আমি একটা পাখি। ধবধবে সাদা কবুতর। আজ আমার মালকিন, খুশবু যার নাম, আমাকে মুক্ত করে দিয়েছে, এই তো...মাত্রই! অনেক দিন ধরে বন্দি ছিলাম তো,তাই উড়তে কীরকম একটা অস্বস্তি হচ্ছে। আর কেমন যেন একটা মায়াও লাগছে খুশবুর জন্য। এতটা দিন একসাথে ছিলাম যে! খুশবুর কত হাসি, কান্না, অভিমান আর স্বপ্নের কথা আমি জানি। ওর ওসব ভাগাভাগির জন্য আমিই তো ছিলাম একমাত্র। দ্যাখো, ও একজন মানুষ হয়ে মানুষ বাদ দিয়ে কথা বলার জন্য বেছে নিল কিনা একটা পাখিকে! আর এই আমিও মুক্ত হবার পর আমার ঠিকানায় না-ফিরে এই মানুষটার কাছেই আবার ফিরতে চাইছি! আমাকে বিদায় দেবার বেলায় ওর দুচোখ ছলছল করছিল। কী মায়া আর পবিত্রতায় ভরা ছিল ওর মুখখানি! আমি এখনও উড়ে বেশি দূর যাইনি। ওর দিকে কি একবার ফিরে তাকাব? ও কি কাঁদছে খুব? আচ্ছা, আমি যদি অভ্যেসবশত আবার ফিরে যাই কিছুদিন পরেই, তবে কি খুশবু আমায় ফেরত নেবে? আমায় খাঁচায়ই রাখুক, তবুও একটু ভালোবাসুক! ওর সাথে আজ ওর প্রিয় মানুষটির বিচ্ছেদ হয়েছে শুনলাম। ও কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলিয়ে আরও বেশি স্থির, আরও বেশি পবিত্র হয়েছে আজকে! আমাকে বিদায় দেবার সময় বলল, ওর প্রিয় মানুষ নাকি বলেছে 'কাউকে ভালোবাসলে তাকে উড়তে দিতে হয়, তাকে তার নিজের ডানা চিনিয়ে দিতে হয়, আটকে রাখাকে ভালোবাসা বলে না।' সেজন্যই খুশবু কাল সারারাত জেগে কেঁদেছে, আর সকালে আমার কাছে এসে বলেছে, 'যা রে, তোদের দুজনেরই আজ থেকে মুক্তি! ভালো থাকিস তোরা নিজ নিজ ঠিকানায়!' খুশবু যখন আমাকে আদর করত, হাত দিয়ে আমার পালকগুলো ছুঁয়ে দিত, ভীষণ ভালো লাগত আমার। নিয়ম করে আমাকে খাবার দিত, আমার সাথে কথা বলত। আর এ-ও বলত, 'জানিস, প্রত্যেকটা মানুষই তোর জীবনকে ঈর্ষা করে? ইস্, আমিও যদি তোর মতন পাখি হতে পারতাম!' এতদিন এসব শুনেছি, আর আজ বলতে খুব ইচ্ছে করছে, 'তোমরা বড্ড বোকা গো, মিছেই আফসোস করো! আমার তো এখন মানুষ হবার সাধ জেগেছে। আমিও যদি কারুর চোখে অমন করে জল এনে দেওয়া ভালোবাসা পেতাম, তবে আমি বন্দিত্বটা ঠিক এই মুহূর্ত থেকেই দিব্যি মেনে নিতাম! আহা, যদি মানুষের মতন করে ভালোবেসে বেসে আমার ভালোবাসাটা বোঝাতে পারতাম!' ভালোবাসার ক্ষমতা আছে যার, উড়ে বেড়াতে তার আবার ডানার প্রয়োজন কীসের?