এ আসলে এক সমন্বিত উপদেশ: জীবনযাত্রা ও আধ্যাত্মিকতা আলাদা নয়। সংসারের মধ্যে থেকেই মানুষ ঈশ্বরচেতনায় বাঁচতে পারে—নাম-জপে তার জিহ্বা, কর্মে তার দেহ, আর ধ্যানে তার মন ঈশ্বরকে নিবেদিত থাকে। এই অবস্থাই গৌড়ীয় ভক্তিতত্ত্বের চূড়ান্ত লক্ষ্য—যেখানে স্মরণ, ধ্যান ও কর্ম একসাথে প্রবাহিত হয়ে জীবনকে ঈশ্বরমুখী করে তোলে।
এই আহ্বানটি কেবল ভক্তির নির্দেশ নয়; এটি এক জীবনদর্শন। এখানে কর্ম আর ধ্যানের কোনো দ্বন্দ্ব নেই। কাজ হয়ে ওঠে উপাসনা, কারণ প্রতিটি ক্রিয়ায় ঈশ্বরের স্মৃতি জেগে থাকে। নামের ধ্বনি তখন শুধু মন্ত্র নয়, চেতনার ছন্দ; প্রতিটি কর্মফল তখন শুধু ফল নয়, ঈশ্বরের প্রসাদ। এই অবস্থায় জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই হয়ে ওঠে গীতার শিক্ষার প্রতিধ্বনি—প্রকৃতেঃ ক্রিয়মাণানি গুণৈঃ কর্মাণি সর্বশঃ। (গীতা ৩/২৭) অর্থাৎ, সমস্ত কর্মই প্রকৃতির গুণ (সত্ত্ব, রজ, তম) দ্বারা কৃত হয়। অহংকারে মোহাচ্ছন্ন মানুষ নিজেকে সেই কর্মের কর্তা বলে মনে করে।—“আমি কর্তা নই, আমি কেবল যন্ত্র”—নামস্মৃতিতে স্থিত থেকে কর্ম করাই পরম যোগ, আর সেই যোগেই জীবনের মুক্তি।
দ্বিতীয়ত, “প্রসাদবুদ্ধি” মানে কর্মফলকে ঈশ্বরের প্রসাদরূপে গ্রহণ করা। গীতা যে “কর্ম” বা “ফল” নিয়ে আলোচনা করে, তা কোনো বাহ্য ক্রিয়ার অর্থে নয়, বরং মানসিক অবস্থার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। “বুদ্ধি” মানে এখানে মানসিক দৃষ্টিভঙ্গি বা দৃষ্টির দিকনির্দেশ। সুতরাং “প্রসাদবুদ্ধি” মানে হলো এমন এক দৃষ্টিভঙ্গি, যেখানে কর্মের ফলকে ঈশ্বরের অনুগ্রহ হিসেবে দেখা হয়—না পুরস্কার হিসেবে, না শাস্তি হিসেবে। এই দৃষ্টিই মুক্তির প্রথম ধাপ।
গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন—“যৎ করোষি যদশ্নাসি যজ্ জুহোষি দদাসি যৎ। যত্তপস্যসি কৌন্তেয় তৎ কুরুষ্ব মদর্পণম্॥” (৯.২৭)। অর্থাৎ, তুমি যা-কিছু করো—খাওয়া, দান, তপস্যা বা যজ্ঞ—সবই আমাকে অর্পণ করো। এই উপদেশটি কর্মের কেন্দ্রবিন্দু সরিয়ে দেয় ‘আমি’র দিক থেকে ‘তিনি’র দিকে। কর্ম তখন আর ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা নয়, এক নিবেদন হয়ে ওঠে। যেমন একটি শিশুর আঁকা ছবি হয়তো নিখুঁত নয়, কিন্তু মা তা ভালোবেসে নেন কারণ তা শিশুর নিবেদন—তেমনি ঈশ্বরও ফলের গুণ বা অগুণ বিচার না করে গ্রহণ করেন নিবেদনের আন্তরিকতা।
