মা আগের আগের মতোই আছে, মানে মোটামুটি। বাড়িতে এসেছি পর্যন্ত বিয়ে বিয়ে করে পাগল করে ফেলছে। বিরক্ত হয়ে চলে যেতে চাইলে আবার কান্নাকাটি শুরু করে। বলে, আমার বাচ্চা আর জামাইয়ের মুখ দেখে মরতে চায়। নইলে নাকি কলিজা পচবে না। আজব কথাবার্তা। কলিজা কি না পচার জিনিস? বিশ্বাস করুন, দুনিয়ার কোথাও শান্তি নাই। ঘরের মানুষই বড়ো শত্রু। এরা আমাকে নিজের মতো করে থাকতেই দেয় না। আমি তাদের খাইও না, পরিও না, তা-ও আমার পেছনে লেগে আছে! আচ্ছা, আপনার কী খবর? আপনি আমাকে বিয়ে করছেন না কেন? আবার অন্য জায়গায়ও বিয়ে করতে দিচ্ছেন না। কাহিনি কী আপনার? আপনি তো আরও বড়ো শত্রু! জানেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে প্রচণ্ড রকমের সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি। আপনাকে বলা হয়নি। আমাদের যাচ্ছে যে দিন, তা একেবারেই কিন্তু যাচ্ছে! খুব সম্ভবত আমাকে বিয়ে করতে হতে পারে। আমি প্রচণ্ড চাপের মধ্যে আছি। পাত্রপক্ষও পাঁচ-ছয় মাসের মধ্যে বিয়ে নামাতে চাইছে। ওরা সবাই আমার মতামত জানতে চাইছে বার বার। আমার হ্যাঁ না কিছুই বলতে ইচ্ছে করছে না। বিয়ে করতে আমার একদমই ইচ্ছে করছে না। আমি অনেকটা পালিয়ে পালিয়ে আছি, বলা যায়। কিন্তু আমার মা খুব করে চাইছে যে বিয়েটা এবার আমি করে ফেলি। আমার স্বপ্ন, ইচ্ছে সবই ধূলিসাৎ হয়ে যাবে মনে হচ্ছে। আমার শরীর কাঁপছে চারপাশের এরকম তোড়জোড় দেখে। আমার কোনটা করা উচিত? বিয়ে করে ফেলা? না কি আপনার সাথে থেকে যাওয়া? আপনার সাথে এভাবে দিনের পর দিন থেকে গেলে তা তো কাউকে বলতেও পারছি না। আমি কী করব এখন? ভাবছি, আগামী ছয় মাস আমরা মনভরে সংসার করব। আপনি বরের মতো সমস্ত অধিকারে থাকবেন, আর আমি থাকব বউয়ের মতো। এরপর যা হবার হোক। আসলে আমার মাথা কাজ করছে না। পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। এ ছয় মাস আমি বা আপনি কেউ কাউকে কোনও ধরনের অভিযোগ অনুযোগ করব না। ঠিক নতুন বিয়ে-হাওয়া কাপলের মতো সংসার করব। যেমনটা লোকে নতুন বিয়ের প্রথম ছয় মাস সময় কাটায়, ঠিক ওরকম করে আপনি আমার সাথে থাকবেন। আমিও বিয়ের পর নতুন ছ-মাস যেভাবে কাটায়, ওভাবে থাকব। আপনাকে ভালোবাসি বোধহয়। একদম ভেতর থেকে বাসি বোধহয়। আমি এ ছ-মাস নিজের মতো করে বাঁচব। জীবনে অন্তত এক বার বাঁচতে চাই। আমার জীবন আমি এ ছ-মাসে পূর্ণ করে যেতে চাই। ছ-মাস পর আমার জীবনে আপনার অথবা আপনার জীবনে আমার…কারও কোনও ছায়া থাকুক, সেটা আমি মোটেও চাই না। আমি যা বলছি, তার সবই সত্যি। আরও অনেক সত্যি পাবেন। সময় আসুক। বাট আই স্টিল ওয়ান্ট ইউ, বাবুই! আমি আপনার সন্তানের মা হতে চাই। ওকে দেখতে চাই। আমার অনেক শখ ও দেখতে কার মতন হবে, তা দেখা। আমি ওকে প্রাণভরে আদর করতে চাই। হ্যাঁ, সে তো আসবেই আসবে! আশ্চর্য রকমের সুন্দর একজন মানুষ হবে সে। আর ছয় মাস…! ছ-মাস তো আমি বাড়িয়েছি, এর কমও হতে পারে, বেশিও হতে পারে। ‘প্রাক্তন’ লেখাটা সেদিন আপনাকে ভেবেই লিখেছিলাম। আপনি বুঝতে পেরেছিলেন কি না জানি না। আমি যা বলছি, তার সবই সত্যি। এখানে আমি কোনও প্র্যাঙ্ক করছি না কিন্তু। জীবনটা প্র্যাঙ্কে চলে না। ওসব রাস্তাঘাটের