ভাবনা: সাতশো বাইশ ............................................................... এক। সারা দিন এ-বাড়ি ও-বাড়ি দস্যিপনা করে সন্ধেশেষে ঘরে ফিরে মায়ের বকুনি খেতাম ছোটোবেলায়। স্কুলে যাবার নাম করে বন্ধুরা মিলে অঞ্জলিদের বাগান থেকে দলবেঁধে আম-পেয়ারা চুরি করে লবণ-মরিচ মিশিয়ে বড়ো তৃপ্তি নিয়ে সেই আম-পেয়ারা খেয়ে ঠিক স্কুলছুটির সময়ে ঘরে ফিরতাম। সকাল থেকে রাত অবধি কানামাছি, লুকোচুরি খেলতে খেলতে বেলা ফুরিয়ে ক্লান্ত হতাম। পাশের পাড়ার শাপলাভরা পুকুরে ইচ্ছেমতো সাঁতার কেটে রাত হলে গায়ে জ্বর বাধিয়ে জ্বরের ঘোরে মায়ের মমতামাখা আদর গিলতে বড়ো ভালো লাগত। ভালো লাগত নদীর পাড়ে বসে বসে বড়শি দিয়ে মাছ ধরতে, ঝিলের জলে ছোটো মাছ ধরে ঘরে ফিরতে। খেয়ালখুশিমতো দৌড়ঝাঁপে পুকুর ঘোলা করতে, কারও গাছের পেয়ারা-চুরি তো কারওবা তেঁতুল-চুরির নিত্য অভিযোগে মায়ের বেদম পিটুনিতে আর কোনও দিনই চুরি না-করার শপথ খেয়ে পরের দিন ফের চুরিতে হাত দিতে ভালো লাগত। বয়সটাই ছিল শপথভাঙার। দুপুর হলে আইসক্রিম আর কটকটির জন্য মায়ের কাছে আটআনা বা একটাকার বায়না ধরতে বড্ড ভালো লাগত। তখন ওই সামান্য টাকাই ছিল অনেক টাকা। পকেটে পাঁচ টাকা থাকার মানেই ছিল, আমি আজ রাজা! জোনাকিভরা পূর্ণিমারাতে জোছনায় ভিজে ভিজে উঠোনে সবাই গোল হয়ে বসে দাদুর যৌবনকালের কিসসা শুনতে শুনতে খোলা আকাশে উদাসী দৃষ্টি ছুড়ে ছুড়ে মনে মনে ভাবতাম, ‘আহা! আমি কবে বড়ো হব? কবে…?’ আজ আমি অনেক বড়ো হয়ে গেছি। সাথে হারিয়ে ফেলেছি শৈশবের সোনামাখা দিনগুলি। রাশি রাশি গাছের ছায়ায় ঘেরা আমার সেই ছোটোবেলার গ্রামে সবুজের মানচিত্র মাড়িয়ে গড়ে উঠেছে ইটপাথরের রাজ্য। দুশো-ওয়াটের এনার্জিবাল্বের তলে চাপা পড়ে গেছে সেই মিটিমিটি জোনাকির আলো। সেই লুকোচুরি, এক্কাদোক্কা, কানামাছি ভোঁ ভোঁ’র মৃত্যু ঘটেছে পাবজি আর নানান বাহারি গেইমের ধাক্কায়। হায়, আমার আস্ত একটা সোনালি শৈশব চাপা পড়ে গেছে আধুনিকতা আর মোবাইল নেটওয়ার্কের পায়ের নিচে পিষ্ট হয়ে! দুই। আপনাকে বলা আমার কথাগুলো আপনি বোঝেন না, তাই না? না আগে, না এখন। মাঝে মাঝে মনে হয়, আপনার সাথে দেখা না হলেই ভালো হতো। সব না হলেও কিছু যদি বুঝতে পারতেন আমার কথা, তবে একটু শান্তি পেতাম। অনেক অনেক কথা বলেছি। ভালো, খারাপ সব রকম বলেছি। কখনও ডিরেক্টলি, কখনওবা ইনডিরেক্টলি। এত কথা আমি কখনও কাউকে বলিনি। ভালোভাবেও নয়, খারাপভাবেও নয়। আফসোস! বোঝাতেই পারলাম না---না আমাকে, না আমার কথাকে। যা-ই হোক, সমস্যা নেই...ঠিক আছে। যা হয়, তা ভালোর জন্যই তো হয়! আমি সত্যিই এখন আর কিছু ভাবি না। এখন আমার সাথে যা হয়, তার সবই এক্সপেকটেড। আনএক্সপেকটেড বলতে এখন আর কিছু মনেই হয় না! জীবনে কিছু কিছু পরিস্থিতির কোনও ব্যাখ্যা হয় না। কিন্তু এই প্রত্যেকটা ব্যাপার এত ঠেকে ঠেকে শিখতে হবে, তা সত্যিই জানতাম না। মাঝে মাঝে কষ্ট হয়, খারাপ লাগে, বিরক্ত লাগে, অসহ্য লাগে, আফসোস হয়, হতাশ লাগে...আাবার মাঝে সাঝে ভালোও লাগে! মনে হয়, জীবনটা অনেক কিছুই তো শেখাল...এখনই! জানি না, সামনে আরও কী কী রয়েছে! একটা দিন গেলে মনে হয়...যাক, একটা দিন কমেছে! মানুষ খুব অদ্ভুত...খুবই...সত্যি! মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যাই! মানুষের থেকে বড়ো বিচিত্র প্রাণী এ পৃথিবীতে আর কিছু হয় না। জীবনে কোনও মিরাকল তো ঘটবে না, সে ভরসাও নেই। তাই জীবনটা যেমন, তেমনভাবেই মানিয়ে চলতে হবে। মানিয়ে নেওয়া আর মেনে নেওয়া এক নয়। মেনে নিতে পারা গেল কি গেল না, সেটার থেকেও বড়ো ব্যাপার হলো---মানিয়ে নিতেই হয়! মানিয়ে নিতে পারার অভিনয় করতে হয়! জীবনকে বুঝতে চাইলে জীবনের চাইতে বড়ো কনটেন্ট আর হয় না! এই যে তুমি আমায় এত বেশি ভালোবাসো ইদানীং, এটা আমাকে যতটা মাতাল করে রাখে, তার চাইতে অনেক বেশি ভয় পাইয়ে দেয়। আমি প্রায়ই ভাবতে থাকি, তোমার ভালোবাসায় ডুবে ডুবে অভ্যস্ত হয়ে যে যাচ্ছি প্রতিদিনই, এই ভালোবাসার অনুভূতিটা যদি তোমার মধ্য থেকে হারিয়ে যায় কখনও, সেদিন আমি বাঁচব আর কী করে! তিন। সময় বদলায়। পরিস্থিতি বদলায়। সম্পর্ক বদলায়। মানুষ বদলায়। সময়ের পরিবর্তনে পরিস্থিতি অনুযায়ী মানুষের প্রতি মানুষের ব্যবহার বদলে যায়, আস্তে আস্তে সম্পর্কও বদলে যায়। তাই না? জানতাম, এমন একটা সময়, এমন একটা দিন, এমন একটা মুহূর্ত আসবে। তবে বিশ্বাস করতে চাইতাম না। শুরুতে কেউ বিশ্বাস করতে চায়ও না, পরে বাধ্য হয়। কষ্ট হতো, এখনও হয়। আগে তবুও খারাপ লাগলে তা প্রকাশ করার অধিকারটুকু ছিল, এখন তো প্রকাশ করাও বারণ। বোঝানো গেলই না শেষমেশ, আমিও বুঝতে পারলাম না। তবে এতটা খারাপভাবে শেষটা না হলেও পারত, বলুন? শেষটাও তো ভালোভাবে হয় অনেকসময়…। থাকবার সময়টা নাহয় ভালো হয়ে রইল না, শেষটা তো ভালোও হতে পারত? হলো না। জানি, কোনও মিরাকল ঘটবে না। তবুও… মাঝে মাঝে জানতে ইচ্ছে করে খুব, জানেন, এখন যেটা হলো, সেটা কনসিকোয়েন্স, মানছি; কিন্তু শুরুটা ওরকমভাবে কেন হলো, যখন শেষটা এরকমই হবার ছিল? আমি যখন যেটা চাইনি, তখনই সেটা হয়েছে---শুরু এবং শেষ, দুটো সময়েই। তবে কারণ বা পরিণতি কখনও এতটা ভয়ংকর হবে, তা জানা ছিল না। জানি, এখনও বোঝানো গেল না---কথাগুলো নয়, কথাগুলোর গুরুত্বটা। না সেদিন বোঝানো গিয়েছিল, না আজ। কেননা, সেদিন বোঝানো গেলে আজ এ দিনটা আসত না, আর আজ বোঝানো গেলে এর পরবর্তী উত্তরে আমার মরে-যাওয়া হাসিটা বরাদ্দকৃত আর থাকত না। বোঝানো গেল না কিছুই। না তো সেদিন, না তো আজও। জীবনটা সাদা কাগজ হলে খুব ভালো হতো, তাই না? পেনসিল দিয়ে যা ইচ্ছে লিখে নিতাম। আর প্রয়োজন হলে ইরেজার দিয়ে মুছে ফেলতে পারতাম। খুব ভালো হতো। অভ্যেসের দাসত্ব থেকে বাঁচতে তো পারতাম! নিয়তির বলি হবার হাত থেকে বাঁচতে পারতাম! যা-ই হোক, কাউকে ভেবে কিংবা কাউকে কথা শোনানোর জন্য নয়, এমনিই বললাম এসব। হ্যাঁ, এমনিই… ভাবনা: সাতশো তেইশ ............................................................... এক। একপাক্ষিক, কখনওবা দু-পাক্ষিক ভালোবাসায়ও, ভালোবাসা বাড়তে বাড়তে একটা নির্দিষ্ট মাত্রা পেরোলে, সেই ভালোবাসাটা বিষাক্ত হয়ে যায়...। এই বিষাক্ত ভালোবাসা---যে বাসে আর যাকে বাসা হয়---দু-পক্ষের জীবনকেই যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ করে তোলে! মানুষ মাঝে মাঝে এমন কাউকে ভালোবাসে, যাকে প্রচণ্ড ভালোবাসে বলে, নিজেকে তীব্র ঘৃণাও করতে ইচ্ছে হয়! জীবন বড়ো অদ্ভুত...