হিন্দুদের লোকাচার

আমাদের দেশে অঞ্চলভেদে বিভিন্ন ধরনের লোকাচার প্রচলিত আছে। কিছু লোকাচার এত পুরোনো যে, সেগুলির উৎস খুঁজে পাওয়াই মুশকিল। খুঁজতে গেলে একেক জনের কাছে আপনি একেক রকমের তথ্য পাবেন। কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল, তা নিয়ে আলাপ ও গবেষণা করতে পারবেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা, যদি অতটা আগ্রহ থাকে আর কি!

মজার ব্যাপার, হিন্দুশাস্ত্রের কোথাও বেশিরভাগ লোকাচারের‌ই কোনো বৈধতা বা ভিত্তি খুঁজে পাবেন না। তাহলে আপনি কী করবেন? তার চেয়ে বড়ো কথা, আপনাকে কিছু করতে হবে কেন? কিছু করার জন্য ডেকেছেটা কে আপনাকে? আপনার মতামত‌ই-বা শুনতে চেয়েছে কে? যা চলছে চলুক না! তারা কি আপনার চেয়ে কম বোঝে? কম বুঝলেও তাতে আপনার কী? তারা আপনার খায়, না পরে? না কি আপনার কাছ থেকে তাদের কেউ কিছু জানতে চেয়েছে? লোকাচারটি পালনের জন্য চাঁদার রসিদ নিয়ে এসেছিল নাকি কেউ?

মন চাইলে আপনি সেই লোকাচারে অংশ নিন বা উপভোগ করুন, মন না চাইলে দূরে থাকুন। ব্যস্, হয়ে গেল! যারা ওসব করছে, তারা ওসব করছে বলে আপনার কোনো অসুবিধে হচ্ছে? উত্তর যদি ‘হ্যাঁ’ হয়, তাহলে প্রয়োজনে পুলিশের সহায়তা নিন। উত্তর যদি ‘না’ হয়, তাহলে তা নিয়ে খোঁচাখুঁচি করার কী দরকার? আপনার কি সত্যিই কোনো কাজ নেই? ছিঃ!

তারা ভুল করছে? তো করুক না! তাতে যদি নরকেও যেতে হয়, সেই যাওয়াটা কি আপনি যাবেন, না কি তারা যাবে? না কি তাদেরকে স্বর্গে নেবার ঐশ্বরিক ক্ষমতা আপনার আছে? তাদের জন্য তো কিছুই করার সামর্থ্য আপনার নেই, তাহলে এমন ছাগলামি করছেন কেন? হাতে কাজ না থাকলে মানুষ এরকম অন্যের কাজ নিয়ে পড়ে থাকে। আমার লেখা ‘শ্রীরামের পদপ্রান্তে’ থেকে একটি বাক্য উদ্ধৃত করছি: “নিজের ঘরে নেই কাজ তো পরের ঘরে খ‌ই ভাজ!”-টাইপের মানুষ আর যা-ই হোক, ধার্মিক কিছুতেই নয়। পুরো সনাতন ধর্মদর্শনে আপনি এমন উপদেশ বা নির্দেশ কোথাও খুঁজে পাবেন না, যেখানে নিজের কর্তব্যকর্ম বাদ দিয়ে পরের পেছনে লেগে থাকতে উৎসাহিত করা হয়েছে।

যে-ব্যক্তি সঠিকভাবে ধর্মপালন করে, তার পক্ষে এমন জাজমেন্টাল হ‌ওয়াটা সময়ের অভাবে অসম্ভব। উপাসনা যার, উপাস্যের সাথে বোঝাপড়াটাও তার। এটা নিয়ে অন্য কারও কিছু বলার থাকতে পারে না। অন্তত সনাতনধর্মের কোথাও এ ধরনের ফালতু মাতব্বরি করার সুযোগ রাখা হয়নি। নিশ্চয়ই ভগবানের দুয়ারে আমার কাজের কৈফিয়ত আপনাকে দিতে হবে না। আপনি টেনশনমুক্ত; ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মুখনিঃসৃত গীতার বাণী যদি মেনে চলতে চান, তবে এখন‌ই নিজের কাজে যান। আর স্বয়ং ভগবানের কথা অমান্য করতে চাইলে অন্যের পেছনে পড়ে থাকুন।

পরচর্চা-পরনিন্দা মূর্খদের কাজ; ওদের সাথে প্রতিযোগিতায় নেমে ফার্স্ট হলেই বরং আপনি হবেন সবচাইতে বড়ো মূর্খ। অবশ্য, আপনার এইম ইন লাইফ যদি ওটাই হয়, তাহলে ক্যারি অন, ড্যুড! সরি ফর দি ইন্টারাপশন!