবেন, সেটা হয়তো সেই রাতে আপনার সবচেয়ে শান্তি আর তৃপ্তির ঘুমের কারণ হবে, যে ঘুমটি হয়তো আপনি গত কয়েক বছরেও ঘুমোতে পারেননি।
ভাবনা: সাতশো ষাট
………………………………………………………
এক। মানুষ যাকে নিজের নিঃশ্বাসের চাইতেও বেশি বিশ্বাস করতে পারে, প্রায় সময়ই দেখা যায়, তার সাথেই মানুষ সারাজীবন থাকতে পারে না। এর চাইতে কষ্টের আর কী হয়!
দুই। এই যে প্রেম এখন তুখোড় তুমুল,
এই যে এখন বিংশ শতাব্দীর সমস্ত গতানুগতিক রীতি-উৎসব বন্ধ,
তোমার শিয়রে খোলা জানালা এখন শুধুই উন্মুক্ত,
কালেভদ্রে তোমার সকল প্রেমালাপ এখন গচ্ছিত রয়েছে পরম আকাঙ্ক্ষিত পরিসর হয়ে…
এসো, কিছু সময় বসি,পাশাপাশি বসি, তোমাতেই তোমার প্রেমসত্তাকে বিলীন হয়ে যেতে দেখি ক্রমশ…
তিন। কেউ একজন আপনাকে বলেছিল…তোমার যদি কখনও রাগ হয়, বকা দিতে ইচ্ছে করে বা খুব মারতে ইচ্ছে করে, তবে তার পুরোটাই আমাকে দিয়ো। তোমার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যতা আমার নেই, কিন্তু তোমার ঘৃণা পাবার জন্য আমি আছি। কেউ একজন আপনাকে অনেক কিছুই বলেছিল…ওসবের কিছুই মনে নেই আপনার।
আমার কেবলই ভুলগুলো, মনে হয়, বেশি হয়ে যায়! কী করা বলুন তো? আল্লাহর কাছে তো মাফ চাই প্রতিদিন। কিছু শোধরাই, কিছু পারি না। কিন্তু একটা জিনিস কী জানেন, আমি সব কিছুই স্বীকার করার সাহস রাখি।
কেন জানি মনে হয়, আপনাকে ভালোবাসা যায়, বিশ্বাস করা যায়, কিন্তু ঘাঁটাঘাঁটি করা যায় না। আমি তো চাই, আপনি শান্তিতে থাকুন। এই কারণে আমার লাইফে আপনি আসুন, সেটাও চাই না। যদি আমার দ্বারা কোনও ভুল হয়, যা আপনার অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে, সেই ভয়ে।
অ্যাই ছেলে, তুমি কার সাথে পালাবে? পালাও খালি এক বার, তোমার ভুঁড়িই ফুটো করে দেবো আমি। আর যার সাথে পালাবে, তারটা দেখা যাবে পরে। আমার নামে থানায় জিডি করে রেখো একটা। আমার ঠিকানাটা বলছি…শার্টের বোতাম খোলো, আর হাতটা বুকের উপর রাখো। যেখানে হাতটা রেখেছ, ঠিক ওটাই আমার ঠিকানা।
চার। প্রিয় মানুষ, প্রিয় ভালোবাসা…
অনুভূতির রাজ্যপাট এখন পুরোটাই,
ভালোথাকার এক কল্পকথা!
ফাগুনের পঁচিশ কিংবা বসন্তের ছাব্বিশ—
সবতেই যেন এখন পহেলা ফাল্গুন…!
এই মুক্ত আকাশ…এই রূপসী প্রকৃতি…এই রঙিন পৃথিবী…
সব কিছুই যেন আজ আমার প্রকট অস্তিত্ব!
আমি আজ খুশি,
আমি সুখী বড়ো,
আজ আমি ভীষণ সুখী নিজের সুখের রূপটা দেখে!
ভালোবাসার রাজ্যেশ্বর আজ আমার অনুভূতির রাজ্যপাট!
আজ আমি খুশি,
আজ আমি সুখী।
পাঁচ। পৃথিবীকাঁপানো সুন্দরী প্রিন্সেস ডায়ানা বিয়ে করেছিলেন যুবরাজ চার্লসকে। হাজারো পুরুষের স্বপ্নমানসী লাস্যময়ী এই সুন্দরী ডায়ানাকে কখনওই ভালোবাসতে পারেননি যুবরাজ চার্লস। যে ডায়ানাতে পাগল ছিল সারাবিশ্ব, সে ডায়ানা মগ্ন ছিলেন চার্লসে, আর সেই চার্লস দিওয়ানা হয়ে ছিলেন ক্যামিলার ভালোবাসা পেতে। প্রায় মানুষই ভুল মানুষের প্রেমে বুঁদ হয়ে থাকে দিনের পর দিন। কেন যে এমন করে মানুষ, তার কোনও ব্যাখ্যা আমি আজও পাইনি।
মানুষ বোধহয় বেঁচে থাকেই আজীবন ভুল মানুষের জন্য কষ্ট পেয়ে পেয়ে মরতে। মানুষকে সবচাইতে বেশি কাঁদতে হয় ভুল মানুষের জন্যই। কখনও কখনও ভালোবাসাহীনতা বা নিস্পৃহতা ভালোবাসার চাইতেও বেশি ভালোবাসার জন্ম দেয়।
পৃথিবীটা অদ্ভুত রকমের গোলমেলে। এই গোলমেলে পৃথিবীতে স্রষ্টার সবচেয়ে রহস্যময়, জটিল, কঠিন ও অমীমাংসিত বিষয়টি হলো ভালোবাসা। এখানে কে যে কখন কাকে, ঠিক কোন কারণে ভালোবাসে, আজও তার কোনও সঠিক সমীকরণ মেলাতে পারেননি পৃথিবীর কেউই।