নিজেকে ঘৃণা করার বিনিময়ে হলেও, ভালোবাসাকে সে ভালোবেসে চলে...। দুই। যে লোক একইসাথে গরিব ও নির্বোধ, সে লোক গোঁয়ার হলে তাকে ঠিক মানায় না। গোঁয়ার্তুমি ব্যাপারটা মানায় দুই ধরনের লোককে---ধনী ও মেধাবী। তিন। মায়া বড়ো কঠিন জিনিস। এমনকি ভালোবাসার চাইতেও মায়া মানুষকে বেশি কাছে টানে! প্রতিদিন রাস্তার মোড়ে, স্কুলগেইটের সামনে বসে আচার কিংবা আইসক্রিম বিক্রি-করা মামাটা হঠাৎ একদিনও না এলে বুকের মধ্যে কেমন জানি ধক্ করে ওঠে! প্রতিদিন চলতি পথে দেখা-হওয়া বাসার গেইটের সামনে যে কুকুরটি অবহেলায় বড়ো হচ্ছে চোখের সামনে, যাকে কখনও, আদর দেওয়া দূরে থাক, ছুঁয়েও দেখিনি, তার হঠাৎ মৃত্যুতে মনটা কেমন জানি আনচান করে ওঠে! দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করে আসা প্রিয় চায়ের কাপ কিংবা কফির মগটা ভেঙে গেলে টুকরোগুলো ফেলে দেবার সময় মনটা কেমন জানি কেঁদে ওঠেই! ফুলদানিতে শুকিয়ে-মরা গাছটার জন্যও কখনও সখনও বড়ো মায়া লাগে...। ভালোবাসতে এসে বার বার অবহেলিত-হওয়া যে মানুষটিকে কখনও ভালোইবাসতে পারিনি, তার জন্যও বড্ড মায়ায় মাঝরাতে বুকের ভেতরটা হু হু করে ডুকরে কেঁদে উঠবে...। সারাটি জীবন একসাথে পথ চলবে বলে কথা দিয়ে কথা-না-রাখা, অন্য কারুর হয়ে-যাওয়া প্রিয় মানুষটির জন্য কখনওবা তীব্র যন্ত্রণায় বুকটা ফেটে যাবে...! এই মায়া সত্যিই বড়ো কঠিন জিনিস। এমনকি ভালোবাসার চাইতেও মায়া মানুষকে অনেক বেশিই আটকে ফেলে! কখনও কখনও দু-দিনের দু-কথার মানুষটিকেও খুব আপন মনে হবে। মুখ ফুটে যাকে কখনওই 'ভালোবাসি' কথাটি বলতে পারিনি, তার জন্যও কোনও এক ভরা পূর্ণিমারাতে বুক ধুকপুক ধুকপুক করবে আর করতেই থাকবে...। মানুষ এই মায়ার বশে কোন পথে যে ঠায় হেঁটে চলে যায়, তা সে নিজেও জানে না। যেতে যেতে এক বারও পেছন ফিরে তাকায় না পর্যন্ত! শুধু এই মায়ার কারণে ভুল জিনিসকেও বুকের মধ্যে বেঁধে রাখতে কী যে ইচ্ছে করে...মানুষ বড়ো বিচিত্র প্রাণী। সে কখনও সে পথে হাঁটে না, যে পথটি তার জন্য মায়াহীনতার ইশারা দেয় অবিরত---এমনকি সে পথ তার জন্য সঠিক পথ হলেও! চার। আমাকে রাখবিও না, যাবার পারমিশনও দিবি না। সময় হলে একজন মেয়ের চিন্তাধারা নিয়ে আমার জায়গায় দাঁড়িয়ে ভাবিস, আমি কেন এমন করি। এত কাঁদাস আমাকে, মারিসও তো না। আর আমিও ভালোই, মরিও না। শোন না রে! ভালোবাসি তো। একবার আয় না। কীভাবে বললে আসবি? তোকে বড়ো দেখতে ইচ্ছে করে! জীবনে চলতে গেলে কত কিছুই তো ইচ্ছার বিরুদ্ধে করতে হয়। কোনও সম্পর্ক থেকে না হোক, তুই মানুষ হিসেবে মানুষকে দে না এই সামান্য একটা উপহার! আমাকে একটু পাইয়ে দিলে তোর তো ক্ষতি হবে না। সময় তো কতভাবেই নষ্ট হয়। আচ্ছা যা, সময় বাঁচিয়েই রাখ। আমাকে অবহেলা করলে আরাম লাগে খুব? শান্তি হয় মনে? তাহলে ঠিক আছে। তুই তাহলে প্রতিদিনের মতোই অবহেলা করে যা, আর শান্তি পেতে থাক। এই যে আমি ছটফট করি, আর বাচ্চাদের মতন কাঁদতে থাকি, এটা তোকে হাসায়? আমাকেও হাসায়। আর অবহেলা করতে খুব মজা নিশ্চয়ই? করে যা। আমিও দেখি, কত লাথি খেতে পারি। লাথি খেলে নাকি মানুষ মরে না, শুনেছি। চেষ্টা করে দেখি কী হয়। আমি নিজে এসে লাথি চেয়ে নিয়ে খাবো, যতদিন মরে না যাচ্ছি। তুই ভালো থাক, আমিও খুশি হব। তুই শান্তি পেলে আমিও শান্তিতে থাকব। তোর যদি মেসেজ পড়ে হাসি পায়, তবে হাসিস, আর এদিক থেকে আমিও হাসব। তুই কিছু নিয়ে মন খারাপ করিস না। তুই শুধু লাথি কেন, থুথু কিংবা বমিও যদি আমার উপর করতে চাস তো করে দিস। আমি তো ভালোবাসি, তাই আমি চাইলেই চলে যেতে পারি না। দুনিয়ার সব নোংরা জিনিসই আমার প্রাপ্য। সরি, তোর কাছে সময় চেয়েছি। ভুল হয়েছে। আমার লাগবে না কিছুই। কয়েক মাস আগে যে চার ঘণ্টার একজাম দিয়েছি, ওই সময়েও কষ্ট হয়েছে। খুবই অস্থির লাগে। যেখানে চার ঘণ্টাই স্থির হয়ে একজাম দিতে পারি না, সেখানে আমি সতেরো মাস কাটিয়ে দিয়েছি! কেমন লাগে, বুঝিস? এরকম অবস্থায় কেমন লাগে, তোর তো সেটা অজানা কিছু না। ভালোবাসি বলেই তো চাই। কত বার কতভাবে বের করে দিলি আমাকে, সে হিসেব আছে? অগনিত! তবুও চাই। কাকে বলব এসব? খুব কান্না পায় এসব লেখার সময়। কী ছোট্ট একটা জিনিসের জন্য আমি কেমন করে যাচ্ছি! যাকে ভালোবাসি না, তার কাছে আমি ভালোবাসা চাইতে পারব না। এটা ক্রেডিট না হয়তো, এটা আমার সীমাবদ্ধতা। সতেরো মাসে কত দিন হয়, জানিস তো? আসবি না তবুও, তাই না? এই ভালোবাসি ভালোবাসি করতে করতে আমি এটার ওজনই কমিয়ে ফেলেছি। তবুও, শান্তি পাই বলে। পাখি রে, তোকে পাখি ডাকার আগে আমি কিচ্ছু ভাবিনি। ভাবলে এমন ভয়ংকর ডাকটার শুরুই করতাম না! পাখি ডাকলেই যে উড়ে যাবি, এটা মাথায়ই আসেনি! এই কথা আবার আগের কথাগুলোর সাথে গুলিয়ে ফেলিস না যেন, সবাই তা-ই করে। তোর হাসি পাক, বিরক্ত লাগুক, অসহ্য লাগুক, বাড়াবাড়ি লাগুক, ন্যাকামি মনে হোক, আমাকে ফালতু মনে হোক, যা ইচ্ছা হোক, আমি চাই, সবসময় যা-ই কথা বলি, এই বাক্যটাই হোক আমার মেসেজের শেষ কথা---আমার টিয়াপাখিটাকে আমি বড্ড ভালোবাসি! পাঁচ। একটা সম্পর্কে ভালোবাসার সাথে সাথে ভালো একটা বোঝাপড়া অবশ্যই থাকা খুবই প্রয়োজন। এই পৃথিবীতে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসার মানুষ পাওয়া যেমনি কঠিন, তেমনি একজন বোঝার মানুষ পাওয়াও অনেক কঠিন। একজন মানুষকে আরেকজন মানুষের পক্ষে পুরোপুরিভাবে বোঝাটা বাস্তবতায় সম্ভব নয়, মানছি। মুখে বলতে না-পারা কথা বোঝানো যায় না, এটা ঠিক; আবার মুখ ফুটে বলা কথাও কি সবসময় বোঝানো যায়? ভালো-থাকার জন্য যদি ভালোবাসার মানুষগুলো, যাদের প্রতি ভালোবাসাটা দ্বিপাক্ষিক হওয়া সত্ত্বেও, তাদের সাথে বিবাদে জড়াতে হয় শুধু এটুকু বোঝাতে যে---আমি একটু ভালোবেসে ভালো থাকতে চাই...আমি আমার মতো করে বাঁচতে চাই...