অলকার একদিন

আয়না দেখে সিঁথিতে টকটকে লাল সিঁদুর দেয় অলকা। সিঁদুর পরার সময় অসতর্কতাবশত কিছুটা পড়ে যায় নাকের মাথায়। কিন্তু সেই অসতর্কতাটুকু যেন অলকার সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয় কয়েক গুণ। সে নিজেই নিজেকে দেখে আর অবাক হয়। এত সুন্দর! এত সুন্দর! এত সুন্দর মানুষ হয়?!




নিজেকে অলকার কখনও অহংকারী মনে হয়নি। যে জিনিস সত্য ও স্বাভাবিক, সেটা নিয়ে অহংকার করার মতন বোকা নয় সে। অলকা দেখতে ভীষণ সুন্দর, এটা তো একটা সহজ ও সাবলীল সত্য কথা। কিন্তু আজ আয়নাটা মনে হচ্ছে, বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পাগলাটে প্রেমিকের মতন একটু বেশিই প্রশংসা করছে। আচ্ছা, কেন সে এত সুন্দর? কী লাভ এই সৌন্দর্যের, যদি সেই সৌন্দর্য কোনও পুরুষের পথকে রাঙিয়েই দিতে না পারে?




এই অবাধ্য আয়না তার বাধ্য প্রেমিক নিলয়ের কথা মনে করিয়ে দিল। হায়! কোনও মানুষ কোন দুঃখে এত বাধ্য, সুবোধ ধরনের হয়? একজন বাধ্য পুরুষমানুষ কী পায় জীবনে? হ্যাঁ, তারা অনেক দায়িত্ব নিতে জানে, সবার প্রতি সব দায়িত্ব পালন করতে জানে, কিন্তু নিজে কী পায় অন্যদের কাছ থেকে?




বেঁচে থাকতে গেলে নিজেকেও তো কিছু-না-কিছু পাইয়ে দিতে হয়। অন্তত প্রেমটা তো মোটামুটি বাধ্যতামূলক। প্রেম না পেলে একজন ছেলেমানুষ কখনও পুরুষমানুষ হতে পারে না। অথচ প্রেম না পেয়েও নিজেকে দিব্যি পুরুষ বলেই ভেবে যাচ্ছে নিলয়। নিলয়ের মতন এমন কত যে প্রেমহীন মানুষ আছে চারপাশে, তার হিসেব করতে বসলে দিন ফুরিয়ে যাবে। এই নিলয়দের ভুল ভাঙাবে কে?




এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ করে অলকা ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল। নিজেকে তার বড্ড তুচ্ছ মনে হলো। তখনই নিলয়কে ফোন করে সে বলল, তুমি আর কখনোই আমার সাথে কোনও যোগাযোগ কোরো না। আই অ্যাম সরি ফর এভ্রিথিং!




তারপর সে নিলয়কে সব জায়গা থেকে ব্লক করে দিল।




কেন এমন করল অলকা? তবে কি সে নিলয়কে ভালোবাসে? না কি নিলয়ের ভালোবাসার কাছে সে আজ হেরে গেল? না কি হঠাৎ করেই ঘরের প্রতি পিছুটান তাকে উন্মনা করে ফেলল?




অলকারা এভাবেই বাঁচে। ওদের না হয় ঘর, না হয় প্রেম। ওরা ভালোবাসা খুঁজে বেড়ায়, অথচ ভালোবাসা দেখলে সহ্য‌ই করতে পারে না। রূপের উত্তাপের অশ্রুই ওদের অমোঘ নিয়তি।