আমি এখন সেই মানুষটা, যার জন্য কেউ অপেক্ষা করে না। যার প্রতীক্ষারও কোনও মূল্য নেই কারও কাছেই। যার কথা কেউ শোনে না। যার অনুপস্থিতিতে কারও কিছু এসে যায় না। যার নিজের বলতে কেউ নেই। যার আপন বলতে, আপনার বলতে কিছু নেই। যাকে একা দেখে কারও মধ্যে একটুও খারাপলাগা কাজ করে না। যার অসুস্থতায় অন্য কেউ দুশ্চিন্তা করে করে পাগল হয় না। যার জীবন থেমে গেলেও কারও মনে কিছুই আঘাত লাগে না। আমি এমন কেউ যে নেই হয়ে গেলে কেউ এই সামান্য অনুভবটুকু করবে না যে, সেই মানুষটা নেই আর। যার কষ্ট কাউকে ভাবায় না, কষ্ট দেয় না, কাঁদায় না। এজন্য আমি আর স্বপ্ন দেখি না, বাঁচি কি মরি কোনও কিছুতেই খুব বেশি চেয়ে ফেলি না। আমার কাছে পুরো জীবনটাই অস্পষ্ট। আর হ্যাঁ, যাকে ভালবাসি তাকে সারাজীবনই ভালোবাসি। সে ভালোবাসলেও বাসি, না বাসলেও বাসি। আমার কাছে, চোখের আড়াল হলেই মনের আড়াল হয়, তেমন কখনও না। হ্যাঁ, জীবনের কাছে কিছু একটা চাইতে ভীষণ ভয় হয়। মনে হয়, যা-ই চাই না কেন, কিছুই পাব না। আগেও বলেছি, হিসেবি মানুষের মধ্যে আমি বড্ড বেহিসেবি আর আনাড়ি। আচ্ছা, তুমি তো আমার একটা খোঁজও নাও না। তোমাকে খোঁজ নেওয়ানোর জন্য আমার কি মরে যেতে হবে তা হলে? শোনো, আমার খুব তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা হচ্ছে আর তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে ইচ্ছা হচ্ছে। তুমি কিচ্ছু বোঝ না! তোমাকে একশোটা ভূতে ধরুক!
আচ্ছা, যারা প্রশ্নফাঁস পরীক্ষায় সফল হয় অথবা নিয়মবহির্ভূতভাবে চাকুরিতে প্রবেশ করে, তাদেরকে আবার আগ বাড়িয়ে অভিনন্দন জানাবার কী আছে, বুঝতে পারি না! আমরা কেমন জানি…দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলতে ছাড়ি না, আবার অন্যভাবে সেটাকে প্রশ্রয়ও দিই! যারা এই কাজগুলো করছে, তাদের কাজকে সামান্য ধিক্কার জানাবার শক্তিটুকুও আমাদের নেই, অথচ মুখে বড় বড় কথা বলি, পারলে সরকারের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করে ফেলি! আর আমি যদি কোনও দিন এভাবে চাকুরিতে প্রবেশ করি (এখনও যেহেতু করছি না বা করিনি), তবে আগে থেকেই জানিয়ে রাখছি, আমি সেটা কখনওই ঘটা করে জানাব না, আর দোয়াও ভিক্ষা চাইব না। (কেননা সব সময় তো মনে মনে ভয় কাজ করে, চাকরিটা যদি চলে যায় যদি চলে যায়!) অপকর্মের জন্য অন্যের দোয়া চাওয়া আর মদদ চাওয়া তো একই কথা। আমাদের লজ্জা করা উচিত ছিল। এগুলোকেও কিন্তু চারিত্রিক অধঃপতন বলা হয়ে থাকে। আমরা তো চরিত্রকে শুধুই শরীরভিত্তিক করে ফেলেছি! মেয়েগুলোও কেমন জানি! জামাইয়ের ঘুষের টাকায় আরাম করে হাসিমুখে চলতে পারে, আর জামাই কোনও মেয়ের কথা ভাবলেও তা জানতে পারলে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে! এত মূর্খ! এত ভণ্ড! যত দিন পর্যন্ত মেয়েরা পুরুষের চরিত্র বলতে কেবলই প্রজননযন্ত্রের একমুখিতাকে বুঝবে, তত দিন পর্যন্ত এই দেশ দুর্নীতিমুক্ত হবে না।
কুট্টুসসোনা, তুমি অনেক ভালো একজন মানুষ, তুমি আমাকে অনেক আদর ভালোবাসায় রেখেছ, অনেক অনেক অনেক স্নেহও কর, কিন্তু তোমার উচিত আমার জন্য সময় করে আরও একটু বেশি সময় বের করা। যেমন ধরো, প্রতিদিন তুমি অন্তত ২ মিনিট আমার সাথে ফোনে সময় দিলে, তা হলে কিন্তু আমি আর তোমার উপর তেমন অভিযোগ করব না। আসলে আমি খুব ফাজিল আর মাথানষ্ট টাইপের মেয়ে, বুঝতে পেরেছ, জানপাখি? তা হলে একটু চেষ্টা করে দেখো তো পার কি না! ঠিক আছে? তুমি কেন আরও বেশি বেশি লিখ না? কেন বেশি বেশি রাগ করে থাক? তুমি লিখলে আমার ভালো লাগে। তুমি রাগ করলেও আমার ভালো লাগে। হি হি হি। আসলে তোমাকে আসল কথাটাই বলা হয়নি। আসল কথা হচ্ছে, আমি কোচিং-এর গত কয়েকটি পরীক্ষায় ২০০ এর মধ্যে ৬০ করে পাচ্ছি, মানে থার্টি পার্সেন্ট। এজন্য আমার দোষ আছে, আমি পড়াশোনা করছি না। কিন্তু মার্কস দেখে আমার মন ভীষণ খারাপ। এখন আমাকে কোচিং-এর সিলেবাস কমপ্লিট করতে হবে। এসব কারণে আমি একটু মাথানষ্ট অবস্থায় আছি। অবশ্য তুমি আমাকে ঠিকমতো সময় দিলে আমি পড়াশোনা ঠিকঠাক করব। আমি আসলে এতটাও ফাঁকিবাজ নই। তুমি দেখো, সব ঠিক করে ফেলব আমি।
আজকাল এসব কী হচ্ছে আমার? আমার পড়াশোনার কথা মনে থাকছে না, পরীক্ষায় বসছি না, পড়াশোনা যে করছি না, তাও কোনও দুশ্চিন্তা হচ্ছে না যে সামনে কীভাবে কী করব, কী হবে আমার---আমার এসব কিচ্ছু মাথায় নেই। কেন নেই? কেন এত স্বাভাবিক আছি? কী করে আছি? আমি সারাদিন কীভাবে কাটাই তার কিছুই মনে থাকছে না, শুধু সময় কোন দিক দিয়ে যেন কেটে যাচ্ছে। রাত আসে আবার ভোর হয়, তার পর আবার রাত...অথচ কোনও কিছুই যেন আমাকে স্পর্শ করে না। মাঝে মাঝে তোমাকে খুব খুব খুব জড়িয়ে ধরে থাকতে ইচ্ছে হয়। তখন মনে হয়, এখনই তোমাকে কাছে না পেলে মরেই বোধহয় যাব। আমি কি আসলেই তোমাকে না পেয়ে মরে যাব? এসব কেন হচ্ছে আমার সাথে? আমি তোমাকে না ভাবলেও তুমি আমার অনুভবে এসে যাও। এর পর যখন আমরা একসঙ্গে সময় কাটাব, সে সময়টাতে তুমি আর একটু বেশি সময় নিয়ে আমাকে তোমার বুকে শক্ত করে জড়িয়ে রেখো, কেমন? আমার মাথা হাত বুলিয়ে চুমু খেয়ে আদর করে দিয়ো, ঠিক আছে? আমার মাঝে মাঝে মনে হয় আমার মাথায় বোধহয় ভূত ভর করেছে, নইলে তোমাকে লেখার সময় এত কথা আসে কই থেকে!
