ভাবনা: একশো ঊনসত্তর।
……………………………………..
একটা স্ট্যাটাসে নিচের কথাগুলি লিখেছিলাম:
কাউকে ভীষণভাবে ভালবাসতে ইচ্ছে করছে।
কারও হাত ধরে পাহাড়ের নরোম গায়ে হাঁটতে-হাঁটতে পূর্ণেন্দু পত্রীর ‘কথোপকথন’ পড়তে ইচ্ছে করছে। আমাদের সবটুকু আবেগ ছড়িয়ে যাবে ঘুমিয়ে-থাকা রাতের পাহাড়ের শরীরে-শরীরে …………. আম্মম্মমুউউউউউউউউউউউউ…………..আমার অমন কেউ নেই কেন? আমি কেন একা? এ কেমন বিচার!
সাগরের বেলাভূমিতে কারও সামনে হাঁটুগেড়ে বসে একগুচ্ছ শুভ্র রজনীগন্ধা হাতে চিৎকার করে ওকে ‘ভালোবাসি!!!!’ বলতে ইচ্ছে করছে!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
কারও কোলে মাথা রেখে একটা ধূধূ মাঠে ঘাসের আদুরে গালিচায় শুয়ে-শুয়ে রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে ………… আমার চোখের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ও গাইবে ……….. বঁধুয়া, নিদ নাহি আঁখিপাতে ………… সুরের রেশটা শীতের শাদা চাদরের মত আলতোভাবে জড়িয়ে থাকবে শরীরের প্রতিটি রোমকূপে ………….. ইসসসসস………… কোনও মানে হয়??? বলুন!! কোনও মানে হয়???
নিবিড়ভাবে কারও রেশমি চুলের ঘ্রাণ নিতে-নিতে চোখে-মুখে-নাকে-গালে-ঠোঁটে সমস্ত চুল ছড়িয়ে-ছড়িয়ে নরোম হাওয়ায় দুলিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে আশ্চর্য রকমের মায়াবী কিছু যাদুমাখা অনুভব ………………
I dare not ask a kiss,
I dare not beg a smile,
Lest having that, or this,
I might grow proud the while.
No, no, the utmost share
Of my desire shall be
Only to kiss that air
That lately kissed thee.
হেরিক মহাশয়কে পেন্নাম জানাই! শেষ দুটো লাইন একটা মানুষ কীভাবে লেখে!! অতটুকু ভাবনায় আনেই বা কী করে!! আমি তো পড়ি আর ভাবি, মাথা এখনও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে না কেন?? ……………… মেয়েরা কেবল লেখকদের প্রেমে পড়ে! ঠিকই তো আছে!! মেয়েরা কেন লেখকদের ভালোবাসবে না??
শ্রীজাত কি আর এমনি এমনিই মেয়েদের প্রতি প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন……………
শঙ্খ ঘোষের নাম শোনেনি, এমন কেউ তোমায় যদি প্রোপোজ করে, কী করবে?
ঠিক এর পরের স্ট্যাটাসে নিচের কথাগুলি লিখতে হয়েছিল :
মেয়েদের ঘুম হারাম করতে এসব লিখেন।
মেয়েদের পটাতে ভালই চেষ্টা করে যাচ্ছেন দেখছি!
ব্লা ব্লা ব্লা ………….
জ্বি ভাই, ঠিকই ধরেছেন। আপনি করেনটা কী, শুনি? ছেলেদের পটাতে লেখেন? ছেলেদের ঘুম হারাম করতে জীবনযৌবন সমর্পণ করেছেন নাকি, ভাই?
নাকি, লিখতেই পারেন না? তাই, চুলকায়!
ছেলে-ছেলে এত ভালোবাসা ঠিক না। আম্মু বকবে!
এত জ্বলে কেন, ভাই? পারলে লিখে দেখান না দেখি দুলাইন! আপনার জন্যও মেয়েরা জ্বলবে। এমনকি আপনার সিগ্রেটটার গনগনে আগুনের চাইতে তীব্রভাবে জ্বলবে!
ছাগলের মত কথাবার্তা বন্ধ করেন, বস! ছাগলদের সবাই কাঁঠালপাতা খেতে দেয়, ভালোবাসা দেয় না। দিয়ে কী লাভ? ছাগলদের ভালোবাসা দিলে ওরা ভালবাসাও চিবিয়ে খেয়ে ফেলে। ছাগলে কী না ……………
ভাবনা: একশো সত্তর।
……………………………………..
আমি সত্যিই খুব ভাল করে বুঝি, জোর করে কারও আপন হওয়া যায় না। কিন্তু কী করব বলো, আসলে সবাইকে আপন ভাবার অসীম ক্ষমতাসম্পন্ন এমন একটা ইডিয়ট হয়ে জন্মেছিলাম, যার নূন্যতমও আত্মসম্মানবোধ নেই। ভুল করে বারবার ভাবতে ভাল লাগে—না, তোমার কাছে আমার জন্য একটা অন্য জায়গা আছে। কিন্তু সবশেষে নিজেকে আবিষ্কার করলাম একটা মাত্রাজ্ঞানহীন বিরক্তিকর বলদ আর আজাইরা বেকার হিসাবে। আমি নিরাপদ দূরত্বটা বজায় রাখতে পারিনি। এর সম্পূর্ণ দায় আমি নিজেই নিলাম। সেই সাথে একটা প্রশ্নের উত্তর তীক্ষ্ণ তীরের মত নিজের বুকে বিঁধে দিলাম, যা আমি খুঁজে বেড়াচ্ছি যেন শতাব্দীকাল ধরে—“তুমি আমার কে?” “কেউ না! কেউ না!! কেউ না!!!” ইচ্ছে হচ্ছে, জীবনটা এইখানে এই মুহুর্তে শেষ করে দিই। আজকের পর যদি বেঁচেও থাকি সে কেবল এই দেহটাকে বয়ে বেড়ানো হবে। আর কিছু নয়।
আচ্ছা, তুমিও কেন আমার মত সরাসরি বলে দিচ্ছ না, তুমি আমার কেউ নও? কেন দিচ্ছ না তুমি? আমাকে এমনি করে আটকে রেখে কী লাভ হয় তোমার? আমার দম বন্ধ হয়ে আসে…….
