– কী এত লিখছ, তিথি?
– তোমায় ভাবছি।
– দেখি, কী লিখেছ তুমি, আমাকে ভেবে?
– না, দেখো না... এখনও শেষ করতে পারিনি।
– আমাকে নিয়ে তোমার লেখাগুলোর বেশিরভাগই অসমাপ্ত; কয়টা শেষ করতে পেরেছ?
– তুমি আমার অনুভূতির শুরুতেই সবটা জুড়ে থাকো, অথচ শেষে এসে গন্তব্যটা আমি খুঁজে পাই না আজও।
– ওটা দাও, আমি পড়ি, কী লিখেছ।
(লেখা পড়ে শোনায়)
"...তোমার প্রহসনে আমি নেই,
শেষ বিকেলের চায়ের চুমুকে আমি নেই,
ঘুমন্ত চোখের আড়ালে নেই আমি একেবারেই,
প্রিয় প্রেমের মৃত্যু যেন ঘটেছে মরুর বালুতীরে;
তোমার সময় যেন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
আমি স্তব্ধ হয়ে আছি, তোমার গভীর নিঃশ্বাসে,
হৃদয়ের অসুখে ভেঙে যাক না এই নিয়মের প্রাচীর,
ভেঙেচুরে যাক ভালোবাসার নাম করে—
তুমি দেবী খুঁজো না, সে তো কেবলই ছোঁয়ার বাইরে থাকা কল্পনা।
আমি এখনও জেগে থাকি আমাদের সুরের নিস্তব্ধ প্রহরজুড়ে,
তোমার স্বপ্নে কখনো আসে কি আমাদের প্রেমের ছায়া?
আঁধারে মিলিয়ে থাকা সেই ইচ্ছে-ঘুড়ি—
তোমার কবিতায় আমার সময় যেন থেমে আছে, নীড়।
হারিয়ো না এবার,
অনেকটা যন্ত্রণায় ছুঁয়ে-থাকা এই আমাকেই
শেষে তুমি বলেছিলে— 'তোমার চোখে আমি ভীষণ মায়াবী।'
অন্য এক গল্পে তোমার আবির্ভাব,
তোমায় নিয়ে লিখেছি, গভীর দীর্ঘশ্বাসে মোড়ানো একটুকরো অনুভূতি।
যদি আমায় একদিন অভিমানে খুঁজে পাও,
বলো— 'ভালোবাসি'।
তোমার অনুরাগে,
নিজেকেই খুঁজেছি আনমনে।
জানতে ইচ্ছে হলে, ফিরে এসো,
আমি তখনও তোমারই হয়ে থাকব।
এই ঘোর হয়তো কেটে যাবে,
তবু তোমার স্মৃতি মুছে ফেলতে পারব না কখনও।
বিষাদের ছোঁয়ায়, এই ভুল সময়ে—
আকাশটাও আজ তোমার নামে মেঘে ঢেকেছে।"
– বাহ্! কী যে সুন্দর লিখেছ! আমি বুঝি এমনি তোমার কল্পনায়?
– হুঁ।
– তুমি ভীষণ অন্যরকম চিন্তা করতে পারো, তিথি।
– তোমার চোখে তাকিয়েই তো শিখেছি।
– আমার জন্য এত মায়া জমিয়ে রেখেছ, তিথি?
– কেন জানি না, তোমায় ভালোবাসতে আমার খুব ইচ্ছে করে। মনে হয়, তুমি শুধু আমার নিজের।
– খুব ক্লান্ত লাগছে।
– আমার বুকে এসে ঘুমোও, তিথি।
– যদি তুমি একদিন এত দূরে চলে যাও, আমি কি আর চুপিচুপি তোমায় খুঁজব না?
– পাগলি, তুমি আমায় না খুঁজলে— কে দেবে আমার নামে নিখোঁজ-বিজ্ঞপ্তি? এই সন্ধেটা আমাদের, তিথি।
– আমাদের ভালোবাসার মুহূর্তগুলো খুব ছোটো হলেও, এর ব্যাপ্তি সীমাহীন।
– তোমার ভালোবাসার তীব্রতায় বুকটা তোলপাড় করে ওঠে, জানো, তিথি?
– জানি।
– তুমি আমার সামনে এলেই এত চুপ হয়ে যাও কেন, তিথি?
– যতটা নীরবতায় দেখো আমায়, তার থেকেও বেশি ডুবে আছি তোমার অস্তিত্বের ঘোরে।
– কত আর এভাবে সময় যাবে? আয়োজনে আয়োজনে...
তোমার অভিযোগ ভুলে, আমায় নিয়ে চলো শেষপ্রান্তরে।
– হেঁয়ালি কোরো না তো!
– একবার চেয়ে দেখো 'আমার হয়ে থাকতে',
তবে ভুলে যাবো সব হেঁয়ালি মুহূর্ত।
– আমি রোজ ফিরেছি শুধু তোমারই কাছে,
তোমার হয়ে থেকে যেতে,
এই আকস্মিক, ছন্নছাড়া অনুভূতির ভেতরে ডুবে যেতে।
– তুমি বোধ হয় আমায় একটু একটু করে ভালোবেসে ফেলেছ, নীড়।
– পাগলি, আমি তোমাকে পুরোটা সময় জুড়েই খুউব ভালোবেসেছি।