জিনিস। আমার মানতে খুব কষ্ট হচ্ছে। ভালো লাগছে না কিছুই। আচ্ছা, আপনি এক কাজ করুন, প্র্যাঙ্ক মনে করে ভুলে যান সবই। যা হবার হবে। আমি স্মৃতিগুলি ভুলতে পারছি না। আমি আপনাকে ভালোবাসি। এই ভালোবাসাটা চিৎকার করে বলতে পারছি না, আপনাকে আটকাতে পারছি না---এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে, আমি একজন ব্যর্থ মানুষ। এইটুকু কাজটাও করতে পারছি না, যদিও প্রেমিক ছাড়ার অভ্যেস আমার পুরনো। কিন্তু আমার তো আপনার জন্য, আমাদের স্বপ্নজাত সন্তানের জন্য মায়া লাগছে, মন কাঁদছে। ওর আসার কথা ছিল এ দুনিয়ায়। আমার একটা ঘর, সংসার, সুখে-ভরা দুনিয়া হবার কথা ছিল। আমার পুরনো অভ্যেসে আপনি পড়ে যাবেন, এটা মেনে নিতে পারছি না কিছুতেই। কিছু অভ্যেস থাকে, যেগুলিকে চোখের সামনে পুরনো হতে দেখা যায় না। এতটা ভালো কি বেসেছিলাম কাউকে কখনও? মনে তো পড়ে না! একটা ব্যাপার কী জানেন, আসলে আপনিই থাকতে দিচ্ছেন না আমাকে। এক বার বলেই দেখেন না থেকে যেতে, পুরো দুনিয়া একপাশ করে আপনার সাথে ঠিকই পড়ে থাকব। আপনি আমার সুখের কথা ভাবছেন, অথচ আপনি বুঝতেই পারছেন না যে আপনিই আমার সমস্ত সুখ। বুঝবেন। সময় আসুক। সেদিন চিৎকার করে করে কাঁদবেন। দরজা বন্ধ করে হু হু করে কাঁদবেন একদিন। হয়তো সেদিন আমি অন্য কারও বুকের ভেতর মাথা ঠেকিয়ে সন্তানের নাম ঠিক করতে ব্যস্ত থাকব। আপনি আমাকে বলেছেন, একসাথে থাকতে থাকতে ভালোবাসা হয়ে যায়, তাহলে আপনার ভাইয়ার সাথে আপনার ভাবির কেন হয়নি এতকালেও? আমাকে ভালোবাসা বোঝান আপনি? চাইলেই ভালোবাসা যায়? চাইলেই যদি যায়, তবে তা-ই হোক। আপনিও অন্য কাউকে ভালোটা বেসে দেখান দেখি। আপনি আমাকে ভালোবাসেন। হ্যাঁ, আমি নিশ্চিত। মুখে কিছু বলতে পারেন না, দেখাতে পারেন না বেশি, তবে বাসেন ঠিকই। আচ্ছা, আপনি সকালে নাশতা করে বেরিয়েছিলেন তো বাসা থেকে? রাগ করবেন না। এই তো আর কয়েকটা মাস মাত্র জিজ্ঞেস করব। এরপর সব শেষ। আপনি এই জীবনের সবচাইতে বড়ো ধনটি হারাতে চলেছেন...এটা ভাবতেও আমার বুকের মধ্যে ধক্ করে উঠছে! আপনার জন্য কষ্টটা আমার বেশি হচ্ছে। আপনাকে ভালো রাখার দায়িত্বটা আমার কাঁধ থেকে সরে যাচ্ছে, এটাও মেনে নেবার কথা ভাবতে হচ্ছে! আপনাকে পাবো না, তার চাইতে বড়ো দুঃখ হচ্ছে, আপনাকে ভালো রাখতে আর পারব না। আপনি নিজের খেয়ালটা রাখতে জানেন না, এতদিন খেয়ালটা আমি রাখতাম খুশিমনেই। এখন কে রাখবে? আমি আমার সবচেয়ে প্রিয় অধিকারটা হারাতে চলেছি। এর চেয়ে কষ্টের আর কী হতে পারে! বিশ্বাস করুন, আপনি আমাকে ছেড়ে থাকতে পারবেন না। হয়তো সময়ের আবর্তনে সবই ঠিক হয়ে যাবে। সব শোক আর ক্ষত ঠিকই শুকিয়ে যায়। সময় সব ঠিক করে দেয়। বুকটাকে শক্ত করুন! দেখলাম, আপনি ইদানীং আবেগ আর কান্না লুকাতে শিখে গেছেন আমার মতো। এতটা কষ্ট আমার শেষ কবে হচ্ছিল, মনে নেই! আমার ডানহাতটা চোখের সামনে ভেঙে যাচ্ছে...কিছুই করতে পারছি না! আগের মতো আপনাকে আমি যখন-তখন যা-তা গালাগালি করে মেসেজ দিব না আর কয়েক মাস পর, তাই না? আমি জানতাম, আপনি ভেঙে পড়বেন, এজন্য এতদিন বলার সাহসটা পাইনি। জানি, আপনি সহ্য করতে পারছেন না। তবু বলব, প্লিজ, এমন করবেন না, আমার নিঃশ্বাস বন্ধ বন্ধ লাগছে। একটা কবিতা দেখুন। ওয়ালে আছে। দরজা বন্ধ করে নিঃশব্দে কাঁদতে কাঁদতে লিখেছি। আপনি দু-এক দিন কেঁদে ঠিক হয়ে যাবেন, কিন্তু আপনি আমার সারাজীবনের কান্না। আপনি একটা আফসোস হয়ে আমৃত্যুই আমার গলার কাছে আটকে থাকবেন। আপনি নিজেও জানেন না আমার জীবনযাপনের কত বড়ো একটা অংশ আপনি! না, ভুল হলো। আসলে জানেন। ভালো রকমেই জানেন। এমনিই বলছি এসব। আজ শুনে রাখুন, আপনি যতদিন ছিলেন, আমার জীবনটা একদম রংধনুর মতো ছিল। আপনি থাকলে হায়াতের চেয়ে আরও কটা দিন বেশি বাঁচতে ইচ্ছে করত। এমন করে বাঁচার আকুতি আমার আগে কখনও হয়নি। ওয়াদা করে বলছি, আপনি আমার জীবনে আসার পর থেকে মরণকে আমার বড্ড ভয় লাগত। নিজের সবটুকু দিয়েই বাঁচার চেষ্টা করে গিয়েছি সবসময়ই। মনে হতো, জীবনটা এত ছোটো কেন? আপনার বিষণ্ণ পোস্ট, মাইডে দেখলে আমার বুকের মধ্যে কষ্ট হতো। কষ্টটা এইজন্য ছিল যে আমি আপনাকে ভালো রাখতে কেন পারছি না, এতটা আন্তরিক চেষ্টা সত্ত্বেও? আসলেই খারাপ লাগত! এদিকে আমি কখনও কখনও বিষণ্ণ হতাম, কারণ আমি ভবিষ্যতের কিছু বিষয় আঁচ করতে পারতাম। আমি জানতাম, আমাদের এমন দিন আসবে। আপনি হয়তো এটা আজকের আগে বোঝেননি কখনও। আফসোস থেকে গেল, আপনি আমার আশিভাগই দেখে যেতে পারেননি। আমাদের আর কিছুই করার নেই, তাই না? জানেন, আমরা একসাথে থাকতে পারলে চমৎকার কিছু হতো। আপনি আমি দুজনেই হায়াতের চেয়ে আরও কটা বছর বাড়িয়ে বাঁচতে পারতাম। হ্যাঁ, জীবনটা সুন্দর হতো। নিশ্চিতভাবেই হতো। আরও বাঁচতে ইচ্ছে করত। আমি আপনার জীবনীশক্তি হয়েই থাকতাম। পিকাসোর মতো আপনারও রংতুলি দিয়ে বের হতো নতুন চমৎকার কিছু। আমি চলে যাবার পর আপনার ক্ষমতা পঞ্চাশ ভাগ কমে যাবে। মিলিয়ে নেবেন। আপনার ক্লান্তি আসবে আঁকায়। অতৃপ্তি আসবে। আমাদের অনেক অনেক গল্প কবিতা বাকি রয়ে গেল। আমি চলে গেলে আপনার পুরো মনস্তত্ত্বে অনেক বড়ো একটা পরিবর্তন আসবে। মাঝে মাঝে নিজের মনে ভাবি, আমাকে কি সত্যিই চলে যেতেই হবে? আমাদের বিচ্ছেদটা কি অনিবার্যই? আপনাকে আমি খুউব ভালোবেসেছি, একদম কানায় কানায় পূর্ণ করে। এমন ভালো জগতের কেউ কাউকে কখনও বাসেনি। সংসারের সাধ কিছুটা হলেও মিটেছে আমার। শোকরিয়া! আপনাকে ধন্যবাদ। সন্তানের প্রতি আপনার চোখে অগাধ ভালোবাসা দেখে আমার মা হবার ইচ্ছে জেগেছিল প্রথম। আমার ভালো লাগছে না কিছুই। মাথায় কিছুই বুদ্ধি আসছে না। আর হ্যাঁ, আপনি কিন্তু একদমই কাঁদবেন না বাচ্চাদের মতো। আরও অনেক সময় আছে আমাদের হাতে। আপনার মনে আছে, আপনাকে সবসময় বলতাম, আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে না তো? লিখে আবার রিমুভ করে দিতাম। জীবনকে আপনি আরও ভালো করে চিনবেন। অপেক্ষা করুন। অন্ধকার না থাকলে আলোর মর্ম তো বোঝা যায় না। আমাদের যাচ্ছে যে দিন, তা একেবারেই যাচ্ছে, তাই না? একটা জীবন, কত মোড়! এ-গলি ও-গলি, কতশত গলি! আমরা কি এমনই থেকে যাব? না কি যাব না? আহা, জীবন ঠিকই চলে যায়, আটকে যায় শুধু সুখ। অনেক কিছু পালটে যাবে আমাদের দুজনের। সময়, যাপন, ভাবনা, এমনকি অভ্যাসও। কী কী থেকে যাবে অবিকৃত? আপনার প্রেডিকশন বলুন তো দেখি? আহা। যদি সময় বেঁধে রাখা যেত ছবির