ভাবনা: একশো বাষট্টি।
……………………………………..
নৌকোয় উল্টো করে দেয়া পালের অসম্ভব সুন্দর ছবিটিকে………অনেক অসুন্দর ছবির কাছেও হেরে যেতে হয়। খুব অসুন্দর কদর্য বিশ্রী ছবি এক দৃষ্টিতে দেখেছেন কখনও? অমন কুৎসিত রূপ চোখে কষ্ট দেয়, মনে জ্বালা দেয়। সুন্দরকে নাকি ভোলা যায় না। আমি তো দেখলাম, অসুন্দরকে ভোলাটাই খুব চ্যালেঞ্জের—অসুন্দর মানুষ, অসুন্দর স্মৃতি। ভুলতে পারবেন আমাকে? আমি পারব আপনার স্মৃতি ভুলতে?
প্রতিদিন আপনার নিউ ইয়ারের রেজল্যুশনগুলো মনে করিয়ে দেয়া যদি ইন্টারফিয়ার করা হয়ে থাকে, তবে আই অ্যাম রিয়েলি সরি—বছরের শেষ দিন পর্যন্ত কাজটা আমি ক্লান্তিহীনভাবে করে যাব। ওই কাজগুলি করতে আপনি তো নিজের কাছেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এমনি এমনিই?
মানুষের প্রিয় হয়ে চলে যেতে নেই।
কিংবা, কারও প্রিয় হতে নেই…….
খুব অন্যায়…..খুউউব…….
অতি ভালোবাসায়,
শ্রদ্ধায় যে মানুষটার সাথে কখনও দেখা করা হয়নি,
তিনি একদিন কাঁদিয়ে চলে যান।
খুব ভাল থাকুক হারিয়েযাওয়া প্রিয় মানুষগুলি। মান্না দে চলে গেলেন। আজ পর্যন্ত আমার সারাজীবনই কেটেছে তাঁর কণ্ঠের সাথে। আমার দুঃখের বিশ্বস্ত সঙ্গীটি চলে গেলেন। তিনি ছিলেন আমার আত্মার আত্মীয়। জীবনে দুইবার তাঁর কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। একবারও কথা বলতে পারিনি,
শুধু বিস্ময়ভরা চোখে তাকিয়ে ছিলাম। প্রিয়দের সামনে গেলে কিছুই বলতে পারি না,
নির্বাক হয়ে যাই। আজ তিনি নেই। বড় কষ্ট হচ্ছে মেনে নিতে। বাবাকে মনে পড়ছে…….
জীবনে চলার পথে অনেক মানুষ এসে নিজের অজান্তেই জীবনের সাথে মিশে যায়, জীবনের একটা অংশ হয়ে যায়, আবার একটা সময়ে এসে জীবনের তাগিদেই জীবন থেকে হারিয়েও যায়। কিন্তু তাদের ভালোবাসা, স্মৃতি, আন্তরিক ব্যবহার মনে থেকেই যায়। তেমনই একজন শ্রদ্ধেয় মানুষ বেলাল কাকা, যিনি নিজের জীবন থেকে অনেকটা সময় নিঃস্বার্থভাবে আমাদের দিয়েছেন—আমরা যেন আব্বুর অভাব কিছুটা হলেও ভুলে থাকতে পারি। বিন্দুমাত্রও কোনও প্রাপ্তিযোগ ছাড়াই উনি উনার চাকরি ছেড়ে ছোট একটা চাকরি নিয়েছিলেন, যাতে আমাদের পরিবারকে সময় দিতে পারেন। প্রতি মাসে নিজের আয়ের অর্ধেকটা আমাদের জন্য খরচ করে ফেলতেন। আমাদের দুই ভাইবোনের নামে ব্যাংকে ডিপিএস অ্যাকাউন্ট চালাতেন। প্রায় ১৯ বছর আগে বেলাল কাকার কাছ থেকে পাওয়া উনার একটা ডায়রি খুব যত্নে রেখেছি। জানেন নীল, বেলাল কাকার না মাথাভর্তি বুদ্ধি! আমার ধারণা, উনার প্রতি চুলে-চুলেও বুদ্ধি! জিনিয়াস কোথাকার! আমি পরীক্ষায় ফার্স্টই হতাম, তাও শুধু বলতেন, “অ্যাই দুষ্টু মেয়ে, তোমার মাথায় যা আছে, তা তো শুধু দুষ্টুদুষ্টু কাজে ব্যয় কর। এর ১%ও যদি পড়ালেখায় খরচ করতে, তাহলে অনেক দূর যেতে পারতে—সেটা তো আর করবে না।” সেই ছোট্ট আমি ছোট্ট মাথার সমস্ত দুষ্টু বুদ্ধি দিয়ে উনার সাথে সবসময় শুধু ঝগড়া করতাম।
কাকার মোট তিনটা ডায়রি আমার কাছে আছে। কাকা বড় সুন্দর করে লিখতে পারতেন। এত সুন্দর ঝরঝরে লেখা খুব বড় সাহিত্যিকরাও লিখতে পারেন না। এমন অনেকেই আছেন যারা থাকেন অগোচরে, আড়ালে, নীরবে, নিভৃতে। কাকার অনেক লেখা উনি নিজেই পুড়িয়ে ফেলেছেন কাকির সাথে অভিমান করে। কাকি কাকাকে বড্ড জ্বালাতেন। কাকা প্রায়ই বলতেন, “মা, বিয়ে আর সৃজনশীলতা কখনও হাত ধরে হাঁটতে পারে না। জীবনে যখনই নারীর আগমন ঘটে, তখনই সৃষ্টিশীলতা আস্তে-আস্তে কমতে থাকে। বিয়ে হচ্ছে তেলাপোকা ভর্তি কোনও একটা রুমে কিছু টিকটিকি ছেড়ে দেয়া—এক সময় ওরাও বংশবিস্তার করতে শুরু করবে। ঝামেলার সাথে যন্ত্রণার মিলনমেলা—নাও সামলাও ঠ্যালা! যাদের চাকরি কিংবা ব্যবসা বাদে আর কোনও কাজ নেই, বিয়েটা তাদের জন্যই। তারা এ পৃথিবীতে এসেছেই বউকে সময় দেয়ার জন্য। নারী আর বউ—দুইটি ভিন্ন জাতি। বউজাতি কখনও পুরুষের মুখের অপ্রিয় সত্য আর সৃষ্টিশীল কাজ সহ্য করতে পারে না। জানিস মা, আমার জীবনে যদি তোর কাকি না থাকত, তবে জীবনটাকে আরও সুন্দর করে উপভোগ করতে পারতাম। বউ আছে বলে এ জীবনে কত বই পড়া হল না! বউ আর বই—দুজন দুজনের চরম শত্রু। বউ এলে বই পালায়, বই এলে বউ পালায়। তোর কাকি যেদিন বাপের বাড়ি যায়, আমি সেদিন স্বর্গে চলে যাই। মেয়েরা যন্ত্রণা দিতে ও যন্ত্রণা নিতে খুব পারে! তোর কাকির কাছে আমার সকল লেখার চাইতে তার ঝগড়ায় জেতা, ঝামেলা সৃষ্টি করা, যন্ত্রণা দেয়া অনেক অনেক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিয়ের পর থেকে আজ পর্যন্ত কখনওই আমি নিজ থেকে ওকে কোনও ঝামেলা কিংবা যন্ত্রণা দিইনি। ও যে আমাকে ভালোবাসে, সেটা ঠিক। তবে সত্যটা কী জানিস তো, জীবনে ভালভাবে বাঁচার জন্য ভালোবাসার চাইতে শান্তিটা বেশি ইম্পরট্যান্ট রে মা! আমি সবসময়ই চেয়েছি, প্রয়োজনে সে আমাকে ভালো না-ই বা বাসুক, তবু যন্ত্রণা না দিক। হয়নি। মেয়েরা অশেষ মানসিক নির্যাতন করার অসীম প্রতিভাসম্পন্ন হয়। এতগুলি বছর কেটে গেল, অথচ ও এখনও ঠিক প্রথম দিনটার মতই আছে—দেবী মা জ্বালাময়ী! ইয়োরোপে পিএইচডি’টা করার খুব শখ ছিল; ইচ্ছে হয়েছিল, পড়াশোনার ফাঁকে ইয়োরোপটাও দেখে ফেলব—পারলাম না। তোর কাকির হুঁশিয়ারি ছিল, ইয়োরোপ যেতে চাইলে যেন ওকে ডিভোর্স