আগে থেকেই ডায়েরি লেখার অভ্যাস আমার। ক্লাস সেভেন কি এইট থেকে প্রতিদিন কিছু কিছু লিখতাম যা মনে আসত। সেগুলো কোনওটাই গল্প অথবা কবিতা ছিল না। সেগুলো ছিল আমার শুদ্ধ অনুভূতি। অবশ্য প্রতিদিন যে লিখতাম তাও না। যখন ইচ্ছা হতো তখনই লিখতাম। কিন্তু আজ যখন তোমাকে কিছু লিখি, তখন আসলে অতটা খেয়াল থাকে না কী লিখছি, অথবা আগে থেকেই কিছু ঠিক করে লিখতে বসি না। যখন নিজেকে বলি তোমাকে আজকে কিছু একটা লিখি, তখনই কথাগুলো আপনা থেকেই ভেতর থেকে চলে আসে। আমাকে কিছু সাজাতে হয় না, সাজিয়ে গুছিয়েই ওরা আসে। কিন্তু এখন যদি মাঝে মাঝে পেছনের লেখাগুলো চোখে পড়ে, তখন আমি ভীষণ ভয় পেয়ে যাই, আমি এত কিছু লিখেছি? আমি এত কথা কই পেলাম? আমি এত লেখা কী করে লিখলাম? মনে হয়, দশতলার ছাদে ওঠার পর টের পেলাম আমি আসলে দশতলায় উঠেছি, অথচ যখন সিঁড়ি ভাঙছিলাম তখন খেয়ালই হয়নি। আমি তেমন কিছুই লিখিনি, কিন্তু আমার আঙুল দিয়ে এতগুলি কথা…সে যা-ই হোক, বেরিয়েছে তো, এটা দেখেই আশ্চর্যান্বিত হই। আবার এ-ও মনে হয়, আমি বোধহয় পাগল হয়ে গেছি, নয়তো পাগলদের পক্ষেই একতরফাভাবে একা একা এত কথা বলা সম্ভব! তা না হলে অকারণে এত কথা কে আবার বলে! জানো, আমার বিয়ের আগের সব ডায়রি আমি জেদ করে পুড়িয়ে ফেলেছি, আর তার পরেরগুলো শুধুই আমার আশেপাশের মানুষের প্রতি রাগ আর ঘৃণা দিয়ে ভরা। কিচ্ছু নেই ওগুলোতে। তা ছাড়া ডিভোর্সর পর আমি লেখালেখি একদম ছেড়ে দিয়েছিলাম। এমনকি আগে যা যা করেছি, সব কিছু ছেড়ে দিয়েছিলাম, তখন শুধু অনেক রাগ হলেই ডায়েরি লিখতাম। তাই ওগুলাতে ভালো কোনও কথা নেই। ওগুলো আমি কাউকে কখনওই দেবো না। কেউ আমাকে টানা ১০ ঘণ্টা নগ্ন হয়ে লাইটের আলোয় তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে বললে হয়তো আমি তা-ও থাকতে পারব, কিন্তু তার হাতে আমি ডায়েরি দিতে পারব না। কারও ডায়েরি পড়া মানে তার দুর্বলতা জেনে ফেলা। আমার ডায়রিতে তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছুই নেই, তবুও আমি সেগুলি কাউকেই ধরতেও দেবো না ঠিক করেছি। আমার ভেতরের কোনও কিছু কেউ জানুক, তা আমি চাই না। প্রয়োজনে পুড়িয়ে ছাই করে ফেলব, তবুও দেবো না কাউকেই। আচ্ছা, আমার কোনও কথায় তোমার বিশ্বাস নেই, এমন নয় তো? আই মিন, আমি আমার ব্যাপারে তোমাকে যা বলি, সেগুলো নিয়ে তোমার মনে কোনও সন্দেহ নেই তো? দেখো, তুমি আমাকে এতদিনেও তোমাকে একটুও বুঝতে দাওনি। তুমি আমাকে যতটা বোঝ, আমি তোমাকে তার ১%-ও বুঝি না, তা হলে আমি কেন তোমাকে আমাকে বুঝতে দেবো? তুমি তো কখনও আমার সামনে নিজেকে ওপেন কর না, তা হলে আমি কেন করব? আমি তোমার কিচ্ছু বুঝি না। আমি তোমাকে কিচ্ছু জানি না। আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি।
দেখো, তুমি আমার কিছু দেখা আর অন্য কেউ দেখার মধ্যে পার্থক্য আছে। আমি নিজের দুর্বলতা কারও কাছে প্রকাশ করতে অপছন্দ করি। আমার কারও কাছে কিচ্ছু এক্সপেকটেশন নেই, এ নিয়ে মাথাব্যথাও নেই। যেখানে আমি ডায়রি তোমাকেই পাঠাতে চাইনি, কেননা তুমি আমাকে বুঝে ফেলবে পুরোটা না হলেও কিছুটা, সেখানে তুমি তা চেয়েই যাচ্ছ চেয়েই যাচ্ছ! কেন চাইছ? আমার ডায়রি পাবলিশ করবে নাকি! মাথা খারাপ তোমার? আর সত্যিই বলছি, আমার ডায়রিতে আসলেই কিচ্ছু নেই নেই নেই। যেগুলোয় যা-ও কিছু হয়তো পাওয়া যেত, সে সবই আমি পুড়িয়ে ফেলেছি। আমার সবচাইতে ভালো কবিতাগুলি আমি পুড়িয়ে নষ্ট করে ফেলেছি। এজন্য এটা নিয়ে তুমি কৌতূহল চেপে রেখো না, কষ্ট পাবে। এসব বরং বাদামের ঠোঙ্গা বানানোর অনুপযোগী। তুমি প্লিজ কিচ্ছু আশা কোরো না। আমি যে কী দিয়ে বোঝাবো তোমাকে। আচ্ছা ঠিক আছে, আমি পাঠাচ্ছি, কিন্তু আমি সত্যিই বলছি, কিচ্ছু নেই এতে। আমাকে নিয়ে কিচ্ছু লিখো না তুমি। আমাকে মাফ করে দাও। তোমার উপর আমার কোনও রাগ নেই, তোমার কোনও কিছুর উপর আমার রাগ নেই। আমি শুধু অন্যের সামনে প্রকাশিত হতে চাই না। তোমার যদি কখনও আমার সম্পর্কে সব কিছু জানা হয়ে যায়, তা হলে কি তুমি আমাকে আর এত ভালোবাসবে না? অথবা সেখানে এমন কিছু যদি থাকে, যা তোমার অপছন্দের? আমি জানি না সেটা কী। কিন্তু যদি এমন হয়, তখন?
আমি আসলে তোমাকে হুটহাট কিছু লিখতে অথবা বলে ফেলতে ভয় পাই। আর ইদানীং আরও ভয় পাই, কারণ তুমি আমার সব কথাই গুরুত্ব দিয়ে নাও, হোক সেটা নিতান্তই তুচ্ছ কোনও বিষয়। এজন্য তোমাকে কিছু বলে ফেলতে অথবা লিখে ফেলতে ভয় পাই। আর একটা আজব বিষয় ঘটে, সেটা হচ্ছে, যখনই তোমাকে কিছু লিখতে বসি, তখনই ঘরে তুমুল কাণ্ড বেধে যায়, আর এজন্যই, যে মনোযোগ বা মানসিকতা নিয়ে লিখতে বসি, সেটি আর থাকে না, মন অন্য দিকে চলে যায়, যা লিখতে চেয়েছিলাম তার বেশিরভাগই ভুলে যাই আর তুমি তো বোঝ, বিক্ষিপ্ত মন নিয়ে কিছু করা যায় না। তখন অবশ্য মেজাজটা একটু গরম হয়। বারবার মনোযোগ নষ্ট হতে থাকে, পড়াশোনা করতে গেলেও এমন হয়। আমার বাসার মানুষের এ বিষয়ে হয়তো বিশেষ কারণে অ্যালার্জি আছে, এজন্য আমাকে টেবিলে বসতে দেখলেই অথবা নিজের কোনও কাজে ব্যস্ত দেখলেই অন্য ঝামেলা বাধিয়ে বসে। তাদের আর একটা ক্ষুদ্র সমস্যা, যেটি আমাকে বিরক্ত করে সেটি হচ্ছে, যখনই তারা দেখে আমি গান শুনছি অথবা নিজেকে নিয়ে একটু অলস সময় কাটাচ্ছি, (কারণ আমি সাধারণত একেবারে অলস সময় কম কাটাই, হয় ঘরের কাজ থাকে, নয় পড়াশোনা, নয়তো বাইরের কোনও কাজ, নয়তো টিউশন, এসব নিয়েই থাকি সারাদিন। আমি সাধারণত কাজ না থাকলে কাজ তৈরি করে নেওয়া টাইপের মেয়ে, আমি হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে পারি না।) অথবা অন্য কোনও বই পড়ছি, তখনই আমাকে দিয়ে আরও কাজ করিয়ে নেওয়ার ভূত চাপে ওদের মাথায়। আমি তো আমার যেটুকু করার, তার চেয়েও অনেক অনেক বেশি কাজ করে দিই, তার পরও ওদের হয়তো চাহিদা থেকেই যায়, কিন্তু ওদেরও বোঝা উচিত আমারও একান্তই নিজের বলতেও কিছু আছে।
যা বলছিলাম, যদিও তুমি আগেই বলে দিয়েছ যে আমার কোনও কথাতেই তুমি কোনও রাগ করবে না অথবা কিছু মনে করবে না, তাও বলি, শোনো। হ্যাঁ, আমার জন্য হয়তো তোমার কাছে আমার সাতখুন মাফ আর তোমার এই সাতখুন মাফ বিষয়টিকেই আমি সবচেয়ে বেশি ভয় পাই, মেনে নিতে ইচ্ছে হয় না। কাউকে ভালোবাসলে তার সব কিছুই মেনে নিতে কেন হবে? এটা কি তার প্রতি ভালোবাসা না কি নিঃস্পৃহতা? এর পেছনে অবশ্য একটা কারণও আছে, সেটা হচ্ছে আমার বেস্ট ফ্রেন্ডও এমন মানসিকতারই ছিল। হঠাৎই অজানা এক কারণে আমরা এখন আর ফ্রেন্ড নই, যদিও মনে মনে ও-ই এখনও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড, কিন্তু আমি অথবা সে হয়তো কেউ কাউকে ভুল বুঝে বা কোনও এক অজ্ঞাত কারণে সম্পর্কটিকে এখন আর আগের মতো টেনে নিয়ে যেতে পারছি না। যা-ই হোক, এই বিষয়ে তোমাকে আমি অন্য কোনও দিন বলব। আমি কিন্তু চাই তুমি আমার সাতখুন মাফ না করো। মানুষ হিসেবে আমারও তো ভুল থাকতে পারে, আর সেটা বলে ফেললে আমার ভালো লাগবে, তোমার কাছে থেকে সেটা জানার অধিকার কিন্তু আমার আছে। তুমি বললে আমার ভালো লাগবে, অন্য কেউ নয়, তা ছাড়া আমাকেও সুযোগ দেওয়া উচিত আমার ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার, যে ভুলগুলোর কথা হয়তো আমি নিজেই জানি না। তুমি বাদে অন্য কারও কথা আমি তেমন আমলে নিই না, দুই-একজন বাদে।
তোমাকে আজকে মেয়েদের ঘরোয়া কিছু কথা বলি। আমি জানি না তুমি এসব সম্পর্কে জানো কি না অথবা জানলেও তা কতটুকু জানো। প্রথমেই বলছি, পুরুষদের আসলে অনেক ধৈর্য। প্রায় সবাইকেই বলতে শুনি, মেয়েদেরকেই সংসারে সব কিছু বেশি সহ্য করতে হয়। যে সংসারে মেয়েরা সহ্য করে না, সে সংসার টিকেও না। কিন্তু আমি কেন জানি কথাটি পুরোপুরি মানতে পারি না। হ্যাঁ, একটা সংসার মেয়েদেরই বেশি গুছিয়ে নেওয়া উচিত, কেননা মেয়েদের এটা একটা বড় দায়িত্ব বলেই আমি মনে করি। প্রায়ই ঘরে পুরুষরা বাইরে জীবিকার জন্য ছোটে, ওদের ওই সময় কই? আর মেয়েদের এই দায়িত্বটা পালন করতে ভালো লাগার যৌক্তিক কারণও আছে। পুরুষেরা হবে কঠিন আর মেয়েরা হবে নরম, সেই সাথে মমতাময়ী। জন্মসূত্রেই এটা মেয়েদের বৈশিষ্ট্য, আর এমন হলেই মেয়েদের মেয়ে বলে মনে হয়, মানায়। নম্রতা আর মমতা দিয়েই তারা তাদের অধিকার হোক আর যা-ই হোক, আদায় করে নেবে। আসলে সব কিছুরই ভালো খারাপ দুটো রূপ হয়, সব কাজই ভালো খারাপ দুভাবেই করা যায়। আমাদের অধিকারের প্রসঙ্গ তুলে আমরা বিদ্রোহ করি বলেই সংসারের অনেক জায়গা আমাদের কাছে রণক্ষেত্রের মতোই মনে হয়, না হলে ওসব নিতান্তই আমাদের ঘরোয়া ব্যাপার হয়েই থাকত। আমি স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছি, পুরুষদের বাইরের কাজে যতই দক্ষতা থাকুক না কেন, মেয়েদের মতো জটিল ঘরোয়া বুদ্ধি পুরুষদের মাথায় তেমন ঢোকে না, সেই দিক দিয়ে পুরুষেরা কিছুটা বোকা, আর এই সুযোগটাই মেয়েরা কাজে লাগাতে পারে। মেয়েদের কোনও চালাকিপূর্ণ মানসিকতার জন্য যদি সংসারে সুখ থাকে, সেই সাথে অধিকারও আদায় হয় ঠিকমতোই, তা হলে ক্ষতি কী?
