এমন একটা দিন আসবে আমারও, যেদিন আমি সম্পূর্ণ নিজের মতো করে বাঁচতে পারব, সম্পূর্ণ নিজের উপর নির্ভরশীল একটা জীবন পাবো, কারও দোষ কিংবা অপছন্দকে তোয়াক্কা না করেই একেবারে নিজের জীবনে বাঁচা যাকে বলে--- যে জীবনে বাঁচিনি কখনও আগে, কিন্তু স্বপ্নে হেঁটে গেছি যে পথ ধরে বহুদূরে একা, বহু বহু বার, যে জীবন আমায় প্রতি রাতেই একটি বারের জন্যে হলেও ডাকে, ঘুম থেকে রোজ জাগায় যে স্বপ্নটি এই আশায়---আজ বুঝি এল সেই কাঙ্ক্ষিত দিন! প্রতিদিনই নতুন নতুন ক্ষতে পুড়ে যাচ্ছি আমি, প্রতিদিনই নতুন জন্মে মিলিয়ে বাঁচছি জীবন, কিন্তু এ খেলার শেষ নিশ্চয়ই আছে, কেননা সব কিছুই একদিন শেষ হয় এবং তা হয় মৃত্যুর আগেই। মৃত্যুর আগেই মানুষ বেঁচে থাকে, মৃত্যুর আগেই মানুষ স্বপ্ন দেখে, মৃত্যুর আগেই মানুষ জীবনের রঙ খুঁজে পায়, মৃত্যুর আগেই জীবন জীবনের খেলায় মাতে, মৃত্যুর আগেই মানুষ জীবনকে ঠিকই খুঁজে পায়! ভাবছ তুমি, কোন সে জীবন, যা আবার নিজের জীবন? কখনও দেখেছ ভেবে কার জীবনে বাঁচছি আমি কিংবা তুমি, রোজ জীবনে? কী মায়ায় কুড়োচ্ছি সেধে সেধে নুড়ি, যদি নাই প্রয়োজন সে নুড়ির কিছুই নিজের? সব কিছুই তো আর মায়ায় নয়, সব ঘরই মায়ার বাঁধন হয় না কখনও, কিছু ঘর হয় সাধের প্রেম-ভালোবাসার, কিছু ঘরে থাকে অভাব, তবু অভ্যস্ততার ভয়ে জড়সড় হয়ে থাকে, আরও কিছু ঘর থাকে অচেনা সুখের মৌনব্রতে। কিছু ঘর মায়ার, কিছু ঘর স্বপ্নের, কিছু ঘর সাধে জীবন জীবনের। আমি রোজই জীবনের একটি ঘর খুঁজে যাই, আমি দেখি স্বপ্নের সেই ঘর, আমায় পথে আটকে রেখেছে যে বা যারা, স্বপ্ন দেখি, একদিন বাঁচব নিজের পথে একলা হলেও... কোনও সাহচর্য ছাড়া। কিছু ভয় থাকে যা মানুষকে বাঁধে ভয়ে, সে ভয়কে করে জয় নিজের পথে চলতে জানে সে-ই, যে করে ঘৃণা নিজেকেই প্রতি পদে পদে, যে দেয় তাড়া ভয় পেরুবার, নিজেকে নিজেই! আমি হেঁটে যাব ঠিক সেই পথে, আমি ছোঁব সেই অসীম চূড়া, যে নিয়ম রোজ আমার পথে দিয়ে গেছে কাঁটা, রক্তাক্ত হয়েছি রোজই যেই পথে হেঁটে...। একদিন ফুরোবে এই কাঁটাঘেরা রক্তাক্ত পথ, আসবে দিন এক ঠিক যেমন নিজের মনের মতন, আসবে ভোর এক যা হবে শুধুই আনন্দের, যে ভোরের রোদ দেখব আমি নিজের জন্য নিজের ঘরের জানালাটি খুলে, যেই রোদ আলো ছড়াবে আমার ঘরে, প্রতিটি কোনায়, একদিন এমন একটি ভোর আসবে আমারও। অন্যের নিঃশ্বাসে ধার করে আশ, বেঁচেছি এতটা কাল, অন্যের পায়ের জুতো জড়িয়ে পায়ে হেঁটেছি নিজের পথে, অন্যের চলন-বলন, নাচন-কুঁদন রপ্ত করেছি ইচ্ছে কিংবা অনিচ্ছেতেও, এ যে এমনই এক লজ্জা, যা আমার প্রতিটি কোষে হয়েছে রচিত মুহূর্ত থেকে মুহূর্তে, নিজের অজান্তেই করে গেছি এই ভুল, করেছি নিজেকেই লাঞ্ছিত আর অপমানিত, করেছি তো হেলা নিজেকে নিজেই, ভেবে এসেছি, বুঝি অমুক এসে এনে দেবে ভালোবাসা কিছু, আর তমুক দেবে সম্মান! অথচ বুঝিনি কখনওই অথবা চাইওনি বুঝতে নিজে,… কি ভালোবাসা কি সম্মান, সে যে কেবল নিজের হাতে! অন্যে কী-বা দিল, অন্যেরা আর কী-ইবা দেবে, যদি না বাড়ি ভাত নিজেই নিজের পাতে? ভুল করে গেছি, নিজেকে ঠকিয়ে গেছি নিজেই রোজ রোজ, দিইনি কিছুই নিজেকে নিজে, অথচ ভেবেছি, সকলেই দেবে! অন্যের কাছে হাত পেতেছি নিজের অপূর্ণ বাসনার আক্ষেপে, অন্যের এঁটো থালা চেটে গেছি নিজের ক্ষুধা মেটাতে! নিজেরে কি দিয়েছি মূল্য ততটা আদৌ, ঠিক যতটা মনে করি প্রাপ্য আমার? আজ মুখটি তবে কোথায় লুকাই? নিজেরে যে করে গেছি অপমান এতটা কালই, কী দিয়ে ঢাকি সেই দোষটা নিজেরই কাছে?