আমি আসলে অলস নই, আমি শুধু কাজ ফেলে রাখি। কাজ আমি করি না, তা কিন্তু নয়। তবে শেষ মুহূর্তের জন্য ফেলে রাখি। ফোনের চার্জ যখন নেমে যায় ছয় পার্সেন্টে, তখন আমি দুই পার্সেন্টের জন্য অপেক্ষা করি। এর নাম আলস্য নয়, এর নাম অপেক্ষা। হতে পারে, এই অপেক্ষা অর্থহীন, তবে এরকম অপেক্ষা করতে আমার ইচ্ছে করে। ডেডলাইন খুব কাছে এসে না যাওয়া অবধি আমি কাজে হাতই দিই না! পরীক্ষার পড়াই তো শুরু করি পরীক্ষাশুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে! অত অত পড়া, আগে-ভাগে পড়ে কী লাভ? ভুলে যাব তো! কাজের জাহাজ দেখে আমার চেষ্টার নৌকো টুপ করে ডুবে যায়। শেষ মুহূর্তে ওটা আবার ভেসে ওঠে। পাঁচ মিনিটের জন্য পৃথিবী উদ্ধার করে ফেলতে ফেইসবুকে ঢুকি, আর দিব্যি ঘণ্টা তিনেক কাটিয়ে দিই। ওয়েবসিরিজের ট্রেইলার দেখে পুরো সিরিজটাই যে দেখে ফেলি, এর কারণ মূলত দুটো: আমি অন্য একটা প্রয়োজনীয় কিন্তু বিরক্তিকর কাজ থেকে কিছু সময়ের জন্য হলেও মুক্তি পেতে চাই এবং অন্য কারণটা আমার এই মুহূর্তে ঠিক মনে পড়ছে না। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে, আমার মধ্যে অপরাধবোধ কাজ করে। কিন্তু ওই কাজ করা পর্যন্তই, আমি আসলে নিজেকে বদলাব না। অবশ্য আমি কাজ ফেলে রাখলেও শেষমেশ কিছুই অসম্পন্ন রাখি না। আমার যখন তেষ্টা পায়, তখন বসা বা শোয়া থেকে উঠে জলের বোতলটা হাতে নিই না, বরং অপেক্ষা করি, কখন আমার রুমে কেউ আসবে এবং আমি তাকে বলব জলের বোতলটা আমাকে দিতে। চোখের সামনে ফোনটা বাজলেও আমার ধরতে ইচ্ছে করে না। অবশ্য পাঁচ মিনিট পর আমি তাকে টেক্সট পাঠাই: 'তুমি ফোন করেছিলে?' আমি মনে মনে চাই, সে আমাকে রিপ্লাই না করুক। যদি করেও ফেলে, আমার উত্তরটা তৈরিই থাকে: 'ও আচ্ছা, আমি খেয়াল করিনি!'...এই রিপ্লাইটাও দেরিতেই পাঠাই, সঙ্গে সঙ্গে পাঠাই না। আমি ব্যস্ত নই, তবে দেরিতে রিপ্লাই দিতে আমার ভালো লাগে। সত্যি বলছি, ফোনে কথা বলতে আমার একটুও ভালো লাগে না, বরং অতিবিরক্ত লাগে। আমি খুব ব্যস্ত নই, তবে আমি খুব ক্লান্ত। আমাকে ভুল বুঝবেন না, আমি কিন্তু একটুও অলস নই; কাজ ফেলে রাখতে আমার ভালো লাগে। শেষ মুহূর্তটি আসার জন্য অপেক্ষা করতে আমার ভালো লাগে। আমার ব্যস্ততা নেই, কিন্তু আমার হাতে সময় নেই।