বর্ণদূত-১।
ডিয়ার হনুমান মহাশয়,
উউফফ্…..আফনার আইজকার মেচেজগুলান পইড়া তো আমার মাতাডা ঘুরান্টি দিতাচে!! চারিদিকে শুদু বালুবাসা আর বালুবাসা দেকতাসি, ইত্তু বালুবাসা রাকি কুতায়?? একখান বাস্কো পাটান, ভইরা আন্নের কাচে পাটায় দি।।
আমি কি আপনাকে সুইটহার্ট বলতে পালিইইইইইই…………রাজি থাকলে ‘১’ চাপুন, না থাকলে ‘২’ চাপুন আর কিছুই যদি মনে না চায়, তাইলে ‘পাওয়ার অফ’ বাটন চেপে লুঙ্গি ড্যান্স দিতে থাকুন।
আফনার নাকি মাইয়াগো নাম মুনে থাহে না??? আইচ্চা আমার আসল নাম আফনার মুনে আচে?? কন তো আমার নামডা কী??? দেকি তো আমি আফনার চর্টটারাম মেমুরি, নাকি লঙ্গোটারাম মেমুরিত্ আচি। যদি কইতারেন্ তাইলে কতা দিচ্চি, আফনারে এক্কান কাঁচা চুপারি কাওয়ামু, তয় পান কিন্তু দিবার পারুম না। বুচ্চেন?
আফনারে যিভাবে ডেরেস্ পিলান্ কইয়্যা দিচিলাম, আইজক্যা দেকি আমাগো ফ্যাকাল্টিতে এক পুলা ঐভাবেই ডেকোরেশুন মাইরা আইচে টাই চাড়া। তয় পুলাডারে মোটকা দেইখা ভাল দ্যাহা যাইতাচিলো না। ওরে দেকাইতেচিল প্যান্টশার্টপরা স্বাস্থ্যবান মোটকু বান্দরের মতন। তারচে আফনারেই ভাল দ্যাহা যাইব। আফনারে একখান কতা কমু, এহন না, কাল কমু। এহন আফনি দিবাচন্দ্র দর্শন করেন।
এই শুনেন, আফনি আমার মেচেজ পইড়া দাঁত ক্যালাইবেন না কইলাম। যদি দাঁত ক্যালান, তাইলে কিন্তু বুলডোজার ঝড় শুরু হইব।
টা টা বাই বাই, আবার যেন দেকা পাই।
বর্ণদূত-২।
শ্রীচরণেষু ভোলানাথ,
কিছুদিন যাবৎ ভাবিতেছি আপনাকে একখানা কথা বলিব। কিন্তু আমার স্বভাবসুলভ লাজুকতার (আমি কিন্তু আসলেই লাজুক। ইউ হ্যাভ টু বুঝতে হবে।) কারণে আপনাকে তাহা কোনোভাবেই বলিয়া উঠিতে পারিতেছি না। তাই ভাবিলাম রবি বাবুকে আশ্রয় করিয়াই আমার মনের সুপ্ত ভাবখানা প্রকাশ করি। ওই শাদা দাড়িওয়ালা বুইড়ার (পড়েন, শুভ্র শ্মশ্রুমণ্ডিত বৃদ্ধের) কথাই তো আমার কথা……
ওগো আমার প্রাণের ঠাকুর,
তোমার প্রেম তোমারে এমন ক’রে করেছে নিষ্ঠুর।।
তুমি বসে থাকতে দেবে না যে, দিবানিশি তাই তো বাজে
পরান-মাঝে এমন কঠিন সুর।।
ওগো আমার প্রাণের ঠাকুর,
তোমার লাগি দুঃখ আমার হয় যেন মধুর।
তোমার খোঁজা খোঁজায় মোরে, তোমার বেদন কাঁদায় ওরে,
আরাম যত করে কোথায় দূর।।
………………………………………………………
ওগো দেবতা আমার, পাষাণদেবতা, হৃদিমন্দিরবাসী,
তোমারি চরণে উজাড় করেছি সকল কুসুমরাশি।
প্রভাত আমার সন্ধ্যা হইল, অন্ধ হইল আঁখি।
এ পূজা কি তবে সবই বৃথা হবে। কেঁদে কি ফিরিবে দাসী।
এবার প্রাণের সকল বাসনা সাজায়ে এনেছি থালি।
আঁধার দেখিয়া আরতির তরে প্রদীপ এনেছি জ্বালি।
এ দীপ যখন নিবিবে তখন কী রবে পূজার তরে।
দুয়ার ধরিয়া দাঁড়ায়ে রহিব নয়নের জলে ভাসি।।
……………………………………………………
ভালোবাসা অর্থে আত্মসমর্পণ নহে। ভালোবাসা অর্থে, নিজের যাহা কিছু ভাল তাহাই সমর্পণ করা। হৃদয়ে প্রতিমা প্রতিষ্ঠা করা নহে; হৃদয়ের যেখানে দেবত্রভূমি, যেখানে মন্দির, সেইখানে প্রতিমা প্রতিষ্ঠা করা।
নিবেদনে-
আপনার কাদম্বরী (কিংবা, ইন্দিরা)
বর্ণদূত-৩।
ওই হুলোবিলাই! শোনেন!
মেয়েরা নাকি ষোলোকলায় পারদর্শী । পছন্দের মানুষের সাথে কথা বলার পাগলামি, এটাও বোধহয় ঐ ষোলোকলার মধ্যেই পরে। পাগলামিবশত আমিও মাঝে-মাঝে এমন করেছি আপনার সাথে। পরে ভেবে দেখলাম আমার স্বভাবের সাথে এই আচরণ যায় না, কিংবা যাঁর সাথে এই পাগলামিটা করছি তাঁর কাছে এই ব্যাপারটা বিরক্তির সৃষ্টি করছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই পাগলামিটা ছেড়ে দিলাম। আবার ফেসবুকেও কখনো বিরক্ত করিনি আপনাকে। আসলে আমার এসব চ্যাটফ্যাট ভাল লাগে না। তাই ঠিক করেছি, আমরা দুজন একসাথে হংসমিথুনের মত সাঁতরে-সাঁতরে হেমায়েতপুর চলে যাব। যা হওয়ার ওখানেই হবে। কী হবে? জয় গোস্বামীর ‘পাগলী, তোমার সঙ্গে’ পড়েছেন না? ওরকম হবে। হিহি……. আমার অনলাইন নিউজ পড়ার নেশা খুউব। যেকোনো ধরনের নিউজ। জানার, শেখার তো কোনো শেষ নেই, তাই না, বলেন? জানার চেষ্টা বৃথা তাই। আমি জানাজানি ছেড়ে দিয়েছি। এবার আপনাকে জানার পালা। এবার সত্যিসত্যি পারিবারিকভাবেই আপনাকে প্রস্তাব দেবো। আমি ভেবে দেখলাম, আপনাকে দিয়ে শুধু ঐ মোটিভেশনাল কাজকর্মই হবে, এই সব হবে না। আপনাকে কেউ দয়া করে বিয়ে না করলে আপনার কপালে বিয়ে লেখা নেই। কপালের নাম গোপাল। অগত্যা, কী আর করা! আমি নিজেই শুরু করলাম। আসেন, বিয়ের পরের আলাপ শুরু করি। এখন থেকে সবকিছু সেট করে রাখব।
পরথম কতা, আমি কিন্তু আমার পোলা রাজকুমাররে বুয়েটে পড়াইতে চাই। সে একটার সাথে অন্যটা জোড়া লাগাইয়া নতুন-নতুন জিনিস আবিষ্কার করবে, মাঝে-মাঝে ফট্টাস্-ফট্টাস্ শব্দ কইরা বিস্ফোরণও ঘটাইবে। আর আমি ঘুমের ঘোরে চমকাইয়া উইঠ্যা দিমু একখান কানফাটানি চিল্লানি। (এখন যেমন করি ঘুমের ঘোরে; নিজের মোবাইলডারেই চিনবার পারি না, মনে হয় এইডা আবার কী জিনিস, শব্দ হইতাছে কেমনকেমন।) পোলারে গান, আবৃত্তি, গিটার, পিয়ানো, তবলা এইগুলানও শেখাইতে চাই। সে চাইলে নৃত্যও শিখতে পারে। বেআকুব মাইয়াগুলানরে আপনের মতন নাচাইতেও পারে। নো প্রবলেম। আই ডোন্ট মাইন্ড। আর মাইয়া প্রজাপতিরে তার নিজের ইচ্ছামতই পড়ামু; সাথে গান, শাস্ত্রীয় নৃত্য, আবৃত্তি, পিয়ানোবাজানো এইগুলান শেখাইতে চাই। আমি চাই, সে হোক আপনার সুরতের, আমার স্বভাবের। বুঝসেন কিসু? না বুঝলে, কাগজি লেবুর রস মাইখ্যা খই খান।
দ্বিতীয় কতা আর কইলাম না। আপ্নের টলারেন্স কম, খালি ফস কইরা চেইত্যা ওঠেন। আমি দিব্যদৃষ্টিতে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, আপ্নের মোটামাথা হট হইয়া গ্যাসে অলরেডি। অতএব আজকের মত কতা এখানেই শ্যাষ, এইবার আপ্নে খুশিমনে তাধিন-তাধিন নাচেন। তয়, এই চিঠিডারে আবার কল্পবিবাহপত্র বইল্যা চালায়ে দিয়েন না। পাবলিকলি পাবলিশ করলে আপ্নের খবর ও সংবাদ, দুইটাই আছে; বিটিভি’র পচা সংবাদ, ঈমানে কইলাম।
পুনশ্চ। আমি এই মর্মে শপথ করিতেছি যে, আপনি যদি এই পত্রখানা প্রকাশ করেন তাহলে আপনি আজ থেকে টমও না, মিস্টার বিনও না, আপনি হলেন টমের বন্ধু রাস্তার বিল্লি ধলা কুদ্দুস, কিংবা কালা কুদ্দুস। কালা কুদ্দুস কেডা, জানেন?? কালা কুদ্দুস হইল হাসান মাসুদ। এক্কেরে মানিক জোড় মিলছে ভাল। শান্তি শান্তি!
আর শোনেন, চিঠিডা পইড়া আবার সবাইরে কইয়েন না, দুনিয়ার কিউট মেয়েরা অ্যাত্তো কিউট বৌ হয় ক্যান!! ঘরে এমন কিউট বৌ থাকলে সকাল বিকাল খালি তুইল্যা-তুইল্যা আছড়াইতে মন চায় না, বলেন!!
সব খালি ঢং আর ঢং। বোঝে না পাবলিক, বোঝে না। খালি আপনের ফাউল পোস্ট গলাধঃকরণ করে। পুরাই আজিব দুনিয়া!
আপ্নের ভুঁড়ির পিলিজ লাগে পাবলিশ কইরেন না। কথা না শুনলে লাদেন জাহান্নাম থেইক্যা পটকা মারব আপ্নেরে। দুনিয়ার পটকা দেখসেন। এইবার জাহান্নামের পটকা খাইবেন। উত্তর দিবেন অবশ্যই। উত্তর না দিলে আবারও জ্বালামু। এবারের সংগ্রাম আপ্নেরে জ্বালানির সংগ্রাম। দুগ্গা দুগ্গা!
বর্ণদূত-৪।
ডিয়ার বিল্লি ধলা কুদ্দুস!
সেদিনের চিঠিতে পেন্নাম দিতে ভুলে গিয়েছিলাম তাই আজকে প্রথমেই পেন্নাম দিয়ে নিলাম।
আমার চিঠির উত্তর দিচ্ছেন না কেন?? আসলেই আপনার চাইতে আমার সাহস বেশি, আপনাকে ভাললাগার কথাটা সরাসরি আপনাকেই বলে দিয়েছি। আপনি ভালোবাসা নিয়ে কুলুক্ খেলতে পছন্দ করেন। ছোটোবেলার কুলুক্ খেলা মনে আছে তো? আর আপনি লাউকে কদু বানায়ে সবার সামনে উপস্থাপন করেন। আমি তো বুঝি, যাহা লাউ তাহাই কদু, যাহা আরশোলা তাহাই তেলাপোকা।
যে কাজটা অন্যকে দিয়ে করানো সম্ভব না, সেই কাজটা সময় থাকতেই আগেভাগেই করে রাখি। আমার আবার সবক্ষেত্রেই এত লজ্জা লাগে না। যৌথ পরিবারে বড় হয়েছি তো, তাই সবার সাথেই মিশতে পারি।
আচ্ছা, আমার দাদু, ঠাকুরমা সম্পর্কে আপনার কী ধারণা? আমার দাদু ঠাকুরমা কিন্তু অনেক মজার মানুষ। মা-বাবার ভালোবাসা তো পাচ্ছিই, সাথে দাদু-ঠাকুরমার ভালোবাসাও পাচ্ছি। দুজনই আপনার মতন বেশি কথা বলে। আমার মতন মুখচোরা না। কী বুঝলেন? বুঝসেন ঘোড়ার আণ্ডা!
আগে দাদুর কথা বলি, তারপর ঠাকুরমার কথা বলবো। বাড়িতে গেলে তিনজন মানুষ আমাকে বিরক্ত করে আর মারে; আমার মা, দাদু আর ছোটো বোন। একটু পরপর শুধু ‘মিথি মিথি’ বলে ডাকতেই থাকে। আমার মা চায় সবসময় তার সামনেসামনে ঘুরি আর মিষ্টি-মিষ্টি কথা বলি। আর আমার পিচ্চি বোনটা তো পুরাই সুপারগ্লু। বাথরুমের সামনে গিয়েও বসে থাকে, আর একটু পরপর বলতে থাকে, “এহহ্! একদম কত্তো দিদি হইসে!” সত্যিই ছোটোবোনদের ভালোবাসাটা অন্যরকমের। আপনি এসব নিয়ে যতোই লেখেন না কেন, আসল ব্যাপারটা কখনোই বুঝবেন না। আমি বাড়ি থেকে চলে আসলে আমার বিছানায় শুয়ে কাঁদে, ঠিকমত খায়ও না; সেই পিচ্চিকাল থেকেই। বলে কী জানেন, দিদির যে বাড়িতে বিয়ে হবে আমিও সেই বাড়ির পাশে বিয়ে করব, তাহলে প্রতিদিন বিকালে দিদির কাছে বেড়াতে যেতে পারব। বাই দ্য ওয়ে, আপনার ছোট ভাই কী এনগেজড? এবার দাদুর কথা বলি। দাদু সব ধরনের পরিকল্পনা আমার সাথে করতে আসে; যেমন ধরেন, বইপড়া, রান্না, ধর্ম আলোচনা, বেড়ানোর কথা এইসব কিছু। আমাদের ভালোবাসেও অনেক। আমাদের কেমন ভালোবাসে, সেই কথাও বলেছে। বলে, আমার আত্মা থেকে আমার পুত্র সৃষ্টি, আর সেই পুত্র থেকে তোরা সৃষ্টি; তাহলে বোঝ তোরা আমার কাছে কী! কী কঠিন সব কথাবার্তা! আমার চুলের উপর দিয়ে যায়। ছোটোবেলায় নাকি দাদু কোলে না নিলেই আমি চিৎকার শুরু করতাম। জানেন, ছোটোবেলায় আমি সবসময় আমার সোনার বাংলা গান গাইতাম আর নাচতাম। আমি হইলাম জন্মপাগলী। ব্যাপারটা বোঝা গেছে তো? বুড়ো কাউকে দেখলেই দাদু ডাকতাম। আর কোনো কিছু দেখলেই, এটা কী? ওটা কী? জিজ্ঞেস করে-করে সবাইকে অস্থির করে তুলতাম। এই প্রশ্ন করার অভ্যাসটা আমার এখনো আছে। (আচ্ছা, আপনি কি প্রশ্ন করলেও তুলে আছাড় মারেন? এই রে! আরেকখান প্রশ্ন কইরা ফালাইলাম রে!) আমার পিসিমণিরা আমার মাকে ‘বৌদি’ ডাকতো দেখে আমিও মাকে ‘বুদি’ ডাকতাম। (এহহ্! আবার ভাইবেন না, আপনি আপনার মত ইশমার্টলি কথা বলতে পারি না। আসলে ওইসময়ে ছোটো ছিলাম তো, তাই ‘বৌদি’ উচ্চারণ করতে পারতাম না।)
আমার ঠাকুরমা তো আরেক মজার মানুষ। গল্প বলা শুরু করলে মাঝামাঝি পর্যন্ত গিয়ে আবার প্রথম থেকে শুরু করে, ভুল ধরিয়ে দিলে তখন আবার মাঝখান থেকে শুরু করে। ওকে খুব সহজেই বোকা বানানো যায়। যাদের খুব সহজেই বোকা বানানো যায়, ওদের আমার খুব ভাল লাগে। ঠাকুরমা বেড়াতে পছন্দ করে। যেকোনো বিষয় নিয়ে বানিয়ে কিছু বললে খুব সহজেই সেটা বিশ্বাস করে। ঠাকুরমার সাথে ঝগড়া করতেও অনেক মজা। ইচ্ছা করে করে রাগানোর কথা বলি, তখন সে রেগে বলতে থাকে, কবে যে এইটার বিয়ে হবে, শ্বশুরবাড়ি যাবে, তবেই আমার শান্তি! ঠাকুরমা গান পছন্দ করে খুউব। ফোক গান পছন্দ করে বেশি, তাই সব গানেই ফোক গানের সুর লাগিয়ে দেয়। মাঝে-মাঝে ফোক সুরে রবীন্দ্রসংগীত গুনগুন করে। হাহাহা…….. গান নিয়ে মজার কাহিনীও আছে। একবার আমি আর দাদু রংপুর থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। গাড়িতে আমার ঠিক পেছনের সিটেই একটা ছেলে এত সুন্দর করে মান্না দে’র গান গাচ্ছিল একটার পর একটা……কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই……. সবাই তো সুখী হতে চায়…….খুউব জানতে ইচ্ছে করে…….এই আছি বেশ…….তুই কি আমার পুতুল-পুতুল সেই ছোট্ট মেয়ে…….ওরকম হুবহু মান্না দে’র মত কণ্ঠ আমি আর কখনোই শুনিনি। বাড়ি এসে ঠাকুরমাকে এই গল্প শোনাতেই সে উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলে কী, “ও তাই! তাহলে ছেলেটার নামঠিকানা লিখে আনতে পারতি!!” আমি তো শুনে থ! বুড়িটা বলে কী! এমনিতেই সুন্দর দেখতেটেখতে কাউকে দেখলেই আমাকে ধরে কয়েকবার বিয়ে দিয়ে দিত, আর এবার কিনা ধরল গানওয়ালাকে! আর একদিন ঠাকুরমা ছোটো কাকুর মোটরসাইকেলে যে কেমন করে চড়ে বসেছিল তা যদি নিজ চোখে দেখতেন! ছেলেরা যেভাবে বসে দুইপাশে পা দিয়ে, ঠিক ওইভাবে বসেছিল। কাকুটাও যে কী! কিছুই বলছিল না। আমি না দেখলে পুরো এলাকা ওইভাবেই বসে ঘুরত। আর সবাই দেখে হাসত। কী বিচ্ছিরি কাণ্ড না, বলুন!
