ভাবনা: দুইশো আটাশি।
……………………………………..
আপনার ‘দূরত্বের পরে’ লেখাটা পড়ে দুচোখের পানি চারগুণ বেশি হয়ে পড়ছিল। (লেখাটা পড়ার আগে থেকে পানি পড়ছিল তো, তাই অমন করে বলেছি।) প্রতিটি কথা আমার বর্তমান সময়ের সাথে মিলে গেছে। আমার অবস্থা আরও ভয়াবহ, আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে। নীলার বেরিয়ে আসার সুযোগ আছে, আমার তো তাও নাই; আমার সাথে আমার পরিবার, সমাজ, আত্মীয়স্বজন আছে। যখন সবকিছু চিন্তা করি, তখন মাথা কেমন যেন করে। প্রতিটি সেকেন্ড অসহ্য লাগে। স্বপ্ন ছিল বিসিএস ক্যাডার হওয়া, তার জন্য যতটুকু মেধা দরকার, তা আল্লাহ্র রহমতে আমার আছে, কিন্তু যতটুকু মানসিক শক্তি দরকার, তা আজ হারিয়ে ফেলেছি। আমি প্রতিনিয়তই হেরে যাচ্ছি।
আপনাকে বিরক্ত করার জন্য দু:খিত।
আমি শেলি, বাসা শান্তাহারে। এই বছরই প্রাণিবিদ্যায় মাস্টার্স করেছি। এছাড়া চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টিও শেষ করেছি। আমার তিন বোনের মধ্যে আমিই সবার বড়। আমার কোনও ভাই নেই, তাই আমাকে নিয়ে আমার পরিবারের অনেক স্বপ্ন। ওদের বড় একটা আশা ছিল, আমি ডাক্তার হবো। ক্লাসে সবসময় প্রথম তিন জনের মধ্যে থাকতাম, তাই আমার শিক্ষকরাও আশা করেছিলেন, আমি একদিন অনেক ভাল কিছু করব।
আমি যখন এইটে, তখন আমাদের ক্লাসের ফার্স্টবয়ের সাথে আমার রিলেশন হয়। আমি ছিলাম একটু মিশুক প্রকৃতির, কিন্তু কম কথাবলা মেয়ে, তাই সবাই আমাকে পছন্দ করতো। আমি কাউকে পছন্দকরা, ভালোবাসা, এসব ব্যাপারকে খুব ঘৃণা করতাম। কিন্তু জানি না কীভাবে কী হয়ে গেল, ছেলেটার মধ্যে কিছু ভাল গুণ আমাকে মুগ্ধ করল। যেমন, চুপচাপ থাকা, মেয়েদের সাথে কথা কম বলা, পরের উপকার করা, এমন কিছু দিক। আমাদের সম্পর্কটা এভাবে আস্তেআস্তে এগোতে থাকে। যখন ক্লাস টেনে পড়ি, তখন আমাদের বিষয়টা সবাই জেনে যায়। আমার পরিবার, ওর পরিবার, স্কুলের শিক্ষকরা……সবাই। আমার বাড়ি থেকে পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে চায়। খুব খারাপ একটা সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম। একসময় মনে হলো, আমি বাবা-মাকে কষ্ট দিয়েছি, ভুল করেছি। আবার ওকেও ছাড়তে পারব না, কারণ আমি যদি ওকে ছেড়ে দিই, তাহলে ওর জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে। তাই সিদ্ধান্ত নিই আত্মহত্যা করার। এটা আমার কিছু বান্ধবী বুঝতে পারে এবং আমাদের স্কুলের প্রধান শিক্ষককে জানায়। স্যার আমাকে উনার রুমে নিয়ে গিয়ে ১৫ মিনিট বোঝান এবং বলেন, ধরো, তুমি আমার মা, আমি তোমার কাছে এসএসসি’তে একটা ভাল রেজাল্ট চাই, তুমি কি তোমার ছেলেকে সেটা দেবে না? স্যারের কথায় আমার চোখে পানি চলে আসে, স্যারের প্রতি প্রচণ্ড মমত্ব অনুভব করি। তখনই সিদ্ধান্ত পাল্টে পড়াশোনা করতে থাকি এবং মোটামুটি ভাল রেজাল্ট করি।
এইচএসসি’তে উঠি। আমাদের বাড়ি থেকে জানত, ওর সাথে আমার কোনও সম্পর্ক নেই, কিন্তু আমাদের সম্পর্ক ঠিকই ছিল, এর কারণ একটাই, মনে হতো, ওকে ছেড়ে দিলে ওর জীবন নষ্ট হয়ে যাবে, আবার আমিও ওকে ছাড়া থাকতে পারব না। তারপর আমি এইচএসসি পাস করতে পারলেও ও ফেল করে, তখন ও আমাকে বলে, আমাকে ছেড়ে চলে যাও, কিন্তু আমি আমার নিজের বিবেকের তাড়নায় ওর হাতটা ছাড়তে পারিনি।
আমি অনার্সে ভর্তি হওয়ার পর অনেক কষ্ট, অনেক ত্যাগের বিনিময়ে পারিবারিক মতেই আমাদের বিয়ে হয়। ও তখন কিছু করত না। আমাদের খরচ আমাদের বাবা-মা’ই দিতো। তারপর অনেক অনুরোধ করে ওকে এইচএসসি পাস করাই। তারপর ও ডিপ্লোমা ইন মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টি’তে ভর্তি হয়, আমিও ওটাতে ভর্তি হই, এর পাশাপাশি অনার্স পড়তে থাকি। ওকেও অনার্সে ভর্তি করাই, কিন্তু ও সেটা শেষ করল না। আমরা রাজশাহীতে পড়তাম, তাই ওখানেই একটা বাসা ভাড়া করে থাকতাম। আমাদের হাতখরচের জন্য দুজনই দুইএকটা টিউশনি করতাম। মাঝেমাঝে বেড়াতে যেতাম, ও আমাকে যাবতীয় সব কাজে সাহায্য করত।
আমাদের জীবনটা বলতে গেলে খুবই ভাল কাটছিল। স্বপ্ন ছিল, পড়াশোনা শেষ করে দুজনই ভাল চাকরি করবো, তখন বাড়ি থেকে আর টাকা আনতে হবে না, আমরা আরও ভাল থাকব। বিয়ের পরে ৭টা বছর ভালই কাটছিল, টাকার অভাব থাকলেও ভালোবাসার কোনও অভাব ছিল না। আমি কোনও কিছুর জন্যই ওকে কক্ষনো কোনও চাপ দিইনি, পারলে আমিই ওকে কিছু না কিছু গিফট করতাম। ও আমাকে ছাড়া এক মূহুর্তও চলতে পারত না। ওর ব্যবহারে আমাদের বাসার সবাই ওকে খুব পছন্দ করত। খুবই সুখী ছিলাম আমরা। পড়াশোনা শেষ হলো, দুজনই ছোট একটা চাকরিও পেলাম, বেতন বেশি না, তবু ভাবলাম এবার একটু সংসারটাকে গুছিয়ে নিব। কিন্তু আমার জন্য যে এতবড় একটা চমক অপেক্ষা করছিল, বুঝতে পারিনি।
নাটোরে একটা মেডিটেক ইন্সটিটিউটে আমরা প্রভাষক পদে যোগদান করি। একমাসের মধ্যেই আমি জানতে পারি, ওর সাথে অন্য একটা মেয়ের দেড় বছর যাবৎ সম্পর্ক। যেখানে আমি দিনের পরদিন সবকিছুতেই এত ত্যাগ স্বীকার করে আসলাম, নিজের খরচের জন্য অন্যের বাসায় গিয়ে টিউশনি করলাম, টাকার অভাবে বাচ্চাও নিতে পারছিলাম না, ভাবতাম, ও কখনও কোনও মেয়ের দিকে চোখ তুলেও তাকায় না; সেখানে ও অন্য একটা মেয়ের পিছনে টাকা থরচ করছে, তাকে গিফট কিনে দিচ্ছে, আমার অনুপস্থিতিতে আমাদের বাসাটাকে বন্ধুর বাসা বলে মেয়েটার সাথে দিনের পর দিন সময় কাটাচ্ছে।
এতবড় একটা আঘাত আমি সহ্য করতে পারছি না। প্রায় এক বছর ধরে বিষয়টা জেনেছি। ওকে কিছু বুঝতে দিইনি। খুব কৌশলে বিষয়টা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছি। এরপর আমার কাছে ও অনেক ক্ষমা চেয়েছে, কিন্তু আমি স্বাভাবিক হতে পারিনি। আমার মানসিক অবস্থা এখন খুবই খারাপ। এক ধরনের ট্রমার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। মাঝখানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলাম, হাসপাতালেও ছিলাম। বাড়িতেও জানিয়েছি। আমার বাবা, মা আমাকে বাড়িতে চলে যেতে বলে, কিন্তু বারবার মনে হয়, মানুষ কী বলবে, আমার ছোট বোন ডাক্তারি পড়ছে, ওকে বিয়ে দিতে হবে। আবার ওর বিষয়টা কিছুতেই মানতে পারছি না। এখন প্রতিদিনই আমাদের ঝগড়া হচ্ছে। প্রতিটি সেকেন্ড অসহ্য লাগছে। আবার মাথার ভিতর আত্মহত্যার চিন্তা ঘুরছে, আবার মনে হচ্ছে, এটা তো মহাপাপ, এমন করে চলে গেলে আল্লাহ্র কাছে কী জবাব দেবো? একটা ভুল মানুষের জন্য আমি কেন জীবন দেবো? তার তো কিছু হবে না! আমার মৃত্যুর পর সে হয়তো ওই মেয়েকে বিয়ে করে ঘরে নিয়ে আসবে! তার চাইতে বরং নিজের ক্যারিয়ারের জন্য কিছু করি।
নিজের চলার সমস্ত শক্তি আরেকজনকে দিয়ে দিয়েছিলাম। নিজেকে দাঁড় করানোর জন্য যে মানসিক শক্তি লাগে, তা আজ হারিয়ে গেছে। আর বাঁচতে ইচ্ছে করে না। এখন কী করব আমি? গত ২৪ ঘণ্টা যাবৎ শুধু পানি খেয়ে আছি, মাথা খুব একটা কাজ করছে না, কেবলই এলোমেলো ভাবনা আসছে মাথায়। প্রিয় পাঠক, আমার জীবনে যতটুকু ত্যাগ স্বীকার করেছি, যতোটা কষ্ট করেছি, তার মাত্র ১০% লেখায় তুলে ধরতে পেরেছি, বাকিটুকু অনুগ্রহ করে বুঝে নেবেন। সব কী আর বলে বা লিখে বোঝানো যায়? আপনিই বলুন!
