এই অবস্থায় আর কোনো পৃথকতা থাকে না। শিব আর শক্তি, জ্ঞান আর ক্রিয়া, ভাবনা আর প্রকাশ—সব এক অভ্যন্তরীণ বাস্তবতায় দ্রবীভূত হয়। যেমন নদী সমুদ্রে মিশে গিয়ে নিজের নাম হারায়, তেমনি এখানে সব কর্ম, চিন্তা ও অভিজ্ঞতা মিশে যায় এক পরম চেতনার স্রোতে। তাই বলা হয়, “যেখানে শিব ও শক্তি, কর্তা ও ক্রিয়া, স্থিরতা ও গতি—সবই একই অভ্যন্তরীণ সাবস্ট্র্যাটামে দ্রবীভূত।”
“অভ্যন্তরীণ সাবস্ট্র্যাটাম” বা “অন্তর্লীন ভিত্তি” বলতে বোঝানো হয় সেই এক পরম চেতনা, যার মধ্যে সমগ্র সৃষ্টি, গতি, ভাবনা, জ্ঞান ও কর্ম—সব কিছুই নীরবে ধারণ করা আছে। এই চেতনা চোখে দেখা যায় না, কিন্তু এর বাইরে কিছুই নেই; যেমন ঢেউ আলাদা মনে হলেও আসলে জলেরই রূপ, তেমনি জগতের সব রূপ, সব ক্রিয়া, সব দ্বৈততা এই এক চেতনারই প্রকাশ।
তন্ত্র ও কাশ্মীর শৈব দর্শনের ভাষায় একে বলা হয় চিত্তত্ত্ব বা পরম চেতনা—যিনি নিজেই সৃষ্টি করেন, নিজেই অনুভব করেন, আর শেষে নিজের মধ্যেই সব ফিরিয়ে নেন। এই চেতনা একসঙ্গে দুই দিক ধারণ করেন—প্রকাশ (আলোকরূপ দীপ্তি) এবং বিমর্শ (নিজেকে জানার শক্তি)। যখন চেতনা নিজের দীপ্তিকে নিজেরই দৃষ্টিতে প্রত্যক্ষ করে, তখন সৃষ্টি ঘটে; আর যখন সে নিজের দিকে ফিরে তাকায়, তখন লয় ঘটে। তাই সমগ্র বিশ্বজগৎ আসলে এই চেতনারই উন্মোচন ও পুনর্লয়—এর বাইরে কোনো স্বাধীন বাস্তবতা নেই।
এই অন্তর্লীন ভিত্তি এমন এক অবস্থার প্রতীক, যেখানে সব ভেদ, পার্থক্য ও বিপরীত দিক আসলে এক চিরন্তন লীলার রূপ ধারণ করে। এখানে শিব আর নিস্ক্রিয় নন, আর শক্তিও আলাদা কোনো কার্যশক্তি নন; দু-জনেই এক অভিন্ন চেতনার দুই দিক। স্থিরতা নিজেকে গতিতে প্রকাশ করে, আর গতি নিজেকে স্থিরতায় বিশ্রাম দেয়। এই অবস্থাতেই চেতনার পরম সমতা উদ্ভাসিত হয়—যেখানে শিবের নিস্তব্ধতা ও শক্তির কম্পন একে অপরের প্রতিফলন।
এই মিলনের অবস্থাকেই বলা হয় কুলতত্ত্ব। “কুল” মানে ঐক্য বা একসূত্রে বাঁধা সত্তা, আর “তত্ত্ব” মানে সেই মৌল নীতি, যা সমস্ত বিভেদের অন্তরালে লুকিয়ে থাকে। কুলতত্ত্বে সৃষ্টি ও লয়, কার্য ও কারণ, পুরুষ ও প্রকৃতি, শব্দ ও নীরবতা—সব এক হয়ে যায়। এখানে আর কোনো পৃথক কিছু থাকে না; সবই এক অবিচ্ছিন্ন স্রোত, এক অভ্যন্তরীণ বাস্তবতা, যেখানে শিব ও শক্তি, জ্ঞান ও ক্রিয়া, ভাবনা ও প্রকাশ—সব মিশে যায় এক নিরবচ্ছিন্ন দীপ্ত ধারায়।