আর কিছু না হোক, আমার স্রেফ বেঁচে-থাকার জন্য হলেও আমার ভালো-থাকাটা খুব জরুরি, আর তার জন্য তোমাদের আমাকে বোঝাটা খুব জরুরি---তবে তা মেনে নেওয়াটা সহজ নয়। আফসোস একটাই---এই পুরো পৃথিবীতে আমাকে ভালোবাসার মানুষ হয়তো পেয়েছি কিছু, কিন্তু আমাকে পুরোপুরিই আমার মতো করে বোঝার মানুষ একটাও পেলাম না। সত্যিই, সম্পর্কে আন্ডারস্ট্যান্ডিং থাকাটা খুব দরকার, তা সেটা যেরকম সম্পর্কই হোক না কেন। বাবার কিংবা মায়ের সাথে সন্তানের, শিক্ষকের সাথে শিক্ষার্থীর, প্রেমিকের সাথে প্রেমিকার, ভাইয়ের সাথে বোনের, বন্ধুর সাথে বন্ধুর, স্বামীর সাথে স্ত্রীর, আত্মীয়ের সাথে আত্মীয়ের... সমাজের সাথে বাস্তবতার, নৈতিকতার, ব্যক্তিত্বের, সুখের, দুঃখের এবং জীবনের... সংস্কারের সাথে মানবিকতার, ভালোত্বের, খুশি-থাকার... এমনকি আত্মার সাথে শরীরের--- সব রকমের সম্পর্কেই আন্ডারস্ট্যান্ডিং থাকাটা খুব খুব খুব জরুরি। সম্পর্কে বোঝাপড়া না থাকলে, অপরিসীম ভালোবাসাও একসময় অপরাধ হয়ে যায়, আর বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। এর ভার আসলেই অনেক! সারাজীবন এর সাথে অন্তর্দ্বন্দ্বে থেকে বাঁচতে হলে, বেঁচে-থাকাটাই সত্যিই একসময় বড্ড বেশিই শাস্তি বলে মনে হয়! ভাবনা: সাতশো চব্বিশ ............................................................... এক। আজ নাহয় কাল তুই কাউকে-না-কাউকে ঠিকই পেয়ে যাবি, দেখিস। আমার তো এতদিন তুই-ই ছিলি শুধু। তখন আমার বুক খালি হয়ে যাবে। আমার জিনিস আমি দিয়ে দিলাম, যাকে দিলাম, তাকে বলে দিস ইনডিরেক্টলি, তুই আমার খুব যত্নের, আদরের, সম্মানের মানুষ। সে যেন এটার মূল্য বোঝে। নাহলে তোদের দুজনকেই আমি মেরে ফেলব। আমার পুরো দেড় বছরের সংসার! হাসি পেল শুনে? পেলে পাক, সমস্যা নেই। একটু একটু করে কত কিছুই তো হয়েছিল আমার। তোর মনে আছে রে? রাগ, অভিমান, ভালোবাসা, আদর, আহ্লাদ, পাগলামো করা, বিরক্ত করা, হাসি ঠাট্টা, কত কত অবহেলা, কত রাতের কান্না, কতশত রাতে বিশাল মেসেজ পাঠিয়ে কান্নাকাটি করে সকাল পর্যন্ত উত্তরের অপেক্ষায় জেগে থাকা, কত বকা খাবার পর শপথ ভেঙে আবার নক করা, আমায় আর দেখতে পাবি না ভেবে বাসার জামা পরেই রাত এগারোটায় আমার বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকা, আমার কান্না, তোর কান্না...আরও কত কিছু। তুই প্রথম দিকে একবার না বলে কুমিল্লায় চলে গেলি, ফেইসবুকে আর আসিস না ঘণ্টার পর ঘণ্টা, ফোনও ধরিস না, আমি যেন মরে যাচ্ছিলাম চিন্তায়। তারপর রাত জেগে আমাদের কথা বলা, তোর এটা সেটা বলে আমাকে রাগিয়ে দেয়া, ভোররাত অবধি টেনে নিয়ে চলা কত যে স্মৃতি! প্রথম দিকে রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই তোর 'শুভ সকাল, ভালোবাসি..' লেখা মেসেজ, কত অনুভূতি নিয়ে সিঁদুর-পলা পরা, শাঁখার জন্য তোর বকা খাওয়া, তোকে প্রথম তুই করে বলা, আবার এই তো সেদিন প্রথম তুমি বলা, কখনওবা আপনি বলা, যখন যা ইচ্ছা তা-ই বলা...এগুলো মনে পড়ছে। শুধু তোকে দেবার উদ্দেশ্যেই ছবি তোলা, তোকে দেখানোর জন্যই শাড়ি পরার ওই দিনগুলো খুব মনে পড়ছে। মন খুব খারাপ বা খুব ভালো থাকলেই আগে তোকে মেসেজ দেওয়া, তোকে বুড়া বুড়া বলে খ্যাপানো,...তোকে প্রথম পাখি ডাকা, ময়না ডাকা, হাতির বাচ্চা বলে ডাকা, এই প্রত্যেকটি ডাকেরই আমার কাছে আলাদা আলাদা অর্থ আছে। সবই মনে পড়ে যাচ্ছে বার বার। আমার সংসারটা ভেঙে গেল রে! অবশ্য, এটা ভাঙারই ছিল। কল্পনার সংসার দিয়ে কী-ইবা হয়? শুধু আমিই জানি কী হয়! আমার কাছে তো এসবের কোনও প্রমাণ নেই। আর প্রমাণ ছাড়া বাস্তব দুনিয়াতে কিছুই হয় না। সব মেনে নেবো তোর সুখের জন্য। তুই সুখী হ। খুব খুব সুখী হতে হবে তোকে, ভালো থাকতে হবে, শান্তিতে বাঁচতে হবে। আর হ্যাঁ, তোর কাছে, আমার এই দু-তিনটে ফ্রেন্ডের কাছে আমি একটা স্টুপিড, মাথাখারাপ মহিলা, আমি সব মেনে নিচ্ছি। তোদের কথাই সত্যি যে আমার কোনও কাজ নেই, কোনও এইম নেই, কোনও শেইম নেই। এটাই ধরে নিস। সব কিছুর পরও, আমি তোকে ভালোবাসি। হাজার বার বললেও এটা বলার তৃষ্ণা মিটবে না আমার। তুই সময় বা ইচ্ছের অভাবে যে প্রার্থনাটা করতে পারিস না, সেই প্রার্থনা ঈশ্বরের কাছে আমি করব। তুই আমার জন্য একফোঁটা অশ্রু ফেলেছিস, তার বিনিময়ে আমি তোর জন্য আমৃত্যু কাঁদব। আমার হাতির বাচ্চা, তুই কিচ্ছু নিয়ে ভাবিস না, আমাকে নিয়েও না। সব ঠিক হয়ে যাবে। দুই। এই যে প্রেমিক, শুনছ? তোমার অভিমানী প্রেমিকাকে নিয়ে তোমার কতশত অভিযোগ হয়, তাই না, বলো? আমি বলি কী, ওই বেহায়া মেয়েটাকে যেতে দিয়ে দাও, আমার তরফ থেকে ওই ধরনের মেয়েদের জন্য একটাই অনুভূতি বরাদ্দ থাকে---হায় রে মেয়েটা, আহা রে, আহা রে! আর, এই যে প্রেমিকপুরুষ, আগেভাগেই তবে তল্পিতল্পা গুছিয়ে, যাবার একটা ঠিকানা জোগাড় করে রেখো; চলে গেলে সে, পায়ের তলার মাটিটুকুও সত্যিই সরে যেতে পারে! তিন। - তোমার প্রিয় মানুষটা তোমায় কী এমন দামি জিনিস উপহার দিয়েছে, যা নিয়ে তুমি কথা বলতে পারবে একনাগাড়ে সারাটি বেলা? - আমার প্রিয় মানুষটির কাছ থেকে আমার পাওয়া সবচাইতে দামি জিনিসটি আর কিছু নয়, তিনবেলা ঘড়ি ধরে ধরে প্রতিনিয়তই পাওয়া হেলা অবহেলা! চার। কিছু মানুষ আছে, যাদের খুব তাড়াতাড়ি মানুষের সাথে ইমোশনাল অ্যাটাচমেন্ট হয়ে যায়। সেটা যে-কোনও সম্পর্কের বা অসম্পর্কের যে-কেউ হতে পারে। এই যেমন একজন রিকশাওয়ালা, কোনও শিক্ষক, কিংবা কোনও প্রতিবেশী। এই জিনিসগুলো ওদের খুব ক্ষতি করে। এমন কিছু মায়ার বাঁধন, আর একতরফা কাউকে ভালোবেসে যাওয়াটা ওদের প্রতিদিনই একটু একটু করে শেষ করে দেয়। পাঁচ। একটা কথা বলি? জানেন, মানুষকে না সব কিছুই প্রমাণ করতে হয়! মানে যার সাথে যেই সম্পর্কে আছি, সেই সম্পর্কে আমিই সেরা, এটার প্রমাণ দিয়ে দিয়ে টিকে থাকতে হয়। অথচ সবসময় তো আর চাইলেও সেরাটা দেওয়া যায় না। দিতে গিয়ে যদি একফোঁটাও কখনও কম হয়ে যায়, সাথে সাথে বুঝিয়ে দেওয়া হয় যে আমি ওই জায়গায় থাকার আর উপযুক্ত নই, ফলে আমাকে সরে যেতে হবে। কিন্তু দিতে পারলাম না বলে যে আমার ও কষ্ট হচ্ছে, এটা আর কোনওভাবেই বোঝানো যায় না; বা যা দিতে পারিনি, তা পরে কড়ায় গণ্ডায় বুঝিয়ে দেবো, এটা বলেও লাভ হয় না। এসব দেখলে আমার খুবই অবাক লাগে। একটা সম্পর্কের নাম শুধু শুধুই ভালোবাসা দিয়ে রাখি, অথচ এটা একটা গিভ-অ্যান্ড-টেইক যোগাযোগ ছাড়া আর কিছুই না। সবচেয়ে বড়ো যে সম্পর্ক, সেখানেও একই ঘটনা! এরকম করে ভাবতেও কেমন যেন অসহায় লাগে! যা-ই হোক, আপনাকে যে আমি আবেগের কথা বলে বলে প্রায়ই হাসাই, আপনি আমাকে কখনও কখনও একটা শুকনো ধন্যবাদও তো দিতে পারেন! বাই দ্য ওয়ে, আপনার কি মনে হয় না, দুনিয়াতে ভালোবাসা বলে নারী-পুরুষের মধ্যে কিছু যে আছে? ছয়। আপনি একটা কথার উত্তর দেবেন? ইশারা না, সরাসরি উত্তর। যেহেতু আপনি চান