১৮৬.
‘আমি’-ই ঈশ্বরস্মরণ, সাধনা ও উত্তরণের পথ। তুমি যেখানে-ই যাও না কেন, কখনোই ভুলে যেয়ো না—তোমার ভিতরে যে ‘আমি আছি’ জ্ঞান রয়েছে, সেটিই ঈশ্বর। গুরুর সঙ্গে কিছু সময় কাটিয়েছ, তাঁর উপদেশ শুনেছ, হৃদয়ে ধারণ করার চেষ্টা করেছ—কিন্তু শরীরের সঙ্গে গুরু চিরকাল থাকবে না, তোমাকে একসময় চলে যেতেই হবে। বিদায়ের মুহূর্তে তুমি যদি জানতে চাও—জীবনের জন্য কোন মূলমন্ত্র গ্রহণ করবে? তখন তিনি শুধু এটুকু বলেন—“তোমার ‘আমি’-বোধই ঈশ্বর, সেটিকে স্মরণ করো, ধরে রাখো।”
এ বিশ্বাস প্রথমে দুর্বল, কিন্তু ধ্যান এবং নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে দিনে দিনে এই বিশ্বাস গভীর হয়ে উঠবে—“হ্যাঁ, আমার ভেতরে যে ‘আমি আছি’ বোধ, সেটাই ঈশ্বরস্বরূপ।” এই বোধে সম্পূর্ণ নিমগ্ন হলে—তখনই তোমার সামনে খুলে যায় সেই পথ, যেখান থেকে ‘আমি’-কেও অতিক্রম করে তুমি পৌঁছে যেতে পারো চিরন্তন, নিরাকৃতি, নিরবিচার পরম অস্তিত্বে।
অদ্বৈত বেদান্তে গুরু কেবল জ্ঞান দান করেন না—তিনি আত্মদর্শনের উপলক্ষ তৈরি করে দেন। যে ‘আমি আছি’ অনুভব—যা প্রতিদিন আমাদের মধ্যে চলছে—তারই মধ্যে লুকিয়ে আছে ঈশ্বরতত্ত্ব, চৈতন্যের মূল প্রকাশ। এই বোধ শুরুতে সাধারণ মনে হলেও, ধ্যান ও নিয়মিত স্মরণ-চর্চার মাধ্যমে এটি পরিণত হয় এক অপরিবর্তনীয় আত্মবিশ্বাসে—“এই ‘আমি’-ই আমার ঈশ্বর। আমি এই ‘আমি’-তে স্থিত।’’
এই বিশ্বাসই হলো সেই ভিত্তি, যার উপর দাঁড়িয়ে একদিন সাধক নিজ ‘আমি’-র সীমাও ছাড়িয়ে যায়। তখন সে কেবল ‘আমি’ নয়, সে হয়ে ওঠে তুরীয়াতীত—চেতনাও নয়, অভিজ্ঞতাও নয়, শুদ্ধ পরব্রহ্ম।
গুরু বলেন—যাও যেখানেই যাও, কিন্তু মনে রেখো—তোমার ভিতরের ‘আমি আছি’ বোধটাই ঈশ্বর। ধ্যান করে, স্মরণ করে, চর্চা করে এই বিশ্বাসকে শক্ত করো। ধীরে ধীরে সেই বিশ্বাস এতটাই গভীর হবে যে, তুমি অনুভব করবে—তোমার ভেতরের এই চেতনার উৎসই পরম সত্য। সেই গভীর স্থিতি থেকেই একদিন সম্ভব হবে—এই ‘আমি’-কেও ছাড়িয়ে গিয়ে স্থিত হওয়া চেতনাহীন চেতনায়—যা ভাষাহীন, অবস্থাহীন, মুক্ত।
১৮৭.
