হাইফেন-দূরত্বের সম্পর্ক



ঠান্ডা বাতাস বইছে, গাছের পাতাগুলোর শীত করছে না তবুও। ঘুটঘুটে অন্ধকার নেমে এল, গাছের পাতা গাঢ় সবুজ থেকে ক্রমশই কালো বর্ণ ধারণ করল!

নিঃশব্দে জানালার পর্দা সরিয়ে দিতেই চোখে পড়ল, শীতল বাতাসে স্থির নেই কিছুই। তীব্র এক অনুভূতির সঞ্চরণ অনুভূত হলো শরীরজুড়ে, যেন অদৃশ্য শিহরনে আমাকে ছুঁয়ে গেল তোমার অবয়ব। আকস্মিকভাবে আমি তোমার শরীরের চেনা ঘ্রাণ পেতে শুরু করলাম। অবশ্য এর আগেও বেশ কয়েক বার এমন হয়েছে, তোমায় বলেছিলাম সে কথা, তুমি হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলে। তোমার নাকি মনে হয়, তোমার শরীরের গন্ধ আমার বিশেষ পছন্দ হওয়ায় আমি প্রায়শই এমন ভ্রান্তিতে থাকি।

বাতাস যেন আরও তীব্র হয়েছে, বেশ ঠান্ডা লাগছে। জানো, আমি প্রেমিকা হিসেবে খুউব উদাসীন, তুমি আমাকে অদৃশ্য এক বন্ধনে আমৃত্যু আটকে রাখার প্রতিশ্রুতি দিলে কেন, নীড়?

তোমার স্পর্শ আমাকে ভীষণ ব্যাকুল করে তোলে, পৃথিবীর সবার চোখে আমি এক মায়াহীন মানুষ হলেও তোমার চোখে তাকিয়ে অদ্ভুত এক মায়ার আলিঙ্গন করতে আজন্ম বাঁধা পড়তে হয়েছিল এই আমাকেই! আচ্ছা, তুমি বলো তো, প্রেমিকেরা কি মিথ্যে শুনতে পছন্দ করে? তবে তুমি কিন্তু ভীষণ বিপাকে পড়তে যাচ্ছ, কারণ আমি তোমায় কক্ষনো মিথ্যে বলব না, নীড়।

আমার অস্তিত্ব কি কেবল তোমার মাঝেই সীমাবদ্ধ? তুমি ঠিকই বলেছিলে—অপেক্ষা সবসময় দীর্ঘশ্বাসের মতন ভারী। তোমার সাথে কাটানো এই মুহূর্তটাকে কেন এত অস্থিরতায় ঘিরে রেখেছ?

তোমার প্রেমে পড়ার অসংখ্য কারণ তোমাকে স্বীকার করলেও প্রথম এবং একমাত্র কারণটি তোমার অজানা। জানো, তুমি নীরব থাকতে পারো—আমার অনুভূতিগুলোর মতন, আমার অশ্রুর মতন। শুধু এই নীরব থাকার ধৈর্য দেখে আমি প্রথম তোমার প্রেমে পড়েছিলাম।

আমাদের মাঝে এই হাইফেন-দূরত্বেই তুমি এতটা অস্থির হচ্ছ আজ? আচ্ছা, দুটো শব্দের মাঝে হাইফেন ব্যবহার করে কখন, জানো? শব্দদুটোকে কাছে আনার জন্য, এই যেমন ধরো, সুখ-দুঃখ, ভালোবাসা-বিষাদ, সম্পর্ক-বিচ্ছেদ, তেমনি তোমাকে রাখি আমার নিকটবর্তী ব্যবধানে, যেন অশ্রু দিয়ে তোমায় কাছে আনতে পারি। এই দূরত্বটা একে অপরকে কতটা কাছে আনছে, এটা আন্দাজ করতে আমার—একটা পুরো জীবন একা কাটাতে হলো।