ভাবনা: সাতশো ছত্রিশ ............................................................... এক। তুমি একদমই ফাজিল কলিজাসোনা হইসো একটা! চোখ দুইটা হইসে বিড়ালের বাচ্চার মত মায়া মায়া, বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকলে মনে হয়, এই মানুষটাকে কক্ষনো ভুলেও কষ্ট দিব না, দুর্ব্যবহার করব না তার সাথে, কেবলই আদর করে যত্ন করে মাথায় তুলে রাখব। আর তোমার নাকটা হইসে আইফেল টাওয়ার! ঠোঁট দুইটা হইসে কিউট, দেখলেই ইচ্ছে হয়, চুষে খেয়ে ফেলি। আর কী কী বলব, বলো? আমার তো মাঝে মাঝে মনে হয়, আমিই ছেলে, তুমিই মেয়ে। তা না হলে আমার মতো একটা মেয়ে কখনও একটা ছেলের ওপর এতটা আকৃষ্ট হয়, এটা আমার জানা ছিল না। তোমার দিকে তাকিয়ে থাকলে কেবল তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছা হয়, কোনও রকমের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছাড়াই তোমাকে ভালোবেসে যেতে ইচ্ছে হয়। আমার হৃদয় তুমি। তুমিই আর্তি আমার। আই লাভ ইউ, কলিজাপাখি। অ্যাইইইই...খামচি দিব একটা। আমার কলিজাসোনাপাখিটা এমন হইসে কেন? আমার জানপাখিটাকে আমার কলিজার ভেতরে লুকিয়ে ফেলতে ইচ্ছে হয়। আরও কী কী যে ইচ্ছে হয়, তা কী দিয়ে বোঝাব, পাখি? তুমি আমার কষ্টের কিছুটা ধারণ করার বন্ধু...বন্ধু মানে পথের সাথী, জীবনের সবচেয়ে কাছের কেউ, যাকে নিজের নিঃশ্বাসের চাইতেও বেশি বিশ্বাস করা যায়, এমনকি নিজের চাইতেও বেশি---'বেলাশেষে' মুভির সৌমিত্র যেমন করে বলেছিলেন! দুই। ধরুন, আপনি এমন একটা মানুষের সাথে সম্পর্কে আছেন, যেটা থেকে বেরুতেও পারছেন না; আবার যেটাতে থেকে যাবেন, সেটাও যৌক্তিক না। এমন অবস্থায় আপনি কী করবেন? এমন লোকের সাথে মনটা বাঁধা পড়েছে, যাকে চাইলেই পান না; উলটো দেশ, সমাজ, পরিবার, সবার কাছ থেকে লুকিয়ে থাকতে হয়, পালিয়ে বেড়াতে হয়। এর চাইতে দুঃসহ যন্ত্রণা আর কী হতে পারে? এমন একটা জায়গায় আপনি থাকলে কী করতেন? নিজেকে এমন অবস্থানে রেখে একটা দিন যাপন করে দেখুন তো কেমনটা লাগে! তিন। চলো, দু-একটা স্বপ্নের কথা বলি দুজনে। তুমি আমি একদিন টঙের দোকানে চা খেতে যাব, উন্মুক্ত কোনও বুনো মাঠে আমি নীল শাড়ির আঁচলে স্বপ্ন বেঁধে সবুজরঙা উদোম মাঠে আকাশের মুখোমুখি হয়ে শুয়ে বিকেলি আলো ছুঁতে খুব করে চাইব। তুমি দু-একটা ফড়িংরঙা স্বপ্নের গালে এঁকে দেবে অবিষাদী প্রেমবর্ণ। আর আমার কপালে টুক করে বসিয়ে দেবে মৃদুলা দুটো চুমু। আহ্! কেন জীবন গোছানো চিঠির মতো হয় না গো! এবার তুমি বলো তোমার স্বপ্নগুলো। তোমার স্বপ্নগুলো আমার জানতে চাওয়া হয়নি কখনও। আসলে, আমি তো অনেক কিছুই ভাবি। আমি ভাবি, আমার কোনও স্বপ্নই পূরণ হবে না। আরও ভাবি, আমার বেশিকাল বাঁচাও হবে না। আরও ভেবে যাই, আমার জীবনে কোনও দিন আলোই আসবে না। চার। আমি মরে গেলে যদি শুনতে পাও, মরে গেছি, তাহলে তার এক মাস শেষে সব ব্যস্ততা কিছুটা কমে এলে তারপর আমার কথা সুযোগ করে মনে কোরো আর বোলো, ও তো অনেক আগে মরে গেছে, এতদিন তো কাঁদার সময় পাইনি, তাহলে এখন বসে একটু কাঁদি। আর শোনো, আমি কেন পারব না তোমার সাথে রাগ দেখাতে? আমি একশো বার রাগ দেখাব। তোমার যা খুশি, যা ইচ্ছে হয়, করো। এই যে এত কথা বলছি, বেশ করেছি বলছি। খবরদার, ফোন করে হুংকার দিয়ে উঠবে না, বলে দিলাম। আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি, আমি তোমাকে তোমার চাইতে শতশত গুণ বেশি ভালোবাসি, কিন্তু বলতে আমি পারি না, জান। আমি কিচ্ছু বোঝাতে পারি না আমার মনের কথা। তুমি আমাকে আসলে বোঝোই না! তুমি যা বোঝো, তা খুব কম। তুমি যা জানো, তা অসম্পূর্ণ। পাঁচ। আমাকে ওরা রক্তাক্ত করে, ক্ষতবিক্ষত করে জখম করে। আমাকে আমার মতো কেউ থাকতে দেয় না। আমাকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারতে থাকে সবাই-ই। আমি কোথায় লুকাব নিজেকে আর? আর কতটা সব কিছু থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেব? পুরো দুনিয়াই সুযোগ খোঁজে আমার অতীত নিয়ে কথা বলার। যে অধ্যায় আমার কিছু মনে নেই, মাঝে মাঝে সম্পূর্ণ ভুলে যাই, সে অধ্যায়ই বারে বারে অকারণে টেনে এনে আমাকে আবারও মনে করিয়ে দেয়। তখন তোমাকেও পাই না পাশে। কষ্টটা আরও বাড়ে আর বাড়তেই থাকে। যদি একটুখানি একচিমটি বাসো ভালো, তবে একজীবনের পুরোটা বিকেলই তোমার নামে লিখে দেবো, ছড়াব আলো! ছয়। প্রতিদিনই যদি আমরা একইভাবে ভালোবাসি অথবা একইভাবে ঝগড়া করি, তাহলে দুটোই একটা সময় নিজেদের কাছেই বিরক্ত লাগবে, এজন্যই মাঝেমধ্যে নীরবতা পালন করি। আচ্ছা, তোমাকে যদি বলা হয়, তোমাকে বিশেষ কোনও দিন পালন করতে হবে না, তো কতদিন একইভাবে নিজের নিয়মে বাঁচতে পারবে? কোনও কিছু বাধ্য হয়ে করা ব্যাপারটা অবশ্য ভিন্ন কথা। নিশ্চয়ই অনেক কিছুই, এমনকি আমাদের অপছন্দের কাজটিও অনেক সময়ই আমরা বাধ্য হয়ে না বরং কখনও কখনও আনন্দের সাথেই করি, একটু গভীরে চিন্তা করে দেখলে এটা বুঝতে পারবে। এত কথা বলার কারণ হচ্ছে, পৃথিবীর অন্য যে কেউ যা খুশি করুক অথবা না করুক, আমার তাতে আসলেই কিছু এসে যায় না, বরং অনেকেই অনেক বিষয় আদিখ্যেতা করে, আমার সেটা সম্পূর্ণ অপছন্দ। কিন্তু আমার বিশেষ কেউ যদি বিশেষ কোনও কিছু ভুলে যায়, তবে আমার কাছে সেটা অবশ্যই অগ্রহণযোগ্য। আমি জানি, তুমি আমাকে ভালোবাসো, এবং তুমি ভালোবাসা প্রমাণ করতে অপছন্দ করো। সব কিছুই ঠিক আছে। কিন্তু আমি হচ্ছি তোমার থেকে অনেক অনেক দূরে। দূরে থাকার কারণে, কাছে থাকলে যেটা হয়তো পালন করা যেত, দূরত্বের কারণে সেটা কখনও হবে না, কিন্তু দূর থেকে অন্তত কিছু জিনিস তো করাই যায়। আমি চাইনি, তুমি আমার জন্যে হুট করে ঢাকা থেকে যশোর চলে আসবে, অথবা এ-ও চাইনি এবং চাইনা কখনওই যে, তুমি ওখানে থেকে দামি কোনও গিফট পাঠাবে। সবাইকে দেখিয়ে না হোক, দুজন একা বসে কেক কাটব, তুমি আমার জন্য কেক নিয়ে বসে থাকবে...