‘আমি’-তে অবিচল থাকো—আত্মপ্রকাশের আগেই আসে পরীক্ষার পর্ব। কিছু নিয়েই চিন্তা কোরো না, যা-ই ঘটুক, কেবল ‘আমি আছি’ বোধে স্থিত থাকো। এমন একটা মুহূর্ত আসবে—যখন এই ‘আমি’ নিজেই সন্তুষ্ট হয়ে উঠবে, এবং তোমার সামনে সমস্ত রহস্য উন্মোচন করে দেবে। অবশ্য এর আগে আসবে সংশয়, অবসাদ, ও হতাশার সময়।
সাংসারিক টানাপোড়েন তোমার সাধনায় বিঘ্ন ঘটাবে, তোমার চেতনায় তৈরি করবে পরাজয়ের অনুভব। কিন্তু তবুও, সব কিছু সরিয়ে রেখে, সব চিন্তা-উদ্বেগ ফেলে রেখে, তোমাকে কেবল ‘আমি’-র মধ্যে স্থির থাকতে হবে—নিরন্তর, আন্তরিকতা ও ধৈর্য নিয়ে। এই ‘আমি’ নিজেই তোমাকে পরীক্ষা নেবে, তোমার সহনশক্তিকে যাচাই করবে। কিন্তু একসময়, যদি তুমি অবিচল থাকতে পারো, এই ‘আমি’-ই হয়ে উঠবে তোমার বন্ধু। তখন সে নিজেই তার আবরণ সরিয়ে নেবে, আর তোমাকে ফিরিয়ে দেবে মুক্তি ও স্বরূপের চাবিকাঠি।
অদ্বৈত বেদান্তে ‘আমি’ বোধকেই বলা হয় আত্মস্মরণের প্রাথমিক স্তর, যেখানে চেতনা নিজেকে অনুভব করে—কিন্তু এখনও দেহ, পরিচয়, ও সমাজের প্রভাবে বিভ্রান্ত। এই স্তরে পৌঁছে ধ্যান শুরু হলে, মন শুরু করে প্রতিরোধ—তখন আসে দ্বন্দ্ব, সংশয়, ও বিচলিত সময়। কিন্তু গুরু নির্দেশ দেন—এই সময়েই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো স্থিরতা ও অনর্গল চর্চা।
‘আমি’ বোধ নিজেই যেন এক জীবন্ত সত্তা, যা সাধককে পরীক্ষা করে, তার ভিতরের স্থিরতা ও আন্তরিকতা যাচাই করে। আর একসময়, সেই 'আমি' যখন সন্তুষ্ট হয়—তখন সে নিজেই সরে দাঁড়ায়, দেখিয়ে দেয়—"তুমি আমিও নও—তুমি তারও সাক্ষী, পরব্রহ্ম।"
ধ্যানের পথে আসবে ক্লান্তি, সংশয়, ও ব্যর্থতার ছায়া—তবু থেমো না। সব কিছু পাশ কাটিয়ে শুধু এক কাজ করো—‘আমি আছি’ এই বোধে অবিচল থেকো। এই ‘আমি’ নিজেই তোমার সহচর হবে, আর একসময় তার বন্ধন আলগা করবে, দেবে আত্মপ্রকাশের দ্বার। তখন আর ‘আমি’ থাকবে না—থাকবে কেবল তুমি নিজেই—পরম চৈতন্যরূপে।
১৮৮.
