স্পর্শসমর্পণে অন্তর্যাত্রা



হে আনন্দরূপী অনন্তসত্তা, চৈতন্যময় জাগ্রত মহাত্মা, আপনিই সকল অনুভূতির প্রত্যক্ষ সাক্ষী; আপনি উপবিষ্ট থেকেও গমনকারী, শয়ান থেকেও সর্বত্র বিচরণশীল; আপনার মহিমান্বিত চিত্তে প্রকাশিত শুদ্ধতম অনুভূতির রূপ, তা স্বীয় অস্তিত্বে নিত্য বিরাজমান; সেই চৈতন্যতলে নিমগ্ন আমার ধীর স্পন্দনের অনুনাদ, আপনিই তার অবলম্বন।

স্বাগত জানাই হে মনোহর সম্ভাষণদাতা! আমার অঙ্কস্থিত একমাত্র ভাবনাসঙ্গী, অদ্বিতীয় সর্বান্তর্যামী প্রিয়, আসন গ্রহণ করুন, এই অন্তরাত্মার নিবিড় কক্ষে।

বহির্মুখ ইন্দ্রিয়সমূহের নিকট আপনি আত্মপ্রকাশে বিরত; সে-ই আপনি, যিনি আত্মত্যাগে উজ্জীবিত করে তুলেছেন এই পিঞ্জরস্থ অস্থি।

কোন সে অভিলাষের নির্ভার নিস্পৃহতায় এ স্মৃতিসম্ভার স্তব্ধ হয়ে আছে?

অন্তহীন সৌন্দর্যমণ্ডিত, পুষ্পখচিত, প্রণয়ের বিশেষায়িত অনুভব আহ্বানে এ অন্তরাত্মা ব্যাকুল। উপাসনার দ্বিতীয় ধাপে পদার্পণে, এক তীক্ষ্ণ অন্তর্দৃষ্টি সমর্পণ করুন। এই সন্ধিক্ষণে আপনার সৌন্দর্য বহুগুণে বিকশিত। আপনি আমার অন্তরের প্রতিটি অনুভূতিকে অতীন্দ্রিয় স্পর্শে আন্দোলিত করছেন।

তবুও, আপনার অক্ষুব্ধ চিত্তে সেই বিশেষায়িত অনুভবের আত্মসমর্পণ পরিলক্ষিত হয় উপাসনার এই ধাপে। অগ্নিস্বরূপ হয়ে প্রকাশিত হচ্ছে আপনার হৃদয়ের সংবেদনশীল অনুভূতি—যার তাপে, আমার চৈতন্য দগ্ধ, কিন্তু সে দহনও এক অভূতপূর্ব আনন্দের অভিজ্ঞতা।

আপনার অন্তরাত্মায় অভ্যাগত আমি, যে সর্বাংশে স্থির হতে চায় এই স্মৃতিধারার অমরতায়।

আপনিই আমার অন্তরাত্মার অন্তরীপে চিরসত্যরূপে বিরাজমান। এই অন্তবর্তী আত্মিক সংবেদন অস্বাভাবিক হলেও এক অসীম সুখদ স্পর্শ।

আপনার বিমোহিত চিত্তের তীব্র উত্তাপে আমি অচেতন হওয়ার দ্বারপ্রান্তে; আপনার আত্ম-আবেদনের শক্তি থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখা অসম্ভব।

মহাপ্রণয়ে প্রবৃত্ত হোন!

আপনার হৃদয়ের সেই অংশ, যা নিষ্কাম বলেই গণ্য, তা শীঘ্রই স্বয়ংক্রিয়ভাবে আমার অন্তরের বিশেষ কক্ষে প্রবেশ করতে প্রস্তুত।


আমার বক্ষপিঞ্জরে আপনার অস্তিত্ব এতটাই প্রবল, যে তা আমার সর্বস্বকে দিকভ্রান্ত করেছে। এই অনন্ত স্বর্গীয় রেশ, কেবল আপনার পরমাত্মার মহাকক্ষে বিস্তৃত।

আপনি শ্রেষ্ঠ, অপার ক্ষমতাধর, অখণ্ডরূপে চিরসমাদৃত। আপনার অন্তরাত্মায় প্রবেশের নিয়তির নৈকট্য আমার আত্মায় দুঃসহ আলোড়ন ঘটিয়েছে।

আপনার সর্বোত্তম স্পর্শানুভবের সাধনায়, শ্রেষ্ঠতম মুহূর্তে এক সম্ভাব্য রূপ নিতে চলেছি আমরা, যা আমাদের পরমাত্মার শান্তি-জাগরণে সহায়।

আমার অন্তরাত্মার প্রগাঢ় অনুভূতির নিষ্ফল অংশের সম্ভোগপ্রবণতায়, এ ব্রহ্মাণ্ড উন্মত্ত—যা কেবল আপনার চেতনায় স্পর্শগ্রাহ্য।