পৃথিবীর সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ক অনুভূতি হলো সেটাই, যখন দেখবেন, আপনি যাকে আপনার সবটা দিয়ে ভালোবাসেন, সে তার সবটা দিয়ে অন্য কাউকে ভালোবাসে। প্রিয় মানুষটির মৃত্যু যতটা কষ্ট দেয়, তার চেয়ে সহস্রগুণ কঠিন যন্ত্রণা দেয় প্রিয় মানুষটি যখন অন্য কাউকে ভালোবাসে, সেই ব্যাপারটি।
ভালোবাসার মানুষটি আমাকে ভালোবাসে না, তা-ও মানা যায়। কিন্তু সে অন্য কাউকে ভালোবাসে এটা কখনওই, পৃথিবীর কোনও যুক্তিতেই যেন মানা যায় না। ভালোবাসা একধরনের বেপরোয়া অধিকারবোধের জন্ম দেয়। সে আমায় ভালোবাসুক আর না-ই বাসুক, সে আর কাউকেই ভালোবাসতে পারবে না—এমন এক অদ্ভুত ভাবনা মনের মধ্যে তৈরি হয়ে যায় নিজের অজান্তেই। ভালোবাসার ক্ষেত্রে মানুষ খুব স্বার্থপর প্রাণী।
এজন্যই একজন মানুষ অকারণে, ‘অযৌক্তিক’ভাবে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করে সেই মানুষটিকেই, যাকে তার ভালোবাসার মানুষটি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে।
আমি তোমাকে ভালোবাসি, তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসো না; তবুও তোমাকে একটুখানিও আঘাত করতে আমার বুক কাঁপবে।
আমার ভালোবাসার মানুষটি তোমাকে ভালোবাসে, তুমি কখনওই আমার কণামাত্রও ক্ষতি করোনি; তা সত্ত্বেও তোমাকে আঘাত করতে আমার হাতের একটি লোমও কাঁপবে না।
—মানুষের চরিত্রে এই আশ্চর্য বৈশিষ্ট্যটি আমি দেখেছি।
ছয়। ধরে রাখো না বলেই হয়তো…
বার বার ফিরে আসি।
ধরে রাখি না বলেই হয়তো…
হারাতে দাও না তুমি।
সাত। সবার মিথ্যে গল্পে…
একটা সত্যি ‘তুমি’ থাকে।
অবশেষে,
প্রতিটি মিথ্যে গল্প একে একে সত্যি হয়,
শুধু সত্যি ‘তুমি’টাই মিথ্যে হয়ে পড়ে!
আট। ১. একটি মাত্র নিখুঁত হাসি হাসবার জন্য একজন মানুষকে ক-ফোঁটা চোখের জল খরচ করতে হয়, সে খবরটা কেউ জানে না। যে-সব মানুষের হাসি সুন্দর, দেখলেই মন ভরে যায়, তাদের ক্রন্দনরত অবস্থার চেহারা দেখলে মনে হবে, ওই দুই চেহারা সম্পূর্ণ ভিন্ন দুজন মানুষের।
২. একজন মানুষ যেমন চাইলেই সারাক্ষণ হাসতে পারে না, তেমনি চাইলেই সারাক্ষণ কাঁদতেও পারে না। হাসির কথায় হেসে না ফেললেও চলে হয়তো, কিন্তু কান্না পায় এমন ব্যথায় কাঁদতে না পারলে, জোর করেও চোখের জল বের করতে না পারলে সেটা হয়ে ওঠে এক বিশাল অসহায়ত্ব।
৩. অনেক মানুষই গভীর রাতে কিছু ভুল কথা আর ভুল মানুষের কথা ভাবতে থাকে, যা নিয়ে ভাববার আসলে তেমন কোনও কারণ নেই।
৪. খুব সম্ভবত, সমুদ্র মানুষের দুঃখ বুঝতে পারে। আপনি গভীর রাতে সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দ খেয়াল করলে দেখবেন, যেন অনেকগুলো মানুষের সমবেত চিৎকারের শব্দ শোনা যাচ্ছে। আরও একটা বিষয় খেয়াল করে দেখতে পারেন। সমুদ্রের পাড়ে গেলেই মনটা উদাস হয়ে যায়, জীবনের অনেক কিছুই মনে পড়তে থাকে। এবং, সমুদ্রের পাড় থেকে বাড়ি ফেরার সময় মানুষের নিজেকে অনেক হালকা মনে হতে থাকে।…এসব কেন হয়, সেই রহস্যের ব্যাখ্যা এখনও খুঁজে পাইনি! আমার কাছে সমুদ্রকে রহস্য নয়, বরং রহস্যকেই সমুদ্র মনে হয়!
নয়। প্রতিদিন একই বিছানায় মাত্র আধ ইঞ্চি দূরত্বে শুয়ে থেকেও কখনও কখনও দুজনের মাঝে হাজারকোটি আলোকবর্ষ দূরত্ব থেকে যায়; আবার কখনও এমন হয়, হাজার মাইল দূরত্বে-থাকা কোনও দুজন মানুষের মধ্যকার দূরত্ব আধ ইঞ্চিও না!
ভালোবাসা থাকলে পৃথিবীর কোনও সম্পর্কই অবৈধ হয় না, বরং ভালোবাসাহীন সম্পর্কগুলোই একেকটা অবৈধ সম্পর্ক। অথচ আমরা বৈধতা বলতে স্রেফ কাগজে কলমে একটা সাইনকেই বুঝি। আদতে ভালোবাসাই সম্পর্কের প্রকৃত বৈধতা। বিয়ে কেবল সামাজিক বৈধতা দিতে পারে, মানসিক বৈধতা নয়।
পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছে, যারা যুগ যুগ একই ছাদের নিচে বসবাস করে যাচ্ছে কোনও প্রকার ভালোবাসা ছাড়াই; কখনওবা, সেখানে মায়াটুকু পর্যন্ত নেই! আবার, এমনও মানুষ আছে, যাদের দেখা হয়নি যুগ যুগ, অথচ পরস্পরকে ভালোবেসে গেছে আমৃত্যু! পরস্পরের প্রতি মায়াহীন হয়ে পাশে থেকে-যাওয়া মৃত্যুরই নামান্তর।
পাশাপাশি থাকা মানেই কাছাকাছি থাকা নয়। দূরে থাকা মানেই কিন্তু দূরত্বসৃষ্টি নয়। নৈকট্য এবং দূরত্ব নির্ভর করে দুটি আত্মা ওদের শরীরের সীমানা ছাড়িয়ে ঠিক কতটুক একে অপরের সাথে মিশে আছে, তার উপর।
কাছে আসতে শরীর লাগে না, মন লাগে।
শরীরের দূরত্বহীনতার সাথে মনের দূরত্বহীনতার কোনও সম্পর্কই নেই।
ভাবনা: সাতশো একষট্টি
………………………………………………………
এক। সম্পর্ক যতটা না মরে ভালোবাসার অভাবে, তার চেয়ে শতগুণে মরে যায় যত্নের অভাবে।
দুই। বলেছিলে, ফিরে তুমি আসবেই!
তাই ঠিক বুঝে নিয়েছিলাম, আর ফিরবে না। যে ফেরে, সে কিছু বলে না; সে শুধুই ফেরে। ফিরতে সবাই জানে না। জীবন ফিরতে সবাইকে শেখায় না।
আমার অনুমানকে অব্যর্থ করে দিয়ে ফেরোওনি তুমি আর! একবার ফেরার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফেললে তা রাখতে মনে অনেক জোর থাকতে হয়!
তোমার হাত ধরে গোটা একটা জীবন কাটাবার কথা ছিল।… হ্যাঁ, কাটাচ্ছিও!
হাতটা আমার আজও থেকে গেছে তোমার হাতেই! যে হাতটা তুমি ধরোইনি কখনও, সে হাতটাকেই কিনা আমি তোমার নামে লিখে দিয়েছি ঠিক সেদিনই, যেদিন থেকে প্রথম মনে হয়েছে, এই আমার মতো বোকা মানুষটারও একটা ব্যক্তিগত তুমি আছে!
আজ বুঝি, বোকারা দুঃখ পেতেই জন্মে! মন না ছুঁয়েও যে অত সহজে হাত ছুঁয়ে ফেলা যায়, কে তা জানত!
চলে গেলেই চলে যাওয়া যায় না!
ছেড়ে দিলেই ছেড়ে যাওয়া যায় না!
সুখে থেকো, মেয়ে; দুঃখ তোমাকে মানায় না।
তিন। একটুখানি চোখের দেখাতেও কতটা প্রেম, কতটা মুগ্ধতা লুকিয়ে থাকে, তার খোঁজ পুরো একটা জীবন সংসার করেও আজও তুমি পেলে না, বালিকা!
আফসোস, সেই চোখ তোমার অন্ধ হয়ে গেছে বড়ো অকালে!
চার। দৈব,
সাথে হাঁটা হয় না কতদিন…
আমায় একটু কোলে নেবে…?
দৈব বধির বলে,
এই যে এতটুকু তাকে বলে ফেলা যায়, এতেই আমার শান্তি!
যদি তা-ই হয়,
দ্বৈত: সেও তো চেয়েছিল…
দিয়েছিলি কি? দিসনি তো!
হা হা হা…চেয়েছিল বুঝি…!?
তুইও মানিস!?
হোক মিথ্যে, তবুও চেয়ে তো ছিল!
আমি তো দিই…কখনো সখনো…
তবে সেদিন দিলি না যে?
দেবো, এমনিতেই দেবো…
কিন্তু তার চাওয়ার বিপরীতে যে দেওয়া,
সে দেওয়া যে আমি দিতে পারব না!
তার সংজ্ঞায় তাকে যে আমি
পাগল বলতেই পারব না!
বরং আমায় দেখাই যে পাগলের কাজ!
এখনও সে কথায় পড়ে আছিস?
ঝড় বয়ে চললে, ধুলোও যে উড়ে,
ঝড় না থামলে ধূলিকণাও বয়ে চলে।
আর মাসির দরদ দেখাসনে, দ্বৈত!
তার কথা না রাখার কষ্ট…
আমার চেয়ে তোকে বেশি পোড়ায় না!
কিছু সম্পর্কহীন সম্পর্ক বড়ো অদ্ভুত…
খুব করে, ভালোবাসাই বুঝিয়ে দেয়—
মানুষটা কত দূরের!
পাঁচ। আমায় তো সে সবসময় ভুলেই থাকে! তবু সে ভুলে গেলে কেন এমন কষ্ট লাগে!?
ছয়। সেই যে ভালোবাসার তিনটে পর্যায় থাকে…
একটাসময়, ভালোবাসার জন্য যে-কোনও কিছু ধ্বংস করে ফেলতে ইচ্ছে করে…সব কিছু ছেড়েছুড়ে ফেলে দিয়ে চলে আসতে মন চায়…।
তারপর একটা পর্যায়ে এসে, তা আর করতে ইচ্ছে করে না। বুঝতে পারা যায়, ভালোবাসা অনেক বড়ো একটা বিষয়, এর জন্য কিছু ধ্বংস করা যায় না…।
তারপর একসময়, ভালোবাসা আরও পরিণত হয়…একটা নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করে ফেলে। তখন ভালোবাসার বিপরীতে কোনও কিছু ধ্বংস করাটা, ভালোবাসার কাছে এতটাই তুচ্ছ কিছু হয়ে যায় যে, তা আর করতে ইচ্ছে করে না।
একসময়ের ভালোবাসায়, ইচ্ছের রঙে ভালোবাসা না রাঙালে, চাইলেই চারপাশ ভেঙে চুরমার করে ফেলা যায়!