‘আমি’-র দ্বিমুখী প্রকৃতি—জন্ম-মৃত্যুর ফাঁদ ও মুক্তির পথ। জন্ম ও মৃত্যুর যে-চক্র—তোমাকে যে বার বার ফাঁদে ফেলে রাখছে—তার মূলেই রয়েছে এই ‘আমি আছি’ বোধ। এই ‘আমি’-র প্রকৃতি একদম Janus–এর মতো—দুই মুখে ধরা দেয়। একদিকে, এটা তোমার শত্রু, যখন এটা তোমাকে ফেলে দেয় জন্ম-মৃত্যুর ফাঁদে। তুমি ভাবতে শুরু করো—“আমি এই দেহ”, “আমি জন্মেছি”, “আমি মরব”—এই বোধই তৈরি করে ভুল পরিচয় ও যাতনার বন্ধন।
আর এই ফাঁদে একবার পড়ে গেলে, এর থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ হয় না—তবে যদি সত্যিকারের গুরুর দর্শন হয়, বা তাঁর বাক্য যদি হৃদয়ে প্রবেশ করে—তবে মুক্তির সুযোগ আসে। গুরুর বাণী খুব সরল, কিন্তু সর্বস্ব: ‘আমি’-কে বুঝো, এতে স্থিত হও, উপলব্ধি করো, আর একদিন তা অতিক্রম করো। এই অনুশীলনের ফলে, যখন তুমি ‘আমি’-তে স্থিত হতে শেখো, তখন এটি আর শত্রু থাকে না—এটি হয়ে ওঠে বন্ধু, যে নিজেই তোমাকে এর সীমা ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।
অদ্বৈত বেদান্তে ‘আমি’-বোধকে বলা হয় প্রথম অভ্যুদয়, যার মধ্যেই চেতনার জগৎ শুরু হয়। কিন্তু এই ‘আমি’ যখন দেহ, নাম, পরিচয়ের সঙ্গে মিশে যায়—তখনই জন্ম হয় সাময়িক আত্মপরিচয়ের, যা বয়ে আনে জন্ম, মৃত্যু, পুনর্জন্ম—এই সাংসারিক চক্র।
‘আমি’ তখন এক বিভ্রম-সৃষ্ট মায়াজাল—তোমাকে চেতন করে তোলে, তারপর বেঁধে রাখে নিজের মধ্যেই। এই অবস্থায় ‘আমি’-কে চিনতে পারা, তাতে স্থিত হওয়া, তা উপলব্ধি করা, এবং শেষে তা অতিক্রম করাই হলো—সাধনার সারসত্য।
যখন তুমি নিখাদভাবে ‘আমি’-তে থাকো—তখন এই বিভ্রান্তিকর ‘আমি’-ই ধীরে ধীরে স্বহৃদ বন্ধু হয়ে ওঠে। তখন সে নিজেই ধীরে ধীরে নিজের আসল চরিত্র প্রকাশ করে—নিজেকে বিলীন করে দেয় পরম চেতনার মধ্যে।
জন্ম-মৃত্যুর ফাঁদ তৈরি হয়েছে ‘আমি’-বোধ থেকে। এই ‘আমি’ প্রথমে শত্রুর মতো কাজ করে—তোমাকে ব্যক্তি করে, দেহে বেঁধে রাখে। গুরুর শিক্ষা হলো—‘আমি’-কে বুঝো, তাতে থাকো, উপলব্ধি করো, তারপর তা ছাড়িয়ে যাও। তখন ‘আমি’ আর শত্রু থাকে না—এটি পরিণত হয় মুক্তির সেতুতে। এই ধারাবাহিক স্থিতি ও অনুসন্ধানই তোমাকে নিয়ে যায় ‘আমি’-র অতীত—পরম অস্তিত্ব, পরব্রহ্ম-র দিকে।
১৮৯.
