প্রকৃতির বহুরূপ। তার মধ্যে দুইটি রূপ প্রধান—স্থূল ও সূক্ষ্ণ বা জড় ও চেতন, অর্থাৎ বাইরের রূপ ও ভেতরের রূপ। সকল জিনিসেরই কিছুটা স্থূল, কিছুটা সূক্ষ্ণ, কিংবা কিছুটা জড়, কিছুটা চেতন।
স্থূল বা জড়বোধ সকলেরই ভাগ্যে অল্প-বেশি ঘটে, কিন্তু সূক্ষ্ণত্ববোধ বা চেতনবোধ অল্প লোকেরই হয়। বিভিন্ন দার্শনিক পণ্ডিত স্থির করেছেন, জড় আর কিছুই নয়, চেতনশক্তির পুঞ্জীকৃত অবয়ব মাত্র, অথবা ঘনীভূত, জমাট শক্তির তরঙ্গ মাত্র। জড় ও চেতনের দার্শনিক ভিত্তি যা-ই হোক, স্থূলের ভেতরে সূক্ষ্ম যে নিত্যই স্পষ্ট অনুভব করা যায়, এ কথা কেউই খুব একটা অস্বীকার করেননি।
মানুষের শরীর ও আত্মা, এসব কথার জীবন্ত প্রমাণস্থল। স্থূল শরীরের ভেতরে সূক্ষ্ণ আত্মা বাস করেন। একটা অনুভূত, অন্যটা সাধারণত অননুভূত। একটার আদর অধিক, আর একটা সাধারণত অনাদৃত। শরীরের সৌন্দর্যে জগৎ মুগ্ধ, আত্মার সৌন্দর্যে মুগ্ধ অতি অল্প কিছু লোক। স্থূলরূপের সৌন্দর্যে জগতের নরনারী যেমন আত্মহারা, সূক্ষ্ণরূপে তেমন কিন্তু নয়। মানুষ প্রকৃতির অসার বাহ্যিকতা নিয়েই সংসার করে, ঘর বাঁধে। অন্তর, ভেতর, সার নিয়ে মজে অতি অল্প লোক।
মানুষ সাধারণত স্থূলে মজে, তাই মানুষের সমষ্টি সমাজও স্থূল নিয়ে আইনকানুন তৈরি করে। ধর্মনীতি এবং সমাজ—সাধারণত মানুষের স্থূলজ্ঞানের স্থূলভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। সূক্ষ্মাংশ বুঝতে, ধারণ করতে, অবলম্বন করতে চায় অতি অল্প লোক; আদৌ তা করতে পারে আরও অল্প লোক। যাঁরা পারেন, তাঁরা অসাধারণ ব্যক্তি।
ধর্মের স্থূল ভিত্তি কী কী? মত, পূজা, উপাসনা, অনুষ্ঠান, ক্রিয়াকর্ম। এর দৃষ্টান্ত সকল সম্প্রদায়ে পাওয়া যায়, এর নাম সামাজিক ধর্ম। সূক্ষ্ণ ভিত্তি কী কী? বিশ্বাস, প্রেম, ভক্তি, সেবা, চরিত্র, জীবন। এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সাধু ও মহাপুরুষদের জীবন। নীতির স্থূল ভিত্তি কী কী? অনুশাসন ও দণ্ড—অর্থাৎ, এটা করো, ওটা কোরো না; এটা অবলম্বনের জিনিস, ওটা বর্জনের—এমন সব আদেশ। এর দৃষ্টান্ত: বিধিব্যবস্থা, লৌকিক ধর্মজ্ঞান। নীতির সূক্ষ্ণ ভিত্তি কী কী? অনুজ্ঞান (জ্ঞানের সামীপ্য বা নৈকট্য), অনুপ্রাণন (প্রেরণাদান, শক্তিসঞ্চারণ), আদেশ। এর দৃষ্টান্ত বোঝা ও বোঝানো একটু শক্ত।
মিথ্যা কথা বলা অন্যায়—এটা নীতির একটা সাধারণ জ্ঞান। এটা মহাপুরুষ-প্রচারিত, শাস্ত্রানুমোদিত কথা—এটাই নীতির স্থূল ভিত্তি। আর সূক্ষ্ণ ভিত্তি হলো, এই কথার সারত্বের অনুজ্ঞান—অর্থাৎ, লোকের কথায় এটা বিশ্বাস করা এক কথা, এবং বিধাতার অনুপ্রাণনে, আদেশে বা অনুজ্ঞানে এটা বিশ্বাস করা আর-এক কথা। এভাবেও বলা যায়, এটা কণ্ঠস্থ করা এক কথা এবং এটা অনুসরণ করা আর-এক কথা।
সমাজের স্থূল ভিত্তি আইনকানুন, বিধিব্যবস্থা, আচারব্যবহার, নিয়মপ্রণালী; আর সূক্ষ্ণ ভিত্তি আত্মীয়তা, ভালোবাসা, পরোপকার, লোকহিতব্রত, একতা। এটার দৃষ্টান্ত ঘরে ঘরে। এখন নিশ্চয়ই বুঝতে আর কষ্ট হচ্ছে না যে, মানুষ স্থূল নিয়ে সবসময়ই ব্যতিব্যস্ত। ধর্মমত, নীতির অনুশাসন আর সমাজের নিয়মপ্রণালীর পক্ষপাতী জগতের বারোআনা লোক। ভেতরের সারবস্তুর অন্বেষণ করে অতি অল্প লোক।