দিয়ে তারপর যাই। এই এক ডিভোর্সের ভয়ে-ভয়েই এতগুলি বছর কাটল। সারাজীবনই ওর কাছে জিম্মি হয়ে রইলাম। ছেলেদের কখনও মেয়েদের বিয়ে করতে নেই—বিয়ের পর ছেলেরা গৃহপালিত জন্তুতে পরিণত হয়, জন্তুদেরও হয়তো আরও একটু স্বাধীনতা থাকে রে মা। কারও কাছে কড়ায়গণ্ডায় প্রতিটি নিঃশ্বাসের হিসেব দিতে হলে জীবন বাঁচে কী করে? বিয়ে এক বিশ্রী রকমের দাসত্ব, শৃঙ্খল, মৃত্যু। কাউকে প্রাণে না মেরে বিয়ে করিয়ে দিলেই যথেষ্ট—ওটা আরও বড় শাস্তি, সারাজীবনই তিলেতিলে মরতে হয়। এ দেশে ডিভোর্সের সোশ্যাল কস্ট অতটা হাই না হলে কত লোক ডিভোর্সের দিকে যেত, জানিস? প্রতি মুহূর্তে মরার চাইতে একবারই মরে জীবনের বাকিটা সময় বেঁচে থাকা ভাল না? দুটো মানুষ একসাথে থেকে-থেকে মরে যাচ্ছে, সমাজ তবু তাদের আলাদা থাকতে দেবে না। ওদের কষ্ট পেতে দেখবে আর আনন্দে বগল বাজাবে—ফালতু একটা সমাজ! অমৃতের সন্ধান যে কোথায়, জানি না, তবে আর যা-ই হোক, বিয়েতে নয়—বিয়ে তো এক অফুরন্ত বিষপাত্র!” কাকার আরও দুটো ডায়রি উদ্ধার করতে পেরেছিলাম, যেগুলি কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। (বোধহয় আমার বদ আম্মা রদ্দিওয়ালার কাছে বেচে দিয়েছেন, যদিও উনি সেটা স্বীকার করেন না।) ডায়রিগুলিতে কাকার বিভিন্ন রকম লেখার সাথে আমার নিজের অনেক লেখা আছে। কাকার সাথে এবং আমার নিজের সাথে নিজের কথাবলা, আবোলতাবোল বকা—অনেকটা ব্যক্তিগত, যেটা হয়তো কারও না জানাই ভাল বলে এখন মনে করছি। তবে, যেই মুহূর্তে এই মত বদলাবে, ঠিক তখনই আপনাকে সবগুলো ডায়রি দিয়ে দিব। ডায়রিগুলো চাওয়ার জন্য ধন্যবাদ, নীল। এই প্রথম আপনি আমার কাছ থেকে এমন কিছু চাইলেন যা আমি আপনাকে দিতে পারছি না। খুব কষ্ট হয় প্রিয় মানুষকে ‘না’ বলতে। আহা! যদি আমিও আপনার প্রিয় মানুষ হতাম, তবে আপনি আমার এই মুহূর্তের কষ্টটা বুঝতে পারতেন।
বেলাল কাকা আজ নেই। আমার শুদ্ধতম অনুভবে প্রতি মুহূর্তেই উনার অস্তিত্ব খুব প্রকট হয়ে থাকে। কাকা যেখানেই থাকুক, ভাল থাকুক।
ভাবনা: একশো তেষট্টি।
……………………………………..
সন্ধ্যার পর সোজা বাসায় চলে আসব। প্রমিজ! আপনি সারাদিন কাজ করবেন? করুন না! আমি সাথে থাকলে কী সমস্যা? একটা কথাও বলব না, একটুও জ্বালাব না। আমাকে বিশ্বাস করেন না কেন? যখন অন্য কোনও অফিস বা কোথাও যাবেন, তখন বাইরে দাড়িয়ে থাকব একদম লক্ষী মেয়ের মত! সবসময়, সবসময়ই আপনাকে দেখতে ইচ্ছে করে। কেন এতটা যন্ত্রণা দেন, রজত? জানেন কতটা কষ্ট হয়? কেন এমন করেন সবসময়? বলেন! সবসময়ই কি এমনভাবে কষ্ট দিতে হয় মানুষকে? এত্ত খারাপ কেন আপনি? আমি আপনার সাথে কথা বলব কথা বলব কথা বলব! ইসসসস্ ওমাগো আর পারি না ছেলেটাকে নিয়ে! সেদিন ভিডিও কলে ভীষন স্পর্শ করতে ইচ্ছে হচ্ছিল। আপনি তো চলে গেলেন! হনুমান একটা!
নী, আপনি কি জানেন, এই দুইটা দিনরাত সারাটা সময় আমাকে কী ভীষণ কাঁদিয়েছেন? এমনকি, এখনও আমার চোখে পানি। প্রায়ই খুব অস্থির হয়ে যাই। আপনি কেন এমন করেন আমার সাথে? কীসে কষ্ট পেয়ে আপনি আমাকে ব্লক করে দিয়েছেন? আমি তো আপনাকে কিছু করিনি। তবে কেন আমার নাম্বার ব্লক করে দিলেন?
কী প্রচণ্ডভাবে চেয়েছিলাম একটু দেখা করতে—আপনি চলে গেলেন। আমি কি খুব খারাপ দেখতে? নাকি বিরক্তিকর? কখনও দেখা হলে আপনাকে কিন্তু খুব খুব খুব মারব। কত মাইর জমা হয়ে আছে! আবার কবে দুর্গপুর আসবেন? কিছুই বলেন না কেন? বকা দেন অন্তত! গালি দিলেও চলবে। তবু কথা বলেন। আপনি নীরব থেকে-থেকে আমাকে নীরবে ‘নীরবতার কষ্ট’ দেন। দেখবেন, একদিন আমি সারা জীবনের জন্য নীরব হয়ে গিয়ে আপনাকে ‘নীরবতার সুখ’ দিব। নীরবতায় সত্যিই কি সুখ আছে? মনে তো হয় না। নীরবতা মানুষকে একেবারে অসহায় করে ছেড়ে দেয়। কত কী যে কষ্ট, অভিমান, ব্যথা জমা হয়ে থাকে নীরবতার অতল গহ্বরে! নীরবতার চাইতে নিষ্ঠুর কথোপকথন আর হয় না। সুন্দরতম দীর্ঘ যে কথাটি মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, তার চাইতে এক মুহূর্তের নীরবতা মানুষকে বেশি নাড়িয়ে দেয়। কথার অর্থ বড়োজোর কয়েকটা, আর নীরবতার অর্থ হাজার-হাজার। নীরবতার অর্থ উদ্ধার করার দায় যদি কারও দিকে একবার ঠিক মত ছুঁড়ে দেয়া যায়, তবে তার জীবনে কত যে অনর্থ এসে হাজির হয়! বড্ড বকছি, না? একদিন আর বকব না। সেদিন এই পাগলটাকে আর খুঁজেও পাবেন না।
৫টা মোবাইল আর ১টা ল্যাপটপ চুরি হয়েছে আমাদের আর পাশের বাসা থেকে। ল্যাপটপের শোকে পাশের বাসার একজন সকালে সুর করে মরাকান্না দিচ্ছিল। আমি ভোররাতে কেবল পৌনে এক ঘণ্টার জন্য ঘুমিয়েছিলাম, এর মধ্যেই চোর মোবাইলটা মেরে দিয়েছে—জানালার গ্লাস বাইরে থেকে খুলে, মশারি কেটে, বিছানার এক গাদা কাপড়ের নিচ থেকে নিয়ে নিল! চুরির ধরনধারণ সবই ঠিক আছে, কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপারটা হচ্ছে, ওই পাঁচখান মোবাইলের মধ্যে চোর শুধু আমার সিমটাই জানালার পাশে রেখে গেছে! ভাবা যায়! ওই চারতলার সানসেটের উপর দাঁড়িয়ে সিমটা বের করে আবার সেটা রেখে যাওয়া! দুনিয়ার সব উদ্ভট ব্যাপার আমার সাথে ঘটে কেন জানি না। জানেন না তো র, আম্মা সিমটা দেখে বলে, “চোর মনে হয় ভাবসে তুমি প্রেমট্রেম কর, তাই দয়া করে একরাতের জন্যও তোমাকে কষ্ট দেয় নাই!”
