ভাবনা: এক হাজার পয়ত্রিশ
.........................................
তোকে আমার অনেক আদর লাগে, অথচ তোকে আমার ভয় পাবার কথা ছিল।
ইচ্ছে করে…তোকে আমার বুকের ভেতরকার, সেই অদ্ভুত মানুষটার সাথে একবার পরিচয় করিয়ে দিই। আমি নিশ্চিত, তোর ভালো লাগবে। তুই জানিস, অনুভূতিগুলো ভীষণ একান্ত হলেও…আমার ভেতরঘরে তোর স্পর্শ বাড়ে অবিরত—এই একটা জায়গাতেই তুই শুধু আমার।
তোর সাথে যে-সময়টুকু থাকছি...ওটা ভেবেই আমি একটু ভালো রাখতে পারি নিজেকে। তোর সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো আমি ভুলতেই পারি না রে! এখনও মনে হচ্ছে...তুই আমাকে তোর বুকের মধ্যে নিয়ে রাখছিস…তোকে ছাড়া থাকাটা আমার জন্য অনেক বেশি কঠিন হবে।
তোকে খুঁজে পাচ্ছি না...
আমি লিখতে পারছি না।
তুই কেমন আছিস?
আমি ভালো নেই।
আমি তোর সাথে থাকতে চাই...
সম্ভব নয়।
: তুই কখনো আমার দিকে...সেভাবে মনোযোগ দিয়ে দেখেছিস?
: দেখেছি রে।
: প্রথমদিকে, তাই না? তখন তোর চোখজুড়ে ভীষণ উৎকণ্ঠা ছিল;
আমি কত-কী ঠিক করে রেখেছিলাম, জানিস!
তোকে জড়িয়ে ধরে রাখব সারাক্ষণ,
তোর নিঃশ্বাসে কান পেতে শুনতে পাবো—
তুইও আমাকে 'ভালোবাসি' কথাটা বলতে চেয়েছিস বহুবার।
এসবের কিছুই হবে না।
আমি বুঝি, আমার সাথে থাকাটা খুবই অস্বস্তির। আমি তোকে বিরক্তি ছাড়া আর কিছুই দিতে পারিনি।
আমি মরে গেলে তোর কাছে খবরটা কে পৌঁছে দেবে? তুই কি আমাকে খুঁজবি?—না কি অভিমান কিংবা রাগ করে থাকবি?
এসব কথা সিরিয়াসলি নিস না। আমি এতটাও অবুঝ না...হা হা হা। যদি তুই কখনো জানতে পারিস—এর থেকেও বেশি অবুঝ আমি…তখন তুই কি ভীষণ অবাক হয়ে যাবি?
অবশেষে, আমি বুঝতে পেরেছি...তোমার জীবনে আমি এক নির্জীব ফ্যাকাশে জড়বস্তু, যা খুব সহজেই ফেলে রাখা যায়। হাত দিয়ে ছুঁতেই...ধুলো লেপটে যাবার ভয়ে, এককোনায় রেখেছিলে আমায়। খুব সাবধানে তাই জানালার বাইরে ছুড়ে ফেললে—যেন সহজেই ভেঙে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাই।
অনেকটা সময় কেটে গেল এটা বুঝতেই যে—আমি আসলে তোমার কেউই নই। তোমার সুন্দর সময়গুলোর—কোত্থাও আমি নেই, তোমার ব্যস্ত সময়জুড়েও নেই আমার আনাগোনা…কিংবা, তোমার ক্লান্তিহীন শরীরে নেই আমার স্পর্শ। তোমার বুকের পাঁজরে আশ্রয় খুঁজে…স্রেফ নিঃশ্বাসটুকুই ভারী হলো!
আমি ভীষণ নির্বোধই হয়তো! তবুও চাই, তুমি এই অভিনয় থেকে মুক্ত হও।
আমি নিশ্চিতভাবেই এক দুঃস্বপ্নের পেছনে ছুটে চলেছি। কিন্তু, আমি যা পেয়েছি…তা ছিল কল্পনাতীত—তোমার ভালোবাসা, তীব্র অপেক্ষায় বদলে-যাওয়া আক্ষেপ এবং এমন কিছু…যা আমি কখনও অর্জন করিনি।
আমার অক্ষমতা কি সত্যিই তুমি মেনে নিয়েছিলে? আমার সমস্ত অসুখ বাড়ছে জেনেও—তুমি বলেছিলে, “সব ঠিক আছে।" কিন্তু লোকে কেন ওটাকে "সমস্যা" বলে ডাকত?
কেবল দূর থেকেই সেই অনুভূতিগুলো লিখতে পারাটা ভাগ্যের ব্যাপার—”যদি তুমি আমার ব্যথা বুঝতে চাইতে, তবে আমায় ঘৃণা করতে।”
তুমি একবার বলেছিলে, আমাকে তোমার সাথে কাদায় হাঁটতে হবে, ছেঁড়া কাপড় পরে। তাই তুমি একটি পুরোনো গাড়ি ধার করেছিলে—সেদিন প্রথম তুমি আমার শরীরের ক্ষতগুলো, গভীর আলিঙ্গনে পিষে ফেললে…রক্তপাত বন্ধ হলো না কিছুতেই।
তোমায় কতখানি ভালোবাসি—জানতে পারলাম। অবশ্য, সেই উপত্যকাতে এসেই তুমি উধাও হয়েছিলে। এই মুহূর্তে, আমি ভীষণ তৃষ্ণার্ত…
তোমাকে স্পর্শ করা প্রয়োজন।
সুন্দর সময়গুলো কত দ্রুত শেষ হয়ে যায়, তাই না? ওরকম কিছু মুহূর্ত সারাটা জীবন পার হয়ে গেলেও, আর ফেরে না—এমন কেন মনে হয়?
