প্রেরণাপ্রভা



আপনিই তো একদিন লিখেছিলেন—
"যত বড়ো হই, নাম-ডাক বাড়ে, কিন্তু ডাকনাম কমে যায়!"

আমি চাই, আপনার দুটোই বাড়ুক— আপনার নাম-ডাকের মহিমা ছড়িয়ে পড়ুক, আর সেই সঙ্গে আপনার অন্তরঙ্গতার ডাকনামও টিকে থাকুক। এমন অসাধারণ এক মানুষের খ্যাতির প্রাচুর্য থাকা তো স্বাভাবিক! আপনার সুনামের একমাত্র অধিকারী হয়তো শুধুই আপনি, তবু বহু মানুষ আপনার চোখে তাকিয়ে খুঁজেছে বেঁচে থাকার অর্থ। তাই আমি আপনাকে একটি নাম দিয়েছি— "শায়ের"—যার অর্থ "সফল" কিংবা "বিজয়ী"।

নাম-ডাক বাড়লে সমস্যা হয় না, যদি শান্তিতে বাঁচা যায়। আপনিই তো লিখেছিলেন, "ফেমাস হবার বিড়ম্বনা" নিয়ে—শুরুর দিকে ভালোই লাগে, পরে তো জ্বালা লাগে!

তবে সে যাক...

আপনাকে কখনও জিজ্ঞেস করিনি—"স্যার, কেমন আছেন?"
জিজ্ঞেস করার সাহসই পাইনি।
আপনারই লেখা একবার পড়েছিলাম—এই প্রশ্নের অন্তর্নিহিত সত্যতা নিয়ে।
কেউ কেমন আছে, তার উত্তর কি সত্যিই জানা যায়?
আর জানলেও কি করার কিছু থাকে?
তাই এই প্রশ্নটি আর কখনও করা হয়নি।

যাকে গুরু মানি, তাকে বন্ধু বলেই হৃদয়ে লালন করি। হোলিখেলায় রঙের প্রথম ছটা ভগবানের গায়ে গিয়েই লাগে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এখানে পরম সখা, আত্মার প্রকটতম অস্তিত্ব; তাই তাঁকে নিবেদনের মধ্য দিয়েই আনন্দ-উৎসবের উদ্‌বোধন। বন্ধু ভাবতে পারি না যাকে, তার প্রতি সম্মান বা ভালোবাসা কোনোটাই জাগে না। স্রষ্টাকে বন্ধুর আসনে বসাতে না পারা ধর্মপালনের পথে প্রথম অন্তরায়। ভগবানকে দূরে সরিয়ে রাখলে যে মানুষ নিজেই নিজের কাছ থেকে দূরে সরে যায়।

"ভাবনায় যার শেষ নেই, সে তো হৃদয়েরই বন্ধু, তাই না, স্যার?"
আপনার সঙ্গে কথা বলতে কখনো কি সংকোচ কাজ করেছে?
তা তো করেনি! নিজের কথা অনায়াসে বলে ফেলতে পারি, কারণ আপনার আলোকিত জীবনের কিছু আলো এসে আমার দিকেও ছড়িয়ে পড়ে…

এ যেন এক পরশপাথরের ছোঁয়া!—জীবনটা রূপকথার মতো বদলে যাবে হয়তো, আপনার খেয়ালের প্রসঙ্গ ধরে বলা কোনো এক কথার রেশ টেনে!

আমি ভাবি, যে-মানুষটা শুধু মনের প্রশান্তির জন্যই এত কিছু করে যেতে পারেন, তার মনের বিশালতার সামনে পৃথিবীর সব অশুভ শক্তি পরাজিত হোক!

স্যার, আজ একটা বিশেষ দিন। (কতদিন দেখিনি আপনাকে...) আপনার কাছে হয়তো এদিন ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, কিন্তু আমাদের কাছে, আপনার অনুগামীদের কাছে, এ এক বিশেষ প্রাপ্তির দিন।

আজকের দিনে যদি স্রষ্টা আপনাকে না পাঠাতেন, তবে কী হতো! আপনার মতো মানুষের অস্তিত্ব যে শুধু নিজের জন্য নয়, তার প্রতিফলন দেখা যায় কোটি মানুষের জীবনগাথায়।

স্যার, আপনি তো "আর্টস অব লাইফ" শেখান! কী চমৎকার আপনার শব্দচয়ন! কী যে স্বস্তির পরশ মেলে আপনার হৃদয়ের কথা পড়তে! লাগে যেন— এ আমারই মনের কথা, এ আমাদেরই শত-কোটি মানুষের মনের কথা!

কেউ কি এতটা সহজ ভাষায়, এত গভীর অনুভূতি প্রকাশ করতে পেরেছে?