বদ আম্মা এগুলা কী বলে! আমি নির্লজ্জ, তাই বলে কি আমার লজ্জা করে না?
অপ্রয়োজনীয়রা এসে নিজ প্রয়োজন শেষে অপ্রয়োজনে চলে যায়—প্রয়োজনের সময় ওদের টিকিটাও খুঁজে পাওয়া যায় না। ওদের ভিড়ে প্রয়োজনীয়রা কাছে ঘেঁষতে পারে না। অথচ, ওদের প্রয়োজন মেটানোর চাইতে প্রয়োজনীয়দের প্রয়োজন মেটানো অনেক বেশি জরুরি। কেবল স্বার্থ আর প্রয়োজন নিয়েই যারা কাছে আসে, ওদের কাছে আসতে দিতে গিয়ে সত্যিকারের কাছের মানুষদের দূরে ঠেলে দেয়ার কী অর্থ?
বৃষ্টি—অসংখ্য বিচ্ছিন্ন ফোঁটায় বিন্দু-বিন্দু হয়ে ঝরে বলেই হয়তো এত সুন্দর স্নিগ্ধ কোমল।
রোজ ঘুম ভেঙে ব্লকের কথা মনে পড়লেই মনটা খারাপ হয়ে যায়। কেন আমাকে এখনও ব্লক করে রেখেছেন? আমি তো আপনাকে ফোনে জ্বালাই না। ফোন তো ধরেনই না, জ্বালাব কী করে? ফোন ধরেন না, আপনার কণ্ঠটা শুনতে পারি না, তবু তো মনে হত, আপনি আছেন আপনি আছেন, নাম্বার ডায়াল করলেই আপনার স্ক্রিনে আমার নামটা ভেসে উঠবে, প্রতিবার ফোন কেটে দেয়ার সময় আমার নাম্বার আপনাকে আমার অস্তিত্ব সম্পর্কে একটু হলেও জানান দেবে—আমার এ সামান্য সুখটাও আপনাকে কেড়ে নিতেই হল? শুধু ভালোই তো বেসেছি—এর শাস্তি এত? শুভ মনখারাপ সকাল।
আপনার জাঙ্গিয়া দেখতে মন চাচ্ছে! (পরিহিত অবস্থায়)……….ইসস্ অদৃশ্য হয়ে প্রিয়দের পাশে-পাশে থাকা যেত, সারাটা ক্ষণ দেখা যেত—তারা কী করে, কীভাবে কথা বলে, কীভাবে হাসে, কীভাবে কাঁদে, কীভাবে হাঁটে, কীভাবে খায়, কীভাবে ঘুমায়, অবসরে কী করে, ব্যস্ততায় কীভাবে ছুটে…….শুধু কী করে পটি করে—তা দেখার কোনও ইচ্ছে আমার নেই!
আমি ঠিক করেছি, আমি আপনার বিয়েতে যাব। আমার প্রিয় অন্য কারও প্রিয় হয়ে যাচ্ছে—এ দৃশ্য আমি দেখব না, তা কী করে হয়? ভয় পাবেন না, আমি আমার পরিচয় কাউকেই দেবো না। কেউ কখনও জানতেই পারবে না একজন মানুষ সেধেসেধে কতটা কষ্ট আপনার কাছ থেকে নিয়েছে, নেবে—সারাজীবন! আপনিও কখনও জানবেন না, এই পাগলীটার চাইতে বেশি কেউ কখনও আপনাকে ভালোবাসেনি, ভালোবাসে না, ভালোবাসবে না। শুনুন মিস্টার, হঠাৎ আমায় দেখে ফেললে বকাঝকা শুরু করে দেবেন না যেন! তাহলে কিন্তু আমি ভেউ-ভেউ করে কেঁদে দুনিয়ার মানুষ জমিয়ে ফেলব! শেষে কিন্তু খাবারে শর্ট পড়ে যাবে! হুমমম্!
ভাবনা: একশো চৌষট্টি।
……………………………………..
একটা ভিডিও কল দিলে কি কারও খুব বিরক্ত বেশি লাগবে? একটা কলে সত্যিই কী-ই বা এসে যায়? একটা ‘দেখাদেখি’ কল দিয়েই দিই না! এএএইইই সুরথ! একটু শুনেন নাআআআ!
প্রিয়, আজ কি বিয়ে? আমার তো এমন কেউ নেই, যার কাছ থেকে জানব, তাই আপনাকেই জিজ্ঞেস করলাম। দোকানে গিয়েছিলাম সাড়ে নয়টায়, এত লোক ছিল আপনাকে ফোন দিতে ইচ্ছে করেনি, তাই কথাও বলতে পারলাম না। যদি সত্যিই আজ আপনার বিয়ে হয়ে থাকে, আপনাকে একটু দেখতে চাই। বিয়ের আগে-আগে মানুষকে দেখতে কেমন লাগে, আমার দেখতে ইচ্ছে করে।
শীৎকারে-শীৎকারে আচ্ছন্ন সমস্ত অস্তিত্ব কামার্ত চিৎকারে কেবলই অনুভূতিশূন্য হয়ে যাবে বারবার। মনে হবে, কোথায় কষ্ট? কীসের কী!…….তবে সে চিৎকার? সে তো উপহাস মাত্র! নিজের প্রতি উপহাস, ঠাট্টা। আর সাথে যদি থাকে মনোঃকষ্ট, তবে? ধ্যত্ ছাই! হায়, শরীরতাপে জীবন মিলায়!
আজকের ‘সে’ আর আমার ‘সে’কে একটু না, বেশি করেই দেখতে চাই, এতটা চাই—তবু কে শোনে আমার কথা! কার কীসের দায়? বুঝি সবই। শোনেননি তো! ঠিক আছে, সময় নাকি সব বলে দেয়!
আপ্নের পিলিজ লাগে প্রিয়, দেন না একটা ছবি! আমি নতুন জামাইকে দেখব! ইসসসসসস্ জামাই!
বহু চেনা পুরনো পথেই—আবারও হাঁটা…….এত চেনা, তবুও যেন, অনেকটাই অচেনা! পারবে তো বন্ধু হাঁটতে সে পথ? হাঁটতে গিয়ে ভুল পথেতে হোঁচট খেলে কখনও ভীষণ, খবর দিয়ো—আসব ছুটে!
