ভাবনাদেয়ালের পলেস্তারা: ১৪৩

ভাবনা: নয়-শো পঁচানব্বই
………………………………………………………………

এক। ধ্বংসের অনেক কারণ থাকা সত্ত্বেও দুই জন মানুষের মধ্যকার যে-টানটা ধ্বংস হচ্ছে না, তাকেই প্রেম বলে।
ধ্বংসের কোনো কারণ নেই বলেই দুই জন মানুষের মধ্যকার যে-টানটা ধ্বংস হচ্ছে না, তাকে বলে মায়া বা মোহ।
দুই। জীবনের জমা-খরচের খাতা খুলে দেখেছি,
ভালোবাসার বিনিময়ে আমি পেয়েছি মুঠো-মুঠো অবহেলা,
আর অবহেলার বিনিময়ে নিয়েছি অসীম অনুশোচনা।
তিন। একজন সুখী মানুষই কেবল আরেকজন মানুষকে সুখী করতে পারে কিংবা বলতে পারো, তোমাকে যে সুখে রাখে, সে নিজেও একজন সুখী মানুষ। বাকিরা তো শুধুই হাপিত্যেশ-করা মানুষের দলে!
চার। পাখিকে উড়তে শেখান বা শেখার সুযোগ দিন। এরপর ছেড়ে দিন। উড়ে চলে গেলে যাক। উড়তে শেখার পর যে-পাখি উড়ে চলে যায়, সে আদতে আপনার ছিল‌ই না; আর থেকে গেলে পাখিটা আদতে আপনার‌ই ছিল। তবে, উড়ে চলে যাবে, এই ভয়ে পাখিকে উড়তে না শেখানো বা উড়তে শেখাকে বাধা দেওয়া অবশ্যই একধরনের পরাজয়। পাখি ওড়ার জন্য‌ই; উড়ে চলে যাওয়া বা উড়ে ফিরে আসার ব্যাপারটা পাখির উপরই ছেড়ে দিন। এমন দৃঢ় ব্যক্তিত্বের নামই সৎসাহস।
পাঁচ। বলতে দাও। বললেই তো আর হয়ে যায় না!
ছয়। আজ নেত্রকোণা রামকৃষ্ণ মিশনে দৃগ্-দৃশ্য-বিবেক থেকে প্রথম পাঁচটি শ্লোক নিয়ে বললাম। অভূতপূর্ব এক অভিজ্ঞতা হলো। বেদান্ত বিষয়ক আলোচনা মানুষ এতটা নিবিড়ভাবে হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করতে পারেন, এটা আমার কল্পনার‌ও বাইরে ছিল। পুরো আশ্রম-প্রাঙ্গণ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ছিল পুরোটা সময়! আমি সত্যিই বিস্মিত হয়েছি।
ভীষণ ভালো লেগেছে। শেষ কবে এতটা আনন্দ নিয়ে বক্তব্য রেখেছি, মনে নেই। নেত্রকোণা রামকৃষ্ণ মিশন ও বিবেকানন্দ পরিষদের সকলকে অশেষ ধন্যবাদ। আয়োজকদের আন্তরিকতা আমার অনেক দিন মনে থাকবে।
ময়মনসিংহ রামকৃষ্ণ মিশনের ইমন মহারাজের প্রতি কৃতজ্ঞতা আমাকে এখানে নিয়ে এসে আত্মিকভাবে সমৃদ্ধ করার জন্য। উনি সাহস না দিলে দৃগ্-দৃশ্য-বিবেক নিয়ে বলার আস্পর্ধাই আমার হতো না!
সাত। আমাকে অমন সহজ ভেবো না, আমি প্রার্থনার মতো স্থির হয়ে অপেক্ষা করতে জানি।
আট। আপনি চান, আপনার সন্তান শেয়ার করা শিখুক। অথচ সেই আপনি নিজের স্বামীকে কারও সাথে শেয়ার করতে পারেন না। এখন আপনিই বলুন, আপনার সন্তান আপনার কাছ থেকে কী শিখছে?
(যত খুশি গালি দ্যান; সকালে উঠে দেখব। এখন ঘুমাই। গুড নাইট!)
নয়। অ্যাটেনশন পাবার লোভে কেউ নিজেকে গড়ে, আর কেউবা ধ্বংস করে ফেলে।
দশ। যারা বেশি অভিযোগ করে, ওদের সাথে দূরত্ব তৈরি করুন। তাহলে দেখবেন, অভিযোগ কমে গেছে।
এগারো। এক পাগল বাদে আর কেউই পাগলের সাথে থাকতে পারে না। তাই তুমি নিজেও পাগল হয়ে যাবার আগেই পাগলের কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্বে সরে আসো।
বারো। শুনছেন?
 
আলো টানে আলোকে,
অন্ধকারও অন্ধকারকেই টানে।
বাতাসও ছোটে বাতাসের পেছন পেছন;
আমাকে কেন আপনি টানেন?
আমার কেন 'আপনি' পায় শুধু?
 
আমি কি আপনার ছায়া হতে পারি?
তেরো।  একদিন চান্নিপসর জোসনাভরা ঘোরসন্ধ্যায় আমি মেঘে উড়তে উড়তে আকাশ দেখব,
এই ইচ্ছেটা আমার পূরণ হয়নি।
 
আমার দু-রুমের একটা ঘর থাকবে, ঘরের সব দেয়াল ধবধবে সাদা, সবুজ রঙের কার্পেট বিছানো খোলা ব্যালকনিতে বসে প্রায়ই মধ্যরাতে রংচা খেতে খেতে আকাশ দেখব,
ড্রয়িংরুমটায় কালো রঙের একটা বড়ো পিয়ানো থাকবে, আমি সেই পিয়ানোয় সুর তুলব…আগুনের দিন শেষ হবে একদিন…
 
নাহ্, আমার এই ইচ্ছেটাও পূরণ হয়নি, আগুনের দিনও শেষ হয়নি!
 
কত ছোট্ট জীবন, কত্ত ছোটো ছোটো ইচ্ছে, অথচ এই ছোট্ট ইচ্ছেরা বড়ো হবার সুযোগ আর পায় না, একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে বলে বলে দিন-পার-করা জীবনটার শেষমেষ কিছুই আর ঠিক হয় না।
 
আমাদের হায় জ্যান্ত থাকতে বেঁচে থাকা আর হয়ে ওঠে না!
চৌদ্দ।  জীবনে কেউ একজন থাকার পরও যদি কাঁদতে হয়, আমি সেক্ষেত্রে একলা কাঁদায় বিশ্বাসী।
কেউ জীবিত থাকতেও যদি “ধরে নিলাম, উনি আছেন।” টাইপের হয়, তবে আমি তাকে মৃত ধরে নেওয়ায় বিশ্বাস করি। এবং ধরে নিইও।
দেখিই-না কত কষ্ট পাওয়া যায়!
এভাবে ঘুরঘুর করার চেয়ে আমি মরে যাব প্রয়োজনে, তা-ও ভালো।
পনেরো। মন খারাপ হলে সোজা ফুল কিনতে চলে যাই। ফুল জিনিসটাই এরকম আসলে, নানান রঙে মাতিয়ে রাখে, নানান সুবাসে ভরিয়ে রাখে—আজকাল যদিও ফুলে তেমন একটা ঘ্রাণ পাই না। আপনারা পান কি?
 
আগে আমি রজনীগন্ধার ঘ্রাণে পাগল হয়ে যেতাম, অথচ এখন রজনীগন্ধায় কোনো ঘ্রাণ নেই, যেন প্লাস্টিকের ফুল। আগের মতন বকুল, বেলি, শিউলি ফুল আর হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় না। শহরে তো যায়ই না, গ্রামেও কমে গেছে।
 
কমে যাওয়াই স্বাভাবিক। এখন সবাই লাইক, কমেন্ট, শেয়ার চায়; ঘ্রাণ নিয়ে তো কারুর মাথাব্যথা করার সময়ই নেই।
 
তো যা বলছিলাম। ফুল কিনলে আমার মন ভালো হয়ে যায়। তবে নতুন একটা জিনিস আবিষ্কার করলাম। ফুল কিনলে সাময়িকভাবে মন ভালো লাগে, কিন্তু পুরোপুরি মন ভালো হয়ে যায় না।
 
আর ফুল কিংবা অন্য কিছু দিয়ে মনখারাপকে ঢেকে ফেলার চেষ্টা করাটাও খুব খারাপ। মন খারাপ হলে, মনকে আমরা এদিক-ওদিক ডাইভার্ট করার চেষ্টা করি; এতে কখনোই মন ভালো হয় না।
 
কত ভুলভাল ধারণা নিয়ে বেঁচে ছিলাম এতকাল!
ষোলো।  বিধান,
 
এটাই তোমাকে লেখা আমার শেষ চিঠি। পড়ে দেখো, বেশি সময় লাগবে না। সরি, চিঠি নয়, কবিতা-চিঠি। তুমি তো জানোই, আমি গদ্যের মতন করে কিছু লিখতে পারি না।
 