আমাদের অধিকারের জন্য যুদ্ধ করতে গিয়ে আমরা নিজেরাই বরং রক্তাক্ত হই। অথচ দেখো, আমরা সেই অধিকারটাই-বা সম্পূর্ণ পাই কই! অধিকার বলে যা পাই অথবা যা ছিনিয়ে আনি, তা হয়তো আমাদের মূল সম্পর্ক থেকে, আমাদের সুখ থেকে, আমাদেরকে একজনকে আর একজনের কাছ থেকেই যোজন যোজন দূরত্বে সরিয়ে নিয়ে যায়। অতি-নারীবাদী মানসিকতার মেয়েদের ঘর কমই টিকে। নারীবাদ ভালো, তবে নারীবাদের নামে স্বার্থপরতা বা অহেতুক ঝামেলাসৃষ্টি ভালো না। আমি বরং বলি, পুরুষদের অসীম ধৈর্য আর প্রশ্রয়েই কিন্তু মেয়েরা ভালো থাকে, আর সংসারটাও টিকে যায়। একটা ছেলে, যা-কিছুই হোক না কেন, হুটহাট করে ছেড়ে যাবার, সম্পর্ক ভেঙে ফেলার কথা তোলে না। অবশ্য আজকালকার ছেলেদের কেউ কেউ তোলে, তবে তা মেয়েদের তুলনায় এখনও অনেক কম। বরং আমরা মেয়েরাই পান থেকে চুন খসলেই বলি, অনেক হয়েছে আর না! (অবশ্যই এর ব্যতিক্রমও আছে।) আমরা বোধহয় আমাদের ভুলগুলো একটু যাচাই করলে ভালোই থাকতাম। সব সময় পুরুষদের দোষধরা আমরা মেয়েরা কেন জানি কখনওই বুঝতে চাই না যে মাঝে মাঝে আমাদেরও ভুল হয়! ব্যক্তিগতভাবে কেউ যদি আমার সাথে খারাপ আচরণ করে, আমি কখনওই তার দোষ ধরি না বরং একটু অপেক্ষা করে তার প্রতি আমার প্রথম আচরণটা কীরূপ ছিল, সেটি একবার পুনরায় বিবেচনা করে দেখি। আমি মনে করি, আমি তার সাথে যে আচরণ করব, সে তো তেমন আচরণই আমাকে ফিরিয়ে দেবে। অথবা কেউ যদি আমার প্রথম আচরণে ভালো ব্যবহার পাওয়া সত্ত্বেও তার বিনিময়ে খারাপ আচরণ করে, তা হলে আমি দ্বিতীয়বার তার সঙ্গ এড়িয়ে চলি। তবুও তাকে জাজ করি না। কাউকে জাজ করার চাইতে অনেক অনেক ভালো তাকে এড়িয়ে চলা। স্বামী-স্ত্রীর ক্ষেত্রে এভাবে হয়তো ভাবা যায় না। আসলে ঘরে ও বাইরে পুরুষেরা যে কী কী সহ্য করে, সেটাই হয়তো আমরা মেয়েরা জানি না অথবা এসব যে আমাদের দোষ, এটা মানি না, স্বীকার করি না। পুরুষদের কী কী সহ্য করতে হয় তার অল্প কিছু আজকে তোমাকে বলি, মন দিয়ে পড়ো...
আমার এক মামি আছেন। মামি মানে বোঝ তো? মায়ের ভাইয়ের বউকে মামি বলা হয়। হা হা হা! তাঁর দুই ছেলেমেয়ে। এক মেয়ে, এক ছেলে। ঘরে ওঁরা স্বামী-স্ত্রী আর দুই সন্তান, মাত্র চারজন প্রাণী। আমার ওই নানু বেঁচে নেই। অন্য ভাই-বোনেরা যার যার মতো আলাদা আছেন। তো একদিন সকালে নানুবাসায় গিয়ে দেখলাম, আমার ওই মামি সকালের নাস্তা তৈরি করছেন। ওখানেই মামির সাথে গল্প করতে বসে গেলাম। মামি আমাকে নাস্তা খেতে বললেন, আমি অবশ্য বাসা থেকেই নাস্তা করে গিয়েছিলাম, এজন্য করিনি। দেখলাম, মামি ওঁর দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে গরম গরম পরোটা, ডিম আর সবজি নিয়ে খাচ্ছেন। মামা তখন বাইরে কোনও কাজে ছিলেন, অফিসে যাওয়ার আগে সকালের নাস্তা করতে আবার আসবেন। তো মামিকে দেখলাম, নিজে সন্তানদের নিয়ে পরোটা, ডিম-অমলেট আর সবজি দিয়ে খেতে, অথচ মামার জন্য শুকনো রুটি আর শুধু সবজি, তাও পরিমাণে কম---তুলে রাখলেন। ভেতরে ভেতরে কিছুটা অবাক হয়ে শেষমেশ জিজ্ঞেসই করে বসলাম, ওভাবে রাখলেন যে? মামি জানালেন, তোর মামা ডিম খান না, আর পরোটায় তেল অনেক খরচা হয়, মাসশেষে আমার তেলে টান পড়ে যায়। তার কিছুক্ষণ পর, আমাকে আরও অবাক করে দিয়ে মামি তাঁর দুসন্তান নিয়ে ঘন করে দুধ দিয়ে চা বানিয়ে খেলেন এবং পাতিলে পড়ে-থাকা অবশিষ্ট উচ্ছিষ্ট কিছু চা-পাতির মধ্যে কিছুটা কাঁচাজল ঢেলে ওটাই আবার কিছুক্ষণ জ্বালিয়ে চিনি মিশিয়ে মামার জন্য ফ্লাক্সে ভরে রেখে দিলেন। এই দৃশ্য দেখে আমি আর কিছু জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করিনি।
