ধরে নিই, আরও ২ মাস হাতে সময় আছে। বিসিএস মানেই লিখিত পরীক্ষার খেলা, যেটা সম্পূর্ণই আপনার নিজের নিয়ন্ত্রণে। যাদের প্রস্তুতি অতোটা নেই, তারা এই ২ মাস বাসায় দৈনিক গড়ে অন্তত ১৫ ঘণ্টা করে ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারলে চাকরিটা পাবেনই! যাদের প্রস্তুতি ভাল, তারা ওই পরিমাণ পড়তে পারলে পছন্দের প্রথম ক্যাডারটিতে মেধাতালিকায় প্রথম ১০ জনের মধ্যে থাকার কথা। এই সময়টাতে বাজে জিনিস পড়ে বাজে সময় নষ্ট করবেন না। কঠোর পরিশ্রম নয়, হিসেবি পরিশ্রমই বড় কথা। বাংলা ও ইংরেজির প্রস্তুতি নিয়ে কিছু কথা বলছি আমার মতো করে, আপনি আপনার মতো করে কথাগুলিকে কাজে লাগাবেন।
সিলেবাসের যাকিছু আগের বিসিএস-এও ছিল, তাকিছু ভালোভাবে আগের প্রশ্নগুলি থেকে পড়ে নিন। যে ক্যান্ডিডেট প্রশ্নের ধরন যত ভাল বোঝে, তার প্রস্তুতি তত ভাল হয়। গাইডবইয়ের সাজেশন দেখে এবং প্রশ্নের ধরন ও প্রাসঙ্গিকতা বুঝে নিজেই সাজেশন তৈরি করবেন। কারোর সাজেশনই ফলো করবেন না। এরপর সেই প্রশ্নগুলি কয়েকটি গাইড ও রেফারেন্স থেকে পড়ে ফেলুন। নোট করার সময় নেই, উত্তরগুলি অন্তত ৪টা গাইডবই থেকে দাগিয়ে দাগিয়ে পড়ুন। আমি মনে করি, ৫টা রেফারেন্স বই পড়ার চাইতে ১টা বাড়তি গাইডবই পড়া বেটার।
ব্যাকরণ অংশটি বাংলা ভাষার ব্যাকরণ, ভাষা-শিক্ষা, দর্পণ, গাইডবই থেকে পড়ুন। প্রবাদ-প্রবচনের নিহিতার্থ খুবই সহজ ভাষায় প্রাসঙ্গিকভাবে লিখুন।
দর্পণ, বাংলাদেশের আর কলকাতার লেখকদের বই থেকে ভাব-সম্প্রসারণ দেখতে পারেন। উদাহরণ আর উদ্ধৃতি দিয়ে সময় নিয়ে খুবই চমৎকার গাঁথুনিতে ২০টি প্রাসঙ্গিক বাক্য লিখুন।
সারমর্ম ২-৩টি সহজ সুন্দর বিমূর্ত বাক্যে লিখতে হবে।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যবিষয়ক প্রশ্নের উত্তর গাইডবই, লাল-নীল দীপাবলি, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস—এই বইগুলো থেকে অপ্রয়োজনীয় অংশগুলি ‘বাদ দিয়ে বাদ দিয়ে’ পড়ুন। উদ্ধৃতি দিন, মার্কস বাড়বে।
বিসিএস পরীক্ষার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অংশটি হলো অনুবাদ। যত কষ্টই হোক, প্রতিদিন দৈনিক পত্রিকার আর্টিকেল আর সম্পাদকীয় থেকে একটি বাংলা থেকে ইংরেজি আর একটি ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ না করে ঘুমাতে যাবেন না। এতে আপনার আরও কিছু অংশের প্রস্তুতি হয়ে যাবে। এই অংশটি ফাঁকি না দিয়ে প্র্যাকটিস করলে আপনি আপনার কম্পিটিটরদের চাইতে অন্তত ৭০ মার্কস বেশি পাবেন।
কাল্পনিক সংলাপের জন্য পেপারে গোলটেবিল বৈঠকগুলোর মিনিটস্, টকশো, গাইডবই থেকে বিভিন্ন টপিক নিয়ে ধারণা নিন।
ভাষা-শিক্ষা আর বিভিন্ন গাইডবই থেকে পত্রলিখন পড়তে পারেন।
সুপরিচিত ৪০টা বই সম্পর্কে জেনে নিন গ্রন্থ-সমালোচনার জন্য।
সাজেশন রেডি করে ইন্টারনেট, গাইডবই, রেফারেন্স বই থেকে রচনা পড়ুন। যেকোনও ৩টি প্যাটার্নের উপর প্রস্তুতি নিন। সবার শেষে এটি ধরে পরীক্ষার শেষ হওয়ার ৭ মিনিট আগে উপসংহার লেখা শুরু করুন। উদ্ধৃতি দিন, বেশি লিখুন, প্রাসঙ্গিক লিখুন, বেশি মার্কস পান।
রিডিং কম্প্রিহেনশনের জন্য বেশি বেশি করে ইংরেজি পত্রিকার সম্পাদকীয় আর আর্টিকেলগুলি পড়বেন। প্যাসেজের আগে প্রশ্নগুলি অন্তত ৩ বার ভাল করে পড়ে ফেলুন। প্রশ্নে কী জানতে চেয়েছে, সে কিওয়ার্ড কিংবা কিফ্রেসটা খুঁজে বের করে আন্ডারলাইন করুন। এরপর প্যাসেজটা খুব দ্রুত পড়ে বের করে ফেলতে হবে, উত্তরটা কোথায় কোথায় আছে। এই অংশটি আইএলটিএস’য়ের রিডিং পার্টের টেকনিকগুলো অনুসরণ করে প্র্যাকটিস করলে খুব খুব ভাল হয়।