বিধান, তোমাকে ছাড়া থাকতে কষ্ট হলেও
আমি শিখে গেছি।
কী করে তোমাকে ছাড়াই এটা-ওটা কিংবা এটা-সেটা করে ফেলা যায়…মনকে চাপ দিয়ে, আমি সবই করিয়ে নিয়েছি।
 
আমার অক্ষরেরা কেবলই তোমার জন্য অপেক্ষা করে। আমার কবিতার শেষ দু-লাইন তোমার অনুপস্থিতির কারণে টুকরো টুকরো কাগজ হয়ে আমার বিনের সামনে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে।
 
শান্তিনিকেতনের শাড়িটাও তুলে রেখেছিলাম, তুমি এলে পরব ভেবে।
কিছুই হলো না।
 
ঠিক আছে।
মন খারাপ করি না।
তোমাকে ছেড়ে দিলাম।
 
খুব জ্বালাতন করতাম, তাই না?
এখন থেকে ভালো থেকো।
পৃথিবীর সব সুখ, সব শান্তি তোমার হোক।
 
ইতি
সৃষ্টি
 
ভাবনা: নয়-শো ছিয়ানব্বই
……………………………………………………………… 
 
এক।   
- আমাকে বোঝো?
- সে তো সহজ কিছু নয়।
 
- কঠিনটা কী?
- তোমার কাছে থেকে যাওয়া।
 
- আমি কেমন?
- লুকিয়ে থাকা!
 
- ভালোবাসি?
- মন্দও বাসো?!
 
- বাসি না বুঝি?
- বললে না যে?!
 
- নক্ষত্রদের দূরত্ব তোমার-আমার দূরত্বের সমান কি?
- ছাড়ো তবে; কীই-বা যায় আসে?
দুই। অনীক,
 
এটা শ্যামার শেষ চিঠি। বেশি কিছু লিখব না, বেশি সময় নেব না।
 
তুমি বলেছিলে, আমার মনখারাপে, অসুস্থতায়, খারাপ সময়ে পাশে থাকবে। অথচ আমি আদৌ বেঁচে আছি কি না তুমি জানোই না।
 
আর তুমি তো বহুকাল ধরেই আমার চোখে মৃত। তোমার কথা মনে পড়লে এখন আর কান্না পায় না, হাসি পায়।
 
কেন দিয়েছিলে ওরকম মিথ্যে আশ্বাস? অবশ্য তোমার মতন বড়ো অবস্থানের কেউ যদি দু-চার-দশ’টা মেয়ের ইমোশন নিয়ে খেলা না করে, তাহলে আর ওই অবস্থানের মানেই-বা কী!
 
কত রাত কেঁদেছি, ঘুমোতে পারিনি, ছটফট-ছটফট করেছি…তুমি কোথায় ছিলে?
তুমি কোথায় থাকো আসলে? আমি ফেইসবুকে দেখেছি, আমি ছাড়া আর সবার সাথেই তুমি থাকো, শুধু আমি ছাড়া আর সবাইকেই তোমার ভালো লাগে।
যাক, আর লিখতে পারছি না। এখন হয়রান লাগে।
 
একটা কথা বলে যাই, অনীক। আমি জানি, তুমি আমার কাছেই ফিরবে।
জানো তো, এখনও পৃথিবীতে সব কিছুই টাকা দিয়ে কিনে ফেলা যায় না। কেনা গেলে আমাকে তোমার ছ-মাস, এক বছর পর হন্যে হয়ে অমন করে খুঁজে বের করতে হতো না।
 
তোমার প্রেমিকা তোমাকে ছাড়াই সার্ভাইভ করে গেল, একাই এত পথ পাড়ি দিয়ে এল। তুমি কোথাও ছিলে না। তুমি ছিলে অন্য কোথাও, অন্য অনেকের সাথে ভালোবাসা নিয়ে বড়ো বড়ো লেকচার দিতে, ভালোবাসা নিয়ে কাব্য করতে।
অনীক, তুমি কি জানো, তোমার মতন মানুষকে লুজার বলে?
 
জানো না। চিরতরে সব কিছু হারিয়ে ফেলবে যখন, তখন বুঝতে পারবে।
যাই এবার। খুব ঘেন্না হচ্ছে নিজের জন্য, এই চিঠির জন্যও।
 
ইতি
তোমার প্রাক্তন
শ্যামা
তিন। কথা বলতে গেলে কেবল অপ্রয়োজনীয় অংশটুকুই বলি, প্রয়োজনীয় অংশ বলা হয় না। প্রয়োজনের কথা জমিয়ে রাখতে রাখতে পেটে জমে আছে কথার ক্ষুধা। পেট ভরে ভাত খেয়ে আমি ভাবি, ক্ষুধা নিবারণ হলো বুঝি! অপ্রয়োজনীয় কথা শুনিয়ে শুনিয়ে আমি আমার আশেপাশে যে-সব সঙ্গী ও শ্রোতা তৈরি করেছি, তারা নিশ্চিতভাবেই আমার প্রয়োজনীয় কথা শুনবে না এবং সেগুলোর দাম দিতে পারবে না।
 
এইসব আমি মেনে নিচ্ছি; তবু আজকাল খুব কথা পায়, কথারা উপযুক্ত মানুষ খুঁজে পাচ্ছে না।
চার। হে ঈশ্বর,
তুমি আমাকে ক্ষমতা দাও।
 
না না, প্রতিশোধ নেবার নয়;
যারা উপেক্ষা করল, ধাক্কা মেরে এগিয়ে গেল, তাদের থেকে আমাকে অনেক উপরের স্থানে রেখো, এরকম বোকা-বোকা কিছুও আমি চাই না।
 
তুমি শুধু ওদের সবার জীবন থেকে, ওদের সমস্ত স্মৃতি থেকে আমাকে ধুয়েমুছে দিয়ো।
আমি এতদিনে জেনে গেছি যে, আমার থাকা না থাকা দুটোই ওদের কাছে সমান।
 
তুমি আমাকে অদৃশ্য করে দাও।
আমি শুধু দূর থেকে দেখতে চাই, আমার না থাকাটাকে ওরা কতভাবে, কত রঙে উদ্‌যাপন করে।
ওদের উদ্‌যাপন না দেখে আমার শবযাত্রা হতে পারে না।
 
বেঁচে থাকতে যতই অবজ্ঞা করুক না কেন, দুটো ফুল হাতে নিয়ে গুটিকয়েক লোক ঠিকই আমার শেষযাত্রায় অংশ নেবে, আমি জানি।
এটুকু অর্জন অন্তত আমি করেছি।
পাঁচ।  ফেইসবুকে কিছু লোক আসে স্রেফ মাস্তানি করতে। বিভিন্ন লোকের ওয়ালে গিয়ে ধমকের সুরে, এমনকি ভয় দেখিয়ে বলে দেবে কীভাবে সে কথা বলবে, কীভাবে সে চিন্তা করবে। অপছন্দের মতামত বা অবস্থান দেখলেই রেগে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে। আমার মত ও পথ আপনার পছন্দ না-ই হতে পারে, কিন্তু তাই বলে ঘিলুর নয়, বরং বাহুর জোরে আপনি আমার কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করতে পারেন না। মতের ও পথের ভিন্নতা তো থাকবেই, ভালো না লাগলে ইগনোর করতে শিখুন। আজকের দিনে মাস্তানি করার জন্য এতগুলি বছর ধরে কষ্ট করতে হলো আপনাকে? আপনি নিজেই ভাবুন তো, লেখাপড়া শিখে আপনার কী লাভ হলো?
ছয়। আমি তোমার দ্বিধায় কিংবা এই অপেক্ষায়
হয়ে যাব কী নিদারুণ ক্ষয়,
হায়, তোমার জানা নেই!
সে তোমার জানতেও নেই!
সাত।  যে-কোনো আর্টিস্টের কাছ থেকে তাঁর বেস্ট পারফরম্যান্স বের করে আনতে চাইলে আর্টিস্টকে ঠিক তাঁর মতো করে পারফর্ম করার সুযোগ দিতে হয়। আপনাকে মেনে নিতেই হবে যে, ওই সময়কার স্টেজটা তাঁর, আপনার বা অন্য কারও নয়। 'পদের বা অবস্থানের ভারে যোগ্য', এমন লোকজন দিয়ে স্টেজ ভর্তি করে রাখলে সেখানে আর্টিস্টকে না আনলেই ভালো বা সেখানে আর্টিস্টের না গেলেই ভালো।
 
নচিকেতাকে দিয়ে গান গাওয়াতে চাইলে তাঁকে তাঁর মতন করে গান গাওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। আনলেন নচিকেতাকে, আর এটাকে কাজে লাগিয়ে সকল মহারথীকে স্টেজে তুলে দিলেন বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দিতে। এটা কি উচিত? দর্শক কার জন্য গিয়েছে অনুষ্ঠানে? আয়োজকদের মাথায় এটা না থাকলে নচিকেতার গান হয়তো পাওয়া যাবে, কিন্তু সেই গানে নচিকেতার আত্মাকে পাওয়া যাবে না। এ কারণেই ভালো অভিনেতা হ‌ওয়াটাই যথেষ্ট নয়, ভালো ফিল্মমেকার‌ও লাগে। বাজে আর্টিস্টের কাছ থেকেও কৌশলে কালোত্তীর্ণ কাজ বের করে আনা যায়, যদি সেই কৌশলটা জানা থাকে। Bicycle Thieves দেখেছেন তো? বিশ্বাস হয় যে, ওখানে যাঁরা অভিনয় করেছেন, তাঁরা এর আগে জীবনে কোনোদিনই ক্যামেরার সামনেও দাঁড়াননি? হ্যাঁ, এখানেই ফিল্মমেকারের কৃতিত্ব!
 