শব্দাতীত ‘আমি’ ও তার অতীত তুমি—পরম ব্রহ্ম। ‘আমি আছি’—এই বোধে প্রতিষ্ঠিত হও, কিন্তু সেই শব্দহীন স্তরে, যাকে বলে ‘পরবাণী’ (Paravani)। তবে মনে রেখো—এই ‘আমি’, এই শব্দহীন চেতনাবোধ, তুমিই নয়। তুমি এরও অতীত—তুমি পরম।
প্রাচীন ঋষিরা বাণী বা বাক্যকে ভাগ করেছেন চার স্তরে—১. বৈখরী (Vaikhari)—উচ্চারিত শব্দ, মুখে উচ্চারিত যা শোনা যায়। ২. মধ্যমা (Madhyama)—মানসিক শব্দ বা চিন্তা, মনে গঠিত স্পষ্ট ভাষা। ৩. পশ্যন্তী (Pashyanti)—ভাবের সূক্ষ্ম স্তর, যেখানে শব্দ এখনো গঠিত হয়নি। ৪. পরা (Para)—শব্দহীন, মূল উৎস, যেখান থেকে সব শব্দ জন্ম নেয়—এটাই পরবাণী, নিঃশব্দ আত্মজ্ঞানের কেন্দ্রবিন্দু।
আমরা যখন কথা বলি, তখন এই চারটি স্তরের মধ্য দিয়ে দ্রুতগতিতে প্রবাহিত হই—পরা → পশ্যন্তী → মধ্যমা → বৈখরী। যদিও বাণী একটিই, এই শ্রেণিবিভাগ শুধু উপলব্ধির জন্য। এই চার স্তরই মানসিক ও মৌখিক জগতের সঙ্গে যুক্ত—এদের সঙ্গে চেতনাবস্থাও যুক্ত রয়েছে—পরা = তুরীয় (Turiya), পশ্যন্তী = সুপ্ত, মধ্যমা = স্বপ্ন, বৈখরী = জাগ্রত।
এখন, যখন তুমি ধীরে ধীরে শব্দ থেকে পিছিয়ে যাও—উচ্চারিত শব্দ → চিন্তা → ভাব → নিঃশব্দ উপস্থিতি—তখন তুমি ফিরে যাও ‘আমি’-তে, যা পরবাণী স্তর, যা তুরীয় চেতনার সমতুল্য।
কিন্তু...তুমি, যিনি এসব পর্যবেক্ষণ করছ—তুমি নও বৈখরী, না মধ্যমা, না পশ্যন্তী, না পরা—তুমি নও ‘আমি’-ও। তুমি সেই পরম ব্রহ্ম, যার মধ্যে এই চার স্তরের বাণী উদিত হয় এবং নিঃশেষ হয়।
অদ্বৈত বেদান্তে ‘আমি’ বোধ-কে ধ্যান ও আত্মস্মরণের কেন্দ্রে রাখা হয়, কিন্তু বলা হয়—এটি চূড়ান্ত সত্য নয়, বরং সত্যের মুখোমুখি হওয়ার দরজা মাত্র। শব্দ জগতের চার স্তর (বাণীচতুষ্টয়) একটি গভীর চেতনা-মানচিত্র প্রকাশ করে—যা আমাদের চেতনার সূক্ষ্ম থেকে স্থূল স্তর পর্যন্ত গমনপথ বোঝায়। এই পথেই সাধক ধীরে ধীরে বাহ্যিক শব্দ থেকে ভেতরের শব্দহীন ‘আমি’ বোধ-এ ফিরে আসে।
এই নিঃশব্দ ‘আমি’-ই পরবাণী, যা তুরীয় চেতনার প্রকাশমাত্র। কিন্তু চূড়ান্ত উপলব্ধি তখনই—যখন সাধক বুঝে ফেলেন: এই ‘আমি’-ও একটি অনুভব, একটি চেতনাশ্রুতি মাত্র—আমি এটি নই। আমি সেই সাক্ষীসত্তা, যার মধ্যে এই বোধ, এই ধ্যান, এই শব্দ ও নিঃশব্দ সবই উঠছে ও মিলিয়ে যাচ্ছে। সেই সাক্ষী-ই পরম আত্মা, পরব্রহ্ম।
শব্দের চূড়ান্ত স্তর ‘পরা’ বা পরবাণী হলো শব্দহীন ‘আমি’ বোধ। এটাই ধ্যানের কেন্দ্র, আত্মস্মরণের দ্বার—তবে তুমি, চূড়ান্ত অর্থে, এই ‘আমি’-ও নও। তুমি নও বৈখরী (উচ্চারিত শব্দ), নও মধ্যমা (চিন্তা), নও পশ্যন্তী (ভাব), নও পরা (নিঃশব্দ)। তুমি সেই চেতনারও অতীত, সেই স্বরূপ, সেই পরম—যার মধ্যে সব শব্দ আসে ও যায়, যিনি নিজে কখনো কোনো অভিব্যক্তিতে আসেন না।
১৯০.