আজকে আমি যা লিখতে বসেছি, সেই কথাটা কাউকেই বলব না বলে ঠিক করেছিলাম। থাক কিছু কথা একান্ত আমার! নীরব সে ব্যথা আর গভীর কষ্ট কেবলই আমার হয়ে থাকুক। এমনটাই ইচ্ছে ছিল। তবু তোমাকে না বলে পারছি আর কই, দ্যাখো!
আমি একটা সময় জীবনটাকে ঠিক যেন জীবন আর মৃত্যুর মাঝামাঝি নিয়ে গিয়েছিলাম, সেখানে আমার পছন্দ-অপছন্দ, চাওয়া-পাওয়ার হিসাবের কোনও মূল্যই ছিল না। জীবনের হিসাবটা আমার কাছে ছিল শ্বাস নেওয়া আর কিছু দায়িত্ব পালন করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বেশিদিন আগের কথা না, মাত্র একবছরের কিছু বেশি হবে! আমি নিজের দিকে ফিরে চাইনি একটিবারের জন্যও। চাইবই বা কেন?—এর কোনও উত্তর যে আমার কাছে ছিল না! জীবনকে টেনেহিঁচড়ে বয়ে বেড়িয়েছ কখনও?
হ্যাঁ, এরপর হঠাৎ তুমি এলে আর কীভাবে যেন কোন এক জাদুমন্ত্রে আমাকে আবার জাগিয়ে তুললে! আমি হাসতে শুরু করলাম, স্বপ্ন বুনতে লাগলাম, নিজেকে গুরুত্ব দিতে মন চাইল আরও একবার। নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার ইচ্ছেটা বড় সর্বনেশে ইচ্ছে—আরও কত ইচ্ছেকে টেনে নিয়ে আসে জীবনে! আরও একবার আমি যেন নিজেকে ভালোবাসতে আরম্ভ করলাম—শুধু তুমি পাশে আছ বলে! তোমার চোখে জীবন দেখতে শিখলাম।
অত:পর, কোনও এক সকালে ঘুম থেকে উঠে আবিষ্কার করলাম, তুমি আমার কাছ থেকে দূরে চলে গেছ। আমি তোমাকে দেখতে পারি, কিন্তু ছুঁতে পারি না; ডাকতে পারি, কিন্তু সাড়া পাওয়ার আশা করতে পারি না। ‘এ কোন সকাল, রাতের চেয়েও অন্ধকার!’
আমার অনেক কষ্ট হতে লাগল। কারণ, ক্রমশ আমি তোমাকে না, আমাকেই হারিয়ে ফেলতে শুরু করলাম। মৃত্যুর প্রহর গুনতেথাকা কোনও মানুষকে কখনও কাছ থেকে দেখেছ? হ্যাঁ, এখন আমার কাছে এলে তা-ই দেখতে পাবে। আমার কোনও দুঃখ নেই, আফসোস নেই—এক সময় এটাই তো আমার জীবন ছিল। নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম, “পৃথিবীতে সবাই তো আর সব কিছু পারতে আসে না। সবারই সীমাবদ্ধতা থাকে। আমি তোমাকে পাব না—এটাই আমার জীবনযাপনের সীমাবদ্ধতা।” ঠিক পর ক্ষণেই মন বলে উঠল, আমার সীমাবদ্ধতা এই যে, আমি কখনওই কেবল নিজের জন্য বাঁচতে শিখিনি। এতদিন তোমার জন্য বেঁচেছিলাম, এখন আর কারও জন্য বাঁচব না। রমজান মাস দোয়া কবুল হওয়ার মাস। রোজাদার মানুষের দোয়া নাকি আল্লাহ অবশ্যই কবুল করেন। আমি সত্যি চাইছি, আমার জীবনের যা আয়ু অবশিষ্ট আছে, তা আর কারও না, শুধু তোমার হোক, অনেক মানুষ হাসুক! তারা বাঁচতে শিখুক, স্বপ্ন দেখুক, আর কেউই হারিয়ে না যাক। কারণ তুমিই পার এক-একটা জীবনকে এতটা জাগিয়ে তুলতে! আমি চলে যাব—এ যাওয়াতে আমার বিন্দুমাত্র দুঃখ নেই, কারণ আমি নিজেকে ভালোবাসতে শিখিনি কখনওই, আমি তোমাকে ভালোবেসেছিলাম। আর তুমি জীবনকে ভালোবাস, তোমার অনেক কিছু পাওয়ার আর দেওয়ার আছে এই জীবনের কাছে। আমার শুধু তুমি ছিলে, এখন নেই। আমার জীবন আর তোমার নিজের জীবন একসাথে নিয়ে তুমি বাঁচো—এ-ই আমার চাওয়া। তাই আমার এই চলে যাওয়াতেই আনন্দ।
তবু যাওয়া হয়ে ওঠে না, শুধু পরিবর্তন দেখে যাই, আর কর্তব্যরা পায়ে ভারি-ভারি সব শেকল পরায়। সামাজিকতা আর দায়বদ্ধতা আমার অস্তিত্বকে নিষেধের দেয়ালে ঘিরে রাখে। আর এ সব কিছুর মধ্যে আমার জীবনাচার বলে যায় কানে-কানে, “জীবনে কাউকে অত্যধিক গুরুত্ব দিলে তার কাছে নিজেকে কেবলই গুরুত্বহীন করে তোলা হয়। হায়, তবুও কেউ-কেউ জীবনে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে যে আর কিছুই করার থাকে না। তুমি আমার তেমন কেউ। নাউ আই ক্যান স্যাক্রিফাইস মাইসেল্ফ ফর দ্যাট পারসন, অ্যাজ দিস ইজ দ্য বেস্ট থিং আই ক্যান ডু।” বিশ্বাস করো, প্রলাপ বকছি না মোটেও, যা বলছি, বুঝেই বলছি, কখনও অমন সময় আসলে প্রমাণ পাবে।
ভাবনা: একশো একাত্তর।
……………………………………..
