ব্যর্থতার সার্থকতা

তোমাকে তো আমি বুকে জড়িয়েই ঘুমোই রাতে, তুমি বুঝতে পারো না? এ ব্যর্থতা কার, আমি জানি না!
 
বহুদিন কথা হয় না, দেখা আর ধরা-ছোঁয়ার কথা তো বাদই দিলাম;
কই, এই তো তুমি পাশে বসে আমার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছ, আর আমার কানে কানে…
ওই যে, সবসময় যা যা বলো…
সেসবই বলছ।
 
আমি সবই টের পাচ্ছি, এই তো…এই তো ছুঁলে আমায়, এই তো আমার চোখের জল তোমার বুক ভিজিয়ে দিল...
অনুভব করতে পারছ না?
এই ব্যর্থতার ভার কাকে দেবো, বুঝতে পারছি না।
 
এই যে, তোমার জন্য পথ চেয়ে চেয়ে আমার সারাদিন-রাত-বছর কেটে যাচ্ছে তো কেটেই যাচ্ছে, তবু তোমার দেখা পাচ্ছি না; এই যে, তোমার জন্য তুলে-রাখা ভালোবাসাটুকু তোমাকে দিতে পারছি না, যা পেলে তুমি আরও একটু ভালো থাকতে পারতে; এই যে, বন্ধুর মতন দুটো কথা তোমার পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে বলতে পারছি না...
মানে তোমার সময়‌ই হয় না, ইচ্ছেও হয় না!
 
মানলাম, ইচ্ছে হয় না। ইচ্ছে না-ই হতে পারে!
 
এই যে, একটা মানুষ তার সব জরুরি কাজ, সাজ, বন্ধু, আত্মীয়, ঘরদোর ফেলে এক তোমারই জন্য অপেক্ষা করছে, তাকে উপেক্ষা করার এই সাহস তুমি কোথায় পেয়েছ, আমি জানি না।
 
এই যে, আমার এই অসীম ভালোবাসা, বুকভরা অপেক্ষা, তোমার গায়ে লেপটে পড়ার বাসনা, এসবকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছ…তুমি হয়তো জানো না, এটাকে ব্যর্থতা বলে।
এই ব্যর্থতা সম্পূর্ণ তোমার, তোমার আর তোমার।
এই যে, ছোটো ছোটো অহেতুক, অদ্ভুত কারণে সমাজ তোমার-আমার ভালোবাসাকে মেনে নেবে না, সেই সমাজের নিয়ম মেনে নিয়ে নিজেকে অভ্যস্ত করে তোলাকে বলে—তোমার আর তোমার সমাজের সম্মিলিত ব্যর্থতা।
 
আর এই যে, একদিকে একটা পাগল মানুষ তোমাকে আর সমাজকে বুড়োআঙুল দেখিয়ে, শুধুমাত্র তোমার দিকে তাকিয়ে, তোমাকে ভালোবেসে বেসে রোজ গঙ্গাস্নান-করে-ওঠা’র মতন পবিত্র হচ্ছে, তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে করে ফেলছে সবচেয়ে কঠিন কাজটাও, তোমার অনুপস্থিতিতে সে আরও বেশি করে তোমায় কাছে টেনে নিচ্ছে, একটু একটু করে তোমাকে নিজের মধ্যে ধারন করছে, সেটাকে সার্থকতা বলে।
 
শুনে রাখো, তোমার মতন ব্যর্থ মানুষ আর তোমার ব্যর্থ সমাজ আমার চোখের দিকে তাকাতে পারে না কখনও, আমার ভালোবাসাকে দমাতে পারে না! এই সুখ, এই শান্তি, এই সফলতা, এই দম্ভ, এই স্বর্গ, এই অর্জন আমার মতন পাগলেরই। এ সমস্ত সার্থকতাই আমার, আমার একার।
Content Protection by DMCA.com