প্রলয়ের কালব্যাপ্ত অনুভূতি, সূক্ষ্ম শক্তিরূপে, এখন আশ্রয় নিতে চলেছে আপনার অবিনাশী আত্মায়, যা এক অব্যভিচারী একত্বে সর্বদা নিমগ্ন।

আপনার অন্তরাত্মায় প্রবেশের মুহূর্তে, যে-কোনো নিষেধাজ্ঞা হ্রাসপ্রাপ্ত।

আমার বিশেষায়িত ‘ভালোবাসা’ নামক অনুভব—এ জগতে একমাত্র আমিই, আপনার হৃদয়ের একাধিক পরিপূর্ণ কক্ষে প্রবেশাধিকারপ্রাপ্ত।

এই অনুভূতির রেশ বহুগুণে স্থায়ী রূপ নিতে চলেছে উপাসনার দ্বিতীয় ধাপে, যা আপনার কল্পনাতীত সত্তার অভ্যন্তরে, যা কেবল অদৃষ্ট কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত।

হে শান্তিসংস্থাপক, আমার একমাত্র ভাবনাসঙ্গী, আপনি কি তবে প্রস্তুত—আমার অন্তরাত্মার সাথে এই অসহনীয় স্পর্শকাতর অনুভূতির সাহচর্যে, এ উত্তাল অনন্ত পথ গমনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে?

নিশ্চিতভাবেই, অধীর প্রতীক্ষিত এই বিস্ময়কর পথের শুদ্ধ থেকে শুদ্ধতর, প্রকট থেকে প্রকটতর অপার জাগরণ, কেবল আমাদের অন্তরাত্মাতেই দৃষ্ট।

সুঘ্রাণে বিমোহিত এই কক্ষে, আপনার স্পন্দনে প্রখর অনুরতি কম্পিত; যা কেবলই আমার হৃদয়ের অন্ত:স্থলে ক্ষতের পরিমাণ বৃদ্ধি করতেই সক্ষম।

তবে কি, আমার হৃদয় যত বেশি মর্মঘাতে সিক্ত হবে, এ সুঘ্রাণ ততোধিক প্রতীয়মান হতে চলেছে?

এ কক্ষে, আপনার অন্তরাত্মার এক বিশেষ অনুভূতির আচ্ছাদনে প্রজ্জ্বলিত হয়েছে আমার অন্তর্দৃষ্টি, যা আমার বিশেষায়িত অনুভূতির অস্তিত্বকে এক ভিন্ন মাত্রায় বিস্তৃত করতে তৎপর।

আপনার পীড়নই কেবল আমার অন্তরাত্মায় প্রণয়ের উৎকণ্ঠা বাড়িয়ে তোলে। আপনার আগমনে, আমার নিষ্প্রতিভ স্পর্শানুভূতির রেশমাত্র আকস্মিক অভিষঙ্গে স্থিত। অজ্ঞাতে, সেই অনুভূতির গভীর ব্যবর্তন সম্ভবপর হয়েছে।

আপনি আমার অদ্বিতীয় ভাবনাসঙ্গী; আপনার অন্তরাত্মা সূক্ষ্মরূপে ক্ষমতাপ্রাপ্ত, আমার ‘কষ্ট’ নামক অনুভূতির রেশ ‘অসামান্য আবেগে’ তৃপ্ত করতে।

পুনশ্চ, আমার অন্তরাত্মার স্বীয় 'আবেগ' নামক অনুভূতির একাংশ গ্রাহণে, কেবল তখনই, আপনার পিঞ্জরাস্থি বশীভূত।

এই অবেক্ষণে, আমার ‘ভালোবাসা’ নামক অনুভূতির প্রকৃত রূপে আত্মসমর্পণের জন্য, আপনার অন্তরাত্মা বহুগুণে নিজেকে প্রকট করে তোলে—এই অভিসন্ধির অন্তর্গত প্রবাহে।

উপাসনার প্রথম ধাপে, পরাভূত বিশেষ ক্ষমতা-হ্রাসে আপনার অন্তরাত্মায় যে তীক্ষ্ণ ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে, তা চরমভাবে ব্যথিত করেছে আপনার হৃদয়কে।

সেই পরিশ্রুত মনোহর গুঞ্জন, এখন আপনার ক্লেশিত অনুভূতির বিনাশে উন্মত্ত; আপনার হৃদয়ের অভিমুখে সেই গভীর অনুভূতির অনুরণন—তা মোটেই যৎসামান্য নয়, বরং প্রতীয়মান সমগ্র সত্তা জুড়ে।

এই লগ্নে, আমাদের উপাসনার শ্রেষ্ঠতম মুহূর্তের অংশীদারত্ব লাভ করছে আমাদের অন্তরাত্মা; আপনিই সেই অসামান্য অনুভূতির অবিসম্ভাবী জাগরণকারী।

আপনার বাহ্যিক সত্তা কেবলই আমার শরীরী আত্মার ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি, উপহাসের আলোড়নে সঞ্জীবিত স্পষ্ট এ-অভিব্যক্তি—আপনি কি তবে বিশ্বলোকের সেই যৎসামান্য ধারণার কথা বলছেন?