মানুষ মাত্রই ভালোবাসার কাঙাল। আর তাই ভালোবাসা প্রকাশ করাটা খুব জরুরি। আমার চারপাশের মানুষগুলো—মা, বাবা, ভাই-বোন, কিছু বন্ধুবান্ধব—সবাই এই ভালোবাসা কেবল অন্তরে রাখতেই অভ্যস্ত, তাই তা প্রকাশে কারওই নেই কোন ব্যস্ততা। জীবন যুদ্ধ বলে একটা কথা আছে না? শুনেছ নিশ্চয়! সেই যুদ্ধের সাথে যুঝতে-যুঝতে আমরা সবাই কেমন যেন রোবট টাইপ হয়ে গেছি। তাই ভালোবাসা দেখানো আমাদের কাছে বিলাসিতার অংশই মনে হয়। এই পুরনো অভ্যস্ততায় থেকে গেলে তখন চাইলেও অতটা ভালোবাসা প্রকাশ করা হয়ে ওঠে না। তবে আমরা একে অন্যের হৃদয় পড়তে জানি। এই বিনি সুতোর মালায় আমাদের পরিবারটা ঠিকই চমৎকার শৃঙ্খলিত। আমার ধারণা, মোটামুটি সব পরিবারেরই চিত্রটা এরকমই। কাউকে বলা হয় না ভালোবাসি, কিন্তু ঠিকই পরস্পরের প্রতি প্রবল মমত্ববোধ কাজ করে।
জানো, আমার অবস্থার কথা তোমাকে যতটা বলি ওদের কাউকে তার সিকিভাগও বলি না। পাছে আমার চোখে জল দেখে ফেলে, এই ভয়ে কেমন হাসতে শিখে গেছি এই আমি! কষ্ট গিলে হাসা যে কতটা যন্ত্রণার, বোঝো? অনেক কষ্ট হলে, আর সহ্য করতে না পারলে জানি না কেন, তোমাকেই বলি। কাল রাত ছিল তেমনই এক কষ্টের রাত। তোমার শেখানো পথেই তার পরিত্রাণ খুঁজে পেলাম। ‘আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি’ কবিতাটা পড়তে-পড়তে যেন সুস্থ হয়ে উঠলাম, কোন ওষুধেও বোধহয় এতটা কাজ করে না। কবিতা আবৃত্তি করলে আর গান শুনলে সত্যিই কষ্ট কমে। আর তা যদি দুঃখের কবিতাগান হয়, তবে তো কথাই নেই। বাস্তবিকই বাকি রাত আমার নির্ঘুম কেটেছে, শুধুই গান শুনেছি পছন্দ মত। এটাও তোমারই শেখানো। আচ্ছা, তুমি এ থেরাপি জানলে কীভাবে?
অনেক বকলাম আবোলতাবোল। আজ তবে যাই, মানে…….আসি—আমাকে যে ফিরে আসতেই হবে তোমার কাছে আবারও।
ভাল কথা, আমাকে তোমার নতুন লেখাগুলো মেইল করতে ভুলো না কিন্তু! যতই রেগে থাক, আমার এটুকু উপকার করবে তো, বলো?
ভদ্র ছেলেদের ভেতর কোনও চার্ম নাই। গোবেচারা ছেলেদের চেয়ে লম্পট ছেলেরাই বরাবরই বেশি আকর্ষণীয়। তোমাকে ভাল লেগেছিল তোমার বিনয়ের জন্য নয়, ভাল রেজাল্ট এর জন্যও নয়। তোমার বিশিষ্ট দুষ্টামির জন্য, বুঝেছ? ধীরে-ধীরে তোমার সম্পর্কে জানতে-জানতে যখন দেখলাম, অতি ভাল মানুষ কাজলের ভিতরে একটা ভীষণ দুষ্টু রবি নামের ছেলের বসবাস, তখন তোমাকে ভালো না বেসে আর উপায় থাকল না। এই যে তুমি এত-এত মেয়ের সাথে চ্যাট কর, প্রত্যেকেই শুরুতে ভাবে, আহা, আমাকে কত গুরুত্ব দিচ্ছে, ও আমাকে কত পচ্ছন্দ করে, পরে যখন জানতে পারে যে এটা একটা নিয়মিত ঘটনা, তখন সরে আসলেও আর ফিরে আসা হয়ে ওঠে না। তাহলে কী বোঝা যাচ্ছে? তুমি দুষ্টের শিরোমণি লঙ্কার রাজা, চুরি করে খাও তুমি চানাচুর ভাজা! হাহাহাহা…….তবে আগা-গোড়া সব মিলিয়ে তোমার এই ফুল প্যাকেজই আমার পছন্দ।
তোমাকে মনের ভুলে একটা পাবলিক পোস্টে ট্যাগ করে ফেলেছি। আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো, যদি ওটা তোমার চোখে পড়ে। আমি নিজের কাছে করা ওয়াদাই রক্ষা করতে পারিনি। তোমাকে ট্যাগ করা সব কিছুই অনলি মি করা। তবুও শপথ করেছিলাম আর তোমাকে ট্যাগ দিব না, আর সেখানে কিনা একটা পাবলিক পোস্টে……। গতকাল যা করেছি, ভুলে করেছি। কেন তুমি এত কষ্ট পাচ্ছ ওই ট্যাগে, বুঝতে না পারায় আমার কষ্টগুলো আরও দ্বিগুন হয়ে যাচ্ছিল, এবং যাচ্ছে। আসলে কালকে আমাদের কলেজের এক পলিটিকাল ভাইয়া ইনবক্সে নক করে খুব বাজে আচরণ করেছেন। জোর করে নাকি আমার সাথে প্রেম করবেন, আরও কী কী যে বলেছেন, তা লেখার যোগ্য নয়। থ্রেট দিলেন—আমি তার প্রস্তাবে রাজি না হলে ক্যাম্পাসে আসতে দেবেন না, আমার ছোট বোনকে ডিস্টার্ব করবেন, আমাকে তুলে নিয়ে যাবেন। মেজাজটা এত খিচড়ে ছিল, বিশ্বাস করো! যারা নিজের অন্য পরিচয় বাদ দিয়ে নিজেকে পলিটিকাল পরিচয়ে পরিচিত করাতে চান, তারা বড় অসহায় প্রাণী। আচ্ছা, পলিটিকাল ছেলেরা কি সবাই মূর্খ আর গুণ্ডা টাইপের?
আমার হয়তো একটা বিরতি দরকার তোমার কাছ থেকে সরে আসার জন্য। তোমার সাথে এই আত্মিক যোগাযোগটা যদি তোমার কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, আমার উচিত হবে না সেটা আর রক্ষা করা।
খুব সিম্পল কিছু প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করছে।
১। কেন আমাকে তোমার বিয়েতে নাকের নথ দিতে মানা করলে? কেন বললে তোমার বিয়েতে কোনও উপহার দিলে তুমি খুব বেশি বিরক্ত হবে?