ফ্রেমের মতো, তবে আমি বেঁধে রাখতাম এই সময়গুলি। কিছু কিছু সময় মানুষকে ঈশ্বরের প্রতি আজীবন ঋণী করে রাখে। আহা, ওরকম কিছু সময়ে আমরাও বেঁচেছি! আমাদের স্মৃতি, শুধুই স্মৃতি অবিকৃত থেকে যাবে, বাকি সব কিছুই বদলে যাবে। সন্ধেবেলায় আপনার ফেরার সময়টায় অন্য কেউ ফিরবে, আপনার জন্য বানানো নাস্তাগুলো অন্য কারও জন্য বানাব। আপনার চলে যাবার পথের দিকটাও পালটে যাবে। পালটে যাবে আমাদের দুজনেরই জীবন ও জীবনের মোড়…সবই। আহা, জীবন কত সুন্দর, অথচ আমরা জীবনটাকে চিনতেই পারি না কখনও! দেরি হয়ে যাবার পর বুঝি, হায়, দেরি হয়ে গেল! একদিন ক্লান্ত হয়ে আমি আপনি দুজনেই কাকে জানি খুঁজব অভ্যস্ততায়…হাতড়ে হাতড়েও কিছু খুঁজে পাবো না। চোখের জলেই স্নানটা সারতে হবে দিনরাত! আমার এইসব ভাবতে কষ্ট হয়। তবু জানি, শূন্যস্থান ঠিকই পূরণ হয়ে যাবে, থেকে যাবে শুধু শূন্যস্থানের নিচের দাগটা। আমি কখনও ভাবিনি, এরকম করে ভালোবাসায় আমিও এতটা অভ্যস্ত হতে পারি! আমাকে থাকতে দিন না! আমাকে জায়গা দিন একটু। একটাই তো জীবন, দেখবেন, চোখের পলকেই কেটে গেছে! কেন চলে যেতে দিচ্ছেন আমাকে? একটা মুহূর্ত, মাত্র একটা মুহূর্ত মানুষের পুরো জীবনটাকে অন্য পথে নিয়ে যেতে পারে! আমার তো অনেক কথা, অনেক লেখা, গল্প-কবিতা আপনাকে বলার বাকি আছে এখনও! আমরা একসাথে থাকলে এই পৃথিবী অনেক অসাধারণ কিছু পাবে। অনেক মানুষ ভালো থাকবে। আপনি পৃথিবীসুদ্ধ মানুষের কথা ভাবছেন, অথচ আমার বেঁচে থাকতে যে আপনাকে দরকার, আপনার সাহায্য আমার খুব দরকার, তা দেখতেই পাচ্ছেন না! আমি একজন ঘরোয়া বউ হবার চেয়ে বরং একজন মানবতার কর্মী হতে চাই। তবে তা-ই হোক, আমাদের না থাকাটাই হোক! আমি এটা আপনার হাতেই ছেড়ে দিচ্ছি। আমার হাতে ছাড়লে আমি আপনাকে যেতে দেবো না। একজন হুমায়ূনকে তো বাঁচিয়েছিল শাওনই, তাই না? লোকের এ নিয়ে নানান মতামত থাকতে পারে, কিন্তু জীবনটা ছিল যে ব্যক্তি হুমায়ূনের, তাঁর ইচ্ছে ও ভাবনা এখানে একমাত্র বিবেচ্য বিষয়। আমি খুব ভালো করে জানি, আমি চলে গেলে আপনার ধ্বংস অনেকটা অবশ্যম্ভাবী। আমার আপনার সুখের কথা ভাবতে ইচ্ছে করে। সেটার জন্য আমি যে-কোনও ছাড় দিতে রাজি। আচ্ছা, বাদ দিই এসব! আজকে থেকে প্র্যাকটিস হোক আমাদের। আপনি নিজেকে তৈরি করতে শিখুন আমাকে ছাড়া। একা একা হাঁটতে শিখুন। সামনে তো তা-ই করতে হবে! মেসেঞ্জারে আপনার নিকনেইমটা মুছে দিলাম। মানুষটাই তো নেই! নাম দিয়ে কী হবে? আমি আপনাকে ছাড়া থাকব কী করে? আমার যে বেঁচে থাকাটাকেই অর্থহীন লাগছে গো! আমি জানি, আপনি নেই। একদমই নেই। কোথাও আপনি নেই। আমার সন্তানের বাবাটা আদতে ছিলও না বোধহয় কখনও! বুকটা একদমই খালি খালি লাগছে। কেমন জানি নিঃস্ব লাগছে। যদি আসলেই আপনি বিশ্বাস করেন মনে থেকে যে আমি নেই, তবে আমি হয়তো সত্যিই নেই---অন্তত আপনার চোখে। অন্যথায় আমি থেকে যাব! আজ মনে হচ্ছে, আসলেই পৃথিবীর তিনভাগ শূন্যতা আর বাকি একভাগ অন্ধকার। আমার চোখে আপনি কি সত্যিই বিচ্ছেদ দেখেন? মন থেকে বলুন! আমি আপনার চোখে আজকে বিচ্ছেদ দেখেছি। এতকাল দেখিনি। আরও জানাই, আজ আমার আপনাকে, আপনার চোখে আমার নিজেকে খুব অচেনা লেগেছে। এতদিন আপনি ছিলেন বলে