প্রিলিতে যাঁরা পাস করেছেন, আমি বিশ্বাস করি, তাঁরা লিখিত পরীক্ষার আগের বছরের প্রশ্নগুলো আর নতুন সিলেবাস সম্পর্কে অলরেডি খুব ভাল একটা ধারণা নিয়ে ফেলেছেন। অনেকেই সাজেশনস প্রস্তুত করাও শুরু করে দিয়েছেন। কী কী ধরনের প্রশ্ন আসে, সে সম্পর্কে আইডিয়া নিয়ে কয়েক সেট গাইড বই কিনে সেগুলো উল্টেপাল্টে দেখছেন আর সাথে সাথে পড়ে ফেলছেন। রেফারেন্স বইটইও ঘাঁটাঘাঁটি চলছে। প্রতিদিন বাসায় পড়াশোনা করছেন কমপক্ষে ৮-১০ ঘণ্টা। যাঁদের চাকরি করতেই হচ্ছে, তাঁরা চাকরির পাশাপাশি বাসায় এসে অন্তত ৪-৫ ঘণ্টা সময় বের করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন নিশ্চয়ই। প্রচুর প্র্যাকটিস করছেন, রাত জেগে ম্যাথ্স, গ্রামার, ট্রান্সলেশন এসব করছেন ‘সেইরকম’ করে। যেকোনও প্রশ্ন পড়ার সময় অন্তত ৩-৪ সেট গাইড বই সামনে রেখে, ইন্টারনেট ঘেঁটে, রেফারেন্স বই, প্রাসঙ্গিক টেক্সট বই পড়ে খুব দ্রুত দাগিয়ে দাগিয়ে পড়ে নিচ্ছেন। পেপার, ইন্টারনেট তো এখনকার নিত্যসঙ্গী। ফেসবুকে ঢুঁ মারছেন একটু কম। চাকরি বলে কথা! যে চাকরিটা অন্তত ৩০ বছর আরাম করে করবেন বলে ঠিক করে রেখেছেন, সেটার জন্য ৩ মাস নাওয়াখাওয়া বাদ দিয়ে পড়াশোনা করবেন না, এরকম বেকুব তো নিশ্চয়ই আপনি নন!
জানি, ওপরে যা যা লিখলাম, সেগুলোর তেমন কিছুই করছেন না। বাসায় বসে বসে ইয়া বড়-বড় ঘোড়ার ডিম পাড়ছেন। মাঝেমাঝে এদিকওদিক দৌড়াচ্ছেন আর নিজেকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন, “পড়ে তো উল্টায়ে ফেলতেসি!” প্রিপারেশন প্রিপারেশন ভাব, প্রিপারেশনের অভাব। সত্যি বলছি, পরীক্ষার হলে গিয়ে মাল্টিকালারের সর্ষেফুল দেখবেন। লিখিত পরীক্ষা দেয়া এত সোজা না। এটা ঠিক, এ পরীক্ষা দিয়ে পাস করে ফেলতে পারবেন, কারণ এ পরীক্ষায় ফেল করা কঠিন। শুধু পাস করার সান্ত্বনা পুরস্কার হিসেবে ভাইভা পরীক্ষা দিতে পারবেন, আর কিছু না। যদি ঠিকভাবে বুঝেশুনে পরিশ্রম করেন আর সেটাকে কাজে লাগাতে পারেন, তবে ভালভাবে পাস করার যথার্থ পুরস্কার হিসেবে চাকরিটা পাবেন।
অনেক কথা হল। এখন লিখিত পরীক্ষার সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা করছি। এই অংশের জন্য আগের বছরের প্রশ্নগুলো আর গাইড বইয়ের সাজেশনসের প্রশ্নগুলো প্রথমেই খুব ভালভাবে যথেষ্ট সময় নিয়ে কয়েকবার পড়ে ফেলুন। বিজ্ঞানের প্রস্তুতি নেয়ার সময় আপনি বিজ্ঞানের ছাত্র কিংবা ছাত্র না, এটা মাথায় রেখে প্রস্তুতি নেবেন না। বিজ্ঞানে মনের মাধুরী মিশিয়ে সাহিত্যরচনা না করলেই ভাল হয়। এ অংশে প্রয়োজনীয় চিহ্নিত চিত্র, সংকেত, সমীকরণ দিতে পারলে আপনার খাতাটা অন্য দশজনের খাতার চাইতে আলাদা হবে। এসব জিনিস লিখে লিখে শিখতে হয়। ১০ মার্কসের একটা প্রশ্ন উত্তর করার চাইতে ৪+৩+৩=১০ মার্কসের ৩টা প্রশ্নের উত্তর করা ভাল।
পার্ট-এ: সাধারণ বিজ্ঞান
আলো, শব্দ, চৌম্বকবিদ্যা: গাইড বই, ৯ম-১০ম শ্রেণীর পদার্থবিজ্ঞান, ১১শ-১২শ শ্রেণীর পদার্থবিজ্ঞান ১ম ও ২য় পত্র
অম্ল, ক্ষারক, লবণ: ৯ম-১০ম শ্রেণীর রসায়নবিজ্ঞান, ১১শ-১২শ শ্রেণীর রসায়নবিজ্ঞান ১ম পত্র
পানি, আমাদের সম্পদসমূহ, পলিমার, বায়ুমণ্ডল, খাদ্য ও পুষ্টি, জৈবপ্রযুক্তি, রোগব্যাধি ও স্বাস্থ্যের যত্ন: গাইড বই, ইন্টারনেট, ৯ম-১০ম শ্রেণীর সাধারণ বিজ্ঞান, ৯ম-১০ম শ্রেণীর ভূগোল
পার্ট-বি: কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তিঃ গাইড বই, ইন্টারনেট, পিটার নরটনের ইন্ট্রোডাকশন টু কম্পিউটারস, উচ্চমাধ্যমিক কম্পিউটার শিক্ষা ১ম ও ২য় পত্র
পার্ট-সি: ইলেকট্রিকাল এবং ইলেকট্রনিক টেকনোলজিঃ গাইড বই+ উচ্চমাধ্যমিক পদার্থবিজ্ঞান ২য় পত্রের বই
সিলেবাস দেখে টপিক ধরে ধরে কোনটা কোনটা দরকার, শুধু ওইটুকুই ওপরের বইগুলো থেকে পড়বেন (গাইডেও অনেককিছু দেয়া থাকে যেগুলোর কোনও দরকারই নেই)। চাইলে পুরো বই না কিনে যতটুকু দরকার শুধু ততটুকু ফটোকপি করে নিতে পারেন। ইন্টারনেটে টপিকগুলোকে গুগল করে করে পড়লে খুবই ভাল হয়।
লেখাটি প্রথম আলো’তে ছাপা হয়েছিল।
লিংক: