আমি এক দুর্নিবার ফাঁদে আটকে গেছি, স্বেচ্ছায় ধ্বংস হচ্ছি।
একটি প্রতিশ্রুতির সাথে এই জীবনের দিনগুলি শুরু হয়েছিল,
যৌবনের পাখি উড়ে এসেছিল, তুমি তাকে দিয়েছিলে ডানা।
জেনে রেখো, শেষ পর্যন্ত আমি তোমার সাথেই থেকে যাবো,
এক ব্যর্থ কবির যাদুঘরে তোমার স্মৃতি যত্নে থাকবে, প্রিয়তমা।
একেক সময় ঘুমিয়ে পড়লে অনুভব করি, তুমি নেই, কেমন করে
চলে গেছো আর বুঝিয়ে গেছো, ভুল ছিল সব……ঘুম আসে না!
অনিবার্য সত্যে পৌঁছে জানলাম শেষে, তুমি সত্যিই চলে গেছো।
আমার প্রাণ নির্জন বিধুর, আলো নেই আর, ব্যথা জাগে খুব,
আনন্দ নেই, অতীত স্মৃতি কাঁদায় কেবলই। শুধু ভালোবেসেছি, প্রিয়,
আর কিছু নয়, তাই বলে কি নিঃশ্বাসের দায় এমন করে কষ্ট দেবে?
আজও চোখে আছো, দমে মিশে আছো, আছো আবেগে আর উদ্বেল বোধে,
আত্মা হারালে কে বাঁচে, বলো? তোমার মধ্যেই আত্মা বেঁধেছি, বুঝতে পারিনি।
কেবল তোমাকেই ভেবে বেঁচে আছি আজ, প্রেম ঢেলে আমি উষ্ণ প্রহর
শুধু বুনে যাই, শিশুর মতো মাতাল হয়ে জড়িয়ে ধরি পুরনো নিবিড় আস্থা রেখে।
চলে গেছো তাই, এই উষ্ণ ঠোঁটে, পাগল চোখে খুঁজছি তোমায়,
তোমার কণ্ঠের স্বর খায় না চুমু আগের মতো, ঘন দমের ভারে
আর কাঁপি না, পারি না ছুঁতে আর কখনো, ভাবলে এসব মাতাল লাগে।
স্বর্গে যাবো কি পুড়বো নরকে, পরোয়া করি না, তোমায় পেলে
পাপ যদি হয়, মেনে নেবো এর পরিণাম যতো। একেএকে সব
ছিঁড়ে পড়ে আজ, স্বপ্ন ভাঙে চুড়ির মতন, থামি না তবু।
তোমাকেই চাই মৃত্যু এলেও, ধ্বংস হলেও, তোমার যতো ক্ষণ আছে ভুল, আর
আছে খুঁত, ভালোবাসি সবই! শীতল রাতে, যখন মাতাল ঘুম আমার সিলিং বেয়ে নামে,
যখন পাপের প্লাবনে চাঁদ অন্ধকার হয়ে যায়, যখন ভয় এসে বুকের উপর নিঃসংকোচে ঝুলে থাকে,
রাতের তীক্ষ্ণ প্রান্তে সংশয় ছড়িয়ে রাখে চোখ, তখনও তোমায় কাছে পেতে চাই সবকিছু ভুলে।
এসো, রাত ধুয়ে দিই, পাপ মুছে দিই, চাঁদের গায়ে সাহস দেখাই,
যে সমুদ্র রাতেই জাগে, এসো সেখানে দুজন মিলে জাহাজ ভাসাই। এরপর,
দ্বিধাভয় ধুয়ে বরফ ভেজাই, এ রাত্তিরে রৌদ্র নামাই, কফির ধোঁয়ায়
চোখের কোণে আগুন জ্বালাই। সেতুর ওপারে ঝর্ণা ঝরে, রক্তে জাগে
নির্ভয়ে গান, জেগে উঠি আর ভাবতে বসি, এতটা সাহস কোথায় ছিল?
জীবনে খুব তাড়াতাড়ি বা পরে কিছু হয় না।
সমস্ত ব্যথা সময়মতোই আমাদের কাছে আসে!
আমাদের প্রতিদিনের জীবন থেকে দূরে সরিয়ে দেয়
বোকাবোকা বোঝা, আমাদের ভাবনা যতো, ছোট হয়ে আসে।
প্রেমকে বাদ দিলে ভালোবাসার কী অর্থ আছে? সুন্দর বলি যাকে,
ভালোবাসা সে তো---কষ্ট দিলেও জ্যান্ত রাখে!
এ জীবনে ভালই তো ছিলাম, সাগরের মতো মুক্ত ছিলাম,
আলোর মতো স্বচ্ছ ছিলাম। তবে কেন এলে নামাতে আঁধার?
জীবনে আগেও ঝড় এসেছে, দুলেছি দ্বিধায়, জবাব দিয়েছি
ঈর্ষার আর মিথ্যাচারের। তবু প্রেমের চেয়ে বড়ো অনুভব এ জীবনে
পাইনি এখনো। এই ছোট্ট জীবনে এতটা সবিনয় যত্নে ও প্রশ্রয়ে আর
কখনো নিজেকে সমর্থন করিনি। প্রেমে পড়ার পর আমি একটাই চিঠি
লিখেছিলাম। শোক যখন আমাকে আঁকড়ে ধরেছিল, তখন আমি
ওয়্যারড্রোব থেকে কান্নাকে মুক্তি দিয়ে ক্যানভাসে শক্তি এঁকেছিলাম।
আমাকে আর তোমার দরকার নেই, এতদিনের বিশ্বাস আজ নৈঃশব্দ্যে
মুখ থুবড়ে থাকে, চোখগুলি নিখরচায় চিরন্তনের বাগ্মিতা প্রসব করে।
আজ বুঝতে পারি, বেশি বলে যে, সে ভালোবাসে কম।
তোমার জন্য ভালোবাসা যা, নিখাদ, অজর। আজও অলৌকিকে
বিশ্বাস করে বেঁচে আছি। তুমি হারিয়ে গেছো, পারি না মানতেই,
আর কারো সাথে থাকলে হয়তো পাগলই হয়ে যাবো! তোমাকে ছাড়া
শ্বাস নিতেও কষ্ট হয়, মাথা ধরে আসে। প্রতিদিন এবং প্রতি মুহূর্তে
তোমাকে চাইতেই থাকি। এই চাওয়াই আমার অনুভূতি, আন্তরিক পর্যটন।
তুমি ফিরে আসো, আগের মতোই জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে বলো,
এসো, ঝগড়া করি, মিটিয়ে নিয়ে ঝগড়া করে একসাথেই বুড়ো হয়ে যাই।