কথায় আছে, যে ব্যক্তি তালগাছ লাগায়, সে নাকি ওই গাছের তাল খেয়ে যেতে পারে না। গাছ বড় হতে অনেকদিন সময় লাগে তো, তাই। আমার দাদুর কপাল ভাল। তাল গাছ লাগিয়ে সেই গাছের তাল খাচ্ছেও। দাদুর বয়েস আশির কাছাকাছি, বয়স অনুযায়ী এখনো শক্তসমর্থ আছে। আমার দাদু শিবভক্ত। শিবের মতই দৃঢ়চেতা।
এই শোনেন না শোনেন না, আপনি আমার চিঠির ঠিকঠাক উত্তর দ্যান না ক্যান, হুঁ? ক্যান দ্যান না? ক্যান ক্যান?? আমার সেই কবে থেকে ইচ্ছে, শীতের দিনে বিয়ে করবো। ইচ্ছে অনুযায়ী ঠিক সময়েই আপনাকে খুঁজে পেয়েছি। ওরকম ইচ্ছে কেন, জানেন? এহহ্! যা ভাবছেন, মোটেও তা না! (গড ব্লেস ইওর নটি মাইন্ড!) শীতে খাবার টাটকা থাকবে, লোকজন নেমন্তন্ন খেতে এসে আমাকে গালি দেবে না। (আপনার তো আর সমস্যা নাই, সমস্যা তো সব আমার। আপনি তো মানুষের গালি খেতে খেতে চামড়া মোটা করে ফেলেছেন অলরেডি।) বিয়ের সময় কতো গাদাগাদা শাড়িকাপড় পরতে হয়, গহনা পরতে হয়, ভারি মেকাপ নিতে হয়। গরমের দিনে এত কিছু করা যায় নাকি, বলেন? সব সাজুগুজু নষ্ট হয়ে যায়। উফফ্ফ্! আপনি কিছুই বলেন না ক্যান, হুঁ?? শুঁড়ওয়ালা গণেশ একটা! এই যে দেখেন, আপনি এটা! উউউউ……… (আমি ভেংচি কাটছি আপনাকে।)
আচ্ছা, দেখি, বলেন তো, ইটামি টোটামিকে বিটালো বিটাসি অর্থ কি?? জানলে বলেন। আইসক্রিম খাওয়াব। প্রমিজ।
আমার মেসেজগুলো দিয়ে শুধু আপনার গল্প লিখতেই ইচ্ছা করে লিখতেই ইচ্ছা করে, তাপলে তাপলে আর কিছু ইচ্ছা করে না। আপনি একদম পচা! আর কোনো কথা বলব না আপনার সাথে। এই যে মুখে কুলুপ আঁটলাম।
বর্ণদূত-৫।
পরম পূজনীয় মহান গাধা!
আপনি আপনার শিক্ষাদান প্রক্রিয়ার ধরনে পরিবর্তন আনিতে পারেন, তবে উহা অবশ্যই আপনার প্রিয় শিক্ষার্থীদিগের আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে। শিক্ষার্থীরা যেই ভাবে আপনার শিক্ষাদান উপভোগ করিবে, আপনাকে সেইভাবেই অগ্রসর হইতে হইবে। এইখানে কদাপিও আপনার ব্যক্তিগত অভিরুচির প্রাধান্য থাকিবে না। গীত, বাদ্য, নৃত্যের সমাহার ব্যতীত যেরূপ সঙ্গীত কল্পনা করা দুরূহ, তদ্রূপ শিক্ষার সহিত আনন্দের সংমিশ্রণ ব্যতীত শিক্ষাদান প্রক্রিয়া ফলপ্রসূ হয় না।
শোনেন, এতক্ষণ মোটা কথা কইলাম, এখন কিন্তু চিকন কথা কমু। আপনি নিজেকে বদলাতে চেয়েছেন না? হুমম্! আপনি চাইলে অবশ্যই আপনার নিজের কিছু পরিবর্তন আনতে পারেন। এখন থেকে ফর্মাল প্যান্টশার্টের বদলে অফহোয়াইট কোরিয়ান হাফপ্যান্ট, ক্লিনশেভকরা বগলে বগলকাটা জেটব্ল্যাক থাই গেঞ্জি, সাথে পায়ে তেলাপোকা মারার চ্যাপ্টাকৃতির হাল্কা পেঁপে কালারের শেডদেয়া বার্মিজ চপ্পল পরতে পারেন। কোমরে একখান চাইনিজ ড্রাগনওয়ালা ইয়েলো বেল্ট, হাতে ম্যাজেন্টা কালারের স্টোনবসানো জার্মান ব্রেসলেট, কানে ছুঁচালো নর্থ আমেরিকান ব্রাউন ম্যাগনেট রিং আর গলায় সিঙ্গাপুরিয়ান হোয়াইট গোল্ডের চেইন পরতে পারেন। গ্রিন কালারের সুইস ঘড়ি পরবেন। কাঁধের পেছন দিকে নেভিব্লু উল্কি আঁকা থাকবে। দুইটা হাড়ের মাঝখানে একখান মনুষ্য কঙ্কালখুলি, এই ডিজাইনটা আপনার সাথে ভাল ম্যাচিং করবে। চুলে জেল দিয়ে শজারুর কাঁটার মত খাড়াখাড়া করে দিবেন। আবার সাদা ফিনফিনে ধুতিও (বেশি ফিনফিনে না। তাহলে টেকনিক্যাল প্রবলেমে পড়ে যাবেন।) পরতে পারেন, তবে গায়ে কিছুই থাকবে না; ভুঁড়ি যেন দেখা যায়, আজকাল ভুঁড়িই ফ্যাশন। অবশ্য আপনি চাইলে ভুঁড়িতে হৃদয়স্থাপন করতে পারেন, আই মিন, পার্মানেন্ট মার্কার দিয়ে একটা রেড হার্টসাইন আঁকতে পারেন। পায়ে পেয়ারা গাছের কাঠের লালরঙের খড়ম থাকবে! গলায় একখান ফেরেশ দেশি গেন্দা পুষ্পের মাল্য দিয়েন। পাবলিক চরম লাইক করবে। আপনার ছবি তুলে ফেসবুকে শেয়ার দিয়ে আগুনজ্বলা সুন্দরীরা কমেন্ট করবে, ছো ছুইট, বেবি! লাবয়্যু!! উমমমাআআআআহহহহহহ্…!!!!! ও আইচ্ছা, ভাল কথা, আপ্নের বিখ্যাত পটলচেরা চক্ষে একখান ক্যাটকেটে গোল্ডেন কালারের লন্ডনি চানগেলাচও দিয়েন। চোখনাকঠোঁট ফুটা কইরা স্প্যানিশ ডার্ক পার্পল কালারের রিং ঝুলাইতে পারেন। হাতের দশ আঙুলে সতেরোখান সতেরোরঙের ইন্ডিয়ান জেমস্টোন রিং দিলে ইশমার্টনেস আরো বাড়িবে বৈ কমিবে না।
পুরাই কমপ্লিট প্যাকেজ অব গ্লোবালাইজেশন! আপ্নেরে দেইখ্যা পোলাপাইন কাগজকলম হাতে নিয়া ‘বিশ্বায়ন’ রচনা লিখতে বইস্যা যাইব, আমি শিওর।
একি কাণ্ড! আপনার গাল লাল হয়ে গেল কোন দুঃখে! আপনার লজ্জা আছে দেখে বড়ই টাস্কিত হই। আমার এই কথাতেই আপনার এত লজ্জা, আপনাকে যদি আমি ইমোশনাল রোমান্টিক কথা বলি, তাহলে তো আপনাকে আর খুঁজেই পাওয়া যাবে না। বুঝসি, আপনাকে বোরকা পরায়ে রাখতে হবে। ভাবতেসি, আমাদের বাড়ির লজ্জাবতী গাছটার সাথে আপনার ফ্রেন্ডশিপ করায়ে দিব। আমায় মা একটা লজ্জাবতী গাছ লাগাইসে। সকাল-বিকাল জল ঢেলেঢেলে গাছটাকে তাজা করে তুলসে। পাতাগুলো স্পর্শ করলেই চুপসে যায়, আপনাকে মেসেজ পাঠালে আপনি যেমন করেন, ঠিক তেমনি। জানেন, লজ্জাবতী গাছ দু’রকম হয়। সাদা আর লাল। আমার বান্ধবী আপনার নাম দিসে, লাল লজ্জাবতী। আপনি নাকি মেয়েদের মেসেজের উত্তর দ্যান না? ঘটনা কি সইত্য?
