এবার আমার জীবনের বাস্তবিক দিকের শুরু। সে চলে যাবার পর আমি জানতাম না যে, আমাদের আসলেই আর কিছু হবে কি না। এদিকে আবার তার সাথে যোগাযোগও হয়, সে তখন আমাকে বলেছে, সে এসে আমাকে বিয়ে করবে। যাবার আগে আমাকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বলেছে যে, সে দেশে এসে একজাম দেবে অথবা ওখানে পড়াশোনা শুরু করবে। আমি মেনে নিয়েছিলাম, এখানে যে পড়েনি, ওখানে সে কীভাবে পড়বে!
আমার আপু এখন ডাক্তার, তখন ডাক্তারি পড়ছিল। তার দেখাদেখি বাবা-মা’য়ের আগ্রহ আর যত্ন-ভালোবাসা দেখে একটা মায়া কাজ করল তাঁদের প্রতি। নিজের মনকে বোঝালাম, না, আমি ওঁদের কষ্ট দেবো না, কিছুতেই দিতে পারব না—দরকার হলে আমার মৃত্যু হোক। আমি তাকে বুঝিয়েছি, পড়তে হবে, কারণ আমার ফ্যামিলিতে টাকা-পয়সা না, পড়াশোনাটাই চাইবে। তখন সেন্স যা কাজ করেছে আর কি আমার! সে বিদেশ যাবার পর বলেছে, এখন কি সম্ভব হওয়া? কীভাবে সম্ভব, জিজ্ঞেস করলে উত্তরে সে আমাকে বলত, আরে, সম্ভব হবে হবে, আমি তোর আব্বুকে মানাব।
আমি ভাবতাম, কী রে, একটা মানুষ, মানে আমার আব্বু আমাকে এত কষ্ট করে পড়াচ্ছে, তাঁর কি ইচ্ছে নেই একটা এডুকেটেড ছেলের হাতে তাঁর মেয়েকে তুলে দেবার! তখন কিন্তু আমার এই ম্যাচুরিটি কাজ করছে। আব্বু-আম্মু এত এত দিচ্ছে আর দিয়েই যাচ্ছে; আমার চামড়া দিয়ে জুতো সেলাই করলেও আমি তাঁদের ঋণ শোধ করতে পারব না। সে তার খালুর আন্ডারে গেছে, ওখানে তাঁর ব্যবহার তার সাথে মেলে না, মনোমালিন্য হতো, তাকে দেশে দেশে আসতে দিচ্ছিলেন না উনি।
আমার ইন্টারমিডিয়েটের শেষের দিকে চাচা-চাচি আর কাজিনরা খুবই সমস্যা করে, অনেক বড়ো আকারের সংঘর্ষ হয় আমাদের পরিবারে। ওরা আব্বুর গায়ে হাত তোলে। আব্বুকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল, ফিজিক্যালি অ্যাটেমপ্ট নেয়। আমরা যদি না থাকতাম, আজ আব্বু আমাদের সাথে থাকত না। ওরা জোর করে আমাদের জায়গা দখল করে, আব্বুকে মারার পর হসপিটালেও নিয়ে যেতে দিচ্ছিল না। এমনই বর্বর চিত্র—যে-সমাজের মানুষের গল্প আম্মু আমাকে শোনায়, সেই সমাজের মানুষ শুধু হাঁ করে দেখছিল সেই করুণ দৃশ্য, আর শুনছিল আমাদের আর্তনাদ। পরে পুলিশ এসে তাদের ধরে নিয়ে যায়।
তাদের সাথে সংঘর্ষ লেগেই ছিল, গত এক বছর ধরে রিলেশন কিছুটা ভালো তাদের সাথে, কারণ ওরা আব্বুকে জায়গা-জমির বিভিন্ন সমস্যার সমাধান আর পাওয়ারের জন্য ব্যবহার করে। আর সে সুবাদে তারা রিলেশন ভালো মেনটেইন করে। যেদিন আব্বুকে ওরা মেরে ফেলার অ্যাটেমপ্ট নিয়েছিল, আমার কাজিন বলেছিল, তোরা মেয়ে হয়ে কেন এসেছিস, তোরা কি আমাদের সাথে পারবি? আব্বুকে যখন বাঁচাতে গিয়েছিলাম, তখন মাথায় কাজ করছিল, আজ ওরা আব্বুকে মেরে ফেলবে।
আমার আব্বু তাদেরকে ছোটো থেকে যত্ন করে মানুষ করেছে। আব্বু তার ভাইকে ভালোবাসত, বিনিময়ে পেয়েছে নির্যাতন। আব্বু অনেক সহজসরল প্রকৃতির। এটা আমার বাবা বলে বলছি না, একটা মানুষ হিসেবে বিচার করছি তাঁকে।
এবার আমার জীবনের পরিবর্তনের অংশ নিয়ে বলি। আমি যে লাইফে কিছু একটা হব, সেটা হালকা-পাতলা বিশ্বাস নাহয় করতাম, পুরোপুরি কনফিডেন্ট ছিলাম না। আমি কমার্স ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে পড়েছি। টার্গেট ছিল অ্যাকাউন্টেন্ট অথবা ফ্যাশন ডিজাইনার হব। যখন তাদের বর্বর চিত্র দেখলাম, নিজেকে এত যে তুচ্ছ লাগছিল! ভাবছিলাম, কেন আমরা আজ নির্যাতিত হলাম? আমি মেয়ে বলে? না, আমি এই অপমান মানতে পারি না। আমাকে অনেক ক্ষমতাবান হতে হবে। আমি একদিন তাদের দেখিয়ে দেবো, ওরা কার সাথে ওরকম উলটা-পালটা আচরণ করেছে। সেদিন ওরা আর এসব করতে সাহস করবে না। আমি জবাব দেবোই দেবো! পাবলিকে একজাম দিই, কিন্তু আসেনি। ক্ষমতার কথা চিন্তা করে মাথায় আসে, আইন নিয়ে পড়ব, আমি অনেক বড়ো হব। তখন আইআইইউসি’তে আইন নিয়ে অ্যাডমিশন নিয়ে নিই।
আমার চাচি উপহাস করে বলেছিল, ওমা একটা ডাক্তার, আরেকটা ল-ইয়ার! আমরা তো বাড়িতে থাকতেই পারব না! মনে মনে বলেছিলাম সেদিন, আপনার কথাই যেন একদিন সত্যি হয়। মানে, যাতে মানুষ হই আমরা। বাসায় আব্বু, আপু কেউই সাপোর্ট দেয়নি এটা নিয়ে পড়তে, কিন্তু আম্মু দিয়েছিল। আম্মু এবং আমার নিজের সাপোর্টে অনার্স-মাস্টার্স কমপ্লিট হয় ২০১৯-এর আগস্টে।
আগের বয়সের সম্পর্কটার প্রতি ভাবনায় কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। খুব অনুভব করছিলাম, এখন মাথা থেকে সেই চিন্তা বাদ দিতে হবে, যে-চিন্তা ছিল এক শুধু তাকেই নিয়ে—ঘর সাজাব আর কিছু বাচ্চা হবে। এখন ভাবি, আমাকে দাঁড়াতে হবে, আমাকে অনেক বড়ো হতে হবে, আমাকে অপমানের জবাব দিতে হবে। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, আমি কেন এত বদলে গেলাম? আমার খালাত ভাইয়েরা, আব্বু যাদের জায়গা-জমি সব কিছু সামাল দেয়, তারা আমাদের হেল্প করতে এগোয়নি। উলটো খালাত ভাই-বোনের ছেলেরা আব্বুর পিছু নেয়, কারণ আপু ডাক্তারি পড়ছিল, আব্বুর বেশ সুনাম হয়েছে।
আপু অনেক ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট। আমার রিলেটিভরা আমাদের কেমন আড়চোখে দেখত, কেন আমরা পড়ি, কেন আমরা এগোই, আমাদের ডিসক্রিমিনেট করত কোনো প্রোগ্রাম হলে। খুব খারাপ লাগত, অথচ আমাদের টাকা-পয়সার কমতি ছিল না। শুধু আমরা মেয়ে আর তাদের ছেলে আছে বলে সবাই তাদের দিকে যেত। খুব দুঃখ লাগত। আমরা সেই বাড়িতে খুব কষ্টে দিনযাপন করি। শেষ পর্যন্ত চাচা-চাচির অত্যাচারের জন্য সেই বাড়িটা বিক্রি করে আমরা অন্য বাড়িতে চলে আসতে বাধ্য হয়েছি।