বেঁচে-থাকাটাকে আনন্দের মনে হতো। এমন করে কোনও দিনই আমি বাঁচিনি। আমি আদতেই জানি না, আমি কী করলে নিজেকে সত্যিই বোঝাতে পারব আপনার কাছে। নিজেকে এই জায়গায় ব্যর্থ ও অসহায় মনে হচ্ছে। মানুষকে যে কত ধরনের অসহায়ত্ব সহ্য করেও বেঁচে থাকতে হয়! জন্মের পর থেকেই আমি দুঃখী মানুষ। দুঃখই আমার দিনের যাপন। এক আপনি বাদে আমাকে আমার মতো করে একটা মানুষও আজ পর্যন্ত বুঝল না। এটা আমার অনেক বড়ো একটা অসহায়ত্ব। শুধু আপনিই আমাকে বাঁচিয়েছেন দীর্ঘ দেড়টি বছর! আপনাকে ছাড়া আমি বোধহয় মরে যাব। লাভ-বার্ডরা যেমনি একজন আরেকজনকে ছেড়ে বাঁচতে পারে না, ঠিক তেমনি আমিও ঠায় মরে যাব দম বন্ধ হয়ে! মনে হচ্ছে, কী যেন আমার হাত থেকে, বুক ছিঁড়ে খুঁড়ে কেউ কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে! সেটার সাথে চলে যাচ্ছে আমার পুরো অস্তিত্বটাই! আমাকে থাকতে দিন না, ছোট্ট একটি ঠাঁই দিন না! আমি খুব অল্প জায়গায় মানিয়ে নিতে জানি। আপনার জন্য আমি সবই মানিয়ে নেব। আমার সুখের সংসারটা, আমার সন্তান, আমার প্রিয় পাগলাটাকে আমাকে ফেরত দিন! আপনি থেকে যান। আমরা দুজন একসাথে থাকলে অনেক ধরনের শক্তি ও বুদ্ধি এসে ভর করবে দুজনের মধ্যে। আমার কাছে আপনি মানেই গোটা একটা জীবন, গোটা একটা দুনিয়া! আপনার মতো করে আমার প্রতিটি শব্দকে এতটা ভালো কেউ কখনও বাসেনি। আমার সব কিছুই আপনার কাছে দামি। এটা বোধহয় আপনি নিজেও ততটা জানেন না, যতটা আমি জানি। আমার শব্দ, লেখা, আবেগ, কান্না বুঝে নিয়ে আমাকে খুশি করতে এত বেশি মরিয়া আর কাউকে কখনও হতে দেখিনি এক আপনি ছাড়া। আপনি আমার ভুলগুলোও কখনও ভুলচোখে দেখেননি। আপনি প্রায়ই বলতেন, ‘শোনো মেয়ে, তুমি অনেক সুন্দর গো আমার চোখে!’ আমি নিজেকে সুন্দর করে রাখতে শিখে নিয়েছি কেবলই আপনার জন্য। এমন একটি কাজও আমি করতাম না, যা নিয়ে আমি আপনার সাথে গল্প করতে পারব না। নিজের প্রতিটি বদভ্যাসই ছুড়ে ফেলে দিয়েছি আপনাকে ভালোবেসে ফেলার পর থেকে। আপনার কাছে ভুল করতেও আমার কখনও ভয় লাগেনি। আপনি আমার সেই মানুষটা ছিলেন, যার কাছে ভুল করার সমস্ত স্বাধীনতা আমার ছিল। এই পৃথিবীতে বাঁচতে হলে এমন একজন মানুষ লাগে, যার কাছে নির্দ্বিধায় ভুল করা যায়। আমার সেই মানুষটা আমার জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। আমি ভয় পাচ্ছি বিয়ে করতে, প্রচণ্ড ভয়। ও আপনার মতো করে আমাকে গ্রহণ করবে না কখনওই। আপনার মতো করে আমাকে পৃথিবীর আর কেউই গ্রহণ করবে না, করতে পারবেও না কিছুতেই। আমার কান্না পাচ্ছে এসব ভাবে। আপনার সাথে থাকলে জীবনটাকে বড়ো সহজ লাগে, অত সহজ আর কারও কাছেই লাগে না। আপনিই একমাত্র মানুষ, যে আমাকে বোঝে, যে আমাকে খুশি রাখতে দুনিয়া একপাশ করে ফেলতে পারে। জীবনটা অনেক জটিলতার দিকে চলে যাচ্ছে, আমি এটা স্পষ্ট বুঝতে পারছি। আমার বিচ্ছিরি স্বাদের রান্না, আনাড়ি হাতের রান্নাও যে মানুষটা অভিযোগ ছাড়াই তৃপ্তি নিয়ে খায়, সে একমাত্র আপনিই। আমি জানি, আমার রান্না-করা অখাদ্যগুলোও আপনি ওরকম লোভাতুর চোখে গপাগপ খেয়ে নেন! এমন কে আছে বলুন আপনার মতো, যে আমাকে আমার ত্রুটিগুলোসহই ভালোবাসবে? আমার ভীষণ কান্না পাচ্ছে এসব লিখতে। লোকে বলে, ভালোবাসা মানুষকে কাঁদায়। অথচ আমার জীবন সাক্ষ্য দেয়, আমার ভালোবাসা আমাকে কখনও কাঁদায়নি। আপনার জন্য আমাকে কখনও কাঁদতে হয়নি, বরং আপনার জন্যই আমি বাঁচতে শিখে নিয়েছিলাম। তাই আজ এই বিচ্ছেদটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। আমি আপনার কাছে কখনও নিজেকে পারফেক্ট বানাতে চাইনি, আপনিই আমাকে পারফেক্ট করে নিয়েছেন। আমার মা, ভাই, বোনও সুযোগ পেলেই, আমার যত ভুল, ত্রুটি সব ধরে ধরে কত অনায়াসে আমাকে ভুল প্রমাণ করতে ব্যস্ত থাকে! ওদের কাছে ভুল করতে আমি প্রচণ্ড ভয় পাই। আমি কিছুতেই স্বাভাবিক থাকতে পারি না ওদের সামনে। একমাত্র আপনিই কখনও আমার ভুল ধরতে চেষ্টা করেননি। আমাকে আপনি গ্রহণ করেছেন আমার সমস্ত ভুল আর ঠিকসহই। আমাকে ভালোবেসেছেন মায়ের মতো, স্নেহ করেছেন ভাইয়ের মতো, আগলে রেখেছেন বাবার ছায়ার মতো। আমার কখন কী লাগবে, সবই কত সহজে আপনি বুঝে যান! এমন করে কে কবে আমাকে বুঝেছে, কে কবে বুঝবে আর? আমার হবু বর তো আমার ভুল ধরতেই ব্যস্ত থাকে সারাক্ষণই। আমার এটা ভুল, আমার সেটা ভুল। আমি এভাবে চলতে পারব না, ওভাবে চলতে পারব না। ওর সামনে আমি নিজের মতো হয়ে থাকতে পারি না কখনওই। আমার নিজেকে লুকোতে হয় ওর কাছে, ওর কল দেখলেও কেঁপে উঠি আমি ভয়ে! ও-ঘরে আমি কী করে বেঁচে থাকব, যেখানে সবাই এক হয়ে আমাকে শুদ্ধ বানাতেই ব্যস্ত থাকবে? আমি আসলেই বুঝতে পারছি না, এরকম অবস্থায় থাকলে কী টেক্সট পাঠাতে হয়। আমি হয়তো কিছুই গুছিয়ে লিখতে পারছি না, সবই এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে! জানেন, বাবাকে যে আমি ফিল করি, ভালোবাসি, এত এত চাই তাঁকে, এ-কথা তো আপনি ছাড়া দুনিয়ার দ্বিতীয় কোনও প্রাণী জানেও না! আপনি ছাড়া কে আমাকে আর আমার ভেতরকার মানুষটাকে চেনে, বলুন? বিশ্বাস করুন, আপনার কাছে নিজেকে একদমই লুকোতে হয় না আমার। মনে হয়, আপনিই তো আমি, আমিই তো আপনি। আমরা যেন একে অপরের আয়না। আয়নার সামনে লুকোতে বা পারফেক্ট করতে হবে কেন নিজেকে? আমার আয়নাটা আমার হাত ছেড়ে চলে যাচ্ছে…। সত্যি বলছি, বাবুই, আপনার মতো করে এমন করে কাউকে কখনও বুকে রাখিনি। আপনার মতো করে এমন করে বাবার শূন্যস্থানটাও কেউ কখনও পূরণ করতে পারেনি। আমার ভাইয়েরাও না। আমি কখনওই নিজেকে পূর্ণ ভাবিনি আপনি আসার আগ পর্যন্ত। নিজেকে অদ্ভুত রকমের ইনকমপ্লিট লেগেছে আজীবনই। আপনি আসার পর নিজেকে পূর্ণ মনে হয়েছে, নিজেকে ঐশ্বর্যশালী লেগেছে, নিজেকে সুন্দর হিসেবে দেখেছি আগের চাইতে শতগুণে! নিজেকে গুছিয়ে রাখার কোনও দায় আমার আর থাকবে না আপনি চলে গেলে। আপনি আসার পর নিজেকে কখনও অপূর্ণ লাগেনি। এতটা সুখী এ জীবনে আমাকে কেউ কখনও করতে পারেনি, এতটা হাসাতেও আমাকে কেউ কোনও দিনই পারেনি। আপনি আমার কাছে প্রাণের মতন। মাঝে মাঝে মনে হয়, প্রাণের চেয়েও প্রিয়! মায়ের মতন ভীষণ প্রিয় গো আপনি! আমি থাকতে পারব না আপনাকে ছাড়া! থাকতে হলে আগের মতো আবার নিজেকে অর্ধেক একটা মানুষ মনে হবে। আবার মনে হবে, আমি বেঁচে নেই। বেঁচে থাকার সব ইচ্ছেই উবে যাবে একেবারে! আপনি আমার কাছে পুরো একটা জীবনের সমান। বেঁচে থাকার পুরো অর্থটাই আমি খুঁজে