২। কেন বললে তোমার জীবন শেষ হয়ে গেছে?
৩। কেন তোমার নামটা গতকাল আমাদের ওই ছবি দুটো থেকে রিমুভ করলে? ওখানে তো আরও অনেকেই ছিল। তবে কীসের লুকোচুরি তোমার?
৪। আমি ফোন দিলে কেন ধর না?
৫। আমি কী ভুল করেছি, সেটা স্পষ্ট করে বল, কারণ আমার মাথা আসলেই কাজ করছে না।
৬। আমি একবারে মরে গেলে বেঁচে যেতাম। কারণ, দূরে সরে আসতে যেয়েও যখন দেখছি তুমি স্বাভাবিক নেই, আমি আর নিজেকে সামলাতে পারছি না। না পারছি সরে যেতে, আবার না পারছি তোমার কাছে যেতে। তোমাকে ভাল থাকতে না দেখলে তোমার পাশ থেকে সরে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
৭। আমাকে যদি তোমার অবস্থাটা খুলে বুঝিয়ে বল, তবে হয়তো আমি ঠিক কাজটা সঠিকভাবে করতে পারব।
৮। যদি মনে কর আমার কষ্ট দূর করা দরকার, তবে আমাকে সবকিছু খোলাখুলি জানতে দাও। ফোনে অথবা চিঠিতে, যেভাবে তুমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ কর।
৯। সেদিন এত কষ্ট করে অত বড় একটা লেখা পোস্ট করেও কেন রিমুভ করে দিলে?
আমি খুব বকবক করি? যদি করি, সেটা শুধু তোমার সাথে। তুমি বাদে প্রায় সবাইই আমাকে মিতভাষী হিসেবে চেনে। তোমার কাছে লেখার সময় খুব হাসিখুশি থাকি। তোমার কথা ভাবলেও খুব আনন্দ লাগে। তবে নিশ্চিত জেনো, আমি কোনোভাবেই স্বার্থপর নই। যদি কখনও মনের ভুলেও আমাকে স্বার্থপর ভাব, তবে আমি নিজেই নিজের কাছে অনেক ছোট হয়ে যাব। খুব কষ্ট পাব সেদিন। আমায় সে কষ্টটা দিয়ো না, কেমন?
একটা অনুরোধ, তুমি স্বাভাবিক থাকো। তাহলেই আমি স্বস্তি পাব।
ভাবনা: একশো বাহাত্তর।
……………………………………..
এই প্রথম তোমার কোনও লেখা পড়ে শ্বাসকষ্টে ভুগছি! মানুষ তো, তাই!
এই যে আমি তোমাকে কত চিঠি লিখি, ওরকম একটাও চিঠি কি তুমি আমার জন্য লিখতে পারতে না? পারতে তো বটেই! কিন্তু পারনি। কারণ তুমি তো আমাকে সেভাবে করে কখনওই ভালোবাসতে পারনি, যেভাবে করে আমি তোমাকে বাসি। অবশ্য তোমাকে তো এমন পাগলপারা ভালোবাসায় আরো কত শত মানুষ ভাসায়! তা-ই তো, না? সে সকলই তোমার যোগ্যতা। আর আমি তো সে তুলনায় কতই তুচ্ছ! আমি যে সুন্দর করে দেখতে জানি, বড় করে ভাবতে জানি, আমার মনটা যে অনেক বিশাল, তা ততদিন জানতাম না, যতদিন তুমি দেখিয়ে দাওনি। তোমার চোখে আমি নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করেছি। আমি নতুন সুরে পাখিকে গাইতে শুনেছি, হাওয়ার ঘ্রাণ শুঁকে বাঁচতে শিখেছি, আলোর ঝর্ণাধারায় অবিরাম নাইতে জেনেছি। আমার এ নতুন জীবন তাই তোমারই দান।
যেদিন জানতে পারলাম, তুমি বিয়ের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত, সেদিন থেকে কী এক শূন্যতা আমায় ঘিরে ধরল! তোমার তো আমাকে না হলেও চলে, কারণ আমার যে তোমাকে তেমন কিছু দেয়ার সাধ্য নেই। আমার মনের মধ্যে সাধ আর সাধ্যের এক বিশাল দ্বন্দ্ব চলতে থাকে সারাক্ষণই। সে যা-ই হোক, দূর থেকে এই আমি এতদিন সেই পৃথিবীতে বাস করে এসেছিলাম যেখানে সূর্য ছিলে তুমি। তাই তুমিই ছিলে আমার জগৎ। সুতরাং বুঝতেই পারছ, তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ায় আমার জগৎটা আমার সামনে কীভাবে দুলে উঠল। আমি কিন্তু অখুশি হইনি তোমার এ খবরে। বরং এটা তোমাকে ঘিরে আমার অজস্র চাওয়ার একটা ছিল। তবু তোমার এই বার্তাটা যখন টাচ স্ক্রিনে আমার আঙুল স্পর্শ করল, আমার সকল জ্বালা যেন দুচোখের জলেই শান্তি খুঁজল। আমার হৃদয়ে কেউ যেন খুব জোরে একটা ভোঁতা ছুরি চেপে ধরল। এ ভীষণ যন্ত্রণা, জানো? তোমার মত সহজ সুন্দর সাবলীল প্রকাশ ক্ষমতা আমার নেই। অতটা কুশলী শিল্পী আমি নই। তবে যে ব্যথাটা হচ্ছিল, কিন্তু যা ছিল পুরোই অপ্রত্যাশিত, তা কিছুটা বোঝাতে এই চেষ্টা। শরীরের কষ্ট কোনও না কোনওভাবে সয়ে ওঠা যায়। কিন্তু এমন মর্মপীড়া সকল সজীবতাকেই শেষ করে দেয়। পীড়ার কারণ, তুমি বিয়ে করছ—এটা যতটা, তার চেয়ে বেশি এটা যে এই সত্যটা আমাকে খুঁজে-খুঁজে এবং খুঁচিয়ে বের করে নিতে হল! আর কেউ-কেউ তা এমনিতেই জানল—সহজে, চমৎকারভাবে! আমি তোমার কাছে হয়তো ওদের মত আপন হতে পারিনি। মেনে নিচ্ছি, সে আমারই ব্যর্থতা। জানি তোমাকে তেমন কিছুই দিতে পারিনি, যার জন্য তুমি আমার প্রতি দায়বদ্ধ হবে। কিন্তু সমস্যা হল, তোমার কাছ থেকে এত পেয়েছি যে পাওয়াটা আমার অভ্যেসে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল—একটু বেশি করেই। এখন আমি কোথায় যাব? কার কাছে যাব? কীভাবে বাঁচব?