বিরহের স্থান প্রেমের উপরে। বিরহমাত্রই অকপট, আর প্রেমে তো কপটতা থাকেই। আর নয়। এমন প্রেমের চাইতে বিরহই সুখের। ভাবছি, চলে যাব। কোথায় যাব, জানি না। যেখানেই পালিয়ে যাই না কেন, জীবন তো আর পিছু ছাড়বে না!
ভাবনা: দুইশো উননব্বই।
……………………………………..
: এখন থেকে আয় করার চেষ্টা করব, মনেপ্রাণে লাগব একটা চাকরি যোগাড় করতে, আর যতদিন তা করতে না পারছি, বাবার জুতোজোড়া সত্যিই দিনে দুইবার মাথায় ছোঁয়াব, আর নিজের গালেই জুতো দিয়ে ঠাস্ করে চড় মারব। আপনি যেন আমার চোখে আঙুল দিয়ে জীবনটাকে দেখিয়ে দিলেন! এখনও চোখে জল ঝরে যাচ্ছে অনবরত! কখনও আপনার সাথে দেখা করতে পারলে ভীষণ খুশি হবো!
: ধুউর্ বোকা! এসব কী বলছ?
: দাদা, মেসেজটা দুইদিন ধরে বেশ কয়েকবার দেখলাম। হয়তো যাদুকরী কিছুই নেই এই ‘ধুউর্ বোকা’-র মধ্যে, তবে একটা মানুষকে যখন অন্তরের গভীর থেকে ভাল লেগে যায়, তখন তার আইতেসি, খাইতেসি, যাইতেসি এই টাইপের লেখাও বারবার পড়তে মন চায়…………আমার খুব মনে আছে, আমি যখন আমার প্রাক্তন প্রেয়সীর কাছ থেকে প্রথম একটা স্মাইলি ইমো পেয়েছিলাম, সে রিপ্লাইয়ের স্ক্রিনশট নিয়ে তা প্রিন্ট করে বালিশের নিচে রেখে দিয়েছিলাম………..এতে এক ধরনের পাগলামি আর সুখ রয়েছে। আমার মতে, কাউকে ভাললাগার দুই ধরনের কারণ থাকে। এক, তেমন কোনও কারণ ছাড়াই ভাললাগা। দুই, প্রথম কারণের একদম বিপরীতটি। আপনার ‘ধুউর্ বোকা’-র মধ্যেও হয়তো কোনও বিশেষত্ব লুকিয়ে আছে, যা আমি বুঝতে পারছি না। আপনার এই ছোট্ট মেসেজটি আমার কাছে যে কী পরিমাণ সারপ্রাইজিং, তা বলে বোঝাতে পারবো না।
আপনাকে ভালোবাসি আপনার লাইফ স্টাইলের সিমপ্লিসিটির জন্য। সবার সাথে মিশে সবার মত না হয়ে বাঁচা তো সহজ নয়। সব ক্লাসের লোকজনের সাথে মিশেও নিজের ক্লাসটাকে ধরে রাখা, দারুণ ব্যাপার! সহজ করে ভাবেন, বলেন। ভাল লাগে।
একটা গল্প বলি। স্কুলে থাকতে আমি ছয়বার ইংরেজিতে ফেইল করি। আমাকে নিয়ে সবাই হাসাহাসি করত। একদিন আমি নিজের কাছে শপথ করি, যে করেই হোক, আমি ইংরেজিতে লেখা ও কথাবলা শিখে নেবো। আমি বেশিবেশি করে ইংরেজি বই পড়া শুরু করি। ইংরেজিতে লেখা যেকোনও কিছুই পেলে অবশ্যই পড়তাম। গ্রামার শেখা শুরু করি, ভোকাবুলারি বাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকি খাতায় লিখেলিখে। আমার বন্ধুরা আমার এসব পাগলামি দেখে আমাকে নিয়ে বিদ্রূপ করত। আমি ওদের কখনওই কিছু বলতাম না। কেউকেউ আমাকে ইংলিশম্যান বলেবলে খ্যাপানোর চেষ্টা করত। আমি হাসিমুখে সবই সহ্য করে যেতাম দিনের পর দিন। যে যা-ই বলুক, আমি আমার নিয়ত আর চেষ্টার প্রতি আন্তরিক থেকেছি সবসময়ই। আমি বিশ্বাস করতাম, এখনও করি, আমরা এ পৃথিবীতে এসেছি শেখার জন্য। যে আমার চাইতে বেশি জানে, বোঝে, সে যে-ই হোক না কেন, সে যদি আমাকে শেখাতে রাজি থাকে, আর আমি যদি তার কাছ থেকে শেখার সুযোগ পাই, তবে তার কাছ থেকে শিখে নিতে কোনও লজ্জা নেই। সব জায়গা থেকে, সব ঘটনা থেকে আমাদের অনেককিছু শেখার আছে। আমি সেসময় যারা আমার চাইতে ভাল ইংরেজি জানত, তাদের কাছ থেকে শেখার চেষ্টা করতাম। সেসময় ইংরেজির প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। ছেলেরা যেমনি কোনও সুন্দরীর প্রেমে বুঁদ হয়ে থাকে, তেমনি আমিও ইংরেজির নেশার বুঁদ হয়ে ছিলাম দিনের পর দিন। ইংরেজির কোনও খুঁটিনাটি, শব্দ, ব্যবহারবিধি শেখার সুযোগ পেলে তা লুফে নিতাম। ইংরেজিতে দক্ষতা বাড়ানোর দেশি-বিদেশি প্রায় একশো বই কিনে বাসা ভর্তি করে ফেলি। সারাক্ষণই ইংরেজি নিয়ে পড়ে থাকতাম। ইংরেজিকে ভালোবাসতাম, ইংরেজি শেখাকে প্রার্থনার মত মনে হত।
এভাবে সাড়ে তিন বছর কাটল। ক্লাসে আমি হয়ে উঠলাম ইংরেজিতে সেরা ছাত্র। ইংরেজি শেখার জন্য আমি কোনও কোচিং সেন্টারে ভর্তি হইনি, যা করেছি, তা হচ্ছে—দিনের পর দিন নিজের সাথেই যুদ্ধ। আমার চেষ্টা দেখে সবাই যে আমাকে নিয়ে হাসিতামাশা করত, আমি তার জবাব দিয়ে দিয়েছি, অন্য এক আমি হয়ে ওঠার মাধ্যমে। এখন আমি তো আগের আমি নেই, ওরা এখন মজা করবেটা কাকে নিয়ে?