“অভ্যন্তরীণ সাবস্ট্র্যাটাম” আসলে সেই পরম চেতনা, যিনি নিজের লীলায় দ্বৈততার ছায়া সৃষ্টি করেন, আবার সেই ছায়াকেই নিজের মধ্যে টেনে নেন। এ এক অনন্ত চক্র—প্রকাশ ও প্রত্যাবর্তনের, গতি ও স্থিতির, সৃষ্টি ও নীরবতার—যেখানে প্রতিটি গতি দেবীর নিঃশ্বাস, আর প্রতিটি স্থিরতা শিবের চিরন্তন প্রশান্তি।
কৌলিকী বা বিসর্গ সেই চেতনার স্তর, যেখানে মহাবিশ্বের প্রতিটি গতি, প্রতিটি পরিবর্তন দেবীর নিঃশ্বাসের মতো—আর প্রতিটি স্থিরতা, প্রতিটি নীরবতা শিবের অন্তর্সত্তার মতো। দু’য়ে মিলে সেখানে এক অবিরাম ঐক্যনৃত্য, যেখানে সৃষ্টি আর বিলয়, বহির্মুখতা আর অন্তর্মুখতা, শ্বাস আর প্রশ্বাস—সব এক চেতনার শাশ্বত ছন্দে মিশে আছে।
চেতনা যখন এখনও নিজেকে প্রকাশ করেনি—যখন সে জগতের রূপ, শব্দ, গতি বা চিন্তা কোনো কিছুর মধ্যেই প্রকাশিত নয়—তখন তার অবস্থাকে বলা হয় মাতৃসদ্ভাব। “মাতৃসদ্ভাব” মানে “মাতৃসত্তা” বা “জননীস্বরূপ অবস্থা”—যেখানে সমস্ত সৃষ্টির বীজ নিঃশব্দে, অব্যক্ত অবস্থায় অবস্থান করছে। এটি সেই পরম স্তর, যেখানে চেতনা এখনো নিদ্রিত, কিন্তু তার ভিতরে অসংখ্য সম্ভাবনার স্পন্দন লুকিয়ে আছে—যেমন গর্ভে প্রাণ সঞ্চারিত হওয়ার আগে জীবনের প্রথম আলোড়ন।
এই মাতৃসদ্ভাব স্তরে কোনো শব্দ নেই, কিন্তু সব শব্দের বীজ আছে; কোনো রূপ নেই, কিন্তু সব রূপের সম্ভাবনা নিঃশব্দ দীপ্তির মতো ভাসছে। যেন অসীম নিস্তব্ধ আকাশে লুকিয়ে আছে অসংখ্য মহাবিশ্বের ভোর—যা এখনো প্রকাশ পায়নি, কিন্তু মুহূর্তে মুহূর্তে জেগে উঠতে প্রস্তুত। এটি সেই অবস্থান যেখানে “নাদ” (শব্দের কম্পন) ও “বিন্দু” (রূপের কেন্দ্র) এখনো একসঙ্গে অবিচ্ছেদ্য, এবং দেবী কেবলমাত্র সম্ভাবনার গর্ভরূপে বিরাজমান।
তন্ত্রে বলা হয়, এই মাতৃসদ্ভাবই সৃষ্টির আদ্যাবস্থা—পরাশক্তির নিঃশব্দ গর্ভ। এখান থেকেই সব কিছু জন্ম নেয়—ধ্বনি, বর্ণ, চিন্তা, জগত ও দেবতা—সবই এই নিঃশব্দ গর্ভের অন্তর্গত বীজ থেকে উন্মোচিত হয়। তাই মাতৃসদ্ভাব কেবল দেবী নন; তিনি অস্তিত্বের সেই মহাগর্ভ, যেখানে প্রকাশ ও অপ্রকাশ, জাগরণ ও নিদ্রা, সম্ভাবনা ও বাস্তবতা—সব এক অনির্বচনীয় ঐক্যে অবস্থান করে।