অ্যাই শোনো, একটু আগে যে অনেকগুলো ছবি পাঠিয়েছ, আমি খুব খুশি হয়েছি। (ধন্যবাদ দিলাম না অভ্যাসবশত। এখন থেকে কি দিতে হবে?)
আমি ভাবছিলাম কেন আমি এত কষ্ট পাচ্ছি। কেন ভাবছি যে আমি আর তোমাকে ভালোবাসতে পারব না? আমার ভালোবাসা তো আমার মধ্যেই। তবে কীভাবে তা আমাকে ছেড়ে যাবে? আজ মন এত বেশি খারাপ ছিল যে, আমি খুব অসুস্থবোধই করছিলাম। অফিস থেকে ছুটি নিয়েছি, আজ কোথাও বের হইনি। নিজের কাছে অনেকগুলো প্রশ্ন জমা ছিল। সেগুলির উত্তর মিলিয়ে-মিলিয়ে নিচ্ছিলাম। কষ্টের মেঘগুলো বর্ষা হয়ে ঝরে পড়ছিল। এত কষ্ট কেন হচ্ছে, একটু বলে দেবে?
খানিক আগে বুঝলাম, তুমি আমার যেখানটাতে ছিলে, সেখানেই থাকবে আজীবন। ওই জায়গাটা কেউ নিতে পারবে না কোনওদিন। তোমার জন্য বাসায় ঝগড়া করেছি অনেকক্ষণ। ওরা কেউ তোমাকে সহ্য করতে পারে না। ওদের ধারণা, তোমার কারণে আমি বিয়ে না করে বসে আছি, তাই তুমি ওদের শত্রু। এমন উদ্ভট মানসিকতার কোনও মানে হয়, বলো?
আজও চোখ বন্ধ করলে ওইখানে একটাই নক্ষত্র আলো ছড়ায়—সে কেবলই তুমি। আমি আমার প্রার্থনাগৃহে আমার স্রষ্টার কাছে শুধু একজনের জন্যই এভাবেই মঙ্গলদ্বীপ জ্বেলে যাব আজীবন—সেও তুমি। তুমি আর তোমার প্রাণের মিষ্টি মেয়েটি অনেক সুখী হও! তোমার বিয়েতে এ আমার প্রথম আশীর্বাদ। আর শোনো, তোমার কথা যে আমি খুব শুনি, তার প্রমাণ পাবে শীঘ্রই, স্রষ্টার কাছে সে প্রার্থনাও করছি অবিরত। তোমাকে খুশি করতে পারলে আমার অনেক ভাল লাগবে।
আমি সেই একান্ত ঘরটা চেয়েছিলাম তোমাকে ঘিরে, যে ঘরে ফেরার টান তীব্র, যে ঘরে থাকার সুখ অশেষ। কিন্তু ঘর ভেঙে যায়—এ বুঝি পৃথিবীর নিয়ম। ঘর তো কখনও একার হতে পারে না। সে ঘরে অংশীদার লাগে, অন্তত কল্পনাতে হলেও…….লাগে। আর যদি সে মানুষটাই চলে যায়, হেলায় হাত ছেড়ে দেয়, তবে ঘর আর ঘর থাকে না।
তুমি আমার ঘরটা শূন্য করে দিলে। যতবার তোমাকে ডাকতে চাই, ওই তিনটা শব্দ এসে ততবার আমার হাতে, পায়ে, কণ্ঠে শেকল পরিয়ে দেয়—“নক করো না।”
ভাবনা: একশো তিয়াত্তর।
……………………………………..
একটা দোয়া আছে: রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা। এর অর্থ: হে আমার পালনকর্তা, আমার পিতার-মাতার প্রতি আপনি সেইরূপ সদয় থাকুন, তারা আমার প্রতি যেইরূপ সদয় ছিলেন।
এই প্রার্থনা করতে আমাকে পরিবার থেকেই শেখানো হয়েছে। তবে বোধশক্তি হওয়ার পর থেকে আমি আর এই প্রার্থনা করি না। মনে-মনে বলি, তারা আমার প্রতি যে টুকু সদয় হতে অপারগ ছিলেন আমাকে সেই অপারগতা থেকে মুক্তি দিয়ো।
কেন বলি, বলছি। মাকে জ্ঞানত কখনও তার সন্তান হিসাবে আমার সাথে মধুর স্বরে কথা বলতে শুনিনি। সন্তানকে জড়িয়ে ধরে যে আদর দিতে হয়, মা কেন যেন তা শেখেনি। মা বিশ্বাস করে, সন্তানকে আবার চুমু খাওয়া যায় নাকি! তাই এখন যখন মায়ের সাথে উচ্চস্বরে কথা বলি, নিজের মনে নিজেই বলি, হে আল্লাহ্, সব কিছু সেভাবে ফিরিয়ে দিয়ো না যেভাবে পেয়েছি। আমাকে আরও বেশি ধৈর্য দিয়ো তুমি, যেন নিজের স্বর নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। আমার জন্য মাকে এখনও পর্যন্ত কোনোদিনও কাঁদতে দেখিনি। বিশ্বাস হচ্ছে না, তাই না? আমারও বিশ্বাস হয় না।
আর আমার বাবা, কথায়-কথায় সমানভাবে যার দুই হাত চলত, তাকেও কীভাবে ভালোবাসি? বুদ্ধি হবার পর থেকে আজ পর্যন্ত তাকে কখনও কারও সাথে নম্রভাবে কথা বলতে দেখিনি। বহুবার তার হাতে রক্তাক্ত পর্যন্ত হতে দেখেছি আমার মাকে, বোনকে, রাস্তার রিক্সাচালক অথবা ফেরিওয়ালাটাকে—কেবল মতের বাইরে ছিল বলেই। তার মতের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলছে—আমাদের বাসায় এটা একটা অকল্পনীয় ব্যাপার। সেই বাবাই যখন ঈদের দিন সালামি হাতে গুঁজে দিয়ে কোলে তুলে চুমু খেত তার গালের দাঁড়ির খোঁচা আমার কোমল মুখে ছড়িয়ে দিয়ে, তা খুব বিশ্রী আর অসহ্যকর লাগত আমার কাছে, তার দুই হাত থেকে মুক্তি মিলবার অপেক্ষাতে সেকেন্ড গুনতাম আমি। বাবাকে কখনও মানবিক হতে দেখিনি। এ আমার অনেক বড় একটা কষ্ট।
এগুলি আসলে বলার মতন কিছুই না, কিন্তু আমার নিজস্ব পরিবেশ আর নিজের পরিবারের প্রতি আমি বড্ড বেশি বিরক্ত আর ক্লান্ত। আমার প্রায়ই মনে হয়, আমি এর থেকে বেরিয়ে আসি। কিন্তু শেকলের মত আমার পরিবার আমাকে ঘিরে রয়েছে। এ যেন একটা জটিল ধাঁধা—যেদিক দিয়েই বেরুতে চাই—পথ বন্ধ।