"ভালোবাসি"— যখন কেউ বলে, তারও এক গোপন অর্থ থাকে। আপনিই তো প্রথম আমাদের ভাবতে শিখিয়েছেন, স্রষ্টাকে ভালোবাসায়, ইবাদতে, প্রার্থনায় শ্রম থাকতেই হয়—এমন ভাবনাগুলো আগে কজনই-বা লিখেছে?

স্যার, আরও কত মানুষ আছে, যাদের আপনি যত্ন করে সময় দিয়ে বেঁচে থাকা শিখিয়েছেন!
আপনার ভাষাতেই বলি— "নিজের শরীর থেকে মাংস কেটে দেবার মতো কাজ" করে গেছেন তাদের জন্য।

আপনাকে না পেলে তাদের কী হতো? তারা কি অন্য উপায়ে বেঁচে যেত? না কি মরে যেত…একটুখানি আলোর পথের ইঙ্গিতের অভাবে?

আপনার মতো একজন মানুষের স্পর্শে তারা নতুন করে জীবন খুঁজে পেয়েছে।

আপনার স্নেহমিশ্রিত তিরস্কার—কী আশ্চর্য শক্তি রাখে তা! নিজের অজান্তেই কাজ সহজ হয়ে যায়!

আপনি ঠিকই বলেন, মানুষ কি শুধু গায়ের জোরে সব করে? মানসিক শক্তিতে কত কিছুই তো সম্ভব! আর সেই মানসিক শক্তি আপনি ঠিকই বাড়িয়ে দেন একনিমিষেই!

হা হা, স্যার! আপনার লেখা "ছাগলশ্রেণী" নিয়ে যখন পড়ি, ভাবতাম—"আরে! আমি তো দেখি এই ছাগলটাই!" আবার যখন লিখতেন "জিনিয়াস", তখন মনে হতো—"এটাই তো আমি!" কিন্তু যখন আপনার সঙ্গে কথা বলতে যাই, তখন মনে হয়—"এ-ই তো সেই ছাগলটাই!"

আপনার স্বল্প কথার প্রহসনেও কত মানুষের পথ বদলে যায়, তা কি আপনি জানেন স্যার?
বখে-যাওয়া ছেলেটা, যাকে শাসন করার কেউ নেই, সে আজ গভীর মনোযোগে পড়তে বসার ভান করছে। প্রেমে ব্যর্থ-হওয়া মেয়েটি, যে ভেবেছিল জীবনের সব শেষ, আপনার একটা কথাতেই নতুন করে দেখতে শিখেছে জীবনকে।

আপনার কথাগুলো ঠিক এভাবেই ছুঁয়ে যায় শত মানুষের হৃদয়, অগণিত ঠিকানায় পৌঁছে দেয় অনুপ্রেরণার আলো।

যিনি বাঁচতে শেখান, তার ঋণ কি কখনো শোধ করা যায়?

আপনি বলেন না, "জীবন তো একটাই! কালকের দিনটা বেঁচে দেখি..." "বেঁচে থাকলে কষ্টও থাকবে, মরে গেলে তো কষ্ট পাবার সুযোগও নেই!"

একজন "নো-বডি"-র জীবনগল্প, কোটি মানুষের অনুপ্রেরণার গল্পে পরিণত হয়েছে আপনার হাতে!
"সাপলুডুর জীবন" লেখাটি পড়েছি অগণিত বার, তবু প্রতি বার নতুন মনে হয়!

আপনার জীবনবোধ, আপনার প্রতিটি লেখা,
জীবনের প্রতিটি অলিতে-গলিতে থাকা অগণিত মুখোশ,
প্রতিটি বাধা, প্রতিটি আঘাত—
সব কিছু আপনি আমাদের চোখের সামনে তুলে ধরেছেন, যেভাবে আর কেউ পারেনি, পারবেও না! কারণ আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী শুধু আপনি নিজেই!

স্যার, অনেক কথা জমে থাকে, লেখা হয় না... লিখতে গিয়ে মনে হয়— ইস! কী সব লিখছি! আবার ব্যাকস্পেস দিয়ে মুছে দিই।

আজ সাহস করে দু-চার কথা লিখে ফেললাম। হোক যাচ্ছেতাই, আপনি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

একটা ভিডিয়ো পাঠিয়েছি আপনাকে।
দুই জন আইসস্কেটারের অসাধারণ পারফরম্যান্স...কিন্তু দর্শক নেই, করতালিও নেই। তবু ২৯ মিলিয়ন ভিউস!

কেবল পারফর্মাররাই নয়, একজন ক্যামেরাম্যানও থাকেন—অসাধারণ!

গানের কথাগুলো শুনেছেন, স্যার?
"Forever trusting who we are...
No, nothing else matters..."

আপনি প্রায়ই বলেন— "সময়ের আগে আর অদৃষ্টের বাইরে কিছুই পাওয়া যায় না।" আমিও তা-ই বিশ্বাস করি স্যার—নিয়তি আমাদের শেষ গন্তব্যের দিকে এগিয়ে নিচ্ছে...
Content Protection by DMCA.com