আমার আগের সম্পর্কের মানুষটার প্রতি খুব রাগ হচ্ছিল। চাইলে সে আমার কথা শুনতে পারত, কিন্তু সে শোনেনি। আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছি, আমি এগোব না আর। আমাকে আমার পরিবারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, তাকে জানিয়েছি। আচ্ছা, সে তো আমার পরিবারের সম্মানের কথা ভাবে না, আমাকেই ভাবতে হবে; সে আমাকে জোর করে, কিন্তু আমি ওদেরকে কষ্ট দিতে পারব না। আমি ভাবছিলাম, আচ্ছা, আমি তো জানি, আমি তাকে বিয়ে করতে পারব না, তাহলে কেনই-বা এখনও জড়িয়ে আছি! আমার অনেক কষ্ট হচ্ছিল নিজেকে বদলাতে। কিন্তু আমাকে বদলাতেই হবে, এটাও মাথায় কাজ করছিল। তার সাথে কথোপকথন চলতে থাকে। আমি বোঝাই, সে বোঝে না। আমি যখন সম্পর্ক রাখতে পারব না বলি, তখন সে আমাকে চাপ দেয়, তার শরীর খারাপ হয়; বলে, আমি অনেক খারাপ অবস্থায় পড়ে গেছি। এভাবে চলতে থাকে।
অনার্সের পড়া বেড়েছে, অ্যাসাইনমেন্ট ক্লাস বেড়েছে, সব মিলিয়ে রীতিমতো ব্যস্ত দিন যাচ্ছে। আগের ক্ষমতাবান হবার স্পিরিটটা কমে গেছে। পড়াশোনা চলছে, আমার ছেলেফ্রেন্ড একদম নেই। কিছু ব্যাচমেটের সাথে ফেসবুকে যুক্ত ছিলাম। তাদের সাথে তেমন কথা হতো না। ২০১৪ সাল নাগাদ তৃতীয় সেমিস্টারে সংবিধান বিষয়টি ছিল। ক্লাস করিনি বলে কম বুঝেছি। মেয়েদের কাছ থেকে তেমন ভালো নোট না পাওয়ায় ব্যাচমেটগুলোকে খুঁজে খুঁজে নক দিই, তার মধ্যে ছিল যার সাথে এতদিন ধরে সম্পর্ক (২য় জন), সে-ও। সে আমাকে রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে, না আমি ওকে, আমার ঠিক মনে নেই। আর সে আমাকে হেল্প করেছে কি করেনি তখন, তা-ও ঠিক মনে নেই। এরপর তার সাথে আমার ২০১৭-এর শেষ দিকে তেমন একটা কথা হয়নি।
২০১৮-তে আপুর এক ডক্টর ছেলের সাথে বিয়ে হয়; উনি ৩৯তম বিসিএস-এ সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। ২০১৭-এর শেষ নাগাদ এখনকার সে আমাকে নক দেয়, হাই হ্যালো দেয়। আমি তাকে তুই করে বলি একজন বন্ধু হিসেবে। বন্ধু হিসেবে ফাজলামো করে, আমাদের বাসা যেখানে, এখানে শীতকালে রস পাওয়া যায়। আমাকে সে বলে, তোদের ওইদিকে রস অনেক ভালো, আমার জন্য আনিস, প্লিজ। বার বার বলে। আমি আমাদের মেয়েদের ক্যাম্পাস বহদ্দারহাটের টার্মিনালের ওখানে তাকে রস আর পায়েস দিই। সে সেদিন কেমন জানি করে আমার দিকে তাকায়, মানে পা থেকে মাথা পর্যন্ত। তার ওই তাকানোটা আমার ভালো লাগেনি। আমি ওগুলো দিয়ে তাড়াতাড়ি চলে আসি। মনে মনে বলেছি, আর কোনোদিন এমন ভুল কাজ করব না, ফালতু একটা ছেলে!