Sansho the Bailiff মুভির একটা ডায়লগ আমি জীবনে খুব বেশি অনুসরণ করে চলি—Without mercy, man is like a beast. Even if you are hard on yourself, be merciful to others. Men are created equal. Everyone is entitled to their happiness. আমি সত্যিই প্রার্থনা করি, আমি যেন সবার প্রতি দয়ালু হতে পারি। যারা আমার সাথে অন্যায় করেছে, আমাকে কষ্ট দিয়েছে, তারাও যেন জীবনে সুখী হয়।
আজকের লেখাটা পড়ে বিস্মিত হয়ে গেছি। বিশ্বাস করো, এখনও কাঁপছি! তোমার লেখা অনেকের মনের কথার সাথেই মিলে যায়, কখনও-কখনও আমার সাথেও মিলবে—এতে আশ্চর্য হবার কী আছে! সেটা কোনও কথা নয়। আসলে সমস্যাটা নিতান্তই আমার ব্যক্তিগত। জানি, এর সমাধান আমাকেই করতে হবে। তোমার সাথে এমনিই বকবক করি। বিরক্তও হয়তো করি। নিজেকে একেবারে শূন্য, সম্পূর্ণ একা ভাবতে ইচ্ছা করে না, তাই যা-ই ভাবি, তোমাকে সাথে নিয়েই ভাবি।
জীবনকে খুব হালকা করে নিতে হবে, তাই না? এখানে সিরিয়াস হওয়ার মতন আসলেই কিছু নেই। যে জীবন আমাদের পাত্তাই দেয় না, তাকে এত কেয়ার করার কী আছে? যা সামনে আসবে, তা-ই নিয়ে হাসতে-হাসতে জীবন পার করে দিব। যেটা ঘটতে যাচ্ছে, তা ঘটার পথটা প্রশস্ত করে রাখব। কোনও কিছুতেই কোন স্ট্রেস নেওয়া যাবে না। পরিকল্পনা করে তা পূর্ণ করতে কাজ করে যেতে হবে, তখন ওই কাজটা নিজেই তার সামনের রাস্তা করে নিবে আমার কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিতে। কিন্তু আমি বিশাল একটা সমস্যার মধ্যে আছি। ইদানিং আমার ক্ষুধামান্দ্যের সাথে সকল রকম কর্মবিতৃষ্ণা দেখা দিয়েছে। সব কিছুর প্রতি অনীহা আর অনাগ্রহ আমাকে ভেতরে-ভেতরে আতঙ্কিত করে তুলছে, আর নিজেকে যেখানে দেখতে চাই, বর্তমানে সেই অবস্থানে না থাকায় নিজের মধ্যে প্রতিনিয়তই জমা হচ্ছে ক্ষোভ যা কখনও ফেটে পড়ছে রুক্ষ আচরণে, বাক্যে। আর ওই মুহূর্তে নিজেকে নিজের কাছে এত পরাজিত লাগছে, যা ভাষায় বোঝানোর মত নয়!
ভাবনা: একশো চুয়াত্তর।
……………………………………..
কোনও ছবি যখন খুব সুন্দর হয়, তখন আমরা বলি—একদম সত্যিকারের মত! আবার সত্যিকারের কোন দৃশ্য যখন খুব সুন্দর হয়, তখন বলি—একদম ছবির মত! ব্যাপারটা মজার। যে কোনও সৃষ্টির স্রষ্টারা প্রায়শই তাঁদের সৃষ্টির মত নন। সকল সৃষ্টিও ঠিক সত্য কিংবা অভ্রান্ত নয়, স্রষ্টার জানার পরিধি ও ভাবনা অনুযায়ী সৃষ্টির ধরন বদলায়। একমাত্র সকল সৃষ্টির সৃষ্টিকর্তা বাদে সকল স্রষ্টাও ঠিক নন—তাঁর সৃষ্টির পরিমাণ যেমনই হোক না কেন।
আমি দেখেছি,
কেউ-কেউ স্রষ্টার সৃষ্টিকে ভালোবাসেন—স্রষ্টাকে নয়।
কেউ কেবল স্রষ্টাকে—-সৃষ্টিকে নয়।
আবার কেউ-কেউ স্রষ্টা আর সৃষ্টি—দুটোকেই।
কেউ বা অদ্ভুতভাবে স্রষ্টাকে ঘৃণার মধ্য দিয়ে তাঁর সৃষ্টিকে ভালোবাসেন।
অথবা, কেউ কী কারণে যেন—স্রষ্টাকে ভালোবাসলেও তাঁর সৃষ্টিকে ঘৃণা করেন।
এসব ভাবনা বেশি আসে যখন রাত জেগে-জেগে থাকি। না, আমি জেগে থাকি না, আসলে রাতই আমায় জাগিয়ে রাখে। মাঝে-মাঝে খুব অসহায় লাগে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি, আমায় পিছলে-পিছলে সময় বয়েই চলছে। রাত একটা- দুইটা- তিনটা- চারটা…….এগোতেই থাকে। ভাবি, এই যে আমার ঘুম আসছে না, তাতে তো পৃথিবীর কিছুই যায় আসে না, কারও তো কিছুই হয় না—একলা কষ্ট একাকি কেবল আমাকেই ছুঁয়ে যায়। মাঝে-মাঝে সব কিছু থেকে নিজেকে সম্পূর্ন বিরত রেখে নিজের কাছেই প্রমাণ দিই, “দেখ নৈঋতা, তোর শূন্যতায় পৃথিবীর কিচ্ছু হয় না, কিছুই না। দ্যাখ দ্যাখ! প্রাণভরে দ্যাখ! হাহাহা হাহাহা…….” তখন আবার নিজেই নিজেকে সান্তনা দিই, “আজ পৃথিবীর মন ভাল নেই, তাই আজ আমাকে ওর মনে পড়ছে না!” আবার আনমনে ভাবি, খুব করে ঘুম আসলেই বা কী হত! ঘুমিয়েই তো থাকতাম। তার চেয়ে, এই তো ভাল! খুব খুব খুব ভাল! নয়ছয় ভাবছি…….নিঝুম নির্ঘুম নিশ্চুপ রাতকে সঙ্গ দিচ্ছি…….সবাই ঘুমিয়ে পড়লে একা-একা রাতের কষ্ট হয় না বুঝি? রাতের পোকারা আমার কষ্ট বোঝে, আমিও ওদের কষ্ট বুঝি। নৈঃশব্দ্যের সাথে গল্প করি—ওর ঘরেতে আঁধারকবি কবিতা লেখে। আরও কত কী যে ভাবি!
