দামোদর: শাস্ত্রে ও তত্ত্বে / ৪০



জ্ঞান ঈশ্বরকে বিশ্লেষণ করতে চায়, ত্যাগ ঈশ্বরকে অতিক্রম করতে চায়, কিন্তু ভক্তি ঈশ্বরকে আলিঙ্গন করে।

আর দামোদর লীলা সেই ঈশ্বরালিঙ্গনের দৃশ্য—যেখানে পরম ব্রহ্ম নিজের অসীমতা ভুলে মায়ের স্নেহে নিজেকে বেঁধে ফেলেছেন। এটি সেই চেতনার লীলা, যেখানে সীমা ও অসীম, প্রেম ও জ্ঞান, ঈশ্বর ও ভক্ত—সবই এক হয়ে যায় এক মাধুর্যময় ঐক্যে।

মনস্তত্ত্বের দৃষ্টিতে দামোদর লীলা আসলে এক গভীর মনস্তাত্ত্বিক প্রতীক, যেখানে ভালোবাসা ও নিয়ন্ত্রণের সম্পর্ক নতুনভাবে বোঝা যায়। আধুনিক মনোবিজ্ঞান বলে—একটি শিশুর সুস্থ বিকাশের জন্য “নিরাপদ সংযুক্তি” (secure attachment) অপরিহার্য। এই সংযুক্তিই শিশুর মধ্যে আস্থা ও কৌতূহল তৈরি করে, কারণ সে জানে—ভালোবাসার এক নিশ্চিন্ত পরিসর আছে, যেখানে সে ভুল করলেও ভেঙে পড়বে না, বরং শেখার সুযোগ পাবে।

উইনিকটের ‘হোল্ডিং এনভায়রনমেন্ট’ ধারণাটিও ঠিক এই অর্থে গুরুত্বপূর্ণ। উইনিকট বলেছেন, এক মায়ের স্নেহময় উপস্থিতিই শিশুর প্রথম পৃথিবী—যেখানে সে নিরাপদে নিজের সত্তাকে ধরে রাখতে শেখে। এই নিরাপদ আশ্রয়ই তাকে পরে উড়তে শেখায়, নতুন জগৎ আবিষ্কারের সাহস দেয়। যশোদার স্নেহ ও শাসন ঠিক তেমনই—তাঁর দড়ি শিশুকে বেঁধে রাখে না, বরং তাকে ধরে রাখে, রক্ষা করে, দিক নির্দেশনা দেয়।

এখানে সীমা মানে কোনো দমন নয়; বরং এক সুরের বোধ—যেমন সংগীতে তাল না থাকলে সুর ভেঙে যায়, তেমনি জীবনের সীমানা না থাকলে সম্পর্ক ও স্বাধীনতা দুটোই ভেসে যায়। তাই এই বাঁধন আসলে নিয়ন্ত্রণের নয়, সঙ্গতির প্রতীক।

“বাঁধা পড়া” এখানে দাসত্বের অর্থে নয়; বরং এটি সহানুভূতির স্ব-নিয়ন্ত্রণ—একটি সচেতন স্বেচ্ছা-সংযম। আমি নিজে স্বেচ্ছায় কিছু সীমা মেনে চলি, কারণ সেই সীমার মধ্যেই অন্যের মঙ্গল, সম্পর্কের নিরাপত্তা ও প্রেমের গভীরতা সম্ভব হয়। এই সীমা আমাকে ছোট করে না; বরং সম্পর্ককে বড় করে তোলে।

এইভাবে, যশোদার দড়ি কোনো আইন নয়—এটি অঙ্গীকারের প্রতীক। এটি ভয়ের নয়, বিশ্বাসের বন্ধন। মা ও সন্তানের মধ্যে যেমন একটি নীরব আস্থা থাকে—“তুমি আমাকে বেঁধে রাখো, আমি তবু মুক্ত”—তেমনি ঈশ্বরও নিজের অসীমতাকে সংকুচিত করে, যাতে তিনি মানুষের কাছে আসতে পারেন, আমাদের ছোটো ঘরের আলোয় বসে আমাদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।

এই ব্যাখ্যায় দামোদর লীলা আর কোনো অলৌকিক ঘটনা নয়; এটি প্রতিটি সম্পর্কের, প্রতিটি হৃদয়ের প্রতিচ্ছবি—যেখানে সত্যিকার প্রেম মানে সীমা নয়, বরং সেই সীমার মধ্যেই অনন্তের উপলব্ধি।