আমাদের পাড়ার যে লোকটি আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করতেন, উনি কিছুদিন আগে আমার কাছে এসে বললেন, আমাকে একটা ব্যাপারে হেল্প করতে পারবে? আমি বললাম, জ্বি আঙ্কেল, বলেন, কী করতে হবে? উনি বললেন, আমি তো তোমার আন্টিকে ডাক্তার দেখানোর জন্য ইন্ডিয়াতে নিয়ে যাব, তাই ওখানকার ডাক্তারের কাছ থেকে একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে। আমি তো ইংরেজি ভাল পারি না, তুমি একটু আমাকে কাজটা করে দাও না! আমি খুবই আন্তরিকতার সাথে ওই ডাক্তারের সাথে ইমেইলে যোগাযোগ করে, পেশেন্টের রোগের প্রকৃতি, এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য সরবরাহ করে ওই আঙ্কেলকে ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে দিলাম। উনি অনেক খুশি হলেন……….এবং, উনার অতীত ব্যবহারের সমুচিত জবাব পেয়ে গেলেন!
জবাব দিতে হয় মুখে নয়, কাজে। যারা আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করত, ওরা যদি কখনও আমার কাছে ইংরেজির কোনও সমস্যা নিয়ে আসে, আমি যত কাজেই ব্যস্ত থাকি না কেন, ওদের হেল্প করি। ওদের সেবা দেয়ার মধ্য দিয়ে আমি পুরনো অপমানের প্রতিশোধ নিই। সাফল্যের চাইতে সুন্দর প্রতিশোধ আর হয় না। আগে আমি কী, তা অন্যরা বলতো। এখন আমি কী, তা আমার কাজই বলে!
সাফল্য কোনও অর্জন নয়, কোনও প্রাপ্তি নয়, কোনও হিসেব নয়; সাফল্য এক ধরনের অনুভূতি—বড় আরামের সে অনুভূতি!
ভাবনা: দুইশো নব্বই।
……………………………………..
নমস্কার। আমি কি আপনার কিছু স্ট্যাটাস শেয়ার করতে পারি?
ও হ্যালো! কেউ কি আছেন?
মনে তো হচ্ছে কোথাও কেউ নেই। হয়তো হাজার মানুষের মত আমার মেসেজও আনসিনে পড়ে আছে। অবশ্য, সবার মেসেজই সিন করতেই হবে, এমন তো নয়! একদিকে ভালই হল, আপনার বিখ্যাত ওয়েলকাম লিস্ট থেকে বাঁচা যাবে!
প্রথমেই জানিয়ে দিই, আমি কিন্তু আপনার বাকি ফ্রেন্ডগুলির মত স্টাডি নিয়ে কথা বলতে নক করিনি। তাই আমার উপর রাগ করে আমাকে ওই বলকান রাজ্যে পাঠাবেন না, অনুগ্রহ করে।
উফফ্! আমি আসলেই ভীষণ বোকা! শুধুশুধু বোকার মত কথা বলছি। লিস্টে পাঠানোর আগে তো মেসেজ সিন করা লাগে, যা আপনি কখনওই করবেন না। অতএব, আমি সকল দুর্ভাবনা থেকে মুক্ত! হাহাহাহা………
২৩ তারিখ ভালোবাসা নিয়ে একটা স্ট্যাটাস ইনকমপ্লিট রেখে দিয়েছিলেন। আমি চেয়েছিলাম সেটাকে কমপ্লিট করে দেবো। কিন্তু এর আগেই আপনি পোস্টটাকে এডিট করে তা কমপ্লিট করে দিলেন। এরপর দেখলাম, আপনার লেখাটা অনেক মধুর লাগছে পড়তে।
আপনি আমার মেসেজ সিন না করাতে ভালই হল। মনের সব কথাই বলে ফেলা যাবে নির্দ্বিধায়, নিঃসঙ্কোচে। তা-ই বা কয়জন পারে, বলুন?
হুম্! এখন কী মনে হচ্ছে, জানেন? একটি বদ্ধ রুমে একাকি কথা বললে যেমনটি অনুভব হয়, ঠিক তেমনই। এ ব্যাপারটার অনুভূতি আসলেই অন্যরকম।
যা-ই হোক, আজকের জন্য এইটুকুই মেসেজ দিলাম। কাল আবার পেইন দিতে আসব, কেমন? শুভ রাত্রি। আর প্লিজ সেই ভয়ানক নরকের ওয়েলকাম লিস্টে আমাকে দেবেন না। তখন আপনার লায়কমার্কা পিকচার থেকে আমি বঞ্চিত হবো।
হাই! কেমন আছেন? অনেকদিন হল আপনাকে নক দিইনি। জানেন, আজ কেন জানি মনটা ভাল নেই। আমার মন ভাল করে দেয়ার কোনও মানুষও নেই। একটা কবিতা পোস্ট করবেন, প্লিজ! আপনার নতুন কবিতা পড়তে ইচ্ছে করছে। প্লিজ!
আচ্ছা, আপনি এমন কেন? মানুষ কি বড় চাকরি করলেই এমন হয়ে যায়? আপনি খুব সফল হয়েছেন বলেই আপনাকে সবাই এমন নক করে। আমি কিন্তু এজন্য করি না। আপনার লাইফের ঘটনা আর আমার লাইফের ঘটনা প্রায় একই। তাই এক ধরনের একাত্মবোধ থেকেই নক করি। অবশ্য, আপনি সফল না হলে আপনার অস্তিত্ব সম্পর্কেই আমি কখনও জানতে পারতাম না হয়তো।
ও হ্যালো! এই মানুষ! কেমন আছেন? হাহাহা……এখনও আমার মেসেজ উনার দৃষ্টিসীমার অগোচরে। দেখার চেয়ে না দেখাই ভাল। দেখলে কী না কী হয়ে যাবে, আর আমাকে দূরে সরে যেতে হবে। থাক্ বাবা, এমন হয়েই ভাল আছি—কাছে থেকেই না দেখার দূরত্বে।
যা-ই হোক, আপনার চিন্তাভাবনা আমার মতই কিউট আর ইনোসেন্ট।
কিছু কথা বলার ছিল। তবে কথাগুলি বলাটা কতটা ঠিক হবে, বুঝতে পারছি না। তবে এটা ঠিক, আপনি যেমনটা চান, তেমন মানুষ এখনও এ পৃথিবীতে আছে। হয়তো তাদের মধ্যে অনেকে আপনাকে ভালোওবাসে। আপনাকে খুঁজে নিতে হবে। মেয়েরা বড্ড লাজুক হয় তো! কয়জনই বা মনের কথা মুখে এনে তা আপনার হৃদয় না হোক, অন্তত কান পর্যন্ত পৌঁছে দেবে, বলুন? অনেকে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ভয়ে সামনেই এগোয় না। জানি, এ ভয় অমূলক আর ছেলেমানুষিপূর্ণ। তবু ভয় তো আসেই! কারও মনে ভয় এলে ওর কী দোষ? কাছে এসে দূরে সরতে হওয়ার চাইতে দূরে সরে থাকাই তো বেশি স্বস্তির, তাই না? প্রত্যাখ্যান সহ্য করার চাইতে দূর থেকে আশা বাঁচিয়ে রাখা বরং আনন্দের। না পাওয়ার মধ্যে এক ধরনের সুখ আছে, শক্তি আছে, দৃঢ়তা আছে। অপমানের চাইতে সংশয় শ্রেয়।
আচ্ছা, আসি। প্রার্থনার সময় হল। চোখ মেলে ঘুমানোর চাইতে চোখ বুজে প্রার্থনা কল্যাণকর।
এই হ্যালো! আপনি যখন অসুস্থ, তখন বাসায় রেস্ট নিন। এই অসুস্থ শরীরে লেখালেখি না করে পরেই নাহয় করলেন। লিখতে ভীষণ কষ্ট হয় তো! অসুস্থ অবস্থায়ও নিজেকে কষ্ট দিচ্ছেন কেন? এখন রেস্ট নিন। ডাক্তার দেখিয়েছেন তো? যদি দেখিয়ে থাকেন, তবে উনার পরামর্শমত ওষুধ খেয়ে রেস্ট নিন।
সকাল থেকে খুব ব্যস্ত ছিলাম, তাই নক করতে পারিনি। রাগ করবেন না। আপনার স্ট্যাটাস দেখলাম। এই অসুস্থ শরীরে রেগে আছেন কেন? জ্বর যদি বেড়ে যায়, তখন? যা-ই হোক, মায়ের কথা মনে পড়ছে? সম্ভব হলে আন্টিকে আপনার কাছে নিয়ে আসেন। উনি পাশে থাকলে বেটার ফিল করবেন। দেখবেন, মন ভাল হয়ে গেছে, আর দুর্বলতা কিছুটা হলেও কম লাগছে। ঠিকমতো ওষুধ আর খাবার খেয়ে নেবেন, কেমন?