সব ভেঙে টুকরো হয়ে গেলে, সেই ভাঙনের দিকে চোখ রেখে, ভেতরের বুঝদার মনটা অবশেষে ভাবে, কবে মনটা একটু বড়ো হবে, যখন আবেগটা আর দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে আসবে না, তারে ভেতরেই আষ্টেপৃষ্ঠে রাখা যাবে…। রাখা গেলে, হয়তো খুব ভালো হতো!
তারপর সময় বয়ে চলে…কতকিছু বদলে যায়…ভালোবাসা আরও পরিণত আর গভীর হয়…বিস্তৃতি বাড়ে…কষ্টের এক ডজন বাচ্চা-কাচ্চা হয়…ওরা আকাশ ছোঁয়…।
এপারের মিথ্যে-নয় ভালোবাসা, ওপারের সত্য-নয় ভালোবাসার খোঁজ পায়…অনুভূতির তীব্রতা বাড়ে, এক প্রাণের প্রতি ফুট ভালোবাসার অনুভূতি, অন্য প্রাণের প্রতি ইঞ্চি অভালোবাসার জানান পেয়ে যায়! নির্লজ্জ মন ভালো তবুও বাসে…।
দৃশ্য অদৃশ্য বহু ঝড়ে ক্লান্ত মন অবশেষে ভাবে, সেই ভালোবাসার ছোট্টোবেলার মতো করে, সব কিছু ভেঙে চুরমার করে দিতে…কিন্তু তা আর করা যায় না…ভালোবাসা বড়ো হয়ে গেছে যে! ছেলেবেলার অমন ছেলেমানুষি সে আর করতে পারে না।
একদিন মন, অনুভূতি প্রকাশের দিক দিয়ে বড়ো হতে চেয়েছিল,…আজ যখন বড়ো হয়ে পরিণত হয়ে গেছে, তখন আবার সে ছোটো হতে চাইছে!
ইচ্ছে করে, খেতে বসে, খুব ছোট্টো কোনও অভিমানেও সমস্ত খাবার তার মাথায় ঢেলে দিতে…সে কাছে নেই বিধায়, নিজের মাথাতেই ঢেলে ফেলতে…!
আর অনেক অনেক অভিমানে, কোনও মনখারাপের দিনে, নীল সাদা আকাশে চোখ রেখে ভাবতে—
খুব করে কাউকে—
মনটা দিয়েই দেওয়া যায়!
আকাশ পাতাল উজাড় করে
ভালোও বাসা যায়!
লিখে ফেলা যায়
একসমুদ্র কথা!
কিন্তু—
‘জানো, ভালো লাগছে না আমার…’
কিংবা ‘ভালো নেই আমি…’
অথবা ‘জানো, কষ্ট হচ্ছে খুউব…’
এমনই ছোট্টো একটা বাক্য—
তারে আর বলা যায় না…
কোথায় যেন বাধে!
কেননা বলে ফেলতে যা লাগে, তা কেবল ওপারেই থাকে…!
বাতাস অদৃশ্য হলেও—তার ধ্বংসলীলা অদৃশ্য কিছুতেই নয়!!
সাত। ও হ্যাঁ…আমি তোমার সাথে অনেক রাগ করেইছিলাম তো!
পরে ভাবলাম, থাক, মেয়েটা তো এমন পাগলিই…!
আট। আমার পেছনে লেগে থাকুন। আপনাকে আমি আমার পেছনে লেগে থাকতে দেবো। এতে আমারই সুবিধা।
কেন? আপনি আমার পেছনে লেগে থাকলেই আমার জন্য ভালো। আমি তো আপনাকে চিনি না, আপনাকে চেনার সময়ও আমার নাই। তবে আমি এটা জেনে মনে মনে হাসব যে আপনার মতো কিছু ‘পাবলিক’ সারাজীবনই আমার ‘পেছনে’ থাকবেন।
আপনাদের দেখে ঈর্ষা হয়। এত সময় কোথায় পান আপনারা, বস?
নয়। My lovers keep me alive as they cannot stop thinking and talking about me.
My haters keep me alive as they cannot stop thinking and talking about me.
Some love me as they cannot ignore me.
Some hate me as they cannot ignore me.
My haters give me the same priority as my lovers do.
দশ। অন্যান্য বার, যারা এইচএসসি পরীক্ষায় রেজাল্ট খারাপ করসে, ওদের জন্য কয়েক ছটাক মোটিভেশন প্রসব করে কিছু ফলোয়ার বাড়ানোর ধান্দা করতে পারতাম; এবার তা-ও পারতেসি না। স্যাড লাইফ!