‘আমি’-র পূর্ববর্তী তুমি পরমের কোনো পোশাক হয় না। তোমার প্রকৃত সত্তা—যাকে বলে পরম আত্মা বা পরব্রহ্ম—সে তো ‘আমি’-রও আগে, তারও পূর্ববর্তী। তাহলে তার কোনো পোশাক বা বাহ্যিক পরিচয় কীভাবে থাকতে পারে?
আমরা যা করেছি, তা হলো—এই প্রকৃত, নীরব, রূপহীন সত্তার উপর চাপিয়ে দিয়েছি একটি পোশাক: শরীর, ইন্দ্রিয়, মন এবং ধ্যান-ধারণার আচ্ছাদন। আর এই ধারণাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে মূল, সবচেয়ে সূক্ষ্ম হচ্ছে—‘আমি আছি’ এই প্রাথমিক চেতনা। এই ‘আমি’-রও কোনো নাম বা রূপ নেই, তবে এটিই প্রথম সেই অনুভব, যা হঠাৎ করেই তোমার অন্তরে উদিত হয়েছে—তোমার প্রকৃত সত্তার উপর।
কিন্তু মনে রেখো—এই ‘আমি’-ও একটি ধারণা মাত্র, এটি তোমার চূড়ান্ত পরিচয় নয়। তুমি সেই অস্তিত্ব, যার উপর এই ‘আমি’ এসেছে—যা কখনো জন্মায় না, পরিবর্তিত হয় না, বা মরেও না। সুতরাং, যখন তুমি বুঝে যাও যে—এই ‘আমি’-ও একটি পোশাক, তখন প্রশ্ন ওঠে—তোমার প্রকৃত স্বরূপের জন্য কোনো পোশাকই কি সত্য হতে পারে?
উত্তর হলো—না। পরমের কোনো পোশাক হয় না, কারণ তার কোনো রূপ নেই। অদ্বৈত বেদান্তে, আত্মা বা প্রকৃত সত্তা অবিনশ্বর, নিরাকার, নিরবিচার। তাকে কোনো নাম, রূপ, অনুভব, এমনকি ‘আমি’-র সঙ্গেও বেঁধে রাখা যায় না। কিন্তু জীবজগতে জন্ম নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চেতনায় উদিত হয়—‘আমি আছি’—এটি আত্মপ্রকাশের প্রথম তরঙ্গ।
আমরা এই ‘আমি’-র সঙ্গে শরীর, মন, ইন্দ্রিয় ও পরিচয় জুড়ে দিই—এবং এভাবেই তৈরি হয় আত্মার “পোশাক” বা আচ্ছাদন। কিন্তু যিনি এই সব কিছুর সাক্ষী, যার উপর এই বোধের উদয়, তিনিই প্রকৃত তুমি। তিনি পরব্রহ্ম—যার কোনো সীমানা নেই, যে নিজেই অনন্ত, নিজেই সত্তা, চিত্ত, আনন্দ। সেই স্বরূপকে কোনো ধারণা বা পোশাকে আবৃত করা যায় না, কারণ সে সব ধারণারও আগে।
তুমি যা সত্য, তা ‘আমি’ বোধেরও পূর্ববর্তী। ‘আমি’ হলো আত্মচেতনার প্রথম অনুভব—তবুও সেটিও একটি ধারণা মাত্র, যা চিরন্তন ‘তুমি’–র উপর উদিত হয়েছে। শরীর, মন, চিন্তা, পরিচয়—সবই হলো একেকটি পোশাক, যা তোমার প্রকৃত নিরাকৃতি সত্তাকে ঢেকে রেখেছে। কিন্তু পরম সত্তা কোনো পোশাক ধরে না—তাকে ধরা যায় না, কেবল উপলব্ধি করা যায়—নিঃশব্দ আত্মজ্ঞানরূপে।