এই চিঠিটি পড়ার একমাত্র শর্ত হচ্ছে—আপনার নিজেকে আমার একাকিত্বের অংশীদার হিসেবে মেনে নিয়ে, নিঃশব্দে আমার লেখাটি পড়তে হবে।
মিউচ্যুয়াল ব্রেকআপ হয়েছিল আমাদের। তবে, "পারস্পরিক" বিচ্ছেদটা দু-জনের সম্মতিতে হয়েছে বললে ভুল হবে।
আসলে খুব কাছ থেকে, খুব গভীরভাবে কাউকে ভালোবাসা যেমন একরকম সৌভাগ্যের, তেমনি তার শাস্তিস্বরূপ কখনো কখনো আপনাকে কিছু কঠিন সত্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে একাকিত্বকে বেছে নিতে হয়।
আমার হৃদয়ে সম্পর্কের অবনতির যে-আশঙ্কা জন্মেছিল, সেটা হয়তো নিছক কাকতালীয় ছিল।
তবু তা বুঝতে খুব বেশি সময় লাগেনি।
আচ্ছা বলুন তো, মানুষ সবচেয়ে বেশি অসহায় কবে বোধ করে?
আমার ক্ষেত্রে, নিজের সীমাবদ্ধতাগুলো জানার পরেও ভালোবাসা চাওয়াটাই ছিল সবচেয়ে কঠিন।
আপনি হয়তো ভাবছেন—ভালোবাসা আবার প্রত্যাশা করে হয় নাকি?
আমার কিন্তু মনে হয়, ভালোবাসার অনুভব কখনোই প্রত্যাশাবিহীন বাঁচতে পারে না।
ভালোবাসা কেবল মুহূর্ত প্রত্যাশা করে, এবং ঠিক আত্মার গভীরেই সে নিজের আশ্রয় খুঁজে নেয়।
আমি তাকে অসম্ভব ভালোবাসি—তবে শুধুই মানসিকভাবে।
সম্পর্কের ক্ষেত্রে, শারীরিক ও মানসিক, এই দুই অবস্থানের ভেতরকার পার্থক্যটা বোঝা সত্যিই কঠিন—রীতিমতো দুঃসাধ্য।
তবুও, দুটোতেই আপনার উপস্থিতি জরুরি।
তাছাড়া সম্পর্কে ফ্যান্টাসি বলে একটা বিষয় আছে—শুনেছি।
ভালোবাসতে গেলেও কি সত্যিই ওসব লাগে?
ভালোবাসার মানুষটার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক হবার পর যদি কেউ বুঝে ফেলে—
সে আর ভালোবাসে না, তখন উপায় কী?
আগের মতো টান কাজ করে না।
এর চেয়ে ভয়ংকর, অস্বস্তিকর পরিস্থিতি আর হয় না।
সেক্ষেত্রে, বিচ্ছেদই মুক্তির একমাত্র পথ।
আমার ক্ষেত্রে অবশ্য এমন কিছু ঘটেনি।
হতেই পারে না।
আমি শারীরিকভাবে সুস্থ নই।
তবে তার ভালোবাসা অনুভব করতে আমার কোনো অসুবিধা হয়নি।
যা-ই হোক, বিচ্ছেদের পর এই অনুভবটিকে আর দয়া করে "ভালোবাসা" বলবেন না।
এটা ছিল একটা সম্পর্ক, যেখানে একাধিক ব্যক্তির অংশগ্রহণ ছিল—তা অনিবার্য।
আমি হয়তো কিছুটা রাগের সুরে লিখে ফেলেছি, ক্ষমাপ্রার্থী।
তবে, আমার সুইসাইডের কারণ শুনে আপনি ভড়কে যাবেন না—
স্থির হয়ে বসুন!
আমার সে রকম কোনো সম্পর্কই ছিল না।
এটা ছিল শুধুই ভালোবাসা।
বাড়তি সুযোগের আশায় কখনও তার কাছে যাইনি।
ফিলিংস জোর করে আসে না, আসে না হুট করে—
তার জন্য দরকার গভীর অনুভব।
তাই তাকে ভালোবাসা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।
একবার আমার সমস্ত সুখের দাবি জানিয়ে আমি তাকে একটি চিঠি লিখেছিলাম—
যার প্রতিটি শব্দ যেন রক্ত দিয়ে লেখা।
আর আশ্চর্যজনকভাবে, সে প্রতিটি শব্দই বুঝে ফেলেছিল।
সেই মুহূর্তেই, তাকে পাবার এক অদম্য আকাঙ্ক্ষা আমার ভেতরে জন্ম নিল।
সময় যত গড়াল, আমাদের দু-জনের আত্মা যেন একে অপরকে খুঁজে পেল।
সম্ভবত একদিন সে চেয়েছিল খুব কাছাকাছি থাকতে।
কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য কারণে তা সম্ভব হয়নি।
সেদিন তার চোখে আমি দেখেছিলাম—
অভিমানে-ভরা কষ্টের ভিড়।
এত গভীরভাবে নিজেকে না পাবার আক্ষেপ আমি আর কারও চোখে দেখিনি।
সেদিনই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম—এই জীবন থাকতে, তাকে ছেড়ে যাব না।
আজ, সেই প্রতিজ্ঞার কোনো মূল্য নেই।
কারণ এই জীবনটাই আর টিকে থাকতে চায় না।
আপনাকে একটি গোপন কথা জানাতে চাই—
আমি আপনাকে চিনি না,
তবু সত্যি কথাটা এই পৃথিবীর অন্তত একজন মানুষ জানুক, এই ইচ্ছে থেকেই এই চিঠি।
বেনামি এই চিঠি পড়ে, আপনার অনুভূতিটা কেমন হবে জানি না—
তবে কাউকে হয়তো বলতেও পারবেন না।
আমি জানি না, আপনি নারী না কি পুরুষ, তরুণ না কি বৃদ্ধ।
তবুও অনুরোধ রইল, আমার এই অন্তিম লেখাটি পড়ে তা পুড়িয়ে ফেলুন।
জেনে রাখুন, আমার মৃত্যুটা খুব স্বাভাবিক নিয়মেই আসছে।
আমি চাই, এই শীতের কনকনে বাতাসে তার অনুভব যেন শুধু আমার হয়।
আমার আছে শ্বাসকষ্টের রোগ—
যেটা শীতের সময় ভয়ানক রূপ নেয়।
তাই হয়তো বুঝতেই পারছেন, আমি কোন পথে হাঁটছি।
এই পৃথিবীটা বড়ো অদ্ভুত, তবু মায়াবী।
আমার ভালোবাসার মানুষটি আমাকে অসম্ভব সাহস জুগিয়েছে।
তবু আমি হেরে গেছি, নিজের ভেতরে।
বেঁচে থাকলে হয়তো তাকে দূর থেকে ভালোবেসে যেতাম।
আমি শুধু চেয়েছিলাম—
সে জানুক, আমার ভালোবাসায় আজও কোনো ঘাটতি নেই।
থাকতে পারে না।
আমি জানি, সে কিছুদিন হয়তো আমাকে খুঁজবে।
তারপর একসময় আমায় ভুলে যাবে।
আমার খোঁজ না পেয়ে হয়তো ভাববে—
আমি যোগাযোগ বন্ধ করেছি, কারণ আমি তাকে ভুলে গেছি।
হা হা!
ব্যাপারটা অদ্ভুত, না?
সে জানেই না, আমি কোথায় চলে যাচ্ছি!
এই মুহূর্ত পর্যন্ত, আমি তাকে ভীষণ ভালোবাসি।
ইতি
অপরিচিতা