মনের দুঃখে এক সুইমিং-পুল-সমান কান্নাকাটি করলাম।
ভাবনা: সাতশো বাষট্টি
………………………………………………………
এক। প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পেলে অপ্রয়োজনীয় লতাও ছুঁয়ে দিতে পারে আকাশের নীল গৌরব। সুযোগ পেলে আগাছাও পৌঁছাতে পারে গাছের সমান উচ্চতায়।
দুই। বয়স কত হতে পারে? বড়োজোর সাত কি আট, তাই না? অথচ দারিদ্র্য তার এই সাত-আট বছরের বয়সকে টেনে হিঁচড়ে সত্তর-আশিতে নিয়ে গেছে।
যে বয়সে পিঠে স্কুলব্যাগ নিয়ে যোগ-বিয়োগ শেখার কথা, সে বয়সে সংসারের ভার কাঁধে তুলে তাকে মেলাতে হয় জীবনের হিসেব।
যে বয়সে পাড়ায় পাড়ায় দস্যিগিরি করে ঘরে ঢুকে মায়ের বকুনি খাওয়ার কথা, সে বয়সে ছেলেটি অলিতে গলিতে জীবন ফেরি করে একচিলতে হাসির দরে।
সবার কাছে জীবন মানে জীবন নয়, কারও কারও কাছে জীবন মানে কেবলই যুদ্ধ।
এই খুদে যোদ্ধাদের প্রতি সদয় হোন, তার কাজকে সম্মান করুন। পৃথিবীর কোনও কাজই ছোটো নয়। সে ভিক্ষেও করছে না, চুরিও করছে না। চলতে পথে এমন কারও দেখা মিললে প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনে পাঁচ-দশ টাকার হলেও পণ্য কিনুন।
জীবন কী, তা বুঝে ওঠার আগেই জীবনের বোঝা ঘাড়ে নিয়ে চলা এইসব মানুষগুলোই একদিন হয়তো পৃথিবীর বুকে বড়ো বড়ো সাফল্যের গল্পগুলো লিখে দিয়ে যাবে।
তিন। পৃথিবীবিখ্যাত মার্কিন কমেডিয়ান রবিন উইলিয়ামস সারাজীবনই সারাপৃথিবীকে হাসিয়ে গেছেন, আর সবার অগোচরে নিজে ডুবে ছিলেন তীব্র বিষণ্ণতায়। পর্দায় দর্শক হাসাতে ব্যস্ত মানুষটিরই জীবনে আদতে কোনও হাসিই ছিল না। পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রবাদপ্রতিম এই কৌতুকঅভিনেতা বিষণ্ণতা থেকে বাঁচতে নিজের বাড়িতে দড়িতে ঝুলে আত্মহত্যা করেন। হ্যাঁ, তাঁর মতো একজন বাহ্যিকভাবে সদা-হাস্যোজ্জ্বল ঝলমলে মানুষ সবার অলক্ষে বেছে নিয়েছিলেন স্বেচ্ছামৃত্যুর পথ।
যশ, খ্যাতি, রূপ আর কাঁড়ি-কাঁড়ি অর্থের মালিক লাস্যময়ী অপূর্ব সুন্দরী অভিনেত্রী মেরিলিন মনরো রঙির দুনিয়ার অন্তরালে দিনের পর দিন ভুগেছেন অদ্ভুত রকমের ভীষণ অন্তর্যন্ত্রণায়। জীবনের নানান ঘাত-প্রতিঘাতে রিক্তনিঃস্ব, চারপাশের অগনিত মানুষের ভিড়েও নিঃসঙ্গ-একাকী মনরো মাত্র ছত্রিশ বছর বয়সে সমস্ত জাগতিক দহন থেকে স্বেচ্ছায় মুক্তি খুঁজেছেন মৃত্যুর কাছে, অতিরিক্ত পরিমাণে ঘুমের ওষুধ খেয়ে।
বিশ্বকাঁপানো পপতারকা অগাধ সম্পদের মালিক মাইকেল জ্যাকসন উচ্চমাত্রার ঘুমের ওষুধ ছাড়া কখনও এক রাতও ঘুমোতে পারতেন না। ওষুধের তীব্র পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে তিনি মারা যান মাত্র ৫০ বছর বয়সে। না, এই পৃথিবীর সর্বকালের সর্বসেরা পপতারকার মৃত্যুটি শান্তির হয়নি। যাঁর গানের লাইন মাথায় এলেও আমাদের হাত-পা নাচতে থাকতে অবচেতনভাবেই, তাঁর নিজের ব্যক্তিগত জীবনটি ছিল নিথর ও নিস্তরঙ্গ।
পৃথিবীর ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ‘সুখ’ জিনিসটা বরাবরই একটি আপেক্ষিক বিষয় থেকে গেছে। সব কিছুর পূর্ণতার ভিড়েও কেউ কেউ নিদারুণ অসীম শূন্যতায় ধুঁকে ধুঁকে সারারাত ঘুমোতেই পারে না। আবার জাগতিক কোনও বিত্ত না-থাকা অনেক মানুষই রাত নামার আগেই আরাম করে নাক ডেকে ডেকে ঘুমিয়ে পড়ে।
আপনি যাকে দেখে ‘আহ্, কী সুখী, কী পরিপূর্ণ একজন মানুষ!’ ভেবে ভেবে নিজের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ছেন, সেও হয়তো, আপনার মতোই, অন্য কাউকে দেখে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বিষণ্ণতার হাত থেকে বাঁচতে ঘুমের ওষুধে সুখঘুম খুঁজে যাচ্ছে অবিরত।
এই জগতের শ্রেষ্ঠ মোটিভেশনাল স্পিকার ও বেস্ট-সেলিং রাইটার ডেল কার্নেগি সারাটি জীবন ধরে অন্যদের বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা জুগিয়ে গেছেন নিরলসভাবে, আর ব্যক্তিগত জীবনে নিজে বেঁচে ছিলেন একজন অসুখী, বিষণ্ণ মানুষ হয়ে।
আসলে কী জানেন, গুরু আইয়ুব বাচ্চুর গানের লাইনগুলিই এই পৃথিবীর সবচাইতে বড়ো সত্য:
সুখেরই পৃথিবী, সুখেরই অভিনয়,
যত আড়াল রাখো, আসলে কেউ সুখী নয়।
নিজ ভুবনে চিরদুখী, আসলে কেউ সুখী নয়।
…খোঁজ নিয়ে দেখুন, আদতে আমরা কেউই সুখী নই, একদম কেউই না!
বেঁচে থাকতে অনেক কষ্ট হয়, জানি। তবুও বাঁচুন, হারিয়ে যাবেন না। দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি, আপনার চাইতে দুঃখী অসুখী ব্যর্থ মানুষ এই পৃথিবীতে অসংখ্য আছে। সুখীদের ভিড়ে দুঃখী হয়ে নয়, বরং বেশি দুঃখীদের ভিড়ে অল্প দুঃখী হয়ে বাঁচার সমস্ত আয়োজন আপনার চোখের সামনেই পড়ে রয়েছে।
অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, মাপাহাসি জীবনের মাপকাঠি নয়, বরং চাপাকান্নাই জীবনের মাপকাঠি।
চার। সমুদ্র করে না কখনও বৃষ্টির পরোয়া!
