সময়ের শূন্যাবয়ব



আমার পরিচয় এড়িয়ে যান;
আমরা বিচ্ছিন্ন হলে—এই আলাপচারিতা নিষ্প্রয়োজন।

আমরা একে অপর থেকে নিরবচ্ছিন্ন বলেই
এই ছদ্মবেশী ইহজীবনের উদ্দামতা থেকে মুক্তির পরিক্রমা আসন্ন।
আপনার তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তা ও বাস্তবজ্ঞান—
যার সমগ্র মিলে জাগ্রত করেছে আপনার চৈতন্যকে,
যার স্বরূপে প্রজ্জ্বলিত আমার সম্যক সত্তা।

আপনার চিত্তের নিরুদ্‌বিগ্ন, নির্ভার মনোভাবের রহস্য
আমার অজানা নয়।
শান্তির মহাঐশ্বর্যে নিজেকে অধিষ্ঠিত করতে পারলে
এই মুখ্যম লগ্ন পূর্ণতায় সমাদৃত হবে—
বিবেচিত এই ধারণার একমাত্র অধীশ্বর আপনি।

এই অভিন্ন শাশ্বত আত্মা ব্যতীত—
আমরা আর কিছুই নই।
পুনশ্চ, আমাদের বাহ্যিক বিভূষণ—
এই অনিত্য স্মারকচিহ্নের আদৌ কি মূল্য রয়েছে,
যদি নিজ চেতনা, কর্মে প্রভাবিত করতে না পারা যায়, এই বিশ্বলোকের সমগ্রকে?

নিজআত্মার জাগরণের মধ্য দিয়ে যার সূচনা—
তার চৈতন্যকে অসাড় করে রাখার ক্ষমতা
এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রকট অস্তিত্ব-অংশেরও নেই।
বিশ্বলোকের সকল অস্তিত্বজুড়ে বিরাজমান এক রহস্যময় শূন্যগর্ভতা।

নিজের ভেতরের মানুষের সৌন্দর্যের খোঁজে—
পরবর্তী সম্ভাব্য গন্তব্যের আসন্ন বাস্তবতা প্রসঙ্গে
আপনার ভাবনার দূরদর্শিতা
নিঃসন্দেহে আপনার চৈতন্যের বিশেষ প্রকাশ,
যা স্পর্শ করেছে আমার সম্যক হৃদয়কে।

যে-ক্ষণ আমাদের মোহাবিষ্ট করে রেখেছে—
সে কি কেবলই শূন্যতার সাক্ষী...
যে অসম্ভবতা প্রাপ্তির আশায় ব্যাকুল এই বিশ্বলোক?

নিঃসন্দেহে, যে শূন্য অবস্থান থেকে যাত্রালগ্নের সূচনা—
সেই শূন্যতাই আমরা বারংবার অতিক্রম করে ফিরে চলেছি।
এই যাত্রা অনন্তকালের।

এই অন্তর্নিবদ্ধ অসহায়ত্ব থেকে মুক্তির উপায় কী?
মুক্তি কি আদৌ সম্ভব?
মুক্তিপ্রাপ্তির প্রত্যাশার আদৌ কোনো প্রয়োজনীয়তা রয়েছে?

শুধু ভালোবাসার অনুভূতির আরাধনায়ই
সমস্ত প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, পূর্ণতা-অপূর্ণতার অবসান সম্ভব।

তবে কি কেবল শূন্যতাকে অতিক্রম করতেই—
এই বিশ্বলোক-ছারখার অনুভূতির প্রকাশে এত মত্ততা?

হৃদয়কে আলোড়িত করতে—
অবশ্যম্ভাবীভাবে ভালোবাসার অনুভূতির সুপ্ত প্রকাশ
আপনার সত্তায় উপাগত হবেই।
ভালোবাসা, স্তব্ধতার চেয়েও অধিক শক্তির অধিকারী।
ভালোবাসার পরিসমাপ্তি ঘটে—
অব্যভিচারী সুখপ্রাপ্তির মধ্য দিয়ে।

যন্ত্রণার সূচনালগ্নে যে-মর্মপীড়ার আরম্ভ,
সেই সর্বোত্তম নীরবতার প্রতিউত্তরে—
যদি ভালোবাসাই অস্তিমান হয়,
তবে সে আত্মায় অহং সমর্পণে দ্বিধা কোথায়?
Content Protection by DMCA.com