ওই সময়ের পর কি…আর ভালো থাকিনি? ওই মুহূর্তগুলোর চেয়ে, ভালো কোনো সময়…আর আসেইনি? সেই সময়ের চেয়ে বেশি সুখী কি…আমি নিজেকে আর একটা বারও রাখতে পারিনি?
বুঝতে পারছি, বর্তমানটা খারাপ যাচ্ছে। তাই অতীতের সেই মুহূর্তগুলোকে ভেবে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। এখন কেন জানি…কোনো ভালো মুহূর্তকে উপভোগ করতে পারি না, তেমন করে মনে গাঁথতে পারি না। সময়টা ভালো কাটলেও, তার কদর করতে পারি না। সেই সেন্সটাই আজ চলে গিয়েছে।
পুরোনো মানুষগুলোও যেন বদলে গিয়েছে—তাদের শরীরের সেই মিষ্টি সুবাসটা আর তেমন খুঁজে পাই না। কাউকেই আপন লাগে না। নতুন মানুষগুলোকে জীবনে সেভাবে স্থানই দিতে পারিনি…তাদের সাথে দিনগুলোও দায়সারাভাবেই কাটছে। সব মিলিয়ে, আমি একজন অসহ্য মানুষই বটে।
আমি একজনকে ভীষণ ভালোবাসি—তার কাছে প্রত্যাশাও রাখি না…কেননা, সে দূরে থেকেই ভালো আছে। আমি চাই না…আমার ভয়গুলো তাকে জানাতে, বলতে চাই না…তার জন্য আমার বুকের ভেতরটা কতখানি অস্থির থাকে।
জানি শুধু…সে আমায় ছাড়া বড়ো ভালো আছে—হয়তো তার মতন করে…যার কোত্থাও আমি নেই।
আমরা মাঝেমধ্যে আমাদের ভালোবাসার মানুষটার কাছ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিই—এতে কী হয় আমি জানি না। তবে নিজের সাথে একটা বোঝাপড়া তৈরি হয়।
কেন জানি না, আমার এসব বোকা বোকা অনুভূতির কথা আজকাল তোকে বললেও কীরকম ইতস্তত লাগে…
তবুও, জানিস, আমার তোকে খুউব কাছে থেকে দেখতে ইচ্ছে করে! তোকে ভীষণ শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, একবার বলতে ইচ্ছে করে—তুই-ই আমার সব।
আমার কাছে ধর্মচর্চার মানে একটাই—ভালো হওয়া বা ভালো হতে চাওয়া। এর বাইরে আর যা-কিছু, তা নিয়ে আমার সাধারণত কোনো মাথাব্যথা থাকে না। ওইটুকু তো যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার।
ভালো লোকের ধর্ম জেনে আমার কী কাজ? ভালোত্বের চেয়ে বড়ো ধর্ম আর কী আছে?
মন্দ লোকের ধর্ম মেনে আমার কী কাজ? মন্দত্বের চেয়ে বড়ো অধর্ম আর কী আছে
একটা মানুষ; মুখফুটে কখনও কিছু বলে না, সবসময় চুপ করে থাকে; এর মানে এ নয় যে, সে কোনো কিছুতেই কষ্ট পায় না। কষ্ট সে ঠিকই পায়, কিন্তু সহ্য করে। সবাই তো আর হইচই-চ্যাঁচামেচি করতে পারে না, তাই না? এটা বোঝাটা খুব জরুরি।
ভালোবাসা না পেলেও মানুষের তেমন কিছু ক্ষতি হয় না, কিন্তু দিনের পর দিন কষ্ট পেলে মানুষ ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যায়। তার ভেতরটা দেখা গেলে সবাই দেখত, ওখানে কিচ্ছু নেই, কীরকম জানি কালো হয়ে আছে। ভালোবাসাহীনতায়ও বাঁচা যায়, কিন্তু শান্তিহীনতায় বাঁচা খুব কঠিন।
যে কষ্ট দেয়, দুর্ব্যবহার করে, চেহারায় সারাক্ষণই বিরক্তি আর কর্কশভাব ধরে রাখে, সে নিজেও কিন্তু ভালো নেই। এসব থেকে সরে এলে তার নিজের কষ্টই কমত সবার আগে। এই সহজ ব্যাপারটা তার মাথায় আসে না।
কারও সাথেই এমন করতে নেই, এমন করাটা পাপ। পাপের প্রায়শ্চিত্ত না করে কেউ পৃথিবী ছাড়তে পারে কি?
জীবনকে তার যন্ত্রণা-সহ গ্রহণ করো।
ভাবনা: এক হাজার ছত্রিশ
.........................................