না যে আমি থাকি, তাহলে যেতে দিচ্ছেন না কেন আমাকে? বিশ্বাস করেন, আমি এক বছরের বেশি সময় ধরে ঠিকভাবে ঘুমাই না। আমার অনেক ভয় লাগে। আমি খুব ক্লান্ত। কখন যে আমি আমার নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি আপনাকে দিয়ে রেখেছি, তা আমি নিজেও জানি না। আপনাকে তো সেই কবেই মুক্ত করে দিয়েছি আমি, আপনি চাওয়ার সাথে সাথেই, হয়তো চাওয়ারও আগে। কিন্তু আমার মুক্তিটা মিলছে না! আসলে প্রেম-ভালোবাসা থেকে সরে দাঁড়ানো খুব কঠিন কিছু না। কিন্তু এখানে তো ঘটনা অন্য কিছু। আপনাকে যদি এটা বলে বোঝাতে পারতাম, তাহলে আপনি ঠিকই বুঝতে পারতেন, ঠিক বুঝতেন কেন এমন করি। বোঝানো তো দূরে থাক, আমি বলতেও পারব না কিছু। আপনি আমাকে থাকতে দেবেন না, এটা খুব ভালো করেই আমি জানি। ভদ্রতা আমার জন্য না রে, ভাই। আপনি বলেন চলে যেতে, আমি এখনি বাসায় গিয়ে ঘুমাব। কয়েক দিন একটানা ঘুমাব। অবহেলার খোরাকও পূর্ণ হয়ে গেছে আমার। আর যদি দুনিয়ার কেউ আমাকে একবিন্দু পরিমাণ অবহেলা না-ও করে, তবুও হিসেব মিলবে, সেটা আমার জন্য অতিরিক্ত পাওয়া হবে না, ঠিক হিসেবই হবে। কোনও সুস্থ মানুষ এভাবে কথা বলতে পারে না, এত লিখতে কষ্ট হয় আমার এখন, হাত কাঁপে। আমাকে বাঁচান। আল্লাহর কাছে দোয়া করব (কারণ আমি এটুকুই করতে পারব)। আমি যাই? শোনো, আমি যে তোমাকে ভালোবাসি, তুমি এটা বোঝো না? তোমাকে তুমি করে বলি একটু? রাগ লাগবে শুনতে? যদি চলে যেতে না-ই বলতে পারো, তাহলে থাকতে দাও। আমি থাকি? তোমার সাধ্যের বাইরে গিয়ে আমি কিছুই চাইব না। আমি তোমাকে বিরক্ত করি। আমার আর কী কাজ? ওদের পড়াচ্ছিলাম। বেয়াদবগুলা এখন পড়া বাদ দিয়ে গান গাইছে। তাই আমিও ভাবলাম, তোমাকে একটু লিখি। ভাবনা: সাতশো পঁচিশ ............................................................... এক। একজন হুমায়ূন ফরীদি। মানুষটা দারুণ না? কিছু চমৎকার ফিলসফিক্যাল একদমই বাস্তব কথা বলে গিয়েছেন। অনেক দারুণভাবে লাইফটাকে এক্সপেরিয়েন্স করেছেন। অদ্ভুত রকমের মানুষ এঁরা, তাই না! অবাক লাগে মাঝে মাঝে। তবে একটা কথা কী, কোনও কিছুতেই আটকে থাকেননি ওঁরা। তাই পেরেছেন ওরকম করে জীবনকে এনজয় করতে। সুবর্ণা মুস্তাফাকে ছেড়েও থাকতে পেরেছিলেন এত ভালোবাসার পরেও...এই কঠিন কাজটা করতে পেরেছিলেন, আর অন্য অনেক কাজ তো করতে পারতেনই। যতদূর জানি, তিনি সুবর্ণা মুস্তাফাকে অনেক ভালোবাসতেন। একসাথে ছিলেন না তাঁরা, কিন্তু ভালোবাসাটা অটুট ছিল ঠিকই। ভালোবাসা টিকিয়ে রাখতে একসাথে থাকতে হয় না। কপালে ভালোবাসা লেখা না থাকলে একসাথে থাকলেও হয় না। মন বড়ো অদ্ভুত জিনিস। এটার উপর কারও নিয়ন্ত্রণ থাকে না। কেউ নিয়ন্ত্রণে রাখছেন, হয়তো আদতে রাখছেনই না, তবে ভালো করে অভিনয়ে ওরকমই ফুটিয়ে তুলতে পারছেন। তো কেউবা তা-ও পারেন না। কেউ স্বীকার করেন এটা, কেউ আবার করেনই না। বেসিক্যালি ব্যাপারটি একই। আসলে, আটকে...জোর করে না থাকা যায়...না রাখা যায়! উচিতও নয়। একসাথে জোর করে থেকে বা পরস্পরকে রেখে সম্পর্ক খারাপ না করে, অনেক ভালো হচ্ছে তাকে তার মতো ছেড়ে দেওয়া। যে থাকার নয়, সে থাকে না। যার থাকার কথা, সে চাইলেও কখনও ছেড়ে যায় না। এটাই আসল ব্যাপার। যে যার মতো করে ভালো থাকতে পারে তো থাকুক না...কারও কোনও ক্ষতি না করে। এই লাইফের চাইতে বড়ো টিউটর আর কিছু হয় না! কত রকম কিছু যে শিখিয়ে দেয়...পরিস্থিতিই মানুষকে সব শিখিয়ে দেয়। ওয়েস্টার্ন কালচারে...মেইন ফোকাসটাই লাইফ থাকে, লাইফকে বিউটিফুল করার জন্য, ওরকম করে ভাবার জন্য ওরা নানান রুলস অ্যান্ড রেগুলেশনস বানায়। আর আমরা? করি ঠিক তার উলটোটা! রুলস অ্যান্ড রেগুলেশনস-এর জন্য আমাদের লাইফটাকে প্রিপেয়ার করি! লাইফটা নয়, বরং সংস্কারটাই আমাদের ফোকাস। তাই যারা এটাকে ছাপিয়ে যেতে পেরেছে, তাদেরকে অনেকেই অ্যাক্সেপ্ট করতে না পারলেও, কেউ থামিয়ে রাখতে পারেনি। নিজের মনের লিমিটেশনগুলো ক্রস করাটা এত সহজ হয় না সবসময়। এটাই মেইন প্রবলেম। খড়কুটো আঁকড়ে বেঁচে থাকার নিয়মিত বা প্রতিদিনকার জীবনকে সহজেই নদীর স্রোতে ভাসিয়ে দিতে বললেই, তা দেওয়া যায় না। কখনও হয় বাস্তবতা, নয়তো কখনও পরিস্থিতি, নয়তো কখনও নিজের বা কাছের মানুষের কপটতা সামনে এসে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। এটাই সংকীর্ণতা। যে যেই পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় না, সে সেই পরিস্থিতির গুরুত্বটা কখনওই বোঝে না। অন্যের ক্ষেত্রে হয় বোঝার ভান করে, নয়তো মিথ্যে কথা বলে, নয়তো সহানুভূতি দেখায়। খুব বেশি হলে ধারণা করতে পারে, কিন্তু ওই পরিস্থিতির শিকার মানুষটার মতো করে কখনওই সবটা বুঝতে পারে না। সব কিছুর ব্যাখ্যা সবসময় হয় না। কাউকে হয়তো বোঝানোও যায় না। এমনকি কখনও কখনও, নিজেকেও বোঝানো যায় না। লাইফ ইজ ফুল অব আনএক্সপেক্টেড গিফটস...রাইট? এতটা আনসারটেইনিটি, এত এত সারপ্রাইজেস, এত আনথিংকেবল সিচুয়েশনস...ভাবতেও অদ্ভুত লাগে মাঝে সাঝে! কখন কার সাথে কী হয়, কিছুই বলা যায় না..এক একটা মোমেন্ট এক একটা মোমেন্ট থেকে আলাদা। প্রতিটি মুহূর্ত কিছু-না-কিছু ভিন্ন রকমের অভিজ্ঞতায় অভ্যস্ত করে! এখানে অতীত আর বর্তমান মিলে যে সাঁকোটা বানায়, সেই সাঁকো ধরেই ভবিষ্যতের দিকে হেঁটে যেতে হয়! দুই। তোমার চোখে চুমু এঁকে দিচ্ছি অনবরত। তুমি কেঁদো না আর। আমি মাত্রই কান্নাকাটি শেষ করে এলাম। তোমার কান্নার দায়ভার আমাকে দিয়ে দাও। আমি বেশ ভালোই কাঁদতে পারি। আমার খুব ঠান্ডা লাগে। তুমি ধরে থাকো আমার শরীর, তোমার শরীর তো গরমই থাকে, জানি। আমি কল্পনা করলেই তোমার কাছে চলে যেতে পারি। তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমোতে আমার খুবই ভালো লাগে। অনেক শান্তি সেখানে। আমি আমার পা তোমার পায়ের উপরে রাখব। সুড়সুড়ি দেবো, হি হি হি। তুমি আমাকে চুমু দাও কপালে। আদর করো আমাকে, অনেক অনেক আদর করো। এরকম করে আর কাউকেই কক্ষনো আদর কোরো না কিন্তু খবরদার! মেরেই ফেলব তাহলে। এই যে এত কিছু বলছি, সকালে উঠে মেসেজ দেখামাত্রই আবার বকতে শুরু করে দিয়ো না যেন! এসব আমি এমনিতেই কল্পনা করছি। ঘুম আসে না তো, তাই। কী আর করব? তোমার কোলে মাথা রাখব, কাঁধে মাথা রাখব। বুকে, পিঠে, হাতে, গলায় আলতো করে কামড় দেবো। তোমার ঠোঁটজোড়া খুব প্রিয় আমার...! ওগুলো আমি অনেক সময় ধরে আমার মুখের ভেতরে নিয়ে বসে থাকব, বের করব না তুমি বললেও। হি হি হি। কামড় দিয়ে ফুলিয়ে ফেলব একদম! তোমার চোখের পাপড়ি আমার চোখের পাতার উপর রাখো। পাপড়ি দিয়ে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দাও বার বারই...