হালচাষ করার জন্য গোরুই লাগবে; সেখানে ছাগল আনলেও কাজ হবে না, সিংহ আনলেও কাজ হবে না।
আট।  দুধ না দিয়েই ফ্রি ফ্রি ঘাস চাইলে হবে? গরু কোথাকার!
নয়। তোমায় পাইনি বলেই হারিয়েছি যতটুক,
আমায় পেয়েছ, তাই হারাওনি তার আধেক‌ও!
দশ। যা অদৃষ্টে নেই, বুকে জড়িয়ে রাখলেও তা ছুটে চলে যায়।
যা অদৃষ্টে বাঁধা, পায়ে ঠেললেও তা ঠিকই ফিরে আসে।
এগারো। দুঃখ পেয়ে, কান্নাকাটি করে লাভ নেই। যা হয়নি, তা হবার ছিল না। ভাগ্যে না থাকলে জীবনে থাকে না।
বারো। আমি তো জানিই, সে আমায় ভালোবাসে না! আমি শুধু ভাবি, ভালো না বেসেও সে আমায় সহ্য কেন করে!
তেরো। শুধু পরিশ্রম করে কিছু হয় না, আজকাল সবাই-ই পরিশ্রম করে।
 
কিছু হ‌ওয়াতে চাইলে কিছু ভিন্নতা লাগেই।
চৌদ্দ। তোমার পরিবারের কেউ বড়ো অবস্থানে যাবার মানে, তুমি অপদার্থ হবার সকল অধিকার পেয়ে গেলে, তা কিন্তু নয়। তাঁর মুকুটের সৌন্দর্য নিশ্চয়ই তোমাকে সুন্দর করে দেয় না। ক্রাচে ভর করে হাঁটলে পঙ্গু হয় না, অন্যের পায়ে ভর করে হাঁটলেই পঙ্গু হয়। পঙ্গুত্বের বাসা দেহে নয়, মনে।
পনেরো। - এই যে ব্যস্ত নগরী, কোলাহলে ক্লান্ত হৃদয়, সবটা কেমন তোমার কাছে এলেই শান্ত হয়ে যায়...কেন?
- ডাকনামগুলো ছোঁয়াচে হয় ভীষণ, জানো তো!
- হুঁ, জীবন সত্যিই শান্ত!!
 
ভাবনা: নয়-শো সাতানব্বই
………………………………………………………………  
 
এক। বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে মানুষের লেজটি ঠিকই বেরিয়ে আসে। চিনে রাখলে চলতে সুবিধে।
 
এ দেশে মোটামুটি একটাই '-বাদ': সুবিধাবাদ।
 
বেশিরভাগ মানুষই এখানে গনিমিয়া টাইপের—নিজস্ব কোনো অবস্থান নেই, পরিস্থিতির অবস্থান বুঝে নিজের জায়গা মুহূর্তের মধ্যেই বদলে ফেলে—বৃষ্টি যেদিকে, ছাতা সেদিকে। আর দ্বিচারিতার ব্যাপারটা তো মেধাগরিবের রক্তেই আছে! বেশি মিশলেই বেশি মারা খাবেন, একদম নিশ্চিত!
দুই। ভাঙাচোরা মানুষের সাথে মেশার সময় খুব সাবধান! ওদের মেরামত করতে গিয়ে নিজেই ভেঙেচুরে যেতে পারেন! তার চেয়ে বরং মদ-সিগারেট-মুভি-গান-চা-কফি একলা গিলতে শিখুন। ভাঙাচোরা মানুষের ধর্ম আলাদা, দেশ আলাদা, এমনকি ব্রেইন‌ও আলাদা। অতটা আঘাত পেয়েও ওরা বেঁচে যে আছে, সেটাই তো বিস্ময়কর! ওদের সাথে আপনার মিলবে না। খুব কৌশলে মিশতে না পারলে মহাবিপদে পড়ে যেতে পারেন। বিপদে পড়ার চেয়ে একা থাকা অনেক ভালো।
তিন। যে আমায় ফেরায়নি, তার কাছ থেকে অতটা তৃপ্তি কখনও পাইনি, যতটা অনুশোচনা হয়েছে তার ফিরে যাওয়ায়, আমি যাকে ফিরিয়েছি।
চার। তারপর বলো, তোমরা যারা বাসে-ট্রেনে জার্নি করার সময় পাশের জনের মোবাইল-স্ক্রিনের দিকে নানান কায়দায় তাকিয়ে থাকো, তারা কি ওদের মোবাইলে অনেক অনেক গোপন কিছু দেখে ফেলো? তোমাদের চোখ তো এভাবে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একদিন ট্যারা হয়ে যাবে! তখন কী করবে? আরেকজনের পার্সোনাল জিনিসপত্র নিয়ে এভাবে পড়ে যে থাকো, সরকার কি তোমাদেরকে বেকারভাতা দেয়?
পাঁচ। তুমি অমন বলেই তো আমি এমন!
ছয়। কিছু মানুষ আছেন, যাঁদের সাথে মেশার সময় অত ভাবতে হয় না। ওঁদের ভেতরে ও বাইরে একরকম, মনে ও মস্তিষ্কে কপটতা নেই। ওঁরা যা বলার সরাসরি বলেন, সহজভাবে লোকের সাথে মিশতে জানেন, চরিত্রে একটুও দেখানেপনা নেই। এমন মানুষ কখনও কোনো মতলব নিয়ে কারও সাথে মেশেন না। বন্ধুত্বের মানে ওঁরা বোঝেন। (এঁরা নিঃসন্দেহে বিরল প্রজাতির মানুষ!)
 
আমি মূলত এমন মানুষের সাথেই মিশি। মস্তিষ্কে বাড়তি চাপ না দিয়েই এঁদের সাথে হৃদয় খুলে মেশা যায়। এঁরা প্রশংসা করে বিব্রত করেন না, আবার অহেতুক জাজ করে বিরক্ত‌ও করেন না। পৃথিবীর কোনো বিষয় নিয়েই এমন মানুষ কনজারভেটিভ নন; এঁরা ব্যস্ততা পছন্দ করেন বলেই হয় গ্রহণ করেন, নয় এড়িয়ে যান—গবেষণা করতে বা আমলনামা লিখতে বসেন না; জীবনকে এঁরা সহজভাবে নিতে জানেন; এঁদের আচরণ ও কথাবার্তা কখনোই কারও বিরক্তির কারণ হয় না।
 
এ ধরনের মানুষের সাথে মিশতে আমার খুব ভালো লাগে; তাই আমার পাশের মানুষটার সাথে মিশি বা আরও স্পষ্ট করে বললে, মেশার সুযোগ পেলে মিস করি না। বন্ধুদের মাঝে তিনি অরূপ নামে পরিচিত। অরূপ ভাই আর দশটা সাধারণ মানুষের মতন নন, অত্যন্ত মেধাবী, রুচিশীল, সদালাপী ও আন্তরিক একজন মানুষ। তিনি একইসঙ্গে ধার্মিক এবং পুরোপুরি গোঁড়ামিশূন্য উচ্চশিক্ষিত মার্জিত গোছানো একজন ভদ্রলোক। ভাইয়ার বাংলোটি পাহাড়ের একেবারে উঁচুতে—আমার দেখা সবচাইতে সুন্দর দু-একটা বাড়ির মধ্যে অন্যতম।
 
রুয়েটে পড়াশোনা করেছেন, কিন্তু পেশায় প্রকৌশলী নন—ইস্পাহানি গ্রুপের ভীষণ আস্থার একটি নাম: গোলাম মোস্তফা অরূপ। আমার পুরোনো সিনিয়র বন্ধুদের একজন তিনি। বয়সের বিভেদ ভুলে মনে বিন্দুমাত্রও অস্বস্তি না রেখেই অরূপ ভাইয়ের সাথে গল্প করা যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা; আজও সুযোগটা নিলাম। তাঁর সাথে আলাপ করলে অনেক কিছুই শেখা যায়, আর বোনাস হিসেবে আনন্দ তো আছেই!
 