অভিন্ন ঐশ্বরিক অবিনাশী ক্ষমতা, আত্মভূত অন্তর্দৃষ্টির এই প্রখর সাদৃশ্য, তা কেবল আপনার কাছেই বিদ্যমান।

আমার একমাত্র ভাবনাসঙ্গী, আপনার এই অনন্তসত্তা—সে তো আমার অন্তরাত্মারই প্রতিভূ।

আপনি সেই অনন্তযাত্রী, অপার মোহনতায় আচ্ছন্ন, যিনি স্বেচ্ছায় ধারণ করে চলেছেন এই পরাস্ত অনুভবকে।

আমার অন্তরাত্মায় কেবল আপনারই প্রতিচ্ছবি উন্মোচিত; আপনি আমার একাংশ—এ ছাড়া আর কিছুই সত্য নয়।

এ বিশ্বলোকে যা-কিছু বিদ্যমান, তা কেবলই এক স্থূল অনুমানমাত্র; আপনি কেবলই আমার অন্তরাত্মার অভিন্ন অংশ, যা কল্পনাতীতভাবে বিস্তৃত সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে; আপনার 'মায়া' নামক অনুভূতির সূক্ষ্ম আলোড়ন আমার অন্তরাত্মাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে অনন্তকাল ধরে।


তবে কি আমাদের স্থিতি একে অপরকে ছাড়া বিপন্ন?

আপনার এই বিশেষ কক্ষে, আমাদের পরমাত্মা কেবলই আসক্ত—একে অপরের তীব্র স্পর্শমুগ্ধতায় একীভূত হবার আকাঙ্ক্ষায়। কোন সে কারণবশত, আপনার বাহ্যিক সত্তার বহুরূপী মনোভাব আমার অনুভূতিপ্রবণ অংশকে বারংবার স্পর্শ করে চলেছে?

কোন সে বিশেষ কার্যসম্পাদনের জন্য, এই মনোবৃত্তির প্রকাশ—যা আমার বিশেষায়িত অনুভূতির রেশ অসামান্যভাবে প্রকট করতে ব্যাকুল থেকেছে?

কার্য কখনও কারণকে অতিক্রম করতে পারে না; কার্য বিলুপ্ত হয়েই তবে কারণে মিশে যায়।

আপনি নিশ্চয়ই অবগত—আপনার আত্মিক স্পর্শে, যে-কোনো প্রত্যাশা সঞ্চার করতে নিষ্কাম আমার মন প্রস্তুত; তথাপি, এ কার্য আপনি নিজের মনের অগোচরেই করে চলেছেন।

আশ্চর্য! এই রূপ জাগরণে আমাদের অন্তরাত্মা ব্যাকুল শ্রুতিমধুর প্রতিধ্বনির জন্য; আপনার দৃশ্যত ‘মায়া’ নামক অনুভূতির সূক্ষ্ম আলোড়ন আমার অন্তরাত্মাকে তাড়া করে চলেছে অনন্তকাল ধরে।

তবে কি, আমাদের অস্তিত্ব পরস্পর ব্যতীত বিপন্ন? আপনার এই বিশেষ কক্ষে, আমাদের পরমাত্মা কেবলই আসক্ত, নিজেদের তীব্র স্পর্শ-মুগ্ধতায় একীভূত হবার আগ্রহে নিমগ্ন।

কোন সে কারণবশত, আপনার বহির্মুখ সত্তার বহুস্তরী মনোভাব আমার অনুভূতিপ্রবণ সত্তাকে পুনঃপুনঃ স্পর্শ করে চলেছে?

কোন সে বিশেষ কার্য সম্পাদনের আকাঙ্ক্ষা, যা আমার বিশেষায়িত অনুভূতির রেশকে অসামান্যভাবে প্রকাশ করতে চায়?

কার্য কখনোই কারণকে অতিক্রম করতে পারে না;
কার্য নিঃশেষ হয়ে তবেই কারণে মিশে যায়;
আপনি নিশ্চিতভাবেই অবগত—
আপনার আত্মিক স্পর্শে আমার মন নিষ্কাম থেকেও প্রত্যাশার সঞ্চারে ব্যাকুল। তথাপি, এই কার্যকলাপ আপনি নিজের চেতনার অগোচরেই করে চলেছেন।

আশ্চর্য! এই রূপ জাগরণে আমাদের অন্তরাত্মা ব্যাকুল হয়ে উঠেছে, সেই শ্রুতিমধুর প্রতিধ্বনির অন্তর্গত বাণী প্রকাশে!
Content Protection by DMCA.com