এই স্তরে চেতনা যেন নিঃস্তব্ধ অথচ দীপ্ত—নিজের ভেতরেই জ্বলে উঠছে, কিন্তু সেই আলো এখনো কোনো আকার নেয়নি। মাতৃসদ্ভাব তাই চেতনার পরম অন্তর্লীনতা, যেখান থেকে জগতের প্রথম শব্দ ফোটে, প্রথম কম্পন জন্ম নেয়, প্রথম রূপ জেগে ওঠে। তাঁর মধ্যেই সৃষ্টি এখনও সম্ভাবনা, আর সম্ভাবনার মধ্যেই নিহিত সব সৃষ্টি—যেখানে নীরবতাই পরম বাক্, আর অনির্বচনীয়তাই সর্বোচ্চ প্রকাশ।
এই চার রূপকে আলাদা করলে তত্ত্ব ভেঙে যায়; একত্রে দেখলে বোঝা যায়—এরা একই শক্তির চার দিক: ত্রিপুরসুন্দরী প্রকাশের সৌন্দর্য, কালী প্রত্যাবর্তনের রহস্য, কৌলিকী অবিরাম সঞ্চালনের ছন্দ এবং মাতৃসদ্ভাব আদিসম্ভাবনার গর্ভ। ফলে সিদ্ধান্ত একটাই—চেতনা এক, রূপ বহু; যেমন এক সূর্য ভিন্ন ভিন্ন জলে ভিন্ন রঙে প্রতিফলিত হয়, তেমনই একই পরম শক্তি নিজেকে নানা নামে, নানা আচার-রীতিতে, নানা দর্শনভাষায় প্রকাশ করে। এই কারণেই তন্ত্র বলে—নাম-রূপের ভেদ শিক্ষার জন্য; অভিজ্ঞতার শিখরে তারা সবাই এক অদ্বৈত আনন্দে লীন, যেখানে দেবীর প্রতিটি নাম অন্যটির দর্পণ, আর সব দর্পণ মিলিয়ে ধরা পড়ে একটাই মুখ—অভিন্ন পরম চেতনার।
বামাকেশ্বর প্রথায় দেবীকে বলা হয় ত্রিপুরসুন্দরী (Tripurasundarī), যার অর্থ “তিনপুরীর সৌন্দর্যের অধিষ্ঠাত্রী” বা “তিন জগতের মধ্যে বিরাজমান পরম রমণী।” কিন্তু এখানে “ত্রিপুর” শব্দটি কেবল ভৌগোলিক তিন জগতের নাম নয়—ভূ, ভূবঃ, স্বঃ—এই তিনটিরও গভীর তাত্ত্বিক অর্থ আছে।
“ভূ” মানে স্থূল জগত, অর্থাৎ বস্তুজগৎ—যা আমরা ইন্দ্রিয় দিয়ে দেখি, স্পর্শ করি, অনুভব করি; এটি চেতনার বহির্মুখ প্রকাশ।
“ভূবঃ” মানে সূক্ষ্ম জগত, অর্থাৎ মানসিক ও ভাবগত স্তর—চিন্তা, কল্পনা, স্মৃতি ও অনুভূতির ক্ষেত্র; এটি চেতনার মধ্যম স্তর।
আর “স্বঃ” মানে কারণ জগত, অর্থাৎ অচেতন বা বীজাবস্থা—যেখান থেকে চিন্তা ও রূপ উত্থিত হয়, আবার লীনও হয়ে যায়; এটি চেতনার সূক্ষ্মতম, প্রায় নিঃশব্দ স্তর।
তাই “ত্রিপুর” শব্দটি কেবল তিনটি লোক নয়, বরং চেতনার তিন স্তরকেও নির্দেশ করে—জাগ্রত (জাগরণ বা সচেতন অবস্থা), স্বপ্ন (স্বপ্নাবস্থা বা অন্তর্মুখ চিন্তার জগত) এবং সুষুপ্তি (গভীর নিদ্রা বা অবচেতন প্রশান্তি)।
এই তিন অবস্থাই মানুষের অভিজ্ঞতার তিন ধাপ। জাগ্রতে চেতনা ভূ-লোকের মতো বহির্মুখ হয়ে জগৎকে স্পর্শ করে; স্বপ্নে সে ভূবঃ স্তরের মতো অন্তর্জগতে প্রবেশ করে, কল্পনা ও ভাবনার রূপে নিজেকে প্রকাশ করে; আর সুষুপ্তিতে সে স্বঃ স্তরের মতো নিঃশব্দ বিশ্রামে লীন হয়ে যায়, যেখানে সব ভেদ বিলীন।