মজার ব্যাপার, অরূপ ভাই জীবনসঙ্গিনী পেয়েছেন একদমই তাঁর ধাঁচের। জীবনসঙ্গিনী যখন মননসঙ্গিনীও হয়ে ওঠেন, তখন জীবনে আর কীই-বা অপূর্ণতা থাকে!
সাত। রামকৃষ্ণ মিশনের চার জন সন্ন্যাসী এসেছিলেন আমাদের বাসায়। তাঁদের সাহচর্য বড়ো বেশি আনন্দের। এ আনন্দ কেমন, তা লিখে জানানো যায় না, অনুভব করতে হয়। আত্মার পরিচর্যা করার অনেক রাস্তা আছে, তবে সেগুলির মধ্যে সন্ন্যাসীর সাহচর্য সহজতম। এ সুযোগ পেলে আমি নতমস্তকে গ্রহণ করার চেষ্টা করি।
আট। তুমি একাকিত্বকে ভয় পাও, আবার প্রেম‌ও করতে চাও! বুঝলাম না ব্যাপারটা!
সম্পর্কই একাকিত্বের জননী। সন্তানকে দূরে রেখে মা কখনো থাকতে পারে?
নয়। মাঝে মাঝে মনে হয়, ভালো মানুষের কপালে ঈশ্বর শান্তি দেন না।
 
ঈশ্বর নাকি ভালো মানুষের পরীক্ষা নেন।
 
সবই বুঝলাম, কিন্তু পরীক্ষার খাতাগুলি কাটেন না কেন? খাতা কাটলে রেজাল্ট দেন না কেন?
 
না কি আমি ভালো মানুষই না? তা যদি হয়, তাহলে আমার এত পরীক্ষা নেন কেন?
দশ। যারা উঠতে-বসতে বিসিএস বিসিএস করে, ওরা মানুষ নয়, ওরা ড্রাগন; ওদের মুখ দিয়ে আগুন বের হয়। ওরা মানুষকে মানুষ ভাবে না, ক্যাডার বা ক্যাডারের প্রেতাত্মা ভাবে। এদের কাছে জীবন মানেই বিসিএস! এসব সাইকোমার্কা পাগল-ছাগল থেকে অন্তত এক-শো হাত দূরে থাকুন।
 
প্যাথেটিক!
এগারো।  জীবনে একটা রিকশাওয়ালাও হতে পারলাম না! রিকশাওয়ালা হতে পারলে তো সুন্দরীরা এত অ্যাভয়েড করত না, উলটো যেচে পড়ে মিষ্টি স্বরে আকুল হয়ে ডেকে কথা বলত! বেঁচে থেকে আর কী হবে! কিংবা যদি হতে পারতাম অস্ট্রেলিয়ান কাউ! কত যত্ন করে প্লেনে চড়িয়ে জামাইআদর করে লোকে আমায় দেশে নিয়ে আসত!
 
দুঃখে দুঃখে আমার জীবনটা কেটে যাচ্ছে!
বারো। তুমি সেই মেয়েটা না, যে ছোটোবেলায় মানুষের মাথার উকুন বেছে দু-আঙুলের নখে টিপে টিপে আরাম করে থেঁতলে মারতে? আর তোমার কিনা এখন দুনিয়ার শুচিবাই!
তেরো। বাংলাদেশের মানুষ একইসঙ্গে আমেরিকাকে ঘৃণা করে এবং আমেরিকায় যেতে চায়!
চৌদ্দ। ভাইরে, গরিব হ‌ওয়ার সাইড-ইফেক্ট ম্যালা!
পনেরো। সন্তানকে খুব যত্ন করে বড়ো করার পর সন্তান বাবা-মা'কে ছেড়ে বিদেশে চলে যায় এবং সেখানেই থেকে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, বাবা-মা দেশ ছেড়ে সন্তানের কাছে যেতে পারেন না এবং শেষ জীবনটা বেশ নিঃসঙ্গতায় কাটান।
 
ব্যাপারটাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
ষোলো। - তুমি বুঝি 'চোখের আড়াল তো মনের আড়াল' টাইপের মানুষ?
- আমি 'চোখের আড়ালে হলেও মনের গহিনে পুষে-রাখা' টাইপের কেউ।
- প্রকাশে অনীহা?
- ভাগ বসাতে চাই না যে!
সতেরো। যাবেই যদি, যাও।
 
শুধু যাবার আগেই
চলে যেয়ো না।
 
ভাবনা: নয়-শো আটানব্বই
………………………………………………………………   
 
এক।  Beauty is peace, peace beauty.
Peace is greater than love.
 
Love+No peace=No love
No love+Peace=Love
Love+Peace=Heaven
দুই। কখনও কাউকে চট করে বিশ্বাস করে ফেলবেন না। এমনও তো হতে পারে, সে প্রতিদিন গোসল করে না!
তিন। জীবনটা বাহির দিয়ে ভরে গেল।
 
আর ভালো লাগে না!
শোন না, তুই আমার ঘর হবি?
চার। চৌধুরী সাহেব, আমাকে ঠান্ডা পানির ভয় দেখাবেন না। আমি গরিব হলেও হট!
পাঁচ। আমি তো ভাই সেই মানুষটাকেই হন্যে হয়ে খুঁজছি, যিনি এক জনও এমপি বা মন্ত্রী মহোদয়ের কাছের লোক নন!
ছয়। সব ব্যস্ততার মানে ব্যস্ততা নয়।
কিছু ব্যস্ততার মানে: তোমার চেহারা খারাপ, তাই তুমি চুপ থাকো।
সাত। যাকে ভালো লাগে, তাকে ব্যস্ততার মধ্যেও সময় দেওয়া যায়। আর যাকে ভালো লাগে না, তাকে অবসরেও সময় দিতে ইচ্ছে করে না।
আট। 'ভাই' ডাকলে যেমন সম্মান বাড়ে না, তেমনি 'স্যার' ডাকলেও সম্মান কমে না। তাই চেয়ার এবং সম্পর্ক অনুযায়ী সম্বোধন করা উচিত।
নয়। - আচ্ছা, সব অন্ধকার কি সত্যি আলোর গভীরে হারিয়ে যায়?
- কিছু অন্ধকার নিজস্বতা ধরে রাখে ওই আলোর চাদরেও।
- তবে আমাদের আরও কিছু বিদঘুটে অন্ধকার থাকুক... একেবারে একান্তই আমাদের।
দশ। আমার একটা বৈশিষ্ট্য আছে, শেয়ার করছি; ইচ্ছে হলে অনুসরণ করতে পারেন:
 
আমি হয় গ্রহণ করি, নয় উপেক্ষা করি; কখনোই গবেষণা করি না।
এগারো। যারা জীবনে কিছু করতে পারার আগে কে কী করল, না করল, এসব নিয়ে সারাক্ষণই ব্যস্ত থাকে, তারা সাধারণত শেষ পর্যন্ত জীবনে তেমন কিছু করতে পারে না।
 
অবশ্য, ওরা নতুন করে আর কী করবে! ওরা তো কিছু করছেই! জীবন তো ওসব করেই ভালো কেটে যাবে! পিছে-লাগা লোক আজীবন পিছেই থাকে।
 
বেকার মানুষ, বিজি বেশি!
এগারো। যারা উঠতে-বসতে লোকজনকে জাজ করে, তাদের সাথে মেশাটা খুবই ঝামেলার। তাদের সাথে আপনার রিলেশন ভালো হলেও খেয়াল করে দেখবেন, তারা চায়, আপনি তাদের মনের মতো কোনো একটা ফরম্যাটে চলুন, এবং ওভাবে চলছেন বলেই রিলেশনটা ভালো আছে। আপনি কখনো সেই ফরম্যাট থেকে বেরেলো তারা আপনার পেছনেও লাগবে। তাদের ধারণা, তারা যা ভাবে, কেবল তা-ই ঠিক, বাকি সব ভুল। দুনিয়ার সব কিছু নিয়েই তাদের কিছু-না-কিছু বলার আছে। বলাটা তাদের অধিকার, কেননা তারা শুদ্ধ মানুষ এবং তাদের বিচার-বিবেচনাও নির্ভুল। তাদের মতে ও পথে সায় না দিলেই নিজের মূল্যবান সময় খরচ করে তারা পেছনে লেগে যায়। এরা সাধারণত ভণ্ড প্রকৃতির হয়।
 
এমন মানুষ সত্যিই খুব বিপজ্জনক!
বারো। দেড়-শো বছরের বেশি পুরোনো মহামায়ার মন্দির এবং চারণ কবি মুকুন্দ দাস প্রতিষ্ঠিত শতাধিক বছরের পুরোনো কালী মন্দির দর্শনের কিছু মুহূর্ত আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম।
 