শুভরাত ‘সে’। শুভরাত ‘সু’। দুজনকে একসাথে দেখতে ইচ্ছে করছে। আমার ইচ্ছে করলেই বা কার কী?
একমাত্র তার ভালোবাসাই নিখাদ, যে কষ্টের মতো করে ভালোবাসে।
সত্যিই, কেউ কখনও কষ্টের মতো করে ভালোবাসতে জানে না। অমন করে ভালোবাসলে কেউ কখনও ভালোবাসার মানুষটিকে ছেড়ে যেতে পারত না। কষ্টের মতন এমন নিপুণ প্রেয়সী আর কে আছে?
পড়লে প্রেমে শুধিয়ে নিয়ো,
তুমি আমার কষ্ট হবে তো?
তুমি আমার কষ্ট হয়েই থেকো।
হাতটা ধরো সুখ হয়ে নয়, কষ্ট হয়ে।
অনুভূতির পূর্ণতা সবাইই চায়। হায়, একবার সে পূর্ণতা পেয়ে গেলে তা দিয়ে কেবল পূর্ণ অনুভূতিই অনুভব করা যায় না, অনুভূতির শূন্যতাকেও ধারণ করা যায়। তখন হৃদয় ছিঁড়ে একাকার হয়ে যায়, তবু সে পূর্ণতা আর হৃদয় থেকে হারায় না।
ইসসস্ এমন যদি হত, ‘একটা’ সু-কে ইচ্ছে হলেই ‘অনেক’ সু করে ফেলা যেত! আপনার মত মানুষ অনলি ওয়ান পিস্ হয়ে দুনিয়ায় আসাটা খুব অন্যায়।
একটা ভিডিও কল দিয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে আপনারা টোনাটুনি কী করছেন। গোসল করলাম—অমনিই অনুভূতি ধুয়ে গেল। আহ্ শান্তি!
আমার ডান পাশের বালিশটাতে কাউকে পেতে ইচ্ছে করছে যেন ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দেয়া যায়! ঘুম আসছে না, নির্ঘুম আসছে।
প্রচণ্ড ভালোবাসায় মোড়ানো স্তব্ধ ঘৃণা…….
কিংবা, তীব্র ঘৃণায় মোড়ানো নিঃশ্চুপ ভালোবাসা…….
ভিন্ন। তবু কোথাও যেন একটা গাঢ় মিল।
বেঁচে থাকুক—ঘৃণা, তাচ্ছিল্য, নির্দয়তা।
বেঁচে থাকুক—ভাললাগা, ভালোবাসা, মায়া।
এ দু’দলে ভর করেই তো বেঁচে আছে জীবন,
টিকে আছে পৃথিবীটা।
সত্যিই, আমার মহান উদারতার, নিঃস্বার্থ ভালোবাসার প্রাপ্য অসম্মান তো থাকারই কথা! খুব স্বাভাবিক। মেনে নিয়েছি।
রাগে দাঁত দিয়ে-দিয়ে একটা কুয়া খনন করেছি! সেটাতে আপনাকে চুবাইতে মঞ্চায়!
খবরদার সাঁতার শিখবেন না কক্ষনো, জীবনেও না—অন্তত যেন চুবানো যায়!
ছবি দেয়াটা হাস্যকর। মাঝে-মাঝে হাস্যকর হতেও ইচ্ছে করে, তাই আপনি চাহিবা মাত্র সেলফির মালিককে আপনাকে দিয়ে দিতে বাধ্য থাকি (ছবিতে)!
খুব শান্তি পাই, যখন আমার চারপাশ জুড়ে আমার মত আর একটাও মহিলা গাধার দেখা পাই না। এ বড় উপভোগ্য! গাধা হয়ে বাঁচার অন্য রকমের একটা মজা আছে। যারা গাধা না, তারা এটা কখনও বুঝবে না।
ভাবনা: একশো পঁয়ষট্টি।
……………………………………..
সেদিন চার লক্ষ টাকা নিয়ে চন্দ্রনগর থেকে রিকশায় করে হাহাহিহি করে-করে অর্থালয় ব্যাংকের ব্যাঘ্রকানন শাখায় একাই টাকা জমা দিয়ে বাসায় ফিরছি…….এমন সময়, এক বান্ধবীর মেসেজ: “তুই কই এখন? বাসায় আয়। খুব জরুরি!” সে এএসপি, বর্তমানে সিআইডিতে আছে। ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “স্যার, কেন এত জরুরি তলব?” বলল, “একটা বিগ অ্যামাউন্ট এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে জমা দিব, একা সাহস পাচ্ছি না, তুই একটু আয়।” ভাবলাম, অনেক টাকা। বললাম, “কত!?” রিপ্লাই এল, “এক লক্ষ!”
হায় ঈশ্বর! বড়লোকের গাড়িওয়ালা বাড়িওয়ালা বউ, মাসে চল্লিশ হাজার টাকা ইনকাম-করা দুর্ধর্ষ এএসপি! সে কিনা এক লক্ষ টাকা বহনের জন্য আমার সাহায্য চাইছে! বাড়িহীন, যুগে শূন্য টাকা ইনকাম-করা আজাইরা বেকার দরিদ্র আমি বেচারি এই ব্যস্ত শহরে ঢ্যাংঢ্যাং করে চারলাখ টাকা একাই বহন করি! আসলে আমার মত এত অসচেতন হওয়া, বা ওর মত ওরকম অতি সচেতন হওয়া—কোনওটাই ঠিক না।
অনেক বছর আগের কথা। ক্লাস ফাইভে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়ে একটা ভাল স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম। ক্লাসের প্রথম দিন ফার্স্ট বেঞ্চে বসতেই এক মেয়ে এসে বলল, “ফার্স্ট বেঞ্চে বসতে ইচ্ছে হলে পরীক্ষায় ফার্স্ট হয়ে বসো।” সেই ছোটবেলাতেই এ কথায় খুব অপমানিত ও আহত হয়েছিলাম। সেদিন একটাও শব্দ না করে পেছনে গিয়ে বসেছিলাম। পরীক্ষার রেজাল্টের পর ফার্স্ট বেঞ্চে আমার জায়গাটা পাকাপোক্তভাবেই করে নিয়েছিলাম, কিন্তু আমার সে বান্ধবী সে যোগ্যতা চিরতরেই হারিয়েছিল। এত বছর পর এই সেদিন কথাটা তাকে মজা করে মিষ্টিভাবে বললাম। আহা! ওর অপমানিত চোখজোড়া যেন আমাকে তাড়া করছিল! হুংকার দিয়ে বসল, “স্কুলে ফার্স্ট হওয়া তো তেমন কিছু না, ছাগলও ফার্স্ট হয়। আজ দ্যাখ, তুই কোথায়, আর আমি কোথায়!” স্কুল জীবনের সবটা সময় একটা মুহূর্তের জন্যও ওর সাথে আমি খারাপ ব্যবহার করিনি, এতটুকু কষ্টও কখনও দিইনি। মানুষ আমার সাথে যতই অন্যায় করুক, কষ্টটা আমার ভেতরে থাকে খুব করে, কিন্তু ভালোবাসাটা না দিয়ে পারি না। সেদিনও ওকে কিছু বললাম না। নিজেকে প্রবোধ দিলাম, এই যে ও চাকরি দিয়ে মানুষ যাচাই করে, সে জন্যই তো ও মনের সামান্য হাওয়াতেই কাঁপে, আর মনের তীব্র ঝড়ও আমাকে চুল পরিমাণও নড়াতে পারে না—এটাই ন্যাচারাল জাস্টিস! আজ আমার বিসিএস-ফিসিএস অসহ্য লাগে বলে…….
