অপ্রকাশের আর্তনাদ



: যে-মানুষটা আপনাকে প্রচণ্ড ভালোবাসে, তাকেও যে আপনার ভালোবাসতেই হবে—এমন তো কোনো শর্ত নেই।
কিন্তু সে থেকেছে—আপনার একান্তে; তার ভালোবাসার স্পর্শ আন্দাজ করতে না পারাটা হয়তো চরম বোকামি—আপনি সেই ভুল করবেন না, তাই তো?
যে থেকেছে আপনার অন্তরজুড়ে, তার চলে যাওয়া আপনাকে ব্যথিত করবে—এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু বলুন তো, তাকে কি সত্যিই খুঁজে পেয়েছেন?
তাকে যে আপনি এতটা ভালোবাসেন, কখনও কি জানাতে পেরেছেন?

: না, জানাতে চাইনি।
আমি তাকে ভালোবাসি—এই কথাটা তাকে কোনোদিন বলতে হয়নি;
সে আমাকে রেখেছিল তার অনুভবের গভীরে, প্রতিটি নিঃশ্বাসে।
যাকে ছুঁয়ে অনুভব করেছি নিজের সবটা, তাকে 'ভালোবাসি' বলা আমার কাছে অপ্রয়োজনীয় লেগেছিল।

: তবে আপনি এতটা অন্যমনস্ক হলেন কী করে?
তাকে ছেড়ে যেতে দিলেন—নিজের হৃদয়কেই?
হা হা হা… করুণা হয়—যাকে অমন করে ভালোবেসেছিলেন, শেষে দেখলেন, সে তো আপনার অসুখেই ভুগছে।
তবু কি তাকে আঁকড়ে ধরার তাগিদ অনুভব করেননি?

: নিশ্চয়ই করেছি।
সে সত্যিই আমার অসুখে ভুগেছিল।
আমার মনের ভিতর যে ভালোবাসার তীব্র অসুখ, তা কি কখনো কারও দ্বারা জাগ্রত হয়েছিল তার স্পর্শ ছাড়া?

: হয়েছিল, বহু মানুষ পেরেছিল।
যে আপনার ভালোবাসা অর্জন করতেই চায়নি, তাকে নতুন করে আর ভালোবাসবেন কেন?
সে চলে গেছে বলেই কি আজ তার সন্ধানে বেরিয়েছেন—ভালোবাসার উপলব্ধি বোঝাতে?
হা হা হা… আপনি তাকে আর ফিরিয়ে আনতে পারবেন না।

: আপনি এখান থেকে চলে যান।
আমাকে তাকে ফিরিয়ে আনতেই হবে।
এক সে বাদে আমার অনুভবের অসুখ স্পর্শ করতে বাকি সবাই-ই অক্ষম।

: আপনার অনুশোচনাই আমার অস্তিত্ব; আপনাকে ছেড়ে যাওয়া—এটা আমার কাজ নয়।
ভালোবাসার অনুভূতি সুপ্ত রাখুন।
আপনি তো আজীবন এই নীতিতেই চলেছেন—ভালোবাসার অনুভব প্রকাশ না করাটাই শ্রেয়।
তবে আজ হঠাৎ তার চলে যাওয়া এতটা ব্যথা দিচ্ছে কেন?
আপনি কি মানতে পারছেন না—সে-ও একদিন আপনার অবহেলাকে প্রত্যাখ্যান করতে পারে?
আপনি কি ভেবেছিলেন—তার সমস্তটা নিয়েও আপনি তাকে দূরে সরিয়ে রাখলে সে তৃপ্ত থাকবে?
তবে আপনার প্রশংসা করতেই হয়—আপনার বিচক্ষণতা বড়ো নিখুঁত!

: বিশ্বাস করুন, আমি চাইনি তাকে আঁধারে রাখতে।
আমি তো তাকে ভালোবাসি—এ কথা বলতেই হবে কেন?
সে তো আমারই, আমি তাকে কোনোদিন দূরে সরিয়ে রাখতে চাইনি।
রোজ আগলে রেখেছি—হয়তো নিজের থেকেও বেশি।
তার মতো করে কেউ আমাকে ভালোবাসেনি—এই জীবনে আর কেউ না।

: হা হা হা…
যে-মানুষ নিজে আঁধারে থাকতে চায়, তাকে আলোর পথে ফেরানোর আপনি কে?
আপনার কী দায় আছে...
যদি সে আঁধারেই আপনার অস্তিত্ব খুঁজে পায়?
যদি সে আপনার অনুভবকে আত্মস্থ করতেই নিজেকে আঁধারে সমর্পণ করে?

আপনি কীভাবে এতটা নিশ্চিত হন—সে স্বেচ্ছায় আপনাকে ছেড়ে গেছে,
যদি সে কোনোদিনই যেতে চায়নি—আপনার ছায়ার আড়াল থেকে?

: আমি অবশ্যই তাকে ফিরিয়ে আনব।
আমি এভাবে হেরে যেতে পারি না।

: হা হা হা… দুঃখিত।
যে কখনও আপনার কাছে জিততে চায়নি—সে আপনাকে হারতেও দেবে না।
তবে কি সে চলে গিয়ে আপনাকে জিতিয়ে দিয়ে গিয়েছে?
বলুন তো, মৃত মানুষের আর্তনাদ খুঁজে তাকে ফিরিয়ে আনার বৃথা চেষ্টা করছেন কেন?
জীবিত মানুষটার উপস্থিতিতে আপনি কেন শুনতে পেলেন না—তার কান্নার গোপন আওয়াজ?
আপনি শুধু তাকে ছুঁয়েছিলেন, কিন্তু তার ভেতরের কান্না থামাতে পারেননি—এটাই তো সত্যি!

: তার অপ্রাপ্তির হিসেব আমার শরীরেই লেখা আছে।
তার কান্না শুধুই আমায় ছুঁয়ে থেমেছে।
আমিও কি তবে কোনোদিন তাকে ছুঁয়ে দেখতে পেরেছিলাম?

: তাকে ফিরিয়ে আনতে আমি নিশ্চয়ই সক্ষম হব।
সে মৃত নয়, তার অনুভূতির জীবন্ত রূপ আমার হৃদয়ে প্রতিনিয়ত আর্তনাদ করছে।
যে-মানুষটা একান্ত আমার, সে নিঃসন্দেহে ফিরে আসবে।
আমি নিজেই তাকে ফিরিয়ে আনব।

: আপনার ইচ্ছের পূর্ণতা হোক।
তবে যদি তাকে না পান, সেই অনুশোচনায় আমাকেই খুঁজে পাবেন আপনি।