আমার চোখের পাতা। তুমি আমায় স্বর্গে নিয়ে যাও। শোনো, দেখা না-ইবা হলো, তুমি মেসেজেই আমাকে এত ভালোবেসে দেবে, আমার যেন সারাজীবনই আর ভালোবাসার প্রয়োজন না পড়ে! ন্যাকামো লাগছে শুনতে? লাগুক! তোমার সাথে ন্যাকামো করব না তো কার সাথে করব? আমি পাগল, তাতে কী? অন্য কারও সাথে তো পাগলামো করি না। আমি পাগল আর ছাগল, যা-ই থাকি, তুমি আমাকে রেখে যেতে পারবে না। আমি যেতে দেবোই না কোথাও! তিন। অফলাইনে থাকো কেন তুমি? ভালো লাগে না। তুমি চাকরি করো আর লেখালেখিও তো করো, তুমি তো ব্যস্তই থাকবে। শোনো, আমার না তোমার জন্য মায়া লাগে। কান্না আসে খালি। তোমার জন্য কি মায়া করার কিছু আছে? কিংবা মায়া করার মানুষেরই কি অভাব আছে? আমার মায়া কেন হয়? জানো, আমি না অনেক অনেক বার চেষ্টা করেছি চলে যেতে। যখনই নক দিতে ইচ্ছা করত, আমি নিজেকে শাস্তি দিতাম। কালকে রাতেও আমি হাতের উপর গরম চা ঢেলে ফেলেছি ইচ্ছা করে। কিছু দিন আগে একবার পড়ে গিয়ে পেটের কাছে কেটে গিয়েছিল কয়েক জায়গায়। আমি ওখানে লবণ আর মরিচের গুঁড়ো মেখে দিয়েছিলাম। অনেক জ্বালাপোড়া করেছে, কিন্তু তোমার সাথে কথা না বললে তো আমার আরও বেশি জ্বলে। কলেজের প্রোগ্রামে এক মেয়ে হাইহিল পড়ে ভুলে আমার পায়ের উপর পা রেখে দাঁড়িয়ে ছিল, আমি সরাতে বলিনি ইচ্ছে করেই। রক্ত বের হয়েছিল অনেক। ওটা সত্যিই খুব বেশি পেইনফুল ছিল। আমি সহ্য করেছি আমার সহ্যক্ষমতা দেখার জন্য। এসব কথা করুণা পাবার জন্য বলছি না। বলতে চাইছি যে আমি তো সব ভাবেই নিজেকে শারীরিক আর মানসিক যন্ত্রণা দিয়েছি যেন আর এদিকে না ফিরি। তাহলে কেন আমি পারছি না, তা বলতে পারো? আমার সাইকিয়াট্রিস্টও আমাকে নিয়ে আশা ছেড়ে দিয়েছেন। আমার না খুব পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করে এমন জায়গায়, যেখানে গেলে তোমার সাথে কথা বলার আর কোনও সুযোগ থাকবে না, আমি আর তোমাকে দেখতে পাবো না স্বপ্নেও, ধরতেও পাবো না। বিশ্বাস করো, আমি এটা বলার জন্য বলছি না, সত্যি বলছি। সত্যিই, তোমাকে যন্ত্রণা দিলে আমার কষ্ট হয়। আমি যদি ইচ্ছা করে বা ভুলেও তোমাকে একটু খোঁচা দিয়ে কথা বলে ফেলি, তাহলে আমারই আগে কষ্ট হয়। তাই খুব ভেবে কথা বলি। তোমাকে কেন থাকতে বলি, জানো? আমি খুব ভয় পাই। আল্লাহর কাছে শুধু একটু ঘুম চাই। আমি টানা এক ঘণ্টাও ঠিকভাবে ঘুমাতে পারি না, ভয় পাই। আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি, তাই না? তুমি সব বুঝতে পারছ, তাই না? ভাবনা: সাতশো ছাব্বিশ ............................................................... এক। আপনি আমার সাথে থাকবেন? আমাদের মধ্যে তো কোনও কমিটমেন্ট নাই, ছিলও না কখনও। শুধু নামেমাত্র আপনি আমাকে থাকতে দেবেন? আমি যা চাইব, তার সবই মুখে মুখে, ওগুলো পেতে চাইব না সত্যি সত্যি। যখন চলে যাবার, আমি চলে যাব, আপনাকে কিছুই বলতে হবে না। আপনাকে প্রতিদিন মেসেজও দেবো না, ফোন তো কখনওই করব না। আর দেখা করতে চাইব হয়তো, তা-ও মুখে মুখেই। আপনার সব কথাই শুনব আমি। বকা দিলেও কিছু বলব না। খালি একটু ঘ্যানরঘ্যানর করব, এই আরকি। আমি থাকি? থেকে যাই? মোবাইলের এপাশেই থাকব শুধু। থাকতে দেবেন আমাকে? আপনি খেতে বসার সময় আশেপাশের বেড়ালটাকে কখনও খেয়াল করেছেন? শুধু মিউমিউ করতে পারে, কথা বলতে পারে না। কত বার ওকে বিদেয় করা হয়, অনেকসময় বেশি মিউমিউ করার অপরাধে বেড়াল মারও খায়। খাওয়া শেষ হওয়া অবধি অপেক্ষা করেও যদি কিছু পায়, সে আশায় ঠায় বসে থাকে! আচ্ছা, বঙ্কিমচন্দ্রের 'বিড়াল' গল্পটা পড়েছেন? কী একটা মায়া লাগে না ওটা পড়লে? ওরা মানুষের ফেলে দেওয়া খাবারের দিকেই চেয়ে থাকে, অথচ মানুষ খাবার ফেলে দেয়, তবুও বেড়ালকে দেয় না। ওরা তো তাকিয়ে থাকে শুধু, বলতে পারে না কিছুই। পরে ক্ষুধার জ্বালায় চুরি করে। কতদিনই-বা সহ্য করা যায়? আমিও তেমন তাকিয়েই আছি। আমি আপনার পাতের অবশিষ্টটুকুই চাইছি। বাড়তি কিছু না। ওটুকু তো ফেলেই দেবেন! তাহলে আমাকে দেওয়া যায় না? ওতে যদি কারও পেট ভরে, আপনি তবুও ফেলেই দেবেন? আমি নিজেকে বেড়ালের চেয়েও ছোটো করে রাখব, কথা দিচ্ছি। আপনি ফেলে দেওয়া খাবার আমাকে দেবেন? সেই কবে থেকে চাইছি! দিন না, প্লিজ! কী হবে? ওই ঝুটা কাঁটা দিয়ে আপনি আর কী-ইবা করতে পারবেন? চাইলেও পারবেন না। আমি তো বেড়ালের মতো ঝুটা খাবার চুরিও করতে পারি না। একটা বেড়ালেরও অধম আমি! আমি তো আপনাকে ভালো করেই চিনি, অন্তত কিছু ব্যাপারে। আমি খুব ভালোই জানি, আপনাকে কিছু বলেই লাভ হবে না। তা-ও বলি এটা ভেবে যে ভুলেও যদি কিছু হয়! আর আনসার দেওয়া তো দূরের কথা, আপনি আমার মেসেজ দেখলেও দূর দিয়ে হাঁটেন। আমি তবুও একটু পর পর চেক করি, আপনি দেখলেন কি না, আনসার দিলেন কি না। আমার কাছে, আমার হাজারটা মেসেজের চেয়েও আপনার এক অক্ষরেরও দামই বেশি। আহা, আমারও যদি অন্তত দুইপয়সার দাম থাকত আপনার কাছে! যা-ই হোক, আমি যে খুব ভালো হাসাতে পারি, দেখেছেন? এত রাতে হাসির কথা আর কে বলবে আপনাকে? সবারই তো কোনও-না-কোনও দিকে যোগ্যতা থাকে। এত রাতে লোক হাসানোর যোগ্যতা থাকে না সবার, কেউ কেউ এই ধরনের যোগ্যতা নিয়েই জন্মায়। আপনি তো চলে গেলেন আমার জীবন থেকে। আমি ইদানীং খুব ভয় পাই। আপনার অনুপস্থিতি আমাকে ব্যবহার করে প্রতিটি মুহূর্তেই। আপনি এখন কথাও আর বলেন না আমার সাথে। আপনার সাথে পরিচয় হবার পর থেকে শিখেছি, শব্দের কাছে নীরবতা সত্যিই অনেক ঋণী! দুই। এটা আমি আগেই জানি যে, হয় আমার মেসেজ আপনার পড়াই হবে না, কিংবা আপনি তা পড়ে দেখলেও, একটা অবুঝ বাচ্চাকে যেমন রিপ্লাই করা হয়, তেমনই কিছু একটা আমার কাছে আসবে। আমার কোনও সমস্যা নেই ওতে। আমার কিছু কথা বলার আছে। আমি একটা নতুন চাকরি পেয়েছি, আপনাকে বলা হয়নি বোধহয়। ইন্টারপাসের সার্টিফিকেটে এরকম চাকরি পাওয়া প্রায় অসম্ভব। আমার ভাগ্য এক্ষেত্রে খুবই ভালো। এখানে স্যালারিও আগের চেয়ে অনেক বেশি। এত টাকা দেখে ভয়ও পাচ্ছি আমি। তবে পরিশ্রমও আগের চাকরির চেয়ে সাতগুণ বেশি। খুব সম্ভবত আমার পড়াশোনা এই বারো-ক্লাস পর্যন্তই থাকবে, অনার্সটা শেষ করার সুযোগ আর পাবো না। ব্যাপার