কুকুররা ফ্যামিলি প্ল্যানিং জানে না। মজার কথা, আমার বাসার সামনে একটা কুকুরের নয়টা বাচ্চা হইসে। সবগুলাই শাদা বাচ্চা। এরকম উর্বর কুকুর কখনো দেখি নাই। জানেন, সবগুলা বাচ্চা একসাথে দুধ খেতে পারে না, সাতটা একবারে খায় আর বাকি দুইটা পাশে মারামারি করে। সবগুলা যখন একসাথে ডাকা শুরু করে তখন কী যে মজা লাগে! আহা! এই যান্ত্রিক ঢাকা শহরে বসেও এত সুন্দর দৃশ্য দেখতে পাই। এ বড়ই সুখের বিষয়। আচ্ছা ভাল কথা, হুমায়ূন আহমেদের ওই কুকুরের গল্পটা পড়সিলেন?
আমার একখানা মহতী সিদ্ধান্ত জানায়ে এই মহান চাপাবাজকে (আপ্নের পিলিজ লাগে, পড়েন, ‘মোটিভেটরকে’) পেইনপ্রদান কার্যক্রমে সাময়িক খ্যামা দিতাসিঃ আমি অদ্য হইতে আর কোনোদিনও কোনো কিউট কুকুরছানাকে ‘কুত্তার বাচ্চা’ বলিবো না; উহার বরাদ্দ অন্যত্র। উহা মনুষ্যজাতির কেবল সম্পত্তিই নয়, উহা মনুষ্যজাতির সম্পদও বটে।
ইতি-
আপনার গুণমুগ্ধ
প্যানপ্যানানি বেগম
বর্ণদূত-৬।
সুন্দরী মেয়েদের ফটো দেখে আপনার মেজাজ খারাপ হয় কেন? আপনার বয়স হয়েছে। এখন আপনার স্পর্শপ্রেম দরকার। প্ল্যাটোনিক প্রেম মুড়ি খাক! এটাই তো আপনার মনের কথা, না? লোকের বউকে দেখার চাইতে নিজের বউকে দেখেন। লোকের বউকে দেখার মধ্যে শুধু মহত্ত্ব ছাড়া আর কী-ই বা আছে? আপনার মাথায় শুধুই ঘুরপাক খায়ঃ চেহারা চেহারা আর চেহারা! উফফ্! চেহারায় কী আছে? আমার মত কুৎসিত চেহারার একটা মেয়েকে বিয়ে করে ফেলুন। আমাকেই করে দেখুন না কী হয়! আপনি হবেন পৃথিবীর সবচেয়ে টেনশন-ফ্রি শান্তিময় পুরুষ। আপনার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী আপনি নিজেই! আপনাকে শুধু এটা ভাবলেই চলবে, আপনি কালকের চাইতে আজকে আমাকে বেশি ভালোবাসতে পারছেন কি না! আপনার সামনে এই একটা মাত্র চ্যালেঞ্জ! দেখবেন, খালি শান্তি শান্তি আর শান্তি! ওম শান্তি ওম! এভাবে করতে করতে একটা সময়ে আপনি আমাকে সত্যি-সত্যি ভালোবেসে ফেলবেন। ভালোবাসা কখনো-কখনো অভ্যস্ততায়ও হয়। মন থেকে না নিতে পারেন, অন্তত মেনে নিয়েই দেখুন না কী হয়! মেনে নিতে-নিতে মনও কখন যে আমাকে নিয়ে নেবে তা আপনি নিজেও বুঝতে পারবেন না। হোক ওটা স্রেফ ভাললাগা, তবুও। এরপর দেখবেন, আমি ছাড়া দুনিয়ায় আর কোনো মেয়েই নাই। বাকিরা সব পেত্নী আর শাঁকচুন্নি। আমার বুদ্ধি শুনেন, কাজে আসবে। লাইক দিতে হয় সুন্দরী মেয়ে দেখে, আর বিয়ে করতে হয় ভাল মেয়ে দেখে। বুঝেছেন? অবশ্য, ইদানীং ভাল মেয়েরাও সুন্দরী হয়ে যাচ্ছে। (নাকি, সুন্দরী মেয়েরা ভাল হয়ে যাচ্ছে?)
একটা বুদ্ধি দেন তো! এক ছোট ভাই আরেকজনের গার্লফ্রেন্ডের কাছ থেকে ছ্যাঁকা খেয়েছে। প্রেম না করেই ছ্যাঁকা খাওয়া প্রেম করে ছ্যাঁকা খাওয়ার চাইতে বহু গুণে মারাত্মক। কী করা যায় বলুন তো! ওই মেয়ের বয়ফ্রেন্ডকে ধরে একটা মাইর দেয়া দরকার না? অন্য কেউও পছন্দ করে বসতে পারে, এরকম একটা মেয়ের সাথে প্রেম করার মত দুঃসাহস ওকে কে দিয়েছে? ভাগ্যিস, আপনার গার্লফ্রেন্ড নাই। বেচারি আমার হাত থেকে বেঁচে গেছে। ভাল কথা, কাল আপনাকে স্বপ্নে দেখলাম। দেখলাম, আপনি আধশোয়া হয়ে বসেবসে তিন গোয়েন্দার বই পড়ছেন। আর আমি সরিষার তেল, পেঁয়াজমরিচ আর চানাচুর মেখে ঝালমুড়ি খাচ্ছি। খেতেখেতে জিভে কামড় খেয়ে ঘুম ভেঙে যায়। আচ্ছা, ইদানীং আপনার মাথায় এগুলো কী সব আলতুফালতু আইডিয়া গিজগিজ করে বলুন তো? কী লিখছেন ছাইপাঁশ এসব? দেখলাম, রাশান ফিকশনও ধরেছেন। শোনেন, এই পাগলীর একটা বুদ্ধি নেন। এখন থেকে টম অ্যান্ড জেরি’র বাংলায় ডাবিং করা সিরিজটা দেখবেন। সাথে ওগি অ্যান্ড দ্য ককরোচেস। দেখবেন, বুদ্ধি রাখার জায়গাই পাবেন না। ফেসবুক? সে তো কোন ছার!