আমি যেন সামনে কোনও আলোই খুঁজে পাচ্ছি না। সব কিছুই খুব বেশি এলোমেলো। কোথাও আনন্দ নেই, থাকলেও তা যেন অহেতুক, অনাবশ্যক, অনর্থক। আনন্দ কিছুতেই আমার জন্য নয়। এই মুহূর্তে যতটা দিশেহারা বোধ হচ্ছে, তাতে আর কিছুই চাওয়ার বা করার নেই। শুধু একটা কথাই মনে হয়, যা করেছি, যেখানে পৌঁছেছি—সবই অর্থহীন! কাউকে আর কিছুই আমি বলব না। এই পৃথিবীটায় সবাই যে যার মত! আমিও একেবারেই আমার নিজের মত। আমার এই নিজের মত বাঁচা না-বাঁচায় কারও কিচ্ছুটি এসে যায় না। আমি কারও বিরক্তির উৎস বা উদ্দীপক হতে চাই না। কখনওই না কখনওই না! যে আমার ভালোবাসার মূল্য দিতে জানে না, তাকে আমার ভালোবাসা দেখানোর কোনওই প্রয়োজন নেই। বেঁচে থাকার সময়টা পার করাই তো বড় কথা। আমি পারব পার করতে—করার অনেক কাজই তো আছে। তারপর চলে গেলেই তো সব শেষ। কাজটা কঠিন নয়। পারব আমি! আর কখনও কিছুই বলব না।
তুমি কেমন আছ জানতে চেয়েও উত্তর পাচ্ছি না। আচ্ছা আমাকে বললে কি কোনও অসুবিধা আছে? আমি তো কেবল তোমার খোঁজ জেনে তোমার সম্পর্কে নি:শঙ্ক থাকতে চাই। তোমাকে পুরোটা দেখতে আর বুঝতে পারি, তাই তোমার অবস্থাটা একটু অনুভব করতে চাই। এর চেয়ে বেশি এমন কিছু তো চাইছি না, যা তুমি দিতে পারবে না। আমাকে জানালে তোমার কোনও ক্ষতি হবে না—এ বিশ্বাসটুকু তো অন্তত রাখতে পার! নাকি পার না? একটা কথা বলি, গত শুক্রবার তোমাকে তোমার বন্ধুর জন্মদিনের পার্টিতে দেখে আমার কী মনে হয়েছে, জানো? ওখানে কোথাও-কোথাও তোমার ছন্দপতন হয়েছে। তুমি ঠিক স্বচ্ছন্দ ছিলে না সেখানে। যেখানে যেতে মন থেকে পুরোপুরি সাড়া মেলে না, সেখানে না যাওয়াই কি ভাল না? আমার দেখায় ভুলও থাকতে পারে, তবে যা মনে হল তা-ই বললাম। আচ্ছা, তুমি নিজেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ, রনো? ভয় হয়, যা তুমি নও, তার মাঝে নিজেকে আবার হারিয়ে না ফেল! যা তুমি ছিলে তা থেকে সরে গেছ কতকটা! ওই জনপ্রিয় ভিড়ে আবার না হারিয়ে যাও! যা সবাই করে, তা কি সবসময়ই ঠিক? এসব তুমি খুব ভাল করে বোঝো, আমি জানি। তবে কেন ভুল পথে হাঁটছ? যে অমায়িক রঞ্জনকে দেখেছিলাম, সে কখনও না হারাক—এই চাওয়াটা বেশি কিছু তো নয়। রনো! আমার মন বলছে, আসলে অনেক কিছুই ঠিক নেই। তবু সব ঠিক রেখে এগিয়ে যাওয়ার সংগ্রামই তো জীবন। এটা তো একা আমার কথা নয়, তোমারও কথা, তাই না, বলো?
তুমি ভালো থেকো—খুউব ভাল।
ভাবনা: একশো পঁচাত্তর।
……………………………………..
এই যে ফেসবুকে আসি, কেন, জানো? আমি একটা সময় ডায়রি লিখতাম। ফেসবুক আসার পর থেকে আমার একান্ত সেই ডায়রির পাতা হয়েছে ফেসবুক, আমার ইচ্ছা মাফিক প্রাইভেসি সেট করে কখনও তা হয়েছে সিন্দুক, আবার কখনও চিঠির বাক্স বা ডাকপিয়ন। ফেসবুক আমার নিজের সাজানো নিজস্ব পৃথিবী, গুটিকয় পরিচিত মুখের সমারোহ, তাদের ভালমন্দের বার্তাঘর। আমার ফেসবুক সবার জন্য নয়। এখানে আমার বিশেষ কারও জন্যই শুধু আসা। নয়তো জীবন…..সে কোনও না কোনওভাবে কেটে তো যায়ই! ফেসবুকের সবচাইতে সুন্দর দিকটা হচ্ছে, এর চাবি যার হাতে, তার ইচ্ছে মত এটাকে ব্যবহার করা যায়। নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলেই নিজের ফেসবুককে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
আমি কাউকে কখনও বেঁধে রাখি না, আমার হাত আর মন দুটোই খোলা, যা থাকার তা এমনিই থাকে, যা থাকার নয়, তা থাকে না। সত্যিটা হল, যা যাওয়ার, তাকে যতই আঁকড়ে থাক আর যতই মুঠি পাকিয়ে ধর না কেন, তা যাবেই যাবে, কখনও থাকবে না। রশি আর দড়ি নিয়ে কারও পিছনে কেন ঘুরতে হবে? জীবনটা কি বেঁধে আর বাঁধা পড়ে কাটানোর জিনিস, বলো?