পেয়েছি আপনাকে পাবার পর। আমার সৃষ্টিশীলতা বহুগুণে বেড়ে গেছে আপনি পাশে আছেন, এটা ভাবতে শেখার পর থেকে। একটা আশ্রয়, একটা নির্ভরতা, একটা নির্ভার হয়ে বিশ্রাম নেবার মানুষ আপনি---অন্তত আমার জন্য। আপনি চলে যাবার মানেই হলো, আমি মানুষটা অর্ধেক হয়ে যাওয়া, ঊনমানুষ হয়ে যাওয়া। আপনি আমাকে বাঁচতে শিখিয়েছেন, স্রেফ আপনিই! আমার বেঁচে থাকার পেছনে এক আপনি ছাড়া দ্বিতীয় কারও কোনও অবদান নেই। আমাকে জীবনের একটা কোনায় রেখে দিন, আমি তো নিজেকে গোছাতে জানি, অন্যের ক্ষতি না করে থাকতে জানি। আপনার কাছে ছাড়া আর কারও কাছে কখনও নিজেকে খুলে দিইনি, মেলে ধরিনি। একটু সুখের লোভ তো সবারই থাকে, আমি অন্ধকারে থাকতে থাকতে আলোর ছটা পেয়েছি জীবনে এই এক বারই! আমি রাখতে চাই। সত্যিই রাখতে চাই আপনাকে আমার জীবনে। আপনার জন্য আমাকে দরকার আছে। আমার জন্য আপনাকে দরকার আছে। আমার মনে হয়, আমার জন্ম হয়েছে সৃষ্টি করতে, ঘরের কোনায় অথর্ব হয়ে পড়ে থাকতে নয়। এটা আমি দায়িত্ব নিয়ে ভাবতে ও বলতে শিখেছি আপনি আমার জীবনে আসার পর থেকে। আপনার কাছে আমি নিরাপদ, নির্ভার, নিঃশঙ্ক। নিজেকে আমি পুরোটা দেখতে আপনার কাছে যাই, এবং গেলে সত্যিই দেখতে পাই। কখনও কিছু ভেবে কথা বলতে হয়নি আপনার সাথে আজ পর্যন্ত। আমি জানি, আমি সত্যিই খুব বাজে রাঁধি, কিন্তু আপনি সবসময় ‘ওয়াও ওয়াও’ করে যেভাবে তৃপ্তি নিয়ে খান, তা দেখে আমার যে কী ভালো লাগে! আমার ঘরের কেউ আমার চা-টাও কখনও খেয়ে দেখেনি, কখনও বলেওনি যে আমি রাঁধতে পারি। আমি ভয়েই ওদের জন্য রান্না করি না কখনও। ওরা আমাকে ছোটো করে নানান কথা বলতেই থাকে সারাক্ষণ। অথচ আপনার জন্য রান্না করার সময় আমি অনেক সুখে থাকি। আপনি বাদে এতটা তৃপ্তি নিয়ে এই জীবনে আর কখনও খাওয়াইনি। আপনার সাথে থাকলে নিজেকে অনেক বড়ো একজন মানুষ মনে হয়। কখনওই কোনও কিছু নিজেই লো ফিল করি না আপনি পাশে থাকলে। আমি কখনও কিছু রাঁধতে গেলে ওরা সবাই মিলে হাজার ধরনের ত্রুটি বের করে আমার। আমি এটা পারি না, আমি ওটা পারি না, আমার এটা ঠিক না, ওটা ঠিক না, আমি এমন, আমি তেমন। বছরে এক বার যে বাড়ি যাই, ওখানেও প্রতিদিন কথা শুনে শুনে থাকতে হয়। ভয়ে ভয়ে থাকতে হয় সারাক্ষণই। আমি আপনার কাছে ছাড়া দুনিয়ার আর কোথাও নির্ভয়ে নিঃসংকোচে থাকতে পারি না। এ আমার ব্যর্থতা হয়তো। এজন্য নিজেকে আমি খুব আলাদা করেই রাখি সবার কাছ থেকে। আপনার মতো করে এমন ভীষণ মমতা আমাকে কেউ কখনও করেনি, সত্যি বলছি, কেউই করেনি! আমার ভেতরও গুণী একটা মানুষ যে আছে, এটা এক আপনি ছাড়া কেউ কখনও বলেনি, সত্যি বলছি, কেউ বলেনি, দেখেনি, বোঝেওনি। কী বাচ্চা একটা মানুষ আপনি! আপনি আমার কাছে এলে নিতান্ত শিশু হয়ে যান। কেন, হয়তো তা জানেন না নিজেও। আর আমি হয়ে যাই বেশ বড়ো একটা মানুষের মতো, আপনাকে খালি বকি আর শাসন করি। অথচ আমি এমনই এক মানুষ, যাকে শাসন করতে তিরিশজন লাগে! আপনি বাদে আমি এই পৃথিবীর আর কারও কথা বিনা বাক্যব্যয়ে কখনওই মেনে নিই না। আমি আপনার সব কথাই শুনি। একদম সব কথাই! এটা আমার বাড়ির কাউকে বললে বিশ্বাসই করবে না। আপনি আমার সেই মানুষটা, যার শাসন মানার জন্যই আমি উদ্গ্রিব