এই মনোভাবই “প্রসাদবুদ্ধি”—যেখানে যা-কিছু আসে, তা ঈশ্বরের পাঠানো বলে মনে হয়। আনন্দ হোক বা বেদনা, প্রাপ্তি হোক বা ক্ষতি—সবই ঈশ্বরের দান। এই অবস্থায় মন ফলের ওঠানামায় স্থিরতা হারায় না; এটি “সমত্ব” বা সমদৃষ্টি শেখায়—যাকে গীতা বলে, “সুখদুঃখে সমে কৃত্বা লভালাভৌ জয়াজয়ৌ” (২.৩৮)। সুখ-দুঃখ, লাভ-ক্ষতি, জয়-পরাজয়—সবই যখন সমানভাবে গ্রহণ করা যায়, তখন মন মুক্ত হয় প্রতিক্রিয়াশীলতার দোলাচল থেকে।
নিষ্ঠা ও প্রসাদবুদ্ধি—এই দুই একত্রে গঠন করে প্রকৃত কর্মযোগের ভারসাম্য। নিষ্ঠা মনকে বর্তমানের কেন্দ্রে স্থির রাখে; এটি মনকে ঈশ্বরস্মৃতিতে স্থায়ী করে। অন্যদিকে প্রসাদবুদ্ধি ফলের প্রতি আসক্তি হ্রাস করে। ফলত মন হয়ে ওঠে শান্ত ও স্থিতিশীল। তখন “আমি কর্তা”—এই অহং ধীরে ধীরে বিলীন হতে থাকে। মানুষ কাজ করেন, কিন্তু নিজেকে আর “কর্তা” মনে করেন না।
“নৈব কিঞ্চিত্ করোমি ইতি যুক্তো মন্যেত তত্ত্ববিত্। পশ্যঞ্ শ্রৃণ্বন্স্পৃশঞ্ জিঘ্রন্নশ্নন্ গচ্ছন্স্বপন্স্বসন্। প্রলপন্স্বিসৃজন্ গৃহ্ণন্নুন্মিষন্নিমিষন্নপি।।”—এই শ্লোকদুটি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার পঞ্চম অধ্যায় (কর্মসন্ন্যাসযোগ), অষ্টম ও নবম শ্লোক। এখানে শ্রীকৃষ্ণ ব্যাখ্যা করেছেন, জ্ঞানী বা যোগী ব্যক্তি কীভাবে কর্ম করতে করেও অন্তরে অকর্তা হয়ে থাকেন। এটি কর্মযোগ ও জ্ঞানযোগের ঐক্যস্থল—যেখানে কাজের ভেতরেই মুক্তি লুকিয়ে থাকে।
প্রথম পঙ্ক্তি—“নৈব কিঞ্চিত্ করোমি ইতি যুক্তো মন্যেত তত্ত্ববিত্”—এর অর্থ, যিনি পরম তত্ত্বকে জানেন, সেই “যুক্ত” ব্যক্তি—অর্থাৎ যাঁর চেতনা ঈশ্বর-স্মৃতিতে স্থিত—তিনি মনে করেন, “আমি কিছুই করি না।” তিনি জানেন, দেহ, ইন্দ্রিয় ও মনই আসলে কর্ম করছে, কিন্তু অন্তরের আত্মা কখনও কর্মে লিপ্ত নয়। তিনি উপলব্ধি করেন যে, “আমি কর্তা নই; কর্ম প্রাকৃতিক গুণের দ্বারা সম্পন্ন হচ্ছে।”
পরবর্তী অংশ—“পশ্যঞ্ শ্রৃণ্বন্স্পৃশঞ্ জিঘ্রন্নশ্নন্ গচ্ছন্স্বপন্স্বসন্…”—জ্ঞানীর দৈনন্দিন জীবনকে চিত্রিত করে। তিনি দেখেন, শোনেন, স্পর্শ করেন, গন্ধ নেন, খান, চলেন, ঘুমান, শ্বাস নেন, কথা বলেন, দেন বা নেন, চোখ খোলেন ও বন্ধ করেন—তবু অন্তরে ভাবেন, “আমি কিছুই করি না।” তাঁর কাছে এই সমস্ত ক্রিয়াকলাপ কেবল ইন্দ্রিয়গুলির স্বাভাবিক গতিবিধি—যেমন বাতাস বইলে পাতা নড়ে, কিন্তু বাতাসের কোনো ইচ্ছা নেই; তেমনি ইন্দ্রিয়ও প্রকৃতির গুণে চলে, আত্মা সেখানে কেবল সাক্ষী।