এসব কিছুই চাইনি, চাই না, এমনকি কোনও দিন এমন হবে, সেটাও আশা করি না, কল্পনাও করি না, করবও না। কিন্তু ওখানে থেকেও যেটা চাইলেই তুমি করতে পারতে, সেটা হচ্ছে, তুমি অন্তত একটা ফোন করতে পারতে, অন্তত একটা মেসেজ করতে পারতে, একটা ভিডিয়ো-কল করতে পারতে। আসলেই অন্য কারও কাছে কিছু আশা না করলেও ভালোবাসার মানুষ হিসেবে এতটুকু তোমার কাছে আশা করা এবং পাওয়া আমার অধিকার, আমার প্রাপ্য। অন্য সবাই ভুলে যাবে, এটা খুবই খুবই স্বাভাবিক, কিন্তু তুমি ভুলে যাবে, এটা অস্বাভাবিক। এটা আমি মানতে পারি না। তুমি এখন বলতেই পারো, তুমি এভাবে সম্পর্ক রাখতে পারবে না, এসব মেনে চলতে পারবে না, তোমার যা যা খুশি, তার সবই তুমি বলতে এবং করতে পারো, কারণ সেইসব ক্ষমতা তোমার আছে। তুমি চাইলেই সব কিছু করতে পারো, আর এটার জন্য অবশ্যই অবশ্যই কোনও ইস্যু তোমার প্রয়োজন নেই। কিন্তু বলো তো, তাহলে আর কী নিয়ে সম্পর্কটা সুস্থ, স্বাভাবিক, সুন্দর করে রাখা যায়? তুমি তো অনেক দূরে, দূরের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে অনেক বিষয় আমাদের মনে রাখা উচিত। একটা টেক্সটও করার সময় তুমি পাবে না, অন্য কোনও দিন না হোক, অন্তত এই দিনটাতেও একটা ভিডিয়ো-কল করার সময় তোমার হবে না, এসবও মেনে নিতে হবে আমাকে? আমি অন্তত এটা আশা করিনি যে তুমি আমার জন্মদিনটাও ভুলে যাবে। আমি জানি, তুমি এখন হুংকার দিয়ে উঠবে। তোমার যা যা খুশি, যা যা বলার, বলতে পারো। ভাবনা: সাতশো সাইত্রিশ ............................................................... এক। জান, আমি যে কোনও দিক দিয়েই, কোনওভাবেই, তোমার যোগ্য না, এটা কেবল আয়নার সামনে গেলেই ভীষণ ভীষণ ভীষণভাবে উপলব্ধি করতে পারি। আমি তোমার সামান্য 'কেমন আছ?' শোনারও যোগ্য না, অথচ সেখানে যে পরিমাণ আদর, ভালোবাসা, যত্ন, সময়, এরকম যা যা আমি পাচ্ছি, তার সবটাই আসলে মিরাকল। সত্যিই বলছি, আমি তোমার কোনও কিছুরই যোগ্য না। এই যে তোমাকে আদর করে ভালোবেসে বিভিন্ন নামে ডাকার অধিকারটুকু, এ যে কত বড়ো অধিকার, আর কত বড়ো পাওয়া, তা আমি তোমাকে বলে বোঝাতে পারব না। আমি আমার চেহারাটা যত বারই আয়নায় দেখি, তত বারই বুঝি, মেয়ে হবার কোনও যোগ্যতাই আমার নেই। আমার চুলগুলো একেবারে যাচ্ছেতাই, আমার গায়ের রঙ কালো, চোখের নিচে আরও কালো। আমাকে দেখলেই মনে হয়, আমি একটা পেশেন্ট, আর কিছু না-ই বললাম! আমাকে আসলে ভালোবাসা যায় না। আমাকে ভালোবাসার কিছুই নেই। এককথায়, আমি ভালোবাসার সম্পূর্ণ অযোগ্য অযোগ্য অযোগ্য! আমি আজ পর্যন্ত যতটুকু যা যা তোমার কাছে পেয়েছি, তার জন্য আমি আমার স্রষ্টার কাছে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কৃতজ্ঞতা স্বীকার করব। সম্পূর্ণ একজন অজানা অচেনা মানুষ হয়েও তুমি হয়েছ আমার সবচেয়ে কাছের, সবচেয়ে আপন, আর সবচাইতে চেনা। আমি জানি, আমি এর কিছুই ডিজার্ভ করি না, কেননা তেমন কিছুই আমি এই জীবনে করিনি, যা করলে পরে এত কিছু পাওয়া যায়! আমি তোমার সবটা ভালোবাসা পেয়েছি। যখন যা আমার দরকার ছিল, তার সবই আমি তোমার কাছ থেকে চাইলে হয়তো পেতাম, কিন্তু না-চেয়েও সবই পেয়েছি আমি। যখন আমি অভিযোগ করি, তখন আসলে এসব ভেবে অভিযোগ করি না। আমি যদি এসব ভাবতাম, তাহলে এক বারের জন্যেও তোমার কাছে তোমার কোনও কিছু নিয়েই আর কোনও অভিযোগ করার সাহস পর্যন্ত আমার হতো না। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো, পাখি। আই লাভ ইউ, সোনাপাখিটা। শুভ রাত্রি, বাবুইসোনা! দুই। আমার কিছু কিছু ব্যাপারে তোমার ভুল ধারণা আছে, সেগুলি আমি ভেঙে দিই। তোমার সাথে যখন আমার রিলেশন ছিল, তখন ভালোবাসার ব্যাপারে আমি অতটা বুঝতাম না। ভালোবাসা আর ইমোশনটাকে আলাদা করতে পারতাম না। তা ছাড়া তুমি আমার জীবনে আসা প্রথম কোনও মানুষ ছিলে, তাই তোমার প্রতি অনেক দুর্বলতা ছিল। কিন্তু সেটা ছিল কম বয়সের আবেগ। সময়ের সাথে সাথে সব কিছু বুঝতে পারছি, তাই আজ বলি, অতীতের কথা বাদ দাও। তোমাকে কখনও ভালো আমি বাসিইনি! যেটা ছিল, সেটা ভালোবাসা ছিল না, স্রেফ আবেগ ছিল। সরি! বেশি কিছু বলব না। শুধু এইটুক বলি, যারা প্রতারণা করে, এই ধরনের মানুষগুলোই দিনশেষে ভালো থাকে। পক্ষান্তরে, যারা প্রতারিত হয়, তারাই সবসময় মৃত্যুযন্ত্রণার মাঝে বাঁচে। তিন। যখন কোনও একটা সমাজের মানুষ ক্রমশই অপ্রকাশ্য ইবাদত বা প্রার্থনাগুলিও ব্যাপক হারে প্রকাশ ও প্রচার করতে থাকে, তখন বুঝতে হবে, সেখানে সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ কমতে শুরু করেছে। চার। আমি প্রায়ই ভাবি, আমি কেন যে অকারণে ওর সাথে কিছুদিন পর পরই এমন খারাপ আচরণ করি, তা আমি নিজেও জানি না। আমি শুধু জানি, ও সারাদিন আমার সাথে কথা না বললে আমার কষ্ট হয়, দম আটকে আসে। ও জানেই না, আমি ওর সাথে জড়াবার পর, ওকে ভালোবাসার পর থেকেই আজ পর্যন্ত কতশত বার ওর জন্য ওর অপেক্ষায় কেঁদেছি, কেবল ওর সাথে একটু কথা বলব, একটু ওকে দেখব, ভালোবাসব, এইসব ভেবে, অথচ বার বার আমি ওকে কষ্ট দিয়ে ফেলি। আমি ওকে হারানোর ভয়ে ওর সাথেই খারাপ আচরণ করে ওকে কষ্ট দিই। আমি ওকে মানসিকভাবে টর্চার করি। অথচ ও ছাড়া আমার এই পৃথিবীতে অন্য আর কেউই নেই, যে আমাকে ভালোবাসে, যে আমার আশ্রয়-প্রশ্রয় সব কিছু। আমার ভালোবাসা, আমার আবদার, আমার সব কিছুই ও। আমি আসলে কিছু চালাক প্রতারক মানুষের মাঝে ছোটো থেকেই থেকে আছি, অনেক কাছের মানুষের অনেক বাজে বাজে রূপ দেখে ফেলেছি, এজন্য আমার পৃথিবীর কারও প্রতিই কোনও বিশ্বাস নেই। কিন্তু তাই বলে ওকে আমি সন্দেহ করি না মোটেও। আমি খুব একা থাকি কখনও কখনও। এই একা-থাকাটা আমার দম বন্ধ করে দিতে চায়, এজন্যই আমি তখন ওর সাথে অমন করি। হে ঈশ্বর, তুমি আমাকে শক্তি দাও, আমি যেন আর যা-কিছুই করি না কেন, ওকে যেন কিছুদিন পর পর এভাবে কষ্ট না দিই। ওকে যেন আমি আমার ভালোবাসা আর আদর দিয়ে ধরে রাখতে পারি। সবসময়, ও যেমনটি আমাকে বোঝে, আমিও যেন ওকে বুঝতে পারি ঠিক তেমনি করেই। হে ঈশ্বর, তুমি আমাকে সে-শক্তি দাও। আর তোমাকে বলছি, শোনো। তুমি আমার কাছে কক্ষনো মাফ চাইবে না। মাফ চাইবে না এই কারণে যে, ভুলটা আমার। আমার ভেতর কমনসেন্সের প্রচুর অভাব আছে। আমি কখন কোথায় কোন কথা বলতে হবে, এটা মাঝে মাঝে বুঝি না। আমি সারাদিন বাসায় থাকি, আর মনে মনে ভেবে নিই, তুমি বোধহয় সারাক্ষণই অফিসে ল্যাপটপ একটা সামনে নিয়ে বসে বসে বাদাম চিবাও, আর স্ট্যাটাস লিখো। আমার মাথায় কখনওই এটা কাজ করে না যে, তুমি বসে বসে অযথা টাইমপাস করতে অফিসে যাও না, অথবা তুমি একটা চাকরি করো! আমি নিজে সারাক্ষণই পড়াশোনা বাদ দিয়ে বসে বসে কাটাই, আবার তোমাকেও অযথা টর্চার করি। তোমার যে হাজার ধরনের চিন্তা নিয়ে সবসময় চলতে হয়, এটা আমার বোধেরও বাইরে। বাইরের পৃথিবীতে আমি কখনও সেভাবে যাইনি বলেই জানি না যে, বাইরের জগতটা অত সহজ না। আজকে আমি কোথাও চাকরি করলে, কাজে থাকলে, তখন এসব কিছু বুঝতে পারতাম। দোষটা পুরোপুরি আমার আমার এবং কেবলই আমার। এবং আমি আমার এসব চিন্তাভাবনা অবশ্যই পরিবর্তন করব। আমি কাজে ব্যস্ত থাকি না, পড়াশোনা বাদ দিয়ে সারাক্ষণই কয়েক মিনিট পর পর তোমার মেসেজ চেক করি, এ সবই আমার দোষ। এজন্য আমি অবশ্যই তোমার কাছে মাফ চাইব। ভাবনা: সাতশো আটত্রিশ ............................................................... এক। জানপাখি, তুমি আমাকে যে-কথা সম্পূর্ণ বলবে না, সে-কথা কখনও একটু বোলো না, লক্ষ্মী। আমার দুশ্চিন্তা হয়। আমি চাই, তুমি ভালো থাকো। আমার মধ্যে আজকে দুটো জিনিস কাজ করছে। বিষণ্ণতা। অস্থিরতা। আচ্ছা, আমি যদি তোমার সাথে একটু জোরে কথা বলি, তাহলে কি তুমি ভেবে নেবে যে আমি তোমার সাথে বেয়াদবি করছি? আসলে আমি নিজেই আমার মোবাইলের ভয়েস শুনে খুবই আহত এবং একইসাথে মর্মাহত। আমার কণ্ঠস্বর যে এত পচা, সেটা তুমি আমাকে কখনও বলোনি তো! আচ্ছা, তুমি কী মনে আজকে আমাকে ভয়েস-রেকর্ডটা পাঠালে? তোমার ভালো-থাকাই আমার ভালো-থাকার শুধু একটি মাত্র দিঠি, অথচ দেখো, আমাকে দুশ্চিন্তায় ফেলেও ভালো তুমি থাকো ঠিকই! দুই। যখন তুমি এমন কিছু লিখো, যা আমি বলতে চাই, কিন্তু লিখতে গেলে যতটা সুন্দর উপস্থাপন করতে হয়ে, যতটা সুন্দর করে সাজাতে হয়, সেটা আর পারি না, তখন নিজের কাছে নিজেকে খুব অসহায় মনে হতে থাকে। আমার ভালোবাসার অনুভূতিগুলোকে যথাযথ ভাষা দিতে হলেও আমাকে তোমার কাছেই ছুটতে হয়, তোমার কাছেই হাত পাততে হয়, যদিও ভাবনাটি তোমাকে ঘিরেই! অথচ দেখো, কত অসহায় আমি, ভালোবেসে এতটুকুও করতে পারি না তোমার জন্যে! তুমি বলো, আমরা একে অন্যের পরিপূরক হয়ে বাঁচব, অথচ দেখো, আমি কি পারি, আমি কি পেরেছি কখনও তোমার পরিপূরক হতে? তুমিই না আমাকে হাত ধরে টেনে উপরে তুলে দাও! তারপর আমি তোমার পাশে দাঁড়াই। আমার ভালোবাসা এতটাই অকেজো! আমি ঠিকমতো গুছিয়ে কথা বলতে পারি না, আমি সাজিয়ে পরিপাটি করে লিখতে পারি না, আমি অন্য কিছুই পারি না। এত এত অযোগ্যতা নিয়েও ঠিক ঠিক তোমার কাছে ভালোবাসার আবদার বলো, অধিকার বলো, করে বসি। শব্দগুলোকে যেভাবে বিছিয়ে দাও নিখুঁত করে, এতটা তো আমি ভালোবেসেও পারি না বিছাতে! তাহলে কি আমার ভালোবাসায় কোনও কমতি আছে? আমি কি কোথাও অবহেলা করছি? এসব প্রশ্ন আসে মাথায়। আর এতসব কিছুর মাঝে আমার প্রাপ্তিটা কোথায়, জানো? আমার প্রাপ্তি হলো, তুমি আমাকে ভেবেই কবিতাগুলো লিখো। এর চেয়ে বড়ো প্রাপ্তি হয়? কারও অনুভূতি, কারও ভাবনার রাজ্য জয় করা কি সহজ কিছু? মনে হতে থাকে, আমি তো তোমাকেই পেয়ে বসে আছি! এটা কবে, কখন, কীভাবে হলো, সে আমি জানি না, কিন্তু এখন মনে হয়, তোমার মনে আমারও একটা আলাদা জায়গা আছে। তিন। আমি অনেক ভেবে-চিন্তে দেখলাম, আমি যদি ফেইসবুকে আসি, আর রোজ রোজ এসব এক-একটা কাণ্ড দেখতে থাকি, তাহলে খুব শীঘ্রই আমি পাগল হয়ে যাব, এবং তোমাকে সন্দেহ করতে শুরু করে দেবো। নিঃসন্দেহে তোমাকেও রোজ রোজ এসব অভিযোগ তুলে ঘ্যানঘ্যান করে পাগল করে দেবো। আমার এই মুহূর্তেই এসব বন্ধ করতে হবে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমি আর ফেইসবুক চালাব না। আর তুমিও আমাকে এখানে আর আসতে বোলো না। তুমি যদি আমার সাথে ছাড়া আরও অন্য কারও সাথে ভালোবাসার সম্পর্কে থাকো, তাহলে ওটা আমাকে সরাসরি বলবে, আমি সরে যাব। আমি তোমাকে বিরক্ত করা অনেক পরের কথা, আমি তোমার প্রতি, আমার ভালোবাসার প্রতি অথবা অন্য কোনও কিছুর ব্যাপারেই কোনও অভিযোগ তুলব না, তোমাকে কষ্ট দেবো না। আমার মাথাটা সত্যিই নষ্ট হয়ে যাবে এসব দেখতে থাকলে।এমনিতেই তুমি আমাকে সময় দাও না, হয়তো দিতে পারো না, এজন্যই দাও না। তার উপর যদি এসব দেখতে থাকি, তাহলে আমি পুরোপুরিই সাইকো হয়ে যাব। তোমার যত খুশি যার সাথে খুশি ছবি আপলোড দাও, সম্পর্কে জড়াও, যা খুশি করো। আমার এসব অশান্তি ভালো লাগে না, আমাকে এসব থেকে দূরে রাখো। একটা কথা বলি, শোনো। অনেক অনেক তুচ্ছ কারণে অনেক গভীর সম্পর্কও ভেঙে যায়, এটা মাত্র একটা মুহূর্তের ব্যাপার। সে সম্পর্কটা হতে পারে দশ বছরের, নয়তো দশ দিনের। চার। তুমি এত কিছু নিয়ে ভেবো না, কারণ পৃথিবীর অনেক কিছু আছে, যেগুলোর উপর আমাদের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে গেলেই মনে কষ্ট বাড়বে। তার চেয়ে বরং ভালো হয়, সেগুলোকে তাদের নিজেদের মতো করে চলতে দেওয়া। চলুক না! চলতে চলতে ওরা একটাসময় থেমে যাবে। আমি নিজেও একটাসময় এগুলো নিয়ে খুব ভাবতাম। কী হচ্ছে, কী হবার কথা ছিল, কেন হচ্ছে, এসব নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে থাকতাম। ভাবতাম, এখানে আমার দোষটা কোথায়? পরে দেখলাম, ওই ব্যাপারগুলো যারা ঘটায় বা ঘটাচ্ছে, তারা এতে খুব মজা পেয়ে যায়। তো আমার কী দরকার অমন করার? আমার কী দরকার পড়েছে তাদেরকে মজা দেওয়ার? একটা ব্যাপার বলি। যারা যা-কিছু তোমায় লিখছে বা লিখে, তা-কিছু তারা অনেকসময় নিজেরাও বিশ্বাস করে না, নিজেরাও মানে না। তারা এগুলো বলে শুধু তোমাকে রাগিয়ে দেওয়ার জন্য। তুমি রেগে গেলে, তুমি মনে কষ্ট পেলে ওরা কিন্তু সফল! পাঁচ। আমি একটা শয়তান মেয়ে, আমি একটা কাওয়ার্ড। আমাকে দিয়ে সারাদিন থালাবাসন পরিষ্কার করানো উচিত, আমাকে সারাদিনই বকাঝকার উপর রাখা উচিত। আমি কাউকে কিছু দিতে পারি না, কারও জন্য কখনও কিছুই করিনি, আমি অথচ আমি সবার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বেড়াই। আমার মুখে থুতু ছিটানো উচিত। তুমি আমার সাথে কখনও ভালো ব্যবহার কোরো না, আমাকে সারাক্ষণই তুই করে বোলো, লাত্থি আর ঝাড়ির উপরে রেখো। আমাকে প্রতিদিন পা থেকে মাথা পর্যন্ত কঞ্চি দিয়ে পেটানো উচিত। অন্য কারও কথা বাদ দিলাম, আমি নিজের জন্য হলেও, নিজেকে ভালো রাখার জন্যও, কিছু করতে পারি না। আমাকে কক্ষনো ভালোবাসবে না, আমাকে পায়ের তলায় রাখবে সবসময়। সবার পায়ের তলায় আমার জায়গা হওয়া উচিত। আমার মতো শয়তান মেয়ের সাথে এমনই হওয়া উচিত। আমি তোমাকে ভালোবেসে বেসে আস্ত একটা শয়তানে পরিণত হয়েছি। ছয়। আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, আমি খুব অল্প সময়ের মধ্যে টুক করে মরে যাব। দুনিয়ার পদতলে থোকায় থোকায় পড়ে থাকবে আমার অপ্রস্ফুটিত স্বপ্নগুলো। কারা যেন ওই ভীষণ দামি স্বপ্নগুলোকে মড়মড় করে পায়ে মাড়িয়ে দিতে দিতে নাম-না-জানা কোনও স্টেশনচত্বর ধরে হেঁটে শেষট্রেনে চেপে কোথায় যেন নেমে পড়বে, আমি তার কিছুই জানতে পারব না। আমার সত্যিই মাঝে মাঝে মনে হয়, খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে টুক করে আমার মৃত্যু হয়ে যাবে। তারপর? তারপর আমার সেই পরমকাঙ্ক্ষিত চিরমুক্তির বিষণ্ণ শোভাযাত্রা। আমার সত্যিই, কেউ না জানে মতোই, আকস্মিক ডাক পড়বে কোনও এক ডাহুক পাখির চলে যাওয়ার পথের দিকে... ভাবনা: সাতশো উনচল্লিশ ............................................................... এক। রাস্তার ধারে, কোনও গলির মোড়ে কিংবা বাজারের এককোণে সামান্য সবজি, ফলমূল কিংবা অন্য কিছু বিক্রির আশায় বসে-থাকা বৃদ্ধ চাচাটির কাছ থেকে কিছু-না-কিছু কিনুন, দরকার না থাকলেও, কোনও দরদাম করা ছাড়াই। ওদিকে বৃদ্ধ রিকশাওয়ালা চাচাকে মাত্র দশ টাকা বাড়িয়ে দিলে আপনার বিত্ত একটুও কমে যাবে না, বরং চিত্তের উন্নয়ন ঘটবে। স্টেশনে স্টেশনে ফেরি করে ঘুরে-বেড়ানো ক্লান্ত বাচ্চা ছেলেটির কাছ থেকে বিনা প্রয়োজনে হলেও কিছু-একটা কিনুন। কড়া রৌদ্র মাথায় রেখে যে মুচি লোকটা জুতা সেলাই করে যাচ্ছেন অবিচল হাতে, তিনি যত চান, বিনা বাক্যব্যয়ে ঠিক তত মজুরি দিন, পারলে পাঁচ-দশ টাকা বাড়িয়ে দিন। আপনার কাছ থেকে পাওয়া সামান্য এই টাকায় তিনি গাড়ি, বাড়ি কিংবা বিলাসদ্রব্য কিনবেন না। সন্ধ্যেশেষে এক কেজি চাল-ডাল-নুন নিয়ে তিনি হয়তো ঘরে ফিরবেন। আধপেটা-খাওয়া কয়েকটা মুখে একমুঠ ভাত তুলে দেবেন আপনার এই সামান্য টাকায়। আপনার আমার প্রিয়জনের মতো তাঁরও খুব প্রিয় কেউ আছে ঘরে। তাঁর জন্যও কেউ কেউ সারাটা দিন অপেক্ষা করে থাকে কখন তিনি ঘরে ফিরবেন, সে আশায়। ঘরে ফিরলেই কোনও এক শুকনো ক্ষুধার্ত শিশুমুখ বড়ো আহ্লাদে তাঁকে জড়িয়ে ধরে হয়তো বলে উঠবে, 'ও বাবা, আমার জন্য কী এনেছ?' দুই। জীবনে এমন কাউকে দরকার হয়, আমি ভুল করলে যে খুব করে বকে দেবে। চোখ-কান খোলা রেখেই যার বকবকানি শুনতে একটুও বিরক্ত লাগবে না, যার কথার খোঁচা থেকে পালিয়ে বাঁচতে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করবে না। জীবনে এমন কাউকে লাগে, যে আমাদের বিচ্ছেদের কথা শুনে আমাকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো হু হু করে কেঁদে উঠবে, যার চোখে আমি মানেই পুরো পৃথিবী, আর পুরো পৃথিবী মানেই আমি। সন্ধ্যে হলে একসাথে চাঁদ দেখতে মন পুড়বে, গভীর রাতে তার জন্য মন আনচান করবে। সেই মানুষটাকে লাগে, যার জন্য চুপচাপ সয়ে নেওয়া যায় জাগতিক যত দৈন্য, অভাব আর অপূর্ণতা। জীবনে সত্যিই এমন কেউ আসুক, যার হাত ধরলেই মনে হবে জীবন এত ক্ষুদ্র হয় কেন? কেন কয়েক কোটি বছর আয়ু হয় না মানুষের? বিশ্বাস করুন, জীবনে সত্যিই এমন একজন সুজন খুব দরকার হয়, যাকে পেতে স্বর্গকেও বড়ো তুচ্ছ মনে হবে! তিন। শেষমেশ, আমায় রেখে বৃষ্টিকেই কিনা এত ভালোবাসলে! আমি যেন পরের জন্মে তোমার জীবনে বৃষ্টি হয়েই ঝরি! চার। আমি বার বারই পাগলামি করি, আবার তুমি সেই পাগলামি সহ্য করে করে নিজেই আমাকে আবার সুযোগ দাও। তুমি যদি আমাকে ওই মুহূর্তে ক্ষমা না করতে, তাহলে আমি কিছুতেই এতটা তোমার হয়ে উঠতে পারতাম না। জানো, তোমার উপর রেগে যাই কিংবা কষ্ট পেয়ে চুপ করে থাকি, কখনও বলি, সব ছেড়ে চলেই যাব, তখনই আমার মনে আসে, আমি তো নিজেকে বলেছি যে যত যা-ই কিছু আসুক না কেন, তোমাকে আমি ছাড়ব না। তখন সব কিছু আবার ঠিক হয়ে যায়। তুমি জানো, এমন আরও অনেক অনেক মুহূর্ত আসবে, যেগুলো এলে মনে হবে, ধ্যাত্ থাকব না আর, তখন, আমি শুধু চিন্তা করি, ওই মুহূর্তগুলোতে যেন আমি কোনও পাগলামি করে না বসি। আমি জানি, তুমি ঠিকই সবসময় আমার পাশে থাকবে, কিন্তু যতটুকু সময় যতক্ষণ না তুমি নিজে আমাকে ফোন দিয়ে এটা বলো, ততক্ষণ পর্যন্ত আমার ভেতরে ঝড় চলতেই থাকে। আর তুমি তো জানোই, আমি তোমাকে যতটা সব কিছু বলতে পারি, কখনওই আর কাউকে এভাবে বলতে পারি না। রাগ তো দেখাই, নিজেও বেশ ভালোই জানি, একটু পর রাগ কই কই যে চলে যাবে, তারপর আবার খুঁজতে থাকব তোমাকেই! অথচ রাগের সময় মনে হয়, সব কিছু ছেড়ে-ছুড়ে চলেই যাই! তুমি কি কখনও বোঝো, তোমার সাথে রাগ করে আমি এক দিনে হাজারো বার মেসেঞ্জার ইন্সটল করি, আবার আনইন্সটলও করি? পাঁচ। তুমি আমাকে আমার চেয়েও বেশি বোঝো। আমার সম্পর্কে সব জানা আর আমাকে বুঝতে পারা, নিশ্চয়ই দুটো ভিন্ন বিষয়। তুমি আমাকে পড়তে পারো, আমি রেগে যাই অথবা কষ্ট পাই, দুটোই বুঝে ফেলো। আমি আসলে এখন আর রাগি না কারও উপরেই, কিন্তু আমি জানি না, কেন আমার প্রায়ই খুব কষ্ট হয়। আমি দেখেছি, তুমি ঠিকই বুঝে ফেলো যে আমার মন খারাপ। তুমি বোঝো, আমি কী বলতে চাই, কিন্তু বলতে পারি না। সবচেয়ে বড়ো বিষয় হচ্ছে, আমি তোমাকে একশোটা ভুল বুঝলেও তুমি কখনওই আজ পর্যন্ত আমাকে ভুল বুঝোনি। আমি তোমাকে আঘাত করলেও তুমি কখনও পালটা আঘাত করো না। তুমি হয়তো আমাকে অনেক সময় দিতে পারো না, কিন্তু যখন যেটুকু সময় দাও, সেটুকুই পুরোপুরি আমাকেই দাও, দিয়েছ। আমার কথাগুলি তোমাকে বলতে গেলে আমি যা বোঝাতে চাইছি, সেগুলোর ভাষা আমি খুঁজে পাই না, কিন্তু তুমি নিজেই আমার মনের গভীরে যা ছিল, সেটাই তুলে ধরো আমার সাথে কথা বলার সময়। আমি তোমাকে যতটুকু আমার করে পেয়েছি, তার সবটাই কিন্তু আমি আমার ভালোবাসায় পাইনি, তুমি আমাকে তোমার কাছে খোলামেলা হতে দিয়েছ বলেই পেয়েছি। অনেকসময় আমি তোমাকে কিছু বলে অথবা লিখে খুব ভয়ে থাকি যে, হয়তো এক্ষুনিই তুমি একটা বকে দেবে, নয়তো আমার কাছ থেকে কৈফিয়ত চাইবে যে কেন আমি অমন করে কথা বললাম! কিন্তু তুমি আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার সব কিছু মেনে নাও। আমি তোমাকে বলি, আমি তোমাকে ভালোবাসি, আর তুমি ভালোবাসি যতটা না বলো, তার চেয়ে বেশি আমাকে সহ্য করো। আমি তো তোমাকে কাছে খুব বেশি পাইনি, তবু তারপরও আমি তোমাকে ফিল করতে পারি। আবার তুমিও আমাকে বুঝে ফেলো যে আমি তোমাকে খুব মিস করি, ভালোবাসি...তুমি আমাকে যদি না বুঝতে, তাহলে কখনওই তুমি এতটা ছাড় আমাকে দিতে না। ভাবনা: সাতশো চল্লিশ ............................................................... এক। দান, ততক্ষণই দান, যতক্ষণ সেটা গোপন। দাতা ও গ্রহীতা ছাড়া তৃতীয় কোনও পক্ষ জেনে গেলে সেটা আর দান থাকে না, হয়ে যায় বিজ্ঞাপন। দুই। শুনুন, আমি খাইস্টামি করছি না গো আপনার সাথে...করতে চাইও না। আপনার সাথে খাইস্টামি করা যায়, বলুন তো! আপনি কত ব্যস্ত থাকেন, তার মধ্যেও আমাকে রিপ্লাই করেন, যেখানে আপনার নিজের মানুষগুলোকে পর্যন্ত ঠিকমতো টাইম দিতে পারেন না! এটা আমার কাছে যে কতটা প্রাইসলেস, কতটা পাওয়া...সেটা বলে বোঝাই কী করে! আমার মতো অতি সাধারণ একটা মেয়েকে আপনার মতো এরকম একজন মানুষ সম্মান করেন...আমার কত কত বেয়াদবি, জ্বালাতন, পাগলামি সহ্য করেছেন এবং করেন রীতিমতো মুখ বুজে...