আমি ঠিক করেছি, এখন থেকে প্রতিদিন সকালে উঠে ফকিরকে ২ টাকা করে দিব যাতে আস্তেআস্তে আপনার একটা বিশাল ভুঁড়ি হয়। আমি চাই, ভুঁড়ি দেখেও বিয়ে করতে রাজি হয় এমন কোনো মেয়ে আপনাকে বিয়ে করুক! আপনি একটাও সুন্দরী পাবেন না। হিহি…… আচ্ছা যান, ২ টাকা না, আড়াই টাকা দিব। আপনার কাছে আটানা আছে? আমাকে ভাংতি দিয়েন তো! আপনার জন্যই তো সব করছি! এইটুকু হেল্প তো করতেই পারেন মশাই! হাঁ করে আছেন কোন দুঃখে? মুখে মশা-মাছি ঢুকে যাবে তো! আমার সাথে ফোনে কথা বলেন না তো, প্রাণভরে দোয়া করি, অন্য মেয়েদের সাথে কথা বলার সময় আপনার মুখে শুধু মশামাছি ঢুকুক শুধু মশামাছি ঢুকুক।
এমনিতে তো আপনার স্ট্যাটাসে কমেন্ট করলে আপনাদের বেহায়া পুরুষজাতি ইনবক্সে জ্বালায়। দুএকটা আজাইরা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টও আসে, ফলোয়ার বাড়ে। আর যদি একবার জানতে পারে আমি আপনার সাথে কথা বলি, তাহলে তো আমার আইডিই হ্যাক করে ফেলবে। যদি আমার নামে কাউকে বলেছেন তো, আপনার একদিন কী আমার দুইদিন! আমাকে আরেকবার পচান, দেখেন, আমি আপনার কী দশা করি! আচ্ছা, আপনি কি জানেন, আপনি যে একটা পাগল? আপনি কীসের পাগল, বলি? থাক, বললে আপনি লজ্জা পাবেন। অবশ্য, হ্যান্ডসাম ছেলেদের লজ্জা পেতে দেখলে আমার খুবই ভাল লাগে। আমি ওদের দুই চোখে দেখতে পারি না। ওদের আবার লজ্জা থাকে নাকি? আপনি হ্যান্ডসাম, এটা ভেবে আবার নাচানাচি শুরু করে দেবেন না যেন! নাচলে কিন্তু আপনার গলায় ধুতুরা ফুলের মালা পরায়ে দিব। আপনার পোস্টিং এয়ারপোর্টে তো? আপনি এয়ারপোর্টের ফ্লোরে নাচতে নাচতে গাইবেন, ঝুম বালিকা ঝুম বালিকা ঝুমা ঝুমা লে…… সব স্মাগলাররাও আপনার সাথে-সাথে নাচবে। আহ্ আহ্! ভগবানের কী লীলা খেলা! বড়ই সৌন্দর্য! ভাল কথা, ধুতুরা ফুল চিনেন তো? একটা ফুলের মালা পরবেন, আবার সেই ফুলটা চিনবেনও না। আপনি এরকম বেরসিক কেন? মিস্টার বিবি একটা—বোরিং বান্দর! হুহ্!
ভেবেছিলাম, কিছুদিন পর আপনাকে বিয়ে করব, কিন্তু এখন ভাবছি, শুভ কাজে হুদাই দেরি করব কেন? আপনি হনুমান সেজে কলা খাবেন, লেজ নাড়িয়ে নাচবেন। আর আমি টিয়াপাখি হয়ে আপনার মাথায় বসেবসে কিচিরমিচির করব। সেই দৃশ্য ভিডিও করে ইউটিউবে আপলোড করে দেবো। আচ্ছা, আপনি গিটার বাজাতে পারেন? গিটারবাজানো হনুমান হলে ভাল হতো, পাবলিক বেশি খেতো। আপনার জন্য আমি কী পরিমাণ স্যাক্রিফাইস করছি, আপনি কিছু বুঝতে পারছেন? আপনি তো এমনিতেই রেডিমেড হনু, আমি তো আর অনেক সাধের টিয়া না! আমি শুধু আপনার জন্য, হ্যাঁ মিস্টার, শুধুই আপনার জন্য টিয়াপাখি হয়ে আপনার উকুনওয়ালা মাথায় বসতে রাজি হয়ে গেছি! কী আজব! এই মুহূর্তে জিটিভি’তে হনুমান দেবতার ড্রামা দেখাচ্ছে, আর আমার বাসার পাশের কলাবাগানে একটা দুষ্টু টিয়া ডেকে উঠল! পুরাই টাস্কি খেয়ে গেলাম! মায়া, বুঝলেন হুলো মশায়? সবই মায়া! সখা, তোমারে ভালোবাসি, তোমারেই বিবাহ করিব। তুমিও নাচিতে-নাচিতে আমারে বিবাহ করিবে। না করিলে জোর কইরা কলার ধরিয়া হ্যাঁচকা টান মারিয়া তোমারে লইয়া পলাইয়া যাইব!
আমি আসলেই কনফিউসড যে আপনার বিহেভিয়ারে আপনি যা দেখান, সেটা কি আরোপিত? নাকি, আপনি আসলেই ওরকম? এটা কী ধরনের ব্যবহার যে আমি আপনাকে ফোন দেই আর আপনি ঘ্যাচাং করে ফোনটা কেটে দেন? দর্জিরাও তো এত দ্রুত কাপড় কাটতে পারে না! আপনি কি শুধু মেয়েদের সাথেই এমন ব্যবহার করেন? আবার আপনি আমাকে বলেন যে আমাকে আপনার ভাল মেয়ে মনে হয়, আবার আপনি আমার ফোনও কেটে দেন। তাহলে কি আমি ধরে নেবো আপনি শুধু খারাপ মেয়েদের সাথেই কথা বলেন? নাকি, আপনি আসলে মেয়েদের সাথে এই ড্রামাটা প্লে করে মজা পান? কী মনে করেন নিজেকে? মনেমনে মনে হতে থাকে, ফোনটা কেটে দিলাম, আর ফারাহ খানের নেক্সট মুভির হিরো হয়ে গেলাম, না? শাহরুখকে ছাঁটাই করে আপনাকে হিরো বানাবে! আহ! শখ! শখের তোলা নাকি লাখ টাকা! আপনার শখের তোলা তো মনে হয় কোটি ছাড়াবে! যত্তোসব!
মায়া ব্যাপারটার একটা নিয়ম কী, জানেন? ভুল মানুষের প্রতি মায়া বাড়ালে সেটা বিপর্যয় ডেকে আনে। মায়া বাড়ালে মায়া বাড়তেই থাকে, কমে না; ভুল মানুষের প্রতি আরো দ্রুত বাড়ে। ওই যে লোকে কী সব পোশাকি নামটাম দিয়েছে না! ইগো প্রবলেম ফিগো প্রবলেম? ওসব ফালতু কথা! কারও প্রতি মায়া লাগলে ওসব কিছুই থাকে না। আমি আপনার ভালোবাসা চাইও না। আমার একটা বড় সমস্যা হল, আমি অনেক ভালোবাসতে পারি। অনেক মানে, অনেকবেশি। আমি যে আপনার মত বড় মানুষ নই! বড় মানুষরা বড়বড় কাজে এত বিজি, ভালোবাসার সময়ই কোথায়? বড় মানুষকে ভালোবাসার প্রথম শর্ত, বড় মন থাকতে হবে, ভালোবাসা না পাওয়ার কষ্ট ভুলে থাকার মত বড় মন। ওটা যে আমার নেই। আমার মত ভালোবাসতে আপনি কখনোই পারবেন না। এটা শিখতে হলে আপনাকে তপস্যা করতে হবে, বহু বছরের একনিষ্ঠ কঠিন তপস্যা। আমার আপনার ভালোবাসার দরকারও নেই। শুধু আমাকে ভালোবাসতে বারণ করবেন না, প্লিজ। আমার ভালোবাসা ভগবানের মনে নাড়া দিলেই আমি নিজেকে ধন্য মনে করব। আপনি কী ভীষণ রকমের বিশ্রী একটা নেশা! উফফ্! আপনাকে কখনোই ভুলতে পারব না। দেখি, ভগবান আমার প্রার্থনা পূরণ করেন কবে, আর আপনার মোভেনপিক গলে জল হয় কবে।
সেদিন বিকেলবেলায় দেখলাম, আপনি রিক্সায় একটা পার্পল কালারের শার্টে কোথায় যেন যাচ্ছেন। টিএসসি’র ওদিকটায়। আপনাকে কী যে সুন্দর দেখাচ্ছিল! আপনার কালার সেন্স বেড়েছে। গুড! ভেরি গুড! আগে তো পচাপচা সব কালার পরতেন। একটা পিকক ব্লু কালারের শার্ট কিনবেন, সাথে ব্ল্যাক স্যুট, লাইট পার্পল টাই, ব্ল্যাক বেল্ট আর সু। দেখেন, কী হয়! সালমান খান যদি ফেল না মারে তো ওর খবর আছে! আমিই ওকে নিজ দায়িত্বে ফেল করিয়ে দিব! আপনি সামনাসামনিই দেখতে বেটার। ছবিতে মোটকু লাগে। বাস্তবে মোটকুয়ার। হিহি…….. ভাল কথা, আপনার কালকের নোটের থার্ড প্যারার থার্ড লাইনের ‘পারব’ বানানটা ঠিক করেন। মানুষের ছোটবেলার ছবিতে তো সমানে লাইক মারছেন। মানুষকে তো ঠিকই বেইজ্জত করতে পারেন। নিজের কিছু ওরকম ছবি পোস্ট করেন তো দেখি সাহস থাকলে! আমরাও একটু লাইকটাইক মারি।
আপনি বলেন আমি নাকি দেখতে পচা! হুহ্! আপনার মত শাদা ভাল্লুক হওয়ার চাইতে পচা চেহারার হওয়াও অনেক ভাল। এই যে ভুঁড়িওয়ালা গণেশঠাকুর, আপনি হুলো বেড়ালের মতন কীভাবে সেদিন বললেন যে বাংলাদেশের মেয়েরা নাকি শুধু খায়দায় আর ফ্যাশন মারে? ওদের মাথায় কিছুই নাই, না? ওরা কিছু লিখতে পারে না? আমি কি তাহলে ইন্ডিয়ান মেয়ে? ভুল করে টেকনিক্যাল প্রবলেমে পড়ে বাংলাদেশে আমদানি হয়ে গেছি, না? অ্যাত্তো বড় প্রেস্টিজের ফালুদা? দাঁড়ান, এর প্রতিশোধ আমি নিবই নিব। একটা বুদ্ধি এসেছে! আপনাকে বাদ দিয়ে কোলকাতায় গিয়ে উত্তম কুমারের নাতি গৌরব কুমারকেই বিয়ে করে ফেলব। জীবনে রবিকে না পাই, অন্তত গৌরব নিয়েই থাকি!
