স্পর্শাতীতের সংলাপ



: তোমার এই অশ্রুর সমর্পণ—তা কি শুধুই ব্যর্থতার অনুসৃতিতে বিলীন?
: এত কাছে থেকেও তোমায় স্পর্শ না করতে পারার যন্ত্রণা—তার কাছে এই অশ্রুর আকুতি কতই-না তুচ্ছ! ভালো থেকো।
: প্রস্থানের আবশ্যকতাই বুঝি তোমার কাছে সমীচীন? যার অস্তিত্বের গভীরে পৌঁছতে চেয়েছিলে সর্বান্তকরণে, আজ তার হৃদয়ের প্রান্তে এসে করছ—বাহ্যিকতাকে না ছুঁতে পারার আফসোস?
ভাবো, তোমার অসহায় আত্মসমর্পণের সেই মুহূর্ত কি আমার দৃষ্টি এড়িয়ে গিয়েছিল? কখনোই নয়।
আমি তো বহু পথ আগেই তোমাকেই খুঁজেছি—তুমি, কই, দেখা দাওনি তো! হৃদয় জুড়ে রেখেছি তোমার স্পর্শানুভূতি—যেতে দিই কী করে বলো?

: আহ্, চুপ করো! অতটা পাবার যোগ্য আমি নই। তুমি বরং আমায় দূরে সরিয়ে দাও—সেটাই আমার প্রাপ্তি।
কেন অযথা আমার ব্যর্থতা মনে করাতে চাও? ভালোবাসার নিপুণতাকে হৃদয়ে ধারণ করে, এই তীব্র প্রণয়ের আলিঙ্গনে কেন আমায় বাঁধতে চাও?

: হা হা হা! ব্যর্থতা?
এ অনতিক্রম্য পথই তো আমাদের! কোন ব্যর্থতার কথা বলছ, যা আমার নয়?
তোমার গভীর ক্ষতের সামান্যতম উষ্ণতা উপলব্ধি করতে হলেও—ভালোবাসতে জানতে হয়। তা কি তোমার অজানা?
বড়ো রহস্যময় তোমার নিঃশব্দতা। আমার হৃদয়ের গূঢ় প্রহারে তোমার জন্যই সাজিয়ে রেখেছি এক অপ্রকাশিত অনুভবের প্রকোষ্ঠ।

: আমাদের শেষ কবে দেখা হয়েছিল—তা মনে করতে চাই না। মিথ্যে হলেও তুমি ফিরে আসার সময় বলেছিলে, ভালোবাসি।
আমি নিজেকেই বোঝাই, ভুলে থাকি কিছুক্ষণ—যদি কখনো আবার আমাদের দেখা হয়! তোমায় দেখতে যে খুব ইচ্ছে করে।

: কী করে আমার কাছে আসার প্রবল অনুভূতি মুহূর্তেই লুকিয়ে ফেলো তুমি?
পরক্ষণেই আমায় না পাবার যন্ত্রণায় নিজেকে ছিন্নভিন্ন করো—কী পাও এমন করে?

: তোমাকেই তো পাই আমার সকল অনুভবের বিস্তারে। তবে যা ঘটছে, সেটাই বাস্তব।
আমি কি বাস্তবতায় কখনোই তোমায় নিজের করে পাবো না?

: না। বাস্তবতার অপ্রিয় সত্য মেনে তোমার কাছে আসা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
তুমি কি পারবে—তোমার সমস্তটা দিয়ে আমায় ভালোবাসতে?
হা হা! পারবে না তো!

: যদি কাছে আসতেই না পারো, তবে তা ভালোবাসা হতে পারে কি?

: তুমি তো দেবতা নও!
আর আমি, হলেও পারতাম না।
তবে আবার হয় নাকি?
তোমার সমস্তটায় ভালো কিছুই থেকে যাক—পূর্ণতা তোমায় ঘিরে থাকুক!
আমি বড়ো অপ্রয়োজনীয়, অপূর্ণতায় মোড়ানো।
এই জীবনে আর কখনও তোমার কাছের কেউ হয়ে উঠতে পারব না। সেই সামর্থ্য আমার নেই।
যৎসামান্য অনুভবের প্রকাশেই খুঁজে পেয়েছিলাম তোমায়!

: কে বলেছে, তোমার চোখ ছুঁয়ে, তোমার নিঃশব্দতায় আমার নিঃশ্বাসের অস্থিরতায় অনন্তকাল পার করা যায় না?
ভালোবাসা কি শর্তে বাঁধা যায়, বলো?
তুমি বাহ্যিকতার কথা বলছ? যা তুমি নিজেই বিশ্বাস করো না—তা নিয়ে কেন নিজেকে যন্ত্রণায় রেখে আমায় বলে যাচ্ছ?

: তুমি আমার ভালো নিয়ে ভাবছ?
আমি তো নিজের ইচ্ছেতেই তোমায় আগলে আছি।
তোমার মনের গভীরতা বুঝতে পারব না ভেবেছ?
তুমি কি একাই ছুঁয়েছ আমার অন্তর? আমি পারিনি?
কী মনে হয় তোমার?

: তুমি কখনোই এমন ভ্রান্তিতে ছিলে না—আজও নেই।
ভেবো না; যাব না, থাকব।
আমাদের স্মৃতিগুলো তো বাঁচিয়ে রাখতে হবে—যা আমাদের অনুভবের উপস্থিতি ব্যতীত টিকে থাকতে পারে না।

: তোমার অনুভবে এক গভীর শান্তি ছড়িয়ে পড়ে—জানো তুমি?
: নিশ্চয়ই জানি! তাই তো এসেছি, খুব তাড়ায়।