এর আগে শুনেছিলাম আমার এই গুণধর মামি নাকি তাঁর শ্রদ্ধেয় শাশুড়ি-মাকে বৃদ্ধবয়সে ঘরে পড়ে-থাকাকালীন, কখনও কিছুই মুখে তুলে খাইয়ে দেননি। শুনেছি, তিনি তাঁর শাশুড়ির খাবার বিছানায় একটা খাবারের প্লেটে সব কিছু একসাথে দিয়ে একটা চামচ আর একগ্লাস জল দিয়ে রেখে চলে যেতেন। ওঁর শাশুড়ি প্যারালাইজড পেশেন্ট ছিলেন বলে উঠে বসতে পারতেন না, এমনকি একটা পা সম্পূর্ণ সোজা করতে পারতেন না, হাঁটুভেঙে শুয়ে থাকতেন। ওভাবেই কষ্ট করে খেতেন, আর না পারলে না খেয়েই পড়ে থাকতেন। শাশুড়ি বিছানায় পায়খানা-প্রস্রাব করলেও সেগুলির উপরেই তাঁকে পড়ে থাকতে হতো মামা ফিরে আসা পর্যন্ত। মামা বাইরের সব কাজ শেষে রাতে এসে নানুর বিছানা পরিষ্কার করতেন, ওঁকে খাইয়ে দিতেন, অন্য যাবতীয় সব মামা-ই করতেন। মামা দুপুরে বাসায় খেতে আসতে পারতেন না, আসতে পারলে মায়ের দুপুরের খাবারটাও খাইয়ে দিতে পারতেন হয়তো। আমি জানি না, মামির এমন সব বাজে আচরণের কথা নানু কখনও মামাকে জানিয়েছিলেন কি না অথবা জানালেও মামা কী করতে পেরেছিলেন। এখনও আমার সেই মামা-মামি দিব্যি সংসার করে চলেছেন এবং আগের মতোই ‘ভালো’ আছেন।
আমার দূরসম্পর্কীয় অন্য এক চাচির কথা বলি, আমার ওই চাচা সব সময় বাইরে কাজে থাকতেন, সারা মাসের বাজারে কোথাও কোনও কমতি ছিল না তাঁর, সব খুটিনাটি চাচা নিজেই হিসেব করে পুরো মাসের শুকনো-বাজার একসাথে করে দিতেন। আমার ওই চাচার বাজারের হাত খুব ভালো, সংসারে কী কী লাগতে পারে, তা হিসেব করতে চাচির ভুল হলেও চাচা কিছুই ভুলতেন না। আমার বাসার পাশেই ওঁদের বাসা হওয়ায় ওঁদের বাসায় আগে কিছুটা আসা-যাওয়া ছিল। তো একদিন সকালে দেখলাম, আমার ওই চাচি সকালের নাস্তায় চাচাকে শুধু রং-চা আর একটা শুকনো রুটি খেতে দিলেন, যেখানে তিনি নিজে ও তাঁর সন্তানেরা কখনও পরোটা-ডিম ছাড়া নাস্তাই করে না। ওই চাচার তিন সন্তান। বড় মেয়ে অনার্সে পড়ছে এখন, অন্য দুই ছেলে-মেয়েও স্কুল-গণ্ডি শেষ করবে প্রায়। আমি তো প্রতি মুহূর্তে এসব দেখে অবাক হয়েছি আর নিজেকে প্রশ্ন করেছি যে, আমার সেই চাচি কী করে স্ত্রী হয়েও নিজের স্বামীকে অমন খাবার তুলে দেন! তাঁর এত বড় মেয়েসন্তান, সে কী করে বাবার খাবারের খোঁজ রাখল না! নিজেরা যার যার মতো খেয়ে চলে গেল, এমনকি বাবার জন্য কী আছে অথবা আদৌ কিছু আছে কি না, তা দেখল না পর্যন্ত। সন্তান এমন হলেও নিজের জীবনসঙ্গিনী এমন কী করে হয়! আর জীবনসঙ্গিনী এমন হলেও-বা নিজের সন্তান এমন কী করে হয়! এটা আমার মাথায় আসছিল না। এই সংসারে আছেন কিছু মানুষ, যাঁদের সব দিকেই কেবল দুর্ভাগ্য!
আমি অবশ্য এসব শুধুই দেখে যাই চুপচাপ, কখনও কাউকেই কোনও বিষয়ে জ্ঞান দিই না। আমার সে ক্ষমতাও নেই। আমি শুধু যা করতে পারি সেটা হচ্ছে, আমার নিজের বাবার ক্ষেত্রে এমন হচ্ছে কি না সেটা দেখতে পারি। আর একদিন আমি আমার ভাইয়ার ওখানে দুপুরে ওদের সবার জন্য মোরগপোলাও নিয়ে গেলাম। আমার ভাইয়ার তিন ছেলে। আমি জানতাম, পরিমাণে যতই নিয়ে যাই না কেন, ওরা ভাইয়ার জন্য রাত পর্যন্ত খাবারটা রাখবে না, কারণ ভাইয়া সারাদিন বাইরে থাকে। দুপুরেও শুনেছি বাইরেই খায়, বাসা থেকে খাবার নিয়ে যায় না। বাইরে কী খায় আর বাইরের খাবার কেমন হতে পারে, সে বিষয়ে আমার বেশ ভালো ধারণা আছে। তার পরও আমাকে একটুও অবাক না করে দিয়ে ওরা সবাই মিলে পুরোটাই খেয়ে ফেলল, ভাইয়ার জন্য কিছুই রাখল না। আমি আবার আম্মুকে দিয়ে রাতে ভাইয়া আসার পর শুধু ভাইয়ার জন্য খাবার পাঠালাম। মা এসে বললেন, ওরা নাকি ওটাই খেতে বসে গেছে, ভাইয়া ফিরে আসার অপেক্ষা করেনি। তার উপর আমার শ্রদ্ধেয় ভ্রাতৃবধূ নাকি ভাইয়াকে বলেছিলেন, আমি দেখিয়ে দেখিয়ে দায়িত্বপালন করি, তা না হলে আবার ভাইয়ার জন্য আলাদা করে এখন খাবার পাঠালাম কেন, ভাবিকে ভাইয়ার কাছে ছোট করার জন্যই তো পাঠিয়েছি! সেদিন জেনেছি, বোন হিসেবে ভাইয়ার প্রতি এই ক্ষুদ্র অধিকারটুকুও আমি হারিয়েছি! ভাবি নাকি আরও বলেছেন, দুপুরে ওদের জন্য পরিমাণে কম হয়েছে, ওরা ঠিকমতো খেতেই পায়নি...