তিনটি বিষয়কে আমরা পৃথক করে দেখালাম, কিন্তু এটা তিন নয়, ধরতে গেলে একই। তিনে এমনই দুশ্ছেদ্য বন্ধন, এক হতে অপরকে পৃথক করা কঠিন—একে তিন, তিনে এক। এক মহান ঈশ্বরের তিন প্রকাশ, অথবা এই তিন মিলে বিধাতৃত্ব বা বিধাতার গুণ। আমরা এই তিনে এক, একে তিন—অবলম্বন করে পরের কথাগুলো পড়ব।
একটি পৌরাণিক গল্প আছে।
এক জায়গায় একজন সংসার-বিরাগী সন্ন্যাসী এবং তাঁর কাছেই একজন বারনারী বা বেশ্যা বাস করত। সন্ন্যাসী নিষ্ঠাবান, গায়ে গৈরিক ও কপালে তিলক পরতেন, সারাশরীরে বিভূতি বা ভস্ম মাখতেন এবং ধর্মের সব ধরনের অনুষ্ঠান পালন করতেন। তাঁর মুখে সারাক্ষণই ধর্মের কথা, এবং সাংসারিকতার নিন্দা উচ্চারিত হতো। যারা ধর্মের কোনো অনুষ্ঠান করে না, সবসময়ই তিনি তাহাদেরকে ঘৃণা করতেন।
কাছেই যে বেশ্যা বাস করত, সন্ন্যাসী তাকে ঘৃণার চোখে দেখতেন, সবসময় তার নিন্দা করতেন, পশুর জীবনের সাথে তার জীবনের তুলনা করতেন। জাতিভেদ না মেনেও, ভেদবোধরূপ গরলপানে সারাক্ষণ তিনি বিভোর থাকতেন। পাপী-পুণ্যাত্মার ভেদভাব তাঁর অন্তর-বাহ্যিকতা গ্রাস করেছিল। যখন-তখন বলতেন, পাপীর সংস্পর্শে এবং তাঁদের সাথে আহারে-বিহারে ধর্মলোপ পায়। আত্মাভিমানে তিনি বরাবরই স্ফীত ছিলেন।
আর ওই অস্পৃশ্যা, সর্বজন-নিন্দিতা, কলুষিতা বেশ্যা নিজের অবস্থা নিয়ে সবসময় মন খারাপ করে থাকত। তার জীবনে ভুল করেও কোনোদিন সুখ ঢুকত না। অবস্থার পীড়নে বাধ্য হয়ে সে যে জঘন্য কাজ করত, তার জন্য অনুতাপে সারাক্ষণ হৃদয়-মন অবসন্ন থাকত। বাধ্য হয়ে, বেশভূষার পারিপাট্য করতে হতো, কিন্তু সেজন্যও তার মনে ভীষণ ক্লেশ হতো। বাহ্যিকভাবে অনুষ্ঠান, অন্তরে অনুতাপ, আত্মগ্লানি, ধর্মে ঐকান্তিক মতি, হরির প্রতি গভীর ভক্তি ছিল, কিন্তু পৃথিবীর কেউ তা জানত না। সংসারে যেমনটা সচরাচর হয়ে থাকে, ঠিক তেমনি সকল লোকই তাকে ঘৃণা করত, ওই সন্ন্যাসীও অনেক ঘৃণা করত।
ঘটনাচক্রে যথাসময়ে উভয়ের মৃত্যু হলে, সাধুর মৃতদেহ ফুল-চন্দনে সজ্জিত করে বহু মানুষ এসে শেষসম্মান প্রদর্শন করল; আর ওই বেশ্যার তো কেউ নেই, সেবাগ্রহীতারা তার জন্মের কদর করলেও মৃত্যুর পরোয়া করে না, তাকে চিনলেও চিনতে হয় দরোজা বন্ধ করে, লোকের সামনে তার সাথে সম্পর্কের কথা বলা যায় না, জগতের হৃদয়বান মানুষের হৃদয়ের দরোজা এখানে এসে বন্ধ হয়ে যায়—তাই মৃতের সঙ্গী ডোমেরা প্রকাশ্য রাস্তা দিয়ে শব টেনে নিয়ে 'ওটা' শেয়াল-কুকুরের ভক্ষণের জন্য ফেলে দিল। মৃত্যুর পর উভয় আত্মার গতি কী হলো? সন্ন্যাসীর আত্মা গতি হলো নরকের দিকে, আর ওই বেশ্যার আত্মার গতি হলো স্বর্গের দিকে।
সন্ন্যাসী বিধাতার এমন অবিচার দেখে ক্রোধে, ক্ষোভে, দুঃখে আচ্ছন্ন হলেন। এমন সময়ে দেবর্ষি নারদ সেই জায়গায় উপস্থিত। সন্ন্যাসী ক্রোধভরে নারদকে জিজ্ঞেস করলেন, "ঠাকুর, বৈকুণ্ঠপতির এ কেমন বিচার? আমি কত ধর্মসঞ্চয় করেছি, আমার নরকে গতি হচ্ছে; আর ওই বেশ্যা আজীবন অধর্মের কাজ করেছে, ওর কিনা গতি হচ্ছে স্বর্গে? বিধাতার এ কী লীলা?"
দেবর্ষি নারদ কিছুক্ষণ ভেবে উত্তর করলেন, "বিধাতার লীলা কে বুঝবে! তার বিচার ঠিকভাবেই হয়েছে। তুমি ধর্মের অনুষ্ঠান অনেক করেছ, সত্য; বৈরাগ্যের কঠোর শাসনে শরীরকে পবিত্র রেখেছ, তা-ও সত্য। তোমার শরীরকে পবিত্র রাখার ফল তো তুমি হাতে হাতেই পেয়েছ। পৃথিবীর লোকেরা তোমার পূজা করেছে, অসংখ্য শিষ্য তোমাকে দেবজ্ঞানে মান্য করেছে, এবং সবশেষে, মৃত্যুর পর, তোমার পবিত্র শরীরকে পুষ্পচন্দনে চর্চিত করেছে। ধর্মানুষ্ঠান করে তোমার মনে সবসময়ই এই অহংকার ছিল যে, তুমি বড়ো ধার্মিক। এজন্য তুমি পৃথিবীর সকল লোকের নিন্দা করে বেড়াতে। আত্মা যার বিনীত নয়, ধর্মে যে তার অধিকারই জন্মেনি! বাইরের সাধন করে বাইরের পুরস্কার পেয়েছ, এখন অন্তরের সাধনের জন্য কিছুদিন নরকবাসী হও। যখন বুঝবে, তুমি কিছুই নও, তোমার মানঅভিমান যখন ভুলতে পারবে, যখন যশোনিন্দা ভুলবে, তখন স্বর্গে তোমার অভ্যুত্থান হবে। আর ওই বেশ্যা শরীরকে অপবিত্র করেছিল, ওই শরীর ব্যাধিতে পচেছে, তারপর ডোমেরা রাস্তায় টেনে নিয়ে ফেলেছে, শেয়াল-শকুন-কুকুর সেই শরীরের শেষসম্মান রক্ষা করেছে! ওই বেশ্যার আত্মা সবসময়ই অনুতপ্ত ছিল—বহু লোকের মতো, পাপ করেও অন্তরে অহংকার পোষণ করেনি; তার অভিমান ছিল না, নিজের অস্তিত্বে সে এক দিনও সুখী ছিল না। কখনও কারও নিন্দা করত না—কখনও নিজেকে বড়ো মনে করত না। সারাক্ষণই হরির উপর নির্ভর করে থাকত এবং নীরবে বলত—"হরি, কবে আমার এ দশা ঘুচবে?" হরি তার ঐকান্তিক অনুরাগ ও অনুতাপ দেখে আশীর্বাদ করেছেন। এ জন্মে তাই স্বর্গে তার আত্মার গতি হচ্ছে। অহংকার জীবের সর্বনাশের মূল। অহংকার পাপীরও সর্বনাশ করে, পুণ্যাত্মারও করে। তুমি তোমার কাজ করেছ, সে তার কাজ করেছে। যা তোমার কর্তব্যকর্ম, তা নিয়ে অহংকার কেন করলে তুমি? মৃত্যুর পর স্বর্গে আসার জন্য যা করেছ, তা তো নিজের কল্যাণেই করেছ; তবুও তা নিয়ে হইচই করার কী ছিল? তোমার যা প্রাপ্য, তা তো তুমি পৃথিবীতেই পেয়ে গেছ। ওই বেচারি নীরবে বিনা অহংকারে তার কাজ করে যাবার পরও পৃথিবীতে থাকার সময়ে মানুষের তাচ্ছিল্য ও ঘৃণা ছাড়া আর কিছুই কখনও পায়নি। তার মৃতদেহ সৎকারের যোগ্যই মনে করেনি কেউ, বরং তা গেছে ক্ষুধার্ত প্রাণীর পেটে। তার কাজের পুরস্কার হিসেবেই ঈশ্বর তার আত্মাকে স্বর্গবাসী করেছেন।" সন্ন্যাসী দেবর্ষি নারদের কথা শুনে অবাক হয়ে গেলেন।
আর-একটা গল্প বলছি। কোনো স্থানে একজন গৃহস্থ বাস করতেন। তাঁর স্ত্রী পতিপরায়ণা, সাধ্বী, দশদিক সামলানোয় পটু, পুণ্যশীলা, কিন্তু অহংবোধে একটু আত্মহারা। তিনি সবসময় পূজা-অর্চনায় দিন কাটাতেন। ওদিকে স্বামী কিন্তু মুখে ধর্মের কোনো কথাই বলতেন না, কোনো প্রকারের পূজা-অর্চনা করতেন না, কোনো প্রকারের বাহ্যিক ধর্মানুষ্ঠান করতেন না—বরং তিনি ছিলেন বিনয়ী; দীন-কাঙালের মতো থাকতেন। ঈশ্বরের কি ইষ্টদেবতার নামও কখনোই মুখে উচ্চারণ করতেন না। এজন্য তাঁর স্ত্রী বড়োই কষ্ট পেতেন; ভাবতেন, আমার স্বামী এক বার ভুল করেও ঈশ্বরের নাম মুখে আনেন না…কী দুঃখের কথা!
স্ত্রীর এ দুঃখ নিয়ে কিন্তু স্বামী জানতেন না। স্বামীটি সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে দিন কাটাতেন। হঠাৎ এক রাতে স্বপ্ন দেখে স্বামী ঈশ্বরের নাম উচ্চারণ করেছিলেন। স্ত্রী তখন, স্বামীর মুখে, ওই রাতে ঈশ্বরের নাম শুনে খুব আনন্দিত হলেন, বিধাতাকে শত-শত ধন্যবাদ দিলেন, এবং পরদিন পূজা-অর্চনার বিশেষ আয়োজন করলেন।
স্বামী এ সকল কিছুই জানেন না। তিনি বাড়ি এসে পূজার বিশেষ আয়োজন দেখে বিস্মিত হলেন। তাঁর স্ত্রী তাঁকে আজ বিশেষভাবে আদরঅভ্যর্থনা করছেন দেখে আরও বেশি অবাক হলেন। এসবের কারণ কিছুই বুঝতে না পেরে, শেষে স্ত্রীকে আনন্দের কারণ জিজ্ঞেস করলেন। স্ত্রী খুশিমনে বললেন, "এত দিন তোমার মুখে ইষ্টদেবতার নাম না শুনে আমি যেন মরমে মরে যাচ্ছিলাম; তুমি ধর্মের কোনো অনুষ্ঠান করো না দেখে মনে মনে ভাবতাম, তুমি নাস্তিক। এজন্য কত কেঁদেছি, কত কষ্ট সয়েছি, তা এক বিধাতাই জানেন। গতরাতে, আমার পরম সৌভাগ্যে, তোমার মুখ হতে ঈশ্বরের নাম বের হয়েছিল, সেজন্য আমার এত আনন্দ হয়েছে যে, তা বোঝাতে পারছি না। কৃতজ্ঞতাপ্রকাশের জন্যই এইসব আয়োজন।"
এইসব কথা স্বামীর মনে তীক্ষ্ণ তীরের মতো গিয়ে বিঁধল। তিনি ভাবলেন, ইষ্টদেবতার নাম আমার মুখ হতে বের হয়েছে! অন্তরের জিনিসকে অন্তরে রাখতে পারলাম না!—এই কষ্ট তাঁকে দারুণ আঘাত করল। শরীরমন একেবারে অবসন্ন হয়ে এল, একসময় তিনি হঠাৎ সংজ্ঞা হারিয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন। সেই পতনেই তাঁর মৃত্যু হলো। স্ত্রী, স্বামীর গভীর অন্তর্মুখী ধর্মভাবের জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত দেখে অবাক হলেন, নিজের জীবনকে ধিক্কার দিয়ে, অনুতাপে, পতিকে অনুসরণ করলেন। গ্রামের সকল লোক এই জীবন্ত দৃষ্টান্ত দেখে স্তম্ভিত হলো।
যে দুইটি দৃষ্টান্তের উল্লেখ করলাম, এতে প্রতিপন্ন হয়, মানুষের বাইরের আচারব্যবহার ধর্মভাব-জড়িত হলেও, অন্তর পরিশুদ্ধ না-ও হতে পারে। দ্বিতীয় কথা, বাহ্যিকভাবে ধর্মের অনুষ্ঠান না করলেও, ভেতরে একজন মানুষের ধর্মগত জীবন থাকতে পারে। প্রকৃত বিবেচনায়, ধর্ম বাইরে প্রদর্শনের জিনিস নয়—এটা যত সংযতভাবে অন্তরে থাকে, ততই মঙ্গল এবং তাতে অহমিকা প্রকাশ পায় না। ব্যক্তিগত ধর্মাচরণ প্রচারের বিষয় নয়। সত্যিকারের ধার্মিক মানুষ নিজের বিশ্বাস নিয়ে নীরব থাকেন; তাঁর মুখ নয়, বরং কাজই সব কিছু বলে দেয়।
মানুষের বিমল চরিত্রে ধর্মের কোনোরূপ বহিঃপ্রকাশ হয় তো হোক—হওয়াটাই স্বাভাবিক—এতে আপত্তি নেই; কিন্তু এক চরিত্র বাদে আর যা-ই প্রকারের বহিঃপ্রকাশ হয়, তা-ই মারাত্মক, তাতেই অহংকার প্রসূত হয়। ভক্ত, যোগী, সাধু—এঁদেরও অহংকার সাধনপথে বিঘ্ন ঘটায়—স্বর্গের দ্বার রুদ্ধ করে। পাপীর তো কথাই নেই—আর অন্তরে পাপ করে যারা বাইরে ধার্মিকতার ভান করে অহংকারে মত্ত থাকে, তাদের স্থান পাপীদেরই কাতারে।