এরকম আর কেউ হয়, বলুন তো! হ্যাঁ, কিছু ব্যাপারে তো কষ্ট পেয়েইছি, অবাক হয়েছি, অবিশ্বাসও জন্মেছে...তবুও অবিশ্বাসটা কখনও করতে পারি না! কিছুতেই না! আপনাকে খারাপ বলতে, আপনার সাথে খারাপ বিহেভ করতে আমার যে কতটা কষ্ট হয়, তা আপনাকে বলে ব্যাখ্যা করে বোঝানো যাবে না। আমার শত শত সমস্যার মধ্যেও আপনার একটা টেক্সট আমাকে যে কতটা হ্যাপি করে দেয়, তা যদি জানতেন! আমার একটুখানিও ভালো-থাকার মূলে আপনি সবসময়ই রয়ে গেছেন। তাই হয়তো আপনার সামান্যতম অন্যরকম বিহেভিয়ারে কষ্টটাও বেশি হয়। আপনার সাথে এই যে যেটুকু কথা হয়, তাতে যে আমার কতটা ভালো লাগে, সেই ভালো-লাগাটুকুর জন্য আমি অনেক কিছু স্যাক্রিফাইস করতেও পারি, এরকম মনে হয়। এটা একটা অদ্ভুত ফিলিং...এটা ঠিক এক্সপ্লেইন করা যাবে না। যার এটা হয়নি কখনও, সে এটা বুঝবে না। আপনি ভালো আছেন জানলে আমিও ভালো থাকি। আপনি আপনার পরিবারের সবাইকে নিয়ে আনন্দে আছেন, ভালো আছেন...এটা জেনে আমি সত্যিই মন থেকে নিশ্চিন্ত হই, খুশি হই এটা ভেবে যে আমার এই 'খাইস্টা লোক'টা সত্যিই ভালো আছে। আর এখন আরও ভালো ভালো লিখছেন, সেটা দেখে আমার আরও ভালো লাগে। কারণ আমি জানি, লিখতে আপনি সব থেকে বেশি ভালোবাসেন। আপনি আপনার ভালোবাসাকে ভালোবেসে, যত্ন করে, আগলে রেখে ভালোলাগা নিয়ে বাঁচবেন, আনন্দে থাকবেন, খুশি থাকবেন, সুস্থ থাকবেন...এটুকুই তো আমার কাম্য। সবারই একজন ড্রিম-ম্যান থাকে, এটা শুনতাম আগে। শুনে একটু হাসতাম, তারপর ভুলে যেতাম। আমি কোনও দিনই এসব নিয়ে মাথা ঘামাইনি। এখনও ঘামাই না। আর এরপর আর ঘামাতে হবেও না। সবাই-ই তার ড্রিম অনুযায়ী ড্রিম-ম্যান খোঁজে। আর আমাকে আমার ড্রিম-ম্যান নিজে এসে আমার ড্রিমটাকে খুঁজে দিয়েছে। আপনি আমার লাইফে আসবার পর আমি বুঝতে পেরেছি যে তাহলে হয়তো এরকমই হবার ছিল আমার ড্রিম-ম্যানটি। মাঝে ক'টা দিন আপনার সাথে আমার যে সময়টা গেছে, এখন এ ক'দিন যে সময়টা যাচ্ছে, এ সময়গুলো আমার জীবনে বেস্ট বিউটিফুল সময়গুলোর মধ্যে কিছু...এরকম একটা মূল্যবান উপহার আমাকে দেবার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোটো করব না। সামনে থাকলে একটা প্রণাম করতাম। আমি এসব কিছুর জন্য আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বীকার করছি। আজীবনই করব। হ্যাঁ, ঝগড়া হলে অনেক উলটা পালটা বলে ফেলি, তবে সেগুলো একটাও আমার মনের কথা নয়, বিশ্বাস করুন। আপনাকে যে কাছ থেকে জেনেছে, সে আপনাকে ভালো না বেসে পারবে না। আপনি মানুষটাই এমন। না, সম্পর্কটা ভালো যাচ্ছে বলে এরকম বলছি, তা নয় কিন্তু...এগুলোই আমার মনের কথা। তার মানে এই নয় যে আর ঝগড়া করব না। ঝগড়া তো করতেই হবে...উলটা পালটাও বলব। তারপর আপনি ঠান্ডামাথায় সবটা সামলে নেবেন, আমি জানি। কিংবা অনেক বেশি বলে ফেললে হয়তো একটু ঝগড়াও করবেন... তারপর আবার নিজেই মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে ঠিকই আমার মন ভুলিয়ে দেবেন। ফাজিল ছেলে একটা! আমার একমাত্র খাইস্টা! আমি হয়তো আপনার কেউই নই! তা নিয়ে আমার কোনও আপত্তি নেই, অভিযোগ নেই, এমনকি আফসোসও নেই! কেননা অলরেডি না চাইতেই আমি আপনার কাছ থেকে যা পেয়েছি, সেটা আমার না চাইতেও পাওয়া অনেক বেশি কিছু! আপনি আমাকে আশীর্বাদ করুন আমি যেন আপনাকে আর আপনার এই উপহারকে সারাটা জীবন যথাযোগ্যভাবে মান দিয়ে যত্ন করে ভালোবেসে আগলে রাখতে পারি। কখনও যেন আপনাকে এবং আপনার উপহারকে অমর্যাদা না করি---জীবনে যে পরিস্থিতিই আসুক না কেন! আপনি আমার কেউ নন, আর আমি আপনার কেউ নই---এই দুটো কথার মধ্যে আকাশ-পাতাল দূরত্ব। আমি আপনার কেউ হই বা না হই, কিন্তু আপনি আমার প্রাণের মতোই দামি বা তার থেকেও বেশি কিছু। আপনি ভাবতেও পারবেন না আপনি আমার কাছে কতটা কী! আপনার কোনও ক্ষতি, কোনও খারাপ-লাগা, খারাপ-থাকা আমি কখনওই মেনে নিতে পারি না, পারবও না। এরকম কোনও পরিস্থিতি আসবার আগে যেন আমার মৃত্যু হয়। তা না হলে আমি সহ্য করতে পারব না। আপনি অনেক অনেক অনেক ভালো থাকবেন আপনার ভালোবাসাগুলোকে ভালোবেসে, সারাজীবন সাথে নিয়ে, আনন্দ করে খুশিমনে সুস্থভাবে বেঁচে থাকবেন আরও অনেক বছর...আমি এটাই প্রার্থনা করি সবসময়ই। আমার অনেক ভুলত্রুটি আছে, আমি জানি। আমাকে আপনি ক্ষমাও করে দেন, তা-ও জানি। আমার মতো এরকম একটা অতিসাধারণ মেয়েকে এতটা মান দিয়ে সহ্য করার জন্য আমি জানি না আপনাকে ঠিক কী বলে আমার কৃতজ্ঞতা জানাব। আপনি আমার জীবনের অন্যতম সেরা উপহার, যেটা স্বয়ং ঈশ্বর আমাকে দিয়েছেন। আমি যেন আমার সারাটা জীবনে কখনও মনের ভুলেও তার অমর্যাদা না করি, আপনি আমাকে এই আশীর্বাদটুকু করুন, আমার প্রিয় খাইস্টা মানুষটা! তিন। মাঝে মাঝে মনে হয়, সাথে আফসোসও হয়...