বিরহসূত্রে বন্ধন



আপনার সুগভীর স্পন্দনের অনুরণন, আকস্মিক দৌর্মনস্যে উৎকণ্ঠিত সন্ধিক্ষণ, এ অবিক্ষুব্ধ কক্ষজুড়ে এনে দিয়েছে ভিন্ন এক মাত্রা। নিদ্রাকালেও জাগ্রত এ সত্তা কি তবে সকল অনুভূতির ঊর্ধ্বে...যা দৃষ্টিপাত করে না, গ্রহণ করে না, স্পর্শ করে না, আনন্দ করে না, ত্যাগ করে না?

এ দেহপুরে কেবল প্রাণবৃত্তিসমূহই জাগ্রত থাকে। অপরাপর ইন্দ্রিয় নিদ্রাকালে স্বকর্মে বিরত থাকলেও প্রাণাদি জাগ্রত থাকে। স্বপ্ন মনেরই ধর্ম, আত্মার নয়। আপনার বিশেষায়িত অনুভূতি পূর্বে আমার ইন্দ্রিয় গ্রহণ করেছিল, তার রেশ আমার বহিঃসত্তায় বিদ্যমান থেকেছে। তা আত্মার ধর্ম নয়। এই অর্থে আত্মা জ্ঞাত নয়। এরূপে আমার প্রাণ গ্রহণ করেছে যা (পূর্বে) দৃষ্ট হয় এবং তা-ই স্বপ্নে দৃশ্যত হয়েছে; যা শ্রুত হয়েছে পূর্বে, তারই যেন শ্রবণ হয়েছে। বিষয়েন্দ্রিয়সমূহও মনে একীভূত হয়ে সর্বপ্রকার বাসনায় উপস্থিত হয়ে দর্শন সম্পন্ন করেছে।

হে প্রিয়দর্শন, অব্যভিচারী! এই বিষয়ে দৃষ্টান্ত এই—আপনার অনুভূতি যেমন প্রতীয়মান, আত্মায় সেই স্বরূপ-সুখই সম্যক প্রকাশিত; কেননা আত্মার স্বরূপ-সুখ সর্বদা বিদ্যমান। এ কক্ষে আপনার বিশেষায়িত ‘কষ্ট’ নামক অনুভূতির প্রকাশ ক্ষীণ; আমার বিশেষ সংবেদনশীল অনুরক্তি কর্তৃক গৃহীত কল্পান্তস্থায়ী ‘বিরহ’ নামক স্পর্শানুভূতির সামীপ্যে আপনার নিজ-অন্তরাত্মায় আমার স্থান দৃঢ়তায় প্রবিষ্ট। অত্যুত্তম এই বিশেষ অভিসন্ধি নিশ্চিতভাবেই আমাদের অব্যবহিত পরবর্তী অভীষ্ট উপনীতিতে পর্যবসিত।

গভীর নীরবতা গ্রাহ্য করে শুদ্ধ চিত্তে, এই বিশেষ কক্ষে আপনার অতীন্দ্রিয় অভ্যাগমন কামনাদ্যোতক প্রবৃত্তে মোহিত; আপনার অনুভূতিতে প্রতীক্ষমাণ আমার প্রগাঢ় শ্রুতিমধুর নিস্বনের কল্পনাতীত ব্যাপ্তি। আপনার স্বল্পোক্তিপ্রবণতা আমার অন্তরাত্মার প্রণয়ের স্পৃহাকে বিশেষ ব্যাকুলতায় উন্মত্ত করে চলেছে।

এই বিশেষ প্রতিগ্রহের নিমিত্তে স্তম্ভিত আমার অন্তরীক্ষ; এক প্রভূত ক্ষণে, নিকষিত প্রেমান্ধতায় প্রবুদ্ধ এ মন, যা সূক্ষ্মদর্শিতায় আত্মাভিমানকারী—হে মননকারী, নিশ্চয়কারী, প্রমত্ত উপাধিরহিত অন্তরালে কেবল আপনার মহিমান্বিত রূপ নিষ্প্রতিভ।

হে সত্যকাম, এ প্রসিদ্ধ কক্ষ কি তবে কেবলই এক বিশেষ উপাসনার প্রকৃষ্টতম অবলম্বন? আরত্ত, যা সাক্ষাৎ করেছে অন্তরাত্মার অত্যুৎকর্ষ অনুভূতিকে, যা আপনার বিশেষায়িত ‘কষ্ট’ নামক অনুভূতিতে নিবিষ্টভাবে পরস্পর-সম্বন্ধিত। তৎসত্ত্বেও, এরূপে পৃথকভাবে উপাসনার পরিশিষ্ট বিনাশী, তথাপি পরস্পর-সম্বন্ধরূপে একীভূত হলে, আমাদের পরমাত্মায় অতীন্দ্রিয় অনুভূতির সাথে অভেদ নিরূপণ আসন্ন; যা শান্ত, অবিনাশী, অমৃত, সনির্বন্ধ ও সর্বোত্তম।

নিঃশঙ্কতায় এ কক্ষের স্থিরীকৃত চিত্তে আপনার অভিরতি প্রশংসনীয়; নিস্তব্ধতায় গমনোদ্ধত এ স্পর্শানুভূতির সম্যক গ্রহণ করুন।