ধর্মের পবিত্র জ্যোতি অন্তরে গিয়ে পড়লে মুখে তার ছবি প্রতিভাত হয়, একথা ঠিক। প্রকৃত ধার্মিক পাপীতাপীর জন্য জীবন বলি দিতে একটুও কুণ্ঠিত হন না। পাপী মানুষ, ধর্মের আদর্শে জীবনগঠনে যখন সমর্থ হয়, তখন বিনয়ে তাঁর মূর্তি নমিত হয়, তখন সবার আগে তাঁর দৃষ্টি পড়ে অন্য পাপীদের প্রতি। পাপীদের প্রতি সহানুভূতি, তাদেরকে উদ্ধারের চেষ্টা, প্রকৃত ধার্মিকের লক্ষণ। প্রকৃত ধার্মিক এখানে মানুষের চোখে স্পষ্টভাবে ধরা পড়েন। এতে দোষ নেই। জগতের মহাত্মারা এখানে ধরা পড়েছেন; যিশু, মোহাম্মদ, বুদ্ধ, নানক, মহাবীর, চৈতন্যদেব…এই প্রেমেই বাঁধা—বাঁধা না পড়লে তাঁরা কী ধর্মসাধন করেন বা করতেন, মানুষ তা জানতেই পারত না। এঁরা তৃণের মতো দীন, বৃক্ষের মতো কষ্টসহিষ্ণু।
প্রকৃত ধার্মিক ব্যক্তি—বড়ো-ছোটো, ধনী-দরিদ্র, পাপী-পুণ্যাত্মা—এ ভেদ রাখেন না। তাঁরা মানুষের জন্য কেঁদে আকুল—কীসে মানুষের কল্যাণ হবে, দিনরাত কেবল এই ভাবনা। আর যাঁরা মতের মাতাল-দাস, অনুষ্ঠানের দাস—বাহ্যব্যাপারে মত্ত—জ্ঞান-ভক্তিতেও তাঁদের অহংকার দেখা যায়। তাঁরা মনে করেন, তাঁদের মতো জীব এই পৃথিবীতে আর নেই। ভেদবুদ্ধি তাঁদের অন্তর-বাহ্যিকতাকে জর্জরিত করে সর্বনাশ করে—জাতিভেদ না মেনেও তাঁরা নতুন নতুন জাতিভেদ-কৌশল সৃষ্টি করেন।
হিন্দুসমাজ মত ও অনুষ্ঠান-সর্বস্ব বাহ্যজ্ঞান নিয়ে ডুবেছে, পণ্ডিতেরাও ধীরে ধীরে সেদিকে ঝুঁকছেন। নানা ঘটনায় দেখি, বিলুপ্ত জাতিভেদ-বৃক্ষের নতুন নতুন অঙ্কুর এই সমাজের ভেতরে আবারও গজাচ্ছে। এই দৃশ্য দেখে কোনো কোনো বিজ্ঞ ব্যক্তি বলছেন যে, ভেতরের ধর্মভাব ক্রমশ বিলুপ্ত হচ্ছে বলে কিছু নির্বোধ ধর্মের বহিরঙ্গ জাতিভেদের পোষকতায় এখন মন দিচ্ছেন। অন্য মতের মানুষ দেখলেই তার সাথে মিশতে, এখন দিনদিন দেখছি, অনেকেরই অনিচ্ছা হচ্ছে। হিন্দুসমাজের জাতিভেদ বর্ণগত; সেই বর্ণগত জাতিভেদ—চরিত্র, ধন, বিস্তার ইত্যাদির প্রাচীর লঙ্ঘন করে, এখন শিক্ষিত সমাজে প্রবেশ করছে। অনেক মহারথীই এটা বুঝছেন, কিন্তু কেউই এই বিষবৃক্ষ বিনাশে উৎসাহ দেখান না। ভাবেন, কী দরকার ঝামেলার মধ্যে জড়ানোর! মেনে নিই, আর অন্য কাজ করি।
