যে-দিন প্রথম তোমাকে দেখেছিলাম, সেই বটমূলে, শীতল সবুজ আভার স্নিগ্ধ বরণে, সে-দিন আমার প্রতিটি রোমকূপ আমার মধ্যে শিহরন জাগিয়ে দিয়ে আমায় শুধু এটুকুই জানান দিয়েছিল... এই সকালের সবুজ, সবুজের চাদরে-মোড়া স্নিগ্ধ প্রকৃতি আর তার প্রকৃতিকন্যা, ওরা সকলেই যেন একান্তই আমার ব্যক্তিগত। সেই সকালে বোশেখের পহেলা দিনের যাপন যেন ছিল আমারই যাপন, এক সুন্দরীশ্রেষ্ঠার সাথে সেই বোশেখী হাওয়ার উত্তালতায় আমার প্রথম মহামিলন! এ যেন পূর্বনির্ধারিত মহাকাল কোনও! আমি বিস্মিত হয়েছিলাম একটুখানি, আশ্চর্য হয়েছিলাম খানিকটা ক্ষণও, আর ভেবেছিলাম বহুক্ষণই, আমি কেমন করে রাখব প্রকৃতির বাহুলগ্না এই দেবীটিকে! অমন কী আছে আমার? আমি যে কেবলই ভৃত্য এক! আমি যে তার চলার পথের পদদলিত এক বুনোফুল মাত্র! আমি যে শূন্য, আমি যে রিক্ত, আমি কীভাবে যে নিবেদনে নিবেদনে রাখি দেবীকে! ভাগ্য যেন এবার উলটোরথটাই এল নিয়ে! যা ভাবিনি কখনও, সেটাই হলো, অপ্রত্যাশিতভাবে হলেও, দেবীর পায়ে ঠাঁই হলো এই ভৃত্যের, মনে হলো, প্রকৃতি যেন নিজে এসে দয়া করে ভাগ্যলক্ষ্মী দান করলেন কোনও এক অভাগার হাতে। সেই বোশেখ যেন হয়ে উঠেছিল এ জীবনের শ্রেষ্ঠ বোশেখ! কিন্তু ভাগ্যবিধাতার ফাঁকির আসল খেলাটা এখানেই! মনে হয়েছিল...হয়ে আর উঠতে পারেনি! কোনও ভৃত্যকে যখন দেবী নিজে এসে ধরা দেয়, তখন সেই ভৃত্যের তার প্রতি ভক্তি, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, আকাঙ্ক্ষা জন্মালে, তখন তা যে দেবীর কাছে আস্পর্ধা কেবলই, এই সহজ কথাটি মাথায় না রাখা আসলেই আমার ভুল ছিল! সে ভুল যে অযোগ্য ক্ষমার! হে দেবী, আমার স্বপ্নের প্রেয়সী, একটি বার যদি ভুলের খাতায় ভুল খুঁজতে খুঁজতে, ভুলেও তুমি এই ভৃত্যের হৃদয়ের অন্তস্তলে তোমার জন্যে পাতা আসনখানি খুঁজে পেতে, তবে আজ, সেই বোশেখকে ভুলে-ভরা কোনও দিন নয়, বরং হয়তো জীবনের শ্রেষ্ঠতম দিনের আড়ম্বরে তার দিকে পূর্ণতার চোখে তাকাতে পারতে!