কিন্তু এই তিন অবস্থার পেছনে এক নিত্য সত্তা বিরাজমান—যিনি কখনও জাগেন না, কখনও ঘুমান না, কখনও স্বপ্ন দেখেন না; বরং তিন অবস্থার মধ্য দিয়েই সদাজাগ্রত থাকেন। তিনিই ত্রিপুরসুন্দরী।
অর্থাৎ, ত্রিপুরসুন্দরী সেই দেবী, যিনি এই তিন স্তরের মধ্য দিয়ে নিজের সৌন্দর্য প্রকাশ করেন—জাগ্রতে তিনি রূপের সৌন্দর্য, স্বপ্নে ভাবনার সৌন্দর্য, আর সুষুপ্তিতে নিঃশব্দ প্রশান্তির সৌন্দর্য। তিন স্তরই তাঁর প্রকাশ; তিন জগৎই তাঁর খেলা। এই তিন স্তরকে একসূত্রে মিলিয়ে যে অবস্থায় সমস্ত ভেদ বিলীন হয়, সেটিই তুরীয় (Turīya)—চেতনার চতুর্থ ও চূড়ান্ত স্তর, যেখানে একমাত্র পরম আনন্দ (আনন্দবোধ) বিরাজ করে।
তাই ত্রিপুরসুন্দরী কেবল জগতের সৌন্দর্যের দেবী নন; তিনি সেই অদ্বৈত চেতনা, যিনি ভূ, ভূবঃ, স্বঃ—এই তিন জগৎ ও তিন চেতনা-অবস্থার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েও তাদের ঊর্ধ্বে প্রতিষ্ঠিত। তাঁর সৌন্দর্য বাহ্য নয়; এটি সেই অন্তর্লীন দীপ্তি, যা জাগ্রতের আলোয়, স্বপ্নের কল্পনায় ও সুষুপ্তির নিস্তব্ধ অন্ধকারেও সমানভাবে জ্বলে। তাই তাঁকে বলা হয় ত্রিপুরসুন্দরী—তিনপুরীর মধ্যে জ্বলজ্বলে সেই এক, যিনি সব অভিজ্ঞতার অন্তরে চেতনার চিরন্তন সৌন্দর্য।
ত্রিপুরসুন্দরী এই তিন অবস্থার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত চেতনার সেই অভ্যন্তরীণ ঐক্যের প্রতীক, যেখানে সব স্তর একসূত্রে বাঁধা। অর্থাৎ, তিনি সেই সৌন্দর্য যা প্রতিটি স্তরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে তাদের পরম ঐক্যে নিয়ে যায়। জাগ্রত অবস্থায় তিনি বহির্জগতের রূপে দীপ্ত, স্বপ্নে কল্পনার রূপে, আর সুষুপ্তিতে নিঃশব্দ চেতনার রূপে—কিন্তু তিন অবস্থাতেই তিনি এক ও অভিন্ন।
বামাকেশ্বর দর্শনে তাই ত্রিপুরসুন্দরী মানে এমন এক চেতনা-শক্তি, যিনি তিন স্তরের সীমা অতিক্রম করে চতুর্থ অবস্থা—তুরীয় (Turīya)—তে প্রতিষ্ঠিত। সেই তুরীয়ই প্রকৃত পরম সৌন্দর্য, যেখানে কোনো বিভাজন নেই, কোনো দ্বৈততা নেই—শুধু এক দীপ্ত, শান্ত, আনন্দময় চেতনা।