এতেই বোঝা যাচ্ছে, এ সমাজ যেন কিছু মত ও অনুষ্ঠানের দাস হয়ে পড়ছে। অন্তর্মুখী ধর্মভাব ক্রমেই যেন হ্রাস পাচ্ছে। বিয়ে-প্রথা সংস্কারে এবং জাতিভেদ-প্রথা উৎপাটনে সমাজে ধর্মের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এই দুই প্রথা পাথরের চূড়ায় ঠেকে যাওয়ায় বহু ধর্মজাহাজ বহু সমাজসমুদ্রে বানচাল হয়ে গেছে। ধর্মের বাহ্যিকতা মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করছে এবং তা ধীরে ধীরে সংঘাতের দিকেই অগ্রসর হচ্ছে —এটা দেখেও ধর্মগুরুরা স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়েছেন এই ভেবে যে, "এত ভাবাভাবির কী আছে! ধর্মের আবরণে ব্যাবসা জমাতে পারলেই তো হলো!" স্বেচ্ছাচারিতা, বিলাসিতা এখন এ সমাজকে যে-দিকে নিয়ে যায়, সেদিকেই সমাজের গতি হয়।
একজন খ্রিষ্টান ভদ্রমহিলা তাঁর কোনো এক হিন্দু বন্ধুকে বলেছিলেন, "আমরা খ্রিষ্টান ধর্মে বিশ্বাসীরা পাপীদের পেছনে ছুটি তাদেরকে ঠিক পথে আনার জন্য, তোমরা পুণ্যাত্মাদের পেছনে ছোটো নিজেও পুণ্যবান হওয়ার আশায়!" বাস্তবিকই যেন কথাটা কাজে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। পাপীদের প্রতি ঘৃণা, অন্য মতের প্রতি ঘৃণা, অন্য সম্প্রদায়ের লোকদের প্রতি ঘৃণা, বর্তমান সমাজে বেড়ে যাচ্ছে। পাপীদের সুপথে আনার জন্য এখন কেউ তেমন একটা চেষ্টা করছেন না, সবাই নিজের পথকে সেরা প্রমাণ করতেই ব্যস্ত—মানুষের সেবা হয় ততখানিই, যতখানি সেই বিপন্ন মানুষটি নিজের দলের। পাপের প্রতি ঘৃণা থাকা মঙ্গলের কথা, কিন্তু পাপীর প্রতি নয়। পাপীর প্রতি জীবন্ত ঘৃণাবোধ সমাজে প্রকট হয়ে উঠছে।
এ সবই যে অহংকারের ফল, এতে সন্দেহ নেই। অন্তরঙ্গ ধর্মসাধন হীন হলেই অহংকার বাড়ে—দৃষ্টান্তের সাহায্যে দেখিয়েছি। সমাজের বহু লোক বহু বাহ্যিক আয়োজনের মাধ্যমে পূজাঅর্চনা করে; গৈরিক, নামাবলী, তিলক ধারণ করে, কিন্তু ওদিকে আবার মিথ্যা, প্রবঞ্চনা, শঠতা, ব্যভিচার, আড়ালে নিন্দা, অন্যের পেছনে লেগে থাকা, চুরি, ঝগড়াঝাঁটি—এ সকলে লিপ্ত হবার আগে একটুও ভাবে না। বর্তমানে মানুষ অর্থ উপার্জনের জন্য না পারে, এমন কোনো কাজ নেই। বড়ো বড়ো নেতাও এটার হাত হতে নিষ্কৃতি পান না, বাকি সাধারণ মানুষের কথা তো বাদই দিলাম! সমাজে আজকাল ধর্মের নামে না চলে, এমন কোনো কাজ নেই। যার যা ইচ্ছা—করছে, অথচ ওরাই সমাজের নেতা।
এতে বহির্মুখী সাধনার পরিণাম যা, তা-ই সমাজে হচ্ছে। বহির্মুখী সাধনার যা মত, অন্তর্মুখী সাধনায় তা বিশ্বাস; বহির্মুখী সাধনায় যা ভাব, অন্তর্মুখী সাধনায় তা ভক্তি; বহির্মুখী সাধনায় যা অনুষ্ঠান, অন্তর্মুখী সাধনায় তা অনুরাগ; বহির্মুখী সাধনায় যা পূজা, অন্তর্মুখী সাধনায় তা সম্ভোগ; বহির্মুখী সাধনায় যা মত্ততা, অন্তর্মুখী সাধনায় তা সমাধি; বহির্মুখী সাধনায় যা কল্পনা, অন্তর্মুখী সাধনায় তা প্রত্যক্ষজ্ঞান; বহির্মুখী সাধনায় যা বাগাড়ম্বর, অন্তর্মুখী সাধনায় তা সেবা। এতেই বোঝা যাচ্ছে, একটি কত সহজ, অপরটি কত কঠিন!