না। আমি তা-ও খুশি। হি হি হি...। আমি সবার জন্যই কিছু-না-কিছু কিনেছি। আপনার জন্যও কয়েকটা জিনিস কিনেছি অনেক খুঁজেটুজে। আমি কিছু কিনলে তো আপনি খুব বিরক্ত হন। আমি কখনও ফরমালিটি করে কিছু কিনতাম না। শুধু আপনার মুখে একটু হাসি দেখার জন্যই কিনতাম। কারণ আমার নিজের উপার্জনের টাকা, বাবা-মায়ের কাছ থেকে নেওয়া টাকা না। ভাবতাম, আপনি খুশি হবেন। কিন্তু কখনওই খুশি হতেন না, উলটো বকাঝকা করতেন। যা-ই হোক, এবার আর আপনাকে দিতে চাইব না। আপনার সাথে দেখা হলেও নিতে বলতাম না। দিতে চাই-ই না যদি, তাহলে শোনাচ্ছি কেন, তাই তো? আমি ভালোই অসুস্থ। এর মধ্যেও যে আমি বিছানায় পড়ে না থেকে এত পরিশ্রমের কাজ করতে পারছি, সেজন্য খুব শান্তি লাগে, আর বলতেও শান্তি লাগে, তাই বললাম। যেগুলো কিনেছি, এটা মাথায় রেখেই কিনেছি যে, ওগুলি আপনাকে দিতে পারব না। উপহারগুলি আমি কিছুদিন আমার কাছে রাখব, তারপর অন্য মানুষদের দিয়ে দেবো। তিন। যা-ই হোক, আমি এত কথা কেন বলছি? আমার তো আরও অনেক আগেই চলে যাবার কথা ছিল। আপনি জানেন, আমি যতই যা-ই কিছু করি, রাগ দেখানোর চেষ্টা করি...ওসব থাকে হাইয়েস্ট দুই দিন। আর এখন তো কমতে কমতে দশ মিনিটে এসে ঠেকেছে! আমি নাহয় একটু ইয়ে হয়ে গেছি, তাই বলে আপনি আমার সাথে এরকম খাইস্টামি করবেন নাকি? আজব! আপনি কি জানেন আপনি যে একটা হার্টলেস পারসন? আমি না একসময় আপনার জন্য বদ্ধপাগল হয়ে যাব! এটা আমি খুব স্পষ্ট করেই বুঝতে পারছি। একটা মিনিটও ভুলে থাকতে পারি না আপনাকে। এসবের মানেটা কী? মাঝে মাঝে খুব রাগ লাগে নিজের উপর! এত কেন মনে থাকতেই হয় আমার আপনাকে? এটা শিওর যে আমি ফাইনাল স্টেইজে এডিক্টেড হয়ে গেছি আপনার প্রতি। একেবারেই ফুললি এডিক্টেড হয়ে গেছি। বুঝতে পারছি। এখনই পাগল, বুঝতে পারি আমি তা...মাত্র দু-বছর যেতে না যেতেই এই অবস্থা, আরও ক' বছর গেলে তো আমি একেবারেই বদ্ধপাগল হয়ে যাব আপনার জন্য! আর আপনি তা-ও এরকম খাইস্টাই থেকে যাবেন! সময় গেলে নাকি ভালোলাগা কমে যায়! কই...আমার তো প্রতিদিনই আপনাকে আরও নতুন করে ভালো লাগে! আছেটা কী আপনার মধ্যে, বলুন তো? কখনও যদি হারিয়ে যায় এই অলোকসুন্দর প্রেমের নগরী, ভালোবাসাটুকু আশ্রয় করে বিনষ্ট নতুন নগরে তুমি থেকে যেয়ো অমরত্বের প্রতীক হিসেবে, হে মায়াবী! চার। আসলে আমি মাঝে মাঝে ভুলেই যাই আমি কে, আমার অবস্থানটা কোথায়। অধিকার ব্যাপারটা এমন যে, তা ভুল করে বা মিথ্যেবাদিতায় পেলেও সেটাতে একধরনের অভ্যেস হয়ে যায়। তখন ওটা আর ঠিক ছেড়ে দেওয়া যায় না। তবু মিথ্যে তো মিথ্যেই! আমার এটা মাথায় রাখা উচিত। হ্যাঁ, আমি রাখব মাথায়। মজা করে অনেক কিছু বলা বা শোনা, আর সত্যিই মনে নেওয়া, এক ব্যাপার হয় না কখনওই। দিনের শেষে, এই মেসেঞ্জারের নাটকীয়তাতেই সীমাবদ্ধ থেকে যায় সব কিছুই। এটাও মাঝে সাঝে ভুলে যাই। ফ্যান্টাসিকে রিয়েল লাইফের সাথে রিলেট করে ফেলি। আমি সত্যিই ভীষণ বোকা! হে ঈশ্বর, আই অ্যাম সরি, হুঁ? পাঁচ। ভালোবাসায় দাসত্ব আমরা খানিকটা স্বেচ্ছায়ই বরণ করি, কখনও কখনও নিজের অবচেতনে বা অজান্তেই করি। তবে এটারও শেষ হয়। আঘাতে আঘাতে জর্জরিত হতে হতে এটারও একসময় সমাপ্তি ঘটে। পৃথিবীতে কোনও কিছুই অবিনশ্বর নয়। জীবনটাই অবিনশ্বর নয়, আর অন্য কিছু তো... হ্যাঁ, তা-ও আপাতদৃষ্টিতে ভালোবাসা অবিনশ্বর হলেও, ভালোবাসায়, ভালোবেসে স্বেচ্ছায় ববরণকৃত দাসত্ব কিন্তু অবিনশ্বর নয়। কখনও কখনও, কষ্টগুলি জমতে জমতে এমনই এক অভিমানের পাহাড় তৈরি করে দেয় যে তার বিশাল ভার সইতে সইতে এই দাসত্বপ্রথাটিও ক্লান্ত হয়ে হার মেনে নেয়। আর তখনই ঘটে চিরমুক্তি! তবে সে মুক্তি সুখের হয় না! সে মুক্তি হয় বেদনার্ত, ক্লেদ-জর্জরিত, রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত! ভালোবাসাই একমাত্র বন্দিঘর, যেখানে মানুষের বন্দিত্বটাই পরমকাম্য থাকে। সেখানে বন্দিত্বই সত্য ও স্বাভাবিক, মুক্তিলাভ নয়! আহা, বড়োই বিচিত্র বস্তু এ ভালোবাসা! সে সমস্ত নিয়মনীতি ভেঙে দিয়ে তুফান হয়ে এসে জগতের সকল দ্বিধা-সংকোচ ভাসিয়ে নিয়ে চলে যায় মাত্র কয়েক মুহূর্তেই! ভাবনা: সাতশো সাতাশ ............................................................... এক। মাঝে মাঝে মনে হয়, এতটা বেশি ভালো কাউকে বাসা উচিত নয় যাতে সে যদি কখনও ছেড়ে চলে যায়, তবে তা মেনে নিতে না পেরে জীবনটাকে থামিয়ে দিতে হয়। এইটুকু ফাঁক রেখে ভালোবাসলেই বোধহয় ভালো। জীবনটা এত ঠুনকো কিছু নয়। এটা তো ঈশ্বরপ্রদত্ত একটা উপহার, যা বাবা-মায়ের মতো দেবতুল্য মানুষের হাত দিয়ে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হয়। এরকম মূল্যবান একটা উপহার কেবলই একজন মানুষের চলে যাওয়ার কারণে অর্থহীন হয়ে পড়বে! কোনও মানে হয়? এতটা ভালোবাসা কি ঠিক আসলে? মানুষের সব থেকে বড়ো সমস্যা হলো, মানুষ অন্যকে ভালোবাসতে আর তার ভালোবাসা পেতে এত ব্যস্ত এবং মরিয়া হয়ে পড়ে যে, সে নিজেকেই ভালোবাসার কথা বেমালুম ভুলে যায়। এতটাও কি ঠিক? তবুও, মানুষ কি পারে নিজেকে ঠিকঠাক রাখতে? ভালোবাসায় কি উচিত-অনুচিত ঠিক-ভুল বলে কিছু হয়? ভালোবাসা কি কোনও যুক্তিতর্ক মানে? ভালোবাসা তো হয়ে যায়...ব্যস্, শুধু এটুকই তো! ভালোবাসলে কী হবে কিংবা না বাসলে কী হবে, এসব ভেবে কি ভালোবাসা যায়? ভালোবাসা তো এমনই একটা অনুভূতি, যেটা হয়ে যাবার এক ন্যানোসেকেন্ড আগেও তাকে অনুভব করা যায় না! ভালোবাসা এমনই একটা অনুভূতি, যেটা সম্পূর্ণই ব্যাখ্যাতীত। ভালোবাসতে কেমন লাগে, তা বলে বোঝানো যায় না। ওটা বুঝতে হলে নিজেকেই তা অনুভব করতে হয়। কাউকে বোঝানোর মতো অনুভূতি এ ভালোবাসা নয়। ভালোবাসা তো শুধুই অনুভব করা যায়। যে ভালোবাসেনি, তাকে কী করে বোঝানো যাবে ভালোবাসা যে আসলে কী! দুই। ভালোবাসার খেয়ালে বেঁচে থাকতে শুরু করেছি আমি একটু একটু করে রোজ, যদি কখনও চলতিপথে নিয়তির খেলায় শামিল হতেই হয়, তবে সেদিনও, এই ভালোবাসার খেয়ালে বেঁচে-থাকার ভালোলাগাটুকুই নাহয় হিসেবের খাতায় ঋণ হয়ে রবে। কাগজের খেয়া ভাসিয়েছি যখন তোমার নামে, দ্বারে পৌঁছালে ফিরিয়ে দিয়ো না, দোহাই তোমার! ভালোবাসার রোজনামচায় বেঁচে থেকে আমায় বাঁচিয়ে রেখো শুধু। তিন। এই পুরো পৃথিবীতে আমার চাইতে সুখী এবং একইসাথে আমার চাইতে দুঃখী মানুষ আর একজনও হবে না যদি আমি এই মুহূর্তে, যা বুঝতে চাইনি, তবু বুঝতে বাধ্য হচ্ছি, তা-ই