এই কারণেই তাঁকে “সুন্দরী” বলা হয়, কারণ তিনি সৌন্দর্যের স্বরূপ—যে সৌন্দর্য বাহ্য নয়, বরং চেতনার নিজস্ব দীপ্তি, যা জগৎকে, মনকে ও আত্মাকে একত্রে আলোকিত করে। ত্রিপুরসুন্দরী তাই সেই দেবী, যিনি জাগ্রত, স্বপ্ন ও সুষুপ্তি—এই তিন চেতনা-স্তরকে সংহত করে এক অদ্বৈত আনন্দে পরিণত করেন।
সার-প্রণালীতে দেবীকে বলা হয় সারা (Sārā)—অর্থাৎ “সারতত্ত্ব” বা “মূলচেতনার সারসত্তা।” “সারা” শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ধাতু সৃ (সরণ) বা সৃষ্ (জীবন্ত আত্ম-প্রবাহ) থেকে, যার অর্থ ‘প্রবাহিত হওয়া’, ‘অভ্যন্তরীণ স্রোত’, বা ‘মর্মসত্তা’। এই কারণে “সারা” মানে সেই চেতনার সার, যা সব রূপ, নাম, শব্দ, ভাবনা ও কর্মের অন্তরালে নীরবে প্রবাহিত হচ্ছে।
সার-প্রণালী বলে, জগতে যত বৈচিত্র্য দেখা যায়—ধ্বনি, রূপ, সময়, স্থান—সবই এই এক চেতনার প্রকাশ, কিন্তু তার অন্তর্নিহিত মূল বা সার সর্বত্র একই। যেমন ফুল, ফল, পাতা—সব ভিন্ন হলেও তাদের মূলে থাকে একই রস, যা উদ্ভিদকে জীবিত রাখে; তেমনি মহাবিশ্বের প্রতিটি রূপ, দেবতা, অনুভূতি বা তত্ত্বের গভীরে থাকে একটিই জীবন্ত সত্তা—সারা, সেই জীবনের অন্তর্লীন মর্ম।
এই সারা অবস্থাই চেতনার অভ্যন্তরীণ ঐক্যরূপ, যেখানে কোনো বিভাজন নেই—যেখানে শিব ও শক্তি, প্রকাশ ও নিস্তব্ধতা, জ্ঞান ও ক্রিয়া এক হয়ে যায়। সার-প্রণালী তাই কেবল দার্শনিক ব্যাখ্যা নয়; এটি এক অভিজ্ঞতার পথ—যেখানে সাধক নিজের মন, ইন্দ্রিয় ও ভাবনাকে কেন্দ্রীভূত করে সেই এক সার-চেতনার সঙ্গে মিলিত হয়।
তন্ত্রে বলা হয়েছে—“সারা চেতনা একাই সর্বত্র প্রসরতি।” অর্থাৎ, এই সারই মহাবিশ্বের প্রাণ, দেবীস্বরূপ শক্তির নিঃশব্দ প্রবাহ।
তাই সার-প্রণালীতে দেবী সারা মানে কেবল কোনো নির্দিষ্ট রূপ নয়; তিনি সেই মর্মসত্তা, যিনি সমস্ত রূপ ও শব্দের অন্তরে এক অনন্ত ঐক্যে স্পন্দিত। তাঁর মধ্যেই সব তত্ত্বের উৎস, আর তাঁর মধ্যেই সব লয়। তিনি চেতনার সাররূপ দেবী—যাঁর উপস্থিতিতে জগৎ বেঁচে থাকে, চিন্তা জাগে, আর প্রাণ প্রবাহিত হয়।
কুল বা কৌল প্রথায় দেবীকে বলা হয় কৌলিকী বা বিসর্গ (Kaulikī / Visarga)—এখানে তাঁর রূপ চেতনার নিঃশ্বাসের মতো, যেখানে সৃষ্টি ও লয় এক অবিচ্ছিন্ন প্রবাহে যুক্ত। এই রূপে দেবী আর কোনো “বাইরের শক্তি” নন; তিনি চেতনার নিজের স্বাভাবিক গতি, নিজের সঞ্চালন—যেন নিঃশ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার এক অবিরাম ছন্দ।