গুরুমুখে মন্ত্র শুনে সেই মন্ত্র উচ্চারণ করা ও নতবেশ ধারণ করে থাকা সহজ, অতি সহজ। লোকের মনোরঞ্জনের জন্য যজ্ঞ-অনুষ্ঠানাদি করা ও ধর্মের পোশাক পরা আরও সহজ। কিন্তু প্রত্যক্ষ জ্ঞানসিদ্ধ বিধাতার অনুপ্রাণনে বিশ্বাসের উদয় হওয়া ও তা ধারণ করা অতি কঠিন। ব্যক্তিবিশেষের দ্বারা শক্তিসঞ্চার করিয়ে ধেই ধেই করে উন্মাদের মতো নাচানাচি করা সোজা কাজ, কিন্তু প্রত্যক্ষ মাতৃদর্শনজনিত অলৌকিক বিহ্বল চিত্তের তন্ময়ত্ব লাভ করা বড়োই কঠিন। জটা রেখে, সারাগায়ে বিভূতি মেখে, গৈরিক ও নামাবলী পরে সবার সামনে ধার্মিক সাজা খুব সোজা, কিন্তু অন্তরে প্রেমবিহ্বল চিত্তের নির্ভরশীলতা ও নির্মল চরিত্র লাভ করা অতি কঠিন।
উদ্দাম নাচ কে না করতে পারে? কিন্তু আত্মহারা ভাবে সেই পরমপুরুষে মজে গিয়ে ডুবে থাকতে পারে কয় জন? ধর্মের নামে বক্তৃতা করতে ও লিখতে সকলেই পারে, কিন্তু নরসেবার মধ্য দিয়ে শরীর-মনকে পবিত্র করতে পারে কয় জন? বাইরের লোকদেখানো সাধনায় জগতে ধার্মিক বলে পরিচিত হওয়া যায়, কিন্তু তাতে ধর্মের একটুও কাজ হয় না। আমরা যে-দৃষ্টান্ত উদ্ধৃত করেছি, তাতে বোঝা যায়, ভেতরে সারশূন্য বাহ্যানুষ্ঠান নরকের পথই প্রশস্ত করে। বাইরের সাধনায় অহংকার জন্মে—অহংজ্ঞানটা সর্বময় হয়; অন্তরের সাধনায় বিনয় জেগে ওঠে, আত্মনাশ-বোধ জন্মে। "আমি কিছুই নই, কেবল তিনিই সব।"—এই বোধ না হলে ধর্মরাজ্যের গভীর প্রদেশে প্রবেশ করা যায় না। বাইরের কাজ ধরে বাইরেই মানুষ মজতে পারে, নিজের অন্তরে প্রবেশ করতে পারে না।
যে-সকল মাছ জলের উপরে ভেসে বেড়ায়, ওরা গভীর জলে ডুবতে পারে না। যারা গভীর জলে ডুবে থাকে, ওরা সাধারণত ভেসে বেড়াতে চায় না—গভীর শান্তি এবং শীতলতায় ওরা নিমগ্ন; উপরের তরঙ্গের উত্তেজনায় ওদের কিছুই এসে যায় না। তেমনি, যারা সংসারে ভেসে বেড়ায়, যশোনিন্দার তরঙ্গে তারাই আন্দোলিত হয়, লোকের প্রশংসায় তারা নাচে, লোকের নিন্দায় বসে পড়ে—অথবা তাদের সকল অনুষ্ঠান লোকের প্রবর্তনায় অঙ্কুরিত। আর যাঁরা সংসারের সার বিধাতার গভীরতম ক্রোড়ে নিমগ্ন, বাইরের যশোনিন্দার বাহ্যতরঙ্গ তাঁদের বিচলিত করতে পারে না, তাঁরা চিরশান্তিতে, চিরপবিত্রতাতে সংসারের ঝড়তুফানের অতীত হয়ে বাস করেন। উঁচু পর্বতের উপর উঠলে নিচের প্রান্তরের সব যেমন সমান দেখা যায়—তাঁদের আত্মার কাছে, তেমনই সব বড়ো-ছোটো ও সমান হয়ে যায়।