আমি যা করি তা আমার পুরোটা দিয়েই করি, মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে, বাঁচিয়ে, হিসেবে চলতে চাই না। যা চাই তা সরাসরিই বলি। একটা প্রশ্ন ছিল…..এর উত্তরে তুমি না চাইলে সরাসরিই ‘না’ বলে দিতে পার।…….যদি কখনও সত্যিই সে সুযোগ পেয়ে যাই, আর তোমার অংশকে আমার ভেতরে লালন করতে চাই, আমার পরিচয়ে বড় করতে চাই, তুমি দিবে তা আমাকে? আমায় পাগল ভেবো না, আমি সম্পূর্ণ সুস্থ ভাবনায় তোমাকে ওটা বলেছি।
প্রিয় বাদল, অনেকদিন পর আগের পথটাই আজ আবার বেছে নিতে হল। কেন, জান? একটাই কারণ—তোমার অসীম অবহেলা। না, ঠিকই আছে, আমার তো ওটাই প্রাপ্য, তাই না? তুমি তো অনেক আগেই সব ক্লিয়ার করে দিয়েছ। এ তো আমিই যে কিনা তার আগের ওই হাঁটা পথটা থেকে ফিরে আসতে পারছে না। হ্যাঁ, হয়তো চাচ্ছিই না ফিরে আসতে। ফেরাটা জরুরি, তাই বলে কি ফেরা যায় সবসময়ই? তোমার শেখানো সেই কথাটা…….ইফ ইউ ফিল গুড, কিপ গোয়িং। মনে আছে? এক ঘুঘুডাকা দুপুরে তুমিই কথাটা পাঠিয়েছিলে। কেন পাঠিয়েছিলে, সে কথা তোমার নিশ্চয়ই মনে আছে। আর যদি ভুলে যাও, তবে ভুলে যাওয়াই ভাল।
আজ দুপুরে অনেক সংকোচ আর দ্বিধা নিয়ে তোমাকে ফোনটা করেছিলাম। যেদিন থেকে তোমার ফেসবুক অ্যাকাউন্টটা বন্ধ, সেদিন থেকেই হাঁপিয়ে উঠেছি তোমার লেখা, তোমার আপডেট না পেতে-পেতে। তোমাকে কাছে পাবার আমার তো ওই একটাই জানালা, তাই না? তাও যদি বন্ধ হয়ে যায়, তবে আমি বাঁচি কী নিয়ে, বলো? আচ্ছা তুমি কি বুঝতে পেরেছিলে আমার কণ্ঠস্বরে যে আমি কতটা সংকোচ উপেক্ষা করে তোমাকে ফোন করেছি? আমি কিন্তু তোমার বিরক্তিটা ঠিকই ধরতে পেরেছি। একটুও অসুবিধে হয়নি। আমাকে যা বুঝিয়েছ, আমি তা-ই বিশ্বাস করেছি, মেনে নিয়েছি। যাকে আমি ভালোবাসি, সে আমাকে যা-ই বোঝায়, আমি তা-ই খুব দ্রুত তার মত করে বুঝে ফেলি। তুমি অবশ্য বরাবরই ভাল বোঝাতে পার। আমার বোঝার প্রতিভা যতটা প্রবল, বোঝানোর প্রতিভা ঠিক ততটা প্রবল নয়। আর তাই আমার প্রকৃত অবস্থা বরাবরের মত অজ্ঞাতই থেকে যাবে তোমার কাছে। তোমার সাথে কথা বলতে গেলে সবসময়ই কোত্থেকে এত জড়তা এসে আমার কণ্ঠে ভর করে, তা ভাবলে আমি নিজেই বিস্মিত হয়ে যাই! আমি সত্যিই তোমার সাথে কথা বলার সময় আজও নিজেকে হারিয়ে ফেলি সেই প্রথম দিনের মত। তার উপর যদি অমন কঠিন স্বরে উত্তর দাও, তখন কথা আর এগুবে কেমন করে, বলো? আমার সাথে কখনও বকার সুরে কথা বলো না প্লিজ! তোমাকে কঠোর হতে দেখলে আমার বুক কাঁপে।
আচ্ছা, এসব শুনে তুমি কি আমার উপর খুব রেগে যাচ্ছ?
ফোনে বলেছি, আমি ভাল আছি, কিন্ত কেন বলেছি, জানো? যে তুমি একটিবারও আমার খোঁজ নিলে না, সে-ই তোমাকে আমার আসল খোঁজ দেওয়ার দরকার কী, বলো? যার ব্যথা সে ছাড়া দ্বিতীয় আর কেউ বোঝে না—কথাটা সত্য নয়; বোঝে, যদি কেউ ভালোবাসে, তখন দরদটা হয়তো বেশি করেই অনুভব করতে পারে। যাক সে কথা। আমি ভাল নেই তো কী হয়েছে, ভাল হয়ে উঠব শিগগিরিই। এই আট দিন আগেও যে অবস্থায় ছিলাম, এখন তার চেয়ে ঢের ভাল আছি! শুধু মাঝে-মাঝে বড্ড অসহিষ্ণু অস্থির অসংযত হয়ে উঠি। মানুষ বাঁচে ভালোবাসায়, মরেও ওই একই কারণে। চারিদিকে তাকালে যখন দেখতে পাই সত্যিই আমার জন্য তেমন কেউ নেই যে আমি মরে গেলেও কেঁদে বুক ভাসাবে, তখন আর বাঁচার কী আশ থাকে, বলো? ভালোবাসা পৃথিবীর সবচাইতে মারাত্মক মারণাস্ত্র।