আমি বোরকা পরি, আর হিজাবটা দিয়ে এমনভাবে ফেইস ঢেকে দিয়েছি, যাতে আমি তার নজরে না আসি। আমি যাবার পর সে ফোন দেয়। আমার নাম ধরে বলে, শোন, রস আর পায়েসটা দারুণ ছিল, কিন্তু তোকে দেখে খালাম্মা মনে হয়েছে। আমি বললাম, ঠিক আছে, ভালো হয়েছে। আমি তার সাথে আর যোগাযোগ করিনি। আমি বুঝেছি তখন, সে ভালো ছেলে না।
সে অনেক দিন পর পর আমাকে ফোন দেয়। আমি তখন হোস্টেলে, আমার সাথে আমার রুমমেট ছিল। সে ফোন দিত, বন্ধু হিসেবে আমিও ধরতাম। একটা জিনিস খুব বিরক্তিকর লাগত। সে ফোন দিলে আমার রুমমেট কী করে, কেমন আছে, এইসব জানতে চাইত। আমার কেমন জানি লাগত ব্যাপারটা। যা-ই হোক, তাকে আমি বন্ধু ভাবতাম বিধায় অতটা গভীরভাবে চিন্তা করতাম না। (পরে বুঝেছি, কেন সে অমন করত।)
২০১৭-এর শেষে এসে সে আমাকে নক করে। আমি কেমন আছি, কোথায় আছি ব্লা ব্লা ব্লা! আমি ফেইসবুকে যেহেতু ছবি দিতাম না, সে আমাকে দেখেনি। আমার বন্ধুদের সাথে ছবি তুলেছে সে, দেখেছি তাদের ওয়ালে। সেই থেকে আমার একটু একটু কাছে আসতে চেয়েছে, আমি তখন ওই ব্যাপারটা অত সিরিয়াসলি নিইনি। তার সাথে ফেইসবুকে হাসিঠাট্টা করতে করতে কেমন জানি একটা ভালো অনুভূতি হচ্ছিল। যদিও তার আগের কর্মকাণ্ডে একটু অন্যরকম মনে হয়েছে, তার পরেও মানুষটাকে কেমন জানি ভালো লাগছিল। সে লিখত, ফেইসবুকে তার ওয়ালে দিত। তার লেখার এই আর্টটা আমার খুব ভালো লাগত।
ওকে কীরকম জানি একটু জ্ঞানী মনে হলো। নিজেকে তার সামনে তুচ্ছ মনে হলো। তার আরেকটা আর্ট আছে, যেটাকে আমি বলব ফাঁদ। হ্যাঁ, ফাঁদ, যা দিয়ে সে অনেক মেয়ের মন জয় করেছে। তার কনভিন্সিং পাওয়ার এত জোরালো এত জোরালো যে, যে-কেউই হার মেনে নেবে তার সামনে। এত সুন্দর সুন্দর যুক্তি দিয়ে নিজেকে প্রেজেন্ট করবে যে বলার বাইরে। সে কিন্তু অনেক অনেক বইপড়ুয়া, মানে বইপ্রেমী। একটা মানুষ এত সুন্দর করে নিজেকে উপস্থাপন করে, এত সুন্দর করে কথা বলে, তার লেখায় যুক্তি দেখি, তার তর্কেও আছে যুক্তি, তাহলে মনের অজান্তে তার প্রেমে তো সবাই-ই পড়বে।
সে টেক্সট করে, আমিও টেক্সট করি ফেইসবুকে। হঠাৎ একদিন বলে, আমরা হোয়াটসঅ্যাপে নক দিই, ওখানে কথা বলি? আমি বললাম, কেন? আমরা এখানে টেক্সট করলে অসুবিধা কীসে? না, এমনি; ওখানেই করি। আমিও মাইন্ড করিনি; আমি বলেছি, আচ্ছা, ঠিক আছে। সে নক দেয় এখন হোয়াটসঅ্যাপে। আস্তে আস্তে আলাপ গভীর হয়। এখনও কিন্তু বন্ধু ভেবেই সব নিচ্ছি। আমি পাখি পালতাম তখন। আমার পাখির পিক দিতাম, পাখির পাশে আছে একটা দোলনা। সে আমার এসব শখ দেখে অবাক হয়, আমি অনেক কিছু বানাতাম নিজের ব্যবহারের জন্য। সব কিছুর ছবি দিতাম, সে প্রশংসা করত, গাছ রোপণ করতাম, রান্না করতাম। সব কাজে সে আমার প্রশংসা করত। সে থাকত তার নানুর বাসায়। নিজের বাড়িতে যাবার আগে আমার কাছ থেকে পারমিশন চাইত—আমি কি বাড়িতে যাব?