গভীর রাজ্যে ঘটে—সমত্ব, সাম্য, একত্ব, মিলন। পৃথক পৃথক বোধ, বৈচিত্র্য ও বহুত্ব-বোধ, বিচ্ছেদ—সংসারজ্ঞানের কথা। সংসারের অতীত কথা—একের অস্তিত্বে সকলের অস্তিত্ব, এক-য়েই সব স্থিত। সুতরাং সেখানে অনন্তত্ব আছে বটে, কিন্তু বৈচিত্র্য নেই। ভেদবোধ বা বৈচিত্র্যবোধ—সংসারের কথা। সম্প্রদায় জিনিসটা সংসারধর্মে সম্ভব। কিন্তু সংসারের অতীত—মাতৃধর্মে সমতা, একতা, চিরমিলন। পৃথিবীতে বহু নদ-নদী আছে, কিন্তু সে-সকল যখন সাগরে মিলিত হয়, তখন সব একাকার। কোন নদী বড়ো, কোন নদী ছোটো—কোনটি যমুনা, কোনটি ব্রহ্মপুত্র—এসব বিচার করে সাধ্য কার!—এখানে যে সব মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে! রেখাবোধ, সীমাবোধ, ক্ষুদ্রত্ববোধ—সকল ভেদবোধ সংসারের কথা; আর ধর্মের কথা—অনন্তত্ব ও ভেদাভেদরহিতত্ব-বোধ।
তুমি মাটির নশ্বর দেহ পুষ্পচন্দনে সজ্জিত করে ভাবছ, তুমি বড়ো ধনী, বড়ো ধার্মিক, বড়ো বিদ্বান! হায় হায় হায়! তুমি জানো না, শ্মশানে, তোমার এই শরীরের পরিণাম কী, তা কয়লার শরীর আগুনের কালিতে কীভাবে লিখবে! তোমার শরীরের পরিণাম ওই চিতার ভস্ম…যে-ভস্মে দীনদরিদ্র, পাপীতাপীর পরিণাম—ওই অতিসামান্য, উপেক্ষিত—চিতার ভস্ম! কীসের অহংকার তোমার, ভাই? তুমি বৈচিত্র্যই দেখছ, বৈচিত্র্যই গুনছ। শ্মশানে গিয়েও তোমার সমত্বজ্ঞান জন্মাচ্ছে না! কী আর বলব!
দেখো, মৃত্যুর পর ওই অহংকারবর্জিত অনুতপ্ত বেশ্যার গতি কোথায়, আর সাধু-সন্ন্যাসীর গতি কোথায়! অন্তরে প্রবেশ করে, তুমি কী, তার অন্বেষণ করো। ভেতরে যাতে সৎ হতে পারো, তার চেষ্টা করো। আত্মার মূলে অবগাহন না করলে কেউই তীর্থযাত্রী হয়ে গিয়ে ধার্মিক হতে পারে না। আত্মার মূলে গিয়ে বাসনার আগুন নেভাতে না পারলে, কেউই যাগযজ্ঞ তথা বাহ্যানুষ্ঠানের আগুন জ্বেলে স্বর্গে যেতে পারে না। আত্মার মূলে ডুবলে মানুষ নিজেকে চিনতে পারে, এবং তার সাথে সাথে পরমাত্মাকেও চিনতে পারে। পরমাত্মা—আত্মার মূলে। তুমি তীর্থ বেড়ালে, শত-শত অরণ্য-পর্বত ঘুরে মরলে, কত সাধুসঙ্গ করলে, অবিচারিতভাবে কত গুরুর উপদেশ পালন করলে, কত বাহ্যানুষ্ঠান ক্রিয়াকাণ্ড করলে, কত গ্রন্থ পড়লে, কিন্তু এক বারও আত্মার মূলে অবগাহন করলে না! ধিক্! তোমাকেই চিনলে না তুমি! তুমি কে, তা বুঝলে না!—তোমার পরিণাম কী?
পাপরাশিকে দিনরাত অমৃতের মতো পান করে বিভোর হয়ে রইলে এবং অহংকারে মত্ত হয়ে অন্যের সামান্য অপরাধকে গুরুতর মনে করে অহেতুক ঘৃণা করলে, কেবল পরনিন্দাই কণ্ঠের ভূষণ করে রইলে—নিজেকে চিনতে পারলে কখনও এমন করতে না। নিজে কত পাপ করেছ, সে জ্ঞান থাকলে—অন্যকে ঘৃণা করতে, পরনিন্দা ও পরচর্চা করতে তোমার প্রবৃত্তি হতো না। যে নিজেই মরে রয়েছে, সে অন্যকে কী আর ঘৃণা করবে? অন্যকে ঘৃণা করার অধিকারই তো তোমার নেই! নিজেকে চিনে নাও এবং ওতে মজো, ওতে ডুব দাও। পরনিন্দা, ঘৃণাবিদ্বেষ এবং রোগশোকের অতীত তবেই হতে পারবে। আর যদি বাইরের জগৎ নিয়েই থাকো, তবে কখনও বুঝতেই পারবে না, অন্তরের ধর্ম কী!