বর্ণদূত-৭।
ময়লার ডাস্টবিন, পচা ইঁদুর, দুষ্টু বেড়াল, খারাপ লোক, পাজি মানুষ! আপনার সাথে আমার কথা বলাই ঠিক না। আপনি এত মুখচোরা কেন, হুঁ? বলে দিতে পারেন না, ভালোবাসি? কী হয় একটু বললে? কত জনের সাথে কত বকবক করেন, আর আমাকে এই ছোট্টো কথাটাও বলার সময় নেই আপনার! মেসেজের রিপ্লাই দিতে পারেন না? আপনার বিখ্যাত ‘হুঁ’, ‘না’ এইসব পাঠালেও তো পারেন। আমি কি বুঝি না যে আপনি ব্যস্ত? ঘোড়ার ডিম ব্যস্ত আপনি! যত্তোসব ঢং! আপনাকে ফোন দিলেই আপনার ভাব বেড়ে যায়। আমার বয়েই গেছে আপনাকে ফোন দিতে! দেখবেন, আর দেবো না। সেইদিন ওরকম করে বকলেন কেন আমাকে? ভেবেছেন, বকেটকে পার পেয়ে গেছেন? মেয়েমানুষ কী জিনিস, সেটা তো এখনো জানেন না! বকা দিতে জানেন কিছু? ওরকম করে বকা দেয় টিনএজাররা। ভেবেছেন, ওরকম করে বকলেন, আর বয়স কমে টিনএজার হয়ে গেলেন, না? ইসসস্! অ্যাত্তো সোজা নাকি? আপনি একটা বুড়ো ভাল্লুক। বুঝেছেন?
সুন্দর-সুন্দর সেলফি দেন শুধু, না? ইসসস্! উনার প্রিয় রঙ নাকি ব্ল্যাক! আইডিয়া আছে কিছু নিজের সম্পর্কে? আপনার রঙ হোয়াইট, ব্ল্যাক না। আপনাকে ওতেই বেশি মানায়। বিয়েটা হোক, আমার কাছে আসেন, সারাদিন আপনাকে হোয়াইট পরিয়ে রাখব। আর রাত জেগে ফেসবুকে থাকা বের করব। চেহারায় যে বুড়োবুড়ো ভাঁজগুলো পড়ছে, খেয়াল করেছেন? জাগেন, আরো রাত জাগেন। এখন তো সবাই দাদা ডাকে, দু’দিন পর দাদু ডাকবে। আমিও ডাকব। হিহি………
আমাকে ভালো না বেসে আপনি পালাবেন কই? আপনি লিখেছেন, মন থেকে ঈশ্বরের কাছে চাইলেই পাওয়া যায়। ইসসস্! এবারের পুজোয় বড্ড ভুল হয়ে গেছে! মা দুর্গার কাছে চেয়ে নিলেই হত যাতে সামনের লগ্নে আপনাকে বিয়েটা করতে পারি। এরপর আপনি নিজেই ভয়েভয়ে পঞ্জিকা খুলে দেখতেন, সামনের লগ্ন কবে। আপনার বিয়ের জন্যে আপনার তো কোনো টেনশনই দেখছি না! কী আর করা! আমাকেই করতে হচ্ছে! বড্ড জ্বালান আপনি! নিজের বিয়েটাও ঠিকভাবে করতে পারেন না! শুনে রাখুন, বিয়ের পরে এইসব আর চলবে না। সুশান্ত মানে সুশান্তই হয়ে যাবেন। নো বাঁদরামি! ঠিক আছে? আমার টেক্সট পড়ে হাসছেন, না? হাসেন হাসেন। ফেসবুকের ছবিতে তো হাসতেও পারেন না। ভাব, না? চেহারা খুব ভাল, না? তাই কম হাসলেও চলে। এটাই ভাবেন, বুঝি তো! খুব ভুল কথা। আপনার চেহারা মুখপোড়া হনুমানের মত। আপনি কালকে থেকে শুধু কলা খাবেন। না, আজকে থেকেই খাবেন। হনুমানের আবার কালকে আজকে কী?
আপনি মা দুর্গাকে প্রণাম করেননি তো, না? আমি জানি। তাই আপনার উপর মা রেগে আছেন। খুউব! কিন্তু আমার উপর মা খুব খুশি। কীভাবে বুঝলাম? আমাদের বাড়িতে দশমীর দিনে আমরা পিকনিক করি। গত দু’বছর ধরে সেখানে আমিই রাঁধি। এবারেরটা বেশি ভাল হয়েছে। তার মানে, মা আমাকে অনেক ভালোবাসেন। আপনাকে বাসেন না। আপনি একটা বানর, উল্লুক, শিম্পাঞ্জি। উফফ্! আপনার লেজ কই? দেখবেন, আপনি বড় হলে আপনার একটা লেজও হবে। আপনি আর কত বড় হবেন? ভাবছেন, এমনিএমনি বকছি, না? এমনিএমনি না। এইবার আমি অষ্টমীর দিন ৪টা পাজি কুকুরের হাত থেকে একটা সাদা বেড়ালের বাচ্চার জীবন বাঁচিয়েছি। আপনি কী করেছেন, শুনি? হুলো বেড়াল একটা! কিছুই করেননি। আপনার কথা মা শুনবেন কেনো? আমার কথা কিন্তু মা শুনবেন। একদম ঠিক-ঠিক! আপনি শুধু চেয়ে-চেয়ে দেখবেন আর বলবেন, মা দুর্গার জয় হোক। হাসছেন কেনো? গণেশ একটা! একদম হাসবেন না। হাসলে মন আর মুখ দুটোই খুলে হাসবেন। মুখ খুলে হাসতে ভয় পান কেন? দাঁত ব্রাশ করেন না বুঝি? ওরকম দুষ্টু-দুষ্টু চোখের হাসি না; না মানে, একদমই না। ঠিক আছে? ভাবি, কোন দুঃখে যে আপনার প্রেমে পড়তে গিয়েছিলাম। প্রেমে পড়ার চাইতে মা লক্ষ্মীর পাঁচালি পড়াও ঢের ভাল। দোল পূর্ণিমার নিশি, নির্মল আকাশ………দেখি বলুন তো, লক্ষ্মীর পাঁচালির লেখক কে? পারেন না, এই তো? আমিও পারি না! হায়, এখন কী হবে?