গ্রামার এবং ইউসেজের জন্য কয়েকটি গাইডবই থেকে প্রচুর প্র্যাকটিস করুন। অক্সফোর্ড অ্যাডভান্সড লার্নারস ডিকশনারি, লংম্যান ডিকশনারি অব কনটেম্পোরারি ইংলিশ, মাইকেল সোয়ানের প্রাক্টিক্যাল ইংলিশ ইউসেজ, রেইমন্ড মারফির ইংলিশ গ্রামার ইন ইউজ, ব্যারন্সের গ্রামারসহ আরও কিছু প্রামাণ্য বই হাতের কাছে রাখবেন। এসব বই কষ্ট করে উল্টেপাল্টে উত্তর খোঁজার অভ্যেস করুন, অনেক অনেক কাজে আসবে। ইংরেজিতে ভাল করতে হলে একজন ‘নারি’র প্রেমে আপনাকে পড়তেই হবে, সে ‘নারি’ ডিকশনারি।
সামারির জন্য প্রতিদিনই পত্রিকার সম্পাদকীয় আর আর্টিকেলগুলিকে সামারাইজ করুন। প্যাসেজটি ভালভাবে অন্তত ৫ বার খুব দ্রুত পড়ে মূল কথাটি কোথায় কোথায় আছে, দাগিয়ে ফেলুন। পুরো প্যাসেজটাকে ৬-৭টি ভাগে ভাগ করে প্রতিটি ভাগকে একটি করে সহজ বাক্যে নিজের মতো করে লিখুন। ব্যস্, হয়ে গেল সামারি!
লেটারের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য প্রতিদিন পত্রিকার লেটার টু দি এডিটর অংশটি পড়ুন, সাথে কিছু গাইডবই।
এসেইর জন্য বাংলাদেশের সংবিধানের ব্যাখ্যা, বিভিন্ন সংস্থার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, উইকিপিডিয়া, বাংলাপিডিয়া, ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টাল, কিছু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পত্রিকা ইত্যাদি সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখুন৷ প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় বিভিন্ন লেখকের রচনা, পত্রিকার কলাম ও সম্পাদকীয়, ইন্টারনেট, বিভিন্ন সংস্থার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, সংবিধানের সংশ্লিষ্ট ধারা, বিভিন্ন রেফারেন্স থেকে উদ্ধৃতি দিলে মার্কস বাড়বে৷ এই অংশগুলো লিখতে নীল কালি ব্যবহার করুন। কোটেশন ছাড়া রচনা লেখা রীতিমতো মহাপাপ!
বানান আর গ্রামার ভুল না করে খুব সহজ ভাষায় ইংরেজি লিখলে মার্কস আসবেই আসবে। আপনার বাংলা খাতাটি অন্য ১০জনের মতোই, অথচ আপনি মার্কস পাবেন একটুবেশি—এটা হয়তো আপনি আশা করেন, কিন্তু পরীক্ষক এটা কল্পনাও করেন না। কম প্র্যাকটিস, বেশি আরাম, কম মার্কস, রেজাল্ট জিরো—এটি মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিন। লিখিত পরীক্ষায় পাস করা যতটা সোজা, চাকরি পাওয়াটা ততটাই কঠিন। প্রতিদিন পড়াশোনা করার সময় মাথায় রাখবেন, আপনি কারোর চাইতে ৩ ঘণ্টা কম পড়ার মানেই হল, আপনার চাইতে উনার চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা ৩ গুণ বেশি। ৩০ বছর ধরে একটা চাকরি করবেন, আর সেটা পাওয়ার জন্য ২ মাস দৈনিক ৪-৫ ঘণ্টা ঘুমিয়ে প্রস্তুতি নিতে পারবেন না, তা কীকরে হয়? পড়ুন, বুঝে পড়ুন এবং বেশি পড়ুন। যার রিডিং হ্যাবিট যত ভাল, তার রাইটিং স্টাইল তত উন্নত। লোকে চাকরি পায় দক্ষতা আর মেধায় নয়, চেষ্টা আর যোগ্যতায়। অতিমেধা, অতিবুদ্ধি, অতিপাণ্ডিত্য বেশিরভাগ সময়ই চাকরি পাওয়ার সকল সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দেয়। কম কম বুঝুন, কম কম বলুন, বেশি বেশি পড়ুন; চাকরি নিশ্চয়ই পাবেন!
লেখাটি গত ৪ মে ২০১৬ তারিখ কালের কণ্ঠ পত্রিকার ‘চাকরি আছে’ পাতায় এসেছিলো। লিংকটি: