আমার ইনবক্সে শুধু বিসিএস আর ক্যারিয়ার নিয়ে কথা বলতে ভাল লাগে না। খুব খুব খুব বেশি বিরক্ত লাগে!! শুধু বিসিএস আর ক্যারিয়ার নিয়ে জানতে আমার বন্ধু হওয়ার কী দরকার? যদি আমার কোনও লেখায় আপনার উপকার হচ্ছে বলে আপনার মনে হয়, তবে সবিনয়ে বলছি, আমার সব কনটেন্টই তো পাবলিক-করা! একটু কষ্ট করে পড়ে নিলে কী হয়? আর বিসিএস পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে, এমন কারওর ফ্রেন্ডলিস্টে থাকলে বিসিএস ক্যাডার হয়ে যাওয়া যাবে, এটা কোন আইনের বইতে লেখা আছে? আমি তো চাকরি পাওয়ার আগে কোনও সরকারি চাকরকে চোখেও দেখিনি অতো। তাতে কী হয়েছে? আমি চাকরি পাইনি? চাকর হইনি? আপনাকে কেউ যদি সারাক্ষণ ক্যারিয়ার নিয়ে জ্বালাত, আপনার কেমন লাগতো, একটু ভেবে দেখবেন? আমি এবং আমার সবকিছুই একান্ত আমার, আমার পরিবারের, আমার কাছের কিছু মানুষের; এর বাইরে আর কারওই নয়। আপনার চাকরি হচ্ছে কি হচ্ছে না, আপনি কষ্টে আছেন কি আনন্দে আছেন, আপনি হতাশার সমুদ্রে ডুবে আছেন কি অনুপ্রেরণার সুইমিং পুলে সাঁতার কাটছেন, তা দিয়ে আমার কিছুই এসে যায় না। হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দেয়া এক প্রকারের ফাজলামো ছাড়া আর কিছু নয়। আমার কোনও কাজে যদি আপনার কোনও উপকার হয়, তবে সেটা নিছকই কাকতাল মাত্র। সেখানে আমার কোনও মহত্ত্ব বা ভূমিকা নেই, আমি কাজটি করেছি শুধুই আমার ব্যক্তিগত আনন্দের জন্য। একটু ভাবুন, আমার ক্ষুদ্র সামর্থ্যে যতটুকু সম্ভব, ততটুকু তো করেই যাচ্ছি, তাই না? অনুপ্রেরণামূলক লেখালেখির চাইতে আমার বরং অন্যধরনের লেখা লিখতেই বেশি ভাল লাগে। ওগুলোই আমার বেশি প্রিয়। তবুও তো লিখি, না? এরপর আমাকে এমনকি গাইডবইয়ের নামও জিজ্ঞেস করতে হবে নাকি? অনেকে আবার কড়া-কড়া কথা লিখে দুর্ব্যবহারও করেন। এমন করেন কেন, ভাই? বকা দিই না, তাই?