কী আর করা! প্রেমে পড়েই যখন গেছি, আর ছাড়ছি না কিছুতেই! পড়েই থাকি, কেমন? প্রথমে ছিলাম আইকা আঠা, আস্তেআস্তে সুপারগ্লু, এখন হয়েছি ফেভিকল। ছাড়াতে পারবেন না কোনোভাবেই! ছাড়াতে গেলে ছিঁড়ে যাবেন। আসলে আপনার সাবকনশাস মাইন্ডে আমি আছি। বুঝতে পারছেন না, এই তো? বুঝতে না পারলে একদম আনকনশাস করে ছেড়ে দিবো। আমাকে তো চিনেন নাই এখনো।
আপনার ভাইদের ছবি দেখলাম। আচ্ছা, আপনার সব ভাইয়ের মুখ গোলাকার আর আপনার মুখ লম্বাকার কেনো? আমি শিওর, ভগবান আপনাকে বানানোর সময় আর টাইম দুটোই কম দিয়েছেন। তাই দায়সারা করে বানিয়ে ডাইরেক্ট এখানে পাঠিয়ে দিয়েছেন—যাহ্ ব্যাটা! ঠিকই আছে। আপনার মত হনুমানের জন্যে যে টাইম দিয়েছেন, এইটাই তো বেশি! আবার এমনও হতে পারে, আপনাকে নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করে যখন দেখলেন, কিচ্ছু হয়নি, একটা ভোঁদড় হয়েছে, পরে আর রিস্ক নেননি, ওভাবেই এক্সপোর্ট করে দিয়েছেন! এইসব পড়ে-পড়ে আমাকে খুব বকা দিচ্ছেন, না? দেন যত খুশি। আমি আর আপনার বকাকে ভয় পাই না। বেশি বকা দিলে একদম একে-৪৭ দিয়ে গুলি করে দিবো। টিঁশিয়াঁও! জানি তো, মেইল পড়ে এখন দাঁত ৩২টা বের করে হাসি দিচ্ছেন। নাহলে আপনার দাঁত না-দেখানো বিখ্যাত মোনালিসা-টাইপ হাসি! কেন করছেন এরকম? আশ্চর্য! আপনি কি মোনালিসা নাকি? ওইভাবে হাসেন কেন? তার চেয়ে ভালো, টমের মত সামনের ৪টা দাঁত বের করে হাসি দেন। পুরাই টম একটা! আর যা-ই করেন, জেরিকে ওভাবে জ্বালাবেন না, মনে থাকবে? রেগে যাচ্ছেন নাকি আবার? তাহলে বলিউড ভিলেন অমরেশ পুরির মত চোখ দুটোকে বড়বড় করে গর্জন শুরু করেন। তবে গর্জন করার সময়ে দুই চোখের ব্যালেন্স ঠিক রাখবেন। একটা বড় আরেকটা ছোট না হয়ে যায় যেন। তাহলে দেখাবে চাইনিজ চিংচুং মিচকা শয়তানের মত। আচ্ছা, আপনি কি জানেন, আপনার চেহারায় একটা চাকমা-চাকমা ভাব আছে?
আপনি পুরাই মেয়েদের মত। এত ফর্সা গায়ের রঙে জীবনেও গার্লফ্রেন্ড হয় না। শাদা শয়তান একটা! মানুষকে বেশি বলেন তো, এখন আপনি নিজে স্প্রাইট দিয়ে ভিজিয়ে মুড়ি খান। আমার অনেক দয়ামায়া, তাই আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি। আর আপনি? বেশি খারাপ লোক একটা! দাঁত থাকতে মানুষ দাঁতের মর্যাদা দেয় না। কী হাসি, না? আপনি ঢাকায় আসলে আমাকে জানাবেন। আমি আপনাকে মিমিক্রি করে দেখিয়ে দিব আপনি কোন স্টাইলে ছবি তোলেন। ইসসস্! ওটাও নাকি আবার স্টাইল! হাসি থামান এইবার! আর কত হাসবেন? শুধু আপনিই জোকার না, আমিও জোকার। বুঝেছেন এইবার? আপনি যেমন ফেসবুকে বন্ধুদের হাসান, তেমনি আমিও আপনাকে হাসাই। আমার জন্যে একটা মোভেনপিক পার্সেল করে ঢাকায় পাঠিয়ে দিবেন। রতনে রতন চিনে, জোকারে জোকার চিনে। আপনার কথা মত বিয়ে হতে হয় প্রপোরশনাল। তাই বিয়েটা আপনাকেই করছি।
কাঁদেন কাঁদেন, যত ইচ্ছা কাঁদেন। ছেলেরা নাকি বিয়ের পরে কাঁদে। আপনি নাহয় আগেপরে কাঁদলেন। অসুবিধা কী? আমি শুধু বিয়ের সময় কাঁদব। হিহি………… প্রেমের জাতীয় সংগীত কী, জানেন তো? জানেন না? তাহলে জেনে নিন। চিরদিনই তুমি যে আমার, যুগেযুগে আমি তোমারই …….এটা। ……… আর বিদায় সংগীত হলো, আবার হবে তো দেখা, এ দেখা শেষ দেখা নয়তো ………… সো, নো ছাড়াছাড়ি! উউউহাহাহাহাউউউউহাহাহাআআআআআ ………… হাঁ করে বসে আছেন কোন দুঃখে? কী আর করবেন! এটাই ছিল আপনার কপালে। এখন আর সময় নষ্ট না করে আকাশের ঠিকানায় চিঠি লেখা শুরু করেন। কবুতরের পায়ে বেঁধে চিঠি পাঠিয়ে দেবেন। আপনার কাছে সামান্য কবুতরও নাই, না? কবুতর না থাকলে আপনার কাছে আছেটা কী, শুনি? কাক? কবুতর কিনেন, বুঝেছেন? কবুতর কিনে কী করবেন, বলেন তো? কেটে রান্না করে খেয়ে ফেলবেন, তাই না? উফফ্ফ্! এত ভুলোমন কেনো আপনার? আমি কী রান্না করে খাওয়ার জন্যে কবুতর কিনতে বলেছি আপনাকে? কবুতর খাওয়ার কথা আরেকবার মনে আনলে একদম ধরে জোর করে কাউয়া বিরিয়ানি খাইয়ে দিব!
আপনার তো আবার ঢংয়ের শেষ নাই। আপনি না পুরুষমানুষ? এত ঢং কীসের আপনার? সামনে থেকে হাতে চুড়ি না পরে আর কক্ষনো ঢং করবেন না। রঙিন কাঁচের চুড়ি, মনে থাকবে তো? যেদিন আমি অন্য বাড়িতে গিয়ে পুজোর ফুল হাতে আপনার জন্য ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করব, সেদিন আমার কথা খুব মনে পড়বে আপনার, দেখবেন! ডাকবেন, হাত বাড়িয়ে খুঁজবেন; তবুও আমি আর কিছুতেই আসব না। আপনার জন্যে কাঁদবও না। একটুও না একটুও না। থাকেন আপনি আপনার ঢং নিয়ে! আছে কিছু মানুষ আপনার মত। হারানোর পর খোঁজে। ঢং!!
বর্ণদূত-৮।
হে নূতন,
দেখা দিক আর-বার জন্মের প্রথম শুভক্ষণ।।
তোমার প্রকাশ হোক কুহেলিকা করি উদ্ঘাটন
সূর্যের মতন।
রিক্ততার বক্ষ ভেদি আপনারে করো উন্মোচন।
ব্যক্ত হোক জীবনের জয়,
ব্যক্ত হোক তোমা মাঝে অসীমের চিরবিস্ময়।
~ রবি ঠাকুর
শুধু এই কথাটুকু হৃদয়ের নিভৃত আলোতে
জ্বেলে রাখি এই রাত্রে
তুমি ছিলে, তবু তুমি ছিলে।
~বুদ্ধদেব বসু
এই যে হুলোমশাই! শুভ জন্মদিন!
জন্মদিনে শুধু কেক কাটেন, নাকি মায়ের হাতের পায়েসও খান? আমাদের এলাকায় কেক কাটুক আর ফিতা কাটুক (আর আপনার লেজই কাটুক), লুচিপায়েস সাথে থাকে-ই। অবশ্য, আপনাদের কালচার ভিন্ন রকমের হতে পারে।
সকালে উঠে জোড়াশালিক দেখে প্রণাম করবেন, তাহলে দিনটা ভাল যাবে। শালিক পাখিদের ঝগড়া শুনেছেন কখনো? একদিন শুনে দেখুন কেমন লাগে। তাদের বেশির ভাগ ঝগড়া হয় বাসা বানানোর জায়গাদখল নিয়ে। মজার না? নিজেকে তো হুলো বেড়াল ভাবেন। বেড়ালের চোখের মণি খেয়াল করেছেন কখনো? স্বাভাবিক অবস্থায় কেমন থাকে, আর ভয় পেলে কেমন হয়। খেয়াল করে দেখবেন। এরপর, আমাকে জানাবেন, কেন খেয়াল করতে বললাম। আপনি তো সবাইকে শেখান, আজ আমি আপনাকে একটা কথা শেখাই। আমি জানি, আপনি এটা জানেন না। আমার ধারণা, আমি কখনো-কখনো আপনার অজানাটাকেও অনুভব করতে পারি। আপনি কি জানেন কুকুর, গরু তাদের বাচ্চাদের কতদিন পর্যন্ত মনে রাখে? কুকুর মনে রাখে এগারো মাস, গরু মনে রাখে দুই বছর, আর মানুষ মনে রাখে আজীবন; তবে এদের মধ্যে শুধু মানুষই অকৃতজ্ঞ হয়। এটা জানতেন না তো, তাই না?
আপনাকে কেন ভাল লাগে, জানেন?
১। আপনি সংস্কৃতিমনা। আপনার মধ্যে রাবীন্দ্রিক চেতনা আছে। (যদিও রবির চেয়ে আপনি ৫ ইঞ্চি খাটো। হিহি…..)