এই উপলব্ধিই অকর্তৃত্ববোধ—যেখানে ব্যক্তি বুঝতে শেখেন, কর্মের ভেতরে তিনটি উপাদান আছে: কর্তা (subject), কর্ম (action), ও ক্রিয়া-যন্ত্র (instruments)। কিন্তু আত্মা এর কোনোটি নয়; আত্মা কেবল আলোকদাতা, “দ্রষ্টা”—যিনি চেতনা দেন, কিন্তু নিজে অপরিবর্তনীয়। এই সত্য বোঝার পর জ্ঞানী আর অহংকার করে বলেন না, “আমি করেছি।” ফলে তাঁর কর্মফলে কোনো আসক্তি বা বন্ধন জন্মায় না।
অদ্বৈত বেদান্ত এই অবস্থাকে বলে “আত্মনিষ্ঠা”—যেখানে মানুষ জানেন যে, শরীর ও মন প্রকৃতির উপাদান, আর আত্মা সেই চেতনার প্রতিফলন, যা অক্রিয়। এ যেন পদ্মপাতার জলের প্রতি নির্লিপ্ততা। এই ভাবটি গীতার সেই বিখ্যাত উপমা দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়: "লিপ্যতে ন স পাপেন পদ্মপত্রমিবাত্ত্সা" (গীতা ৫/১০) অর্থাৎ, যিনি কর্মের ফল ভগবানে সমর্পণ করে আসক্তি ত্যাগ করে কাজ করেন, তিনি পাপ দ্বারা লিপ্ত হন না, যেমন পদ্মপাতা জল দ্বারা লিপ্ত হয় না।
পদ্মপাতা জলে থাকলেও জল তাকে ভেজাতে পারে না। একইভাবে, স্থিতপ্রজ্ঞ বা জ্ঞানী ব্যক্তি সংসারে থাকলেও, তাঁর কৃতকর্মের ফল বা জাগতিক দুঃখ তাঁকে আর বাঁধতে পারে না। তিনি জীবন্মুক্ত অবস্থায় স্থিত হন। আত্মা তেমনি না দুঃখে লিপ্ত হয়, না কর্মে আবদ্ধ হয়।
জ্ঞানী ব্যক্তি এই জগৎকে মায়ার প্রপঞ্চ রূপে দেখেন। তিনি জানেন, দুঃখ তাঁর প্রকৃতির অংশ নয়, তাই বাইরে দুঃখের কারণ থাকলেও তাঁর অন্তরে শান্তি বজায় থাকা। আসক্তি ত্যাগ করে কর্ম করার ফলে সেই কর্ম আর নতুন কোনো বন্ধন বা সংস্কার সৃষ্টি করে না। এটাই হলো কর্মের বন্ধন থেকে মুক্তি।
গৌড়ীয় বৈষ্ণব দর্শনের ভাষায়, এই “অকর্তা-ভাব” মানে উদাসীনতা নয়; বরং এটি “সাক্ষী-ভাব”—যেখানে ভক্ত জানেন, কর্মের কর্তা তিনি নন, কৃষ্ণই কর্তা; তিনি কেবল কৃষ্ণের আনন্দে অংশ নিচ্ছেন। এই বোধে কর্ম হয়ে ওঠে সেবা, আর ফল হয়ে যায় প্রসাদ।
মনোবিজ্ঞানের ভাষায়ও এটি “detached awareness”—এক সচেতন কিন্তু নির্লিপ্ত পর্যবেক্ষণ। যেমন কোনো নর্তক নিজের নাচের সঙ্গে একাত্ম থেকেও জানেন যে তিনি মঞ্চের অংশ; তেমনি জ্ঞানী ব্যক্তি জীবনযাত্রার প্রতিটি কর্মে সম্পূর্ণ যুক্ত থেকেও ভিতরে থাকেন শান্ত, স্থির ও মুক্ত।
ফলে গীতার এই শ্লোকদ্বয় শেখায়—মুক্তি কাজ ছেড়ে নয়, কাজের মধ্যেই আসে; যখন মন বোঝে, “আমি কর্তা নই, ঈশ্বরই কর্তা,” তখন কাজ হয়ে ওঠে যোগ, জীবন হয়ে ওঠে সাধনা, আর প্রতিটি নিঃশ্বাসই ঈশ্বরচেতনার সাক্ষ্য।
পদ্মপাতায় জলবিন্দু থাকে, কিন্তু পাতাকে ভিজাতে পারে না; কারণ পাতার পৃষ্ঠ স্বভাবতই মসৃণ। তেমনি জ্ঞানী সংসারে থাকেন, কাজ করেন, সম্পর্ক রাখেন, কিন্তু সংসারের আকাঙ্ক্ষা বা আসক্তি তাঁর মনকে ভিজাতে পারে না। তিনি কর্মের মাঝে থেকেও অন্তরে অকলুষ ও শান্ত।
আগুন যখন জ্বলে, তখন চারপাশে আলো ছড়িয়ে পড়ে, কিন্তু আগুন নিজে আলোতে মজে না বা প্রভাবিত হয় না। ঠিক তেমনি আত্মা শরীর, মন ও ইন্দ্রিয়ের সব কাজকে আলোকিত করে, কিন্তু নিজে সেই কর্মের ফলভোগে অংশ নেয় না। আত্মা থাকে নিরাসক্ত, অপরিবর্তনীয়।
মঞ্চে একজন অভিনেতা রাজা, সেনাপতি বা ভিখারির ভূমিকায় অভিনয় করে, কিন্তু সে জানে—“আমি এই চরিত্র নই।” দৃশ্য শেষ হলে সে নিজের প্রকৃত সত্তায় ফিরে আসে। তেমনি জ্ঞানী ব্যক্তি জানেন—আমি দেহ বা মানসিক অবস্থার ভূমিকা পালন করছি, কিন্তু প্রকৃত আমি চেতনা, চিরমুক্ত সত্তা।
নদী অবিরত বয়ে চলে, তবুও তার জলে কোনো ক্লান্তি বা উদ্দেশ্য নেই; তার গতি প্রকৃতির স্বাভাবিক প্রবাহ। জ্ঞানীর কর্মও তেমনই—তিনি কাজ করেন, কিন্তু কর্তার অহংকার ছাড়া। কাজ তাঁর কাছে কর্তব্য নয়, লীলা; তাই ক্লান্তি নেই, দহন নেই, আছে কেবল স্বাভাবিক প্রবাহ।
দীপশিখা স্থির থাকে, অথচ তার আলো চারদিকে ছড়িয়ে যায়। জ্ঞানীর মনও তেমনি—অন্তরে স্থির, বাইরে কর্মে দীপ্ত। তিনি করেন, তবু তাঁর করণে অহং নেই। তাঁর কর্ম আলো দেয়, কিন্তু তাঁর অন্তরে থাকে নিঃশব্দ স্থিরতা।
এ সবই একসূত্রে গাঁথা—কর্ম করেও আসক্ত না হওয়া, সংসারে থেকেও সংসারাতীত থাকা। গীতা যাকে বলে, “যোগঃ কর্মসু কৌশলম্”—সেই কৌশলই হলো এই অন্তর্মুক্তি, যেখানে করাও ধ্যান, কর্মই উপাসনা, আর জীবন নিজেই শান্ত চেতনার প্রকাশ।