আমি শুনেছি, কিন্তু মোটেও অবাক হইনি, কেননা ভাবি এমনই করেন। এখানে অবশ্যই তাঁর লজ্জিত হবার কথা ছিল, অনুতপ্ত হবার কথা ছিল। তা তো হনইনি, বরং সেটা ভাইয়ার কাছে বলতেও ওঁর লজ্জা করল না। একটা সংসারে তো দুজনেরই কমবেশি কন্ট্রিবিউশন থাকে, তা হলে একজন আর একজনকে আলাদা করে কী করে? আমার খুব জানতে ইচ্ছে হয়, নিজের সঙ্গীকে রেখে ভাবি কী করে ভালো কিছু খান, পরিমাণে কম বেশি যা-ই হোক, কী করে উনি এভাবে একা একা সব খেয়ে শেষ করেন, ওঁর কি একটুও মায়া হয় না ভাইয়ার জন্য? ভাইয়া তো সারাদিন বাইরে থাকে, বাইরে কী খায় না খায়, অথবা বাইরে হাজারটা কিনে খেলে খাক, তবু ভাইয়া বাসায় ফেরার পর ভাবির তো উচিত ছিল ভাইয়ার যত্ন নেওয়া, তাই না? মেয়েদের মন তো মায়ের মনও, মা যদি না পারে সন্তানকে ফেলে কিছু খেতে, তা হলে স্ত্রী তো মায়েরই জাত, সে কী করে পারে? অবশ্য আজকাল মায়েদের যা যা দেখছি, সেগুলো ঘাঁটতে গেলে নিজের অক্ষমতাও লুকিয়ে রাখা যাবে না।
এবার আমার নিজের গুণধর মামির কথা বলি। তিনি আমার মামার কী যত্ন নেন, সে আমি কখনও খুঁটিয়ে দেখার সুযোগ পাইনি। একদিন মামির বাসায় ছিলাম রাতে। রাতের অল্প তরকারি দিয়ে মামা ভাত খেতে পারলেন না, না খেয়ে উঠে চলে গেলেন, খাবার নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য পর্যন্ত করলেন না। মামিও দেখলেন সব এবং দেখেও দিব্যি তাঁর মতোই রইলেন। কিছু কিছু পুরুষমানুষকে নিজের ঘরে রীতিমতো আশ্রিতের মতো করে মুখ লুকিয়ে কাটাতে হয়! তো রাত একটার সময় মামাকে দেখি ফ্রিজ খুলে ফ্রিজ থেকে দুধ বের করে নিজে গ্যাসের চুলায় গরম করে খেয়ে নিলেন। আমার প্রশ্ন, মামিই কেন কাজটি আগে করলেন না? কেন মামি জানতে চাইলেন না যে মামা অন্য কিছু খাবেন কি না?...আরও আছে, আমার মেজো চাচার বাসায় যাই, প্রতিবারই দেখি একই কাহিনি, দেখে দেখে পেকে যাচ্ছি। আমার চাচি অমায়িক ভালোমানুষ। যাঁদের তিনি চেনেনও না, কিংবা যাঁরা তাঁর কাছের কেউ না…শুধু পরিচিত, তাঁদেরও খুশি করতে চাচির চেষ্টার কোনও শেষ নেই, অথচ আপনজনদের সাথে তেমন একটা ভালো আচরণ তিনি করেন না। আমার ওই চাচার দুই ছেলে মেয়ে। দুজনেই মোটামুটি পড়াশোনায় ভালো। দুজনেই ইংলিশ মিডিয়ামে, বড় মেয়ে হলিক্রস কলেজ থেকে এবার এইচএসসি দেবে, ছোট ছেলে সামারফিল্ড স্কুলে নাইনে পড়ছে। আমার চাচি ওদের পড়ার ব্যাপারে যথেষ্ট কেয়ারফুল এবং এতটাই যে, ওঁর বাসায় কোনও আত্মীয়ই সাধারণত যায় না। আমার উপরও হয়তো তেমনই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়ে যেত যদি না আমার ভাই-বোন দুটো আমার আসা নিয়ে আন্দোলন করত। ভাই-বোনের ভালোবাসা আর মায়ার টানেই ওখানে আমার যাওয়ার উপর কোনও বারণ নেই এখনও পর্যন্ত, অন্তত যত দিন ওরা চায়; যদিও আমার কখনও এক রাতের বেশি সেখানে থাকার সময় হয় না।
আমার সে চাচা ব্যাংকের ডিএমডি। ওয়ান ব্যাংকের ক্রেডিট সেকশনের হেড অব অপারেশন। সারাদিন অনেক কাজের চাপে থাকেন, প্রতি সপ্তাহে দুই-এক দিন তাঁকে অন্য জেলায়ও যেতে হয়। চাচা বাসায় আসেন রাত ৮টায়। উনি বাইরের খাবার খেতে ভালোবাসলেও অযথা টাকার অপচয় হবে ভেবে তেমন কিছু খান না। এটা নিশ্চিত হয়ে কেন বলছি? কারণ আমরা দুই বোন ছিলাম চাচার কলিজার টুকরা, চাচার ছেলেমেয়ে হবার আগ পর্যন্ত চাচার বাসায় ছিল আমাদেরই রাজত্ব, সেই থেকে আজও চাচার নাড়িনক্ষত্র মোটামুটি ভালোই জানি। তো ৮টায় আসার পর চাচি শুধু এক কাপ রং-চা আর এক বাটি মুড়ি খাইয়ে রাত ১২টা পর্যন্ত আমার অভুক্ত ‘খাদ্যপ্রেমিক’ গোবেচারা টাইপ চাচাটাকে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার অজুহাতে না খাইয়েই রাখেন। (যাঁকে তাঁর স্ত্রী খেতেই দেয় না, তাঁর খাদ্যপ্রেমিক না হয়ে আর উপায় কী!) এর মধ্যে চাচা খাবারের জন্য কয়েক দফায় ছোঁকছোঁক করতে থাকেন, কিন্তু ওতে তেমন লাভ হয় না। আমার শ্রদ্ধেয় চাচি আমার চাচার দীর্ঘায়ুকামনায় সবজি আর খুবই পাতলা মাছের ঝোল বাদে প্রায় সব খাবারের উপরই নিষেধাজ্ঞা জারি করে ফেলেছেন এবং সেটা অটোম্যাটিক্যালি পাস হয়ে ভূতের গতিতেই অব্যাহত আছে। এমনকি চাচা ভাতটাও একবেলার বেশি খেতে পান না, যদিও তিনি ডায়াবেটিস রোগী হননি এখনও; তার ক্রেডিট অবশ্য চাচিকেই দিতে হয়, এত রেস্ট্রিকশনে ডায়াবেটিসও ভয়ে ভয়ে আসি আসি করেও আসতে পারেনি। আহারে, ভালোমানুষ চাচাটা আমার না খেতে পেয়েই অবশেষে...চিন্তায় আছি!
এই ক্ষেত্রে আমার আম্মুজির প্রশংসা না করলেই নয়। আমার বাবা খুব ছোট একটা সরকারি চাকরি করতেন। (এখন অবসরে আছেন।) আমার জ্ঞান হবার পর থেকে আজ পর্যন্ত সকাল ৯টার আগে কখনওই আম্মুজিকে ঘুম থেকে উঠতে দেখিনি। আব্বু অবশ্য নাস্তার প্রথম দফাটা সকালে নামাজ শেষে সোজা হোটেলেই সেরে নিতেন এবং আম্মুজির ঘুম দয়া করে ভাঙলেই পরে আর এক দফা নাস্তা সৌভাগ্যক্রমে পেয়ে যেতেন। এ বিষয়ে আব্বুর তেমন কোনও অভিযোগ ছিল না কখনওই। অভিযোগ না থাকার অবশ্য একটা কারণ আছে। আমি ক্লাস সেভেনে ওঠার সাথে সাথে নাস্তা নিয়ে হঠাৎ বিদ্রোহী হয়ে গেলাম। সারাদিন স্কুলে, প্রাইভেটে ছুটে আমার ক্ষুধা লেগে যেত। দেখলাম, বাসায় ঝামেলা করে আসলে কোনও লাভ নেই, আম্মুজি ভোর ৯টার আগে তাঁর সাধের ঘুমটা দয়া করে ভাঙাবেন না, তাই নিজের নাস্তা নিজেই বানিয়ে, সবাইকে খাইয়ে, নিজে খেয়ে, টিফিন নিয়ে বিন্দাজ-মুডে স্কুলে চলে যেতাম। স্কুল আর প্রাইভেট শেষ করে বাসায় ফিরতাম বিকেল পাঁচটায়। অবশ্য আমার আম্মুজি শুধু সকালের নাস্তার বেলাতেই এমন ছিলেন, অন্য সব বেলায় আব্বুর অভ্যাস এখনও দুপুর ২টা আর রাত সাড়ে ৮টার মধ্যেই আছে। এতে আমার লাভ হয়েছিল এই যে আমি সব ধরনের নাস্তা বানানো শিখে ফেলেছিলাম। আমার ফ্রেন্ডরা যেখানে রান্না করতে পারে, সেখানে আমি অনেক ভালো রান্না করতে পারি। এখানেই শেষ না…আজকে আমি যতটা পারি সব বলেই ছাড়ব!