আমি অবাক হতাম। কী রে! কেউ কেন আমার কাছ থেকে পারমিশন চায়! সবসময় সে এমন করত, আমিও সম্মতি দিতাম। কেমন জানি সে আমাকে কাছে টানছিল। বুঝে উঠতে পারছিলাম না, কেমন যেন অস্থির লাগছে! হচ্ছেটা কী? তখন কিন্তু আমার আগের জনের সাথে কথা হয়, তবে অনেকটা কমে গেছে। দ্বিতীয় জনের কথা, আমার দুই বান্ধবী আছে, খুব ভালো, ওদেরকেও বলিনি। এর কারণ, আমি কনফিডেন্ট ছিলাম যে, জড়াব না দ্বিতীয় জনের সাথে। ওরা আগের জনের কথা জানত; সম্পর্কের শেষ পর্যায় চলছে, এটাও জানত। আবার দ্বিতীয় জনের সাথে, আমার দু-জন ফ্রেন্ডের মধ্যে যার সাথে আমি বেশি অন্তরঙ্গ, তার সাথে যোগাযোগ আছে ফেইসবুকে। এটাও জানতাম...কিন্তু আমার ফ্রেন্ডকে কখনও জিজ্ঞেস করিনি তার ব্যাপারে।
দ্বিতীয় জন পড়ুয়া আর পণ্ডিত ছিল ঠিকই, কিন্তু সে কথায় কথায় নেগেটিভ শব্দ ব্যবহার করত খুব বেশি। আমি তখন এ ব্যাপারটা অত সিরিয়াসলি নিচ্ছিলাম না, কারণ সে আমার জাস্ট ফ্রেন্ড। আমি ফ্রেন্ড ভেবে ছাড় দিচ্ছিলাম—থাক, এটা তার স্বভাব, তাই বলছে। সে কিছু উলটাপালটা বললে আমি রেগে যেতাম অনেক। একদিন আমাদের তুমুল ঝগড়া হয় একটা নেগেটিভ কনভারসেশনের জন্য। তখন আমি তার কল রিসিভ করিনি। সে সেদিন সেন্টমার্টিন গিয়েছিল, আমাকে ফোনের উপর ফোন দিচ্ছিল। আমার কেমন যেন মেজাজটা খারাপ হয়েছে; বললাম, যা আমি অপছন্দ করি, তা বলো কেন? সে আমার থেকে ক্ষমা চায়, কিন্তু তার পরেও সে বলে যায়। তখন বলেছি, তুমি কখনোই শোধরাবে না। সে বাইক চালাত, মাথায় হেলমেট পরত না। আমাকে ছবি দিত। আমার ভয়ে জান বেরিয়ে যেত। রাগ করে বলতাম, আমাকে আর টেক্সট দেবে না। তুমি কেন মাথায় ওটা লাগাওনি!
একদিন ভার্সিটি থেকে ট্যুরে গেছে। আমাকে বলছে, শোনো না, সবাই নিকোটিনের ধোঁয়া নিচ্ছে, আমিও একটু নিই? আমি বলেছি, না, নিতে পারবে না; স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এসব। তুমি নেবে না, বুঝলে! কোনোদিন রাইস রান্না করবে, আমাকে ফোন দিয়ে বলে, শোনো না, কীভাবে রাইস রান্না করে জানি না; সাহায্য করো। আমি বিস্তারিত বললাম। এমনি করে সে কখন যে আমার ভেতরটাকে চুরি করে ফেলেছে জানি না, অথচ তার ব্যাপারে তখনও মনে হচ্ছিল, আমরা শুধুই বন্ধু।
সে আবার রস খোঁজে, আমি আবার রস আর পায়েস একটা দোকানে গিয়ে রেখে আসি। একদিন আমি বের হয়েছি তার সাথে ফোনে কথা বলে। সে আমাকে দাঁড় করিয়ে একনজর দেখে যায় সেদিন। তাকে কেমন যেন লাগছিল। খুব হাস্যকর ব্যাপার হলো, আমি রিকশা যখন থামাই, দেখি, সে-ও সেখানে আছে; আমিও নামি। রিকশাওয়ালা তো দাঁড়িয়েছিলেন, সে যাবার পর আমাকে উনি বললেন, “আপা, একটা কথা কই, মাইন্ড কইরেন না। এই ব্যাটারে লাগছে বিবাহিত।” আমি তাঁকে বললাম, “আপনার কেন এমন মনে হয়েছে?” “এত কিছু বলতে পারব না, আপা। আপনি আপা তারে বইলেন না, নাহয় উনি আমার রিকশা দাঁড় করায়ে আমারে মারব।”
আমি তাকে বলেছিলাম, আচ্ছা, তুমি নাকি বিয়ে করেছ? কেন উনি এমন বললেন, নিশ্চয়ই কোনো কিন্তু আছে। সে হাসছিল কথাটা শুনে। একটা কথাও বলেনি। সে কিন্তু আগের জনের কথা জানত, অনেক আগে আমি তাকে বলেছিলাম, আমার একটা রিলেশন আছে, এখন প্রবলেম চলছে। সে তো আমাকে ফাঁদে ফেলছিল, তাই সে একটা বারের জন্যও জিজ্ঞেস করেনি, “তোমার আগের সম্পর্কটার কী অবস্থা এখন?”
যা-ই হোক, যখন হোয়াটসঅ্যাপে কনভারসেশন শুরু হয়, তখন সে আমাকে বলে, আমরা এখন থেকে ‘তুমি’ করে বলব। আমি বলেছি, কেন? আমি ‘তুই’ করে বলব। তার পরেও, সে আমাকে ‘তুই’ বলতে দিত না।