ইস্, ছেলে না হয়ে যদি তোমার খুব ভালো-লাগার বা ভালোবাসার কোনও কবিতা হয়ে জন্মাতাম! তুমিও জানো, মানুষ হিসেবে তোমার বেঁচে-থাকার সবচাইতে বড়ো কারণটি হচ্ছে, লেখক হিসেবে তোমার এই অস্তিত্বটুকু। তোমাকে এই একটা কারণেও ভালোবেসে ফেলা যায়। এই যে তোমার একটাই ভালোবাসা, মানে তোমার লেখার কথা বলছি, যদি কোনও সুযোগ থাকত, তাহলে আমি তোমার লেখা হয়ে বেঁচে থাকতে চাইতাম। আহা, ওরকম কিছু হয়ে যেতে পারলে তো আমি তোমার সাথে সবটা সময়ই থাকতে পারতাম! একেবারে তোমার চোখে আটকে থেকে এই জীবনটা পার করে দিতে পারতাম! এমনকি, তোমাকে চলে যেতে বললেও তুমি কখনও চলে যেতেই পারতে না আমাকে ছেড়ে! তোমাকে সব থেকে ভালো রাখতে পারার সুযোগটা আমিই তখন পেয়ে যেতাম! শুধুই তোমাকে ভালো রাখতে পারলে ঈশ্বরের কাছে আর কিছুই চাইতাম না! এর চাইতে বড়ো প্রাপ্তি একজীবনে আর কী-ইবা হতে পারত? আহা, কী যে ভালো হতো অমন কিছু হলে! বড্ড আফসোস হয় এই বেকার মানবজন্মের দিকে তাকালে! ভাবনা: সাতশো একচল্লিশ ............................................................... এক। আপনি কী এমন রাজকার্যে ব্যস্ত আছেন যে একটা রিপ্লাইও দিতে পারছেন না? এত ব্যস্ত? সিরিয়াসলি? কী করছেন আপনি? ঠিক আছে। ছাড়ুন! আপনাকে কিছুই বলতে হবে না। নট ইভেন অ্যা সিঙ্গেল ওয়ার্ড! প্রবলেমটা তো আমারই...আমি কেন সবসময় আপনার জন্য সব ছেড়ে ছুড়ে পড়ে রয়েছি---এখানে, ওখানে, সবখানে? এতটাও আসলে দরকার নেই! এত কিছু হয়...তা-ও আমার শিক্ষাটাই হয় না! বার বার একই ভুল করি। এর পরেও করব, সেটাও জানি। আরও অনেকক্ষণ বাদে, আপনি এমন একটা এক্সকিউজ দেবেন যে উলটো আমাকেই সরি বলে বলে আপনার রাগ ভাঙাতে হবে! এরপর? এরপর আবার কী! আমি যা, তা-ই হয়ে যাব! আমার মতন খাইস্টা এই পৃথিবীতে আর একটাও নাই! সত্যিই হেল্পলেস, সাথে হোপলেসও! স্টিল আমি আপনার জন্য ওয়েট করছি! এটা কি ভালোবাসা, না কি ফাজলামো? আমি কি কোনও দিনই পালটাব না...! সত্যিই অদ্ভুত, ইয়ার!!!!!!!!!!!!!!! এত প্রায়োরিটি, এত ইম্পর্ট্যান্স কোনও কিছুকেই দেওয়া উচিত নয়, এক নিজের ক্যারিয়ার ছাড়া। এবং, এটাই উচিত! আবেগ দিয়ে বাস্তবতা চলে না...একদমই চলে না! কারও জন্য এরকম পাগলামি করাটা বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়, তা সে যে-ই হোক না কেন! আগে নিজের ক্যারিয়ার, তারপর বাকি সব...যে থাকবে থাকবে, না থাকবে না থাকবে...এটাই হওয়া উচিত! আমার মতো এরকম করে কেউ কোনও দিন সাকসেসফুল হয়নি, নাইদার উইল আই। এটাই সত্যি.. Control your emotion, otherwise it will control you...ইংরেজ একজন লেখকের কথা। চরম সত্য! এর থেকে বড়ো ট্রুথ আর হয় না! দুই। আপনার কাছে আমার মেসেজগুলো সবসময় ঠিকঠাকই যায়, ইচ্ছে করেই অলওয়েজ ফেলে রাখেন ওগুলো...তাই না? আর আমি? বোকার মতো, আপনার মেসেজ দেখতে বা রিপ্লাই করতে পাঁচ মিনিটও দেরি করলে, কতই-না গিলটি ফিল করি! হাস্যকর বিষয়টা! মানছি, সারাদিন আমাকে সময় তো দিতে পারবেন না, দেওয়া উচিতও নয় আপনার। আমারও উচিত নয় দিতে বলা। কিন্তু আমি কী করব! আমার যে অভ্যেস হয়ে গেছেন আপনি! তা-ও তো আমি বলছি না যে সারাদিনই আমাকেই সময় দিন। আমাকে অনেক সময় দিলে কাজ করবেন কখন? আমারও উচিত নয় আসলে এভাবে আপনার জন্য এখানে সবসময় সব কিছু বাদ দিয়ে বোকার মতো পড়ে থাকা। কিন্তু...তবুও... সবসময়ই মেসেজ ফেলে রাখতে...বার বার বলা সত্ত্বেও... ভালো লাগে? গতকাল রাতের ব্যাপারটাও ঠিক...একদম ঠিক এরকমই ছিল! আপনি কাজ করুন...বা কাজ না করলে যা করছিলেন, তা-ই করুন...সমস্যা নেই। আমাকে সময় দেবার কিছু নেই। আমার মেসেজ আপনাকে সিন করতে হবে না। এখন যেমন আপনার যদি প্রয়োজন মনে হয় কখনও, তখনই আপনি মেসেজ সিন করেন বা রিপ্লাই করেন...এর পরেও এটাই করবেন। সমস্যা নেই। বেঁচে থাকতে গেলে কত কিছুই তো মেনে ও মানিয়ে নিতে হয়! মানতে যে পারে না, সে বাঁচতেও পারে না। আমি তো সারা দিন-রাত কত কিছুই বলি আপনাকে, আপনি ওসব পাত্তাই দেন না কখনও। অবশ্য, পাগলে তো কত কিছুই বলে, তাই না! সব কি আর আমলে নেওয়া যায়? না কি উচিত? আমাকে রিপ্লাই করতে গেলেও আপনার ক্ষতি হবে, সময় নষ্ট হবে! যা-ই হোক...সরি। আমার মেসেজ আপনাকে আর দেখতে হবে না প্রয়োজন ছাড়া। মন থেকেই বলছি, আমি আর কখনওই: মাইন্ড করব না। খারাপও লাগবে না। ঝামেলাও করব না। ঝগড়াও করব না। আপনি আমাকে না ভেবে ভালো থাকতে পারলে আমি কেন পারব না? পারব, ঠিকই পারব। মানুষ সব পারে। আমি যখন পারব, তখন আপনার খারাপ লাগবে। সময় হলে আমার কথাটা মিলিয়ে নেবেন। তিন। আপনি যে আমার কাছে কী বা ঠিক কতটা স্পেশাল...বা আমার লাইফে আপনার প্রায়োরিটি কতটা...আপনি যে আমার লাইফের কতটা নিয়ে আমার লাইফে রয়েছেন...এটা আপনার পক্ষে বোঝা তো দূরের কথা...আপনি এটা ধারণাও করতে পারবেন না! আমি মন থেকে চাই, যাতে আপনি কোনও দিনই সেটা ওরকম করে বুঝতে না পারেন, কারণ বুঝলে যে কষ্টটা হবে সেটা আপনার সহ্য হবে না...আমার হয় না। আপনার ভালো-থাকাটাই আমার কাম্য। আমি কখনও না...কখনওই চাই না আপনি কোনওরকম কষ্ট পান বা খারাপ থাকেন। ভুল আমার একটা হয়েছে। আপনি জেনে বুঝে আর কোনও ভুল না করুন, এটাই আমি চাই। যার বা যাদের সাথে আপনি ভালো থাকেন, থাকছেন, তাদের সাথে সবসময় ভালো থাকুন, এটাই চাই। একরাশ ভালোলাগা নিয়ে ভালেবেসে বেঁচে থাকুন। এটুকুই, ব্যস্! যাদের সাথে থাকেন, তাদের সাথে আপনি ভালো থাকবেন, এটাই চাই। ভাবনা: সাতশো বিয়াল্লিশ ............................................................... এক। 'আত্মহত্যা কখনওই কোনও সমাধান নয়।' বলা মানুষটাও হঠাৎ টুক্ করে আত্মহত্যা করে বসে! 'যা-কিছুই হোক, তোমাকে কোনও দিনই ছেড়ে যাব না।' বলা মানুষটিও একদিন রৌদ্রোজ্জ্বল কড়া দুপুরে অন্যের হাত ধরে গড়গড় করে চোখের সামনে দিয়ে হেঁটে চলে যায়। 'তোমাকে সারাজীবনের জন্য ছেড়ে গেলাম।' বলা মানুষটিও ওই ছেড়ে-আসা মানুষটিকে বুকের ভেতরে বড়ো যত্ন করে পুষে রেখে দেয় যুগের পর যুগ ধরে। হারানোর ভয়ে প্রায়ই আঁতকে-ওঠা মানুষটিও অন্যের ঘরে গিয়ে দিব্যি সংসারী হয়ে ওঠে। সামান্য অন্ধকারেও ভয়ে জড়সড় হয়ে ক্ষণে ক্ষণেই কেঁপে-ওঠা মানুষটিও একদিন ঠিকই ঘনঘোর অন্ধকার কবরে নির্ভার চিত্তে নির্ভীক অবয়বে শুয়ে থাকে। সময়ের সাথে সাথে বদলে যায় মানুষের স্বপ্ন, কখনওবা, এর সাথে বদলে যায় প্রিয় হাতটিও। মানুষ কখন যে কী চায়, কখনও কখনও সে নিজেও সেটা বুঝে উঠতে পারে না। আসলে আমরা কেউই সুখী নই, কেবলই সুদক্ষ অভিনেতার মতো সবাইকে দেখিয়েই যাচ্ছি---হ্যাঁ হ্যাঁ, এই তো খুউব ভালো আছি! অথচ এই 'ভালো আছি!' বাক্যটিই পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বার ব্যবহৃত সর্বজনমান্য নিখুঁত একটি মিথ্যে কথা! দুই। এমন একটা অস্বাভাবিক জীবন তো আমি কখনও চাইনি। আমার মাথায় কোনও কিছুই আর ঢোকে না। আমি কোথায় আছি, আর কোন দিকে যাচ্ছি, সেটাই বুঝি না। আমি যে তোমাকে ভালোবাসি, সেখানে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু তুমি পাগলের মতো এসব কী বলে কী বোঝাও, আমি তার কিছুই বুঝি না৷ আমি যদি কখনও তোমাকে আমার করেই না পাই, তাহলে তোমার পুরো হৃদয় জুড়ে যদি আমি থাকিও, সে থাকার কী মূল্য? না, আমি আসলে মরার রাস্তাও এখন পাচ্ছি না, আর বেঁচে থাকার কোনও কারণও খুঁজে পাচ্ছি না। এই অবস্থায় থাকলে কেমন যে লাগে, সেটা তুমি বোঝো আদৌ? আমি কী করব, বলো? তুমি কি সারাজীবন আমাকে এভাবে ঝুলিয়ে রাখবে? তুমি বলো তো, ভালোবাসা কী? যে জিনিস সবার সামনেই লুকিয়ে রেখে মনে মনে লালন করতে হয়, সেটাই ভালোবাসা? আমি তো অনেক সাধারণ মানুষ, সুতরাং আমি আর দশজন সাধারণ মানুষের মতোই বাঁচতে চাই। তুমি আমাকে এত অসাধারণ কেন মনে করো? যারা দূর থেকে ভালোবেসেও সুখে থাকে, তারা অনেক অনেক উচ্চ পর্যায়ের মানুষ। আমার পক্ষে তেমন কিছু হওয়া কখনও সম্ভব হবে না, আমি তা হতে চাইও না। আমি তোমাকে ভালোবাসি, সুতরাং আমি সবসময়ের জন্য তোমাকে কাছে চাই। কালেভাদ্রে তুমি আমার কাছে আসবে যাবে। তুমি এদিকেও থাকবে, ওদিকেও থাকবে। তুমি তোমার বর্তমান সম্পর্ক থেকেও বেরুবে না, এদিকে আমাকেও ছেড়ে দেবে না। এভাবে জীবন চলে? চললে, কতদিন চলে? এই সম্পর্কের কোনও আগামাথা নাই। আমি কী বলে বোঝাব নিজেকে? কী নিয়ে আছি? এর থেকে তো আগেই ভালো ছিলাম। আমার ভালোবাসার কথা আমি তোমাকে কিছু জানাইনি, তারপরও নিজের কাছে সান্ত্বনা ছিল, তুমি তো এর কিছুই জানো না। সেভাবেও থাকা যায়, কিন্তু এভাবে এখন আমি কোন পথে যাব, বলো? আমার তো মন চাইছে, এখনই মাটি ফাঁক হয়ে যাক, আমি মাটির ভেতরে ঢুকে পড়ি। এমন কষ্ট, এমন অসহায়ত্ব তো আমি এ জীবনে কোনও দিনই ফিল করিনি। আমার এখন মরতে ইচ্ছা করছে। আর তুমি যে বলো, আমি চাকরি পাবো, তারপর কোথায় কোথায় পোস্টিং হবে, আর তুমি সেখানে আসবে যাবে! কবে আমার চাকরি হবে? কবে আমি কই শিফটেড হব! আদৌ কিছু হবে কি না, সেটাই আমি জানি না! এমন ভাসমান অবস্থানে আমাকে রেখে কেন দিচ্ছ তুমি? আমার এত্ত দুশ্চিন্তা ভালো লাগে না। তার থেকে আমি এই মুহূর্তে মরে গেলে সব ঝামেলার হাত থেকে বেঁচে যেতাম। এমনিতেই আমাকে আস্তে আস্তে...ধীরে ধীরে কষ্ট পেয়েই মরতে হবে। তার থেকে যা হবার, তা একবারে হয়ে যাওয়া ভালো। আমি এতটা বছর এসব দেখে আসছি, আমার এখন এসব দেখতে আর ভালো লাগে না। আমি সহ্য করতে পারি না। আমার ইচ্ছে করছে, পৃথিবীর সব কিছু ওলটপালট করে দিতে। আমি তোমার সাথে এভাবে কখনও কথা বলতে চাইনি। কিন্তু আমি আসলেই কিছু সহ্য করতে পারছি না। আমার কোনও কিছুই আর ভালো লাগছে না। আমার কাউকে ভালো লাগছে না। আমার কিচ্ছু চাই না। সরে যাও আমার কাছে থেকে। আমাকে সম্পূর্ণ একা থাকতে দাও। আমার কাউকেই লাগবে না। যা হয় হোক। মরলে মরব। আমার এসব আর কিছু ভালো লাগছে না। আমাকে আমার উপর ছেড়ে দাও। তোমার যা মন চায়, যা খুশি, যা বলার, যা যা করার, করো, বলো; ওতে আমার কিছুই এসে যায় না। আমি বলবই এসব কথা! আমি যদি এভাবে দুশ্চিন্তা করতেই থাকি, আমি তাহলে পাগল হয়ে মরব। খুব জলদিই আমি অসুস্থ হয়ে যাব! তিন। আমি এটা এখন মন থেকেই মেনে নিয়েছি যে আমার যতটা ভাগ্যে আছে, তার একটুও বেশি, সে আমি যতই চেষ্টা করি, পাবো না। আমার কোনও কষ্ট, কোনও অপ্রাপ্তি, কোনও কিছুর জন্যেই আমি আজ থেকে আর কখনও তোমার কাছে অভিযোগ নিয়ে আসব না। আর আমাকে নিয়ে তুমি কখনও নিজেকে অপরাধী ভেবো না। আমি কোনও কারণে কোনও কিছু আমার মনমতো পাচ্ছি না, তার অর্থ, স্রষ্টা চান না যে আমি এর চাইতে বেশি কিছু পাই। আমি মেনে নিয়েছি এটা। মাঝে মাঝে হয়তো আমি ভুলে যাই, ভুলে গিয়ে অনেক কিছু করে বসি, কিন্তু আমি ঠিক হয়ে যাব আস্তেধীরে। আমি তোমার প্রতি নানান সময়ে অসময়ে অনেক অভিযোগ করেছি, অনেক কষ্ট দিয়ে কথা বলেছি। আমি আর কখনও না বুঝে তোমার উপর অযথা এসব দোষ চাপাব না।