বই আমার কাছে প্রেয়সীর মতো। ধার দেয়া যায় না, নেয়াও না। প্রেয়সী কাছে থাকলেই তো মন ভরে যায়; ছুঁয়ে দেখতেই হবে, এমন তো নয়। বইও তা-ই।
চুমু খাওয়া যতটা শিহরণ জাগায়, চুমু খাওয়া যায় খুব সহজেই, এমন দূরত্বে প্রেয়সীর ঠোঁটযুগল শিহরণ জাগায় কি কম কিছু? কিছু-কিছু বই আছে, যেগুলো ‘কাছে আছে’, এটা ভাববার আনন্দের দামও লক্ষ টাকা!
এক জীবনে মানুষ কতটুকুই বা পায়? কতটুকু সঞ্চয়ই বা ইকোনমিক্সের থিওরির প্যারালালে চলে? একটা বই কিনতে পারতাম, অথচ কিনলাম না ইচ্ছে কিংবা আলসেমি করে—এর আফসোস কয়েকটা মৃত্যুর সমান। প্রেয়সীকে শুধু এক পলক দেখতে বহু দূর পাড়ি দেয়া সময় ও অর্থ সাপেক্ষ হলেও নিরর্থক নয় মোটেও। একটা ভাল বইও তেমনি নিশ্চয়ই দেখতে যাওয়ার জিনিস, ছুঁতে যাওয়ার জিনিস। বই কেনায় পয়সার বাজে খরচাটাই দেখল সবাই, মনের খোঁজটা কেউ রাখল না।
হয়তো ওটা পড়াই হবে না কোনও দিন, তবুও যেটুকু সময় বাঁচব, ওটা না কিনতে পারার কষ্ট নিয়ে কেনো বাঁচব? বেঁচে থাকবার সময়টাতে অন্তত বেঁচে থাকি! আমার চোখের সামনে একটা ভাল বই থাকুক। আমি কখনও ওটা ছুঁয়ে দেখব, নাড়াচাড়া করতে-করতে দুএক পাতা পড়েও নেব টুক্ করে, বইয়ের পাতার ঘ্রাণে মাতাল হব—এমন অনুভূতি যে অমূল্য! পয়সা দিয়ে কেনা স্বস্তি বেঁচে থাকায় ওভারটাইম অ্যাড করে-করে আয়ু বাড়িয়ে দেয় অনেকখানিই। আমার তো প্রায়ই মনে হয়, মানি ইজ দ্য চিপেস্ট বারগেইন! যে সুখ পয়সা দিয়েই কেনা যায়, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সে সুখ কেন কিনব না? এত কম খরচে বেঁচে বাঁচা! ভাবা যায়! তবু বাঁচব না?
ওপরের কথাগুলো স্রেফ স্বগতোক্তি। আমি যতটা পাঠক, ততধিক ক্রেতা। বই কেনা হয় প্রায়ই, পড়া হয় কমই। বই জমে যায় শেলফে, মাথায় নয়। অসহায় আমি আমার লাইব্রেরির দিকে তাকিয়ে থাকি আর ভাবি, হে ঈশ্বর, আয়ু দিলেই যখন, তখন বই পড়ার আয়ুও কিছু দিয়ো। এই পৃথিবীতে জন্মের প্রয়োজনে আমাকে মৃত করে রেখেছিলে, অন্তত মৃত্যুর প্রয়োজনে একটু বাঁচিয়ে রেখো।