ধর্মীয় প্রাচীন স্থাপনার আত্মাকে নিবিড়ভাবে স্পর্শ করার অদ্ভুত এক ক্ষমতা রয়েছে।
তেরো। একমুহূর্ত‌ও চিন্তা না করে ব্লক করে দিই। কেন? কারণ আমার মানুষের চেয়ে শান্তির বেশি প্রয়োজন। শান্তি নষ্ট হলে মানুষ দিয়ে কী করব? আপনি ব্লক করেন না কেন? আপনি কি ইলেকশনে দাঁড়াবেন? ইলেকশনে না দাঁড়ালে পেইনফুল মানুষ পালার কী মানে? মানুষ নয়, শান্তি। So, don't explain, simply block.
চৌদ্দ। You don't need a mobile phone to become a topper in the civil service exam.
And, you don't need a mobile phone even to have a girlfriend.
পনেরো। তোমার সকাল শুরু হয় প্রেমিকার শুভকামনা দিয়ে, দিন শেষ হয় প্রেমিকার শুভরাত্রি নিয়ে;
এদিকে আমার সকাল শুরু হয় উইপোকা-তেলাপোকা-ছাড়পোকা নির্মূল-সহ ক্লিনিং সার্ভিসের অফার দিয়ে, দিন শেষ হয় জিপি আর বিএল-এর টুরুলাভ নিয়ে।
 
তোমার যত্ন নেয় তোমার প্রেমিকা; আমার যত্ন নেয় কাস্টমার সার্ভিসের কর্মীরা।
 
...আর তুমি কিনা আমাকে বলছ ঈর্ষাশূন্য হতে!
 
আমি পারব না, শুভব্রত! অতটা মহৎ যে আমি ন‌ই! অতটা মহৎ হলে আমারও একটি প্রেমিকা থাকত...তোমার যেমন আছে, আর সে আমায় খুব ভালোবাসত।
 
অবশ্য, ঈশ্বর‌ই আমায় ভালোবাসেন না . . . নারীর কী দোষ!
 
তুমি হাত বাড়িয়ে দিলে তোমার উষ্ণ বুকে তোমার প্রেমিকা আশ্রয় নিতে চায়; আমি হাত বাড়িয়ে দিলে আমার দু-পায়ে মশাদের ঘরসংসার শুরু হয়ে যায়। তাই আজ তুমি প্রেমিক, আর আমি ঘাতক।
 
শুভব্রত, আমি বলছি না, তোমার প্রেমিকাকে আমার মোবাইল নম্বরটা দিয়ে দাও; আমি বলছি, আমাকে আমার মতো ঈর্ষা করতে দাও।
 
তোমরা আমায় ছোটোলোক বলো; অথচ বড়ো যে আমিও হতে চেয়েছিলাম, তা কখনও বললে না!
 
মেয়ে, তুমি এমন কেন!
ষোলো। মেধাবী মানুষের মাস্টারমশাইয়ের দরকার নেই, কেবলই বন্ধুর দরকার হয়। এটা বুঝলে অমন মানুষের সাথে মেশা সহজ।
সতেরো। মেয়েদের অব্যর্থ অস্ত্র: খারাপ ব্যবহার।
ছেলেদের অব্যর্থ অস্ত্র: ভালো ব্যবহার।
আঠারো। নতুন ব‌উয়ের চাইতে পুরান ব‌উ খারাপ হলেও ভালো।
 
 ভাবনা: নয়-শো নিরানব্বই
………………………………………………………………   
 
এক। : কী করিস, শিখা?
: তারা দেখি, ওই যে দেখো!
: খুব রেগে আছিস আমার উপর?
: উঁহু। আমিও তোমার মতন আকাশের তারা হতে চাই, শান্তনুদা। এই যে, চাইলেই কেউ ছুঁয়ে দিতে পারবে না, কথা বলতে পারবে না। তারা হলে তো মানুষকে চোখেই পড়বে না। খুব মজা হবে।
: মিথ্যে বলছিস কেন যে, রাগ করিসনি?
: ....................
: শিখা, একবার তারা হয়ে গেলে বুঝবি, মাটিতে নেমে আসা কী কঠিন! অবশ্য এখন বুঝবি না, মাটির মানুষ তারার গল্প জানবে না কখনও।
দুই। বিশেষ কেউ হতে চাইলে . . .
 
যার-তার পরামর্শ মেনে চলবেন না; আপনার পরামর্শের দরকার হলে যার শরণাপন্ন হতেন না, তার পরামর্শ কখনও শুনবেন না।
 
যিনি আপনার কাছে বিশেষ কেউ, কখনোই তাঁকে গায়ে পড়ে পরামর্শ দেবেন না; গায়ে-পড়ে-পরামর্শ-দেওয়া লোক প্রায়ই ফালতু হয়।
তিন। সেদিন কুষ্টিয়ায় অবস্থিত হনুমানজির পুরোনো মন্দির নিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেখানে কিছু মহাপণ্ডিতের মন্তব্য দেখে বরাবরের মতো বিরক্ত হয়েছি। ওদের কথা হচ্ছে: হনুমানের পুজো করার বিষয়টিকে আমি সমর্থন করছি কেন; আমি খারাপ, আমি মূর্খ, আমি গাধা; ইত্যাদি ইত্যাদি।
 
আমার পোস্টের মানে কিছু লোক বোঝেই না। কমপক্ষে ১৩০ বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক একটি ধর্মীয় স্থাপনা নিঃসন্দেহে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তা নিয়ে কথা বলতে বাধা কোথায়?
 
শান্তি কী? অন্যের বিশ্বাসকে সম্মান করতে জানাই শান্তি। ওরা এই সহজ জিনিসটাও বুঝতে পারে না বা চায় না।
 
আমি নাকি হনুমানের ফলোয়ার, হনুমানের ফ্যান, ভুল জিনিসকে প্রমোট করছি, আরও কত-কী! আপনারা যদি ভাবেন, আমি হনুমানের ফলোয়ার এবং এটা আমার ভুল, তা সত্ত্বেও আপনারা আমাকে ফলো করেন কেন? আপনারা কি তাহলে বান্দর?
 
সকলের ধর্মমত ও ধর্মপথকে সম্মান করতে শিখুন। বড়ো হবার প্রথম ধাপ: অসাম্প্রদায়িক চেতনার অধিকারী হ‌ওয়া। আপনি বড়ো হতে না চাইলেও অসুবিধা নাই, শুধু লোকজনকে বিরক্ত করবেন না, তাহলেই হবে।
চার।  বহুবছর পর জগদ্‌বন্ধু সুন্দরের শ্রীঅঙ্গনে গেলাম। দার্শনিক ও লেখক ড. মহানামব্রত ব্রহ্মচারীর বই পড়েই প্রথম প্রভু জগদ্‌বন্ধুর দর্শন নিয়ে আগ্রহী হয়েছিলাম। বৈষ্ণবদর্শনের প্রচার ও প্রসারে তাঁর অবদান অসীম। জীবসেবা, অসাম্প্রদায়িকতা ও জ্ঞানের চর্চায় তিনি আমৃত্যু কাজ করে গেছেন। সমাজে যাঁদের স্থান ছিল সবার নিচে, জগদ্‌বন্ধু সুন্দর হয়ে উঠেছিলেন তাঁদের আত্মার আত্মীয়, পরম বন্ধু। প্রভুর একটি কথা আমার ভীষণ ভালো লাগে: ঘরের দেয়ালে লিখে রেখো, পরচর্চা নিষেধ।
পাঁচ। যাদের শরম নাই, তারা ব্লক খায়।
যাদের সময় নাই, তারা ব্লক করে।
 
নতুন বছরে আপনি কোন দলে থাকবেন, সেটা অবশ্য আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার।
ছয়। কুষ্টিয়া শহরে প্রায় ১৩০ বছরের পুরোনো একটি মন্দির আছে, হনুমানজির। এখানে দেখলাম, মূলত মারোয়াড়ি সম্প্রদায়ের নিত্য-পূজাপার্বণের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে মহাদেবের একাদশতম অবতার হনুমানজি পূজিত হন।
 
মঙ্গলবার হনুমানজির জন্মবার; তাই প্রতি মঙ্গলবার সকালে মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন থাকে। এ ছাড়াও শনিদেবের কোপদৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে প্রতি শনিবার হনুমানজির পুজো করেন সনাতন ধর্মের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অনেকেই। নানান ধরনের সঙ্কট থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজে পাবার বিশ্বাসে হাজার হাজার বছর ধরে বিশ্বের বহু জায়গায় মানুষ হনুমানজির পুজো করে আসছেন।
 
মন্দিরে আজ সকালের প্রার্থনায় অংশ নেবার সৌভাগ্য হয়েছে; আত্মিক তৃপ্তি পেয়েছি।
সাত। যার সাথে কথা বললে মনে হয়, সে তোমাকে বা তোমার সম্প্রদায়কে হেয় করে কথা বলছে, দ্বিতীয় বার চিন্তা না করেই তাকে ব্লক করে দাও; ভালো থাকবে। যার তুমি খাও-ও না, পরোও না; মনকে অস্বস্তিতে রেখে তার ধার কখনও ধেরো না।
আট। যে প্রায় সময়ই জেরা করে, তার কাছ থেকে সরে আসো। পুরোপুরি সরে আসতে না পারলেও তাকে মন থেকে সরিয়ে দাও। নিজেও জেরা কোরো না, অন্যকেও জেরা করতে দিয়ো না। এতে মন ও শরীর ভালো থাকবে।
 
হ্যাপি নিউ ইয়ার!
 
পুনশ্চ। কখনো পুলিশে ধরলে এই পোস্টের প্রথম অনুচ্ছেদটির পরামর্শ মাথায় না রাখলে ভালো হয়।
নয়। ভালো থাকতে চাইলে, যাকে ব্যাখ্যা দেবার দরকার নেই, তাকে ব্যাখ্যা দেবার সময় বের কোরো না; সে যা মন চায় ধরে নিক।
দশ।  মন খারাপ হলে কী করতে হয় আমি জানি; কিন্তু দিনের পর দিন মন খারাপ হয়ে পড়ে থাকলে কী করতে হয়, সেটা জানি না।
 
মনে হয়, হাত-পা অবশ হয়ে আসছে, চোখে ঝাপসা দেখছি, অক্ষরগুলো এলোমেলো করে লিখছি। কী-একটা যেন মাথার ভেতরে ক্রমাগত ভোঁ ভোঁ শব্দ করে যাচ্ছে, যাকে শান্ত করার ক্ষমতা আমার নেই; অথচ এই আমিই কিন্তু বহু মানুষের মন ভালো করে দেবার ক্ষমতা রাখি!
 
ক্ষমতাধর মানুষের অক্ষমতার জায়গাগুলো খুব ভয়ংকর!
এগারো। এখন আর ইদ ভালো লাগে না। নতুন জামা কিনতে মার্কেটে যাব ভাবলেই গায়ে জ্বর এসে যায়। এমনকি পুরোনো জামায় ইদ কাটাতে একটুও অস্বস্তি হয় না। ইদে যে-সালামি পাওয়াই ছিল অন্যতম মূল আকর্ষণ, সেই সালামি পেতেই এখন সবচেয়ে বেশি বিরক্ত লাগে।
 
ইদ এলে টের পাই, আমি কত একা। আমার নিজের মানুষ আমাকে রেখেই সুন্দর ইদ কাটাচ্ছে, ব্যাপারটা খুব কষ্ট দেয়। সারাবছর নিজেকে সামাল দিতে পারলেও ইদ কাছে এলে লোকটাকে খুব মিস করি।
 
আমি আর নাটক করতে পারব না।
 
ইদ আমার কাছে একটা আতঙ্কের নাম। পুরোনো ক্ষতগুলোকে মনে করিয়ে দিতে আমার জীবনে আর কখনও ইদ না আসুক।
বারো। কাঁথা বুনতে গিয়ে গল্প বুনেছি,
প্রেমের রাত্রি নয়, কেবলই বিচ্ছেদের দিন গুনেছি।
 
তুমি তোমার সত্য লুকিয়ে যা বললে, সেটা কোনোভাবেই আমার বলা মিথ্যে নয়,
সবার বিচ্ছেদের গল্প এক না হলেও বিচ্ছেদটা তবু সবারই হয়।
 
যে-মানুষ খুব বেশি ভালবাসতে জানে, সে কখনও প্রেমিকা পায়নি,
বড়ো বড়ো কথা বলে দেখলাম, এক মাঘে শীত সত্যিই যায়নি!
 
সত্যের আর মেরুদণ্ড কই, রাখি তো কেবল মিথ্যেটার খোঁজ‌ই,
কাগজে-কলমে কতশত বিয়ে দেখে যাচ্ছি তাই রোজই।
তেরো। শোনো, একদিন তো চলেই যাব সব ছেড়ে, তাই না? কিন্তু পৃথিবী ছেড়ে গেলেও আমি তোমাকে ছেড়ে কখনও যাব না।
 
আমি তোমাকে নিয়ে একলা হয়ে যাব। চুরি করে ফেলব তোমার ভেতরকার তুমি-টাকে। তুমি হন্যে হয়ে নিজেকে খুঁজে খুঁজে ক্লান্ত হবে, কিন্তু আমি… আমি তোমাকে তোমার হতে দেবো না।
 
তুমি থাকবে আমার ব্যক্তিগত হয়ে। আমার গল্পে, কবিতায়, কান্নায়, আড্ডায়, বিকেলের মন খারাপে, রাতের কামনায়। চারিদিকে শুধু তুমিই থাকবে। আমি শুধুই তোমার নাম জপ করব।
 
ফেইসবুককে এসব কথা জানানো আসলে খুবই অপ্রয়োজনীয়। কিন্তু এখানে আবেগের কথা লিখে রাখলে বছর বছর এই দিনে আমাকে ফেইসবুক নিজদায়িত্বে সব মনে করিয়ে দেবে। সেজন্যই সব লিখে রাখলাম।
 
ওহ্, একটু ভুল হলো। তুমি তো আবেগ নও, তুমি আমার গোটা জীবনটাই।
 
ভাবনা: এক হাজার
………………………………………………………………    
 
এক। তুমি যদ্দিন কাঁদাবে,
আমি তদ্দিন বেঁচে থাকব।
 
তুমি আমার হৃদয় রক্তাক্ত করতে থাকবে,
আর আমি লিখতে থাকব।
 
মাথায় বড়ো কোনো গন্ডগোল না থাকলে আর আশেপাশের খুব খুব ছোটো ছোটো ধাক্কাকে তীব্রভাবে গায়ে মাখতে না পারলে কে-ইবা কোনকালে লিখতে পেরেছে?
 
আমি কখনও লিখতে চাইনি।
তোমার অবহেলা, আমার অশ্রু,
তোমার চুপ থাকা, আমার অভিমান,
তোমার বাঁকা হাসি, আমার কল্পনা...
আমার শক্ত করে ধরে রাখার চেষ্টা আর তোমার নিজেকে আমার থেকে ছিনিয়ে নেওয়া—
এরাই আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নিচ্ছে… যেন অনন্তকাল ধরে।
 
থামো, দয়া করো। আমাকে আর কষ্ট দিয়ো না। এত কষ্ট পেলে একদিন হয়তো সত্যিই লেখক হয়ে উঠব।
 
আমি লেখক হতে চাই না, চাইনি কোনোদিনই—এই কাঁটাভরা রাস্তায় হেঁটে চলা আমার কাজ নয়।
দুই। আমার একটা কাজিন আছে, সিক্সে পড়ে। ওকে ক্যাডেটের কোচিং করিয়ে প্রায় মেরেই ফেলছে আন্টি, কিন্তু ও চান্স পেলেও ওকে ক্যাডেটে দিবে না, কারণ ও আন্টির একমাত্র সন্তান। এই সিক্সের বাচ্চাকে সেভেন আর এইটের পড়াও পড়ানো শেষ। শুধুই “আমার মেয়ে ক্যাডেটে চান্স পেয়েছিল, ভাবি, কিন্তু দিই নাই।” বলে বেড়ানোর জন্য এই কাজ করছে আন্টি।
 
আমার আরেক কাজিন, তিন বছর বয়স; ঠিক করে কথাই বলতে পারে না। ওকে আমার চাচি নিয়ম করে দু-বেলা পড়তে বসায়। ওর তো কথাই ফোটেনি, অথচ কী যে কষ্ট করে বেচারা কবিতা বলে!
 
আমার ভাতিজি আছে, টু-তে পড়ে। সেদিন এসে বলছে, আমি সারারাত ঘুমাইনি, মাথাব্যথা। আমি বললাম, কেন? ও বলে, রাত জেগে জেগে ক্লাস থ্রি-র পড়া শেষ করছে!
 
এগুলোই যদি হয় সচেতনতার নমুনা, তাহলে ওদের মায়েরা আর কয়েক বছর পর বিসিএস-এর পেছনে অবশ্যই লাগবে।
 
এসব কাণ্ড দেখি আর আমি ভাবি, পৃথিবীতে আমি একাই কনফিউজড না, তাই আমার সব দুঃখ নিমিষেই দূর হয়ে যায়। এই বাচ্চারা আর তাদের মায়েরা সবাই আমার সহযাত্রী, প্রতিযোগী; কেননা এই মায়েরা আর বাচ্চারা, দুই পক্ষই কনফিউজড।
 
আর প্রতিযোগীরা গাধা হলে নিজের ভেতরে যে কনফিডেন্সটা আসে রে, ভাই… সেইরকম! আমি সিরিয়াসলিই বলছি, এরকম ভালো ফিল আর কিছুতেই আসে না!
নাহ্, বার বার পিছিয়েই যাচ্ছি জীবনযুদ্ধে! প্রতিযোগিতায় নামতে হবে, নিজের ঢোল নিজেই না পেটালে পেটাবে তাহলে আর কে? a gebon raka ke lab,gode negar dol negay na patata pare?agkai dol kenta hoba bagara geya.abr na amr agay kaw kena pala!
তিন। প্রতিভাবানকে কখনও আটকে রাখা যায় না। সে কোনো-না-কোনো উপায়ে বের হয়ে যাবেই। একটা-না-একটা পথে সে অবশ্যই নিজের জায়গা করে নেবে। তাকে টেনে ধরে, তার ক্ষতি করে, তাকে মানসিকভাবে ভেঙে দিয়ে, এরকম হাজারো কিছু করেও কিছুতেই তাকে থামিয়ে দেওয়া যায় না; বরং এদেরকে যত বেশি থামানোর, দাবানোর, পেছন থেকে টেনে ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়, এরা ততই জোর দিয়ে এবং শক্তি প্রয়োগ করে ঠিকই বীরের বেশে বেরিয়ে যায়।
চার। তুমি কেমনে এত বাজে বকো, হে গুণী,
অবাক হয়ে শুনি, কেবল শুনি।
 
১. আপনার হঠাৎ হঠাৎ কী হয়, দাদা? এত লেখা একসাথে কেন দেন? পড়তে কষ্ট হয় তো! আগে থেকে আমাকে না জানিয়ে পোস্ট করা উচিত না আপনার।
 
২. ভাই, আপনি কি ছেলে, না মেয়ে? এই একবার ছেলেদের নিয়ে লেখেন, আবার একটু পরেই মেয়েদের নিয়ে। ভাইইইয়াআআ, আমি যা সন্দেহ করছি, তা ঠিক না তো আবার! আপনি কি…
 
৩. এত রাতে যেহেতু অনলাইনে আছেন, আসুন না একটু ইনবক্সে, বিসিএস-এর গাইডলাইন নিয়ে খোলামেলা একটু প্রাইভেট কথা ছিল।
 
৪. স্যার, আমার হাইট ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি। আমার প্রশ্ন সেটা না। আই নৌ, আমার হাইট অনেক ভালো; তা ছাড়া, আমি দেখতেও অনেক ভালো, ইউ নৌ। বাট, আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আমার ৫ ফুট ৪ ইঞ্চির প্রেমিক কি পুলিশ ক্যাডার চয়েজ দিতে পারবে… প্রেমিকার উচ্চতা কোটায়?
 
৫. ভাইয়া, আমি দুই বাচ্চার মা। আমার পড়াশোনা হয় না, তাই খুবই চিন্তিত। ক্যাডার বানাতে চাই বড়ো ছেলেকে, তাই আমি নিজেই পড়ছি, কারণ ও তো স্কুলে পড়ে, বড়ো হতে হতে তো কম্পিটিশন বেড়ে যাবে আরও, তাই নিজেই পড়ে কমিয়ে রাখছি। আমি কিন্তু বুয়েটের জন্যও কোচিংয়ে অ্যাডমিশন নিয়েছি। এই যুগে এটুকু এগিয়ে না থাকলে হয়, বলুন?
 
৬. এই যে প্রেমিকার জন্য এত কান্দেন, এত কিছু লিখেন, ভাইয়া, সে তো তা-ও ফিরে এল না। এমন সময় নষ্ট কেউ করে!
 
৭. আমি মোটিভেশন চাই না, ভাইয়া। আমি খুবই খারাপ একটা কাজ করে ফেলেছি। যদি সমাধান দিতেন… একটা দুষ্ট জিনের পাল্লায় পড়েছিলাম, ভাইয়া। এখন আমি প্রেগন্যান্ট। বাসায় কীভাবে বলব যে, জিনের বাচ্চা পেটে ধরেছি? প্লিজ, হেল্প মেহ।
বিশেষ দ্রষ্টব্য। কেউ আমাকে গালি দেবেন না। আপনাদের সাথেও এমন হতে পারে; আর যদি কেউ গালি দেন, তার অনাগত বাচ্চা জিনের অভিশাপে ভস্মীভূত হয়ে যাবে, বলে দিলাম।
 
৮. দাদা, ছেলে হয়েও আপনাকে আমার ভালো লাগে। আমরা কি ডেট করতে পারি না? যুগ তো বদলে গেছে, তাই না? আপনারও যুগের সাথে বদলানো উচিত।
 
৯. আপনি যে এত বই কেনেন, পড়েন না, ঢং ধরেন? হুদাই লোকদেখানো কাজ! চাকরি পাবার পর আবার কেউ কিছু পড়ে নাকি?
 
১০. ভাইয়া, আমি ক্লাস থ্রিতে পড়ি। বড়ো হয়ে আমি আপনার মতন লম্বা আর ফরসা হতে চাই; দোয়া করবেন, প্লিজ।
 
১১. আপনি আমার রিয়েল আইডি ব্লক করলেন কেন? আপনি যে কোচিং ব্যবসায়ীদের সাথে হাত মিলিয়েছেন, এটা গোপন থাকবে ভেবেছেন? আমি হাজারো ফেইক আইডি খুলে সবাইকে এই সত্য জানিয়ে দেবো; আপনার আসল চেহারা ফাঁস করে দেবো। মুহাহাহাআআআ…
 
১২. ভাইয়া, আমি কাস্টমস ক্যাডার সম্পর্কে সব কিছু জানি; সব মানে সবই। কিন্তু মাত্র‌ই কলেজে ভর্তি হলাম। চাকরি তো অনেক দেরি, তাই এখন খুব হতাশায় ভুগছি। কলেজের পড়া ভালো লাগে না, আপনার মতন কাস্টমস অফিসার হয়ে সেলিব্রিটি হতে মন চায়। আমাকে বুদ্ধি দিন।
পাঁচ। কেন সাধারণত ছেলেরা মেয়েদের চাইতে বেশি ক্রিয়েটিভ?
 
কেননা মেয়েদের খুশি করার জন্য একটা ছেলেকে নতুন নতুন কথা ও কাজ বানাতে হয়। মেয়েদের অ্যাটেনশন পাওয়া কি মুখের কথা!
অন্যদিকে, একটা মেয়েকে কখনোই এত কষ্ট করতে হয় না। ছেলেরা মেয়ে দেখলেই খুশি হয়ে যায়।
 
ছেলে হয়ে বাঁচা সহজ নয়, ব্রো!
ছয়। : এরকম শীত আসি-আসি-করা সময়ে আমার খুব প্রেম পায়, সুরভি।
: ও আচ্ছা।
: তোমার পায় না?
: না।
: হ্যাঁ, পাবে না তোমার, এটাই স্বাভাবিক। তুমি তো ক্যালকুলেটিভ মানুষ, বলতে গেলে রোবট।
: জি, ঠিক বলেছেন। কিন্তু রোবট তো আর শুরু থেকেই হইনি, আস্তে আস্তে হয়েছি।
: সুরভি, তুমিও প্রেম করেছ তার মানে! আনবিলিভেবল!
: একটু ভুল করলেন, আসিফ। আমি কখনোই প্রেম করি না; আমি ভালোবাসি। আমার ভালোবাসা আমার কাছে একধরনের সাধনার মতন। তাই কখনো নিজেকে কারও সাথে জুড়ে দিলে, আমি আর আলাদা হতে পারি না। তাই আপনার সাথেও আমি জড়াব না। যার কাছে প্রেম আর ভালোবাসা একই জিনিস, তার সাথে আমি আর জড়াব না। কারণ ওই যে আপনি বললেন না, আমি ক্যালকুলেটিভ! একদম ঠিক! ক্যালকুলেশনের বাইরে সুরভি আর কখনও সৌরভ ছড়াবে না। আর কোনোদিনও না!
সাত। Everyone is available if you are ready to pay the price in the right way.
আট। সবসময়ই পাশে থেকো। আমার ভালোর জন্যেও আমাকে কখনও ছেড়ে যেয়ো না। তুমি ছাড়া আমার আর কোনো ভালো নেই, এটা জেনো।

 ভাবনা: এক হাজার এক
………………………………………………………………   
 
এক। তোমাকে ভালোবাসি, কিন্তু খুঁজে পাচ্ছি না।
তুমি আমাকে ভালোবাসো না, কিন্তু বার বারই তোমার চোখের সামনে পড়ে যাচ্ছি . . .
 
যার কাছ থেকে পালিয়ে থাকতে চাই, তার সামনেই পড়ে যাই বার বার!
 
তুমি কি আগের মতোই আছ?—এমন কিছু জিজ্ঞেস করা হয় না। ভদ্রতা করেও “তুমি কেমন আছ”-টুকুই তো আমি আর জিজ্ঞেস করি না!
 
খুব কষ্ট হয়, জানো?
 
আর বলতে পারব না, “আমি তো আছিই!'”
 
