স্রষ্টার সাথে যোগাযোগ

ভালো নিয়ত নিয়ে কোনো বিনিময় প্রত্যাশা না করে কাজ করে গেলে হতাশা আসে না। গভীর মমতা ও আন্তরিকতা নিয়ে কারও পাশে এসে দাঁড়ালে আনন্দের ঝরনাধারায় সকল বেদনা আর কষ্ট দূরে সরে যায়। ভালোবাসার মাধ্যমে আমাদের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ পৃথিবীর মধ্যে একটা যোগসূত্র স্থাপিত হয়। প্রকৃত ভালোবাসা স্রষ্টা আর সৃষ্টিকে এক করে দেয়। যেখানে ভালোবাসা নেই, সেখানে নিজের ঘৃণা কিংবা ঈর্ষার আগুন নিজেকেই তিলে তিলে পুড়িয়ে মারে এবং নিজের ক্ষমতার উপর সকল বিশ্বাস নষ্ট করে দেয়। অন্তর্জগত আর বহির্জগতের মধ্যে ভালোবাসার বন্ধন মনুষ্যত্বকে দেবত্বে উন্নীত করে। তখন স্রষ্টার সাথে মানুষের মিথস্ক্রিয়ায় সকল সাধারণ অসাধারণত্বে পরিণত হয়।

আমাদের যা আছে, তা যত সামান্যই হোক না কেন, তা দিয়েই জীবনটাকে সুন্দরভাবে কাটানোর দীক্ষাই জ্ঞান। আমরা যখন আমাদের জীবনের সকল অনুষঙ্গকে ভালোবাসতে শিখে যাব, তখন আমাদের হৃদয়ের অন্তস্তল থেকে উৎসারিত প্রেম ও ভালোবাসার উষ্ণ প্রস্রবণ বাইরে এসে কোমল ধারায় আমাদের সাথে আমাদের ভালোবাসার বস্তুকে এক করে দেবে। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের শরীর আমাদের আত্মাকে ধারণ করে, যেমনি করে প্রার্থনাগৃহ স্রষ্টাকে ধারণ করে। কিন্তু প্রকৃত ব্যাপারটি এমন নয়। আমরা সবাই একেকটি আত্মা, যাকে নিপুণ দক্ষতায় আড়াল করে শরীর নামের বিশাল এক খাঁচা। যখন আমাদের সকল ভাবনা আর কাজকে আমাদের শরীর নয়, বরং আমাদের আত্মা নিয়ন্ত্রণ করে, তখন আমাদের বাইরের জগত আর ভেতরের জগত অভিন্ন সুতোয় গেঁথে যায়।

আত্মা যাকে প্রেমে বাঁধে, তাকে সারাজীবনের জন্যই বাঁধে। মন বা শরীর যাকে প্রেমে বাঁধে, তাকে নির্দিষ্ট কারণে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট ধরনে ক্ষণিকের মোহের বাঁধনে বাঁধে। আত্মার ভালোবাসায় কোনো বৈষম্য থাকে না, কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা সে ভালোবাসায় নেই, এটা কাল ও প্রেক্ষিতের সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। এমন ভালোবাসায় প্রেমিক আর প্রেমের বস্তুর মধ্যে শুধু বাহ্যিক ভিন্নতা ছাড়া আর কোনো ভিন্নতা থাকে না, দূরত্ব থাকে না। দেহের বাহ্যিক অস্তিত্বের দ্বৈততা থাকলেও ভালোবাসার স্বর্গীয় স্রোতে ভাসতে থাকা দুটি সত্তা একত্ব বা অদ্বৈতত্ব লাভ করে। যে-চেতনার স্পর্শে হৃদয়মথিত স্রষ্টার সাথে কোনো সংযোগ ঘটে না, অনির্বচনীয় সুখে আশ্চর্য সুরে হৃদয় নেচে ওঠে না, শরীর ও মন একক সত্তায় চলে না, সে চেতনা স্খলিত বিভ্রম মাত্র।