শুনুন না! এখন কেমন আছেন? মনে হচ্ছে, একটু সুস্থ হয়েছেন। রেস্ট নিচ্ছেন তো? এতো বড় লেখা এখুনিই লিখতে হবে না। জ্বর কিন্তু কখনও-কখনও ব্যাক করে। রেস্ট না নিলে আবারও বিপদ আসতে পারে।
আপনার পোস্ট দেখলাম। আপনার সেই ফ্রেন্ডকে খুঁজে পাওয়ার জন্য আপনার সেই তিন বছরের ইনবক্স মেসেজে ফিরে যাওয়া লাগবে। ইনবক্স মেসেজে আপুর আইডি ক্লিক করলেই উনাকে খুঁজে পেতে আপনার কষ্ট হবে না। উনাকে খুঁজে পাচ্ছেন না বলে কষ্ট হচ্ছে। উনি ফিরে এলে কষ্ট আরও বেড়ে যাবে নাতো? শিওর? সে ছিল—এ কল্পনা যতটা শান্তি দিচ্ছে, সে আছে—এ বাস্তবতা ঠিক ততটাই অশান্তি দেবে নাতো আবার?
পুনশ্চ। আপনি সেদিন আমার এক দিদির বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। যাওয়ার সময় দিদির মেয়ের জন্য অনেক চিপস কিনে নিয়েছিলেন। ওর নামটা জানেন তো? মূর্ছনা। তো সেদিন অনেক চিপস পেয়ে ও খুব খুশি হয়েছিল। বাসার সবাইকে চিপস দেখিয়ে বলেছে, এগুলো আপনি এনেছেন। এর মধ্যে আমি ওদের বাসায় গিয়েছিলাম। মূর্ছনা জিজ্ঞেস করছিল, মাসিমণি, আমার চিপসমামা আবার কবে আসবে? আমি বললাম, কেন, মা? উনাকে তোমার দরকার? ও চট করে বলল, না, আমার আবার কিছু চিপস দরকার।
যা-ই হোক, এখন সুস্থ আছেন তো? আপনার সময়গুলো দারুণ কাটে, তাই না? নিজের মনটাকে হাল্কা করে দিয়ে কষ্ট লিখে ফেলতে পারেন! কত্ত সৌভাগ্য আপনার!
ভাবনা: দুইশো একানব্বই।
……………………………………..
একটা সংকলন থেকে আপনার কিছু লেখা পড়েছিলাম। ভাল লেগেছে। শেষ হতেই মনে হচ্ছিল, আর নেই? এরপর আরও পড়ার লোভেই আপনাকে ফেসবুকে খোঁজা। আমি ফেসবুকে থাকি না, থাকতে ইচ্ছে করে না। সব মিথ্যে চেহারার লোকজনে ফেসবুক ভর্তি, এটা মনে হয়। একটা ফেইক আইডি আইডি থেকে মাসে দুএকবার আসতাম। এখন তো প্রতিদিনই ঢুকি—আপনার লেখা পড়ার লোভে, এবং এটাই সত্যি, ভীষণ সত্যি!
জানেন, আগামীকাল আমার জন্মদিন। অনেক অনেকদিন ধরেই প্লান করে রেখেছিলাম, আজ রাতেই সুইসাইড করব। আপনার কিছু লেখা পড়ে মনে হল, বেঁচে থাকাটা দরকার, যতক্ষণ আল্লাহ্ চান, ততক্ষণ আমি এ পৃথিবীতেই থাকব। কেউ আমায় ভালো বাসুক আর না-ই বাসুক, আমি নাহয় নিজেকে ভালোবেসে বাঁচব। কী বলেন? ভাল সিদ্ধান্ত নিয়েছি না?
জন্মদিন ভালই কেটেছে। তবে বারবারই কেবল মরে যেতে ইচ্ছে করেছে। কয়েক দফায় অনেক কাঁদলাম। কাঁদলে নিজেকে হাল্কা লাগে। এখন মনে হচ্ছে, আমি চাইলেই পাখির পালকের মত যে কোথাও উড়ে চলে যেতে পারব। আসলে কী ব্যাপার, জানেন, দিনেদিনে হতাশা আমাকে এমন করে গ্রাস করেছে যে আমি একেবারেই নৈরাশ্যবাদী হয়ে গেছি। যারা নিজেকে সহ্য করতে পারে না, আশেপাশের কাউকেই সহ্য করতে পারে না, তাদের এমন আচরণের পেছনে কোনও না কোনও কষ্টের ইতিহাস থাকে। আমি ওদের দলে। তাই হয়তো বাঁচতে আর ভাল লাগে না, বেঁচে থেকে কী লাভ—এমন প্রশ্ন মাথায় আসে, নানান বৈপরীত্যের দোলাচলে নিজেকে বারবার ঠেলে দিই।
আমার ছোটবোন প্রথম আপনার কথা বলে। ওর অনেক স্বপ্ন ছিল, ডাক্তার হবে। মেডিক্যালে চান্স পায়নি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত একটা কলেজে পড়ছে। সে এখনও স্বপ্ন দেখে, কোনও হৃদয়বান মানুষ হয়তো ওকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে কোনও প্রাইভেট মেডিক্যালে পড়ার সুযোগ করে দেবে, তার ছোটবেলার স্বপ্ন পূরণে সাহায্য করবে।
জানেন, আমাদের খুব বেশি টাকা নেই, কিন্তু অনেক জমি আছে, যার অল্প বিক্রি করলেই আমাদের সবকিছু অন্যরকম হয়ে যেতে পারতো, আবার আমরা না খেয়েও মরতাম না। জানি, চাইলেই হুট করে জমি বিক্রি করে দেয়া যায় না। আব্বু রাজি হয়েছেন জমি বিক্রি করতে, আমাদের কিছু ধনী আত্মীয়স্বজন আছেন, কিন্তু ওরা কেউ জমি কিনতে রাজি হচ্ছেন না। ওরা কেউ আমাদের কোনও সহযোগিতা করেন না, জমি বন্ধক রেখে টাকা ধার চাওয়ার কথা তুললে উল্টো বাজে কথা শোনান। ওদের একটা কথা আমার বোনের কানে সবসময়ই বাজে: ডাক্তার হওয়ার যোগ্যতা থাকলে তো সরকারিতেই চান্স পেত। পেল নাতো! নিজের যোগ্যতায় কিছু করার ক্ষমতা নেই, এখন কেন পরের কাছে হাতপাতা? মেয়েকে এতো পড়ানোর কী আছে? বিয়ে দিয়ে দিলেই তো ঝামেলা শেষ হয়ে যায়!……….ওদের দাবি, যেহেতু আমি বড়, আমি এখনও বিয়ে না করে পড়াশোনা করছি, অতএব, দুই বোনকেই একসাথে বিয়ে দিয়ে দিলে সব ঝামেলা শেষ হয়ে যাবে। মেয়েরা স্বামী-সংসার চালাবে, আর পারলে একটু পড়বে। এর বেশি কিছু কী দরকার? বিয়ে তো আগেপরে দিতেই হবে! এমন আরও অনেক-অনেক কথা! এসব শুনে আমার ছোটবোন মানসিকভাবে একেবারেই ভেঙে পড়ল। সে দ্বিতীয়বারেও মেডিক্যালে চান্স পেল না। বোনকে আমি অনেক ভালোবাসি। হয়তো বাবা-মা’কে যতটা ভালোবাসি, তার চাইতে বেশি বোনকে ভালোবাসি। তাই ওর কষ্ট দেখলে সহ্য করতে পারি না। নিজের মনখারাপের সাথে ওর সমস্যা মিলিয়ে সবকিছু কেমন জানি গুলিয়ে ফেলি। আমার কিছু ভাল লাগে না।
আগামীকাল ওর নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা। গতকালকেও বলছিল, পরীক্ষা দেবে না। কারণ, ওর কোনও যোগ্যতা নেই, ও ন্যাশনালে পড়বে। ইত্যাদি, ইত্যাদি।
ছোটবেলা থেকেই ও আমাকে নানান বিষয়ে বোঝাত, কারণ আমি অল্পতেই ভ্যাভ্যা করে কাঁদি, অনেক সহজ ব্যাপারও সহজে নিতে পারতাম না, খুবই ভীতু প্রকৃতির ছিলাম। আর ওদিকে বোন আমার খুব দুরন্ত, সাহসী আর বুদ্ধিমতী, বাস্তববাদী, সহজে কাঁদে না, ভেঙে পড়ে না। আমার সেই বোন কিনা এখন রাতদিন কাঁদে আর অদ্ভুত সব মিরাকেল আশা করে! এমন একজন বাস্তব বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ যখন কল্পনার রাজ্যে বিভোর হয়ে থাকে, তখন কেমন লাগে! ওর বিশ্বাস, সে ডাক্তার হবেই! কিন্তু কে বসে আছে ওর বিশ্বাসের দাম দিতে? ওকে এ সহজ কথাটাই বোঝানো যাচ্ছে না কিছুতেই!
মা-বাবা আমাদের অনেক সাপোর্ট দেয়, কিন্তু দিনশেষে সেই পুরনো মধ্যবিত্ত গ্রাম্য সেন্টিমেন্ট সবকিছুই এলোমেলো করে দেয়! আজকাল দেখি, মা বাবাকে হুট করে বসে বসেন, হ্যাঁ, মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দিলে কিন্তু মন্দ হয় না! এতো টেনশন তো আর নিতে পারি না! আজ রাতেও মা বললেন, বিয়ে করে ফেল! আর কত? কাল ভোরে আবার এই মা-ই হয়তোবা স্বপ্ন দেখাবেন, কীরে? বিসিএস ক্যাডার হতে পারবি তো? নিজের হাতে টাকা থাকলে তো তোদের সব খরচ আমিই চালাতে পারতাম! কেন যে গার্লস স্কুলের জবটা নিলাম না? কেন যে ইন্টারের পর আরও পড়লাম না? তোদের পরিবারের ঘানি টানতে-টানতেই তো আমার জীবনটা শেষ! জীবনে কিছু করতে পারলাম না! তোদের ঠিকমতো মানুষ করতে পারলাম না। কী করবো, বল! আমার হাতে যে টাকা নেই!
মায়ের স্বগতবিলাপ আর শেষ হয় না।
আহ্ কোথায় ছিলাম, আর কোথায় চলে যাচ্ছি! সংসার বড় কঠিন জায়গা! লোকে সাধ করে এই সংসার-ফাঁদে পা দেয়, আর বেরোতে পারে না। সারাজীবনই আটকে থাকে এ ফাঁদে! আমার এতো হিজিবিজি কথা পড়ার সময় হয়তো হবে না আপনার। বিরক্ত হচ্ছেন, জানি। ক্ষমা করবেন। আমার জীবনটাই অভিযোগে ভরপুর। আমার স্বপ্নদেখা বারণ, স্বপ্নের কথা শোনা কিংবা বলাও বারণ। আমার জন্য নয়, আমার বোনটির জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ্ যেন ওকে উৎকৃষ্ট পথটি দেখিয়ে দেন।
আপনার বই নিয়ে পোস্টটা পড়ে আমারও কিছু বলতে ইচ্ছে করছে। লীনা আপু সম্পাদিত যে সংকলনে আমি প্রথম আপনার লেখা পড়ি, সে সংকলনটি হাতে পাওয়ার পর প্রথমেই আমি সব লেখকের পরিচিতি পড়ে ফেলি। আপনার পরিচিতি পড়েই আপনাকে পছন্দ হয়ে গেল। তাই আপনার অংশটিই প্রথম পড়া শুরু করি। দেখলাম, আপনার লেখা দিয়ে সাজানো অংশটিই সবচাইতে বড়। সে অনেক লেখা! দিন ফুরোয়, সাথে লেখা ফুরোয়। পড়তে থাকি। একসময় আপনার অংশটি ফুরিয়ে যায়। তখন কী যে আফসোস হল! আর নেই কেন? আর কি পড়তে পারব না? একবার ভাবলাম, আপুকে আপনার কথা জিজ্ঞেস করি। পরে মনে হল, আপু কী ভাববে? আপু তো জানে, আমি ফেসবুকে নেই। কী এক সংকোচ ছেয়ে ফেলল আমায়!
বছরের শুরুটা বেশ ভাল কেটেছে, দেখলাম। বছরজুড়ে ভাল থাকুন। বিদায়।
আমিও ভাল থাকব। নিজের মত করে ভাল থাকতে শিখছি। কারও কিংবা কোনও কিছুরই প্রেমে না পড়ে ভাল থাকতে হবে। প্রেমের চাইতে যে স্বপ্ন অনেক অনেক অনেক বড়! আমি তাই আপাতত আমার স্বপ্ন নিয়েই বেঁচে আছি!
ভাবনা: দুইশো বিরানব্বই।
……………………………………..
You are a polished paint on the four walls of our arena. Scatter the color beyond the borders, beyond the cultures, on the far side of our territory. শুভ জন্মদিন।
সালাম নেবেন। গতরাতে আপনাকে স্বপ্নে দেখলাম। সে স্বপ্নে কিছু একটা ভুল ছিল। তবু ভাল লেগেছে।
দেখলাম, আপনার সাথে আমার দেখা হল। আমি অনেক খুশি। কিন্তু আপনি কেন জানি আমার কাছ থেকে দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন! কেন এমন হচ্ছে, বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ কারণটা ধরতে পারলাম। আপনি পালাচ্ছিলেন, কারণ আপনি লুঙ্গিপরা ছিলেন! আমি তো হেসেই খুন!
আমার পরিচয়টা দিই। আমি জাকিয়া। ফার্মাসিতে পড়েছি। আমি কিছু সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমি আমার লক্ষ্য স্থির করতে পারছি না, ভীষণ দোটানার মধ্যে আছি। আমি গবেষণা করতে ভালোবাসি। আমি ফার্মাসির সাথে সম্পর্কিত কোনও কিছু নিয়ে পিএইচডি করতে চাই। কিন্তু আমার পরিবার তা চায় না। ওদের একটাই কথা—বিয়ে কর! আমি তো মেয়ে, তাই পরিবারে আমার সব কথাই যে খুব একটা গুরুত্ব দিয়ে শোনা হয়, তা নয়। বিদেশে গিয়ে যে পড়াশোনা করব, সে সুযোগও কম। কারণ, পরিবার থেকে এটাও করতে দেবে না। তবে হ্যাঁ, আমি বিসিএস পরীক্ষা দিলে ওতে ওদের কোনও আপত্তি নেই। আমি যে বিষয় নিয়ে পড়েছি, সে বিষয় নিয়ে এখানে কাজ করার সুযোগ সীমিত। আমি ফার্মাসি ভালোবাসি। তবে আমি এমন নই যে যেটা ভালোবাসি, সেটা নিয়েই পড়ে থাকব। আমার ইচ্ছে, আমি বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারে জয়েন করে দেশের বাইরে গিয়ে পিএইচডি করব। তাই ঠিক করেছি, এর মধ্যেই কোনও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মাসি’তে লেকচারার হিসেবে জয়েন করে ফেলব। এতে আমার বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে সুবিধে হবে।
আমার বিয়ের কথা চলছে। যে পরিবারের সাথে বিয়ের কথা চলছে, ওরা আমাকে পিএইচডি করতে দেবে না, কিন্তু বিসিএস ক্যাডার হতে দেবে। হাস্যকর শোনালেও ব্যাপারটা তা-ই! ওরা বিসিএস ক্যাডার পুত্রবধূ মেনে নিতে রাজি, কিন্তু পিএইচডি হোল্ডার পুত্রবধূ মেনে নিতে রাজি নয়। আমার হবুবর মাস্টার্স করেছে। ওর আর পড়াশোনা করার ইচ্ছে নেই, তাই ওর স্ত্রীকে ওর চাইতে বেশি পড়াশোনা করতে দেয়ার ইচ্ছেটাও ওর আপাতত নেই।
আপনার একটা পোস্ট দেখলাম। আপনার সুন্দরীদের সব দোষ ক্ষমা করে দিতে ইচ্ছে করে। প্রার্থনা করি, আপনার একজন অতি সুন্দরী জীবনসঙ্গিনী জুটুক। হোক না সে বিয়ের আগে ডজন ঘাটের জলখাওয়া অপ্সরী, সুন্দরী তো! বাকি জীবন সে নাহয় আপনাকে ভালোবেসেই কাটিয়ে দেবে!
আপনার গল্পটা পড়লাম। গল্পের নীলার বাস্তব আর অতীতের উদাহরণ আছে আমার কাছে, তবে এখন চিন্তিত এই ভেবে যে নীলার ভবিষ্যৎ কি অরিত্রের ভাল অবস্থানের সাথেও এমনই জঘন্য হবে? আমরা আশা করি ভাল কিছুর, ইনশাআল্লাহ্, ভালর প্রতিদান ভালই হবে, সে আশাই করি। ভাবছেন, আমার জীবনটাও কি ওরকমই কি না! আমার সাথে তার সবটুকু মিল নেই, আমার গল্প আরও বেশি পবিত্র, আরও বেশি কিছু। আমি জীবন থেকে ছিটকে যাওয়া কারও জীবনের হাল ধরেছি। আমি আমার মত গল্প কখনো শুনিনি।
জীবনে যদি সত্যিকারের কোনও চ্যালেঞ্জ থাকে, তা হল, নিজের পরিবারের সাথে বোঝাপড়া করা। যে যত সুন্দরভাবে এ কাজটি করতে পারে, তার জীবন তত সুন্দর হয়।
ভাবনা: দুইশো তিরানব্বই।
……………………………………..
আপনার ভাষ্যমতে, সুন্দরী মেয়েরা সিঙ্গেল থাকে না। তাই আমি সুন্দরী নই, কারণ আমি সিঙ্গেল। আপনার সাথে তো রাগ করেছিলাম, আমাদের ক্যাম্পাসে আসছেন শুনে নক করলাম। আসুন, আপনার প্রোগ্রামে থাকবো। তবে একটা কথা জানিয়ে রাখছি, সুন্দরী মেয়েরাও বয়ফ্রেন্ড ছাড়া থাকে।
আপনার প্রোগ্রাম দেখলাম। ভাল লেগেছে খুব। ভেবেছিলাম, আপনার সাথে দেখা করব। কিন্তু কী আর দেখা করব, বলুন! আপনি তো আমার মেসেজ সিনই করেন না! আর কি দেখা করতে ইচ্ছে করে? আচ্ছা, আপনি কি এ বছর বিয়ে করবেন? আমি ভাবছি, করে ফেলব। আপনিও করে ফেলেন।
আবার বলবেন না যেন, “দেখি………” আর দেইখেন না, অনেক তো দেখলেন! অন্যের বউকে দেখে কী লাভ? এইবার নিজের বউকে দেখেন। বেশি খোঁজাখুঁজির কিছু নাই। একটাকে ধরে করে ফেলেন। প্রেমিকা সুন্দরী হতে হয়, বউ অতো সুন্দরী না হলেই ভাল, কারও নজর পড়বে না, মহাশান্তিতে থাকতে পারবেন। সুন্দরী বউ ঘরে আনলে বউকে পাহারা দিতেদিতেই তো জান বরবাদ হয়ে যাবে। তার চেয়ে ভাল, এমন কাউকে নিয়ে আসেন, যার রূপের কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী নাই, মানে যে রূপেগুণে অনন্যা টাইপের কিছু না আরকি! দেখবেন, অন্য কেউ দূরে থাক, আপনি নিজেই আপনার বউয়ের দিকে চোখ তুলে তাকাচ্ছেন না। আর কোনও টেনশন নাই, খালি শান্তি আর শান্তি। আপনার দরকার একটা ঢঙি টাইপ মেয়ে, যে কিনা ঢঙের ঠ্যালায় আপনাকে হারিয়ে দেবে!
আপনাকে একটা মর্মান্তিক কাহিনি শোনাই। আমার একমাত্র ভাইয়ের ফেসবুক আইডি হ্যাকড্ হয়েছে আজ থেকে প্রায় ৪ বছর আগে। একটু পাত্তা দিয়ে কাহিনিটা শোনেন, প্লিজ! দুঃখের কাহিনি তো, মন দিয়ে শোনেন! যে মেয়ে ওর আইডি হ্যাক করেছে, সে কী করেছে, জানেন? আপনাকে আর জানতে হবে না। আপনি আমার কথা শুনছেনই না!
একটা ব্যাপার হয়েছে, আপনাকে জানাই। রাগে, দুঃখে, অপমানে আমি ডিসিশন নিয়েছি, বাপের বাড়িতে আর বেশিদিন থাকবো না! ছেলেও রেডি করে ফেলেছি বাসায় না জানিয়েই! আপনার দোয়াপ্রার্থী।
সরি, ছেলে রেডি করিনি, ‘ঠিক করে ফেলেছি’ হবে। বেশি উত্তেজনায় লিখতে ভুল হয়েছে। আপনার ক্ষমাপ্রার্থী।
আপনার স্ট্যাটাসে দেখলাম, আপনি অনুরোধ করেছেন, আপনাকে যাদের বিরক্ত লাগে, তারা যেন আপনাকে আনফ্রেন্ড করে দেয়! সরি, আমি আপনাকে আনফ্রেন্ড করতে পারব না। এর জন্য যদি আপনাকে অ-বিরক্ত লাগাতে হয়, আমি সে চেষ্টাও করে দেখতে পারি!
চুয়েটের ইলেক্ট্রিক্যালের মেয়েটাকে নিয়ে আপনার লাস্ট পোস্টটা পড়ে কষ্ট লাগল। আপনার মত উদার আর মহৎ হৃদয়ের বলদ আর কয়টা আছে, আমি ভেবে পাই না। ওই মেয়ের দুর্ভাগ্য, এমন একটা বেকুব কিসিমের হাজব্যান্ড মিস করে ফেলল! তবে আমি যদি মেয়েটার জায়গায় থাকতাম, যখন দেখতাম, আমার পছন্দের ছেলের সাথে আমার ফ্যামিলি আমার বিয়ে দিচ্ছে না, তখন আমি আপনার কথা বলতাম, আর নিজের অপরাধ স্বীকার করে সব সত্যি কথা ফ্যামিলিকে বলে দিতাম। কিছু মেয়েকে দেখি যাদের মধ্যে অপরাধবোধ বলে কোনও বোধই কাজ করে না কখনও!
জানেন, আমি অনেক সিরিয়াস স্টুডেন্ট ছিলাম একসময়। কিন্তু ভার্সিটিতে এসে আমি অনেক নিচের লেভেলে চলে গেছি। এখানে আমার রেজাল্ট আমার প্রত্যাশা অনুযায়ী হচ্ছে না। আমি ডিজার্ভ করি, এমন রেজাল্টও আমি পাইনি। অনেক-অনেক ভাল প্রস্তুতি নিয়েও অনেক খারাপ-খারাপ একজাম দিয়ে মনখারাপ করে বাসায় চলে এসেছি। তীরে এসে তরী ডুবাই বারবারই। ফার্স্ট ইয়ারে ইচ্ছে ছিল, আমি ফার্স্টক্লাস ফার্স্ট হবো। সেভাবে চেষ্টাও করতাম। কিন্তু কোথাও আমার কোনও একটা ভুল ছিল। কখনও আমার লাক ফেভার করেনি। ভার্সিটিতে সিলেক্টেড কিছু পড়া বারবার পড়লেই ফার্স্ট হওয়া যায়, কিন্তু আমি বারবার ভুল করেছি। অনেক পড়াশোনা করি, আগে যেমন করে অনেক পড়তাম, তেমন করেই পড়ি। প্রচুর পড়াশোনা করলেও খাতায় ঠিকমতো লিখে দিয়ে আসতে পারতাম না, ভাইভা বোর্ডে গিয়ে জানা জিনিসও ঠিকভাবে উত্তর করতে পারতাম না, ফলে নম্বর কম আসত। যে মেয়েটার টার্গেট ছিল ফার্স্ট হওয়ার, রেজাল্ট বের হওয়ার পর সে মেয়েকে খুঁজেও পাওয়া যেত না! বারবারই আমি একই ভুল করে গেলাম! আমি মাথানিচু করে বাঁচতে পারি না। কিন্তু গত তিন বছর আমাকে ওরকম করেই বাঁচতে হয়েছে। আমি জানি, আমি ঠিকভাবে প্রস্তুতি নিলে অন্য সবার চেয়ে অনেক ভাল করতে পারতাম, কিন্তু পারিনি। প্রতিবারই আমি ব্যর্থ হয়েছি। জানেন, নিজের উপর আর কোনও আত্মবিশ্বাস আর নেই আমার। আজ থার্ড ইয়ারের রেজাল্ট বের হয়েছে। আমার এসেছে ৩.০০, যেখানে হাইয়েস্ট হল ৩.৬৭! ফ্রেন্ডদের মধ্যে আমার রেজাল্টই সবচেয়ে খারাপ! কিন্তু তাদের কারও ব্যাকগ্রাউন্ড আমার চাইতে ভাল না! অথচ, আজ তারা কোথায়, আর আমি কোথায়!