হায়! আমার হা-কে একটু ধর্ষণ (পড়তে হবে, দর্শন…….হিহিহি) করতে মন চাচ্ছে।
ইচ্ছেরা সব এমন উদ্ভট হলে আমি কী করব? আমার কী দোষ? এই যেমন, পরশু সকালে কী দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিল, অভয় দিলে বলি…….না থাক!
অনবরত স্মাইলি ইমো দিয়ে যাচ্ছেন কেন? এই হাঁস! যাও তো বাবা, একটু সাঁতার কেটে আসো। তবে ডানা ভিজিয়ো না, ঠাণ্ডা লেগে যাবে।
আবার! রোবট হয়ে গেছেন, না? একদম কামড়ায়ে ইমোটার দাঁত ভাইঙ্গা ফেলব! চিনেন আমারে??
আচ্ছা হাশমি, এক্স কি আসলেই খুব মজার? সেটা হয়তো অবশ্যই, তা না হলে সমস্ত পৃথিবী এর জন্য এমন উন্মাদ হবে কেন? তবে এক্স-এ যা দেখায়, যতটা দেখায়, সেটা মনের মধ্যে বাড়তি এক্সপেক্টেশনের চাপ সৃষ্টি করে। অতটা অতকিছু অতভাবে আসলেই বাস্তবে করা হয়ে ওঠে না। ক্যামেরার বাহাদুরি কিংবা শ্যুটিং বা ভায়াগ্রা জাতীয় ওষুধের কারসাজিকে যদি কেউ না বুঝে তার নিজের এবং সঙ্গীর কাছ থেকে এক্স-এর পারফরমেন্স আশা করে, তবে হতাশা আসবেই। রতিকলা অন্যান্য কলার মতই রপ্ত করার জিনিস, সাধনার বস্তু। এ কলা যতটা শারীরিক, ততধিক মানসিক—ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের উপর ব্যক্তির তৃপ্তি অতৃপ্তি অনেকটাই নির্ভরশীল। যেটা বলতে চাচ্ছি, এবার সেটায় আসি। সেক্স কি প্রায় ক্ষেত্রে কেবলই একটা শারীরিক ব্যাপার, যা নেশায় পরিণত হয়ে গেলে বারবার করতে ইচ্ছে করে, সে যার সাথেই হোক না কেন? নাকি সেক্স ভালোবাসার উপর নির্ভরশীল, যার প্রতি ভাললাগা বা ভালোবাসা থাকে, শুধু তার সাথেই করতে ইচ্ছে করে? প্রেম, ভালোবাসা, ভাললাগা, মোহ, সেক্স—এগুলো একটাকে ছাড়া অন্যটা থাকতে পারে। এদের মধ্যে তেমন কোনও পারস্পরিক নির্ভরশীলতা নেই। এ পাঁচ ভিন্ন অনুভূতির উদ্রেক এক বা একাধিক মানুষের জন্য ঘটতে পারে। বিন্দুমাত্রও মানসিক টান ছাড়া সেক্স হতে পারে, আবার সেক্সের লেশমাত্রও নেই—এমন সম্পর্কও তীব্র ভালোবাসায় জড়ানো থাকতে দেখি। কারও সাথে সেক্স করতে চাওয়ার ইচ্ছেটা কী কী বিষয়ের উপর নির্ভর করে, সেটা নিয়ে ফ্রয়েড ও তাঁর সমমনা বন্ধুরা অনেক কথাই আমাদের জানিয়েছেন; তবে মোটা দাগে বলতে পারি, ক্ষুধাতৃষ্ণা নিবৃত্তির ইচ্ছের মত সেক্সের ইচ্ছেটাও খুবই স্বাভাবিক একটা ইচ্ছে এবং যে কোনও পরিচিত সুস্থ সম্পর্কের ক্ষেত্রে (এমনকি, অপরিচিত সুস্থ সম্পর্কের ক্ষেত্রেও) এ ইচ্ছেটা জাগতে পারে। কেন পানি খেতে ইচ্ছে করে, এটার জবাব যেমনি—‘তৃষ্ণা মেটাতে’; তেমনি কেন সেক্স করতে ইচ্ছে করে, এটার একমাত্র জবাবও—‘তৃষ্ণা মেটাতে’। ব্যাপারটাকে যত বেশি সোশ্যাল ট্যাবু করে রাখা হবে, সমাজে তত বেশি অপরাধ প্রবণতা বাড়বে। আলাদা-আলাদা মানুষের সেক্সুয়াল ফ্যান্টাসিগুলিও আলাদা-আলাদা হয়। শারীরিক গঠন ও মানসিক প্রস্তুতির উপর নির্ভর করে যৌন অভিজ্ঞতা একেক রকম হতে পারে। পারস্পরিক ইচ্ছা আর শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতার ভিত্তিতে যেভাবে খুশি, যতবার খুশি, যতক্ষণ খুশি যে কোনও ফ্যান্টাসিই পূরণ করা সম্ভব। তবে একটা ব্যাপার খুব খুব খুব সত্য। যদি শরীরের সাথে মনের সংযোগটা থাকে, তবে রতিকলা ষোলোকলাই পূর্ণ হয়।
আরও কী কী যেন বলার ছিল, ভুলে গেছি। ধ্যত্! কখনওই কোনও কিছু গুছিয়ে বলতে পারি না। ১০% বলি আর বাকিটায় কী কী যেন হয়ে যায়।
আচ্ছা হাশমি, এত-এত আয়োজনে, এত-এত নিমন্ত্রণে, এত-এত আলাপনে, আমাকে একটা ওয়েডিং ইনভাইটেশন কার্ড পাঠানোর কথা মাথায় আসেনি? কেবল একটা কার্ড পাঠাতে ঠিক কতটা অনুভূতির প্রয়োজন হয়? অতটুকু অনুভূতিতেও কি ‘অন্য কিছু’র প্রয়োজন পড়ে? জানি, আমি এতটাই তুচ্ছ যে এই বিশাল আয়োজনের ক্ষুদ্রতম অংশেও আমার উপস্থিতির জন্য আপনার মনের কাছ থেকে একটা ছোট্ট ‘হ্যাঁ’ পাওয়ার যোগ্য আমাকে আপনার মনে হয়নি। শুধু তারিখটাই তো জিজ্ঞেস করেছিলাম, আর তো কিছুই নয়, সেটাও বলেননি।
আহা, এমন যদি হত, ইচ্ছে হলেই যখন-তখন সব প্রিয়কে দেখতে পাওয়া যেত!
ভাবনা: একশো ছেষট্টি।
……………………………………..
প্রত্যেক মেয়েরই সত্যিই একটা আলাদা অস্তিত্ব চাই। যা ওর বাবার নয়, যা ওর ভাইয়ের নয়, যা ওর স্বামীর নয়, যা ওর সন্তানেরও নয়—যে ঠিকানা কেবলই ওর, একান্তই ওর, নিভৃতে ওর, নির্জনে ওর; এমন আশ্রয় ওর চাই যে আশ্রয়ে থাকার অস্থিরতা নেই, চলে যাওয়ার যন্ত্রণাও নেই। এমনই একটা ছোট্ট ঘর চাই ওর। সে ঘরের নাম হোক ‘দোভানা’, মানে ‘উপহার’। মেয়েটা নিজেকে প্রতি মুহূর্তেই কথা দিক, ওর অমন একটা ঘর হবে, সে ঘরে ও চুল ছড়িয়ে হাঁটলেও কেউ বলবে না, এই লক্ষ্মীছাড়া মেয়েটা চুল বাঁধে না কেন? সে ঘরে কাজল কেনার পয়সা চাইলে কেউ বকবে না, চোখে এত কাজল দেয়ার কী আছে?—হোক না সে স্বপ্ন পূরণের কোনও সম্ভাবনা নেই, হোক নাহয় তা নিছকই দিবাস্বপ্ন; ধরেই নিচ্ছি, মেয়েটা বড় অহেতুক বেয়াড়া স্বপ্নচারী—তবু, তবুও ওর প্রিয় কাল্পনিক দোভানা ওর স্বপ্নের অমরাবতী, সেখানে সে বড় ভাল থাকবে, হাসি নিয়ে বাঁচবে—ওর সেই ছোট্ট ঘরে সবার আন্তরিক নিমন্ত্রণ থাকবে। মেয়েরা বাঁচুক—স্বপ্নে, শুধুই শেকলে নয়!
মানুষ একটা সময় খারাপথাকার সমস্ত আয়োজন নিয়েও কীভাবে যেন ভীষণ ভাল থাকে। সে সময় জীবনের চারপাশ থেকে লোকজন কেবলই বলতে থাকে—এই শোনো! তুমি ভাল নেই, সত্যি বলছি তুমি ভাল নেই। তুমি ঘুমিয়ে আছ, উঠো! এমনি করে সময় বয়ে যায়। তারপর আবার এক সময় ভালথাকার সমস্ত উপকরণ নিয়েও কেন জানি মানুষ খুব খারাপ থাকে; সত্যিই খারাপ থাকে। তখন আবার চারপাশটা নির্লজ্জের মত বলে যায়—তুমি ভাল আছ, তুমি দারুণ ভাল আছ। তোমার এই দুঃস্বপ্নের দেয়াল ভেঙে দেখো, কী চমৎকার আছ তুমি! কোনওভাবেই আর তাদের বোঝানো যায় না, সে সত্যিই আর ভাল নেই…….মেয়ে! সময় থাকতে সময় বোঝো!
অনেক মেয়েকে দেখি, কোনও পেশায় যুক্ত হলে বা বিশেষ কেউ হয়ে যেতে পারলে কী কারণে যেন সে একটা বিশেষ রূপ ধারণ করে ফেলে—একটা রুক্ষ দাম্ভিক রূপ। ও ধরেই নেয়, জীবনের সমস্ত শক্তি দিয়ে হলেও যেন বাহ্যিকভাবে দেখাতেই হবে—সে কে, সে কী, সে কেমন! কিন্তু কেন? কোনও একটা কাজে যোগ দিলেই ‘মেয়েরা’ কেমন যেন ‘মেয়েরূপী ছেলে’ হয়ে ওঠে। কিন্তু কেন? উঠতেই হবে কেন? শক্তিপ্রকাশে কেন চিৎকার করতে হবে? কেন রুক্ষ হতেই হবে? মেয়েরা থাকবে মেয়েদের মতো—শান্ত, কোমল, স্নিগ্ধ। মেয়েরা নিজের যোগ্যতায় প্রতিষ্ঠিত হবে, সমাজ-দেশের জন্য কাজ করবে, সুযোগ আর ইচ্ছে থাকলে যে কোনও পেশায় যোগ দেবে, যে কোনও অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে, প্রয়োজনে অগ্নিমূর্তি ধারণ করবে—সবই ঠিক আছে, কিন্তু অমন রূপ কেন বাহ্যিকভাবে ধারণ করতেই হবে? শক্তিটা থাকবে ভেতরে…….তীব্র আগুনের মতো জ্বলবে—ছুঁয়ে দিলেই ছাই হয়ে যাবে সবকিছু! মেয়েরা এমন হোক না!
মায়াবী মেয়েটা ভেতরের জ্বলন্ত কয়লাটাকে সুন্দর মনোরম ফয়েলে মুড়িয়ে ভেতর থেকে হঠাৎ বের করে সঠিক সময়ে, সঠিক প্রয়োজনে, সঠিক জায়গায় নিক্ষেপ করে দেবে। অকারণে বিশেষ বাহ্যিক লেবাসে নিজেকে মোড়ানোর কী প্রয়োজন? একজন বড় পুলিশ অফিসারকে কেন সামান্য বাদামওয়ালার সাথে খ্যাঁকখ্যাঁক করে গলা ফাটিয়ে বলতে হবে—“জানিস আমি কে? আমি কী করতে পারি, জানিস তুই?” অনেকে আবার মনে করেন, সমস্ত অর্জনের একমাত্র প্রকাশ যেন পোশাক! বিশেষ পোশাক, বিশেষ স্টাইলে না পরলে তিনি যত বড় বিশেষ কেউই হন না কেন, তার অবস্থান গরিমা খানদান সবই যেন ভেস্তে যাবে, ভেসে যাবে ভরা মেঘনায়। কেন বাপু? যে অর্জনটা করেছ, তা তো নিজেই কথা বলবে—ওই বেচারার গলাটা কেন অকারণে চেপে ধর? কতো ছোটলোকই তো বড় পোশাক পরে ঘুরে বেড়ায়। এতে কি ওরা বড় হয়ে যায়?
একটা মিষ্টি মেয়ে, মিষ্টি ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে, মিষ্টি পোশাক পরে, মিষ্টির দোকানে গিয়ে, মিষ্টি খেয়ে, মিষ্টির প্রশংসা করে, মিষ্টি কথা বলে, মিষ্টি হেসে, মিষ্টি চোখে—এক লক্ষ টাকা জরিমানা করে দেবে!
কোনও সমস্যা!?
ভাবনা: একশো সাতষট্টি।
……………………………………..
যদি তোর ডাক শুনে কেউ সেলফি না দেয়…..তবে তুইই দিয়ে দে!
রবীন্দ্রনাথ আদেশ করেছেন, কোন স্পর্ধায় উপেক্ষা করি?
একটা ছবি দিলে মনে হয় ভূমিকম্প হয়! ছবি নিয়ে আকাশছোঁয়া ভাবসসস্! শুনুন চৌধুরী সাহেব…….না, কিছু না কিছু না!
হয় তো এমন, হয় না? লোনাজলেরা হাহা শব্দে হেসে উঠে, আর হাসিগুলো ডুকরে কেঁদে মরে!
“এইটা কোত্থেকে কিনছিস?”
“যমুনা ফিউচার থেইক্কা আম্মা……”
“ওওও……ওই মার্কেটটা, যেইটাতে মানুষের চেয়ে চেয়ার বেশি?”
“আজ্ঞে হ্যাঁ!”
আম্মা এইগুলান কী বলে!
একটা আজব জিনিস কিনলাম। ভাবসিলাম, রশি দিয়াই বাঁইধা রাখা যায় না যেইখানে, সেইখানে রশিহীনে কোনও কাম হইবে না! ওইগুলান দূরেই থাক। তবু কী যেন মনে করে কিনে ফেললাম। পরে দেখলাম, জিনিসটা সেই কাজের! সুন্দর আকৃতি দিতে না পারলেও কষ্টেকুষ্টে অন্তত ‘ধরে’ রাখতে পারে! আজব বক্ষবন্ধনী!
তোমার এই ভার্চুয়াল জগৎ, নিজস্ব কিছু চিন্তাভাবনা, আর কিছু ব্যক্তিগত ব্যাপার—তোমার ‘সে’-এর জীবনে যে কী দুর্বিষহ যন্ত্রণা বয়ে আনবে, তার ছায়াও তুমি কখনও আঁচ করতে পারবে না। সে যদি অতি বোকা কিংবা অতি বুদ্ধিমতী হয়, তাহলে ব্যাপারটা তুমি বুঝবে না, কিংবা সে-ই তোমাকে বুঝতে দিবে না; কিন্তু মাঝামাঝি টাইপের হলে তুমি তার যন্ত্রণার অন্তত একবিন্দু হয়তো বুঝতে পারবে। এমন কিন্তু মোটেও নয় যে তোমার ভালোবাসার জায়গাটাতে তার সমর্থন থাকবে না বা তোমায় ওই কাজে বাধা দেবে, তবুও এটা এক অন্য জাতের যন্ত্রণা—যে যন্ত্রণাটা আয়েশে থাকবে বলে বুকের ভেতরের অনেকটা জায়গা খালি করে দিতে হয়। তুমি না পারবে সহ্য করতে, না পারবে ওকে কিছু বলতে। তুমি ওকে কিছুতেই বুঝবে না, ও তোমাকে কখনওই বিশ্বাস করবে না। তোমার কাজ, তোমার সৃষ্টি, তোমার গর্ব—সবকিছুই একেবারে ধুলোয় মিশে যেতে থাকবে। তুমি না পারবে ওকে ছাড়তে, না পারবে ওকে ধরতে। প্রতিটি নিঃশ্বাস নেয়ার সময়ই অজানা কী এক ভয় তোমাকে গ্রাস করবে—তুমি নিজেই কখনও বুঝবে না সে ভয় কীসের! নিজের প্রতি অসীম আস্থাহীনতা চলে আসবে, গুছিয়ে ভাবতে পারবে না, গুছিয়ে কাজ করতে ইচ্ছে করবে না। তার উপস্থিতি এবং অনুপস্থিতি—দুইই তোমাকে নিরন্তর ক্লান্ত করে রাখবে। স্বাভাবিক জীবনযাপনের ছন্দটা এতোটাই পতিত হবে, বেঁচে থাকাটাই তোমার কাছে অর্থহীন দাসত্ব মনে হবে।
ছয়সাত মাস আগের কোনও এক রাতের মধ্যভাগে এসব বলতে ইচ্ছে হয়েছিল। বলি নাই কিন্তু! বললে তো ‘আপনি’ করে বলতাম! (জীবনটা এভাবে কাটছে না তো? যে করেই হোক, প্লিজ ভাল থাকবেন!)
বন্ধ দরজার
এপাশ দেখে না
ওপাশে কী হয়।
ওপাশ দেখে না
এপাশে কী হয়।
একই দরজা দুই ঘটনা আড়াল করে,
ভিন্ন দুই দৃশ্যপটে দুই আনন্দ কষ্টে বাঁচে।
রক্তে আতংক কিংবা রক্তেই শান্তি। রক্তই ভাঙে যে হৃদয়, সে হৃদয় তবু রক্তেই মাখামাখি!
রিপ্লাই নেই! একটাও নেই! মরে গেছেন নাকিইইইইই? প্লিইইইজ্জজ্জজ্জ……আমাকেও সাথে নিয়ে যাননন্! শুধু তারাই বাঁচুক—যাদের সাথে অনুভূতির সখ্যতা কম।
মানুষের কষ্ট হয় না, না? আপনি একটা জ্বিন! সেদিন যে রশিহীনের কথা বলেছিলাম, সেটা আপনাকে পরায়ে দিতে ইচ্ছা করতেসে। আপনাকে ধাক্কা মাইরা লঞ্চের চেয়ার থেইক্যা পানিতে ফালায় দিই? সাঁতার শেখার নাম নাই, খালি পানির উপর দিয়া দৌড়াদৌড়ি! নামেন লঞ্চ থেকে! নামেন! আশেপাশে এমন কেউ আছে যে সহৃদয়? (কুৎসিতদর্শন সহৃদয়া হলেও চলবে!) ওকে বলেন, আপনাকে এক ধাক্কায় পানিতে ফেলে দিতে, বিনিময়ে সে যা চাইবে, তা-ই দিব! এত কিছু বলি, তবু যদি মানুষ সাঁতারটা একটু শিখে, মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে!
একটু লাইভ দেখতে ইচ্ছে হয়, কেবিনে গিয়ে একটা ভিডিও কল…….
শপিং-এ বের হব, এমন সময় আম্মা বলল, “একটা ছবি তুল তো!” (নতুন শাড়ি পরলেই উনি ছবি তুলেন!)
ক্লিক্ করব, হঠাৎ দেখি, আম্মা হাত বাঁকা করে রেখেছেন!
“হাত সোজা করেন। হাত বাঁকা কেন!?”
“আরে, মডেলদের দেখিস না? শাড়িটা ধরে এভাবেই হাতটা রাখে। নে তুল।”
ওমাগো! এই মহিলা বলে কী! বুড়ি বেটি! চুল পাইক্কা শণপাপড়ি হইয়া গেছে, আর তিনি এখন আসছেন মডেলদের পোজ দিতে!
“মডেলরা এমন করলে মডেলিংই হয়। কিন্তু আপনেরে তো লাগতাসে হাতভাঙা আতুরের মত!”
(ছিঃ শৈলী! মা’কে এভাবে বলতে নেই।)
আম্মা আমার দিকে কটমট চোখে তাকায়ে বলল, “তুই এইসবের কী বুঝবি? আনস্মার্ট খ্যাত মেয়ে কোথাকার! তোরে কোথাও নিয়া গেলে তো আমারই লজ্জা লাগে!”
আম্মা এইগুলান কী বলে! হায় হায়! কেন যে সেধেসেধে অপমান নিতে গেলাম! তবে, কথা কিন্তু আম্মা ঠিকই বলেছেন!
নীল লাল নীল বেগুনি লাল বেগুনি সবুজ লাল সবুজ ধূসর লাল ধূসর—জীবন আমার!
নানান রঙের কষ্ট আসে…….
যে রঙেরই কষ্ট আসুক,
ক্ষত হৃদয়ে রক্ত ঝরে—ঝরেই ঝরে!
ভাবনা: একশো আটষট্টি।
……………………………………..
ইয়া লম্বা কুচকুচে কালো পেনিস ধরে এক ডাক্তার দাঁড়ানো (নিজের না, এক রোগীর), সাথে আরও পাঁচজন—ওটি’তে ঢুকতেই চোখে পড়ল! আমাকে দেখেই প্রায় চিৎকার করে একজন বলে উঠলেন, “কী ব্যাপার কী ব্যাপার!?” যে ডাক্তার আমাকে সাথে নিয়ে এসেছিলেন, তিনি কিছুটা লজ্জিত হয়ে বললেন, “ওকে সরি! একটু পরে আসছি।” একটু পর আবার ওটি’তে ঢুকলাম। সেইরকম সুদর্শন দুই ইয়াং ডাক্তার সেখানে বসা।
: কী সমস্যা?
: বলেছিই তো!
: মানে!? কাকে বলেছেন!?
: একটা কাকে যেন বলেছি, মনে নাই!
এর মধ্যেই একটু বয়স্কা একজন মহিলা ডাক্তার দৌড়ে এসে বললেন, “অ্যাই মেয়ে, কাগজপত্র কোথায়?”
বললাম, “নেই ম্যাম!”
উনি এমনভাবে চলে গেলেন যেন আমি কাগজপত্র দেখিয়েছি।
যে ডাক্তারের সাথে আমার কথা হয়েছিল, তিনি এলেন। বাচ্চা দুই ডাক্তারকে (উনি সম্বোধনই করেছিলেন, “এই বাচ্চারা শোনো……” বলে) বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন হাতের নখের ইনফেকশনের জন্য কীভাবে কতটা কেটে ফেলতে হবে।
ওই দুই হ্যান্ডসাম ডাক্তারের একজন: “আপনার সাথে কে এসেছে?”
“কেউ আসেনি।”
“মানে? আপনি একাএকাই চলে এসেছেন সার্জারি করাতে!?”
“হুমমম্……”
“আপনার যদি জ্ঞান না ফিরে তখন আপনাকে নিয়ে আমরা কী করব!?”