ফলত, দামোদর-তত্ত্বের সারবাণী একটাই: অসীম চেতনার আত্ম-নিয়ন্ত্রণই প্রেম, আর সেই প্রেমের বাঁধনই মুক্তি। যে-দড়ি কোমরে পড়ে, তা পরাজয়ের দড়ি নয়—এটি অন্তরঙ্গতার আচ্ছাদন; যে-সীমা হৃদয়কে ঘিরে ধরে, তা ক্ষুদ্রতার বেড়া নয়—এটি অসীমেরই আয়না। এখানে কৃষ্ণ ও যশোদা, ঈশ্বর ও মানব, জ্ঞান ও ভক্তি—সব মিলেমিশে একটিই কথা বলে: মুক্তি মানে কোনো কিছু না-থাকা নয়, বরং এমনভাবে নিজেকে বেঁধে নেওয়া যে, বন্ধন নিজেই মুক্তির রূপ হয়ে ওঠে।

দামোদর-তত্ত্বকে ভাঙলে দেখা যায়—এটি কেবল ভাগবতের এক স্নিগ্ধ শিশুলীলা নয়; বরং এক গভীর চেতনা-তত্ত্ব, যেখানে প্রেম, স্বাধীনতা, সীমা, এবং সম্পর্ক—সব কিছু একসূত্রে বাঁধা। “দাম” মানে দড়ি, আর “উদর” মানে পেট বা কোমর; অর্থাৎ “দামোদর” শব্দের আক্ষরিক অর্থই হলো “যাঁর কোমরে দড়ি বাঁধা।” যশোদা যখন কৃষ্ণকে দড়ি দিয়ে বাঁধছেন, সেটি বাহ্যিকভাবে এক শিশুর দুষ্টুমি-শাসনের দৃশ্য, কিন্তু দার্শনিক চোখে এটি অসীম চেতনার স্বেচ্ছা-বাঁধন—অর্থাৎ ঈশ্বর নিজেই নিজের শক্তিতে সীমা গ্রহণ করছেন, যাতে প্রেম, দায়িত্ব ও সম্পর্কের অভিজ্ঞতা সম্ভব হয়।

অদ্বৈত বেদান্তে বলা হয়, পরম ব্রহ্ম বা চেতনা সম্পূর্ণ স্বয়ংসম্পূর্ণ, স্বাধীন এবং সকল ভেদবুদ্ধির ঊর্ধ্বে। কিন্তু ভাগবত পুরাণের দশম স্কন্ধে, সেই নির্বিশেষ চৈতন্য নিজেকে সীমাবদ্ধ করে ভক্তবশ্য রূপে প্রকাশ করেন—অর্থাৎ ঈশ্বর ভক্তের ভালোবাসায় বশীভূত হন। যশোদার দড়ি যখন বারবার “দুই আঙুল কম” হয়, সেটি প্রতীক: এক আঙুল পুরুষকার (মানব প্রচেষ্টা), আরেকটি কৃপা (ঈশ্বরীয় অনুগ্রহ)। এই দুই একত্র না হলে মুক্তির বাঁধন সম্পূর্ণ হয় না। এটি বোঝায়—মানুষ যতই চেষ্টা করুক, ঈশ্বরের করুণা ছাড়া সেই প্রচেষ্টা পূর্ণতা পায় না; আবার কৃপাও ফলদায়ক হয় কেবল সক্রিয় প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে।

কাশ্মীর শৈব দর্শনের ভাষায়, চিত্‌-প্রকাশ মানে সেই পরম চেতনা যা স্বয়ং দীপ্ত, আর বিমর্শ মানে সেই চেতনার নিজের অনুভব-শক্তি। এই দুই মিলে সৃষ্টি হয় প্রেম ও সম্পর্ক। যখন চেতনা নিজেই নিজেকে সীমার মধ্যে টেনে আনে, তখনই সৃষ্টি ও লীলা সম্ভব হয়—এটাই ঈশ্বরের স্বাত্মবদ্ধ প্রেম, অর্থাৎ নিজ আনন্দে নিজেরই বাঁধন।

এবার যদি মনোবিজ্ঞানের আলোয় দেখি, এই ঘটনায় গভীর মানসিক সত্য প্রকাশ পায়। সংযুক্তি-তত্ত্বে (Attachment Theory)—যা প্রথম জন বোলবি ও মেরি এইনসওয়ার্থ প্রণয়ন করেন—দেখানো হয়েছে, শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য “নিরাপদ সংযুক্তি” অপরিহার্য। যখন শিশু জানে যে, তার ভালোবাসা গ্রহণযোগ্য ও নিরাপদ, তখনই সে কৌতূহলী, আত্মবিশ্বাসী ও সৃজনশীল হয়। যশোদার স্নেহ ও শাসন কৃষ্ণকে ঠিক এই নিরাপদ সীমা দেয়—যেখানে সীমা দমন নয়, বরং ভালোবাসার দিকনির্দেশ।

মনোবিশ্লেষক উইনিকট-এর “হোল্ডিং এনভায়রনমেন্ট” ধারণা অনুযায়ী, মায়ের স্নেহময় বুকে শিশুটি নিজেকে নিরাপদভাবে ধরে রাখতে শেখে। এই ধরা-রাখা মানে দমন নয়; বরং কৌতূহলের সুরক্ষিত বিকাশ। ঠিক তেমনই, যশোদার দড়ি কৃষ্ণের স্বাধীনতাকে আটকায় না, বরং তাকে নিরাপদ করে—যাতে সে খেলা, অন্বেষণ ও আনন্দে প্রসারিত হতে পারে।

নিউরোবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে, এই প্রেমময় সংযম আমাদের মস্তিষ্কের দুটি গুরুত্বপূর্ণ অংশকে সমন্বিত করে—অ্যামিগডালা, যা ভয় বা আবেগীয় প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে, এবং প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স, যা যুক্তি ও সিদ্ধান্তগ্রহণের কেন্দ্র। যখন ভালোবাসার মধ্যে শৃঙ্খলা থাকে, তখন এই দুটি অংশের মধ্যে ভারসাম্য স্থাপিত হয়; ফলে affect regulation, অর্থাৎ আবেগের স্বনিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি পায়। তখন আবেগের ঢেউ ওঠে ঠিকই, কিন্তু তা ভেসে যায় না—স্নেহের দড়ি সেই ঢেউকে ছন্দে বেঁধে রাখে।

এই অবস্থায় “বাঁধা পড়া” মানে দাসত্ব নয়, বরং স্বনিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতা—নিজেকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা, যা সম্পর্ক ও ভালোবাসাকে গভীর করে তোলে। এটিই self-binding as agency—অর্থাৎ নিজের ইচ্ছায় নিজের মধ্যে সীমা স্থাপন, যাতে আমি কেবল নিজের জন্য নয়, অপরের জন্যও হতে পারি।

এইভাবে দামোদর-লীলা আমাদের শেখায়—সীমা আসলে ভালোবাসারই প্রকাশ; দড়ি মানে আইন নয়, অঙ্গীকার; ভয়ের নয়, বিশ্বাসের বন্ধন। আর এই বিশ্বাসেই অসীম ঈশ্বর নিজেকে সঙ্কুচিত করেন, যাতে মানুষের ছোটো হৃদয়ের ঘরে তিনি স্থান পান, আমাদের সঙ্গে বসে আলাপ করতে পারেন।

গৌড়ীয় বৈষ্ণব দর্শন বলে, ঈশ্বর কেবল পরম বিচারক নন, তাঁর হৃদয়ও আছে। অর্থাৎ তিনি ভালোবাসা অনুভব করেন এবং ভক্তের প্রেমে স্পর্শিত হলে নিজের ইচ্ছায় বশীভূত হন। চৈতন্যদেবের ভাষায়, “আত্মেন্দ্রিয়-প্রীতি” মানে নিজের আনন্দের জন্য ভালোবাসা (যাকে কাম বলা হয়), আর “কৃষ্ণেন্দ্রিয়-প্রীতি” মানে ঈশ্বরের আনন্দের জন্য ভালোবাসা (যাকে প্রেম বলা হয়)। তাই প্রেমের প্রকৃত অর্থ হলো—অপরকে নিজের কেন্দ্রে স্থাপন করা। যশোদা যখন কৃষ্ণকে দড়ি দিয়ে বাঁধছেন, তখন সেই দৃশ্যে দেখা যায় ঈশ্বর নিজের অসীম শক্তিকে ভক্তের মমতায় কোমল করে তুলছেন।

খ্রিস্টীয় ধর্মতত্ত্বে যেমন “কেনোসিস” নামে একটি ধারণা আছে—ঈশ্বর নিজের মহিমা ত্যাগ করে মানুষের কাছে আসেন—তেমনি দামোদর-লীলাতেও দেখা যায় ঈশ্বরের স্বেচ্ছা আত্ম-সংকোচন। তিনি নিজের অসীম শক্তিকে ছোটো করে আনছেন, যাতে মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক ও ভালোবাসার অন্তরঙ্গতা সম্ভব হয়। ইহুদি ধর্মের কাব্বালা তত্ত্বে “ৎসিম্ৎসুম” (Tzimtzum) নামের ধারণাটিও একই কথা বলে—ঈশ্বর নিজেকে একটু সরিয়ে নেন, যাতে জগৎের ও সম্পর্কের জন্য স্থান তৈরি হয়। প্রেমের জন্য যেমন স্থান প্রয়োজন, তেমনি স্থান তৈরি হয় যখন অসীম কিছুটা সরে দাঁড়ায়।

দার্শনিক অর্থে, এটি স্বাধীনতার মধ্যে স্বনিয়ন্ত্রণের শিক্ষা। অদ্বৈত বেদান্ত বলে—ব্রহ্ম সত্য এবং জগৎও তাঁরই প্রকাশ, যদিও তা সীমিত নাম-রূপে প্রকাশিত। দামোদর-লীলা শেখায়, যদি সীমা ভালোবাসার জন্য হয়, তবে সেটি মুক্তিরই পথ। যেমন সংগীতে তাল না থাকলে সুর অর্থহীন, তেমনি জীবনে কিছু নিয়ম না থাকলে সম্পর্ক ও প্রেম টেকে না। তাই সীমা মানে বাঁধা নয়—সীমা মানে সুরের ধারা, যা জীবনকে ছন্দময় করে।

কাশ্মীর শৈব দর্শনের “স্পন্দ-তত্ত্ব” বলে, চেতনা কোনো স্থির আলো নয়, এটি নৃত্যের মতো চলমান দীপ্তি। নাচের জন্য যেমন তাল লাগে, তেমনি চেতনার জন্যও একটি “দড়ি” বা নিয়ম লাগে, যা ছন্দ ধরে রাখে। যশোদার দড়ি সেই প্রেম-ছন্দের প্রতীক, যা ঈশ্বরের অসীম শক্তিকে সম্পর্কের সুরে বেঁধে রাখে।

এখন আসি নিউরোথিওলজি-র আলোচনায়—এটি সেই শাস্ত্র, যা ধর্মীয় অভিজ্ঞতা ও মস্তিষ্কের ক্রিয়ার যোগসূত্র খোঁজে। যখন কেউ প্রার্থনা, কীর্তন বা ধ্যান করে, তখন তার মনোযোগ-কেন্দ্র (prefrontal cortex) সক্রিয় হয়, এবং “আমি”-বোধ নিয়ন্ত্রণকারী অংশ (parietal lobe) শান্ত হয়। এতে মানুষ অনুভব করে এক গভীর সংযোগ বা relational absorption—যেখানে অহংকার গলে যায়, কিন্তু নৈতিকতা ও সহানুভূতি বেড়ে যায়।

কীর্তনের ছন্দে শরীরে অক্সিটোসিন নামের ভালোবাসার হরমোন বাড়ে, যা পারস্পরিক বিশ্বাস তৈরি করে। মন্ত্রের পুনরাবৃত্তি মস্তিষ্কের ভুল-সংকেত কমায়, ফলে মন স্থির ও প্রশান্ত হয়। এর ফলে ঈশ্বরের সঙ্গে সম্পর্ক ভয়ের নয়, বরং ভালোবাসার হয়—এমন এক প্রশিক্ষিত অভ্যাস তৈরি হয়, যেখানে আচরণ নিয়ন্ত্রিত হয় প্রেমের মাধ্যমে, শাসনের দ্বারা নয়।

নৈতিক দিক থেকে, দামোদর-তত্ত্ব শেখায়—“আমি যা খুশি, তা-ই করব” আসল স্বাধীনতা নয়; বরং “আমি তোমার মঙ্গলের জন্য নিজেকে সীমায় রাখছি”—এই বোধই প্রকৃত স্বাধীনতা। যশোদার দড়ি কোনো আইন নয়, এটি অঙ্গীকারের প্রতীক। আইন মানুষকে ভয় দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করে, কিন্তু অঙ্গীকার মানুষকে ভালোবাসা দিয়ে বাঁধে।

ভাগবতের দুই আঙুলের শিক্ষা এখানেই প্রযোজ্য—একটি মানুষের সাধনা বা প্রচেষ্টা, অন্যটি ঈশ্বরের কৃপা। সাধনা শেখায় সীমা মানতে, আর ঈশ্বরের কৃপা সেই সীমাকে করুণায় পূর্ণ করে।

দামোদর-তত্ত্ব এক আন্তরিক প্রার্থনা: “হে প্রভু, আমাকে তোমার প্রেমের নিয়মে বেঁধে রাখো।” যে-বাঁধন ভালোবাসার, সেটিই মুক্তি। যে-সীমা সম্পর্ক তৈরি করে, সেটিই অসীমের প্রতিফলন। তাই কৃষ্ণের কোমরে দড়ি পড়া মানে ঈশ্বরের পরাজয় নয়—এটি প্রেমের বিজয়। আর ভক্তের নত হওয়া মানে দাসত্ব নয়—এটি চেতনার জাগরণ, যেখানে ঈশ্বর ও মানুষ, সীমা ও অসীম এক হয়ে যায় প্রেমের দীপ্ত আলোয়।