ভালোবাসার দাবিতেও, আমায় কখনও তুমি হতে বোলো না! আমি যে শুধুই আমি! আমায় আমি হয়েই থাকতে দাও, কোনওভাবেই আমায় তুমি হতে বাধ্য কোরো না!
হয়তো তুমি গোলাপ ভালোবাসো, তবু সাথে এ-ও মেনে নিয়ো… আমি ফুলই ভালোবাসি না! ফুলকে ভালোবাসতেই হবে, এমন কোনও দিব্যি মাথায় নিয়ে আজ অবধি বাঁচিনি। এই পৃথিবীতে সবাই ফুল ভালোবেসে বেঁচে থাকে না, কেউ কেউ পাথর ভালোবেসেও বেঁচে থাকে।
গোলাপকে কাছে টেনে, পাথরকে দূরে ঠেলে বাঁচার শিশুতোষ ব্যাকরণ আমি কখনও মানিনি, আজও মানি না, কালও মানব না। গোলাপ দামি---দামটা দিতে আমি প্রস্তুত ও ইচ্ছুক থাকলে তবেই!
হয়তো তুমি বেলা করে ঘুম থেকে ওঠাকে ভাবো স্ট্যাটাস; সাথে নিশ্চিতভাবে জেনে নিয়ো, আমি রাতজাগা বন্ধ করে দিয়েছি অনেক আগেই।
হয়তো তুমি ইংরেজি গানে অভ্যস্ত কিংবা গান শোনোই না কখনও, এর মানে যেন এ না হয় আমার পছন্দের গানটি শুনবার সময় আমায় তুমি থামিয়ে দেবে হুট করে!
তোমার হয়তো বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা পেটানো ভীষণ পছন্দের, তারপরেও আমায় একটু একা থাকতে দিয়ো। একা একা থাকলেই সবাই একাকিত্বে ডুবে যায় না, নিজের সাথে গল্প করে আজও অনেকেই বেঁচে আছে--- খোঁজ নিয়ে দেখো।
হয়তো তুমি মেয়েদের শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ কিংবা বোরকায় আবৃত দেখতে বেশি পছন্দ করো। তবু আমায় কখনও শার্ট-প্যান্ট, জিনস-ফতুয়া পরতে বাধা দিয়ো না, কেননা ওসবই আমার পছন্দের পোশাক। আমি ওভাবে থাকতেই সবচাইতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।
ভুল করেও কখনও ভেবে নিয়ো না, তোমার ইচ্ছেই আমার ইচ্ছে--- একটা প্রভুভক্ত কুকুরেরও নিজস্ব কিছু ইচ্ছে থাকে! একেকটা মানুষের ইচ্ছে একেক রকমের, প্রতিটি ইচ্ছেই সুন্দর, স্বাভাবিক, সত্য---মাথায় রেখো।
আমার ভিন্ন রকমের ইচ্ছেগুলিকে সম্মান করতে শেখো। নিজেকে কখনও আমার অভিভাবক ভেবে বোসো না, শুধুই বন্ধু ভেবো। বস্তুত, প্রতিটি মানুষের প্রকৃত অভিভাবক সে নিজেই। আমি তোমার কাছে অভিভাবকত্ব নয়, বন্ধুত্ব প্রত্যাশা করছি।
আমায় কখনও তোমাদের ওই গৎবাঁধা জীবনের নিয়মে বাঁচতে বাধ্য কোরো না। আর যদি তা না-ই পারো খুব চেষ্টা করেও, তবে নাহয় আমার কাছ থেকে একটুখানি দূরেই থেকো? স্বৈরাচারী নৈকট্যের চাইতে বরং স্বেচ্ছাচারী দূরত্ব স্বস্তির।
তোমার ব্যক্তিগত চাহিদা মেটাতে আমার জীবন কখনও বিষিয়ে তুলো না। আমি তোমার সমস্ত ব্যক্তিগত চাহিদাকে সম্মান করি ততক্ষণ পর্যন্তই, যতক্ষণ সেগুলি আমার জীবনটাকে মৃত্যুর উপত্যকা বানিয়ে ফেলছে না। তোমার ইচ্ছের পুতুল হয়ে নাচতে আমি জন্মাইনি।
হ্যাঁ, তোমাদের কোনও মতামত থাকলে তা আমায় জানাতে পারো, এই শর্তে যে, সেগুলি মানতে আমায় অযথা বাধ্য করতে যাবে না ভুল করেও। কেননা আমারও কিছু মতামত রয়েছে, জীবনযাপনের প্রিয় কিছু দর্শন আমারও রয়েছে, ঠিক তোমাদের মতোই, নিজেকে সম্মান আমিও করতে জানি।
তুমি যেমন জীবনে বেঁচে আছো, তা মেনে নিতে আমার কণামাত্রও অসুবিধে নেই যেমনি, ঠিক তেমনিই, আমার জীবনটাকে আমারই মনের মতো করে সাজাতে দিয়ো।