“জ্ঞান ফেরা অবধি আপনাদের কাছেই রাখবেন।”
দেখলাম, ওদের একজন অন্যজনের দিকে বিস্ময় আর বিরক্তির চোখে তাকাচ্ছে। আর আমি সবটা ওটি’তে একবার চোখ বুলালাম। একসাথে তিন বেডে তিনটা অপারেশন চলছে। এক লোকের পেটের মাঝখানে বিশাল লম্বা একটা স্টিলের শিকের মত কিছু একটা দিয়ে সমানে পাঞ্চ করা হচ্ছে। ওটি’র দরজা খোলা—আসাযাওয়া চলছে। অপারেশন করতে কেন এত দেরি হচ্ছে? এ বলে চ্যাঁচ্যাঁতে-চ্যাঁচ্যাঁতে এক রোগীর আত্মীয়ও ঢুকে পড়লেন, উনাকে কিছুতেই বুঝানো যাচ্ছে না। এই জাতীয় আত্মীয় হাসপাতালে আসেনই ঝামেলা পাকাতে। একজন ডাক্তারকে শুনলাম এক রোগীর আত্মীয়কে ডেকে এনে বলছেন, “ভাই, ছেলেটা কয়দিন ধরে হাগে না!? অপারেশনের সময় হাইগ্গা দুনিয়া ভরায় ফেলসে!” আমার ঠিক পাশের বেডের এক ডাক্তার যতটা মনোযোগ দিয়ে কাজ করছেন, ঠিক ততটা মনোযোগ দিয়েই আমার আর আমার ডাক্তারের মধ্যকার কথোপকথন শুনছেন, মিটিমিটি হাসছেন। (ধরে নিলাম, উনি খেয়াল রাখছেন পাশের বেডের রোগীও যেন ঠিক সেবাটা পায়।) আরও কত কী যে হচ্ছে, এর মধ্যে দুই সুদর্শনের একজন বেডে একটা সাদা চাদর বিছিয়ে বললেন, “শুয়ে পড়েন।”
“শুতেই হবে!? চাদরটা ধোয়া তো!?”
“কী…….!?”
“না, কিছু না।”
আমি শুচিবায় মানুষ, একগাদা ঘেন্না নিয়ে শুয়ে পড়লাম।
“একা যে এসেছেন, আপনার পার্সটা রাখবে কে?”
একজনের সামনে পার্সটা ধরে বললাম, “নিন, আপনার কাছেই রাখুন!”
“আমি রাখব মানে!?”
“হুম্ রাখেন! হাতটানের অভ্যেসটভ্যেস নাই তো!?”
এতক্ষণ সমস্ত কিছু ভদ্রভাবে সহ্য করলেও ভদ্রলোক এবার বেশ চটে গেলেন।
“হোয়াট ডু ইউ মিন!?”
“যা বুঝেছেন, তা-ই বলেছি।”
“হাউ ডেয়ার ইউ সে দ্যাট! ডোন্ট ট্রাই টু বি ওভারস্মার্ট! ওকেএএএএ…….??”
“ও-এম-জি! আমি তো স্মার্টই নই, আবার ‘ওভার’ হব কী করে!? দেখলেন না সাদাসিধেভাবে এসেছি বলে আমাকে আপনারা পাত্তাই দেননি! তিন ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রেখেছেন!”
“আপনি কি ভাবছেন দামি পোশাক পরে এলেই আমরা আপনার অপারেশনটা সাথে-সাথেই করিয়ে ফেলতাম?”
“তা অবশ্য করতেন ঠিকই! কিন্তু আমি সেটা বলেছি নাকি!? সাধারণ কথাও দেখি বুঝেন না! মেডিক্যাল সায়েন্সের মত এত কঠিন জিনিস পাস করলেন কী করে!? (তৈলাক্ত করার হাল্কা চেষ্টা করেছিলাম, পরে দেখি, কাজ হয়েছে!) ইয়ে মানে, নকলটকল করে…….নাকি!?”
এবার সবটা বুঝতে পেরে উনি হাহা করে হেসে উঠলেন। বললেন, “এবার বুঝতে পেরেছি, আপনার বাসা থেকে অপারেশন করাতে একা আসতে আপনাকে কীভাবে অ্যালাউ করা হল! দস্যি মেয়ে একটা!”
ভালই লাগল বকা খেয়ে। সুন্দর চেহারার স্মার্ট মানুষ বকা দিলে খেতে অত খারাপ লাগে না।
হাতে দুটো ইনজেকশন দেয়া হল। অবশ হওয়ার ইনজেকশনগুলো ভারি পাজি, অনেক কাঁদালো। যাদের সাথে এতক্ষণ পকরপকর করলাম, আমার অবস্থা দেখে নিশ্চয়ই তারা মনে-মনে হাসছেন। সুন্দর মানুষের তাচ্ছিল্য ভরা হাসি! আমার প্রেস্টিজের উপাদেয় ফালুদা তৈরি হচ্ছে। হুহহ্…….
আমি আমার হাতের দিকেই তাকিয়ে ছিলাম। এক ডাক্তার বললেন, “সে কী! দেখবেন নাকি আপনি!? অন্যদিকে তাকান।”
আমি অন্যদিকে মুখ করে তাকিয়ে আছি। অপারেশন চলছে।
আধঘন্টা লাগল। নখ কেটে ফেলে দিল। অনেকগুলো ভাঁজকরা একটা পুঁজ আর রক্তেভেজা চাদর আমাকে দেখিয়ে মিস্টার হ্যান্ডসাম বললেন, “দেখুন, আপনার নখের ভেতর কী ছিল!?” সত্যিই অবাক হলাম। মনে নোংরা নিয়ে ঘুরি—জানতাম; আবার শরীরেও……!
ব্যান্ডেজ শেষে এবার ফেরার পালা। ইয়াং ডাক্তার একটু দূরের একজনকে দেখিয়ে বললেন, “ফ্রিতে তো অপারেশন করালেন। নিন, এবার উনাকে কিছু দিয়ে দিন।”
দিলাম আর বললাম, “ফ্রিতে করাব বলেই তো এখানে এসেছি! তা না হলে এখানে কোন ভূতে আসে!?”
“এখানে যারা আসে, তারা ভূত!?”
“না না, ওই দলে পেত্নীও আছে!”
তিনি হাহা করে হেসে উঠলেন। বললেন, “ফ্রির জন্য যে আপনি এখানে আসেননি, সেটা বুঝতে পারছি। কিন্তু আপনি ঠিক কেন এখানে এসেছেন, বলুন তো!?”
“আর বলবেন না, ভাই! দুইটা হসপিটালে দেখিয়েছি। ওরা বলে কিনা অপারেশনের জন্য একদিন অ্যাডমিটেড থাকতে হবে। কিন্তু আমার তো অ্যাডমিটেড থাকলে চলবে না। বাসায় আমার আম্মু একা, ইভেন আমি যে অপারেশন করাচ্ছি সেটাও উনাকে বলা যাবে না, চিল্লায়ে বাড়ি মাথায় তুলে ফেলবেন! তাই আমি চাচ্ছিলাম এমন কোথাও অপারেশনটা করাতে যেখানে আমি থাকতে চাইলেও উনারাই আমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবেন! দেখুন না, আপনারা কেমন আধামাধা অপারেশন করিয়ে আমাকে বের করে দিচ্ছেন!”
“হা হা হা হা…….আপনি না ভীষন সুইট!”
তারপর উনি ইনিয়েবিনিয়ে আমার সাথে পরবর্তীতে যোগাযোগের একটা বন্দোবস্ত করতে চাইলেন। আর আমিও ইনিয়েবিনিয়ে উনার বন্দোবস্তের ধান্দায় হিমশীতল পানি ঢেলে দিলাম! অবশেষে, ধন্যবাদ আর বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে এলাম।
চারপাশ কালো করে সন্ধ্যা হয়ে আসছে। রিকশায় হুড ফেলে আমি। গন্তব্য…….কুহকপুর।