হয়ে থাকি! আমার সকল অবাধ্যতা হার মেনে বসে থাকে আপনার কাছে এসে। আমাদের কখনওই ঝগড়া হয়নি, আজব না ব্যাপারটা? অবশ্য দুজন দুজনের সবই মেনে নিলে সেখানে ঝগড়া হয়টা আর কী করে? আমরা দুজনেই দুজনকে অদ্ভুত রকমের সাপোর্ট করি, কেউ কাউকে কখনও বলতেও হয় না কিছু। প্রাকৃতিকভাবেই আমরা দুজনই দুজনের ভেতর ঢুকে পড়েছি। আমাদের কিছুই বলতে হয়নি, দেখিয়ে দিতে হয়নি। আপনি কখনও আমাকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করেননি, সে চেষ্টা করিনি আমিও। তবু কেমন করে যেন আমরা পরস্পরের মনের মধ্যে ঢুকে গিয়েছি। আমরা একে অন্যের আয়না হয়েই আছি এই দেড়টা বছর ধরে। এটা খুবই বিরল একটা ঘটনা। সত্যিই বিরল। আমার অদ্ভুত রকমের বিষণ্ণ লাগছে এখন। মনে হচ্ছে, আমার চোখের সামনে আমি নিজেকে শেষ হতে দেখছি চুপচাপ, হাসিমুখে! সামনে কী আছে, তা নিয়ে ভাবতে পর্যন্ত ইচ্ছে করছে না। কেবলই আপনাকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকতে ইচ্ছে করছে। আজকে আপনি নিজেকে ঠিক রাখতে চাইছিলেন বার বার। দেখেছি। আপনার কিছুই আমার দৃষ্টি এড়াতে পারে না। আজ নিজেকে পালকের মতো হালকা করে আপনার মধ্যে ডুবে থাকতে ইচ্ছে করছিল খুউব। আচ্ছা, কিছুই কি করার নেই আমাদের? আমি আপনাকে আজকে বেশি বেশি অনুভব করতে চাইছিলাম। মনে হচ্ছিল, কথার ফুলঝুরিতে এই সামান্য সময়টুকু কেন নষ্ট করব? আমার মানুষটাকে অনুভব করার জন্য তো আর বেশিদিন কাছে পাবো না। আজ কান্না পাচ্ছিল খুব। আমি কারও সামনে কাঁদতে পারি না, তবে আপনার সামনে পারি। আজকে কেন জানি না, আমি আপনার সামনে খুব চেষ্টা করেও কাঁদতে পারিনি। আমি নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম আপ্রাণ। কিছুই কি করার নেই আমাদের? আমরা এখনও থেকে যেতে পারি। এখন তো আছি। খারাপ তো নেই আমরা। খুব ভালোই তো আছি। আমাদের দুজনের মাঝখানে কোনও দ্বিধার দেয়াল নেই। আপনি যদি বলেন, কখনও ছাড়বেন না আমাকে একা, তবে আপনার জন্য ঘর, সমাজ, দুনিয়া কেন, আমি জান্নাতও ছেড়ে দিতে পারি হাসিমুখে। যদি এমন হয় যে আমরা দুজনই দুজনকে ছেড়ে থাকতে পারব না, তাতে যদি আমাদের সৃষ্টি ও সুখ, এই দুইয়ের কিছুটা ক্ষতিসাধনও হয়, তবু আমরা যে করেই হোক একসাথে থাকব। যদি দেখি, একসাথে থেকেই দুজনের ক্ষতির পরিমাণ বেশি হচ্ছে, তবে আমরা আলাদা হব। আসলে জীবনটা অতটা কঠিন নয়, যতটা কঠিন আমরা ভাবছি। এটা আমাদের আত্মত্যাগ নয়, বরং এটা দুজনেরই আত্মশুদ্ধি। আমি চলে গেলে আমার পাগলটা কখন কী ভুল করে বসে, কেউ তাকে দেখার থাকবে না। আপনাকে কিছু স্ক্রিনশট দেখাই? আমাদের প্রথম-দেখার কথোপকথন। আমাদের প্রথম-দেখার পরদিন আমাদের মধ্যে যা কথা হয়েছিল। জানেন, আমি গত দেড়-দুমাস একফোঁটাও পড়তে পারিনি। ভয়ানক রকমের সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলাম। কাউকে বলতেও পারছিলাম না, আপনাকেও বলতে পারছিলাম না। নিজেও কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারছিলাম না। এখন আমার একটাই সিদ্ধান্ত: আমি থাকতে পারব না আপনাকে ছাড়া! আপনি আমার সাথে থাকুন, আমরা সব কিছু জয় করে নেব ঠিকই, দেখতে পাবেন। প্লিজ, থেকে যাই না আমরা? আমরা থাকছি, তাই তো?