এই “সাক্ষীভাব”-ই প্রসাদবুদ্ধির পূর্ণ প্রকাশ। এখানে মানুষ কাজ করেন, কিন্তু কর্মে আটকে পড়েন না। তিনি জানেন, তিনি কেবল এক যন্ত্র—ঈশ্বরচেতনার অভিব্যক্তির মাধ্যম। গীতা এই অবস্থাকে বলে “কর্মণি অসক্তঃ স ভবান্”—যিনি কর্মে যুক্ত, কিন্তু তাতে আসক্ত নন। এই সংক্ষিপ্ত উপদেশটি শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বার বার দিয়েছেন। এর মাধ্যমে কর্মযোগীর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি বোঝানো হয়:
কর্তব্য পালন: একজন ব্যক্তি তাঁর নির্ধারিত কর্তব্য কর্ম (কার্য) করবেন।
আসক্তি ত্যাগ: সেই কর্মের ফলের প্রতি (লাভ, ক্ষতি, জয়, পরাজয়) কোনো আসক্তি (সঙ্গ) রাখবেন না।
বন্ধনমুক্তি: যখন কর্মের ফল কামনা না করে কেবল কর্তব্য রূপে তা পালন করা হয়, তখন সেই কর্ম আর নতুন বন্ধন বা সংস্কার সৃষ্টি করে না। এটাই হলো কর্মের কৌশল বা যোগ।
এই দৃষ্টিতে প্রসাদবুদ্ধি মানে আত্মসমর্পণ নয়, বরং আত্মোত্থান—কর্মকে পবিত্র করা। কাজ তখন আর বোঝা নয়, উপাসনা; ফল তখন আর অধিকার নয়, প্রসাদ। মানুষ তখন করে, অথচ তার মন থাকে ঈশ্বরচেতনার প্রশান্ত সাক্ষীতে। এই অবস্থাই কর্মযোগের চূড়ান্ত পরিণতি—যেখানে জীবন আর সাধনা আলাদা নয়, দুটো একে অপরেরই প্রতিফলন।
জৈন অনেকান্তবাদ এই অবস্থাকে এক ভিন্ন দৃষ্টিতে কোমলতা দেয়। এটি শেখায়—সত্য একপাক্ষিক নয়; প্রত্যেকের অভিজ্ঞতা আংশিক সত্য বহন করে। তাই কর্মের সময় নিজের কর্তব্যে অটল থেকেও অন্যের দৃষ্টিকোণকে সম্মান করা আধ্যাত্মিক পরিপক্বতা।
গীতার এই বাক্য—“স্বধর্মে নিধনং শ্রেয়ঃ, পরধর্মো ভয়াবহঃ” (গীতা ৩.৩৫)—অর্থাৎ “নিজের ধর্মে মৃত্যু শ্রেয়, পরের ধর্ম ভয়ঙ্কর”—শুধু সমাজনৈতিক কর্তব্যের নির্দেশ নয়; এটি মানুষের অন্তর্জীবনের সততার আহ্বান।
এখানে “স্বধর্ম” বলতে শুধু বর্ণ বা আশ্রম অনুযায়ী সামাজিক দায়িত্ব বোঝানো হয়নি; বরং নিজের প্রকৃত স্বভাব (svabhāva)—যা অন্তরের সত্য থেকে উৎসারিত। প্রতিটি মানুষের এক নিজস্ব প্রকৃতি আছে, এক অন্তর্জাত প্রবণতা, যাকে গীতা বলে “স্বভাবজাত কর্ম”—যে কাজ বা পথ তার মনের, গুণের, ও চেতনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। এই “স্বধর্ম” মানে নিজের অন্তর্গত সত্যকে অনুসরণ করা।
আর “পরধর্ম” মানে সেই পথ, যা অনুকরণ, ভয় বা সামাজিক তুলনা থেকে আসে—অন্যের জীবনকে কপি করার চেষ্টা, নিজের স্বরূপ ভুলে অন্যের ছাঁচে ঢালার প্রচেষ্টা। অর্থাৎ, সেই কাজ, যা অনুকরণ, প্রতিযোগিতা বা ভয় থেকে উৎসারিত।