আমার শ্রদ্ধেয় ছোট খালামণি। ঘুম থেকে চোখ কচলাতে কচলাতে দয়া করে সকাল দশ ঘটিকায় বিছানা ছাড়েন। (বড় বোনের সাথে মিল রাখতে হবে তো! এই দিকে অবশ্য আমিও আমার বড় বোনের সাথে সমানতালে এখন পর্যন্ত ভোর ৫টায় আছি, ভবিষ্যতের কথা কিছু বলতে পারছি না।) আমার শ্রদ্ধেয় খালুজান সকাল ৫ ঘটিকায় ঘুম থেকে উঠে নামাজ শেষ করে, সকালে নাস্তা বানিয়ে, (আমার খালুও এই উছিলায় মোটামুটি সব নাস্তা বানানো শিখে ফেলেছেন।) বাজার করে, খালাতো ভাই-বোনকে স্কুলে দিতে যাবেন, সেই মুহূর্তে আমার খালামণিকে আদুরে কণ্ঠে ডাকতে থাকেন---ওগো শুনছ, দরজাটা লাগিয়ে দিলে একটু ভালো হয়! তার পর চাইলে আবার ঘুমুতে যাও! নইলে তো চোর স্বেচ্ছাসেবী হয়ে ঘর ফাঁকা করে দেবে!...কাহিনি আরও আছে। আমার এই খালাম্মাকে আমি আজ পর্যন্ত এক পদের বেশি কখনও রান্না করতে দেখিনি। তাঁর বাসায় যদি কেউ দয়া করে কিছু খাবার পাঠাতেন, তা হলে তিনি মহান রাব্বুল আল-আমীনের দরবারে লাখো শুকরিয়া জানিয়ে ওই দিনের মতো আর রান্নাঘরের ধারেকাছেও যেতেন না…এবং এখনও অনেক ধৈর্যসহকারে তেমনই আছেন।
আরও আছে, কিন্তু আর বলতে ইচ্ছা হচ্ছে না, বলতে বলতেই পাগল হয়ে যাচ্ছি, আর না জানি তোমরা ছেলেরা কত কী যে সহ্য কর! তো এই হলো পুরুষদের প্রতি মেয়েদের স্বভাবগত মাত্র কয়েকটা নির্যাতনের নমুনা! যদিও আমি নিজেই মেয়েদের দলে এবং শীঘ্রই বিবাহিতের দলে গেলে হয়তো আমিও ওদের মতোই হয়ে যাব। হতে হবে হয়তো, কেননা তুমিই তো বলেছ, মেয়েরা বিয়ের আগে এক, আর বিয়ের পরে সম্পূর্ণ আর এক। অবশ্য এখন পর্যন্ত নিজের রান্নাই আমার কাছে বেস্ট! (যদিও কিছুই পারি না, তাও কাঁচা হোক পাকা হোক, নিজেরই রান্না…নিজহাতে রাঁধা মোর কাঁচা রান্নাও খাসা!) এখনও জানি না সামনে কী হবে! আসলে ছেলেরা যদি উঠতে বসতে মেয়েদের খুঁত ধরত, তা হলে কারওই সংসার করাটা সম্ভব ছিল না। আমার বরং ছেলেদের সবচেয়ে বেশি অসহায় মনে হয়। ওরা মেয়েদের ভালোবাসা দিয়ে, প্রশ্রয় দিয়ে না রাখলে মেয়েদের কী যে হতো এত দিনে, কে জানে! তার পরও আমরা শুধু ছেলেদেরকেই দোষীর কাঠাগড়ায় দাঁড় করাই। আমরা ওদের হয়ে ওদের জায়গায় দাঁড়িয়ে ওদের দিক থেকে কখনও ভেবে দেখি না। একটা ছেলে কিন্তু অনেক সময়ই বিয়ের পর থেকে মায়ের আদর যত্ন থেকেও বঞ্চিত হয়। এরকম হতে অনেক অনেক দেখেছি। ছেলেরা সব চুপচাপ সহ্য করে। যদি ছেলেরা সহ্য না করে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে, তা হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সমস্যা আসলে সীমা ছাড়িয়ে গেছে! অগত্যা, ছেলেরা সব বুঝেও চুপ করে থাকে। যে যত ভদ্রলোক, সে তত অত্যাচারিত। এই পৃথিবীতে ভদ্রলোক হয়ে বাঁচার অনেক ধরনের কষ্ট আছে---ঘরেও আছে, বাইরেও আছে!
শেষ দুটো কথা বলে লেখার ইতি টানছি। পুরুষদের কি আসলেই যাওয়ার কোনও জায়গা কোথাও আছে? একজন নারীকে সমাজ যেভাবে আগলে রাখে, তার কথা শুনে ও আমলে নেয়, তার সব অভিযোগ মেনে নিতে বাধ্য হয়, পুরুষ কি তেমন আশ্রয় পায় সমাজের কাছে? প্রকৃত ঘটনা কী তা না জেনেই একটা মেয়ের সব অভিযোগ আদালতে ও থানায় তো বটেই, সমাজের সব মানুষের কাছে গ্রহণীয় হয়ে ওঠে, একটা ছেলের কথা কি পায় তেমন কোনও গ্রহণযোগ্যতা? একটা মেয়ের চলার পথে সবাই যেমন করে পাশে দাঁড়ায়, হাত বাড়িয়ে দেয়, বাড়তি অনেক সুযোগসুবিধা দেয়, একটা ছেলে কি পায় তেমন কিছু? নারীরা পুরুষের কাছ থেকে নানাবিধ বাড়তি সুযোগসুবিধা ও ছাড় আদায় করে নিয়ে আবার সমঅধিকারের কথা বলে কোন যুক্তিতে? মেয়েরা নিজেকে দেবীদুর্গার সাথে তুলনা করে, আর নিজেকে শক্তিধর ভাবে। অথচ দেবীদুর্গার শক্তির সকল উৎসই কিন্তু পুরুষ দেবতারা! পুরুষের শক্তিতেই দুর্গা শক্তিধর! অবশ্য, ঠিকই তো আছে, পুরুষের শক্তিতেই তো আমাদের দেশের বেশিরভাগ মেয়ে শক্তিধর, তো তারা নিজেকে দুর্গার সাথে তুলনা তো করবেই! ক্ষমতার মূল উৎসই হলো, বাড়তি কোনও সুযোগসুবিধা না নিয়ে নিজ যোগ্যতায় নিজের পায়ে দাঁড়ানো। তা করতে পারল না যে মেয়েটা, তার আসলে ক্ষমতা বলতে কিছু নেই। গায়ের জোরে ক্ষমতাধর হওয়া যায় না, বড়জোর পুরুষের কাছ থেকে নীরব সম্মতি পাওয়া যায়, যে সম্মতির একমাত্র কারণ: বাড়তি ঝামেলা এড়িয়ে চলা!