যদি সত্যি হয়, কিংবা এ অনুভূতির আসল প্রেক্ষাপটটা পুরোপুরি বাস্তব হয়। তবে কী হলে কী হতো, সেটা আমার জানা নেই। কিন্তু এই মুহূর্তে আমি পুরো পৃথিবীতে সব থেকে বড়ো অসহায় মানুষটি, কারণ আমি জানিই না এখন আমার যা মনে হচ্ছে, আমি যা বুঝেছি নানান ঘটনা থেকে, তা আদৌ তা-ই কি না। আবার এতটা দুঃসাহসও হচ্ছে না নিজেকে এইসব ঘটনার মূলবিন্দুতে রেখে নিজেকে অতটা গুরুত্বপূর্ণ ভাবতে। তবে আমার কিছু ভাবনা কোনওমতেই সত্যি না হোক, এটাই আমার প্রার্থনা। নিজের কান্না নিজেকে হালকা করে দিলেও, জীবনের সব থেকে প্রিয় মানুষটা, যাকে ছাড়া একটা মুহূর্তও কাটে না, তার কান্না কখনওই নিজেকে হালকা করে না, বরং মৃত্যুর মতোই বীভৎস এক পরিস্থিতিতে এনে দাঁড় করিয়ে দেয়। এ কষ্ট সহ্য করা যায় না। প্রিয় মানুষটার ভালো-থাকা, নিজের খারাপ-থাকাকে ভুলিয়ে দিতে পারে। আবার এই প্রিয় মানুষটার খারাপ-থাকা কখনওই নিজের ভালো-থাকাকে ভালো থাকতে দেয় না। চার। বলিউড অভিনেত্রী রেখা শায়েরি-চর্চা করতে খুব ভালোবাসেন, যদিও তাঁর এই অসামান্য গুণটিকে তিনি খুব একটা প্রকাশ্যে আনেন না, এবং যতটা সম্ভব লুকিয়েই রাখেন। তাঁর নিজের লেখা শায়েরিনামা থেকে তাঁর নিজ কণ্ঠনিঃসৃত কিছু শায়েরি আমার খুব পছন্দের। ওগুলো শুনলে মনে হয়, তাঁর গলার আওয়াজ আর বলার ভঙ্গিমা ছাড়া সেই শায়েরিগুলোকে কোনওভাবেই শায়েরি বলা সম্ভব হতো না। ইউটিউবে গেলেই সেগুলো খুঁজে পাওয়া যাবে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সেলেব্রিটির কিংবা কোনও স্টেইজ-পারফরমারের প্রশংসায় তিনি তাঁর শায়রানা আন্দাজের সাহায্য নিয়ে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে তাঁর মুখে বলা আমার পছন্দের কিছু শায়েরির বাংলা তরজমা করার চেষ্টা করছি। Jo chahte ho, woh kehteho, chup rehne ki lajjat kiya jano? Ye raaz-e-muhabbat hein pyare, tum raaz-e-muhabbat kiya jano? Hein fark bada aye jane raja, dil dene mein, dil lene mein. Ulfat ka talluk janke bhhi, tum iss rishte ki nazakat kiya jano? (যো চাহতে হো, ওয়ো ক্যহতে হো, চুপ র্যহনে কি লাজ্জাত কিয়া জানো? ইয়ে রাজ-এ-মুহাব্বাত হ্যায় প্যায়ারে, তুম রাজ-এ-মুহাব্বাত কিয়া জানো? হ্যায় ফারাক বাড়া অ্যায় জানে রাজা, দিল দেনে মে, দিল লেনে মে। উলফা্ত কা তাল্লুক জানকে ভি, তুম ইস্ রিসতে কি নাজাকাত কিয়া জানো?) তরজমা: যা বলতে চাও, তা টুপ করে বলে ফেলো, চুপ করে থাকার গুরুত্বটা কতটা জানো? প্রিয়, এটা হচ্ছে ভালোবাসার গোপনসূত্র, তুমি ভালোবাসার গোপনসূত্রের খবরই-বা কতটা জানো? ওহে প্রেমিক, অনেক তফাত আছে…মন দেবার বেলায়, মন নেবার বেলায়। ভালোবাসার উপরের চেহারার খবরটা জানলেও, তুমি এই সম্পর্কের গভীরতার খবর কতটা জানো? এই শায়েরিটি রেখা অভিনীত ‘উমরাও জান’ সিনেমা থেকে নেওয়া: Ab aap samne hai toh kuch bhi nahi hai yaad, Warna kuch aapse humein kahna jaroor tha. (আব আপ সামনে হ্যায় তো কুছ ভি ন্যাহি হ্যায় ইয়াদ, ওয়ারনা কুছ আপসে হামে কেহনা জারুর থা!) তরজমা: এখন তো আপনি সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন, তাই আমি কিছুই মনে করতে পারছি না। তা না হলে, আপনাকে বলার মতন কোনও জরুরি কথা অবশ্যই অবশ্যই ছিল, যা আপনাকে দেখে কিছুতেই আর মনে করতে পারছি না। যশ চোপড়ার স্মৃতিচারণে রেখার কণ্ঠনিঃসৃত শায়েরি: Agar kisi ko chaho, to chaho itna ki, kisi aur chahat ki chah bhi na rahein. (আগার কিসি কো চাহো, তো চাহো ইতনা কি, কিসি অউর চাহাত কি চাহ্ ভি না রাহে।) তরজমা: যদি কাউকে ভালোবাসো, তাহলে এতটাই বাসো যেন, অন্য কোনও কিছুকেই ভালোবাসার ইচ্ছেটা অবধি না থাকে! একবার এক অনুষ্ঠানে শাহরুখ খানের প্রশংসায় ভারতের নামকরা শায়ের গুলজারের লেখা, রেখার কণ্ঠনিঃসৃত শায়েরি: Ruh dekhi hein kabhi? Ruh ko mehsoos kiya hein? Jism sho bar jale, fir bhi wahi mitti ka dhela, ruh ek bar jalta hein to wo kundan banta hein. Ruh dekhi hein kabhi? Ruh ko mehsoos kiya hein? (রুহ দেখি হ্যায় কাভি? রুহ কো মেহ্সুস কিয়া হ্যায়? জিসম শো বার জ্বালে, ফিরভি ওয়াহি মিট্টি কা ঢেলা, রুহ এক বার জ্বালতা হ্যায় তো বো কুন্দান বানতা হ্যায়! রুহ কো দেখা হ্যায় কাভি? রুহ কো মেহ্সুস কিয়া হ্যায়?) তরজমা: আত্মাকে দেখেছ কখনও? আত্মাকে অনুভব করেছ? শরীর তো একশো বার পোড়ালেও…সেই কিছু মাটির দলা মাত্র, আর আত্মা যদি মাত্র এক বারও পোড়ে, তবে তা কুন্দনে পরিণত হয়! আত্মা দেখেছ কখনও? আত্মাকে অনুভব করেছ? ভাবনা: সাতশো আটাশ ............................................................... এক। কাউকে এখন আর খুব কাছ থেকে জানতে ইচ্ছে করে না। কাউকে খুব কাছ থেকে দেখতে বা তাকে এবং তার সব কাজকেই খুব বেশি বুঝতে আর ভালো লাগে না। দূর থেকেই সব ভালো। দূর থেকে তেতোও যদি মিঠে লাগে...তবে ক্ষতি কী? তবুও কাছে এসে তেতোকে তেতো বলতে গিয়ে কষ্ট তো আর পেতে হয় না! ভালোই তো! কখনও কখনও দূরত্বটাই বরং বেশি ভালো। প্রিয় মানুষটাকে ভুল মানুষ বলতে গেলে যে অসহ্য যন্ত্রণা হয়, তার তুলনায় এই দৃষ্টিগোচর দূরত্বে থাকবার কষ্ট আর কতটুকুই-বা তীব্র! যে কাছে-আসায় নিজের প্রিয় মানুষটাকে ভুল মানুষ বলে নিজেকে বোঝাতে হয়, সে কাছে-আাসার চাইতে দূরত্বই বরং ভালো! তবুও তো সে দূরত্বে প্রিয় মানুষটাকে নিজের বলে ভাববার স্বাধীনতাটুকু বেঁচে থাকতে পারে। সেখানে কাছে এসে অনুভূতিগুলোকে গলা টিপে হত্যা করার বাধ্যবাধকতা অন্তত থাকে না। কাউকেই কাছ থেকে জানতে ইচ্ছে করে না সত্যিই! প্রিয় মানুষটাকে তো নয়ই! কারণ কাছের মানুষের কাছে এলে সেই মানুষটা আর কাছের থাকে না। প্রিয় মানুষ কখনও একেবারে কাছের মানুষ হয় না। প্রায়ই, কাছে এলে আর প্রিয় মানুষটা আর প্রিয় হয়েই থাকতে পারে না। কাছে আসা আর প্রিয় হয়ে থাকা---বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিপরীতমুখী। প্রিয় মানুষ হয়, তবে কাছের মানুষ বলতে কিছু হয় না সত্যিকার অর্থে। দূর থেকে দেখে নিজের মতো করে ভেবে ভালো থাকা যায়। সেটাই ভালো। কাছে এসে কষ্ট পেলে খুব খুব খুব খারাপ লাগে। সহ্যই হয় না সে কষ্টটা। তাই প্রিয় মানুষটা যতটা দূরের, ততটাই প্রিয়, ততটাই নিজের। আমার সত্যিই নিজেকে মাঝে মাঝে এই পৃথিবীতে সব থেকে অসহায় মনে হয়। আমি জানিই না, আদৌ আমি আমাকে বুঝতে পারি কি না। আমার অনেক কিছুই মনে হয়, যেটা হয়তো আমি বাদে আর কারও মনে হয় না, হয়তো আমি মানুষটা ওসব ভাবনার ধারে কাছেও নেই। কখনও কখনও মনে হয়, আমার ভালো-থাকাটা একধরনের ভণ্ডামি...