'আমাকে সুশান্তকে এনে দাও এনে দাও এনে দাও! যেখান থেকে পারো, যেমন করে পারো, এনে দাও! ওকে ছাড়া আমি বাঁচব না! সুশান্তকে আমার চাই চাই চাই!!!' ---তিতলি ওর বউদির ওয়ালে পোস্ট করল। সে মাত্রই 'কাই পো ছে' মুভিটা দেখেছে। এরপর থেকে সে পুরোপুরি ঘোরের মধ্যে চলে গেছে। চোখের সামনে সুশান্তকে ছাড়া আর কাউকেই দেখতে পাচ্ছে না সে। ঠিক পরদিনই বউদি তিতলির ওয়ালে পোস্ট করল: যাহ্ পাগলি, এনে দিলাম! এবার খুশি তো? হ্যাঁ, সেদিনই আমার বায়োডাটা ওদের বাসায় গিয়েছিল। তিতলি সত্যিই অবাক! হুবহু একই নামের একটা ছেলে ওদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে, তা-ও মুভিটা দেখার ঠিক পরদিনই! এতটা কাকতালীয়ভাবে মিলে যাওয়া কীভাবে সম্ভব! ঈশ্বর সত্যিই আছেন! এরপর। ওর সাথে আমার কথা হলো। সেই রাতেই। ফোনটা কে আগে দেবে, এ নিয়ে ওর এক বান্ধবী(আমার প্রাক্তন ছাত্রী)'র মাধ্যমে প্রায় দেড় ঘণ্টা দেনদরবার করতে করতে সে-ই দিল শেষমেশ। 'আপনি কেমন পুরুষমানুষ যে নিজ থেকে একটা মেয়েকে ফোন করতে পারে না? লজ্জা করে না আপনার? ছিঃ! এতবার রিকোয়েস্ট করা সত্ত্বেও ফোনটা আমাকে দিয়েই দেওয়ালেন! আপনার মতন এমন ইগোওয়ালা স্টুপিড ছেলে আমি জীবনে এই প্রথম দেখলাম!' এটাই ছিল আমাদের প্রথম কথোপকথন, আর তার শুরুটা ছিল ঠিক এরকম! সেইসময়, মেয়েদের ব্যাপারে আমার ইগো ছিল চরম এপিক লেভেলের! ওদিকে তিতলিও ছিল ভীষণ জেদি স্বভাবের। প্রথমে সরিটরি বলে, তারপর ঝাড়ি মেরে, অবশেষে স্বাভাবিক কথাবার্তার মধ্য দিয়ে পুরোটা রাতই গল্প করে পার করলাম। এখনও মনে আছে, আমার রুমের সামনের বারান্দায় ফ্লোরে বসে ওর সাথে গল্প করতে করতে সেইদিন ভোরের আলোফোটা দেখেছিলাম। তিতলি নাকি আমাকে পছন্দ করার প্রথম কারণটিই ছিল---আমার নাম সুশান্ত! বুঝুন অবস্থা! সে সারাক্ষণই আমাকে সুশান্ত সিং রাজপুতের কথা বলত। সুশান্ত এমন, সুশান্ত তেমন! তুমি কেন ওর মতন না? আর এদিকে আমি ঈর্ষায় জ্বলেপুড়ে মরতাম। সে আমাকে বার বারই বলত 'কাই পো ছে' মুভিটা দেখতে। আমি রাগ করে দেখতাম না। আর-একটা উদ্দেশ্য ছিল, তা হলো, ওকে খেপানো। মেয়েদের খেপানো, আর স্বর্গ হাতে-পাওয়া---একই কথা। আমি তখন মেয়েদের খেপিয়ে দিতে পারলে পৈশাচিক আনন্দ পেতাম। তিতলির সাথে পরিচয় হবার আগে সুশান্ত সিং রাজপুতের নামই আমি কোনও দিন শুনিনি। অনেক আগে থেকেই আমি খুব বেছে বেছে মুভি দেখি। যার-তার যে-কোনও মুভি দেখে ফেলার মতো সময় আমার হাতে কখনওই ছিল না। কেবল তিতলিকে খুশি করতেই একসময় দেখলাম মুভিটা। (অবশ্য, সেও আমাকে খুশি করতে দেখেছিল আমার প্রিয় মুভি 'লাইফ ইজ বিউটিফুল'।) তখন আমি নিজেই সুশান্ত সিং রাজপুতের প্রেমে পড়ে গেলাম! এত চমৎকার এই ছেলেটা! সালটা ২০১৩। এর বহুদিন পর দেখলাম এম এস ধোনি: দি আনটোল্ড স্টোরি, পিকে। তিন খানের যে গোটাকয়েক যোগ্য উত্তরসূরি বলিউড পেয়েছে, তাদের মধ্যে সুশান্ত সিং রাজপুত একজন। বিশেষ করে, 'এম এস ধোনি: দি আনটোল্ড স্টোরি' মুভিতে তার অভিনয় দেখে রীতিমতো শ্রদ্ধা জন্মে গেছে! আজ তার আত্মহত্যার খবরটি পড়ে সত্যিই স্তম্ভিত হয়ে গেছি! কেমন জানি একধরনের মানসিক কষ্ট অনুভব করছি। তিতলি আমার সাথে যা গল্প করত, তার অর্ধেক গল্পই করত সুশান্ত সিং রাজপুতকে নিয়ে। সে কী করছে, কোথায় গেছে, তার ব্যক্তিগত জীবন কেমন, সবই তিতলির মুখস্থ ছিল। পরে পরে আমারও ভালো লাগত শুনতে। ভালোবাসার মানুষটির ভালোলাগার কথা শুনতে ভালো লাগে। মানুষের সত্যিই অনেক রকমের দুঃখ থাকে। বাইরে থেকে কিচ্ছু বোঝা যায় না। হাসিমুখ, সাফল্য, অর্থবিত্ত প্রতিপত্তি, মুখের কথা, বাহ্যিকতা---কারও সম্পর্কেই আসল সত্য কথাটি বলতে পারে না। কখনওই না কখনওই না কখনওই না! যাদের দেখতে সবচেয়ে সুখী মনে হয়, তাদের বেশিরভাগই আসলে, সবচেয়ে নিপুণ অভিনেতা! বরং অল্প দুঃখে দুঃখী মানুষগুলোই কাতরস্বরে কান্নাকাটি বেশি করে! যার বুকে দুঃখ যত বেশি, তার মুখে হাসি লেপটে থাকে তত বেশি। এই হাসির নাম 'মিডিয়া হাসি'। মনের কষ্টের চাইতে বড়ো কষ্ট আর নেই। দিনের শেষে, গুরু আইয়ুব বাচ্চুই সত্য---আসলে কেউ সুখী নয়...এর চাইতে বড়ো সত্যবদ্ধ উচ্চারণ আর হয় না।