কিছু মনে কোরো না, একটা বাস্তব ঘটনা বলি। আমার পরিচিত এক ভাইয়া আমারই এক বান্ধবীর সাথে উভয়ের পূর্ণসম্মতিতে অনেক দিন ধরেই বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে ছিলেন। তো একসময় ওদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়, ধীরে ধীরে দূরত্বের সৃষ্টি হয় এবং তার পর আমার সে বান্ধবী থানায় গিয়ে ভাইয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে যে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তিনি আমার বান্ধবীকে ধর্ষণ করেছেন! কী জঘন্য! কী নিকৃষ্ট! কী এক প্রতারণা! বান্ধবীর ডাক্তারি পরীক্ষায় সে অভিযোগের প্রমাণ মেলে। আমি নিজে জানি, সে ঘটনাটি কোনওভাবেই ‘ধর্ষণ’ ছিল না। তবু পুলিশ ঠিকই ভাইয়াকে অ্যারেস্ট করে নিয়ে যায়। ভাইয়া এখনও হাজতে আছেন। সে ভাইয়া যে খারাপ লোক, তা কিন্তু নয়। অনেক মানবিক গুণসম্পন্ন একজন মানুষ তিনি। যা হয়েছে দুজনের সম্মতিতেই হয়েছে, আর তা যদি অপরাধই হয়, তবে তার শাস্তি তো পাওয়ার কথা ছিল দুজনরেই, অথচ ভাইয়া একাই শাস্তিভোগ করছেন। থানাও হয়তো ভাবছে, থাক বাবা, ছেলের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে নিজেরা কী না কী বিপদে পড়ে যায়! এ সমাজে নিজেকে নিরাপদ রাখার সবচেয়ে সহজ পথ হলো, প্রকৃত ঘটনা যা-ই হোক না, মেয়েদের পক্ষেই কথা বলতে হবে! এই সব ভাবলে মনে হয়, পুরুষের এই অব্যক্ত বেদনার কথা হয়তো কেউ কখনও বলবে না, তবু সত্য তো সত্যই---একে এড়িয়ে যাওয়া কি কোনও সুস্থ মানুষের কাজ?
আমার দূরসম্পর্কের কাজিন এখন জেলে আছেন। ভাইয়ার বিরুদ্ধে কয়েকটা মামলা হয়েছে, যেগুলির একটি হলো ভাবির চেইন-চুরির মামলা! ভাইয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি ডিরেক্টর, যদিও এখন তিনি চাকরি থেকে সাসপেন্ডেড। ভাইয়া এতটাই শান্ত ও নিরীহ গোছের মানুষ যে বিসিএস পরীক্ষায় পুলিশে হবার পর তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক ছেড়ে যাননি একটু শান্তিতে থাকার আশায়। তো, হয়েছিলটা কী? একেবারেই তুচ্ছ কিছু কারণে এত কাহিনি! ভাবি তাঁর শাশুড়িকে সহ্য করতে পারতেন না। কেন? আমার ওই কাজিনের আপন বড় বোনের মেয়ের স্বামীর সাথে আমার ওই ভাবির একটা সম্পর্ক ছিল, যা অনেক দূর গড়ায়। ভাইয়া খুবই সহজ টাইপের মানুষ, এত কিছুর খোঁজখবর রাখতেন না। ভাইয়ার মা, মানে আমার খালা এটা জানতেন। প্রায়ই পুত্রবধূকে বোঝানোর চেষ্টা করেও তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। মেলামেশা মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে বাধ্য হয়ে ছেলেকে সব জানিয়ে দেন। সেখান থেকেই গন্ডগোলের সূত্রপাত। ভাবিকে ভাইয়া অনেকভাবেই বোঝান, ভাবি উল্টা ভাইয়ার কাছে শাশুড়ির সম্পর্কে বিভিন্ন আজেবাজে অভিযোগ দিতে থাকেন, যেগুলি আদতে সত্য ছিল না। ভাইয়া মায়ের বিরুদ্ধে কোনও ‘উচিত ব্যবস্থা’ না নেওয়ায় ভাবি নিজের বাপের বাড়িতে শাশুড়ি ও ভাইয়ার নামে নানান কথা বোঝাতে থাকেন। ভাইয়া ভাবির গায়ে হাত তুলেন, মা-ছেলে দুজন মিলে তাঁকে পেটায়, নানান অজুহাতে খেতে না দিয়ে রুমের মধ্যে বন্ধ করে রাখে, ভাবির বাপের বাড়ির লোকজন সম্পর্কে তাঁর শাশুড়ি খুব বাজে বাজে কথা বলেন, ভাইয়ার নাকি অনেক মেয়ের সাথে অবৈধ সম্পর্ক আছে, আরও অদ্ভুত সব অভিযোগের ফিরিস্তি তুলে ধরতে থাকেন। একদিন কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে ভাবি তাঁর নিজের শাশুড়ির গালে চড় বসিয়ে দেন ভাইয়ার সামনেই, তখন ভাইয়াও ভাবিকে চড় মারেন। সেদিনই তিনি বাসা থেকে বের হয়ে সোজা থানায় চলে যান তাঁর ছোট ভাইকে নিয়ে। ভাইয়ার বিরুদ্ধে যৌতুকের জন্য নির্যাতন, হত্যাচেষ্টা থেকে শুরু করে গলার চেইন-চুরির মামলা পর্যন্ত ঠুকে দেন। ভাইয়া সরকারি চাকরি করেন, তাই অনেক চেষ্টা করেছিলেন কোনওভাবে বুঝিয়ে শুনিয়ে ব্যাপারটা মিটিয়ে ফেলতে, কিন্তু কোনও লাভই হলো না। উচ্চতর আদালত থেকে জামিন না পেয়ে ভাইয়াকে জেলে যেতেই হলো।
এসব যখন ভাবি, তখন মাথায় আসে সত্যিই কি এ সমাজে পুরুষদের কোনও নিরাপত্তা আছে? মেয়েদের নিরাপত্তার অভাব, এটা আমরা সবাই মেনে নিই। কিন্তু পুরুষদের যে নিরাপত্তার অভাব, এটা মেনে নিতে পর্যন্ত এ সমাজ কুণ্ঠিত হয়!