বিশ্বাস করেন, আমিও একটা মানুষ!! আমার দিনও ২৪ ঘণ্টায়। জনসেবা করা আমার একমাত্র কাজ নয়! আমাকেও গান শুনতে হয়, মুভি দেখতে হয়, বই পড়তে হয়, সুন্দরীদের সাথে ফ্লার্ট করতে হয়। ইনবক্সে কোন সুন্দরীর ‘হাই-হ্যালো’ দেখলে আমিও খুব খুশি হয়ে লাফিয়ে উঠি; ঠিক আপনার মতোই! চুপিচুপি সুন্দরী মেয়েদের প্রোফাইলে ঢুকে ঢুকে ওদের ছবি দেখি, আর ভাঙচুরটাইপের ক্রাশ খাই! আপনিও তো খানটান, নাকি খান না? না খেলে ডাক্তার দেখান; দ্রুত! আপনার মেসেজ আপনার জন্য যতটা গুরুত্বপূর্ণ, আমার জন্য ততটা হবে কেন? আপনার সমস্যা একমাত্র আপনারই সমস্যা, আর কারও নয়। একটু ভেবে দেখুন তো, আপনার গরু রচনা মার্কা ব্যক্তিগত সমস্যাপূর্ণ মেসেজের সমাধানসমৃদ্ধ রিপ্লাই কীসের দাবিতে একজন অচেনা মানুষের কাছে আপনি আশা করেন? তবুও তো কিছু রিপ্লাই দিই, দিই না? আপনার একটা সিলি মেসেজের জন্য আরেকজনের অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ চলে যায় ১০০টা মেসেজের পর, তা আর আমার চোখেও পড়ে না। বলেন, এটা কি ঠিক? আমার কথা পড়ে রাগ হচ্ছে খুব, না? হলে হোক! আপনি জানেন আর না-ই জানেন, আমি তো জানি, আপনাদের পুরোপুরি বিনামূল্যে আমার চাইতে বেশি সেবা এখনও পর্যন্ত কেউ কখনও দেয়নি। এও জানি, আপনাদের এ উপকার করার কারণেই আমি যতটা আঘাত পেয়েছি আপনাদের কাছ থেকে, এর চাইতে বেশি আঘাত আর কাউকে কখনও সহ্য করতে হয়নি। অনেক মূল্য দিয়ে আমাকে এ বাস্তবতা বুঝতে হয়েছে।
আমিও চাই, পৃথিবীর সব সুন্দরীই আমাকে ‘ভাইয়া’ না ডাকুক। আপনিও তো এমনটাই চান, নাকি ভুল বললাম? এ জগতে, হায়, কে সুন্দরীর ভাইয়া হতে চায়?! আমি কিছুতেই হিপোক্রিট হতে পারি না বলে আরও অনেক পার্থিব সুখ, যা আমিও পেতে পারতাম, তা পাই না। যা বলার সরাসরি বলি। হিপোক্রিটদেরকে লাত্থি মেরে দূরে সরিয়ে দিই। পৃথিবীতে চলতে গেলে সবাইকেই লাগবে কোন দুঃখে? আমার কাছে পৃথিবীর সবচাইতে অশ্রাব্য গালি—হিপোক্রিট! Better to be a scoundrel than to be a hypocrite! আমি যা না, তা ভেবে প্লিজ আমার কাছে আসবেন না। সত্যি বলছি, হতাশ হবেন! আমি সেইন্টটাইপ কেউ না। আমি ভেতরে ভেতরে ‘সত্যের মত বদমাশ’, একেবারে আদিমটাইপের! আমার জৈবিক অনুভূতিগুলো হুবহু আপনার মতোই। রাস্তায় ১০০ টাকা পড়ে থাকতে দেখে সেটির ওপরে ‘কেউ যাতে দেখে না ফেলে’ স্টাইলে খুব সন্তর্পণে দাঁড়িয়ে গিয়ে সুবিধামতো সেটিকে আপন করে নেয়ার মতন ছোটবেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে আমিও বড় হয়েছি। আমারও বাথরুম পায়। মেজাজ খারাপ হলে আমারও ভাঙচুর করতে ইচ্ছে করে। কারও-কারও নাকে ঘুষি বসিয়ে দিতে ইচ্ছে করে, নিদেনপক্ষে ‘শুয়োরের বাচ্চা’ বলে গালাগালি করতে ইচ্ছে করে। আমি এলিয়েন না, ভাই। আপনার মতোই আমারও রাগ হয়, কষ্ট হয়। হাসিমুখে থাকি বলে খুব যে সুখে আছি, তা তো নয়। হয়তো বা পৃথিবীর সবচাইতে সুন্দর করে হাসতে-পারা মানুষটি পৃথিবীর সবচাইতে দুঃখী মানুষ। সবার মন ভাল করে দেয় যে, তার মনটা প্রায়ই খুব খারাপ হয়ে থাকে। আপনি তা কোনওদিনও জানতেই পারবেন না।