আমি ছিলাম নিতান্তই সাধারণ একটা মেয়ে,
কাছে টেনে নেবার মতো ভীষণ রূপ কিংবা গুণ, কোনওটিই ছিল না আমার।
আমার এমন কিছুই ছিল না,
যা নিয়ে তোমার সামনে দাঁড়াতে পারি।
অথচ তুমি এসব কিছুর পরোয়াই করনি কখনও।
তোমাকে ভিন্নভাবে জয়ের ইচ্ছে আমার ছিল না।
কী ভীষণ বেখেয়ালেই পেয়েছি তোমায় একটু একটু করে!
পেয়েছি ঠিক তেমন করে, যেমন করে একপা দুইপা করে শিশু প্রথম হাঁটতে শেখে।
যেদিন প্রথম ছুঁয়েছি তোমায় তোমার পাশে বসার ছলে,
সেদিন ওতেই জয় ছিল গো, তোমাকে পাবার!
তখন থেকেই বেলাঅবেলায়,
অভাবেও নয়, স্বভাবেও নয়,
ছুঁয়েছি তোমায় ভালোবেসেই,
একটু করে, আধটু করে,
আমার সারাটা স্বপ্ন জুড়ে।
তুমি কখনওই আমার সংশয় ছিলে না, সিদ্ধান্তই ছিলে।
এই জীবনের এক অবেলায়, গহীন আঁধারে,
এসেছিলে তুমি এই আমারই খুব গভীরে।
নিজেকে আমি বোঝাতাম প্রায়ই, “এ জীবনে আছি যতদিন,
কখনও পিছু তাকাব না ফিরে।”
তোমাকে পেয়ে সত্যি হয়েছে এ অবোধ শপথ………
আমার যত বোধ ছিল আর ছিল অনুভব,
সবটুকু ছিল শুধু তুমিময়,
আশ্চর্য এক দারুণ বাঁচার সে ছিল শুরু।
আমার যত দোষ ছিল, তার কিছুই কখনও বলনি তুমি,
বোঝোইনি যে কিছু, তেমন তো নয়।
কখনও বলনি, “মেয়েদের এত ছোট চুলে ভাল লাগে না দেখতে!”
বলনি তো এও, “তোমার পোশাকের পছন্দটা কেমন যেন, ঠিক ভাল লাগে না!”
জানতে চাওনি, আমি পড়াশোনায় কেমন কিংবা আদৌ করি কি না,
কখনও তো ধমকের সুরে বলনি এও, “এই মেয়ে, তুমি সাজতে পার না?”
আমার যত অপূর্ণতা ছিল,
ঢেকেছ তুমি পূর্ণ তুমি’তে---
কখনওবা একটু কয়ে, কখনওবা আরও একটু সয়ে।
এরই মাঝে তোমায় কত শতবার আঘাত করেছি বুঝে না বুঝে,
কথায় কখনও, কখনওবা কাজে!
বলনি কখনও, “তুমি কী একটা ভীষণ বাজে, উটকো লোকের মতন!”
দেবে না যা, দেবে বলনি; নেবে না যেখানে, নেবে বলনি; স্বপ্নের ছলে দাওনি ভাসিয়ে দুঃস্বপ্নে কোনও।
সব মনে আছে! বলনি তো তুমি, “তোমায় নিয়ে ঘুরব বিকেল, সম্পূর্ণটাই তোমার হয়ে,
ওই দুহাত ধরে হাঁটব যে পথ অনেকটুকুই,
একটু ছুঁয়ে, একটু হেসে।”
প্রতিশ্রুতির মিথ্যে মায়ায় বাঁধনি কখনও।
সত্যি তুমি অন্যরকম, জেনেছি যত, ভালোবেসেছি তত।
জানো, মাঝেমধ্যে খুব তেষ্টা পেত---তোমায় ছোঁয়ার!
সবাই যেমন চায়, সবাই যেমন পায়,
তেমন কখনও চাইনি তোমায়, বাঁধিনি মায়ায় একটু করেও।
পাগল যেটুক হয়েছি আমি, নিজেরই দায়ে!
বলতে পারিনি, শুধুই ভালো বাসতে পেরেছি,
চোখের মধ্যে খুব আদরে জল ঝরানোর রোগ পুষেছি।
তোমাকে কত জ্বালিয়েছি, বলো, কত অজুহাতে, মনে আছে সব!
অথচ তুমি এই পাগলিটারই পুরোটা নিয়ে করেছ গ্রহণ!
হাজারটা ক্ষণ কাছে থেকেও বুঝিনি তোমায়,
চেয়েছ বলেই, ছুঁয়েছি তোমায় হৃদয় দিয়েই যখনতখন!
একটুএকটু নিজের মাঝেই চিনেছি তোমায় নিজের মতো,
হয়তো এভাবে গেছি কিছুটা নিজের থেকে নিজেই সরে।
তোমাকে ছুঁয়ে বুঝেছি, প্রিয়,
ভালোবাসা---সে তো অধিকারে নয়,
অনুভবে হয়! যদি তা না হবে, তবে
তোমার চোখে জল দেখলে কেন আমার বুকে রক্ত ঝরে?