প্রত্যাশা খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। আপনার কাছের মানুষটার প্রতি আপনার যেমন কিছু প্রত্যাশা থাকবে, ঠিক তেমনি আপনার কাছের মানুষটারও আপনার প্রতি কিছু প্রত্যাশা থাকবেই।
দুই ক্রোশ দূরে বসে চা-বিক্রি-করা লোকটার প্রতি কিংবা সুইডেনে বসে-থাকা পৃথিবীর সর্বোচ্চ ধনী লোকটার প্রতি আপনার কোনো প্রত্যাশা থাকবে না। কেন, জানেন? সে আপনার কেউ হয় না।
কেউ আপনার কিছু হলে কিংবা আপনি কারও কিছু হয়ে গেলে প্রত্যাশা তৈরি হয়। আপনার বাবা-মা রোজ আপনাকে ভালোবাসুক যেমন চান, স্নেহে-আদরে আগলে রাখুক যেমন চান; ঠিক তেমনি, তারাও চায়, আপনি তাদের সম্মান করুন, ভরসা দিয়ে আগলে রাখুন।
যে আপনার যত কাছের, তার প্রতি আপনার প্রত্যাশার পারদ তত উপরে থাকবে। যে আপনার কিছুই হয় না, তার প্রতি প্রত্যাশার পারদ থাকবে সবার নিচে।
ঘরে ফেরার পর আপনার মানুষটা একটু মিষ্টি হেসে ভালোবেসে কথা বলুক, ক্লান্তির সময়ে একগ্লাস ঠান্ডা জল মুখের কাছে এনে দিক, খুব মাথাব্যথায় মাথাটা হালকা টিপে দিক…এসব আপনি চান।
আবার আপনার মানুষটাও চায়, জন্মদিন কিংবা অ্যানিভার্সারিতে সবার আগে উইশটা আপনি করুন, ঘরে ফিরতে একটা বুনোফুল হলেও হাতে করে নিয়ে আসুন, তার জ্বরে কপালে হাত দিয়ে তাপমাত্রাটা একটু মেপে দেখুন।
এগুলোকে প্রত্যাশা বলে, ডিমান্ড অব ন্যাচার বলে।
প্রত্যাশা এবং ভালোবাসা, এ দুটো একই সুতোর এপার ওপার। যেখানে ভালোবাসা থাকে, সেখানে প্রত্যাশা অবশ্যই থাকবে। যেখানে সম্পর্ক কিংবা ভালোবাসা থাকে না, সেখানে প্রত্যাশার কোনো চিহ্নই থাকবে না। এটাই নিয়ম, এটাই স্বাভাবিক।
আপনার সঙ্গীকে আদর করার পর যেমন একটু বুকে জড়িয়ে ধরে চুপ করে থাকাটা আপনার বা তার প্রত্যাশা থাকে, একজন কলগার্লের কাছ থেকে ঠিক একই আদর গ্রহণ করার পর কিছু টাকার লেনদেন হলেই তার প্রতি তেমন ধরনের কোনো প্রত্যাশা থাকে না। পার্থক্যটা এখানেই।
একজন আপনার ভালোবাসার মানুষ, তাই প্রত্যাশায় ঘেরা; আরেকজন আপনার কেউ নয়, তাই সেখানে আপনি প্রত্যাশাহীন।
কেউ যদি কখনো বলে বসে, “তোমার প্রতি আমার কোনো প্রত্যাশা নেই”, অথবা “আমার প্রতি কোনো প্রত্যাশা রেখো না”, তবে এর অর্থ হলো, সে আপনাকে কখনও তার কাছের কিছুই মনে করে না। আপনি তার কিছুই হন না, সে-ও আপনার কিছুই হয় না।
এখানেই হিসেব, পারদের তারতম্য—ঠিক যেমনটা আপনার এলাকা থেকে ক্রোশখানেক দূরের অচেনা কোনো ফেরিওয়ালা কিংবা টাকায় বিনিময়যোগ্য সেই রাতপরীর ব্যাপারে আপনার অনুভূতির পার্থক্য।
বুঝতে শিখুন, কে আপনার কী হয়, কিংবা আদৌ সে আপনার কিছু হয় কি না।
যে আপনার কপালে হাত দিয়ে জ্বর মেপে দেখাটুকুও প্রয়োজন মনে করে না, তার জন্য আপনার মেধা ও সময় খরচা করে কবিতা লেখাও বন্ধ করে দিন।
সব কিছুকে হিসেবে হিসেবে সমান্তরাল লাইনে চলতে দিন; দেখবেন, একদিন ঠিকই সব ঠিক হয়ে যায়।
চলছে যেমন চলুক,
তোমাকে যে ছাই ভাবছে,
তার তুষেও আগুন জ্বলুক।