অনেক অনেক যুগ হয়ে গেল, তোমাকে দেখি না। টিপ টিপ করে নড়ে-ওঠা তোমার চোখের পাতাদুটো আমাকে খুব টানছে। অনেক কাল ওই চোখে চোখ ডোবাই না… অনেক সহস্রবছর তোমার নিঃশ্বাসের শব্দ শুনি না। ক্লান্তিতে, অবসাদে নুয়ে-পড়া তোমার ঘুমঘুম শরীরের ওপাশ এপাশ করার সময় নাকের ঘড়ঘড় শব্দটা শুনিনি। অনেক কাল তোমার নাকে নাক ঘষা হয়নি… অনেক কোটিবছর তোমার বুকের টাটকা ঘ্রাণটা নিইনি। অফিসশেষে ক্লান্ত তোমার বুকের প্রশস্ত মাঠটার মাতালঘ্রাণে আমার মুখ লুকানো হয়নি। অনেক কাল তোমার বুকে বুক ছোঁয়াইনি… অনেক জন্মান্তর ধরে তোমার কপোলে চুমু খাইনি। ঢুলু ঢুলু শরীর নিয়ে ওই ঢালুপথের স্তব্ধতা ভেঙে আমার দরোজায় কড়া নাড়োনি বহু বহুদিন। অনেক কাল তোমার চোখে আদর মাখা হয়নি। কত কত কাল, সহস্র রাত্রি, অগুনতি প্রহর, অধরা মুহূর্ত তোমাকে ছাড়াই চলে গেছে, চলে যাচ্ছে। এই প্রতিটি ক্ষণ তোমাকে ছেড়ে থাকার সময় কী এক তীব্র দ্রোহে এই মনটা আমাকে একের পর এক বিরহতীরে বিদ্ধ করে চলেছে… সে কথা তোমাকে কী করে বোঝাই! মৌনী চাদরে ঢেকে-যাওয়া শব্দযুদ্ধের শব্দহীনতায় আমার ব্যক্তিগত শহর আজ নিবিড় বিষণ্ণতায় পরাস্ত! আমার এই শহরে যে তুমি ছাড়া আর কেউ ঢুকতে পারে না! এক তুমি বাদে বাকি পৃথিবীর জন্যই এ শহরে কারফিউ জারি করেছি! যে রাজ্যের একচ্ছত্র অধিকার এক তোমারই, দেখো, সেখানেই তুমি নেই! আমার এখানটায়, এই বাগানটায়, এই উঠোনটায়…কোথাও তোমাকে পাচ্ছি না! কাছে যেতে না-ইবা পারি, তবু নিঃসঙ্গতার পাখায় ভর করে করে তোমার অদৃশ্য শরীরটা ছুঁয়ে ছুঁয়ে দিচ্ছি… আমাকে তুমি গ্রহণ করো, হে প্রিয়তম! তোমাকে ভালোবাসি, সখা! তোমার সবটা নিয়েই তোমাকে ভালোবাসি!