মেয়ে, তুমি বরং প্রেমিকা না হয়ে সমুদ্র হও,
আর অনায়াসেই গিলে ফেলো যত অশ্রুফোঁটা!
পাঁচ। আপনি কীভাবে বাঁচবেন, যদি গানই না থাকে জীবনে? সম্ভবত গানটাও লাগে জীবনে, ভাবছেন এমন? ‘সম্ভবত’ ‘-ও’…এভাবে ভাবেন! খেপেছেন? আপনি আসলে বাঁচেন কী করে? কীভাবে সামলান হৃদয়ের দারিদ্র্য?
আপনি বাজারের অন্যান্য পণ্যের সাথে কীভাবে বেঁচে থাকেন দিব্যি এমন গান ছাড়াই? টাকা জিনিসটা সুন্দর, তবে খুব কি সুন্দর? মানে খুউব? এইসব আবর্জনা নিয়ে কীভাবে বাস করছেন?
আপনি কীভাবে বেঁচে আছেন, তা ঈশ্বরকে জানাচ্ছেন? আপনার কেন মনে হচ্ছে আপনার বেঁচে থাকার ধরনটা ঈশ্বর-অনুমোদিত? অনুভূতি বোঝেন? বৃষ্টি, শীতল হাওয়া, রোদ্দুর…লাগে ভালো? জাগায় কিছু, প্রাণের ভেতর? না কি কেবলই প্রেম, কাম, বাসনা…ব্যস্…ওসবই জাগায়?
মাথায় কী আছে? মগজ, না কি অনুভূতি? আপনার ব্যর্থতার গভীরতা নেই, আপনি খুব সহজেই কেঁদে ফেলেন, আপনার সাফল্যের বৈধতা নেই। অতএব, আপনার জীবনটা বড্ড সুন্দর! আনন্দের ভাগটা বেশি, দুঃখ…সে আবার কীসের কী? মধু মধু!
ছয়। আপনার অ্যালার্জির সমস্যা আছে বলে, যে মানুষটি নিজের খেতে ভালো লাগা সত্ত্বেও খাসির মাংস ঘরে রান্নাই করে না, সে আপনাকে ভালোবাসে।
তুমুল ঝগড়াঝাঁটি শেষে দুজনের মুখদর্শন বন্ধ হবার পরও, রাস্তা পার হতে গিয়ে যে মানুষটি আপনাকে শক্তভাবে হাত ধরে নিজে সামনে এগিয়ে সাবধানে রাস্তা পার করিয়ে দেয়, সে মানুষটি আপনাকে ভালোবাসে।
আপনি সিগারেটের ধোঁয়া সহ্য করতে পারেন না বলে যে মানুষটি বাইরে গিয়ে লুকিয়ে সিগারেট খেয়ে আসে, সে আপনাকে ভালোবাসে।
চলে যাবার সময়, যতক্ষণ দেখা যায়, অদৃশ্য না হয়ে যাওয়া পর্যন্ত পেছনে যে মানুষটি আপনার দিকে একদৃষ্টে নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকে, সে আপনাকে সত্যি সত্যিই ভালোবাসে।
ভালোবাসা প্রমাণ করা লাগে না। ভালোবাসতে শব্দেরও প্রয়োজন হয় না। শব্দের দাঁড়িপাল্লায় রেখে কখনও ভালোবাসা মাপাও যায় না। মুখে ভালোবাসি না বলেও অনেকেই খুব গভীরভাবে ভালোবাসতে জানে। এজন্য, ভালোবাসতে জন্মবোবা লোকটিরও জীবনে কখনও একটি শব্দও ব্যয় করা লাগে না।
সাত। সমুদ্রের কখনও
আকাশ ছোঁয়া হয়নি…
আকাশ কখনও
সাগর পাড়ি দেয়নি।
কেবল এক অদ্ভুত চক্রাকার জলে
ওরা একে অপরকে ছুঁয়ে থাকে।
সূর্যের প্রতি,
তাই ওরা আজন্ম কৃতজ্ঞ।
আট। সফল ও ব্যর্থ মানুষের মধ্যে অনেক পার্থক্যই রয়েছে। একটি বলছি।
ব্যর্থ যাঁরা, তাঁরা অনেক কিছুই করবেন বলেন। মুখে বলতে থাকেন, এটা করব, সেটা করব ইত্যাদি। সেগুলির মধ্যে কিছু করতে পারেন, কিছু করতে পারেন না।
সফলরা ঠিক ততটুকুই বলেন, যতটুকু তাঁরা করে দেখাতে পারেন। আগেভাগে বা আগ বাড়িয়ে তেমন কিছু বলেন না। তাঁদের কাজই তাঁদের পরিচয়।
মজার ব্যাপার হলো, এই সফলতা কিংবা ব্যর্থতা, দুই-ই আসলে দুই ধরনের মাইন্ডসেট। আপনার মাইন্ডসেটই বলে দেবে, আপনি কোন রাস্তায় হাঁটবেন। ব্যর্থতার মাইন্ডসেটের মানুষকে আমি সফলতার দিকে এগিয়ে যেতে অতটা দেখিনি, এর উলটোটাও সত্য।