সবচেয়ে বেশি কষ্ট লাগে, যখন দেখি, ওই মানুষগুলিই আমাকে কোনও পাত্তা দেয় না। এটা হয়তো খুবই স্বাভাবিক! কিন্তু আমি এটা মেনে নিতে পারি না। নিজের যোগ্যতার মূল্যায়ন নিজেই করতে পারিনি বলেই হয়তো গত ৩টা বছর মাথানিচু করে কাটাতে হয়েছে! আমি চাই, আমার ভুলের পরিচ্ছেদ এখানেই সমাপ্ত হোক। ৩ মাস পর অনার্স ফাইনাল। আমি আবারও আমার সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করব প্রথম হতে। আর কোনও ভুল করব না। দেয়ালে পিঠ ঠেকে নয় শুধু, গেঁথে গেছে। দেখা যাক, কী হয়!
আমার মনে আসে, একটা রেজাল্ট দিয়ে তো আমি নিজেকে প্রমাণ করতে পারব না। আমি অনেকের মধ্যে সেরা হতে চাই। আমি তা-ই করে দেখাতে চাই, যেটা সবাই করতে চায়, কিন্তু খুব কম লোকই তা করতে পারে। আল্লাহ্ আমাকে কতটুকু মেধা দিয়েছেন, আমি জানি না। তবে আমি অনেক বেশি পরিশ্রম করতে পারব। আমি গত তিন বছরে কেবল হোঁচটই খেয়েছি আর বারবার উঠে দাঁড়িয়েছি। সফল হই বা না হই, আমি কখনওই আশা ছাড়িনি, মনোবল হারাইনি।
আমি কখনওই বিসিএস নিয়ে স্বপ্ন দেখিনি। আমার অন্যান্য বন্ধুরা বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিলেও আমি কখনওই নিইনি। পড়িনি, কারণ স্বপ্নভঙ্গের কষ্টটা আমি আর পেতে চাইনি। মেডিক্যালে চান্স পাইনি বলে লাইফে অনেক বড় একটা ধাক্কা খেয়েছিলাম। অনেক পরিশ্রম করেও ব্যর্থ হয়েছি। সত্যিই অনেকবেশি খেটেছিলাম, কিন্তু কিছু হয়নি। এরপর অনেক রাত কেটেছে কেবল চোখের জলে বালিশ ভিজিয়ে। মেডিক্যাল নিয়ে আমি এতটাই মগ্ন ছিলাম যে, মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা যদি দশবার দেয়া যেত, তবে আমি হয়তো দশবারই চেষ্টা করতাম, এবং দশমবারেও যদি চান্স পেতাম, সবকিছু ছেড়ে মেডিক্যালে ভর্তি হতাম! না, আমি ডাক্তার হতে চাইনি, আমি শুধু চেয়েছিলাম চান্স পেতে। ওটা আমার এটা জেদ ছিল। কিন্তু পারিনি, ব্যর্থ হয়েছি। বিসিএস’টাও অনেকটা ওরকমই। তাই ভয় পেতাম স্বপ্ন দেখতে, যদি আবারও মেডিক্যালের মত কিছু হয়, তখন? আবারও কঠোর পরিশ্রম করে ব্যর্থ হতে চাই না। স্বপ্ন ভাঙার যন্ত্রণা যে কত তীব্র হয়, তা বোধহয় আমার চাইতে ভাল আর কেউ জানে না।
গত ৫ বছর আমার অ্যাকাডেমিক লাইফের সবচেয়ে বাজে সময় কেটেছে। আর এই মুহূর্তে আমি পার করছি আমার সবচেয়ে কঠিন সময়টি। আমি আজ রেজাল্ট হাতে পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাকে যেকোনও মূল্যে বিসিএস ক্যাডার হতেই হবে! আমার কোনও প্রুস্তুতি নেই, আমার বয়স চলছে ২৩। আমি শুধু এইটুকু জানি, আমি খুব ভাল করে পড়াশোনা করব আর আমার বয়স ৩০ হওয়া অবধি আমি কিছুতেই হাল ছাড়ব না। যদি আমি সুস্থ শরীরে থাকি, তবে আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করবই করব!
বিসিএস প্রস্তুতি নিয়ে আপনার লেখাগুলি আমি পড়া শুরু করেছি। আমি পরাজয় মেনে নেবো না, আমি কোনওভাবেই মাথানিচু করে বাঁচব না। আমি ওরকম করে বেঁচে থাকতে পারব না। আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টাটা করব। ছেলেরা দুনিয়াদারি ভুলে গিয়ে বই নিয়ে সারাদিনই বসে থাকতে পারে, কিন্তু মেয়েরা তা পারে না। মেয়েদের জীবনে ‘বিয়ে’ নামক ঝামেলা চলেই আসে। মাস্টার্স শেষ করার পরের বছরের মাঝামাঝি সময়েই বাসা থেকে আমাকে বিয়ে দিয়ে দেবে। আমি ভাবছি, ততদিনে কি আমার বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেয়া শেষ হবে? কখনওই না! মে’তে ফোর্থ ইয়ার ফাইনাল। এরপর আমি প্রিপারেশন নেয়া স্টার্ট করতে পারব। কিন্তু ওই যে বললাম, আমাকে শূন্য থেকে শুরু করতে হবে! আমি যে একেবারে কিছুই পারি না! ইংরেজি নিয়ে আপনার গাইডলাইন পড়েই তো মাথা ঘুরছে! আমি তো এসবের কিছুই পারি না! এতো পড়া আমি কখন পড়বো? আমি হয়তো আমার জীবনের কঠিনতম অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। বর্তমান কিংবা ভবিষ্যৎ, কোথাও কোনও আশার আলো দেখতে পাচ্ছি না আমি! আমার প্রায়ই মনে হচ্ছে, আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না! আমি বুঝতে পারছি না, আমি কেন আশায় বুক বাঁধব! কীসের আশায়?
আমি জানি, আমাকে নাওয়াখাওয়া ভুলে গিয়ে পড়তে হবে। ঘোরাঘুরি, ফোনে কথা বলা, ফেসবুকিং, চ্যাটিং…….সব, সব, সব বাদ! আমি এখন শূন্যে আছি। এই শূন্য থেকে শীর্ষে ওঠার রাস্তাটা খুবই দুর্গম। সে রাস্তা আমাকে পাড়ি দিতেই হবে! এজন্য নিজেকে বেঁধে ফেলতে হবে। সব ধরনের আরামআয়েশ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে। অমানুষিক পরিশ্রম করলে আমি নিশ্চয়ই আমার লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব। আমার মত যারা অনেক পরিশ্রম করতে পারে, তাদের জন্য বিসিএস রাইট চয়েজ। অনেক ধৈর্য লাগবে, যা আমার আছে। সেটাকে কাজে লাগাতেই হবে! নিজেকে অনেক ফাঁকি দিয়েছি, আর নয়। অনেক ঘুমিয়েছি, আর নয়। অনেক সময় নষ্ট করেছি, আর নয়। মাস্টার্স শেষ করেই প্রস্তুতি নেয়া শুরু করতে হবে। যদি একজন ক্যান্ডিডেটও চাকরি পায়, সে হবো আমি। সেভাবেই পড়াশোনা করব। আর হতাশা নয়, এবার শুধুই জয়ের পালা। যদি সফল হতে পারি, সবাই স্যালুট করবে; আর যদি না হতে পারি, সেটা আল্লাহ্র ইচ্ছাতেই হবে না, কেননা আমার চাইতে ভাল প্রস্তুতি আর কেউ নিতে পারবে না, সেভাবেই নিজেকে তৈরি করব।
আপনার সব ছবিকেই সবাই সুন্দর বলে। কারও সব ছবি সুন্দর হওয়া কি সম্ভব? কখনওই না! আসলে আপনার ছবি বলেই ওরা ওটাকে সুন্দর বলে। ছবি সুন্দর হয় ব্যক্তির জন্য, ছবির জন্য নয়। আপনি যদি অন্য কেউ হতেন, তাহলে কি কেউ আপনার ছবি নিয়ে এতো কথা বলতো? একদিন আমিও এরকম আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিজের জায়গা করে নেবো!
ভাবনা: দুইশো চুরানব্বই।
……………………………………..