২। আপনি বিনামূল্যে সবার মনের মধ্যে স্বপ্ন বুনে দিচ্ছেন। এটা অনেক বড় একটা কাজ। মানুষ তো তার স্বপ্নের সমান বড়। (তবে কিছু লোক আপনাকে সহ্য করতে পারে না। দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই ওদেরকে চিনতে শুরু করুন, প্লিজ।)
৩। আপনি মানুষকে অনেক হাসাতে পারেন। তবে আপনি নিজে কবে হাসবেন, সেটার জন্যে পঞ্জিকা খুলে বসতে হয়। কবে শুভ দিন আসবে, আর আপনি দাঁত দেখাবেন…….. আপনাকে দেখলে তো ভয়ে কথাই বলতে ইচ্ছে হয় না। আপনার মত এত উচ্চমার্গের একটা ফাজিল মানুষের এত ভাব ক্যামনে থাকে, সেটাই একটা গবেষণার বিষয়।
৪। আপনার ভোজনপ্রিয়তা আর খুব দ্রুত খেতে পারার ব্যাপারটা আমার ভাল লেগেছে। এছাড়াও আরেকটা কারণ আছে সেটা খুবই কনফিডেন্সিয়াল, তবে অবশ্যই পবিত্র।
ছবি তো নিশ্চয়ই তুলবেন, কিন্তু কোন স্টাইলে? আপনার তো আবার স্টাইলের অভাব নাই। মেয়েদেরও এত স্টাইল থাকে না। তবুও বলছি, ছবি তুলবেন আপনার সেই চিরচেনা স্টাইলে!! বোঝেননি, এই তো? আরে বাবা, প্যান্টের পকেটে দুই হাতের দুই বৃদ্ধাঙ্গুল ভরে ঘাড় বামদিকে অথবা ডান দিকে বাঁকা করে ছবি তুলবেন!! তবে বেশি বাঁকাবেন না যেন! তাহলে ঘাড় ব্যথা করবে। আজকে টম কিংবা মোনালিসার মত হাসি দিয়েন না, মিস্টার বিনের মত হাসি দিয়েন। সাথে বডি ল্যাংগুয়েজটাও; যদিও আপনাকে ওই দুই হাসিতেই মানায় বেশি।
আপনার জন্য একটা ই-কেক পাঠালাম, একটা ইশপিশাল বিলাইয়ের ছবিসহ। ওই মিয়াঁওটা আপনি। বুঝসেন? পুডিংয়ের দিকে ওইভাবে তাকায়ে থেকে লাভ নাই। পুডিংটা আমি খেয়ে ফেলব, আপনাকে একটুও দিব না। হিহি……..
ইশশশ রে! এই পাগলীর মেসেজ পড়তে যেয়ে আপনার পাঁচ মিনিট সময় নস্ট হইয়া গ্যালো! ……..
(আমি ছেলেবেটির পাঁচ মিনিট পাইসি! খুশিতে তো আমার পাশের ছাদের বানরটার সদ্যোজাত বাচ্চাটারে একটা গোলাপি রঙের ফ্রক কিনে দিতে মন চাইতেসে! ও আচ্ছা, আপনাকে বলা হয় নাই, আমি শুয়ে-শুয়ে জানালা দিয়ে যে বানর ফ্যামিলিটাকে রোজ দেখি, ওদের ফ্যামিলি মেম্বার আরেক জন বাড়সে। ওরা এখন ৬ জন। কী আর করা! শুধু বানররাই তো ফ্যামিলি প্ল্যানিং করে না! আপনাদের ফ্যামিলি প্ল্যানিং ক্যাডাররা বসে-বসে কী করে, হুঁউউউ? বানর বলে কি ওরা মানুষ না? ওদের দেখার কি কেউই নাই? ওদের দিকে কি শুধু আমিই তাকায়ে থাকব?)
……… এরচে’ একটা সুন্দরী মেয়ের ছবিতে লাইক দিলেও আপনার চোখের শান্তি লাগতো। আহা আহা! সেও ঢং করে ইনবক্স করতো, থ্যাঙ্কয়্যু ভাইয়া। ইউ আর ছোওওও ছুইইইট! (এইসব গা জ্বালা করাইন্যা মাইয়ারে দেখলে আমার ধইরা থাপড়াইতে মঞ্চায়! সরি, কিসু মনে কইরেন না। আমি মেয়ে তো, একটুআধটু হিংসা থাকবেই! কিসুই করার নাই।) অতিপচা চেহারার একটা মেয়ে আপনার এতটা মূল্যবান সময় কিল করল। তার জন্য এই শাঁকচুন্নি ম্যালা-ম্যালা সরি। আর কিসু কমু না, মুখে কচটেপ মাইরালাইসি।
কচটেপ মারার আগে ফাইনাল কথাঃ ভাল থাইকেন। (ভাল না থাকলে, আবারো জ্বালামু!! হিহি……)
ডিসক্লেইমার।
বন্ধুরা, বিভূতির আরণ্যক যাদের পড়া আছে, তাদের বলছি, বাস্তবে, ওই অঞ্চলে ওরকম কোনো অরণ্যের অস্তিত্বই নেই; অথচ, কী বাস্তবানুগ সুনিপুণ বর্ণনা! অরণ্যের স্বাদ আর কোনও লেখায় এর সিকিভাগও কখনো পেয়েছি বলে তো মনে পড়ে না। এই লেখা যখন প্রথম প্রকাশ করি, সে সময় অনেকেই আমাকে কমেন্ট থ্রেডে আর ইনবক্সে এই অনন্যার পরিচয় জিজ্ঞেস করেছেন। লেখকরা যা কিছু লেখেন, তার সবটুকুই তার নিজের জীবনে ঘটে না। যদি এমন হত যে ঘটতেই হবে, তাহলে আমরা মৃত্যু নিয়ে কোনো লেখাই পেতাম না। একটি দেবযান লেখার আগে বিভূতিভূষণকে মরে দেখতে হয়নি। প্রত্যেকটা লেখকের উদ্দেশ্যই থাকে, যাতে তাঁর চরিত্র তাঁর চেয়ে বড় হয়ে ওঠে, তাঁকে ছাপিয়ে যায়। আমি যখন সতীনাথ ভাদুড়ীর ‘জাগরী’ পড়ছিলাম, তখন মনে হচ্ছিল, এই লেখককে সামনে পেলে এখুনি খুন করে ফেলতাম। এই বই একটানা পড়া কঠিন। ৪-৫ পৃষ্ঠা পরপর চোখের পাতা ভারি হয়ে ওঠে। আর কোনও বই কখনোই আমাকে অতটা কাঁদায়নি। এ বই দ্বিতীয়বার পড়ার সাহস আমার নেই!
সবিনয় নিবেদন পড়েছেন তো? ওরকম না ঘটলে কেউ ওরকম লিখতে পারে? এমনটা মনে হয় না পড়ার সময়ে? না, হুবহু ওরকম কিছু হয়নি বুদ্ধদেব গুহর জীবনে। তবে আমি বলছি না, আমার এই লেখার লেখিকা কাল্পনিক। আবার এটাও বলছি না, সেই লেখিকার সাথে আমার সত্যি-সত্যি দেখা হয়েছিল। আমি আমার পাঠকদের কিছুটা আলোআঁধারিতে রেখে দেবো। এটা শিল্পীর স্বাধীনতা। আমি ভেবেছি, ওরকম প্রেমে পড়লে মানুষ কী ভাবে, কী বলে, কী করে। অথবা আমি জেনেছি, ওরকম প্রেমে পড়লে মানুষ কী ভাবে, কী বলে, কী করে। আমি চাই, কল্পনার (কিংবা, বাস্তবের) এই অনন্যা আমাদের সবার ভেতরটাকে নাড়া দিক প্রবলভাবে। আমি আমার লেখার disclaimer দিচ্ছি রবি ঠাকুরের কাছ থেকে ধার করে (বুড়ো সব জানে! স-অ-অ-ব্!! তাই, এই হতচ্ছাড়া বুড়োটার কাছেই বারবার ফিরে আসতে হয়। হতচ্ছাড়াই তো! পৃথিবীর কোনো চারুলতা’ই ওই দাড়িওয়ালাকে বয়ফ্রেন্ড না বানিয়ে চারুলতা হয়ে উঠতে পারেনি। অনন্যারা যখন গুনগুন করে তখনও তো এই বুড়ো-ই থাকে সাথে। তাই, আমরা বাঙালি ছেলেরা, যারা ভাগ্যবান, তারা সবাইই সেকেন্ড-হ্যান্ড গার্লফ্রেন্ড পাই। ভাগ্যবান বাঙালি পুরুষের প্রেয়সীর প্রথম প্রেম নিশ্চয়ই রবীন্দ্রনাথ!) …………
সেই সত্য যা রচিবে তুমি,
ঘটে যা তা সব সত্য নহে। কবি, তব মনোভূমি
রামের জনমস্থান, অযোধ্যার চেয়ে সত্য জেনো।