আমাদের যে বন্ধুটি সবার আগে গাড়ি কিনবে বলে আমাদের সবাইকে বলে বেড়াত, সে এখনও, আমাদের কাউকে কাউকে ফোন করে মোটামুটি চলনসই একটা চাকরি খোঁজে। ডেসটিনি কোম্পানি উঠে না গেলে হয়তো বন্ধু আমাদের তার নিজের গাড়িতে চড়াতে ঠিকই পারত। যে কোম্পানি তার গ্রাহকদের ফেইসভ্যালু দিয়ে চলে, সে কোম্পানি বেশিদূর এগোতে পারবে না, এটাই স্বাভাবিক।
আবারও বিনয়ের সাথে মনে করিয়ে দিই, সফলতা ও ব্যর্থতা প্রকৃতপক্ষে মাইন্ডসেট, বাহ্যিক কোনও অবস্থা নয়। মাইন্ডসেটটা ঠিক করতে পারলে বাকিটা আপনাআপনিই হয়ে যায়।
(সমুদ্রের তীরে বসে এ নিয়ে আরও বিশদভাবে লেখার ইচ্ছে রইল। ‘সমুদ্রের তীরে’ কথাটা কেন বললাম, আজ সন্ধ্যায় জানাচ্ছি।)
ভাবনা: সাতশো তেষট্টি
………………………………………………………
এক। জীবনের শেষকথা অর্থও নয়, ভালোবাসাও নয়; জীবনের শেষকথা হলো শান্তি এবং শুধুই শান্তি। আমরা শান্তি পেতে অর্থ আর ভালোবাসা খুঁজে ফিরি, অথচ শেষমেষ কিনা শান্তিটুকুই হারিয়ে ফেলি! যে ভালোবাসায় শান্তি নেই, সে ভালোবাসার চাইতে ঘৃণাও অনেক ভালো। যে অর্থ শান্তি নষ্ট করে দেয়, সে অর্থের চাইতে কষ্টও ভালো। যে প্রেম পায় না, সে কাঁদে; যে শান্তি পায় না, সে মরে। সে ভালোবাসার ভারে ভারাক্রান্ত হয়ে কী হবে, যে ভালোবাসা মনের শান্তিটুকুই নষ্ট করে? তার চাইতে প্রেমহীন হয়ে দিন গুনে যাওয়াও তো ভালো! স্রেফ বেঁচে থাকার নাম জীবন নয়, শান্তিতে বেঁচে থাকার নামই জীবন।
দুই। ঈর্ষা জিনিসটা অপ্রাপ্তি থেকে আসে না, বরং আসে নিজের অবস্থান সম্পর্কে অতৃপ্তি থেকে। যে হতদরিদ্র মানুষটি তার নিজের অবস্থান নিয়ে সন্তুষ্ট, তার চেয়ে ধনী আর কে আছে! ঈর্ষা মানুষের মধ্যে একধরনের তীব্র অভাববোধ তৈরি করে। এই বোধটিই মানুষকে ক্রমশ দুর্বল করে দেয়। একজন ঈর্ষাপরায়ণ মানুষ মূলত একজন দুর্বল মানুষ। যার নিজের ক্ষমতার উপর আস্থা আছে, সে কখনও কাউকে ঈর্ষা করে না। কাউকে ঈর্ষা করার মানেই হলো, আমি কখনওই তার মতন হতে পারব না, মাথানত করে এটা মেনে নেওয়া।
তিন। ধরো, তুমি তোমার উঁচু অবস্থানের কোনও বন্ধুর সাথে কোথাও গেলে। সেখানকার লোকজন তোমার বন্ধুটিকে তার অবস্থানের কারণে একটি চেয়ার এগিয়ে দিলো, তোমাকে দিলো না। যদি সত্যিই সে তোমার বন্ধু হয়, তবে সে নিশ্চয়ই তোমার জন্যও আরেকটি চেয়ার দিতে বলবে। যদি তা না বলে, তোমাকে ফেলেই চেয়ারটিতে বসে পড়ে, তবে নিশ্চিত থেকো, যাকে তুমি বন্ধু ভাবছ, সে নিছকই তোমার পরিচিত কেউ, বন্ধু নয় কিছুতেই। বন্ধুত্বের সম্পর্ক অবস্থানের সমতার ভিত্তিতে হয় না, মনের সমতার ভিত্তিতে হয়। যার পদের ভারে বন্ধুত্ব পিষ্ট হয়, তার ভারী পদবি আছে বটে, কিন্তু বন্ধুত্ব নেই।
চার। পৃথিবীতে যে কয়েকটা জঘন্য অপরাধ আছে, তার মধ্যে ভালো না বেসেও ‘ভালোবাসি’ বলাটা একটা।
‘ভালোবাসি’ বলে ফেলাটা হচ্ছে একধরনের কমিটমেন্ট দিয়ে ফেলা। হ্যাঁ, বেশ গভীর রকমের কমিটমেন্ট। আপনার বলা ‘ভালোবাসি’ শব্দের উপর গেঁথে থাকে অপরপক্ষের ভরসা, বিশ্বাস আর নির্ভরতা।…কখনওবা, গোটা একটা জীবন! ভাবতে পারেন!
‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’ এই লাইনটির অর্থ হলো, ‘আমি তোমার সাথে জীবন ভাগাভাগি করতে চাই, তোমার হাত ধরে বাকি পথটুকু হাঁটতে চাই, তোমার সুখ-দুঃখের ভাগীদার হতে চাই’। ভালোবাসার মানেই মানসিক দূরত্বহীনতা। শরীরের দূরত্ব ঘুচিয়ে মনের দূরত্ব রেখে দেওয়ার নাম প্রয়োজন, ভালোবাসা নয়।
যাকে গ্রহণ করতে পারবেন না, তাকে ‘ভালোবাসি’ বলাটা চরম কাপুরুষতা। যাকে আশ্রয় দিতে পারবেন না, তাকে ‘তোমাকে চাই’ বলাটা চরিত্রহীনতা। আশ্রয়হীন প্রশ্রয়ের আয়োজন মানুষকে মৃত্যুর কাছাকাছি নিয়ে যায়। সম্পর্কের জালে আটকে ভালোবাসার দোহাই দিয়ে শরীর ভোগ করাটা সত্যিই অপরাধ। শুধু অপরাধ নয়, অতিজঘন্য অপরাধ। দিনের শেষে, শরীরই ভোগ্য, মন নয়।
আপনি যাকে শরীরের প্রয়োজনে কিংবা অন্য কোনও স্বার্থে ভালোবাসার নামে কেনা-বেচা করছেন, সে হয়তো আপনাকে সত্যিই ভরসা করে, বিশ্বাস করে।
এই দুনিয়ার সবচেয়ে দুর্লভ বস্তু হলো বিশ্বাস। এমন দুর্লভ বস্তু অনায়াসে ভেঙে দেবার অধিকার খোদাও আপনাকে দেয়নি। বিশ্বাসের মতো অত দামি বস্তুর অবমূল্যায়নের মধ্য দিয়ে মানুষ নিজেকে ক্রমশ সস্তা করে ফেলে।
আপনার শরীরের প্রয়োজন? হ্যাঁ, হতেই পারে। তার জন্য রাস্তার মোড়ে, পতিতাপল্লিতে বা কোথাও-না-কোথাও কিছু অর্থমূল্যে বিনিময়যোগ্য শরীর আপনি চাইলেই পেয়ে যাবেন। কিংবা বিছানায় ডেকে নিন এমন কাউকে, আপনার সাথে শুতে যার আপত্তি নেই। শরীরের বিনিময়মূল্য হয়, মনের নয়। কামের দাবি, কামনার দাবি বড়ো সুন্দর, বড়ো অকপট; সেখানে ভালোবাসাবাসির প্রয়োজন পড়ে না। এমনকি প্রেম ও কাম দুইজন ভিন্ন মানুষের প্রতিও জাগতে পারে, সেখানে কোনও পাপ নেই। শরীর বাঁধা পড়ে না, কিন্তু মন ঠিকই পড়ে।
ভালো না বেসেও শরীর চাওয়া অন্যায় নয়, তবে ভালোবাসার দোহাই দিয়ে শরীর পাবার পর কাউকে ছুড়ে ফেলে দেওয়া রীতিমতো খুনের সমান অপরাধ! ভালোবাসা পবিত্র জিনিস, আর বিশ্বাস পৃথিবীর সবচেয়ে দামি বস্তু। এই দুটোকে প্রয়োজনের রশিতে বেঁধে নিয়ে ফুর্তি করাটা অমানুষের পরিচয় দেয়।
কাউকে ভালোবাসতে না পারলে সরাসরি বলে দিন। আপনি যাকে ‘ভালোবাসি’ বলে আটকে রাখছেন, সে হয়তো আপনার কাছ থেকে ‘ভালোবাসি’ না শুনতে পেলে অন্য কারও কাছে জীবনের মানে খুঁজে পাবে। তাকে ছেড়ে দিন, যাকে আপনি ভালোবাসেন না। তাকে যেতে দিন, যার হাত আপনি শেষপর্যন্ত ধরে রাখতে পারবেন না।
কমিটমেন্ট দেবার আগে ভেবে দেখুন, তা রক্ষা করতে পারবেন কি না। ‘ভালোবাসি’ বলার আগে ভেবে নিন, আদৌ ভালোটা বাসেন কি না। যে মানুষটিকে আপনি খেলনা ভেবে বসে আছেন, তার কাছে আপনি হয়তো গোটা একটা জীবনের সমান। আপনার কাছে যা একটি মুহূর্তমাত্র, তার কাছে তা-ই হয়তো পুরো জীবনটাই!
পৃথিবীতে শুধু আপনার জীবনটাই জীবন, আর অন্যের জীবনটা খেলনা, তা তো নয়! আজ থেকে বছর দশেক বা পনেরো পর আপনার বোন, আপনার মেয়ে, আপনার ভাই, আপনার ছেলে, কিংবা আপনার খুব প্রিয় কারও সাথেও ঠিক একই ঘটনা ঘটতে পারে, যা আপনি অন্য কারও সাথে আজ ঘটিয়ে যাচ্ছেন। প্রকৃতি কড়ায়গন্ডায় হিসেব পুষিয়ে দেয়। তৎক্ষণাৎ কিংবা দেরিতে, ঠিক যে তীরটা আপনি ছুড়ে মারছেন, সে তীর উলটো হয়ে ঠিকই ফিরে আসবে আপনার বুক বরাবর। কখনও কখনও, নিজের কষ্ট সহ্য করার চাইতে চোখের সামনে নিজের প্রিয় মানুষের কষ্ট সহ্য করা অনেক কঠিন। ফেরত পাবেন, অপেক্ষা করুন।
কারও অনুভূতি নিয়ে খেলবেন না, খেলতে ইচ্ছে হয় তো মোবাইল-গেইম বা গেইমটয় কিনে খেলুন। কিংবা খেলুন এমন কাউকে নিয়ে, যে খেলার সাথে ভালোবাসা মেশায় না। খেলায় পাপ নেই, খেলার উপলক্ষ্যেই যত পাপ! জীবন, অনুভূতি এসব খেলনার বিষয় না, এসব ভালোবাসার বিষয়! ভালোবাসা বরাবরই স্বর্গীয়, চিরপবিত্র। অন্যদিকে, হিসেবি ভালোবাসা দেনা-পাওনারই নামান্তর।
ভালোবাসা ও ভালোলাগা কিছুতেই এক নয়। ভালোলাগার সূতিকাগার ভালোবাসা হলেও ভালোবাসার সূতিকাগার ভালোলাগা না-ও হতে পারে। শরীর ছুঁতে ভালোলাগা কিংবা স্রেফ ইচ্ছে থাকলেই চলে, কিন্তু মন ছুঁতে চাইলে ভালোবাসা লাগেই লাগে। মনের দরোজায় দাঁড়িয়ে ঘরে ঢোকার ব্যাপারটাতে যতখানি সততা আছে, ঘরের দরোজায় দাঁড়িয়ে মনে ঢোকার ব্যাপারটাতে ঠিক ততখানিই অসততা মিশে আছে। এই সহজ সত্যটা দেরি হয়ে যাবার আগে বুঝতে পারলে জীবনের অনেক হিসেব অনেক সহজ হয়ে যায়।