আমি সত্যিই ভালো নেই। কখনও কখনও মনে হয়, আমি অতিরিক্ত ইন্ট্রোভার্ট। আবার কখনও কখনও মনে হয়, আমি বোকার মতো আমার নিজেকে আমার লেখার সাথে মিলিয়ে গুলিয়ে ফেলছি...বেশিই ভাবছি...অহেতুকই। এমনটা আসলে নয়ই, যা ভাবছি। কিন্তু এটা মানতে পারি না কখনওই...একটা মানুষের সব লেখাই কি শুধুই লেখা হয়! তার মনটা কি কখনও কোনও লেখাতেই প্রতিফলিত হয় না? পুরোটা না হোক, কিছুটাও কি হয় না? হ্যাঁ, আমি নিজে আমার লেখার মতো নই। আমার রাস্তা ও আমার অক্ষরের রাস্তা এক নয়। জোর দিয়ে বিশ্বাস করতে পারি না যা আমার মনে হয়। এজন্য আরও বেশি অসহায় লাগে। তবে আমি মন থেকে চাই, নিয়মিত প্রার্থনা করি, আমার প্রিয় মানুষগুলি ভালো থাকুক। সত্যিকার অর্থে ভালো-থাকা যাকে বলে, সেই ভালোটা থাকুক। সেটা ওরা যার বা যাদের সাথে থেকে ভালো থাকে, তাদের সাথেই থাকুক। ওদেরকে যে এবং যারা ভালো রাখে, সেও এবং তারাও যেন সবসময় ভালো থাকে, আর ওদেরকে ভালো রাখে। ওরা আমার এইসব ভাবনা বিশ্বাস না-ই করতে পারে, সেটা আলাদা বিষয়। কিন্তু আমি এটাই চাই সবসময়। ওদের জীবনে নানান ঝামেলা আসুক, কষ্ট হোক বাঁচতে...যা-ই ঘটুক, ওদের জন্য এই আমার ভালো-চাওয়াটা কোনও কিছুর উপরেই নির্ভর করে না। এর বিনিময়ে ওরাও আমার মঙ্গলকামনা করুক, কিংবা আমার মনের মতো কিছু একটা করুক, এরকম চাওয়াটা আমার মধ্যে কাজ করে না। চেষ্টা করে দেখেছি, তা-ও করে না। ঘুড়ি যে রঙেরই চাই না কেন, শেষঅবধি যে রঙের ঘুড়ি যার জন্য কেনা হয়, সেটাই তার নিজের আকাশে ওড়ে। এটাই স্বাভাবিক নিয়ম, এই সমাজের নিয়ম, রীতিমতো পবিত্র কর্তব্য। আর হ্যাঁ, ঘুড়ি কেনাটাও বাধ্যতামূলক। এটা আরও বড়ো অসহায়ত্ব, কখনও সৌভাগ্যও। প্রায়ই দেখা যায়, নিজের জন্য না কিনলেও নিজের প্রিয় মানুষটির বা মানুষদের জন্য ঘুড়ি ঠিকই কিনতে হয়। এরপর ওদের আকাশে ঘুড়ির ওড়াউড়ি দেখে আনন্দে হাততালি দিতে হয়। জীবনে বাঁচতে চাইলে হাততালিটা দিতে জানতেই হয়---নিজের আনন্দে, কিংবা অন্যের আনন্দে। লাইফ ইজ নাথিং বাট অ্যা সিরিজ অব অ্যাকসেপটেন্সেস। এখানে মোটামুটি অন্য কোনও মিরাকল তেমন একটা ঘটে না। দুই। যেদিন তুমি বুঝবে, আমিও তোমায় কতটা ভালোবেসেছিলাম, সেদিন তুমিও হয়তো মহাকালের কাছে আরও এক বার আমার আর তোমার মিলে আমাদের হবার মুহূর্তটাকে ফিরে পেতে চাইবে। অভিমান আমারও হয়...হয়েছিল। এই পৃথিবীর সাড়ে সাতশো কোটি মানুষ যেমনি জানে না তুমি কতটা অভিমান করে চলে যেতে চেয়েছ...ঠিক তেমনি তুমিও জানতেই পারোনি কোনও দিনই...এই সাড়ে সাতশো কোটি মানুষের ভিড়ে আমি কখনওই তোমাকে হারিয়ে ফেলিনি। জীবন থেকে কিছুই কি কখনও পুরোপুরিই হারিয়ে যেতে পেরেছে আজ অবধি? না কি পেরেছিল সেদিনও? আমি যে প্রতি রাতেই তোমার ভালোবাসার অভাববোধে গুমরে গুমরে মরেছি, সেখানে কি আর সে রাতটা আলাদা করে আমায় কাঁদাতে পারে? মনে করে দেখো, তোমার ব্যাংকভর্তি ব্যালেন্স সেদিনও কিন্তু ছিল না, তবুও আমার বুকভরা দুঃখ ঠিকই ছিল। আজ তোমার আমায় দেওয়া এই বিদায়-অভিলাষ আমারই ভালোবাসায় ব্যর্থতার যথার্থ পুরস্কার। তোমাকে ভুলে যেতে চেয়ে নয়, বরং তোমাকে ভুল করেও ভুলে যেতে পারতে আমি আসলেই ভুলে গিয়েছিলাম! দুঃখবিলাস শুধু এটুকুই...আজ সময়ের বড্ড আকাল। তিন। নিজের প্রতি যে অন্যায় এতদিন ধরে করেছি বা এখনও করছি, সে অপরাধে আমি একটু হলেও অপরাধী। সকলকে ভালো রাখতে গিয়ে, সকলকে ভালোবাসতে গিয়ে, নিজেকেই ভালোবেসে ভালো রাখার কথা যে আমি ভুলে গিয়েছি, সে খেয়ালই আমার নেই খুব সম্ভবত। নিজের প্রতি অন্যায় করে নয়, একটু হলেও প্রাধান্য দিয়ে প্রতিদিনই বড়ো যত্ন করে নিজেকে আগলে রাখতে জানতে হয়। মানুষকে তো আগলে রাখারই প্রতিশ্রুতি বিধাতার...তাঁকে সাহায্য করার দায়িত্বটা মানুষকেই নিতে হয়। সময় যত যায়, এই দায়িত্বটা তত বাড়ে, সাথে বাড়ে কর্তব্যও, শুধু ভালো-থাকাটাই আর বাড়ে না। নিজের প্রতি এতটা কপট হলে তার পরিণামে ভালো কিছু আসে না। নিজেকে ভালো রাখতে হয়। নিজের জন্য সময় ও অর্থ ব্যয় করতে হয়। সকলকে ভালো রাখতেই শুধু নয়, নিজেকে ভালো রাখতেও...নিজেকেই দায়িত্বশীল হতে হয়। জীবনের বেলাভূমিতে হাঁটতে হাঁটতে মায়ানুড়ি কুড়োতে গিয়ে যেন মায়ার আড়ালে ভালোবাসাটাই চাপা পড়ে না যায়...। চার। প্রায় হাজারখানেক মাইল দূরে অবস্থানরত কোনও মানুষকে মনে করতে কেন মাত্র একসেকেন্ড সময় লাগবে? দুটো মনের মধ্যে এতটা দৃষ্টিগত দূরত্ব থাকার পরেও কেন তার নিঃশ্বাস হঠাৎ করে কানে বেজে উঠবে? প্রায় দেড় কি দু-বছর আগে বলা কোনও কথাকে কেন মনে হবে যেন এইমাত্র শুনলাম? স্বপ্নে-দেখা কোনও সুন্দর মুহূর্ত কেনই-বা হুট করে বাস্তবের সাথে মিলে যাবে? পাঁচ। সবাই সব কিছু ডিজার্ভ করে না, তাই না? যে জানেই না ভালোবাসতে কিংবা বোঝেই না বিশ্বাস কাকে বলে, তাকে ভালোবেসে বিশ্বাস হারালে, তখন অন্তত বিশ্বাস রেখে মরে যাওয়াটা বড্ড বোকামি। রীতিমতো লাইফ স্যাক্রিফাইস করার মতো এতটা গুরুত্ব বা প্রায়োরিটি এরকম কোনও মানুষ ডিজার্ভ করে না। অপাত্রে মুক্তো দান করার আগে এক বার হলেও ভাবা উচিত। আবার অনেকসময় পরিস্থিতি এমন হয়, কারও কিছু করারই থাকে না! দোষটা তখন আর একপাক্ষিকও থাকে না, দ্বিপাক্ষিকও থাকে না। কিছু ব্যাপার এমন থাকে, যা কোনওভাবেই বিচারের মধ্যে আনা যায়ই না। এটাই কি নিয়তি? কী জানি! অদ্ভুত, তাই না, বলো? বিলিভ মি, আমি এখন আর সিম্পলি কোনও কনক্লুশনে আসতেই পারি না। অনেকগুলো ফ্যাক্টর চলে আসে আপনাআপনিই। একটা ঘটনার সাথে জড়িত মানুষগুলোর জায়গায় এক এক করে নিজেকে বসালে হাজারো বাস্তবতা চোখের সামনে চলে আসে, তখন ঠিক-ভুলের বিচার করাটা ঠুনকো বিষয়, আর নিজেকে অযোগ্য মনে হয় বিচারক হিসেবে। এত কথা কেন লিখছি, সত্যিটা বলে দিই। পৃথিবীর সব কাজ বাদ দিয়ে তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করে ভীষণ। খুব নিখুঁতভাবে। মায়ার সাথে। আদর আদর চোখে তোমাকেই দেখতে ইচ্ছে করে। এই পৃথিবীতে ভালোবাসার জন্য আর কাউকে চোখেই পড়ে না। তোমাকে ছাড়াই, তোমাকে না পেয়েই এতটা ভালো লাগে তোমায়। বড়ো ভালোবাসি, সত্যি! কোথাও যাবে না আমায় ছেড়ে, বলে দিলাম!