: যাকে আমি নয়মাস ধরে ভালোবাসি, তিনিও আমাকে অনেক পছন্দ করেন। উনার জন্য আমার পক্ষে যা যা করা সম্ভব, তার সবকটাই করার চেষ্টা করি। দুএকটা বলছি। উনার পরীক্ষার সময় নফল রোজা রাখি, রাতে উঠে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ি। উনি জার্নিতে থাকলে খুব টেনশন হয়, তখন প্রার্থনা করি, এমন আরও কিছু কাজ করি। আমি সবদিক থেকে ঠিক আছি, কিন্তু আমাকে ভাললাগা সত্ত্বেও উনি নিজেকে আমায় ভালোবাসাতে পারছেন না। এ বছরের শুরুতে উনি এক বৌদ্ধ মেয়ের প্রেমে পড়ে যান। মেয়েটা নাকি উনার উপর ক্রাশ খেয়েছিল, এবং ব্যাপারটা মেয়েটা উনাকে জানায়। মেয়েটা উনার জন্য খুব কান্নাকাটি করেছিল, এটা দেখে উনি ভেবেছিলেন, মেয়েটা উনাকে অনেক ভালোবাসে। মেয়েটার এমন আচরণে মেয়েটার প্রতি উনার এক ধরনের দুর্বলতা তৈরি হয়, এবং উনিও মেয়েটার প্রেমে পড়ে যান। এরপর উনি মেয়েটার কাছে জানতে চান মেয়েটা উনার জন্য ধর্মান্তরিত হবে কি না।
মেয়েটার প্রেমে পড়ে যাওয়ার সময় উনি জানতেন না যে আমি উনাকে ভালোবাসি, কারণ আমি কখনওই আমার ভালোবাসার কথা উনাকে মুখফুটে বলিনি। আমি উনার সাথে কথা বলতাম, উনার অনেক যত্ন নিতাম, উনার জন্য নামাজ পড়তাম, রোজা রাখতাম, কিন্তু উনাকে আমার ভালোবাসার কথা জানিয়েছি অনেক দেরিতে। উনি ততদিনে ওই মেয়েকে ভালোবেসে ফেলেছেন।
এখন ব্যাপারটা হচ্ছে এই, উনি আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন, আমাকে ভাললাগা সত্ত্বেও উনি আমাকে ভালোবাসতে পারছেন না, কারণ ওই মেয়েটা ধর্মান্তরিত হওয়ার ব্যাপারে কী বলে, এটা শোনার জন্য উনি নাকি ওয়েট করবেন। ওই মেয়েটার যা সমস্যা, তা হচ্ছে, মেয়েটা ছেলেটাকে সরাসরি হ্যাঁ/না কিছুই না বলে, ক্রমাগত সময় চাচ্ছে, আর সম্পর্কটাও রেখে যাচ্ছে।
ছেলেটা আমাদের আমাদের ভার্সিটিরই লেকচারার, মেয়েটা আমার মতই এখানকার স্টুডেন্ট। তাই, ওই মেয়েটা উনাকে স্পষ্ট করে কিছু না বলে ক্রমাগত নাচাচ্ছে, উনি শিক্ষক বলে উনার কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা নিচ্ছে, এমন আরও অনেক কিছুই করে যাচ্ছে, যা উনার সাথে যায় না, কিন্তু মেয়েটা উনাকে দিয়ে করিয়ে নিচ্ছে।
আমি যাকে প্রচণ্ডভাবে ভালোবাসি, সে মানুষটা মোহাবিষ্ট হয়ে আছে একজন ভুল মানুষের প্রেমে। উনাকে আমি এটা বারবার বোঝানোর পরও ওই মেয়ে, যে কিনা স্রেফ বিভিন্ন সুযোগসুবিধা নেয়ার স্বার্থে উনার সাথে সব ধরনের যোগাযোগ রেখে যাচ্ছে, তার প্রতিই উনি অন্ধ হয়ে আছেন! আর অন্যদিকে, যে উনাকে এতটা ভালোবেসে উনার যেন সবসময় ভাল হয়, এজন্য নফল রোজা রাখে, নামাজ পড়ে, তাকেই কিনা উনি কোনও priority দিতে পারছেন না! উনি চোখ থাকতেও অন্ধ হয়ে আছেন যেন! কীসের নেশায় এমন বুঁদ হয়ে ভুল পথে অবিরাম হেঁটেই যাচ্ছেন, সেটা আজও বুঝতে পারলাম না!
আমি তো অপেক্ষা করে আছি কখন উনার মোহ কাটবে, সে আশায়। আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে, কান্না পাচ্ছে। আমি ঠিকমতো খেতে পারি না, ঘুমাতে পারি না, পড়তে পারি না। কারও সাথে কোনও কথা বলতে ভাল লাগে না, কোনও কিছুর প্রতিই আমার কোনও খেয়াল নেই।
ভাইয়া, আমি কী করতে পারি বলুনতো?
: একটা বড় দেখে ডিম পাড়ো!
: ডিম তো পাড়া যায় না! পাড়া গেলে পেড়ে দেখতাম, শান্তি আসে কি না! সত্যি, উনাকে আমি ভীষণ ভালোবাসি, ভাইয়া! আর কিনা আমাকে সহ্য করতে হচ্ছে………যাকে প্রচণ্ড ভালোবাসি, সে আরেকজনের মোহে আছন্ন! মানুষ যে চোখ থাকতেও কতটুকু অন্ধ হয়, উনাকে না দেখলে বুঝতাম না। কষ্ট হয় ভীষণ!
: তোমাকে কি আমি চিনি? ২০১২ সাল থেকে আমরা ফ্রেন্ড! তুমি কি কেবলই শোপিস, শুধু লিস্টে রাখা! বুঝতে পারছি নাতো!
: আপনি আমায় চেনেন না। আমার আপনাকে চেনা হয়েছে এভাবে………আমি আপনার কথা শুনতাম অনেক। আমার অনেক ফ্রেণ্ড আপনার স্টুডেন্ট ছিল। আমি ২০১০ থেকে, মানে আমার ইন্টারের সময় থেকেই আপনার কথা শুনতাম আমার ফ্রেন্ডদের কাছে। এভাবেই চিনেছি। আচ্ছা ভাইয়া, আমার জন্য একটু দোয়া করে দিয়েন। কারণ, যাকে প্রচণ্ড ভালোবাসি, তাকে যখন দেখি অন্ধ হয়ে আছে, অন্যের চাহিদামত নাচছে, তখন ভীষণ ভীষণ ভীষণ কষ্ট হয়। আমার জন্য শুভ কামনা রাখবেন, আমার কষ্টের দিন যেন শেষ হয়।
: বেকুব। নাচো আর মরো! বিদায়!
: বুঝেছি। আমিও নাচছি এবং……….এজন্যই মরছি! ঠিকই তো! কী করবো! মন মানে না, ভাইয়া!
: আমার সাথে প্রেমকরা শুরু কর। সব সমস্যা সল্ভড! আমি তোমাকে কোনও কষ্ট দেবো না। প্রমিজ!
: এখন আমাকে প্রিন্সেস ডায়ানার পুত্র এসেও যদি প্রেম করতে বলে, আমি প্রেম করবো না! ওই ১জন ছাড়া আর কারও জন্য আমার মধ্যে একটুও প্রেম আসবে না।
: ভেরি গুড! এমন লাইলি বেগমই তো চাই! শুভকামনা রইল।
: ভাইয়া, আনফ্রেন্ড করেছেন যে? আমি কোনওভাবে বিরক্ত করিনি তো? আচ্ছা ভাইয়া, বললেন নাতো, আমি কী করব? দিনদিন আমার কষ্ট কেবল বেড়েই যাচ্ছে। ওরা কালকে একটা কাপল ছবি পোস্ট করেছে ফেসবুকে! আমি সারারাত গবেষণা করেও এর কোনও অর্থ উদ্ধার করতে পারিনি! ও ভাইয়া, বলেন না, কী করলে উনি আমার কাছে ফিরে আসবেন?
রিপ্লাই দেবেন না, ভাইয়া? আপনি এমন স্বার্থপর কেন?
: আমার হাতে—
প্রচণ্ড ব্যস্ততার মধ্যেও আমার পছন্দের কাজটি করতে পারার মত অফুরন্ত অবসর আছে;
অফুরন্ত অবসরের মধ্যেও তোমার পছন্দের কাজটি করতে না পারার মত প্রচণ্ড ব্যস্ততা আছে।
আমি স্বার্থপর?
কেন? তোমার পছন্দমত আমার সময় খরচ করছি না বলে?
তাহলে তুমি কী?