আর কখনও তোমার চোখে তাকাতে পারব না। কত কত ক্ষত যে আমার বুকের ভেতর থেকে চিৎকার দিয়ে কথা বলতে চাইছে, একথা কাকে বলি?
 
জি ম্যে আতা হ্যায় তেরে দামান ম্যে সার ছুপাকে হাম, র‍্যোতে র‍্যাহে, র‍্যোতে রাহে...
দুই। সব কিছু থাকার পরও মানুষ একাকিত্বে ভোগে। আসলে একাকিত্বের সঠিক কোনো সংজ্ঞাই হয় না।
একাকিত্বেরও নিজস্ব কিছু স্টাইল আছে। বাসায় একা একা বসে থাকা কিংবা পাশে কেউ না থাকাকেই একাকিত্ব বলে না। কেউ কেউ কিন্তু ভিড় দেখলেই বরং বেশি একাকী অনুভব করতে থাকে।
একাকিত্ব একটা লাইফলং জার্নি। আপনি চাইলেও যেমন সারাজীবন একাকিত্ব পেলেপুষে কাটিয়ে দিতে পারবেন না, আবার সেই আপনিই হাজার লোক নিজের কাছে জড়ো করে রাখলেও একাকিত্বের অনুভূতি লুকিয়ে রাখতে পারবেন না।
 
মানুষ মানুষের সাথেই সবচাইতে বেশি একা হয়ে যায়। একাকিত্ব থেকে মুক্তির সবচাইতে ভালো পথ হচ্ছে একা একা নিজের সাথে থাকা।
তিন। একটা কবিতা লেখার সমান যন্ত্রণা নিয়ে আমি তোমাদেরই আশেপাশে ঘুরে বেড়াই, কিন্তু তোমরা কেউ ধরতে পারো না।
 
পারবেই-বা কেন? কবিতা তো লোকের কাছে এক সস্তা জিনিসেরই নাম।
 
কিন্তু এই সস্তা জিনিস বয়ে বেড়ানোর জ্বালা শুধুই আমি আর আমার ঈশ্বর জানেন… ঠিক যেমন মদ না খেয়েও মাতাল হতে জানে কেউ কেউ।
 
মদের চেয়ে দামি নেশা যে-মানুষটা দু-চোখে কাজলের মতন করে মাখে, তাকে তোমরা কবি বলো, না কি কবিতা?
 
আমি তো বলি মরীচিকা... ভ্রম...
চার। তুমি আমাকে যে কয়টা তরিকায় মেরে ফেলেছ, তার মধ্যে অন্যতম প্রধান একটা হচ্ছে কিছুই না বলা, একদম চুপ করে থাকা। বেশি খারাপ লাগে এটা ভেবে যে, এই কিছুই না বলাটা আমাকে বেশি কষ্ট দেয়, আর সেটা জেনেই তুমি এমন করো।
 
কী লাভ হয় তোমার জানি না।
 
তুমি একটা মানুষ, সত্যিই! সালাম তোমাকে!
 
এভাবে মারতে তো আর যে-কেউ পারে না!
 
অবশ্য এভাবে বার বার বুক পেতে দিয়ে মরে যেতেও তো সবাই পারে না!
পাঁচ। তুমি আমার জীবনে আসার পর আমি একেবারেই অন্য কেউ হয়ে গেছি। উফফ! এসব কীভাবে লিখব?
 
সৃষ্টিকর্তা আমাকে এত অদ্ভুত সুন্দরের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন, যা তুমি ভাবতেও পারবে না! আমার জীবন একমুহূর্তে পালটে গেছে। আমার এখনও বিশ্বাস হয় না যে, এই আমিই সেই আমি ছিলাম।
 
তোমাকে ধন্যবাদ আমাকে রাঙানোর জন্য। তোমাকে সামনাসামনি কখনও ধন্যবাদ দেওয়া হয় না, কিন্তু আমি সবসময়ই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।
 
আরও অনেক কথা। কয়টা লিখব? তুমি কি পড়ো? তুমি কি বুঝতে পারবে? মনে হয় না।
 
আমাদের একসাথে থাকাটা একটা ম্যাজিকের মতন ছিল।
 
কিন্তু সৃষ্টিকর্তা, তুমি, তোমাদের সমাজব্যবস্থা, তোমার ইগো, তোমার অবহেলা, তোমার ব্যস্ততা… সব কিছু মিলে, সবাই মিলে আমার কাছ থেকে তোমাকে দূরে সরিয়ে দিল, আমার কাছ থেকে তোমাকে আলাদা করে দিল।
 
তোমরা জানো না, আমার কত বড়ো ক্ষতি হয়ে গেল। শুধু এটুকু মাথায় গেঁথে রেখো… এভাবে কখনও ভালোবাসার বিচ্ছেদ ঘটানো যায় না।
ছয়। রাতের কালো আঁধার ঘুচে যাবে; আসবে গোলাপি রৌদ্র, সোনালি সন্ধ্যা।
 
আমি সেদিনের অপেক্ষায় আছি।
 
আজ তুমি যতই ব্যস্ত আর ক্লান্ত থাকো না কেন, আমি জানি, তুমি ফিরে আসবে। ঠিকই ফিরে আসবে আমার বুকে। আমার কোলে মাথা রেখে তুমি তোমার সব গোপন কথা আমার কানে কানে উগরে দেবে...যা-কিছু বিষের মতন তোমাকে দগ্ধ করেছে এতকাল। আমি তোমার সব ব্যথার খবর জানি। তোমার মুখ থেকে শোনার অপেক্ষায় বসে আছি। এসো জলদি।
 
আমি জানি, ওসব মৃত্যুসম যন্ত্রণার কথা বলার জন্য তোমার কেউ নেই, এক আমি ছাড়া।
 
শোনো, আমি আছি। জলদি চলে এসো।
অপেক্ষায় রইলাম।
সাত। আমার শরীর কেঁপে উঠল, নিঃশ্বাস ভারী হয়ে এল। মনে হচ্ছিল, এক্ষুনি মরে যেতে পারলে ভালো হতো। ও আর আমি এত কাছাকাছি যে, ওর নিঃশ্বাস আমার মুখে লাগছে, আর আমার নিঃশ্বাস ওর বুকে। ওর শার্টের দুটো বোতাম খোলা, চুলগুলো এলোমেলো। আমি বোতাম লাগানোর জন্য ওর বুকে হাত দিতেই ওর স্পন্দন টের পেলাম। ও চোখ বন্ধ করে ফেলল।
 
চশমা ভেদ করে ওর কান্না বের হয়ে আসছিল, যে-কান্নাগুলোর ভাষা হয়তো আমি ছাড়া আর কারও বোঝার কথা নয়। ও কান্না লুকোনোর জন্য ওপাশ ফিরে দাঁড়াল। আমি পেছন থেকে আমার দু-হাত দিয়ে বুকের কাছে শক্ত করে ওকে জড়িয়ে ধরলাম। ওর বাঁ-কাঁধে আমার থুতনিটা রেখে প্রায় আধঘণ্টার নীরবতা ভাঙলাম।
 
- কী হয়েছে তোমার? আমাকেও বলা যায় না?
- কিছু হয়নি তো।
 
ওর ওই ‘কিছু হয়নি’ বলাই চিৎকার করে জানান দিল যে, অনেক কিছু হয়েছে। ও বাঁ-পাশে ফিরতেই আমার চোখে ওর চোখ পড়ল। মনে হলো, ওর তৃষ্ণাতুর চোখ দুনিয়ার সব কিছু চুরমার করে কী যেন খুঁজছে আমার চোখে।
 
এবার আমি সামনে থেকে ওকে জড়িয়ে ধরলাম। ও আমাকে ধরল আরও শক্ত করে। মনে হচ্ছিল, এক্ষুনি বোধ হয় আমার হাড়-পাঁজর সব ভেঙে যাবে। তবে আমি কোনো ব্যথা তো অনুভব করিইনি, বরং মনে হচ্ছিল…ভেঙে যাক আমার সব হাড়গোড়, আর মরেই যাই আমি এখানে। সুখে মরে যাই, মরে যাই শান্তিতে।
 
মানুষ তো মৃত্যুর পর স্বর্গে যায়, আমার মৃত্যুই নাহয় হলো স্বর্গে।
আট। বেশিরভাগ মেধাবী মানুষ দুইটি কারণে বিরক্তিকর:
 
ইগো বেশি থাকা,
কমনসেন্স কম থাকা।
নয়। তাঁর লেখায় শাণ আছে,
শব্দে শব্দে বান আসে,
কোথাও গেলে দেখা যায়,
নদীপাড়ের বাঁক‌ও আছে।
 
ভোর আছে, নীল আছে,
কখনোবা নিদ আসে।
 
সেদিন দেখি, বর্ণে আবার
জড়িয়ে কেমন হিম আছে;
দূরে গেলে কিছু
ফিক করে আহা রবি হাসে!
 
সত্যি বলছি, আমার একটি
থেকে যাবার ঘর আছে।
Content Protection by DMCA.com